স্যার যখন স্বামী
পার্ট_২২
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
৬ মাস পর আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের পরীক্ষা দিলাম।পরীক্ষা ভালোই হয়েছে।আর ভালো হবে বাই না কেন আমাকে উনি তেমনভাবেই পড়িয়েছেন।
রাতে,,
তন্ময়ের মোবাইলে একটা কল আসলো।অনেক্ষণ ধরে কল আসছিলো।জরুরি কল মনে করে তা রিসিভ করলাম
“হ্যালো,”
“হ্যালো মেঘ বলছ।”
“সাগর!”
“ভয় পেয় না।খারাপ খবর শুনানোর জন্য কল করেনি।ভালোইই হয়েছে কলটা তুমি ধরেছ। আসলে মেঘ আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।তোমার সাথে আমি যে ভুল করেছি,হঠাৎ করে তোমার জীবনে আবার এসে তোমার সংসারে আগুন লাগিয়ে আমি যে অন্যায় করেছি জানি তা ক্ষমার যোগ্য না।তারপরও প্লিজ পারলে আমাকে মাফ করে দিও।আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।তন্ময় আমার ভুলটা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।তুমি সত্যিই অনেক ভাগ্যবান তন্ময়ের মতন একজন জীবনসঙ্গী পেয়ে।তোমার সংসার জীবনে সুখে থাকো সেই দুয়া করছি।ভালো থেকো।”
এটা কি হল?উনার মোবাইলে সাগর কল দিয়েছে।তার মানে এতদিন ধরে সাগরের সাথে উনার যোগাযোগ ছিল।
.
.
“একটু আগে আপনার মোবাইলে কল এসেছিলো।”
“তাই নাকি?রিসিভ করেছিলে?”
“হ্যা।”
“কে কল দিয়েছিলো।”
“সাগর ”
“সাগর কল দিয়েছিলো।কেন কল দিয়েছিলো সেটা কি জানতে পারি।”
“ও নাকি ওর ভুল বুঝতে পেরেছ আর সেটা আপনার জন্যই নাকি হয়েছে।আপনি কি করে এতসব করলেন।”
“জানতে চাও।”
“হ্যা।”
“তাহলে শুনো।সাগরের ছোট বোনকেতো চিনোই।”
“হ্যা চিনি তো।”
“হুম নূপুরের সাথে একটা ছেলের রিলেশন ছিলো প্রায় একবছরের মতন। এক বছরের সম্পর্কের পর নূপুর জানতে পারে সে প্রেগন্যান্ট।এই কথাটা তার প্রেমিককে বলে আর এও বলে যে তাকে যেন তাড়াতাড়ি বিয়ে করে। সে নূপুরকে অনেক আজেবাজে কথা শুনিয়ে দিয়ে তাদের রিলেশনটা ব্রেকআপ করে দেয়।এর কিছুদিন পর সাগর জানতে পারে তার বোনের সাথে একটা ছেলের রিলেশন চলছে।সাগর তার দলবল নিয়ে ওই ছেলেকে ইচ্ছেমতন পিটায়।এরপর নূপুরের প্রেমিক ঠিক সাগরের মতন সে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। এদিকে নূপুরের মা বাবা নূপুরের বিয়ে ঠিক করে।নূপুর কিছু ভেবে পাচ্ছিলো না সে এই অবস্থায় কি করবে।তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় সে আত্মহত্যা করবে।ওকে সেদিন আমি রেললাইনে দেখেছিলাম।বুঝতে পারছিলাম ও কিছু একটা ভুল করতে যাচ্ছে তাই তাকে আমি অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে সেখান থেকে নিয়ে আসি।নুপূরের বিয়ের দিন আমি আমার ফ্রেন্ডকে নিয়ে সেখানে যায়।কারণ আমি জানতাম নূপুরের সে প্রেমিক সেদিন সাগরের হাতে মার খাওয়ার পর চুপ করে থাকবে না।সে ঠিকই একটা অঘটন ঘটাবে।আমার এই ধারণা সত্যি হল। সেই ছেলে বিয়ের দিনে বরকে জানায় নূপুরের অনেক ছেলের সাথে রিলেশন ছিলো আর সে প্রেগন্যান্ট।এই খবর শুনার পর পাত্রপক্ষ এই বিয়ে ভেঙ্গে দেয়।যেই ফ্রেন্ডকে নিয়ে আমি বিয়ের বাড়িতে যায় তাকে নূপরের সম্পর্কে আমি অনেক আগে সব কিছু বলে রেখেছি।সে সব জেনে শুনে নূপুরকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলো।কারণ সে জানে এতে মেয়েটার কোন দোষ ছিলোনা। তাছাড়া সে নিজেও নূপুরকে অনেক পছন্দ করে ফেলেছিলো সেজন্য নূপুরকে বিয়ে করার কথাটা আমাকে অনেক আগে বলেছিলো।নূপুরের মা বাবা আর সাগর যখন পাগলের মতো প্রলাপ বকছিলো সেদিন আমি আর আমার ফ্রেন্ড তাদেকে সান্ত্বনা দিই আর আমার ফ্রেন্ডের সাথে নুপূরের বিয়ের প্রস্তাব দিই।সেদিনই সাগর আমার হাত পা ধরে মাফ চাই।আর সে নিজের ভুল বুঝতে পারে।কারণ আরেকটা মেয়ের জীবন আর ভালবাসা নিয়ে সে যে খেলা খেলেছিলো আর সেই খেলার এইরকম প্রতিউত্তর সে এইভাবে পাবে কোনদিন ভাবে নেই।নিজের বোনের চোখের কান্না আর কষ্ট দেখে সে সেদিন তোমার কান্না,কষ্ট অনুভব করেছিলো।আর এইও বুঝতে পেরেছে আমাদের সংসারে আগুন লাগিয়ে সে কতটা জঘণ্য কাজ করেছে।সাগর তোমার সাথে যে অন্যায় করেছিলো সে ভুলের মাশুল তার বোনকে পেতে হয়েছে।সে ভেবেছিলো ওর এই ভুলের জন্য ওকে কোনদিন শাস্তি পেতে হবে না।কিন্তু ও হয়ত একটা কথা ভুলে গেছে উপরে একজন আছেন ওনি সবকিছু দেখছেন।সাগরের পাপের বিচার তিনি করেছেন।”
………
“তোমার সামনে আসার সাহস এখন ওর নেই।তাই আমার মোবাইলে আজকে কল করে তোমার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে।
আমি চেয়েছিলাম ওকে অন্যভাবে শাস্তিটা দিতে কিন্তু পরে ভাবলাম আমি যদি ওর মতন আচরণ করি তাহলে ওর আর আমার মধ্যে পার্থক্য কোথায়।আমি ওর বিপদের দিনে ওকে সাহায্য করে ওর ভুলটা ধরিয়ে দিয়েছি।আর এটাই হচ্ছে আমার পক্ষ থেকে ওর শাস্তি।সেদিনের সে সাহায্য পেয়ে সে লজ্জিত হয়েছিল ওর বিবেক আর মনের কাছে। ও অনেক অপমানিত হয়েছিল সেদিন । এর থেকে বড় শাস্তি আর কি হতে পারে।”
“এতকিছু হয়ে গেল আর আমি আজকে এইসব জানছি।”
“জ্বী ম্যাডাম।আপনার জন্য এই গুড নিউজটা সারপ্রাইজ হিসেবে রেখেছিলাম।তোমার জন্য একের পর এক সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।সঠিক সময়ে সেগুলো দেখতে পারবে।”
“সারপ্রাইজ…..”(ঘামতে ঘামতে)
“হুম সারপ্রাইজ। এখন আরেকটা সারপ্রাইজ আছে।এই নাও পেপার।এখানে সাইন করে দাও।”
“কিসের পেপার।”
“ওমা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে?ডির্ভোস পেপার।”
“ডি…ডির্ভোস পেপার…….”
“আজ্ঞে হ্যা….শর্ত অনুযায়ী ৬মাস শেষ। তুমি তো এটাই চেয়েছিলে।নাও তাড়াতাড়ি সাইন করো এতে।এরপর তো তুমি মুক্তি পেয়ে যাবে।আর তারপর আমার প্রিয়াকে বিয়ে করে ঘরের বউ করে আনবো।”
…….
“আরে এইভাবে তাকিয়ে আছে কেন?আচ্ছা বাবা আচ্ছা তোমাকেও দাওয়াত দিবে।খুশিতো।নাও তাড়াতাড়ি শুভ কাজটা শেষ করো।”
ডির্ভোসটা আগে হলে কি এমন হতো।এই ৬ টা মাস উনার সাথে থেকেছি।আগের থেকেও উনাকে বেশি ভালবেসেছে।উনাকে ছেড়ে থাকতে পারবোনা।উনি কি এটা আদৌও বুঝেন না।তখন যা বলার বলেছি তাই বলে তখনকার কথা মেনে আমাকে এখন ডির্ভোস দেওয়ার মানে হয়।
“আরে কি হল?হাত কাঁপছে কেন?আমি সাহায্য করবো।”
“না, লাগবে না আমি পারবো।সাইন করার আগে একটা কথাই শুধু জিজ্ঞাস করবো আপনি কি প্রিয়া ম্যাডামকে সত্যিই ভালবাসেন।”
“হ্যা অনেক ভালবাসি।আর অনেক আগে থেকেই ভালবাসি।অনেক আগে এই কথা তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারেনি।”
“আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি।এই নিন সাইন করে দিলাম।আপনার বিবাহিত জীবন শুভ হোক।ভালো থাকবেন।”
“আরে কোথায় যাচ্ছ।”
“আপনার সাথে একসাথে থাকার অধিকার হারিয়ে ফেলছি।তাই চলে যাচ্ছি।”
“আরে সেটাতো বুঝেছি। কিন্তু এখন কোথায় যাচ্ছ।”
“মা বাবার কাছে,”
“তোমাকে সেখানে পৌঁছে দিয়ে আসি।”(মুচকি হেসে)
“না থাক লাগবে না, আমি একা যেতে পারবো”
“লাগবে,বেশ লাগবে।এত বেশি বুঝ কেন।চলো বলছি।”
হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন।খুব কান্না পাচ্ছে। উনার সব কিছুর উপর অধিকার আজকে থেকে আমি হারিয়ে ফেলেছি।আমার এত্ত কষ্ট হচ্ছে আর উনি মুচকি মুচকি হেসেই যাচ্ছেন।ইচ্ছে করছে উনার গলাটা টিপে ধরি।রাক্ষস একটা।
“আহারে এতো দেখি কেঁদে নাকের পানি চোখের পানি সব এক করে ফেলছে।এইভাবে তোমাকে কাঁদতে দেখলে তোমার মা বাবা খারাপ কিছু ভাববেন।চোখের পানি মুছে ফেলো।এই নাও টিস্যু।”
………
“দেখো তুমি যা চেয়েছো আমি তাই করেছি। সুতরাং এত কান্নাকাটি করার কি আছে বুঝতে পারছি না।”
“সুখে,খুশীতে কাঁদছি। ও আপনি বুঝবেন না।”
“আমি না বুঝলে দুনিয়ার আর কেউ তোমাকে বুঝবে না।বুঝলেন ম্যাডাম।”