স্যার যখন স্বামী
পার্ট_১০
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
“কিরে মা এখনো পড়ছিস”
“জ্বী আম্মু আপনার ছেলে কতগুলো ম্যাথ দিয়ে গেল সেগুলো দেখছি”
“আচ্ছা সেগুলো পড়ে দেখিস।চল দুইজনে মিলে টিভি দেখি গিয়ে,”
“আচ্ছা,”
“মেঘ তোর জন্য পপকর্ণ বানিয়ে আনি।পপকর্ণ খেতে খেতে দুইজন টিভি দেখব আর জমিয়ে গল্প করব, ”
“আম্মু আপনার করার দরকার নেই।আমি করে আনছি,”
“ওই চুপ করে বস।তোর কিচ্ছু করা লাগবে না।আমি আছি কি করতে। চুপ করে বসে টিভি দেখ।”
কিছুক্ষণ পর উনি পপকর্ণ বানিয়ে আনলেন।পপকর্ণ নিয়ে যেই খাওয়া শুরু করলাম হঠাৎ করে আমার শাশুড়িমা আমার বাম হাতের ব্যান্ডেজটা দেখে অস্থির হয়ে গেলেন।
“মেঘ তোর হাতে কি হয়েছে মা?”
“আম্মু কিছুনা কালকে হঠাৎ করে পড়ে যেতে গিয়ে আমার হাতের সাথে কাচের জগটা লেগে ভেঙ্গে পড়ে যায় আর আমি ফ্লোরে পড়ে যাওয়ায় কাচের টুকরা আমার হাতে লেগে আমার হাত…”
“মেঘ,একটু খেয়াল করে হাটাচলা করতে পারিসনা।দেখতো কি কান্ডটা না বাঁধালি।ব্যথা করছে খুব।”
“আরে,ব্যথা টেথা কিছু করছে না।এই ক্ষত তাড়াতাড়ি সেরে যাবে। টেনশেন নিওনা তো।চল পপকর্ণ খেতে খেতে টিভি দেখি।”
আমার শাশুড়িমা আর আমি পপকর্ণ খেতে খেতে টিভি দেখছি আর তারসাথে আমাদের বান্ধবীসুলভ গল্পতো লেগেই আছে।
২ ঘন্টা পর….
“আচ্ছা তুই বস আমি রান্নাঘরে গিয়ে রান্নার কাজটা শেষ করে গিয়ে।”
“আম্মু আমিও আসি।”
“না তোর লাগবে না তুই টিভি দেখনা।”
“আম্মু,আপনার ছেলে বলে গেছে আপনাকে রান্নার কাজে সাহায্য করতে।”
“তন্ময় এ কথা বলে গেছে।কিন্তু তোর তো হাতে ব্যান্ডেজ বাধা। দেখলি আমার ছেলের আক্কেলজ্ঞান কেমন।শুধু ভার্সিটির টিচার হলেই হয় না কিছুটা বুদ্ধিশুদ্ধিও থাকা লাগে।”
“আম্মু আমার বাম হাতে ব্যান্ডেজ ডান হাতে তো না।তাছাড়া আমি ঠিক করে নিতে পারব।”
“আচ্ছা তাহলে আয়।তুই এই সবজিটা কাট আমি এইদিকটা দেখছি।”
“আচ্ছা।”
সবজি কাটতে গিয়ে শয়তানটার কথা আর বকাগুলোর কথা মনে পড়ল।সেগুলো ভাবতে গিয়ে এবার আমার ডান হাতের তালুতে ছুড়ি লেগে হাত কেটে ফেললাম।
.
.
“কি ব্যাপার ডিনার করতে যাবে না।”
“আমি আজকে খাবো না, আপনি খেয়ে নিন।”
“কেন?খাবে না কেন?শরীর খারাপ নাকি?”
“না এমনিতেই,খেতে ভালো লাগছে না,”
“আজব,খেতে ভালো লাগবে না কেন?শরীর খারাপ না,খেতে ভালো লাগছে না এটা কেমন ধরণের কথা।চল খেতে চল। ”
একেবারে হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।
“আহ,হাতে ব্যাথা লাগছে।”
“কি ব্যাপার মেঘ তোমার ডান হাতে কি হয়েছে।তোমার ডান হাতের তালুতে ব্যান্ডেজ কেন?বলো তোমার হাতে কি হয়েছে।”
….
“জবাব দিচ্ছো না কেন?এবার কি সত্যি সত্যি গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিব।”
“সবজি কাটতে গিয়ে হা..তত..কে..টে..গেছে”
(কেঁদে)
“তো এখানে কান্না করার কি হল।”
“আপ..নি বকা দিলেন কেন?”
“তো করবটা কি শুনি ?প্রশ্ন করলে জবাব দাও না।বাসায় হাত কেটে বসে থাক।আমার সংসারে ২দিন হল না এসেছ এতেই হাত পা কেটে বসে আছো। এগুলো সহ্য করার মতন।কালকে এত্তগুলো বকা দিলাম কিন্তু কি লাভ হল।এককান দিয়ে কথা ঢুকাও আরেক কান দিয়ে আমার কথা বের করে দাও।এবার বল এখন আমি কি করব।রাগে আমি তোমাকে এত্তগুলো বকা দেই।বুঝতে পারছ।”
.
.
নিজের হাতে রাতেও খাইয়ে দিলেন।সাথে ফ্রি বকাতো আছে।রাতে ঘুমানোর সময় উনার বুকে জোর করে শুইয়ে দিলেন।ঘুমাতে গিয়েও তিনি শুয়ে শুয়ে লেকচার দিতে থাকলেন।মেঘ এটা করবা, ওইটা করবা না।সাবধানে চলবা,কোন কাজ করার সময় তাড়াহুড়ো করবা না।দেখ আমার কথা না শুনলে দেখা যাবে কালকে আবার পা কেটে বসে আছো।এইসব লেকচার তিনি এক এক করে আমাকে শুনিয়ে যাচ্ছেন। কান পুরো ব্যথা হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ওনার কথা বলায় কোন ব্যথা বা কষ্টের লক্ষণ দেখছি না।ঘুমাতে আসছি নাকি উনার ক্লাস করতে আসছি আমি নিজেই কনফিউজডে পড়ে গেলাম।এদিকে ঘুমে আমার চোখ নেমে আসছে।কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম তা আর বলতে পারবো না।
.
.
সকালে উনি উঠে আমাকে কয়েকবার ডাকলেন।কিন্তু আমি চোখ মেলতে পারছি না।জানিনা কেন শরীররটা খুব খারাপ লাগছে।
“মেঘ কি হয়েছে তোমার। কতক্ষণ ধরে ডাকছি উঠছ না যে।শরীর খারাপ নাকি?”
এই বলে আমার কপালে হাত দিয়ে দেখলেন জ্বরে আমার গা পুড়ে যাচ্ছে।তাড়াতাড়ি করে উনি আমার কপালে ভেজা কাপড়ের পট্টি দিয়ে অনেক্ষণ ধরে আমার সেবা করলেন।
তারপর আমার শাশুড়িমা কে ডেকে আনলেন।
“মা মেঘের জ্বর হয়েছে। তুমি তাড়াতাড়ি ওকে কিছু খাইয়ে দাও।আমি এখুনি ভার্সিটিতে কল করে আজকে ছুটি নিয়ে নিচ্ছি।আজকে আর ভার্সিটি যাব না।”
শাশুড়ি মা অনেক্ষণ ধরে আমাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করলেন।কিন্তু জ্বরের কারণে কিছু মুখে নিতে পারছি না।
.
.
“মা তোমার বৌমা খেয়েছে?”
“নারে কিছুই মুখে নিচ্ছে না মেয়েটা।”
“আচ্ছা তুমি যাও আমি দেখছি।”
“হ্যারে আমিও থাকি।”
“না তোমার থাকা লাগবে না।আমি ওকে দেখে নিতে পারবো। তুমি বরং রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।”
“তন্ময় ওকে খাইয়ে আর মেডিসিন দিয়ে আমার রুমে একটু আয়।কিছু কথা ছিল।”
“আচ্ছা। ”
“মেঘ কিছু খেয়ে নাও।নাহলে মেডিসিন খাবে কেমন করে?”
“খেতে পারছি না। খেতে খারাপ লাগছে।”
“খারাপ লাগলেও খেতে হবে।প্লিজ একটু খেয়ে নাও।”
অনেকক্ষণ লাগিয়ে আমাকে খাওয়ালেন।এরপর মেডিসিন দিয়ে আমাকে বললেন তুমি এখন রেস্ট নাও।আমি একটুপরে আসছি।