স্যার যখন স্বামী
পার্ট_২১
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
“আপনি” (জোরে চিল্লিয়ে)”
“মুচকি হেসে, good morning মেঘ”
“আপনি এখানে কি করে?”
“তুমিতো চিঠিতেই লিখে আসলে তুমি বাড়িতে।তাই তোমার পিছে পিছে চলে আসলাম।”
“দেখুন আপনি আমাকে বলেছিলেন আমি যাতে আপনাকে না বলে কোথাও না যায়। কোথাও গেলে আপনাকে যাতে জানিয়ে যাই।তাই……।আর তাছাড়া আপনাকে বলেছিলাম না আমি আপনার সাথে থাকতে পারবোনা।”
“কালকের কথা বাদ দাও।আমি সব ভুলে গেছি।চলো বাসায় চলো।”
“এইসব কথার মানে কি?ওইদিন আমাকে অনেক বাজে কথা শুনিয়েছেন। তাছাড়া আমি গেলে আপনার প্রিয়ার কি হবে।”
“মানে কি?আবারও কালকের মতন আজগুবি কথা বলছো।”
“আজগুবি না।তাহলে এই ছবিতে এগুলো কি?এখনো বলবেন আমি আজগুবি কথা বলছি।”
“এই ছবি তুমি কোথা থেকে পেলে?”
“সে প্রশ্নের উত্তর আমি দিবো না।”
.
.
“দিতে তুমি বাধ্য।কারণ সে অধিকার আমার আছে।”
“আপনি কালকেই সে অধিকার হারিয়ে ফেলেছেন।আর কোন কথা না।আমি আপনার সাথে থাকতে পারবো না,ব্যস।যে অবিশ্বাস আমার জন্য আপনার তৈরী হয়েছে তা কখনো দূর হবে না।আমি আপনার সাথে থাকতে পারবোনা।”
“তাহলে কি চাও তুমি?”
“ডির্ভোস”
এই কথা শুনে উনি আমার গলা চেপে ধরলেন।মনে হচ্ছিল আমাকে এখনি মেরে ফেলবেন।এরপর কি মনে করে আমাকে ছেড়ে দিলেন।
সারাদিন গেলো উনার কোন খোঁজখবর পেলাম না।মোবাইলটাও অফ রাখলেন।কোথায় গেছেন তা জানা ছিলোনা।খুব টেনশনের ভিতর দিয়ে দিন কাটলো।রাতে উনি বাসায় এলেন।আজব উনি এখনো এখানে আছেন।ঢাকায় যান নি।
বাসায় এসে মা বাবার সাথে হেসে কথা বলছেন।এমন ভাব যেন কিছুই হয় নি।উনার এই আচরণ দেখে আমার টেনশন আরও বেড়ে গেল।
আমি রুমে গেলাম।খুব টেনশন লাগছে।
“আরে মেঘ তুমি এখানে।শুনো কালকে রেডি থাকিও বাসায় যাব।”
“মানে?কার বাসা?”
“কেন আমাদের বাসা।”
“আপনি কি সকালের কথা ভুলে গেছেন।”
“সকালের কথা…ও আচ্ছা…..।ভুলে নি আচ্ছা ডির্ভোসের কথাই তো।সে দিয়ে দিবো।এই বিষয় নিয়ে তোমাকেকে চিন্তা করতে হবে না।তবে আমারও কিছু শর্ত আছে।”
“কি…..”
“দেখো শর্ত হচ্ছে এই যে,ডির্ভোস পেতে হলে আমাদের ৬মাস স্বামী-স্ত্রীর মতন একসাথে থাকতে হবে।এর মধ্যে ডির্ভোস পেপার তৈরি হয়ে যাবে।ডির্ভোস মুখে বললেই তো আর হলো না।এর অনেক নিয়ম আছে।এত সহজে ডির্ভোস হচ্ছে না।”
“তোমার সাথে আমি থাকব এটা তুমি ভাবলে কি করে।আমি তোমার এই শর্ত মানতে পারবোনা। ”
“তাহলে এই ডির্ভোসের চিন্তা বাদ দাও।যদি সত্যিই ডির্ভোস চাও তাহলে এই শর্ত মানতেই হবে।”
…..
.
.
উফ এত টেনশন আমি কোথায় রাখি।ভাবলাম আমার প্ল্যানমতন সব হবে কিন্তু এখন!এত ঝামেলা আমাকে পোহাতে হবে আমি ভাবতে পারি নি।
আচ্ছা কালকে ওইখান থেকে আসার পর সাগরতো একবারের জন্যও কল দিলোনা।আর আমার উনি উনার মাথায় কি ঘুরপাক খাচ্ছে বুঝতে পারছি না।উনার সুবিধার জন্য আমি কত কি করলাম আর উনি আমার সব কাজ পন্ড করে দিলো।
.
.
মোবাইলটা হাতে নিয়ে রাখছি।আর বারবার মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছি। সাগর কল বা মেসেজ দিলো কিনা।ওর মনে এখন কি চলছে সেটা জানা দরকার।কারণ আমি চাই না ও রাগের বশে তন্ময়ের কোন ক্ষতি করুক।
“যার কল বা মেসেজের জন্য অপেক্ষা করছ সে আর কল দিবে না।”
“মানে……”
“তোমার সিমটা আজকে সকালে আমি নিয়ে নিয়েছি।আর সাগর আমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।ওর কি ব্যবস্থা করতে হবে তা আমার জানা আছে।ওইসব নিয়ে তোমার না ভাবলেও চলবে।”
“আপ…পনি…..!”
“আপনি না তুমি,সকালে আমাকে তুমি করে ডেকেছ শুনেই ভালো লাগল।”
“আমি কখন…..”
“মুচকি হেসে…..পিচ্চি মেয়ে আমাকে “তুমি”কখন ডেকেছ সেটা বড় কথা নয় এখন থেকে আমাকে তুমি করে ডাকবে সেটাই বড় কথা।”
“কি……”
“হুম,নিজেকে যত চালাক মনে করো ততটা চালাক তুমি না।আমার কাছে তুমি আগে যেই বোকাটা ছিলে এখনো সেই বোকাটাই রয়ে গেছো। চাইলেও আমার সাথে চালাকি করে নিজের কাজটা সারতে পারবে না।”
কি বলছেন এইগুলো উনি…..উনি কি তাহলে সব বুঝে গেলেন।কেমন করে…. আমিতো অনেক দক্ষতার সাথে কাজটা করেছি তাহলে উনি কিভাবে টের পেলেন।না… না এত সহজে উনার টের পাওয়ার কথা না।নিশ্চয় আমাকে উনার কথার ফাঁদে ফেলে বোকা বানাচ্ছেন।সেটাই হবে।
এইসব নিয়ে চিন্তা করে ঘুমিয়ে গেলাম।
.
.
“মেঘ রেডি হও তাড়াতাড়ি,আজকে বাসায় যাব”
“কি?”
“হুম, শাশুড়ি মাকে জানিয়ে দিয়েছি আজকে আমরা চলে যাচ্ছি।”
“মানেটা কি?আমাদের ডির্ভোস”
“কালকে কি বললাম ডির্ভোস পেয়ে যাবে।কিন্তু তার আগে আমার শর্তটা মানতে হবে।”
“কোন শর্ত মানবো না।”
“দেখো ডির্ভোসটা তোমার জন্য যেমন জরুরি ঠিক তেমনি আমার জন্য জরুরি। কারণ এই ডির্ভোসের পর আমি প্রিয়াকে বিয়ে করব।”
“প্রিয়াকে বিয়ে…..”
“আরে হ্যা বিয়ে,তুমিই না সেদিন বললে।অবশ্য তুমি আগেভাগে ব্যাপারটা বুঝে গেছো ভালোই হয়েছে।যতটা বোকা তোমাকে ভেবেছিলাম ততটা বোকা তুমি না।”
উনি তো দেখি আমাকে অনেক কনফিউজডে ফেলে দিচ্ছেন।কালকে আমাকে বোকা বললেন আর আজকে। উফ……। আর আজকে এইসব এগুলো কি বলছেন প্রিয়া ম্যাডামকে বিয়ে….।আমার কথাটা একবারো ভাবলেন না।এই কথা শুনে আমার যে কত কষ্ট হবে সেটা একবারো ভাবলো না।পরে দিয়ে আবার মনে হল আমি যেটা চাচ্ছি সেটাই তো হচ্ছে তাহলে আমি এইসব কি ভাবছি?উনি প্রিয়াকে বিয়ে করবে নাকি সীমাকে তাতে আমার কি?যাকে খুশি তাকে বিয়ে করুক।
.
.
“কি হয়ছে?আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
…….
“মুচকি হেসে কিছু না।রাগলে তুমি যে কি সুন্দর করে কপাল কুচকাও সেটাই দেখছি।”
“হুহ।”
“চলো এবার যাওয়া যাক।”
“না,যাবোনা।”
“সত্যিতো।”
“বুঝছি তুমি চাওনা আমি প্রিয়াকে বিয়ে করি
কিন্তু তোমার এই প্ল্যান আমি ভঙ্গ করে দিবো। আমি যেভাবেই হোক প্রিয়াকে বিয়ে করবো।আর সেজন্য তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে।আর হ্যা এটা ভাবিও না আমি প্রিয়াকে বিয়ে করার সাথে তোমার আমার একসাথে থাকার সম্পর্ক কি?আসলে তোমার মা বাবাকে আমি এবার কথা দিয়েছি নিজেকে নিজে কথা দিয়েছি যে করেই হোক আমার এই অকর্মণ্য ছাত্রীকে দিয়ে ভালো রেজাল্ট করাবো। সেজন্য ভালো করে পড়তে হবে।ভালো করে পড়তে হলে ভালো একজন টিচার প্রয়োজন।আর একজন ভালো টিচারের গাইডে সবসময় থাকলেই ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব।আমি একজন ভালো টিচার।সেজন্য আমার গাইডে এই ৬মাস তুমি থাকবে।আমার কাছ থেকে ভালো করে পড়া শিখে ৬মাস পর পরীক্ষা দিয়ে একটা ভালো রেজাল্ট করবে।আর এরপরেই তোমার মুক্তি।”
“আমাকে কেউ ধরো। মাথাটা ঘুরে যাচ্ছে।” “উফ….মাথা ঘুরে যাচ্ছে।”
“আরে….আরে…..কি হলো এখনি যদি মাথা ঘুরায় তাহলে সামনের দিকে আগাবে কি করে।খেলা সবে মাত্র না শুরু। আগে আগে দেখো হতা হে কেয়া।”
……..মাথা ধরে বসে আছি।জানিনা আর কি কি দেখতে হবে।
আমাকে কোলে করে উঠালেন।
“বললাম না আমি যাব না পড়ালেখাও করবো না পরীক্ষাও দিবো না।তারপরও জোর করে কেন নিয়ে যাচ্ছেন।চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে কথা বলছি।কিন্তু উনার কোন পাত্তাই নেই।”
“কোন কথা শুনতে চাই না।”এই বলে গাড়িতে উঠিয়ে আমার মুখ হাত পা বেঁধে দিলেন।রাক্ষস একটা।
.
.
বাসায় এসে একটাও কথা বলি নি উনার সাথে।রাগ করে ছিলাম।কিন্তু উনার কারণে রাগ করে থাকারও উপায়ও নেই।আমার রাগ ভাঙ্গিয়েই ছাড়লেন।
দিন দিন উনার প্রেমেই পড়ে যাচ্ছি। ইশ শুধু ৬ মাসের জন্য না হয়ে সারাজীবনের জন্য উনার সাথে থাকতে পারতাম কতই না ভালো হত।
দেখতে দেখতে ৬মাস কেটে গেল।এই ৬ মাসে সাগরও কল দেয় নি আর আমার উনি প্রিয়া ম্যাডামের সাথেও কথা বলেননি।ভার্সিটিতেও উনি প্রিয়া ম্যাডামের সাথে কথা বলেন তবে সেটা কমই।