স্বার্থপর

0
2602

— তুমি ওর হাত ধরে আছো? তাহলে কি সত্যি তুমি ঠকালে? তুমি আমাকে এভাবে ঠকাতে পারলে? কেন করলে কেন? কেন আমার ভালোবাসা নিয়ে খেললে কেন? বলো কেন মায়া? (উচ্চস্বরে রাগান্বীত কন্ঠে)
|
মায়া— আমার তোমার সাথে আর রিলেশন রাখা সম্ভব না। তোমার সাথে থাকতে থাকতে আমি হাঁপিয়ে উঠেছি। প্লিজ আমাদের মাঝে আর এসো না। আমরা ভালো আছি। তুমি চাও না আমি ভালো থাকি মেঘ? (বিরক্তিকন্ঠে)
|
মেঘ— হুম… ভালো থাকো। আমি আর আসবো না তোমাদের মাঝে। তুমি সুখে থাকো আগেও চেয়েছি… আজও চাচ্ছি.. সারাজীবন চাবো। (কান্নাজড়িত কন্ঠে)
|
বলে মেঘ আর দাঁড়ালো না। হেঁটে চলে গেলো। পিছনে তাঁকালো না ঘুরে কারন তাঁকালে হয়তো মায়াকে আর ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করবে না। মায়াকে যে বড্ড ভালোবাসে মেঘ। দ্রুত একটা রিক্সা ঢেকে উঠে পড়লো। রিক্সাওয়ালাকে একটা জায়াগার নাম বললো… যেখানে খোলা মাঠ আর তার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে তিতাস নদীর একটা অংশ।
গন্তব্য অনুযায়ী রিক্সা থামলো। রিক্সার ভাড়া চুকিয়ে সামনে হাঁটছে দ্রুত। যেন জনমানবদের থেকে দূরে সরে যেতে পারে। দ্রুত হাঁটতে হাঁটতে দৌড় দিলো কারন আর পারছে না কান্না থামিয়ে রাখতে। খোলা মাঠের শেষপ্রান্তে গিয়ে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে বুক ফাটিয়ে চিৎকার করে কান্না করতে লাগলো। মেঘের চিৎকারে সামনে নদীর কিছু মাছরাঙা পাখি উড়ে গেলো। আর সব কিছু তার মতো আছে। গাছপালা তারমতো দুলছে… নদীর পানি তারমতো ঢেউ খেলছে। শুধু মেঘের বুকটাই ফেঁটে যাচ্ছে আর মায়া মায়া ই বলে যাচ্ছে। কান্না করতে করতে একটা সময় নিরব হয়ে গেলো… পুরো স্তব্ধ। এক নজরে নদীর পানির দিকে তাঁকিয়ে রইল কিন্তু মেঘের এ তাঁকিয়ে থকাটা বেশিক্ষণ থাকতে দিলো না দুষ্টু প্রজাপতি। প্রজাপতি উড়ে এসে মেঘের চোখের পাতায় ছুঁয়ে.. মেঘের হাতের উপর বসলো। মেঘের ঘোর ভাঙলো। ঘোর কাটতেই হাতের উপর তাঁকালো। হাতের উপরের প্রজাপতিটা দেখে মায়ার কথা মনে পড়ে গেলো… আবারো ঠুকরে কেঁদে উঠে নিজের সাথে বললো….
|
—– মায়া মনে আছে?… তুমি একদিন আমার ঠিক এই হাতের উপর প্রজাপতি উড়ে আসায় বলেছিলে… **এই মেঘ তোমার তো বিয়ে হবে… প্রজাপতি গায়ে বসলে বিয়ে হয়।*** বলেই তুমি তোমার সেই মিষ্টি হাসিটা দিয়েছিলে। আর আমি তখনি প্রজাপতিটা আলতো করে ধরে তোমার গায়ে দিয়েছিলাম আর বলেছিলা… *** হুম… তোমার সাথে হবে। তোমার গায়ে দিয়ে দিলাম প্রজাপতি। এখন তোমার সাথে বিয়ে হবে আমার***। তুমি সে কি লজ্জা পেলে… সাথে সাথে আমার বুকে… ঠিক এই বুকে মাথা গুঁজেছিলে। মায়া তুমি আর আমার বুকে মাথা গুঁজবে না? ঐ ছেলের বুকে গুঁজবে? মায়া আমি এই বুক নিয়ে কিভাবে থাকবো বলো? কিভাবে? কিভাবে? (চিৎকার দিয়ে)
|
আবারো কান্না করে নিরব হয়ে গেলো। চারদিক শুনশান। শো শো বাতাসের শব্দ ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না। নিরবতা ভেঙ্গে আবারো নিজের সাথে কথা বলে উঠলো মেঘ…….
|
—- মায়া আমাকে ছাড়া তুমি থাকতে পারবে না বলেছিলে তাহলে আজ কেন এমন পাল্টে যাওয়া তোমার? তুমি তো এমন ছিলে না? কেন করলে আমার সাথে এমন? আমাকে না দেখে তো তুমি থাকতে পারো না। কেঁদে বুক ভাসাও। তাহলে আজ কীভাবে থাকবে? এই মেয়ে কীভাবে থাকবে? কীভাবে?….. তু—-তুমি তো তোমার মেঘকে তোমার জীবনের থেকে বেশি ভালোবাসো। তাহলে আজ কেন আমাকে নিজের জীবন থেকে সরিয়ে দিলে? কেন দিলে? কেন? (উচ্চস্বরে)… আমি কি নিয়ে বাঁচবো মায়া? আমি কীভাবে থাকবো তোমাকে ছাড়া? আমি মরে যাবো… একদম শেষ হয়ে যাবো। যে মায়া আমাকে একটা পিঁপড়া কামড় দিলে ব্যথা নিজে পেতো.. সেই মায়া তার মেঘকে ছাড়া অন্যকারো সাথে কীভাবে থাকবে? কীভাবে?.. তাহলে কি সব অভিনয় ছিলো? সব ছলনা ছিলো? তুমি ছলনাময়ী মায়া? তুমি মিথ্যাবাদী? তোমার ভালোবাসা মিথ্যা? তোমার চোখের পানি মিথ্যা? সব কি মিথ্যা ছিলো মায়া? সব কি মিথ্যা ছিলো? (উচ্চস্বরে)……
|
কিছুক্ষণ চুপ হয়ে থেকে…. নাহ মায়া নাহ। আমি পারব না তোমাকে ছাড়া থাকতে। আবার তোমাকে ঘৃণাও করতে পারব না। তুমি সুখে থাকো। আমি পৃথিবীতে থাকলে বার বার তোমার কাছে ছুটে যাবো আর তোমার সুখে থাকা হবে না। আমি চলে যাবো অনেক দূরে। অনেক দূরে। যেখান থেকে কখনো ফিরে আসতে পারব না। হুমমমম আআআমি চলে যাবো অনেক দূরে। ভালোবাসি মায়া তোমাকে। খুব ভালোবাসি। তোমার পাগল… আজ শেষ পাগলামি করবে… তোমার থেকে নিজেকে বহুদূরে নিয়ে। ভালো থেকো মায়া। সুখে থেকো। (কান্না করতে করতে)
|
মায়া আর মেঘের আজ ৫ বছরের সম্পর্ক। এ সম্পর্কে দুজন দুজনকে প্রচন্ড রকম ভালোবাসতো। খুব কেয়ার করতো দুজন দুজনকে। সবাই ওদের **মেঘোমায়া** বলে ডাকে। খুনসুটি.. মান-অভিমান.. দুষ্টুমি.. ভালোবাসা সবকিছু মিলিয়ে ওদের সম্পর্ক খুব সুন্দর করে চলছিলো। কিন্তু গত ৪/৫ দিন ধরে মেঘ ফলো করছে মায়া ওকে ইগনোর করছে। আবার ফোনও বিজি পায়। মেঘ এসব নিয়ে মায়াকে কোনো প্রশ্ন করে না। সন্দেহ করে না। কিন্তু আজ একটা আননোন নম্বর দিয়ে কল আসে মেঘের ফোনে। কলটা ধরতেই একজন বলে… ** আপনার মায়া.. লেকের পাশে অন্যকারো সাথে বসে আছে… বিশ্বাস না হলে এসে দেখে যান।*** এতটুকু বলে কলটা কেটে গেলো। মেঘ কথাটি বিশ্বাস করলো না। তাই ঐ নম্বরে আবার কল ব্যাক করলো.. কিন্তু সুইচড অফ। মেঘ বিশ্বাস না করলেও মনের মধ্যে মায়াকে দেখতে মন চাইলো তাই মায়াকে কল না দিয়ে লেকের পাশে চলে। আর গিয়ে দেখে সত্যি সত্যি মায়া একটা ছেলের পাশে বসা। মেঘ গিয়ে ওদের সামনে দাঁড়ালো। মায়া মেঘকে দেখে চমকে উঠে বললো….
|
মায়া— তুতুতুতুমি?
|
মেঘ— হ্যাঁ আমি। কেন? আর উনি কে? তোমার কাজিন?
|
ছেলেটা— What?? আমি মায়ার বিএফ। আপনি কে?
|
মেঘ সাথে সাথে ছেলেটার কলার চেপে ধরে….
|
মেঘ— Mind your language.. (রাগী কন্ঠে)
|
মায়া— ছাড়ো ওকে। ছাড়ো বলছি। (মেঘের হাত ধরে)
|
মেঘ— এই ছেলে এসব বাজে কথা কোন বলবে? (ছেলেটার কলার ছেড়ে)
|
মায়া— কিসের বাজে কথা? কোনো বাজে কথা না। যাক তুমি যখন ওকে দেখে ফেলছো তাহলে আর লুকিয়ে লাভ কি। শোনো ও আমার বিএফ। আমরা রিলেশনে আছি। আর আমি ওকে ভালোবাসি। তুমি আমাকে ভুলে যাও।
|
মেঘ— মানে কি? তোমার কি হয়েছে? তুমি কি বলছো এগুলো? তোমার শরীর খারাপ হয়নি তো? (পাগলের মতো মায়ার মুখ ধরে)
|
মায়া— উফফ ন্যাকামি বাদ দাও। ভালো লাগছে না। তুমি প্লিজ চলে যাও। আমাদের একটু একা থাকতে দাও। সত্যিটা তো বল্লামই। (মুখ থেকে মেঘের হাত সরিয়ে দিয়ে)
|
মেঘ— কিসের সত্যি? কোনটা সত্যি? আমি বিশ্বাস করিনা। তুমি মিথ্যে বলছো। তুমি অভিমান করে এসব করছো তাই না? আমি সরি মায়া… গতকাল ফোনটা ধরার এক্টুও সময় পাইনি। তাই তোমাকে কল দিতে পারিনি। আজ তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে এসেছি। প্লিজ লক্ষীটি আর হবে না এমন। এবারের মত ক্ষমা করে দাও। এই যে এই আমি কান ধরছি। প্লিজ ক্ষমা করে দাও?
|
ছেলেটা— তুমি এসব কি শুরু করছো মায়া? আমি চলে যাচ্ছি।
|
মায়া— আহ… দাঁড়াও। তুমি যাবে কেন? যাবে তো ও। প্লিজ মেঘ চলে যাও। আমি ওকে হারাতে পারব না তোমার জন্য। দেখো ও চলে যাচ্ছে তোমার জন্য। আর তুমি যদি এখন না যাও তো মেঘ এখন আমি চলে যাবো ওর সাথে এখান থেকে। প্লিজ লিভ মেঘ প্লিজ… (ছেলেটার হাত ধরে)
|
তারপর উপরে ঘটলো এসব….
|
|
|
২ দিন পর……..
|
—- মায়া… মায়া…মায়য়য়য়য়য়া… (দৌড়ে এসে মায়ার বাসায় ড্রইংরুমে)
|
মায়ার মা— কি হয়েছে পিউ? তুমি এভাবে হাঁপাচ্ছো কেন? আর এত অস্থির দেখাচ্ছে কেন?
|
পিউ— আআআন্টি মায়া কোকোকোথায়? (হাঁপাতে হাঁপাতে)
|
মায়ার মা— আর বলো না পিউ… মায়া দুই দিন ধরে ওরে রুমের দরজা আটকিয়ে বসে আছে। কিছুই খাচ্ছে না। ওর কি হয়েছে জানো তুমি?
|
পিউ— আন্টি আমি আপনাকে সব পরে বলবো.. আগে আমার মায়ার কাছে যেতে হবে।
|
বলেই পিউ দৌড়ে মায়ার রুমের কাছে গিয়ে দরজাতে জোরে জোরে নক করতে লাগলো আর মায়া মায়া বলে চিৎকার করতে লাগলো। মায়া পিউর কন্ঠ শোনার সাথে সাথে দরজা খুলে পিউকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করতে করতে….
|
মায়া— দেখ না পিউ… মেঘ আমাকে এক্টুও ভালোবাসে না। ও আমার ঐসব বিশ্বাস করছে। দুইদিন হলো ও একটাও বারও কল দেয়নি আমাকে। আমিও দেইনি। পিউ ও আমাকে এক্টুও ভালোবাসে না। ভালেবাসলে কল দিতো না বল? বাসার সামনে আসতো না বল? ও আমার সাথে টানা একদিন কথা বলে নাই.. তারজন্য ওকে একটু শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম.. আমার মূল্যটা একটু বুঝাতে চেয়েছিলাম। আমি অভিমানী মেয়ে। বড্ড অভিমানী। ও তো জানে। তবুও ও আসে নি আমাকে মানাতে। টানা একদিন কথা বলেনি পরেরদিন সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো তবুও কল দেয়নি। কত কেঁদেছি তবুও দেয়নি কল। আমিও রাগ করে আমার কাজিন তুষারকে দিয়ে ওকে কল করিয়ে বলিয়েছিলাম.. আমি একটা ছেলের সাথে লেকের পাড়ে বসে আছি এটা বলতে। তুষাড় বললো। তারপর তুষারকে শিখিয়ে পড়িয়ে আমার মিথ্যে বিএফ সাঁজার অভিনয় করতে বল্লাম। তুষারও করলো। কিন্তু ও এসব মিথ্যে বিশ্বাস করলো কি করে? আজ ২ দিন একটুও খোঁজ নেয়নি পিউ। পিউ ও আমাকে ভালোবাসে না। ও বলে.. ও আমার চোখের ভাষা বুঝে.. চোখের ভাষা বুঝলে তো ও বুঝতো এই চোখ দুটো ওকে দেখার জন্যই আকুল। সব মিথ্যে বানোয়াট। পিউরে পিউ আমার মেঘ আমারে ভালোবাসে না। পিউ ওরে চলে যেতে বল্লাম ও চলে গেলো। কেন আমাকে টেনে একবার বুকে জড়িয়ে ধরলেই তো আমার সব রাগ পানি হয়ে যায় ও জানে না? জানে তো। তাহলে কেন ধরলো না? কেন? তাহলে কি ও অন্যকাউকে পেয়েছে? নাহ নাহ.. এ আমি কি ভাবছি?.. এ হতে পারে না। ও আমার। শুধু আমার। কিন্তু কল দিলো না কেন? খবর নিলো না কেন? তাহলে কি আমাকে ভুলে গেছে? পিউ বল.. ও কি আমাকে ভুলে গেছে? নাহ নাহ.. আমার মেঘ তার মায়াকে ভুলতেই পারে না। পারে না। তবে কেন কোনো খোঁজ নিলো না আমার? কেন?
|
পিউ— বেঁচে থাকলে তো তোর খোঁজ নিবে? (কান্না করতে করতে)
|
মায়া— মানে..?? (কান্না জড়িত চোখে অবাক দৃষ্টিতে)
|
পিউ— তুই ফেসবুকে যাস না?
|
মায়া— না। ২ ধরে যাই না। কেন? কি হয়েছে? বল আমাকে কি হয়েছে?
|
পিউ— মেঘের টাইমলাইন দেদেদেখে আয়…
|
মায়া পিউর কথা শুনে আর দেড়ি না করে ফোনটা হাতে নিয়ে ডাটা অন করে ফেসবুক লগ ইন দিয়ে মেঘের মেসেজ দেখতে পেলো। লেখা… ** ভালোবাসি মায়াময়ী.. বড্ড ভালোবাসি। সুখে থেকো তোমার নতুনত্বে**।
মেসেজটা পড়ে মেঘের টাইমলাইনে গেলো। টাইমলাইনে গিয়ে মায়ার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো। মায়া ধুপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো। পিউ সাথে সাথে গিয়ে মায়াকে ধরলো।
|
পিউ— মায়া.. মায়া…?? (কান্না করতে করতে)
|
মায়া— পিউ.. পিউ.. পিউ এটা কি ছিলো? কি ছিলো রে?এটা মিথ্যে বল? বল মিথ্যে?… বল মিথ্যে এটা বল.. বল পিউ বল? (চিৎকার দিয়ে)
|
পিউ— নিজেকে শক্ত কর মায়া… এটা সত্যি। এটা সত্যি। সসসসত্যি…(কান্নার নিস্তেজ কন্ঠে)
|
মায়া— আমি বিশ্বাস করি না। তুই মিথ্যে বলছিস। তুই মিথ্যে বলছিস। সবাই মিথ্যে বলছে সবাই সবাই.. সবাই (চিৎকার দিয়ে)
|
মায়ার মা— কি হয়েছে? মায়া মায়া.. তোর কি হয়েছে.. এভাবে কাঁদছিস কেন? কি হয়েছে মা তোর? (মায়ার চিৎকার দিয়ে কান্না শুনে মায়ার রুমে এসে)
|
মায়া— মা মা… ও মা.. দেখো মেঘের টাইমলাইনে দেখো.. (ফোনটা বাড়িয়ে দিয়ে মায়ার মায়ের দিকে)
|
মায়ার মা— পিউ… মেমেমেমেঘ কীভাবে মামামারা গেলো? (কান্না কন্ঠে)
|
মায়া— মাআআআআ… আমার মেঘ মরেনি। তুমিও মিথ্যে বলছো মা পিউর মতো? আমার মেঘকে আমি এখনি কল দিবো দেখো ও রিসিভ করে বলবে… পাগলী কেঁদো না। আমি আসছি।
|
মায়া মেঘের নম্বরে কল দিলো কিন্তু কলটা রিসিভ হলো না। বার বার দিলো কিন্তু বার বারই সুইচড অফ বলছে। মায়া পাগলের মতো ফোন টিপাটিপি করলো… একটা সময় ফোনটা ধরে এক আছাড় দিলো ফ্লোরে আর চিৎকার দিয়ে উঠে বললো… **মেএএএএঘ… মেঘ তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারো না। পারো নাআআআ***
|
বলেই জ্ঞান হারালো। পিউ আর মায়ার মা মায়াকে ধরে বেডে শোয়ালো। ডক্টর ডাকলো। ডক্টর কিছু মেডিসিন দিয়ে চলে গেলো। মায়া ঘুমাচ্ছে। পিউও চলে গেলো বাড়ি।
|
রাত ২টা মায়া চোখ খুললো। চোখ খুলে দেখে মায়ার মা মায়ের পাশে আধোশোয়া হয়ে ঘুমিয়ে আছে। মায়া আস্তে আস্তে উঠে বসলো। মায়ার মায়ের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। মায়াকে দেখে…
|
মায়ার মা— কেমন লাগছে এখন?
|
মায়া— ভালো.. (মলিন কন্ঠে)
|
মায়ার মা— আচ্ছা আমি একগ্লাস দুধ নিয়ে আসি। তুই বস।
|
মায়া— কিছু লাগবে না। আমি ঠিক আছি। তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আমি একটু একা থাকতে চাই।
|
মায়ার মা— তুই অসুস্থ। আমি থাকি।
|
মায়া— প্লিজ মা.. যাও.. আমি একটু একা থাকি। (মলিন কন্ঠে)
|
মায়ার মা আর কিছু না বলে চলে যাচ্ছিলো…
|
মায়া— মা রুমের লাইটটা অফ করে দিয়ে যেও।
|
বলে মায়া একটা হাত কপালের উপর রাখলো চোখ বন্ধ করে। মায়ার মা লাইট অফ করে চলে গেলো।
|
কিছুক্ষণ পর মায়া উঠে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে ওয়ারড্রবের কাবার্ট থেকে মেঘের একটা ছবি বের করে দেখতে দেখতে ঠুকরে কেঁদে উঠলো। নিজের সাথে বলতে লাগলো…….
|
মায়া— মেঘ? এই মেঘ? মেঘ তুমি কীভাবে ওসব বিশ্বাস করলে? তুমি কীভাবে তোমার মায়াকে ছেড়ে একা একা স্বার্থপরের মতো চলে গেলে বলো? তোমার মায়ার কথা একটুও মনে পড়েনি? একটুও না? আমার জন্য একটুও মায়া হলো না? হবে কি করে.. তুমি তো আমাকে একটুও ভালোবাসো না। ভালোবাসলে ঠিক আমাকে তোমার সাথে নিয়ে যেতে। কোনদিন সুইসাইড করে আমার থেকে দূরে যেতে না। ভালোবাসলে আমাকে কল করতে.. আমার বাড়ি আসতে। কিন্তু তুমি একা একা আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেলে। বাহ তুমি কত স্বার্থপর। কত স্বার্থপর। কত.. কত.. কত। (কাঁদতে কাঁদতে থেমে গেলো)
কিছুক্ষণ পর…….. মেঘ আমি কীভাবে বাঁচবো তোমাকে ছাড়া? আমি নিঃশ্ব হয়ে গেলাম। আমার পথিবী যে অন্ধকার হয়ে গেলো মেঘ। আমি কার বুকে মাথা রাখবো? আমি কার সাথে অভিমান করবো? আমি কার সাথে রাগ দেখাবো? আমি কার জন্য রান্না করে নিয়ে যাবো? কাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিবো? কার সাথে হাজার বায়না ঝুড়ি খুলে বসবো? কার মাথা পাগল করবো কথার ফুলঝুরি বিছিয়ে? কার চোখে তাঁকিয়ে থেকে নিজের ভালোবাসার গভীরত্ব খুঁজবো? কে আমার আড়ালে আমাকে দেখবে? কাকে দেখার জন্য আমার দুচোখ ব্যাকুল হবে? কার বাহুডোরে নিজেকে বারংবার কোনো না কোনো অজুহাতে আবদ্ধ করতে চাবে মন? আআআআমি কাকে ভাভাভালোবাসবো? কাকে ভালোবাসবো? বববলতে পারো মেঘ? মেঘ বলতে পারো আমি কাকে ভালোবাসবো? মেঘ পারো তুমি বলতে? পারো বলো তুমি? পারো? পাআআআরোওওওও????? (উচ্চস্বরে)
মেঘ তুমি স্বার্থপর… হুমম খুব স্বার্থপর.. স্বার্থপরকে আমি ভালোবাসি না… বাসি না… I hate you Meg.. মেঘ তুমি শুনতে পাচ্ছ? I hate you… hate you.. hate yo.. haate yyou… (কাঁদতে কাঁদতে নিস্তেজ কন্ঠে)
|
চোখের পানি ঝড়াতে ঝড়াতে মায়া একদম চুপ হয়ে গেলো। ফ্লোর বসে বেডের সাথে মাথা ঠেকিয়ে একদম চুপ হয়ে গেলো। অপলকভাবে উপরের দিকে তাঁকিয়ে রইল। গঢ়গঢ় করে চোখের পানি পড়ছে। কিন্তু কোন নড়াচড়া করছে না মায়া। দেখে যেন মনে হচ্ছে পাথরের মূর্তির চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝড়ছে। জড়পদার্থের মত বসে রইল মায়া। জলজ্যান্ত মানুষ তখনি জড়পদার্থে পরিনত হয় অধিক ভয়ে অথবা অধিক কষ্টে। মায়ার ক্ষেত্রে অধিক কষ্টটাই এসে পড়েছে। অধিক কষ্ট পেলে মানুষের বুদ্ধি লোপ পায়। আস্তে আস্তে মস্তিষ্ক বিকল হয়ে পড়ে। একটা মোহই তাদের মাঝে বিরাজ করে শুধু কষ্টের কারন। আবার ভয়ানক কিছু ঘটিয়ে ফেলে তারা। হতে থাকে বিকলতা। নিস্তেজ হয়ে যায় মন। উহুম মন না মস্তিষ্ক। শূণ্যতায় ভোগে একটা দেহ তার অজান্তে।
|
|
সকাল বেলা……
মায়ার’মা ফজরের নামাজ পড়ে মায়ার রুমে গেলো। গিয়ে দেখে দরজা খোলার হাল্কা আলোতে মায়া বেডের অন্যপাশে বসে মাথার পিছন দিক বাম পাশে কাঁধ করে শুয়ে আছে। চুলগুলো ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলো না মায়ার’মা। রুমের লাইট অন না করে মায়ার সামনের দিকে জানলাটা খুলে দিলো। জানালার আলো এসে মায়ার সামনে পড়লো। পিছন ঘুরে তাঁকাতেই মায়ার’মা মায়াকে দেখে এক চিৎকার দিয়ে উঠে বললো… মায়আআআআআআ…
বলেই মায়ার সামনে গিয়ে মায়াকে টেনে সামনে নিতেই মায়ার নিস্তেজ শরীরটা ঢুলে মায়ার’মার বুকে পড়লো। মায়ার’মা মায়াকে বুকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না। মেয়ে হারানোর কান্না।
হুম মায়া পৃথিবী থেকে চলে গেলো। চলে গেলো এই স্বার্থের দুনিয়া ছেড়ে। এ পৃথিবীতে থাকলে ও বাঁচতে পারবে না মেঘহীন। বড্ড ভালোবাসে যে মেঘকে। যেখানে মেঘ নেই সেখানে মায়া কি করে থাকবে? পারবে না থাকতে…তাই তো রাতেই নতুন দাড়ালো ব্লেড চালিয়ে দিলো নিজের হাতের শিরায়। গলগলিয়ে রক্ত বের হতে থাকলো। যত বের হচ্ছিলো তত ওর মনে খুশিরা বাসা বাঁধতে শুরু করছিলো কারন ওর মন যে মেঘের কাছে যেতে চাইছে। ধীরে ধীরে মায়া পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে নিলো।
|
মায়ার’মায়ের চিৎকার শুনে বাড়ির কাজের মেয়েটা দৌড়ে এলো। মায়ার এ অবস্থা দেখে কান্না করতে করতে দ্রুত হসপিটালে কল দিলো।
|
প্রায় ১৫ মিনিট পর এম্বুলেন্স এসে নিয়ে গেলো মায়াকে। সাথে মায়ার’মা আর কাজের মেয়েটা। মায়ার বাবাকে খবর দিয়েছে কাজের মেয়েটা। সে অফিসের কাজে রাঙামাটি গিয়েছে। মেয়ের কথা শুনতেই সাথে সাথে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে মায়ার’বাবা। কাজের মেয়েটা পিউকেও জানিয়ে দেয়। পিউও দেড়ি না করে দ্রুত হসপিটালের দিকে রওয়ানা দেয়। হসপিটালে আসতে আসতে পিউও কয়েকজন ফ্রেন্ডকে জানিয়ে দেয়।
|
পিউ হসপিটালে এসে দেখে মায়ার’মা মায়ার নিস্তেজ হয়ে যাওয়া শরীরটা ধরে কাঁদছে। বুঝতে বাকি রইলো না.. মায়া পৃথিবীতে আর নাই। কেঁদে উঠলো পিউও। একটুপর পিউ নিজেকে সামলে মায়ার’মাকে সামলাতে চেষ্টা করলো। এরমধ্যে দুজন নার্স এসে মায়ার স্ট্রেচার নিয়ে এম্বুলেন্সের দিকে যাচ্ছে।
পিছু পিছু পিউ মায়ার’মাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। উফফ পৃথিবীর সব থেকে বড় কষ্ট হলো.. সন্তানের লাশ দেখা। এর থেকে বড় কষ্ট আর কিছু হতেই পারে না। সবাই একদিন তার স্মৃতি ভুলে যাবে কিন্তু দাগটা থেকে যায় বাবা-মা’র হৃদয়ে। তার চোখ প্রতিদিন ভিজে উঠে তার সন্তানের জন্য। এর শেষ সেদিন হবে যেদিন সেও এই পৃথিবী ত্যাগ করবে.. এর আগে না।
|
পিউ মায়ার’মাকে নিয়ে ধীরে ধীরে যাচ্ছিলো… হঠাৎ একটা কন্ঠ.. প্রচন্ড জোরে চিৎকার দিয়ে বললো…. মায়আআআআআ…..!!
|
পিউ সামনে তাঁকিয়ে নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারলো না। ও কাকে দেখছে? মেঘকে? মেঘ কোথা থেকে এলো? মেঘ তো সুইসাইড করেছিলো তাহলে এ কে? নাহ পিউর মাথা ঘুরছে। পিউ ভাবতে পারছে না। শুধু অবাক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে সামনে হাঁটছে। মায়ার’মা পিউর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দ্রুত হেঁটে মেঘের সামনে গিয়ে…..
|
মায়ার মা— মেমেমেঘ তুমি? (অবাক চোখে)
|
মেঘ— আআআন্টি আমার মামায়আআর কি হয়েছে আন্টি?
|
পিউ— তুতুতুতুমি বেঁচে আছো মেঘ? তুমি না সুইসাইড করেছিলে?
|
মেঘ— ওটাতো মায়াকে ফিরানোর জন্য ফেসবুকে দিয়েছিলাম। (কান্না করতে করতে)
|
পিউ— ওটা ফিরানোর কোন ধাপ? মিথ্যে দিয়ে কোনকিছু হয়েছে মেঘ? মায়া তোমার উপর অভিমান করে ওর কাজিন তুষারের সাথে ঐ অভিনয়টুকু করলে আর তার অভিনয়ের জন্য আজ মেয়েটা জীবন দিয়ে দিলো। মেঘ..মায়া চিরতরে তোমার হয়ে গেলো মেঘ। তুমি মিথ্যে সুইসাইডের অভিনয় করলে আর মায়া সত্যি সুইসাইড করলো। মেয়েটা বড্ড বোকা। বড্ড। মেঘ বলতেই মেয়েটা বোকা।
|
মায়ার মা— এই ছেলে খুনী। এই ছেলে আমার মেয়েকে খুন করছে। ছাড়ব না আমি ওকে। ছাড়ব না। (মেঘের কলার ধরে)
|
পিউ— আন্টি মেঘকে কষ্ট দিলে মায়া যে শান্তি পাবে না। মায়াও যে উপরে বসে কষ্ট পাবে। ও তো মেঘকে অনেক ভালেবাসে আন্টি আপনি তো জানেন। ছেড়ে দিন মেঘকে আন্টি।
|
পিউর কথায় ছেড়ে দিলো মেঘকে।
|
পিউ— তুমি কোলে করে নিয়ে চলো মায়াকে মেঘ। মায়ার আত্মা শান্তি পাবে। তুমি বেঁচে আছো এটাতেই বড় শান্তি পেয়েছে মেয়েটা।
|
পিউর কথামতো মায়াকে কোলে নিয়ে মেঘ এম্বুলেন্স বসলো। মায়ার’মা কাঁদছে। পিউ একদম নিরব হয়ে গেলো। এম্বুলেন্স চলছে তার নিজে গতিতে। মেঘ মায়াকে কোলে নিয়ে নিরবে চোখের পানি বিসর্জন দিচ্ছে আর মনে মনে বলছে…….
★আমি সুইসাইড করতে গিয়েছিলাম মায়া। কিন্তু মনে পড়লো.. আমার বাবা নেই। মা আর ছোট বোনটাকে আমারই দেখতে হবে। বাবার ব্যাবসা আমি ছাড়া কে দেখবে? মা? সে তো প্যারালাইজড। ওদের যে আমাকে ছাড়া চলবে না। বাবার ব্যাবসা যে আমাকেই দেখতে হবে। এদিকে তুমি ছাড়া আমি থাকতে পারব না। বন্ধুরা ওমন একটা বুদ্ধি দেয়। ওরা বলল এটা করলে তুমি আমার বাড়ি আসবে সত্যতা যাচাই করার জন্য। আর তখনি তোমাকে বুঝাবো। কিন্তু দেখো হলো উল্টোটা… তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে। ঘুরেফিরে তুমি সেই স্বার্থপরই। আমাকে একা সেই করেই দিলে। উহুম আমি চাইলেও তোমার কাছে যেতে পারব না। আমার যে পরিবারের প্রতি দায়িত্ব আছে। আমি ছাড়া ওরা অন্ধ। তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে কি হবে? আমি তোমাকে ছাড়বো না। কখনো না। এই মেঘ মায়ার। শুধু মায়ার।তবে তোমার নাম আমি পাল্টে রাখলাম… স্বার্থপর মায়াময়ী।
বলে মায়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আবার বলতে লাগলো মনে মনে… হুমমমম তুমি স্বার্থপর। খুব স্বার্থপর। ভীষন স্বার্থপর।????
|
|
|
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। ধন্যবাদ?)
|
গল্প——> ?স্বার্থপর?
লেখিকাঃ আয়sHa?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে