স্যার যখন স্বামী পার্ট_২৪

0
4250

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_২৪
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

“আপনি এই ভিডিও কোথা থেকে পেলেন?”
“সেটা পরে বলবো। আগে বলো এইসবের মানে কি?”
“আমি কিছু জানি না।এইটা ফেইক ভিডিও।”
“ওহ রেয়িলি।এই ভিডিও ফেইক।তাহলে তুমি কি?”
…………
“তাসপিয়াকে, সাগরকে বলে বেড়াচ্ছ তুমি আমাকে ভালবাসো,বাইরের সবাই এই কথা জানে একমাত্র আমি ছাড়া।যাকে এই কথা বলার দরকার তাকেই কিছু না বললে না।কেন এই মিথ্যা অভিনয়।”
………
“এখন কেন চুপ আছো। যখন কিছু বলার দরকার কিছুই বলোনা।চুপ মেরে থাকো। আমি প্রিয়ার সাথে কথা বলি।ওর সাথে আমার ছবি দেখে ভেবে নিয়েছো ওর সাথে আমার রিলেশন চলছে।ওই আমার পছন্দের সেই মেয়ে।যাকে আমি ভালবাসি তাই না?নিজে নিজে এতকিছু বুঝে গেছো। Very good.৮টা মাস তুমি আমার সংসারে ছিলে।এতদিনে আমাকে এই বুঝলে।আমার প্রতি তোমার বিশ্বাসটা কোনদিনও ছিলো না।”
“না বিশ্বাস ছিলো।আমি আপনাকে বিশ্বাস করি।বিয়ের দিন যখন আপনার বাসায় আসি তখন দেখলাম আলমারি ভর্তি শাড়ি,ফুলের টব,আরও অনেককিছু।ভাবলাম এইসব ভালবাসার মানুষের জন্য করেছেন।আর এইও মনে হল আমি আপনাদের ভালবাসার মাঝে এসে পড়েছি। অনেক জানার চেষ্টা করেছি আপনার ভালবাসার মানুষটা কে?কোন উত্তর নাতো আমি আপনার কাছে পেয়েছি নাতো অন্য কারোর কাছে।এরপর প্রিয়া ম্যাডামের সাথে আপনাকে সবসময় কথা বলা,ঘুরতে যাওয়া দেখে বুঝলাম আপনার ভালবাসার মানুষটা আর অন্য কেউ না বরং প্রিয়া ম্যাডাম।আমি জানি আপনি মুখ ফুটে আমাকে কিছু বলবেন না আর আমিও কোন অপরাধবোধের বোঝা মাথায় নিয়ে হাঁটতে পারবোনা তাই আমাদের সম্পর্কের ইতি টানতে চেয়েছি।এরপর আপনি আমাকে বলেছিলেন আপনি নাকি আমাকে কিছু গোপন কথা বলতে চান সেদিন বুঝতে পেরেছি কি বলতে চান।কিন্তু সেই কথা শুনার শক্তিটুকু আমার ছিলো না তাই আপনাকে এড়িয়ে গেছি।আর তারপরেই আপনার আর প্রিয়া ম্যাডামের হাত ধরে থাকা ছবি দেখে আমি একশ ভাগ নিশ্চিত হলাম যে আমার এই ধারণায় কোন ভুল নেই।আপনি সত্যি সত্যিইই প্রিয়া ম্যাডামকে……..।আপনাকে বিব্রত করতে বা অপমান করতে কখনো চাই নি।জানি আপনার ভালো লাগার কথা ভালবাসার কথা আপনি চাইলেও আমাকে বলতে পারবেন না তাই নিজ থেকেই সব কিছু করেছি।আর রইল সাগরের কথা,ওর কথাতে আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।আমার কারণে তোমার ক্ষতি হোক তা আমি কখনোই চাইবো না তাই আমি এইসব করতে বাধ্য হয়েছি।”
“Great.ভালোই ডিসিশন নিয়েছো।নিজেই নিজে কত কি ভাবো, নিজেই নিজেই সব ডিসিশন নাও।কোন সমস্যায় পড়লে নিজের স্বামীকে জানাও না।একবার, দুইবার না বহুবার বলেছি তোমার কোন সমস্যা থাকলে আমাকে বলতে পারো আমি সব ঠিক করে দিবো কিন্তু আমাকে কোন কিছু বলোনি।তোমার ফ্রেন্ড তাসপিয়া সব জানে অথচ আমি কিছুই জানি না।আমি আমার স্ত্রীর একজন ভালো স্বামী একজন ভালো ফ্রেন্ড হতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমার কোন চাওয়াকে এতদিন পর্যন্ত মূল্য দেও নি।”
“আপনাকে আমি সব বলতাম কিন্তু মনের ভয় আর আপনি অন্যজনকে ভালবাসেন, আমাকে না এটা জানার পরও কেন আপনাকে এইসব বলতে যাব। আমি যা করেছি আপনার ভালোরর জন্য করেছি,আপনার খুশির জন্যই করেছি।”
“আচ্ছা।এই বেশি বুঝার কারণটা আজ আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।আর তোমাকে ভালবাসি এই কথাটা কি মুখে বলা এতটা জরুরি। তোমার জন্য এতদিন এতকিছু যা করে এসেছি তার কাছে এই মুখে বলা শুধু একটা কথা “ভালবাসি” শব্দটা এত মূল্যবান হয়ে গেছে।মেঘ,অনেকেই তো এই কথা মুখে মুখে বলে বেড়ায় আমি তোমাকে ভালবাসি।এই মুখে বলা”ভালবাসা”কথাটার দাম কয়জনে রাখতে পারে।এই দেখো না উদাহরণ হিসেবে সাগরের কথায় বলি ও তো দিনের মধ্যে কম করে হলেও একশ বার বলেছে মেঘ আমি তোমাকে ভালবাসি।কি বলে নি।”
………
“তারপরও কেন সে তোমাকে বিপদের মুখে ফেলে চলে গেছে।”
………
“কারণ ভালবাসার জন্য ভালবাসি কথাটা বলা শুধু মুখ্য নয়।ভালবাসার মানুষের জন্য কিছু করে দেখানো, নিষ্ঠার সাথে ভালবাসার মানুষটার জন্য কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করাও জরুরি হয়ে পড়ে। যা সবাই পারে না।এখন অনেকেই “ভালবাসি” কথাটা প্রচার করতে করতে এই শব্দটাকে অতি সস্তা করে ফেলেছে।আমি সেই দলে নিজেকে জড়িত করতে চাই নি।আমি তোমার জন্য এতদিন এত কিছু করেছি এগুলো কি ভালবাসার মধ্যে কখনো পড়ে না।মেঘ তোমার চোখ থাকা সত্ত্বেও তুমি তা দেখো নি।তুমি শুধু তোমার বিবেকের কথা শুনেছ মনের কথা শুন নি। তাই তোমাকে আমি এতদিন ধরে যা দেখাতে চেয়েছি তুমি তা দেখতে পারোনি।যদি মনের কথা শুনতে ভালোভাবে আমাকে বুঝার চেষ্টা করতে তুমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে অনেক আগে পেয়ে যেতে আর এইরকম ফালতো সিদ্ধান্ত নিতে না।”
“আমি…….”
“চুপ আমার বলা শেষ হয় নি।প্রিয়া আর ‘আমার মধ্যে কোন রিলেশন ছিলো না।ও শুধু আমার ভার্সিটি লাইফের ফ্রেন্ড ছিলো।ভার্সিটি থাকতে আমাকে প্রপোজও করেছিলো কিন্তু আমি তা একসেপ্ট করে নি।কেন করেনি সে কারণটাও আমি ওকে জানিয়েছি।এরপরে আমরা দুইজনে ঢাকা ভার্সিটিতে একি ডিপার্টমেন্টে শিক্ষকতা পদে ঢুকি।ফ্রেন্ড হিসেবে কথা বলতাম সেটা স্বাভাবিক।এর মধ্যে আরও অনেককিছু ঘটনা আছে যা তোমাকে আমি পরে বলতাম কারণ সেসব কথা বলার সময় তখনো আসে নি।কিন্তু তার আগেই তুমি……।এখন তুমি নিজেই নিজের বিপদ ডেকে এনেছ।অনেকটা জেদের বশে এখন আমি প্রিয়াকে বিয়ে করছি।আমার জীবনে প্রিয়াকে দ্বিতীয় বার ঢুকানোর সুযোগ তুমিই করে দিয়েছো।আজ তুমি নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছ।”
.
.
সারা রাত আর ঘুমাতে পারলাম না।এ আমি কি করলাম। কেন নিজে বেশি বুঝতে গিয়ে এত বড় সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললাম।উনিতো প্রিয়া ম্যাডামকে ভালোবাসেন না তাহলে এতকিছু করে কি হল?না আমি এই বিয়ে কিছুতে হতে দিবো না।কিছুতেই না।উনাকে আমি এই বিয়ে কিছুতেই করতে দিবো না।

সারারাত ঘুমাতে পারেনি।সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গেছি।উনাকে আমার অনেক কিছু বলার বাকি আছে।কিন্তু সকাল থেকেই উনাকে একবারের জন্য কাছে পায় নি।এদিকে আমি উল্টাপাল্টা চিন্তা করেই অস্থির।আর কয়েক ঘন্টা পর বিয়ে।কিছুই ভাবতে পারছি না।আমি উনার রুমে বসে আছি।

“মেঘ তুমি এইখানে?”
উনাকে দেখামাত্র জড়িয়ে ধরলাম।
“মেঘ কি করছ।একটু পর আমার বিয়ে।এভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরছ কেন?আমার বউ এখন যদি এই রুমে এসে এইসব দেখে ও অনেক রেগে যাবে।”
“যাক রেগে। আমার তাতে কিছু যায় আসে না।”(কেঁদে)
“মেঘ এইভাবে কাঁদছ কেন? কি হয়েছে?”
“আপনি এই বিয়ে করবেন না প্লিজ,”
“কেন?তুমিতো নিজে সব কিছুর ব্যবস্থা করলে আর এখন বলছ এই বিয়ে না করতে। তুমি আসলে একসেক্টলি কি চাও বলোতো?”
…….
“দেখো তোমার কান্না দেখার সময় আমার নেই।যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।”
“আমি আপনাকে ভালবাসি।”
“কিহ!”
উনার টি-শার্টে নাক আর চোখের পানি মুছে,”আমি সত্যি বলছি।”
“মেঘ এখন এইসব কথা আমাকে বলে লাভ নেই।আমি এখন অন্য কাউকে বিয়ে করতে যাচ্ছি। এই কথা বলার অধিকার তুমি হারিয়ে ফেলেছ।”
“কিচ্ছু হারায়নি।তবে আপনি কিছু না করলে সত্যি সত্যি আমাকে সব হারাতে হবে।আপনিইতো একদিন বলেছেন সময় থাকতে নিজের প্রিয় জিনিসের উপর অধিকার প্রয়োগ করে তা নিজের করে নিতে যাতে অন্য কেউ আমার প্রিয় জিনিসের উপর হাত বাড়াতে না পারে।সেই কথার অর্থ আজ বুঝেছি।আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটা হলো আমার ভালবাসার মানুষটা যাকে আমি খুব ভালবাসি।কিছু হওয়ার আগে আমি আমার ভালবাসার মানুষের উপর অধিকার প্রয়োগ করছি যাতে অন্য কেউ তাকে ছিনিয়ে নিতে না পারে।আজ সঠিক সময়ে আমি এই কথা বলেছি। আপনিই আমাকে একদিন জিজ্ঞাস করেছিলেন আমার কাছে ভালবাসা শব্দটার মানে কি?আজ আমি বলছি আমার কাছে ভালবাসার শব্দটির আরেকটা অর্থ হল মায়া।ভালবাসা মানেই মায়া। আপনি আমার অভ্যাস হয়ে গেছেন যাকে ছাড়া আপনি অচল।যাকে ছাড়া আমি পথ চলার সঠিক রাস্তা খুঁজে পায় না।প্রতিটি নতুন সকালে নতুন করে বাঁচার জন্য আমার আপনাকে চায়। আমার সবটাতে জুড়ে আপনি।আর আপানার সবকিছুতে আমার মায়া কাজ করে।আর এইজন্য আপনাকে আমি এত ভালবাসি।”
“আচ্ছা।আমার সব কথা তাহলে তোমার মনে আছে দেখছি।আরও একটা কথা বলেছিলাম সেটা কি ভুলে গেছ?”
“কোন কথা”
“মনে করে দেখো”
“ও মনে পড়েছে”
“হুম গুড।সে কথা যদি মনে পড়ে তাহলে সেইভাবে কথাটা বললে আমি ভেবে দেখবো কি করা যায়”
“আচ্ছা প্লিজ ১মিনিট।”
“এত টাইম হবে না।
“আচ্ছা আচ্ছা বলছি,তন্ময় আমি তোমাকে ভালবাসি।”
“মুচকি হেসে,কি বললে আমি শুনে নি,আরেকবার বলো,”
“আমি তোমাকে ভালবাসি তন্ময়। প্লিজ আমাকে বিয়ে করে নাও।আমি তোমার বউ হতে চাই।আমি আমার জায়গা আর অন্য কাউকে দিতে চায় না।একবার ভুল করেছি। আর করতে চাই না প্লিজ”
“সত্যি তো”
“হ্যা”
“আচ্ছা যাও তাহলে দেখি কি করা যায়।একটা কাজ করো মায়ের রুমে যাও। সেখানে বিয়ের শাড়ি,গয়নাগাটি রাখা আছে।সেগুলো পড়ে বউয়ের মতন করে সাজো গিয়ে।”
“আর প্রিয়া,ওর কি হবে,”
“দেখো মাথা খারাপ করবে না।একটু আগে কি বলেছ? আমাকে ভালবাসো তাই না? তাহলে অন্য আরেকজনকে কেন মাঝখানে টেনে আনছো।তুমি কি আবারও ঝামেলা পাকাতে চাও।যদি মনে এরকম ভাবনা থাকে তাহলে আমাকে বিয়ে করার চিন্তা বাদ দাও।আমি প্রিয়াকে বিয়ে করে নিবো।”
“না, না আমি আর কারোর কথা ভাববো না।”
“হুম রেডি থাকো।আমি আমার পরিচিত কয়েকজনকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।ওরা সব সামলে নিবে।তোমাকে গাড়িতে করে কমিউনিটি সেন্টারে নিয়ে যাবে।আর আমিও রেডি হয়ে যাচ্ছি। “

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে