স্যার যখন স্বামী পার্ট_১১

0
5034

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_১১
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

“মা কিছু বলবে।”
“হ্যা তন্ময়, তোকে কিছু বলতে চায়।”
“হ্যা বল।”
“দেখ, মেঘ এখন তোর বউ। স্বামী হিসেবে ওকে শাসন করবি ভালো কথা।তাই বলে কথায় কথায় ওকে ধমক দিয়ে কথা বলা এটা ঠিক নয়।তুই কি মনে করিস আমি কিছু বুঝি না। তোর রাগের কারণে সেদিন মেঘের হাত কেটেছে। আজকে রান্না করতে গিয়ে কি ভাবতে গিয়ে ওর ডান হাত কাটল। হাত কেটেছে তাই বলে ওর উপর রাগ দেখিয়ে ওকে কালকে অনেক কথা শুনালি।জানি তোর মাথাটা তখন ঠিক ছিল না।কিন্তু সেটা একটু ভালোভাবে বুঝালে হত ।মেঘের সাথে ওর মা বাবাও এত জোরে ধমক দিয়ে কথা বলে না।তোর বউ বলে ওকে কথায় কথায় ধমকের ওপর রাখবি সেটা মানার মতন নয়।আর তোর কারণেই মেয়েটার গায়ে আজকে জ্বর উঠল। ”
….
“দেখ আমি তোকে যতটুকু জানি তুই কারো উপর এত রেগে কথা বলিস না।মেঘ তোর বউ বলে ওকে তোর নিয়ন্রণের মধ্যে রাখার জন্য এইসব করিস তা আমি জানি।কিন্তু বউকে তুই তোর নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহার করছিস তা আদৌ কি সঠিক? দেখ যখন ও ভুল করবে ওকে বুঝাবি যে এই কাজটা ভুল কিন্তু গুরুত্বতর অপরাধ করলে ওকে বকা দেওয়া ওর উপর রাগ দেখানোর অধিকার তোর আছে। কিন্তু তাই বলে সবসময় এই ধারা চলবে তা ঠিক নয়।এতে হিতের থেকে বিপরীত হবে।পরে দিয়ে দেখা যাবে ওকে তুই তোর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছিস না,ওকে হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনাটাই বেশি থাকবে। এত ধমক আর বকাঝকা না করে ওর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করলে দেখবি তোদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটাও ভালো থাকবে।আর মেঘও তোর কথা শুনবে। কাউকে নিজের বশে আনতে হলে প্রথমে তার সাথে বন্ধুত্বকরতে হয়।এটাই সবচেয়ে শ্রেয় পদ্ধতি।বন্ধুত্ব করে শত্রুকেও বশে আনা যায় আর তুই মেঘকে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবি না তা কেমন করে হয়। বন্ধুত্বপূর্ণ আর ভালো সম্পর্ক থাকলে তা মনের মধ্যে একধরণের অনুভূতি, ভালো লাগা আর মায়া জিনিসটা কাজ করে।আর তা থেকেই মানুষের ওকে অপরের প্রতি ভালবাসাটা জন্মে।তুই যদি মেঘের মধ্যে সে বন্ধুত্বপূর্ণ আর মায়ার বাঁধন তৈরী করতে পারিস দেখবি ও কোনদিনও তোর কথার অবাধ্য হবে না আর ওকে হারানোর ভয়টাও তোর থাকবে না।”
“জ্বী মা। আমি বুঝতে পেরেছি।”
“হুম আমার যা বলার আমি বলে দিয়েছি।এখন মেঘের কাছে যা।”
“হুম,”
“শুন তন্ময়,”
“হ্যা মা বল,”
“তুই কি মেঘকে আরও আগে থেকে চিনতি।”
“না…না,আমাদের ভার্সিটিতে যেদিন থেকে ওর ডিপার্টমেন্টে ক্লাস নিচ্ছি সেদিন থেকেই চিনি।হঠাৎ এই প্রশ্ন,”
“না, আমি ভাবলাম আরও অনেক আগে থেকে ওকে চিনিস তুই।তাই এই প্রশ্ন করলাম।”
“আরে না মা, কি যে বলনা আরও আগে থেকে কেমন করে…”
“ও, আচ্ছা”
.
.
জ্বর কমানোর জন্য আমার কপালে কাপড়ের পট্টি দিয়ে আমার সেবা করতে লাগলেন।আস্তে আস্তে জ্বর কমতে লাগল।কিন্তু শেষ রাত্রে খুব খারাপ লাগছিলো। কেমন যেন ছটফট করছিলাম।তারপর আর কিছু মনে নেই।
সকালে ঘুম ভাঙ্গল আমার। এখন মোটামুটি ভালো লাগছে।কিন্তু শরীরটা খুব দুর্বল লাগছে।চোখ খুলে দেখি উনি একটা চেয়ারে ঘুমাচ্ছেন।পানির তৃষ্ণা পেয়েছে খুব। আমার পাশের টেবিলে রাখা পানির গ্লাসটা হাত দিয়ে ধরতে গিয়ে গ্লাসটা শব্দ করে ফ্লোরে পড়ে গেল। আর তখনি স্যার জেগে উঠলেন।
“মেঘ আমাকে ডাক দিতে?”
“না,আপনি ঘুমাচ্ছিলেন তাই ভাবলাম আপনাকে ডেকে কষ্ট দেওয়ার দরকার নেই।”এই কথা বলে উনার চোখের দিকে তাকালাম।চোখ দুটি লাল হয়ে ফুলে আছে।তারমানে উনি সারারাত ঘুমান নি?
“নাও পানি নাও।”
“জ্বী।”
এই ২দিন উনি আমার খুব সেবাযত্ন করলেন।এই রাগী লোকটা আমার এত যত্ন নিবে আমি তা ভাবতে পারিনি।এখন জানি না কেন উনার প্রতি একটু মায়া জন্মাচ্ছে।
.
.
মেঘ তোমার আম্মু কল দিয়েছে।নাও কথা বল।
“হ্যালো আম্মু,”
“হ্যারে মা ভালো আছিস।”
“হ্যা আম্মু ভালো তুমি?বাবা কেমন আছে?”
“আমি তোর বাবা দুইজনেই ভালো আছি।আচ্ছা শুন জামাইকে নিয়ে বাড়িতে আয়।”
“না মা এখন পসিবল না।স্যারের কোন ছুটি নেই।”
“কি তুই জামাইকে এখনো স্যার বলে ডাকস?”
“হেহেহে,কই নাতো আমি স্যার বলিনি বলছি জামাই।না মানে তোমাদের জামাইয়ের ছুটি নাই।”
এরপর আরও কথা বলে জানতে পারলাম স্যার সবসময় উনাদের খোঁজখবর নেন। বিয়ের পর আমার মোবাইলটা সাথে করে আনি নি তাই এতদিন নিজ থেকে ওদের খোঁজখবর নিতে পারেনি।স্যারের মোবাইল থেকে মাঝেমাঝে আমি খোঁজ খবর নেই।মোবাইলে অনেক্ষণ ধরে মা স্যারের প্রশংসা করলেন। এইরকম ভালো ছেলে আজকালকার যুগে পাওয়া নাকি খুব কষ্ট।আরও কত কি।
.
.
কথা বলা শেষ করে দেখি স্যার আমার পাশে বসে আছে।রাগী মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
ওমা এটা কি?একটু আগেতো দেখলাম হেসে হেসে আম্মুর সাথে কথা বলছে হঠাৎ কি এমন হল যে এত রাগীভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
“আপনি ঠিক আছেন তো?”(ভয়ে)
“না ঠিক নেই।তোমার কারণে কোনদিনও ঠিক থাকতে পারবো না।”
“মানে।আমার কারণে। আমি আবার কি করলাম।”এরপরে মনে পড়ল ইশ এটা কি করলাম।আমি মা এর সাথে কথা বলার সময় স্যার শব্দটি বলেছিলাম।আর সেটা তিনি শুনে ফেলছেন।সেজন্য এত রাগ।রাগে চোখ দুটি লাল হয়ে গেছে।উনার এই লাল চোখ দেখে মনে হচ্ছে এই লাল চোখের আগুন দিয়ে আমাকে ভস্ম করে দিবে।এবার আমি জানি কতগুলো বকা খাব।তাই চোখ বন্ধ করে বকা খাওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করলাম।কিন্তু কয় এখনো তিনি বকা দিচ্ছেন না।উনারতো এরকম ঠাণ্ডা থাকার কথা না। চোখ খুলে দেখি উনি আমার মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তারপর কিছু না বলে চলে গেল।কি ব্যাপার এটা কি করে সম্ভব। উনি আমাকে বকা না দিয়ে চলে গেলেন!কি করে সম্ভব এটা।
.
.
আজকে বিকালে ছাদে আসলাম।এর আগে কখনো ছাদে উঠিনি।অনেক বড় ছাদ।একা একা বসে বসে গান গাচ্ছি।হঠাৎ আমার কাঁধে কারো স্পর্শ পেলাম।দেখি একটা ছোট্ট মেয়ে।
“এল যে টুমি কে?”
“আমি?”
“হুম,”
“আমি মেঘ, তুমি?”
“আমি সানজা মণি।”
“ও…তাই, তুমিতো খুব মিষ্টি মেয়ে।”এই বলে ওকে আমার কোলে তুলে নিলাম।অনেক কথা বললাম ওর সাথে।কি সুন্দর করে মেয়েটা কথা বলে।শুনতে খুব ভালো লাগে।কথায় কথায় ও বলল, “টুমি কোল টলায় টাক?”
“৩ তলায়। তুমি?”
“টিল টলায়।ওলখানে এক আক্কেল টাকে।টুমি জানো ওনি আমাকে কট্ট আডর কলে।আম্মাকে প্লতি…প্লতি…ডিন চক্কেট দেয়।”
“ও মা তাই নাকি?(সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলে পিচ্চিদের চকলেট কিনে দেয়। কিন্তু আমার বেলায় শুধু বকা আর চকলেটতো কোনদিনও কিনে দেয় না।)আচ্ছা তাহলে আমিও তোমাকে প্রতিদিন চকলেট কিনে দিবো।”
“ছত্তি।”
“হুম,সত্যি,এই বলে ওর গুলোমুলো গাল দুইটা টিপে দিলাম।”
“টুমি খুব ভালো।”
“তুমিও খুব ভালো সানজা মণি, ”
.
.
“মেঘ,”
“জ্বী,”
“তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই।”
“হ্যা বলেন,”
“আচ্ছা আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি?”
“(ও মা শয়তানের মুখ থেকে এত ভালো কথা।নিশ্চয় কোন গণ্ডগোল আছে।দেখতে হচ্ছে ব্যাপারটা।)হঠাৎ এই কথা।”
“না, মানে আমি চাইছি আমাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বপূর্ণ হোক।”
আমি হা করে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি।এত্ত ভালো কেমন করে!!
“এরকম হা করে তাকিয়ে আছো কেন?দেখ আমি এত ভনিতা করতে পারিনা।তোমাকে স্পষ্ট করে এটাই বলতে চাই যে,আমার মনে হয় এইভাবে আমাদের সম্পর্কটা বেশিদূর আগানো সম্ভব নয়।যদি আমরা একে অপরের বন্ধু হয়ে যায় তাহলে দেখবে আমার সাথে মিশতে তোমার সহজ হবে,আমাকে আরও ভালো করে জানবে বুঝবে তাহলে আমাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা আরও ভালো আর মজবুত হবে।হবে আমার ফ্রেন্ড?”
(হুম এর মধ্যে এত কিছু ভেবে ফেলছে।ভালো)”আচ্ছা হতে পারি একশর্তে,”
“শর্ত!!”
“হুম শর্ত,”
“কি শর্ত, ”
“আমার জন্য কালকে অনেকগুলো চকলেট আনতে হবে।আর শুধু কালকের জন্য নয়।প্রতিদিন আমাকে চকলেট এনে দিতে হবে।”
“ও মা তুমি পিচ্চি বাচ্চা নাকি?৪ তলার পিচ্চি মেয়ে সানজা মণি চকলেটের কথা বললে মানা যায়।”
“দেখুন এতকিছু বুঝি না।চকলেটের বেলায় no বড় no ছোট।এর বেলায় সবাই সমান।আমার ফ্রেন্ড হতে চাইলে এই শর্ত মানতে হবে।আর নাহলে নাই।”

(এইগল্পে পিচ্চি মেয়ের যে নামটা ব্যবহার করা হয়েছে সে নামটা আমার অনেক পছন্দের।সে সাথে সে নামের মেয়েটাকেও।আজকে ওর নাম গল্পে ব্যবহার করতে গিয়ে ওকে খুব মিস করছি।ওর পরিবার ঢাকায় পোস্টিং হয়ে যাওয়ায় ওকে অনেকদিন ধরে দেখিনা।তোকে খুব মিস করছি সানজামণি ??)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে