স্যার যখন স্বামী
পার্ট_১৭
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
ওদের সাথে ঘুরাঘুরি করার পর ভার্সিটির গেইটে চলে আসলাম।এখনি উনি বের হবেন।
“এই তো মেঘ কোথায় ছিলে?ক্লাসে তো তোমাকে দেখলাম না।”
“আমাদের তো আজকে তিনটা ক্লাস ছিলো।তাই ক্লাস শেষ করে ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে গেলাম।”
“ও…তাই নাকি?ভালো।চলো বাসায় যাওয়া যাক”
হুম”
রাতে,,
উফ ম্যাথগুলো কি কঠিন। মাথা ব্যথা করছে খুব।মাথার চুল ধরে অনেকক্ষণ বসে আছি।
“কি ব্যাপার মেঘ,কি হয়েছে?”
“মাথা ব্যথা করছে”
“আসো মাথায় তেল দিয়ে দিই।মাথা ব্যথা সেরে যাবে।”
“না লাগবে না।”
“লাগবে, বেশ লাগবে।চলো বলছি,,”
উনি কি সুন্দর করে মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছেন।সাথে দুইটা বেনিও করে দিলেন।নাও দুই বেনি করে দিলাম এই বলে আমার এক বেণী ধরে টান দিলেন আর বললেন গুলোমুলো মিষ্টি লাগছে।
উনার কথা শুনে আমি ফিক করে হেসে দিলাম।
“জানেন আপনার এই কথা শুনে আমার একটা ছেলের কথা মনে পড়ে গেল।”
“কি! কোন ছেলে আবার?”
“আমি যখন ক্লাসে এইটে পড়তাম তখন তো গ্রামের বাড়িতে থাকতাম।তখন একটা ছেলে আমাকে ঠিক একিভাবে আমার এক বেণী ধরে টেনে আমাকে গুলোমুলো মিষ্টি বলেছিলো”
“তাই নাকি?তা ছেলেটা কে?তোমাকে এই কথা কেন বলেছিলো”
“ওকে তো আমি চিনি না।তবে কোন না কোনভাবে কিভাবে জানি ওর সাথে দেখা হয়ে যেত। আসলে ওইদিন আমাকে শাস্তি দেওয়া…ইশ কি বলে ফেললাম,”
“শাস্তি!কিসের শাস্তি!”
“না কিছু না,”
“দেখো আমাকে পুরো ঘটনা জানতে হবে।নাহলে খুব অস্বস্তি লাগবে।তোমাকে কেন শাস্তি দিয়েছিলো।নিশ্চয় তুমি কিছু করেছ”
“না, আমি তেমন কিছু করে নি তো।আসলে…আমি কলা খেয়ে কলার ছোলকা রাস্তায় ফেলে দিয়ে বান্ধবীদের সাথে কথা বলছিলাম।আর তখনি ওই ছেলেটা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গিয়ে কলার ছোলকার সাথে পিচলিয়ে পড়ে যায় ।আর এটা দেখে আমরা সবাই হাসতে হাসতে শেষ। এরপর খেয়াল করি ওই ছেলেটা রেগে আমার দিকে আসছে।আমি ভয়ে দৌড় দিয়ে পালাতে গেলে সে আমাকে ধরে ফেলে। এরপর সে রাগে আমাকে ৫০বার কান…”
“কান উঠ বস করিয়েছে”
“হ্যা(মাথা নিচু করে)।আর এরপরেই সে আমার বেণী ধরে টেনে এই কথাগুলো বলেছিলো।কিন্তু আমিও কম যায় না হুম। একদিন ওই ছেলেটার দেখা আমি পেয়েছিলাম।আমাদের বাড়ি থেকে ওর বাড়ির রাস্তা ৩০ মিনিটের।বান্ধবীর বাসায় এসেছিলাম কাজে।পুকুর পাড়ে ঘুরতে গিয়ে দেখি সে ছেলেটা পুকুরে গোসল করছে।আর আমিও সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওর সব কাপড় গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখে চলে আসছি হিহিহি”
“কি পাজি মেয়ে?ছেলেটা তোমাকে দেখি নি।”
“হ্যা দেখেছিলোতো। কত অনুরোধ করেছে ওর কাপড়গুলো দেওয়ার জন্য।আমি দেই নি।আমাকে কান ধরিয়েছে না আমিও ওকে শাস্তি দিয়ে চলে আসছি।হিসাব বরাবর”
.
.
“হুম, আচ্ছা ছেলেটার নাম জানো না।”
“না, তো”
“ধরো কখনো যদি ওই ছেলেটার সাথে তোমার দেখা হয় আর ওইদিনের সেই দুষ্টু কান্ডের জন্য আবার তোমাকে শাস্তি দেয়?”
“এরকম হবেই না।আমি তো ঢাকায় চলে আসছি।অনেক আগের ঘটনা। তাই ওই বজ্জাতটার চেহারা আমার মনেও নেই।ওর ও মনে থাকবে না।”
“আর যদি মনে থাকে?ওই দিনের ঘটনার জন্য তোমাকে আবার শাস্তি দেয়।”
“মনে থাকলে আর কি করার কিন্তু এবার যদি ও আমাকে শাস্তি দিতে আসেও পারবে না।কারণ আপনি আছেন না।আমি আমাকে প্রোটেক্ট করবেন।”
“তা আমি কেন তোমাকে প্রোটেক্ট করতে যাব শুনি।”
“কারণ আমি আমার স্ত্রী তাই।”এই কথা বলতে কেমন জানি লজ্জা লজ্জা লাগছিলো।
“কি জানি বললে শুনতে পাইনি?”
“আমি টেবিলে খাবার সাজাচ্ছি।”
“কথা ঘুরাচ্ছো কেন।আমার প্রশ্নের উত্তর কিন্তু এটা না।”
আমি তাড়াতাড়ি করে লজ্জায় বাইরে চলে আসলাম।
.
.
কয়েকদিন পরের কথা,
উনি লুকিয়ে লুকিয়ে কি জানি দেখছিলেন।আমি সেটা দেখার জন্য একটু আগালাম।আর তখনি তিনি সেই জিনিসটা লুকিয়ে ফেললেন।
“লুকিয়ে লুকিয়ে কি দেখছিলেন হ্যা”
“কিছ..ছু…না,”
“কিছু না মানে, নিশ্চয় কিছু দেখছিলেন।দেখান কি দেখছিলেন।”
“বললাম না কিছু না” (রেগে)
উনি এরকম কেন?দেখালে কি এমন হত?আমি কি উনার জিনিস কেড়ে নিয়ে যেতাম। ছোটবাচ্চাদের মতন একদম।দূর ভালো লাগে না।
কি করি কি করি আমার তো দেখতেই হবে।কি লুকিয়ে রেখেছেন উনি।কিন্তু দেখবো কি করে উনি তো বাসা থেকে বের হচ্ছেন না।এক কাজ করি এক বালতি কাপড় ধুয়ে রেখে দিয়েছিলাম।এই কাপড়গুলো উনাকে দিয়ে আসি।বলবো কাপড়গুলো ছাদে দিয়ে আসতে।বাহ কি আইডিয়া তোর মেঘ,বাব্বাহ।
উনি জিনিসটা কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন সেটা আমি লুকিয়ে দেখেছি।উনি ছাদে চলে যাওয়ার পর আমি তাড়াতাড়ি করে লুকানো জিনিসটা বের করলাম।
এটা কি মাটির পুতুল!বর বউয়ের পুতুল।এই জিনিস আবার লুকিয়ে দেখার কি হল।পুতুলটা মনে হয়ে ভেঙ্গে গিয়েছিলো।কোনরকম করে সেটা আবার জোড়াতালি দিয়ে ঠিক করা হয়েছে।
“মেঘঘঘঘঘঘঘ……..(রেগে)।বলেছিলাম না আমার জিনিসে হাত না দেওয়ার জন্য।কেন হাত দিলে?”
“আম..মি…,মা..মা.. মা.. মানে,”
“এটাই শেষ ওয়ার্নিং আমাকে না বলে আমার কোন কিছুতে হাত দিবে না।”
“আচ..চছা…।”
.
.
“মুড অফ,”
…………
“কথা বলবে না,”
………….
“আচ্ছা গান শুনবে,”
“আপনার কাকের কণ্ঠের গান না শুনাই ভালো,”
“তাই নাকি,তুমি এত্ত শিউর কেমন করে হলে আমার গানের কণ্ঠ কাকের মতন,”
“হুহ মুখ ভেঙ্গিয়ে,শাওয়ারে গিয়ে যে গান গায়লেন তাতেই বুঝে গেছি।”
“আচ্ছা তাহলে কষ্ট করে এই গানটা শুনে বিচার করিও আমার গানের কণ্ঠ কেমন।দাঁড়াও গিটার টা নিয়ে আসি।”
পেয়ার হুয়া হে জাব তুজসে,
রাঙ্গোনে বলা মসামসে……..
ইস পেয়ারকি বাহারমে
হাম ভি বিখার জায়ে……….
দিলনে তোজে জাব আপনা মানা
বোলি হাওয়া তো হে দিওয়ানা
জিসকে পেয়ার মে হো উমরেভার
তোজসা তুজে চাহে……
আচ্ছা লাগতাহে তেরা নাজদিক রেহনা…..
তেরা এহসাস বারা লুভাতাহে……
ইন জাগোয়ি লামহোমে কারিশমাহে……
জো কাহে তো বহত মুজকো চাহতাহে……
“আপনি এত্ত ভালো গান গান!?আমাকে তো কখনো বলেননি”
“তোমাকে বললে তো তোমার কাছ থেকে আমি গান শুনতে পারতাম না। আমার তো তোমার গান শুনতেই ভালো লাগে।তাই বলে নি”
“আচ্ছা,আপনি কি পরিমাণ চালাক!নিজে গান শুনবেন বলে আমাকে এই সত্য কথাটা কোনদিন বলেন নি”
“হুম”
“আজকে রাতে আপনার খাওয়া বন্ধ যান….।আমার সাথে আর চালাকি করতে আসবেন হুম”
“সত্যি তো।হুম ঠিকাছে, যাও খাবো না”
এরেরে…আমি তো আরও ভাবছি উনি বলবেন প্লিজ এরকম করোনা,না খেলে আমার রাতে ঘুম আসবে না। উনি তো দেখি পুরাই উল্টা।
“আর..রে…খাবেন না মানে।চলেন খেতে চলেন”
“না আমি খাবো না।আজকে নিজ হাতে খেতে ইচ্ছে করছে না”
“কি!নিজ হাতে না খেলে আপনাকে কে খাইয়ে দিবে শুনি”
“কেন আমার বউ”
“কিহ!!(চোখ বড় বড় করে)।আমি পারবো না।খিদে লাগলে এমনেই খেয়ে নিবেন।”
“ওকে তাহলে আজকে আর খাচ্ছি না।ঘুমিয়ে পড়লাম”
এতো দেখি সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে যাচ্ছে। কেন যে ওই সময় নিজের চালাকিটা দেখাতে গেলাম,
“আচ্ছা না খেয়ে ঘুমাবেন না,শরীর খারাপ করবে। আমি খাবার নিয়ে আসছি।আপনাকে খাইয়ে দিবো”
“হুম”(মুচকি হেসে)
নিজ হাতে উনাকে খাইয়ে দিচ্ছি।আর উনি মুচকি মুচকি হাসছেন।মনে হয় যেন আমাকে আমার কথার ফাঁদে ফেলতে পেরে উনি রাজ্য জয় করে ফেলেছেন।উনার এই মুচকি মুচকি হাসি দেখে আগে ফিদা হয়ে যেতাম আর এখন এই হাসি দেখে অসহ্য লাগছে।
.
.
দিনকাল ভালোই চলছিলো।কিন্তু ভালো দিনকাল বেশিদিন থাকে না।কষ্ট যে কোন মুহূর্তে চলে আসতে পারে।উনাকে নিয়ে আমার ভালো লাগার অনুভূতি এখনো প্রকাশ করতে পারি নি।যাকে এখন ভালবেসে ফেলেছি এখন সেই আমাকে মনে মনে অনেক কষ্ট দিচ্ছে।এখন ক্লাসে আসলে বান্ধবীদের মুখ থেকে প্রায়ই শুনি উনি আর প্রিয়া ম্যাডামের মধ্যে নাকি রিলেশন চলছে।উনার সাথে প্রিয়া ম্যাডামকে এখন প্রায়ি দেখা যায়।প্রিয়া ম্যাডামের সাথে উনাকে দেখি কিন্তু ওদের মধ্যে রিলেশন চলছে সে কথা মেনে নিতে পারছি না।এই কথা ভাবতেই এখন কষ্ট হচ্ছে।এই বিষয় নিয়ে উনাকেও কিছু বলেনি।কারণ ভালো তো আমি উনাকে বেসেছি উনি তো কখনো আমাকে এই কথা বলেননি মেঘ আমিও তোমাকে ভালবাসি।এখন কেন জানি মনে হয় প্রিয়া ম্যাডামি উনার পছন্দের সেই মেয়ে।হয়ত আমিই ভুল করে ওদের মাঝে চলে এসেছি।
.
.
বাসায় আসার পর মাথা ব্যথা করছে খুব।কোন কিছুতেই ভালো লাগছে না।মনে হচ্ছে উনাকে বুঝি আমি হারিয়ে ফেলবো।
এই সময় আবার মোবাইলে কল দিচ্ছে কে? “হ্যালো,”
“হ্যালো,মেঘ,”
“কে বলছেন?”
“মেঘ আমাকে চিনতে পারছো না।আমার কণ্ঠ এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে?”
“হ্যালো আমি সত্যিইই আপনাকে চিনতে পারছি না।দয়া করে পরিচয়টা দিন। নাহলে আমি কল কেটে দিচ্ছি।”
“না না,এইরকম করিও না। প্লিজ কল কেটো না।মেঘ আমি সাগর।”
“সাগর!কোন সাগর আমি কোনও সাগরকে চিনি না।”
“মেঘ প্লিজ তোমার এই কথা বিশ্বাস করার মতন নয় যে তুমি আমাকে চিনো না।৩ বছরের রিলেশন ছিলো আমাদের।এত তাড়াতাড়ি নিশ্চয় আমাকে ভুলে যাওয়ার কথা নয়।”
“হ্যা আপনার দেওয়া কষ্ট এত সহজে কি করে ভুলি। আপনার সাথে আমার রিলেশন ছিলো সেটা অতীতের কথা। অতীতের কথা মনে রাখা উচিত নয়।আপনাকে ভুলে গেলেও আপনার দেওয়া কষ্টগুলো এখনো ভুলতে পারিনি।যাই হোক আমি কোন অপরিচিত মানুষের সাথে মোবাইলে কথা বলি না,রাখছি।”
.
.
এতদিন পর কি মনে করে ও আমাকে কল দিলো। আমার নম্বর কোথা থেকে পেল আজব!
সারারাত টেনশনে ঘুমাতে পারেনি।একদিকে প্রিয়া ম্যাডাম আর আমার স্বামীকে নিয়ে টেনশনে আছি আর আরেকদিকে সাগর।জানি না এখন আমার জীবনটা কোন দিকে মোড় নিবে।
সকালে,,
“আচ্ছা মেঘ তোমার কি কিছু হয়েছে?”
“কয় না তো।আমার আবার কি হবে?কিছু হয় নি আমার।”
“সত্যি বলছ তো।”
“হ্যা মিথ্যা কেন বলব?”
“কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তুমি আমাকে মিথ্যা বলছ।মনে হচ্ছে কোন একটা বিষয় নিয়ে তুমি অনেক চিন্তিত।”
“না আমার আবার চিন্তার কিসের?এইতো ভালো আছি।সারাদিন ভার্সিটি, পড়ালেখা আর রান্নাবান্না নিয়ে আছি।আলতো ফালতো চিন্তা করার সময় কোথায়।”
“ও,, আচ্ছা রেডি হয়ে নাও।একসাথে যাব।”
“আপনি আজকে আগে চলে যান। আমার ক্লাস তো ১১:০০ টা থেকে।আপনার সাথে এত সকালে গিয়ে কি করবো।”
“ও…আজকে ১১:০০টায় ক্লাস। আচ্ছা তাহলে আমি চলে যাচ্ছি। সাবধানে যেও।