স্যার যখন স্বামী
পার্ট_১৯
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
“মেঘ,ঘুম থেকে উঠ,”
“না,”
“কেন?আজকে ভার্সিটি যাবে না।”
“না,আজকে যাব না।ঘুমাতে দেন।”
“তুমি যাবে সাথে তোমার ঘাড়ও যাবে।উঠো বলছি।”
…..
“দাঁড়াও বলে আমার কান আর গালে কামড় বসিয়ে দিলেন।”
“উহ্ এটা কি হল?এভাবে কেউ ঘুম থেকে উঠায়।”
“আমি উঠায়।তাড়াতাড়ি উঠ নাহলে আরেকটা কামড় খাবে।”
“না, না উঠছি,উঠছি।”
“হুম গুড গার্ল।”
.
.
ভার্সিটি শেষ করে গেইটের বাইরে আসলাম।উনার জন্য অপেক্ষা করছি।
“কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলে।”
“৩০ মিনিট ধরে,”
“ওহ,আসলে আজকে একটু দেরি হয়ে গেছে।নেক্সট টাইম এরকম আর হবে না।উঠ গাড়িতে উঠ।”
“হুম”
“মেঘ তোমার কি বেশি মন খারাপ।”
“না”
“না বললে কি হবে। আমি কি চোখে কিছু দেখতে পারি না।”
“আরে কোথায় নিয়ে আসছেন।”
“কেন চোখে দেখতে পারো না নাকি?পার্কে আসছি।”
“এখানে কেন নিয়ে আসছেন আমি বাসায় যাব।”
“চুপ থাকো আর এখনি গাড়ি থেকে নাম।”
.
.
পার্কের বেঞ্চে বসে আসি।মনটা আসলেই ভালো নেই।কি করা উচিত।উনাকে সব সত্যি কথা বলতে চাই।কিন্তু খুব ভয় হয় পরে আবার আমাকে না অপমান করে বসেন।ভালবাসার মানুষের থেকে সব দুঃখ কষ্ট সহ্য করা গেলেও তার থেকে পাওয়া অপমান কখনো সহ্য করা যায় না।উনাকে যদি বলি স্যার আমি আপনাকে ভালবাসি।তখন যদি উনি আমাকে অপমান করে বলেন, তোমার জন্য এতদিন এত কিছু করে আজকে আমার এত কষ্ট আর শ্রমের এই মূল্য দিলে।আমি তোমাকে না প্রিয়াকে ভালবাসি।আমাদের ভালবাসার মাঝখানে তুমি ভুল করে এসে গেছ।যদি এভাবে আমাকে কথাগুলো শুনায়। নাহ আর যাই কিছু হোক এগুলো আমি সইতে পারবোনা।এর থেকে চুপচাপ থাকায় ভালো।
“মেঘ আমি অনেক্ষণ ধরে তোমাকে দেখছি।তুমি কেমন যেন আনমনা হয়ে আছো। সত্যি করে বলতো কি হয়েছে তোমার।”
…….
আমার দুহাত ধরে,”দেখো মেঘ তুমি আমার স্ত্রী হও।তোমার সাথে খারাপ কিছু হলে সেটা আমাকে বলতে পারো।একটা মেয়ের কাছে প্রথমে তার পরিবার এরপর ওই মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর তার স্বামীই তার সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়।কাছের মানুষকেই তো সবকিছু শেয়ার করা উচিত।নাহলে সে কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে কেমন করে।আমি শুধু তোমার সুখের দিনের সঙ্গী নয়,তোমার দুঃখের দিনের সঙ্গী।তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হলো আমি তোমার বেস্টফ্রেন্ড হতে চাই।তাই তুমি নির্ভয়ে আমাকে সব বলতে পারো।কথা দিচ্ছি আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী সব কিছু ঠিক করে দিবো।”
খুব ইচ্ছে করছে সব কিছু খুলে বলতে। কিন্তু আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন।খুব কান্না পাচ্ছে।এত কষ্ট হচ্ছে ইচ্ছে করছে উনাকে একটু জড়িয়ে ধরে মন খুলে কাঁদি।কেঁদে মনের সব দুঃখ ভিতর থেকে মুছে ফেলি।
হঠাৎ উনি নিজেই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।খুব কাঁদছি উনাকে জড়িয়ে।
“মেঘ জোর করবো না তোমাকে।তবে যখন তোমার মন চাইবে তখন আমাকে সব খুলে বলিও।প্লিজ আর কেঁদো না।সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“হ্যা সব যাতে ঠিক হয়ে যায়।”
.
.
আজকেও সাগর রাতে আমাকে কল দিয়ে অনেক কিছু বললো।শুধু ভাবছি কি করা যায়।কি করে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। হঠাৎ স্যার এসে বললেন,
“মেঘ তোমাকে কিছু বলতে চাই,”
“হ্যা বলেন,”
“আসলে তুমি ব্যাপারটা কেমন করে নিবে বুঝতে পারছি না।অনেক আগেই এই কথাটা তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম।কিন্তু অনেক হয়েছে। আর পারছি না।আমি তোমাকে আমার কিছু গোপন কথা বলতে চাই।”
তার মানে উনি বলতে চান উনি প্রিয়া ম্যাডামকে ভালবাসেন।এই কথাটা এখন উনার কাছ থেকে শুনতে হবে!
“মেঘ বলছিলাম যে,….”
উনার মোবাইলে কল আসলো।হ্যালো প্রিয়া বলো,
মেঘ আমি একটু আসছি।প্রিয়া কল দিয়েছে।
আমি জানতাম আমার সুখের দিন তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে আসবে।আসলে এই কপালে এত সুখ নেই।যখন উনাকে ভালবাসতাম না তখন উনার মূল্য বুঝি নি।আর এখন উনাকে ভালবেসে উনার মূল্য বুঝছি।বুঝতে পারছি উনাকে পাওয়া এত সহজ না।উনি এখন অন্য কারোর।আর এটা ভাবতেই খুব কষ্ট হচ্ছে।
“মেঘ তোমাকে বলছিলাম যে….”
“থাক আজকে আর বলার দরকার নেই।অন্য আরেকদিন বলিয়েন।অনেক রাত হয়ে গেছে।ঘুমাবো এখন।”
আসলে উনার কাছ থেকে সেই গোপন কথা শুনতে চাই না। জানি উনি কি বলবেন।আরও কয়েকটা দিন উনার সাথে থাকতে চাই। থাক না মিথ্যা সুখের অভিনয় করে হলেও উনার সাথে আমার দিনগুলো কাটাতে পারলে ক্ষতি কি?এখন উনি যদি সব সত্য কথা বলে দেন তাহলে আমি সেটা সহ্য করতে পারবোনা।আরও কয়েকটা দিন উনার সাথে থেকে কিছু স্মরণীয় স্মৃতি মনের ভিতর গেঁথে রাখতে চাই।যাতে এই স্মৃতিগুলো দিয়ে বাকি জীবনটা আমি পাড় করতে পারি।
.
.
গাছের নিচে বসে আছি। দিন যত আগাচ্ছে মনের ভিতরের কষ্টগুলো দিন দিন জমে বড় হচ্ছে।আর আমার কষ্টের মাত্রাকে আরো বাড়াচ্ছে।
“মেঘ তোর কি কিছু হয়েছে।”
…..
“মেঘঘঘ……”
“হুম”
“কি হয়েছে বলতো তোর। এত ডাকছি কথা কানে যাচ্ছে না।”
“কিছু হয় নি।”
“দেখ একদম মিথ্যা বলবি না।সত্য কথা বল।আমি সব সত্যি জানতে যায়।”
“বললাম না কিছু না,”
“ঠিকাছে তাহলে সাগর ভাইকে এখনি কল করে এখানে ডাকছি।উনাকেই আমি জিজ্ঞাস করবো?”
“পাগল হয়ে গেছিস”
“কেন পাগলের কি দেখলি তুই? তোর হাসবেন্ডকেই না কল দিয়ে এখানে আসতে বলছি।দাঁড়া এখনি কল দিচ্ছি।”
.
.
“তাসপিয়া দোস্ত এরকম করিস না।সাগরকে কল দিস না”
“কেন দিবো না।একশবার দিবো। তোর কোন কথা শুনছি না।তুই যেহেতু আমাকে কিছু বলবি না তাহলে তোর হাসবেন্ডের থেকেই সব সত্যি কথা জেনে নিবো।”
“তুই তখন থেকেই সাগরকে আমার হাসবেন্ড বলে বেড়াচ্ছিস। আমার হাসবেন্ড সাগর না তন্ময়….. তন্ময় স্যার।”
“মানে….”
তাসপিয়াকে সব সত্যি কথা বলে দিলাম।আর পারছি এই সত্য কথা লুকিয়ে রাখতে।এতদিন কাউকে বলতে পারে নি আমার হাসবেন্ড কে? কিন্তু আজকে তাসপিয়ার সামনে নিজেকে উনার স্ত্রী হিসেবে বলতে পেরে খুব শান্তি লাগছে।আজকে সব সত্যি কথা বলতে পেরে এক কষ্টের বোঝা থেকে মুক্তি পেলাম।
.
.
ইদানীং প্রায়ি দেখি প্রিয়া ম্যাডামের সাথে উনার সখ্যতা বেশি।আর সাগরের জ্বালাতন বেড়েই চলেছে। মোবাইলে আমার স্বামী আর প্রিয়া ম্যাডামের ছবি প্রায়ি পাঠাত।আমার স্বামী আর ম্যাডাম হাত ধরে বসে আছে এমন কয়েকটা ছবি দেখে নিজের থেকে খারাপ লাগা শুরু করত।কিছু একটা তাড়াতাড়ি করা উচিত।এর একটা শেষ হওয়াই উচিত।
তার আগে তাসপিয়ার কাজটা শেষ করে নিই।আজকে উনার সাথে বাসায় যায় নি।বলেছি তাসপিয়ার সাথে যাব। উনাকে বাসায় চলে যেতে বলছি।
“সাব্বির আজকে আমার সাথে পার্কে যেতে পারবে।”
“কেন না, অবশ্যই।তুমি যেখানে যেতে বলবে আমি সেখানে যেতে রাজি আছি।”
ওকে নিয়ে পার্কে গেলাম।যে কাজের জন্য গেলাম সে কাজটা হয়ে গেছে।সাব্বিরকে সব বুঝিয়ে দিলাম।এখন ওকে যে কাজটা দিয়েছি সেটা আজকে বিকালে করবে।এখন আরও কিছু কাজ বাকি আছে সেটা কালকে আমাকে করতে হবে।
.
.
“তুমি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছানোতো মেঘ।”
“মানে, আমি আবার কি লুকাবো।”
উনার চোখের দৃষ্টি জানি আজকে কেমন। মনে হচ্ছে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি।
উনি কিছুই আর বললেন না।এরপর থেকেই চুপচাপ হয়ে গেলেন।ভেবেছিলাম যাওয়ার আগে আমার মনের জমানো সব কথা,স্বপ্ন উনাকে বলবো কিন্তু উনার কোন পাত্তা নেই।কেন জানি উনি বারবার আমাকে ইগ্নোর করছেন।
সে রাতে উনি কোন কথা বললেন না আমার সাথে। এরপরের আর কয়েকটা দিন এভাবেই চলতে লাগল।কোন কথা বলতেন না আমার সাথে।মনে হচ্ছিল উনি আমার থেকে একটু করে করে অনেক দূর সরে যাচ্ছেন।
সাগর আমাকে আর সময় দিতে পারছে না।কালকে ওর সাথে দেখা করতেই হবে।নাহলে ও কিছু একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলবে।আর এবার সে হুমকি দিয়েছে কালকে আমার সাথে দেখা না করলে ও আমার স্বামীর ক্ষতি করবে।যা আমি কিছুতেই হতে দিবো না।
আজকেই তন্ময়ের সাথে আমার শেষ রাত। এরপর উনি নিজেই স্বেচ্ছায় আমাকে ছেড়ে দিবেন।খুব ইচ্ছে করছে আজকে রাতটা উনার বুকে মাথা রেখে ঘুমায়।কয়েকদিন ধরে উনার বুকে মাথা রেখে ঘুমায় না।এই কয়েকটা দিন ধরে আমার চোখের ঘুম যেন হারিয়ে গেছে।ঘুমাতে গিয়ে এইসব ভাবছিলাম।এরপর দেখি উনি বিভোর ঘুমে আচ্ছন্ন। আজকে সারারাত উনার এই চেহারা দেখে কাটিয়ে দিবো। হয়ত পরে উনাকে আর প্রাণভরে দেখতে পারবোনা।
.
.
আগে থেকে প্ল্যান করে রেখেছি আমাকে কি করতে হবে।সকালে ভার্সিটি এসে সবার সাথে হেসে কথা বলছি,ক্লাস করছি।স্যার,তাসপিয়া কাউকে বুঝতে দিচ্ছি না আমার মনে কি চলছে।আর এই জিনিসটা হয়ত তাসপিয়া সন্দেহের চোখে দেখে ফেলেছে।অনেক জেরা করে শেষ পর্যন্ত আমার প্ল্যানটা জেনেই নিলো।
“মেঘ প্লিজ এইরকম ভুল করিস না।”
“আমার আর কিছুই করার নেই।”
“তারপরও একবার ভেবে দেখ।মেঘ তুই স্যারকে সব সত্যি কথা বলে দে।দেখবি উনি সব ঠিক করে দিবেন।আর তুই ১০০% ধরেই নিয়েছিস যে ওইদিন স্যার তোকে উনার আর প্রিয়া ম্যাডামের রিলেশনের কথা বলতে চেয়েছে তোর এই ভাবনা, সাগরের মোবাইলে পাঠানো ছবি সব মিথ্যাও হতে পারে।হয়ত সত্যটা অন্য কিছু।যেটা তুই জানিস না।আমি স্যারকে চিনি এত বছর ধরে দেখছি ঘরে বউ রেখে অন্য আরেকটা মেয়ের সাথে রিলেশন এটা কিছুতেই হতে পারে না।তুই প্লিজ কিছু করার আগে আরেকটাবার ভেবে নে।”
“আর ভাবার সময় নেই।ভাবার সময় শেষ। আগে থেকে যা ভেবে রেখেছি এখন সেটা শুধু করে দেখাতে হবে।”
ক্লাস শেষ করে উনি আজকে আমাকে কল দিলেন।
“মেঘ, তাসপিয়ার সাথে সাবধানে বাসায় যাও।আমার আজকে একটা জরুরি কাজ আছে। সেটা শেষ করে আসছি।”
“আচ্ছা।”