স্মৃতির পাতা-২

0
1937

স্মৃতির পাতা-২
লেখা- সুলতানা ইতি

উফফফ ঘড়ি টা যে কোথায় রেখেছি, এদিকে ভার্সিটির সময় হয়ে গেছে

“কি খুঁজছিস হৃদয়”

হৃদয় পেছন ফিরে দেখলো অভি ভাই

হৃদয়- ভাই ঘড়িটা খুঁজে পাচ্ছি না

অভি- এই নে তোর ঘড়ি গোসল করতে গিয়ে রেখে এসেছিলি।
এই অভি ভাই হৃদয়ের দুই ইয়ারের সিনিয়র
কিন্তু তার চলা ফেরা বন্ধুর মতো,সবার সাথে মিসে যেতে পারে খুব সহজে ই

হৃদয় ঘড়ি নিয়ে হাতে পরতে পরতে তাড়া তাড়ি করে বেরিয়ে যায়

অভি তাকিয়ে আছে হৃদয়ের যাওয়ার দিকে
হৃদয় ছেলেটা খুব ছুপ ছাপ।কিন্তু
বড্ড মন ভুলো, পড়া শুনায় অসম্ভব ভালো। পড়া শুনা বাদ দিলে ওর হবি হচ্ছে ভাবনা সারাক্ষন কি এতো ভাবে কে জানে,শ্যাম বর্নের মাঝে এক অদ্ভুত মায়া জড়িয়ে থাকে হৃদয়ের চোখে মুখে কোন মেয়ে খুব সহজে তার প্রেমে পড়ে যাবে

ক্লাস শেষে হৃদয় ক্যাম্পাসে এসে বসে আছে
ইচ্ছে করে কোন বন্ধু রাখে না সে
বন্ধুদের সাথে ক্যাম্পাসে বা চায়ের স্টলে বসে আড্ডা দেয়ার ছেয়ে মিহির কথা ভাবতে তার বেশি ভালো লাগে

এই হৃদয় এখানে কি করছিস আয় সবাই মিলে আড্ডা দিই,বলতে বলতে হৃদয়ের কাছে এলো প্রণয়ী

প্রণয়ী আর হৃদয় ক্লাসমেট হলে প্রণয়ী ভিন্ন শাখাতে আছে

হৃদয়- আড্ডা দিতে আমার ভালো লাগে না তুই যা

প্রণয়ী হৃদয়ের পাশে বসতে বসতে বল্লো
তুই এমন কেনো হৃদয়

হৃদয়- তোকে যেতে বলেছি বসতে বলিনি

প্রণয়ী – জানি,,আচ্ছা হৃদয় তুই কি জানিস নওশিন তোকে কতো ভালোবাসে তোর কাছে থেকে পজেটিভ রেসপন্স পাওয়ার জন্য মেয়েটা অদির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে থাকে

হৃদয় – আমি তো তাকে অপেক্ষা করতে বলিনি, আমার যা বলার ছিলো আমি তা তাে বলেছি তাই না

প্রণয়ী – আচ্ছা হৃদয় কোন মেয়ে কি তোকে ছ্যাকা দিয়েছে, না মানে মেয়েদের প্রতি তোর এতো এলার্জি দেখে বললাম

প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে হয়ে উঠে আসে প্রনয়ীর কাছে থেকে এই মুহুর্তে প্রণয়ীরর সাথে কথা বলতে মন চাচ্ছে না

হৃদয় মেসে এসে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো
আকাশ কাঁদছে হয়তো আকাশ টার ও হৃদয়ের মতো মন খারাপ হয়েছে, পার্থক্য আকাশ কেঁদে তার মন খারাপ ঝেড়ে ফেলছে
কিন্তু হৃদয় সেটা পারছে না কাঁদতে তার লজ্জা করে,
এই বৃষ্টির দিনে মিহি কে নিয়ে একটা চমৎকার স্মৃতি মনে পড়ে গেলো হৃদয়ের
স্মৃতির মাঝে হারয়ে গেলো হৃদয়

——এই হৃদয় চল না আমরা স্কুলে না দাঁড়িয়ে থেকে বৃষ্টিতে যে ভিজে বাড়ি ফিরি

হৃদিয় -নারে মিহি আমি ভিজবো না,বৃষ্টিতে ভিজলে আম্মু বকবে

মিহির আর কিছু বল্লো না মুখ ভার করে স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে

হৃদয় মিহির মুখের দিকে ছেয়ে ভাবলো এই মুহুর্তে বৃষ্টি ই পারে একমাত্র মিহির মুখের হাসি ফিরিয়ে আনতে

হৃদয় ঝুম বৃষ্টির মধ্যে নেমে যায়
– কিরে মিহি আয়, বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফিরবি না

ততক্ষনে মিহির মুখে বিশ্বজয়ী হাসি ফুটে উঠলো
সেদিন তো দুজন বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরেছি ঠিক ই
কিন্তু রাতে আমার ভিষন জ্বর এসে যায়
আম্মু আমায় অনেক বকে আম্মুর ভয়ে আমি বলে দিই যে মিহি আমায় ভিজতে বলেছে
আম্মু নিষেধ করে মিহির সাথে না মিশতে

সম্পর্ক বলতে খুব পিওর একটা সম্পর্ক ছিলো মিহির সাথে
আমাদের কখনো ঝগড়া হতো না, মিহি কিছু বললে আমি না মানলে মিহি মুখ ভার করতো তবুও ঝগড়া করতো না

ভালোবাসা কি হয়তো তখন বুঝিনি কিন্তু আজ বুঝি মাঝে মাঝে মিহি কে দেখার জন্য হৃদয়ের মাঝে প্রচণ্ড তাড়া দেয়, কিন্তু ওকে খুজে পাই না ভার্চুয়ালে মিহি নামে সার্চ দিয়ে অনেক খুঁজেছি কোন মেয়ে কে ই আমার সেই পিচ্ছি মিহির মতো লাগে না,মিহি কে আমি হয়তো কোন দিন পাবো না,এখন ও স্পষ্ট মনে আছে মিহির ডান চোখের ভ্রর ঠিক উপরে কালো করে ছোট্ট একটা তিল আছে, ঐ তিল টা যেন মিহি কে আর ও আকর্ষণীয় করে তুলতো

<a href=”https://golpopoka-4ad355.ingress-bonde.easywp.com/wp-content/uploads/2019/06/gif-5.gif” target=”_blank” rel=”noopener”><img class=”alignnone size-full wp-image-13813″ src=”https://golpopoka-4ad355.ingress-bonde.easywp.com/wp-content/uploads/2019/06/gif-5.gif” alt=”” width=”1080″ height=”1920″ /></a>

বৃষ্টি থেমে গেলো হৃদয় বারান্দা থেকে ফিরে এসে পড়তে বসলো

পরদিন ভার্সিটি শেষ হৃদয় তার স্বভাব মতো একা একা ক্যাম্পাসে বসে আছে

সব সময়ের মতো আজ ও প্রণয়ী এসে হৃদয়ের পাশে বসলো
প্রণয়ী – দোস্ত কি করছিস?

হৃদয় প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে প্রনয়ীর দিকে তাকিয়ে বল্লো
“দেখতেই পাচ্ছিস বসে আছি”

প্রণয়ী – তা তো দেখছি কিন্তু
“বসে বসে কি ভাবছিস সেটা ই জানতে ছেয়েছি ”
হৃদয়- কিছু না,তুই কিছু বললে বল,নইলে এখান থেকে ভাগ

প্রণয়ী – ওকে শুন কাল তোর আমাদের বাড়িতে দাওয়াত

হৃদয়- আমি যাবো না

প্রণয়ী – প্লিজ দোস্ত না করিস না,সব ফ্রেন্ডসরা যাবে তুই না গেলে কেমন দেখায় বলতো

হৃদয়- কি আছে তোদের বাড়িতে?

প্রনয়ী- আমার কাজিনের বিয়ে

হৃদয়- আচ্ছা দেখা যাক

প্রণয়ী – না তোকে যেতেই হবে

হৃদয়- আগে কাল আসুক তার পর

প্রণয়ীর অনুরোধ হৃদয় কিছুতেই ফেলতে পারেনি তাই সব বন্ধুদের সাথে প্রণয়ীদের বাসায় গেলো,
গিয়ে যা বুঝলো তা হলো প্রনয়ীর কাজিন সিস্টারের বিয়ে

প্রণয়ী – এই হৃদয় এদিকে আয় তোকে আমার কাজিনের সাথে আলাপ করিয়ে দিই

হৃদয়- লাগবে না

প্রণয়ী – তুই এমন অসামাজিক কেনো বলতো,যার বিয়েতে আসছিস তাকে ই দেখবি না এ হয় নাকি
চলতো প্রণয়ী হাত ধরে টেনে হৃদয় কে নিয়ে গেলো

—আপু এই হচ্ছে আমার বন্ধু হৃদয়,খুব শান্ত ছেলে হি হি হি
——আর হৃদয় এই হচ্ছে আমার কাজিন মিহি, আজকের বিয়ের কনে

হৃদয় যেন নামটা শুনে চমকে উঠে, এক সেকেন্ডের ভেতরে মিহির মুখের সেই তিল টা খুঁজে নিলো
হুম এই মিহির ডান চোখের ভ্রর উপরে সেই তিল টা আছে
হৃদয়ের বুকের ভেতর মোছড় দিয়ে উঠে
যাকে ভেবে দিন কাটিয়েছি আজ তার বিয়ে?

হৃদয় চলে আসে সেখান থেকে তার পর আবার কি ভেবে প্রণয়ী কে বল্লো
– প্রনু তোর কাজিনের সাথে আমি একা একটু কথা বলতে চাই, প্লিজ সুযোগ করে দে

প্রণয়ী অবাক হয়ে বল্লো
– তুই আমার কাজিনের সাথে কি কথা বলবি
তুই কি আগে থেকে ওকে ছিনিস নাকি?

হৃদয়- এতো কথা বলিস না তো, একটু কথা বলতে চাই সুযোগ টা করে দিবি ব্যাস

প্রণয়ী – কিছুক্ষনের পর আমার কাজিনের বিয়ে

হৃদয় কঠোর কন্ঠে বল্লো
-তুই কথা বলিয়ে দিবি কি না বল

প্রণয়ী – ওকে আয়
প্রনয়ী হৃদয় আর মিহিকে একটা রুমের মধ্যে কথা বলতে দিয়ে সে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে

হৃদয়- মিহি চিনেছিস আমাকে আমি সেই হৃদয়

মিহি কিছুক্ষন হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বল্লো
– তুই হৃদয় আই মিন সেই ছোট্টবেলার হৃদয়
মিহি স্থান কাল ভুলে গিয়ে হৃদয়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে
হৃদয় ও দু হাতে বুকের সাথে ঝড়িয়ে ধরে মিহিকে
– কতো খুঁজেছি তোকে মিহি কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি তুই

—-তোকে যে কখনো দেখতে পাবো এটা আমি ভাবিই নি,, তোকে খুব মিস করেছি হৃদয়, সেদিন যখন তোরা বেড়াতে গিয়েছিস তখন বাবার অফিসে কি যেন ঝামেলা হয় বাবা হুট করে কাউকে না বলে আমাদের নিয়ে চলে আসে ঢাকাতে, আমি সেদিন তোকে না বলে আসতে চাইনি হৃদয় বাবা আমায় ঝোর করে এনেছে
—-হৃদয় এই মন তোকে খুব করে ছেয়েছে রে

হৃদয়- তোকে ভেবে আমার দিন শুরু হতো রাত শেষ হতো মিহি

মিহি এবার হৃদয়ের বুক থেকে মুখ তুলে বল্লো
– দুরত্ব যে এতো টা কাছে টানে আগে বুঝিনি হৃদয়

হৃদয়- চল মিহি আমরা পালিয়ে যাই আর এক মুহুর্ত ও এখানে নয়

মিহি যেন থমকে গেলো এই মুহুর্তে কি করবে সেটাই ভাবছে
হৃদয় যাকে সে সমস্ত হৃদয় দিয়ে চায়
বাবা মা যাদের মান সম্মান নষ্ট হোক এটা ও সে চায় না

এদিকে প্রণয়ী দরজা থেকে বল্লো কিরে তোদের হলো? আর কতোক্ষন

হৃদয়- কি ভাবছিস মিহি চল পালিয়ে যাই,হৃদয় মিহির হাত ধরে টেনে নেয়

মিহি- হৃদয় এ হয় না

হৃদয়- কেনো মিহি,এতোদিন পরে পেয়ে ও কি তুই….

মিহি- হৃদয় আমি যদি তোর হাত ধরে চলে যাই আমরা শুখি হবো হয়তো, আবার হয়তো হবো না
কিন্তু আমার বাবা মায়ের মান সম্মান নষ্ট হয়ে যাবে, আমি পারবো না তাদের মনে আঘাত দিতে
এতো দিন যখন দুজন দুজন কে ছাড়া থাকতে ফেরেছি বাকি জীবন ও পারবো

হৃদয় ছল ছল চোখে মিহির হাত ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে যায় মিহি কে বলার মতো কিচ্ছু নেই তার

হৃদয় কে এভাবে কাঁদতে কাদতে বেরিয়ে যেতে দেখে প্রণয়ী অবাক হলো, কিন্তু মিহির কাছে কোন উত্তর পেলো না

হৃদয় উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাটছে, পৃথিবী তো তার জায়গায় ঠিক ই আছে শুধু মিহি আর আগের মত নেই
মিহি একবার ও বুঝতে চাওনি কতো ভালোবাসি তোমায়, সেই দেখা না ফেলেই ভালো ছিলো অন্তত এই আশা তো মনে ছিলো তুমি আমার আছো আজ আমি কি আশা নিয়ে বাছবো মিহি

যখন মিহি হৃদয় কে খুঁজেছে তখন পায়নি
যখন পেয়েছে তখন কিচ্ছু করার নেই তার
জীবন তো জীবনের গতিতে চলছে
শুধু মানুষ গুলোর মন আগের মতো নেই

মিহি হয় তো কোন দিন ভুলতে পারবে না হৃদয় কে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়ার যন্ত্রনা সারা জীবন কুড়ে কুড়ে খাবে
স্মৃতির পাতায় আরেকটা ভয়ংকর স্মৃতি যোগ হলো
জীবন এমন ই
যা চায়. তা পায় না
যা পায়. তা চায়না

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে