স্যার যখন স্বামী পার্ট_২৭

0
3932

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_২৭
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

“এই মেয়ে দেখেশুনে চলতে পারো না।”
“সরি আসলে এইভাবে পড়ে যাব বুঝতে পারেনি ভাইয়া।” এই বলে ভ্যা ভ্যা করে মেয়েটা কেঁদে দিলো।
“আরে এখানে কান্নার কি হলো।”
“আমার মাটির পুতুলটা।”
“চেয়ে দেখি বর বউয়ের মাটির পুতুলটা ভেঙ্গে গেছে। আর সেইজন্য বেচারি কাঁদছে।”
“সামান্য মাটির পুতুলিতো। এতে কাঁদার কি হলো।”
“অনেক খুঁজে এইরকম পুতুল পেয়েছি।আর আপনি এইটা সামান্য বললেন এই বলে মেয়েটা কেঁদে কোনরকমে শাড়িটা উঁচু করে ধরে অনেক কষ্টে হেঁটে চলে গেল।”
এরপর কি জানি মনে করে মাটির পুতুলটা মাটি থেকে নিয়ে নিলাম।বাসায় গিয়ে সেটা অনেক কষ্টে জোড়া লাগিয়ে নিজের কাছে রেখে দিলাম।
.
.
এর কিছুদিন পর ভার্সিটি থেকে বন্ধ পায়।১৫ দিনের জন্য গ্রামের বাড়ি আসি। বাসায় আসা মাত্রই মা একটা মেয়েকে নিয়ে আমার সাথে গল্প জুড়িয়ে দিলো।এরপরে মা প্রায় সেই মেয়ের নাম করে বলছে মেয়েটা খুব ভালো।এরকম মেয়ে আজকাল দেখা যায় না।খুব মিষ্টি মেয়ে।মায়ের কাছে মেয়েটার প্রশংসা শুনে ওর সম্পর্কে জানার খুব খুব কৌতুহল সৃষ্টি হল।

“মা মেয়েটার সাথে তোমার পরিচয় কি করে হয়েছে?”
মা তো প্রায় হাসিমুখে জবাব দিলো জানিস তন্ময় আমি একদিন বাজারে বাজার করা অবস্থায় মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায়। পরে একটা মেয়ে এসে অনেকক্ষণ যাবত আমার মাথায় পানি ঢালে।এরপর কয়েকজনের সাহায্য নিয়ে রিক্সা করে আমাকে বাসায় নিয়ে আসে।বাসায় এসে আমার অনেক সেবাযত্ন করে।সেদিনের পর মেয়েটা বাসায় এসে মাঝে মাঝে আমার খোঁজখবর নিয়ে যায়।মেয়েটার স্কুল আমাদের বাসা থেকে মাত্র ১০ মিনিটের।তাই প্রতিদিন সকালে বাসায় এসে আমার সাথে গল্প করে।অনেক ভালো মেয়েটা।

.
.
ও ঘটনা তাহলে এই।এইজন্য মা মেয়েটার এত প্রশংসা করছে।তাহলে তো মেয়েটাকে দেখতে হয়।এরপরের দিন সকালে মেয়েটা বাসায় এসে মায়ের সাথে গল্প জুড়ে দেয়।আমি বাইরে থেকে এসে দরজা খুলার সময় দেখি আমার মা আর মেয়েটা হেসেহেসে গল্প করছে।লুকিয়ে এই দৃশ্য দেখে আমার খুব ভালো লাগলো। মেয়েটার জন্য মাকে আবার অনেকদিন পর হাসতে দেখছি।ভালো করে মেয়েটার চেহেরায় লক্ষ করে দেখি এই মেয়ে আর কেউ নয় মেলার সেই মেয়েটি যে শাড়ির কুচি লুঙ্গির মতন করে ধরে হাঁটা ছিঁচকাঁদুনী মেয়েটি।প্রতিদিন সকালে মেয়েটা বাসায় আসার আগে বেরিয়ে যেতাম আর মেয়েটা বাসায় এসে মায়ের সাথে গল্প জুড়িয়ে দিলে আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের গল্প শুনতাম।লুকিয়ে তাদের গল্প শুনতে বেশ ভালোই লাগতো।
.
.
এরকিছুদিন পর মেয়েটার বাড়ির দিকে একটা কাজে যাচ্ছিলাম ।সাদা শার্ট পড়ে সেদিন রওনা দিয়েছিলাম।হঠাৎ করে আমার সাদা শার্টে সেদিন বালতিভরা গোবর কে জানি ঢেলে দিলো। রাগে আমার শরীর প্রায় কিড়মিড় করছিল।ভালো করে লক্ষ করে দেখলাম কতগুলো বান্দর ছেলেমেয়ে গাছ থেকে নেমে দৌড়।আমি এরমধ্যে একজনের হাত ধরে ফেললাম।হাত ধরে নিজের কাছে ওর মুখ ঘুরিয়ে দেখি আমার গায়ে বালতিভরা গোবরঢালার মাস্টার আর কেউ নয় সেই মেয়েটি।যে এতদিনে আমার মায়ের গল্প করার সখী হয়েছিলো।
.
.
“মেঘ এত ঘামছো কেন?পানি খাবে।”
“না না, আমি এই গল্প শুনবো না।ঘুমাবো।”(ভয়ে ভয়ে)
“আরে কি জোশ একটা গল্প বলছি।আর তুমি বলছ ঘুমাবে।সেটা কি করে হয়।কি কথা ছিলো আজকে সারারাত আমরা গল্প করবো।গল্পই তো করছি।এখনো আরও ইন্টারেস্টিং মজার কথা বাকি আছে।সেগুলোও শুনতে হবে।”

এরপর মেয়েটাকে ধমক দিয়ে জিজ্ঞাস করলাম “এই মেয়ে আমার সাদা শার্টটার কি অবস্থা করেছ?”
“মেয়েটা প্রায় কেঁদে কেঁদে জবাব দিলো ভাইয়া সরি।আমি ইচ্ছা করেনি।”
“তাহলে এইসব কি করে হল?”
“ভ্যা ভ্যা,”
“চুপ কান্না বন্ধ কর।আমি তোমাকে কাঁদতে বলছি।আমার প্রশ্নের জবাব চাইছি।শুধু উত্তর দিবে।কান্নাকাটি করবা না।”
মেয়েটা চোখ নাকের পানি হাতের উল্টো পাশ দিয়ে মুছে বলল, “ভাইয়া আমাদের ক্লাসের একটা ছেলে আমাকে নিয়ে অনেক ফাজলামি করছিলো। তাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমি এই ব্যবস্থা করছি।ছেলেটা এই রাস্তা দিয়ে আসছিলো। আমিও গাছে উঠে গোবর ওর গায়ে ফেলার জন্য তৈরী হলাম। হঠাৎ করেই ওই ছেলের জায়গায় আপনি আসবেন আমি কি করে তা জানতাম।আপনি কেন ঘোড়ার মতন লম্বা লম্বা পা ফেলে ছেলেটার আগে চলে আসছেন।দেখেন দেখেন ওই ফাজিল ছেলেটা এখন জোরে জোরে হেসে চলে যাচ্ছে।”
“এই মেয়ে পেটে পেটে এত শয়তানি।ওই ছেলেকে শায়েস্তা করতে গিয়ে আমাকে দিনের মধ্যে চাঁদ দেখায়া দিলা।ফাজিল মেয়ে একটা।”
“ভ্যা ভ্যা,”
“চুপ একদম কাঁদবে না।”(ধমক দিয়ে)

এই বলে মেয়েটার হাত ছেড়ে নিজের শার্টের দিকে তাকালাম।আর এই সুযোগে মেয়েটা ভোদৌড়।আমার রাগ তখন আকাশের সপ্তম চৌড়ায় উঠে গেল।মনে মনে তখন প্রতিজ্ঞা করলাম এই মেয়েকে আমি কিছুতেই ছাড়বো না।

এই বলে আমি মেঘের দিকে তাকালাম।মেয়েটা কি রকম করুণ চাহনীতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আর এদিকে ওর এই করুণ দৃষ্টি দেখে আমার হাসি পাচ্ছে।

এরপর প্রতিদিন সকালে আমার নিত্যদিনের কাজ হয়ে দাঁড়ালো মেয়েটা কখন বাসায় আসবে, কখন আমার মায়ের সাথে গল্প করবে। আর কখন আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের গল্প শুনবো।ধীরে ধীরে মেয়েটার প্রতি আরো বেশি ভাললাগাটা কাজ করলো।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে