স্যারযখনস্বামী
পার্ট_০১
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস
আজ আমার বিয়ে। খুব খুশি লাগছে।এই দিনটার জন্য আমি কতকাল প্রতীক্ষায় ছিলাম। কারণ আমার দীর্ঘ ৩ বছরের প্রেমের পূর্ণতা পাবে এই বিয়ের মাধ্যমে।আমার আর সাগরের দীর্ঘ ৩ বছর ধরে প্রেম। আমি যখন অনার্স ২য় বর্ষে উঠি তখন থেকেই আমার মা বাবা আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। মা বাবা জিজ্ঞেস করেছিল আমি কাউকে পছন্দ করি কিনা?যদি করে থাকি তাহলে তা যেন আমি তাদের নির্ভয়ে বলি।আমার পছন্দের কোন ছেলে থাকলে তারা আমাকে তার সাথে বিয়ে দিতে রাজি আছে।আমি সেদিন মা বাবাকে আমার আর সাগরের রিলেশনের কথা বলে দিলাম।তারা ও আমাদের প্রেম মেনে নিল।আমি খুব সৌভাগ্যবতী এমন মা বাবা পেয়ে যারা আমার উপর তাদের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার জন্য কোনপ্রকার চাপ না দিয়ে আমার পছন্দকে গুরুত্ব দিয়েছে। অন্য ছেলের সাথে কেন রিলেশন করছি,রিলেশন কত বছর ধরে চলছে সেসব জিজ্ঞাসা না করে তারা শুধু এতটুকুই জানতে চাইল ছেলের নাম কি? ভাবাও যায় এমন মা বাবা আজও আছে। ইচ্ছে করলেই তারা আমাকে অনেক বকাঝকা দিতে পারত,কথা শুনাতে পারত কিন্তু না তারা সেটা করে নি। আমি জানি তারা কেন সেটা করে নি কারণ তারা আমাকে অনেক বিশ্বাস করত আর যাই হোক তাদের মেয়ে তাদের বিশ্বাস নিয়ে খেলবে না আর ভুল পথে পা বাড়াবে না। আমার সুখেই তাদের সুখ। তাই তারা আমার সুখের জন্য সাগরকে মেনে নিয়েছে।আমিও আজীবন সেই চেষ্টা করে গেছি যাতে আমার জন্য তাদের সম্মানহানি না হয়। সেজন্য আমি আমার রিলেশনে সবসময় সতর্কতা অবলম্বন করেছি। আমার আর সাগরের পরিবারের সম্মতিতে আমাদের বিয়ের তারিখ ঠিক করা হল। আমার আর সাগরের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে । ওর আর আমার টুনাটুনির সংসার হবে।ভাবতেই খুব ভাল লাগছে। আমার বিয়েটা গ্রামের বাড়িতে হবে।মা বাবার খুব ইচ্ছা বিয়েটা যাতে আমাদের নিজের গ্রামের বাড়িতে হয়।আমার ইচ্ছা তারা কোন প্রশ্ন ছাড়াই পূরণ করতে যাচ্ছে আমি তাদের এই সামান্য আবদার রাখতে পারব না তা কেমন করে হয়। তাদের ইচ্ছায় বিয়েটা গ্রামে অনুষ্ঠিত হবে।ভার্সিটিতে আমার সবচেয়ে বেস্ট ফ্রেন্ড তাসপিয়াকে বিয়ের দাওয়াত দিলাম।বাকি আর কাউকে এই খবর বলে নি। বান্ধবীকে বিয়ের দাওয়াত দেওয়ার পর ক্লাস থেকে যখন বের হতে যাব তখনি আমাদের ভার্সিটির সবচেয়ে হ্যান্ডসাম, গুড লুকিং তন্ময় স্যারের সামনে পড়লাম। উনি হচ্ছেন আমাদের ভার্সিটির সব মেয়েদের ক্রাশ। পড়ালেখায় খুব ভালো হওয়ায় আর তাড়াতাড়ি গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করায় অল্প বয়সেই ভার্সিটিতে শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়ে যান। উনি আমার কাছে এসে আমাকে দাঁড়াতে বললেন। মেঘ দাঁড়াও।
জ্বী স্যার।
শুনলাম তোমার নাকি ৩ দিন পরে বিয়ে।কথাটা কি সত্যি?
জ্বী স্যার।
আমার মুখ থেকে হ্যা শব্দ শুনায় মনে হল উনার চিন্তাগ্রস্ত মুখে মেঘের ছায়া নেমেছে। প্রতিদিন যাকে হাস্যউজ্জ্বলভাবে থাকতে দেখি আজ তার মুখটা কেমন যেন বিষাদে ছেয়ে গেছে।মুখটা শুকিয়ে কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।উনি গম্ভীর মুখে বললেন তোমার বান্ধবীকে বিয়ের দাওয়াত দিলে অথচ আমাকে দাওয়াত দিলে না?আমাকে কি তোমার বিয়ের দাওয়াত দেওয়া যেত না!!
স্যারের কথায় কিছুটা অবাক হলাম।স্যার আমার বিয়ের কথা কেমন করে জানল? আমিতো শুধু তাসপিয়াকে আমার বিয়ের দাওয়াত দিছি।আমার বিয়ের কথাতো একমাত্র ওই জানে।বুঝছি শয়তানীরটা পেটে কিচ্ছু থাকেনা।স্যারের সাথে ওর বন্ধুসুলভ সম্পর্ক তাই হয়ত স্যারকে গড়গড় করে সব বলে দিছে।
মেঘ কি ভাবছ?আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে না যে?
না স্যার… আসলে আমার বিয়েটা আমাদের গ্রামের বাড়িতে হচ্ছে।আপনাকে দাওয়াত দিতাম কিন্তু আবার ভাবলাম আপনি ওতদূরে যাবেন না তাই আর কি?
তোমার গ্রামের বাড়িতে বিয়ে হোক বা যেখানে বিয়ে হোক অন্তত দাওয়াততো দিতে পারতে?সম্ভব হলে যেতেও পারি।বিয়েতো আর বাংলাদেশের বাইরে হচ্ছে না।এইখানেই হচ্ছে। তোমার বিয়েতে আমি যেতে চাই। আমাকে আমন্ত্রণ করা যাবে?
খুব লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলাম সেদিন।আসলেই তো দাওয়াত দিলে বা কি এমন হত?কমপক্ষে এরকম লজ্জায় তো আর পড়তাম না।খুব ভুল করে ফেলেছি।
মেঘ কোথায় হারিয়ে যাও একটু পর পর।দেখ তুমি দাওয়াত না দিলেও কিন্তু আমি তোমার বিয়েতে আসছি। মেঘ তোমার বিবাহিত জীবন সুন্দর আর সুখের হোক এই দুয়া করি কথাটা বলতে গিয়ে উনার গলাটা কেঁপে উঠল।
জ্বী স্যার আপনি আমার বিয়েতে আসলে আমিও খুব খুশি হব। এই কথাটা বলতে গিয়ে স্যারের চোখে তাকালাম।অসম্ভব লাল হয়ে গেছে ইতিমধ্যে উনার চোখ। চোখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।
আমি আবার চোখ সরিয়ে নিলাম।আজকে স্যারের ব্যবহার খুব আজব ছিল। যাইহোক এইসব ভেবে কাজ নেই।আজকে বাড়িতে যাব। বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। সবাই খুব হাসিখুশি।আত্মীয়স্বজন ও চলে এসেছে।পুরো বাড়িতে হৈ-হুল্লড় অবস্থা। সবার সাথে হাসিখুশিতে কেমন করে যে দিনগুলো পাড় হয়ে গেল টের পেলাম না। অবশেষে সে প্রতীক্ষিত দিন হাজির হল।তাসপিয়া বিয়েতে আসতে পারেনি। ওর মা নাকি খুব অসুস্থ তাই আর ওর আসা হল না।মনটাই খারাপ হয়ে গেল।কিন্তু বিয়েতে স্যার এসেছে।মা বাবা খুব খুশি হয়েছে আমার বিয়েতে স্যার আসায়।স্যার আমার বিয়েতে আসবে সেটা আমার ভাবনার বাইরে ছিল।বিয়েতে আসতে না আসতে আমার মা বাবার সাথে উনি গল্প জুড়িয়ে দিয়েছেন।আর আমার মা বাবাও স্যারের সাথে অনেক ফ্রী হয়ে গেছে। কিন্তু আমার জানি কেমন লাগছে।ক্লাসেও স্যারের সামনে থাকতে আনইজি লাগে।আর স্যার এখন আমার বিয়েতে উপস্থিত এখন আরও বেশি অস্বস্তিকর লাগছে।
পার্লার থেকে লোক আনা হয়েছে আমাকে সাজানোর জন্য। সবাই এখন আমাকে সাজাতে ব্যস্ত। এত্ত বিরক্তিকর লাগছে।সাজগোছ জিনিসটা আমার বরাবরই অপছন্দের।পুরো ২ ঘন্টা পার্লারের লোকেরা আমাকে তাদের মনমতন সার্কাসের জোকারের মতন সাজিয়ে দেওয়ার পর ক্ষান্ত হল।আর আমিও এদের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেলাম।বিয়ে বাড়িতে সবাই এখন ব্যস্ত। আমি রুমে একা বসে আছি। হঠাৎ আমার মোবাইলে একটা মেসেজ আসল।সাগরের পাঠানো মেসেজ।এই মেসেজ দেখে আমার পুরো দুনিয়া উল্টিয়ে গেল।আমার সাগর আমার সাথে এমন করবে আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।এ কিছুতেই আমার সাগর হতে পারে না।
চলবে….