স্বামীর অধিকার পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0
675

#স্বামীর_অধিকার
.
#পর্ব_১০_(_শেষ_)
.
#writter_সোহানু_রহমান_সোহান
.
সে নিজেকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারছিলো না।সে বিষ্শাশ করতে পারছে না এতোদিন একসাথে থেকেও সে সোহানকে চিনতে পারেনি।দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে কান্না করতে লাগলো।এখন কিভাবে সে সোহানকে তার মুখ দেখাবে?কিছুতেই তার চোখ থেকে জল থামাতে পারছিলো না।এতো কাছে থেকেও সে চিনতেই পারলো না তাকে।নিজের হাতে সে তাকে কত কষ্ট দিয়েছে অথচো একদিন সেই বলতো,,
—এই হাতটা সবসময় তার বুকে থাকবে।
কতো কষ্ট দিয়েছে কখনো সামির অধিকার টুকুও দেইনি।নিশিকে অভি এক পলকের জন্য ও দেখছে না।নিশি কি করবে এটাই ভেবে পাচ্ছে না।
হটাৎ চেয়ার থেকে উঠে পড়লো।হসপিতাল থেকে বেরিয়ে সোজা বেড়িয়ে এলো।গাড়ি নিয়ে রাস্তাই কিভাবে চালাচ্ছিলো এটাও তার চোখে পড়ছিলো না।বাসাই এসে কারো সাথে দেখা না করেই রুমে গিয়ে রুমটা আটকে দিলো।তার বেচে থেকে কি হবে?নিজের হাতদুটোকে তার দেখতেও লজ্জা হচ্ছিলো।সে ঠিক করে নিয়েছে তাকে এখন কি করতে হবে?বিছানাই উঠে পাশ থেকে ওড়নাটা নিয়ে ফ্যানের সাথে বাধার জন্য এগ্রসর হলো।সে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে যে, তার জিবনটা সে আর রাখবে না।পাখার সাথে ওড়নাটা বেধে গলাই বাধার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলো।চোখের পানিটা মুছে একবার রূমটার দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে নিলো।

এই রুমেই সে সোহানকে আছাড় মেরেছিলো।কতো কষ্টই না পেতে হয়েছিলো তার জন্য।তাই সে আর তাকে কষ্ট দিতে চাইনা।চিরদিন তার থেকে বিদায় নিয়ে যাওয়ার কথাই ভেবেছে।তার ইচ্ছে হচ্ছিলো একবার সোহানকে বলতে,,
—ওগো শুনছো আমিতো আর থাকবো না।তোমাকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য ছেড়ে চলে যাবো।তুমি কি একটু তোমার বুকে আমাকে জাইগা দিবে?একটু ঘুমাবো।
কিন্তু সে কিভাবে কথাটা বলবে?সে তো তার থেকে অনেক দুরে রয়েছে।তার খুব কান্না পাচ্ছে দমগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।ওড়নাটা গলাই পেচিয়ে নিলো।চোখটা বুজে নিলো কিন্তু কেন যেন চোখটা বুজেও সে সোহানকে তার সামনে দেখতে পাচ্ছিলো।কোনমতেই সে পায়ের তলা থেকে চেয়ারটা সরাতে পারছিলো না।
.
হটাৎ করেই তার চোখটা আলমারির উপরে নজর পড়ে গেলো।সেখানে সে একটা ডাইরির মতো কিছূ একটা দেখতে পেলো।ডাইরিটা দেখে তার বুকটা কেপে উঠলো।তার মনের ভিতর বারবার বলছিলো ডাইরিটা খুলে দেখতে।হটাৎ করেই ওড়নাটা তার গলা থেকে খসে পড়ে গেলো।হইতো তাকে কোনো ছায়া ডাইরির দিকে টানছে।বিছানা থেকে নেমে সে ডাইরির দিকে এগোতে লাগলো।আলমারিটার উপরে হাত দিয়ে সে ডাইরিটা পাড়তেই আলমারি খুলে কিছু কাগজ নিচে পড়ে গেলো।নিমিষেই কাগজগুলো তার চোখদুটি বড় বড় করে তুললো।

একি এই কাগজগুলো এখানে কিভাবে এলো?কাগজগুলো তুলে ভাবতে থাকলো তাহলে কি সোহান অনেক আগেই আমাকে দেখেছিলো?এই কাগজগুলোতো অনেক আগের।
ডাইরিটা তাড়াতাড়ি করে খুলে ফেললো,,
ডাইরিটা খুলেই সে অবাক হয়ে গেলো।একি এতো ঠিক 3 বছর আগের আমার ছবি।ডাইরিটা ঠিক তিন বছর আগে থেকেই লেখা শুরু হয়েছে।সেগুলো দেখে সে ডাইরিটার একদম শেষ পৃষ্ঠাই চলে গেলো।লেখাগুলো দেখে সে বুঝতেই পারলো না কিভাবে সোহান তার মনের কথাগুলো না এখানে লিখে রেখেছে।
ডাইরিটে সে স্পষ্ট দেখতে পারছে,,
সে যে ঠিক আজকেই ভুল বুঝতে পারবে এটাও লেখা রয়েছে এমনকি নিজেকে শেষ করে দিতে পারে এটাও এখানে লিখা রয়েছে।শেষের লেখাটুকু দেখে সে ডাইরিটা বন্ধ করে দিলো।মনের ভিতর তার একটা খুশির আবহাওয়া বইতে থাকলো।ভাবতেই পারছে না সোহান এটা লিখলো কিভাবে?
চোখমুখ মুছে সে নিজেকে বোঝাতেই পারছে না সে কিভাবে শেষ বিজয়ী হতে পেরেছে।
মুখটা ধুয়ে সে রুমের বাইরে বেড়িয়ে আবার হসপিতালে পৌছে গেলো।অপারেশন রুমের সামনে গিয়ে সে সোহানকে দেখতে লাগলো।চোখটা আবারো ভিজে গেলো তার।কিন্তু এখন তার চোখে আর কষ্টের কান্না দেখাচ্ছে না বরং খুশিতে তার চোখটা ভিজে যাচ্ছে।খেয়াল করলো সোহান তার দিকেই খেয়াল করে আছে।নিমিষেই চোখটা নামিয়ে পাশ থেকে সরে

পড়লো সেখান থেকে।
.
ধীরে ধীরে কেটে গেলো প্রাই ১ সপ্তাহ।এতোদিনে সোহান পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গিয়েছে।নিশি তার পুরো খেয়াল রেখেছে।
আজকে সোহান বাসাই শিফট হবে।পাশে শুধু রয়েছে অভি।চারপাশে খেয়াল করে নিশিকে দেখতে পেলোনা।ভাবলো হইতো নিশি অভির কাছে ফিরে গিয়েছে।সে অভির দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে অভির হাত ধরে গাড়িতে উঠে বসে পড়লো।মাথাই এখনো ব্যান্ডেজ করা রয়েছে।ডাক্তারের কথা অনুযায়ী এখনো সুস্থ হতে তার কিছুদিন সময় লাগবে।কাচের বাইরে মুখ বের করে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগলো।বাসাই ফিরতে ফিরতে তাদের রাত হয়ে গেলো।বাসাই এসে সবাই সোহানকে তার রুমে রেখে গেলো।অভি তাকে কিছু একটা বলতে চেয়েছে তবে তাকে ছাদে যেতে বারন করেছে।একলা রুমে সোহানের কেমন যেন একটা অসস্থিভোদ লাগছিলো।বিছানাই গিয়ে মাথাটা বালিশের উপর রাখলো।এতক্ষন হইতো নিশি অভির বুকে ঘুমিয়ে পড়েছে।সোহান ভাবতেও পারেনি নিশি তাকে এভাবে আঘাত করতে পারলো।ভাবতেও তার কষ্ট হচ্ছিলো এখন তাকে একা একাই কাটিয়ে দিতে হবে এই রাতটা।সে আর দেরি করলো না।ভাবলো এখানেই তাদের কাহীনিটা শেষ করে দেওয়া উচিত।বিছানা থেকে উঠে সে ডাইরিটা নিতে গিয়ে দেখলো সেখানে ডাইরিটা নেই।চারদিকে তন্ন তন্ন করে খুজেও কোথাও পেলোনা ডাইরিটা।

আলমারিটা খুলে খেয়াল কর দেখে সেখানেও তার সেই পুরনো কাগজগুলো নেই।তাহলে সেটা গেলো কোথাই?নাকি সেটা অভি সরিয়ে রেখেছে?কিন্তু অভি আমাকে ছাদে যেতে বারন করলো কেন?ডাইরির চিন্তাই তাড়াতাড়ি করে সে ছাদের দিকে রওনা দিলো।ছাদে গিয়ে সে কিছুটা অবাক হয়ে গেলো।পাশে গিয়েই সে লুকিয়ে পড়লো।চোখটা একটু বের করে দেখে নিশি আর অভি সেখানে বসে রয়েছে।সোহান স্পষ্ট খেয়াল করেছে ডাইরিটা নিশির কাছেই রয়েছে।তাহলে কি নিশি সব জেনে গিয়েছে?পাশ থেকে সে তাকিয়ে তাদের দৃশ্য দেখতে লাগলো,,
—অভি আমি এখন কিভাবে সোহানের সামনে যাবো?
—আমার মতে তোমার সোহানকে এক্ষুনি সব বলে দেওয়া উচিত।কারন সোহানকে তুমি অনেক কষ্ট দিয়েছো।
—কিন্তু সোহান যদি আমাকে মেনে না নেই?(চোখ থেকে জল পড়ছে)
—জানিনা ও তোমাকে মেনে নিবে কি না।তবে তোমাকে পারতেই হবে।
—আমি ও কে ছাড়া থাকতে পারবো না।ও ও আমাকে কখনোই ভুলতে পারেনা।ও ও আমাকে মেনে না নিলে আমি আমাকে মেরে ফেলবো।
.
কথাটা শুনেই সোহানের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে নিশির চোখের পানি দেখে একটা হাসি দিয়ে নিচে নেমে গেলো।আর দেরি নয় তার মন বলছে নিশি এক্ষুনি তার কাছে আসবে।

রুমে গিয়ে সে আয়নার সামনে দাড়িয়ে পড়তেই।অভি বলে উঠলো সোহানের অবস্থা খুব খারাপ।কথাটা শুনেই নিশি দাড়িয়ে পড়লো।দৌড়ে সে নিচে নামতে থাকলো।চোখদুটো তার ভিজে একাকার।দৌড়ে রুমে গিয়ে দাড়িয়ে পড়লো।পিছনে দাড়াতেই,,
—আমি কাউকে ভালোবাসি নি আর বাসবো ও না।কাউকেই লাগবে না আমার।
কথাটা বলে সোহান পিছনে ফিরতেই নিশি দৌড়ে গিয়ে সোহানের বুকে ঝাপিয়ে পড়লো।সোহান নিশিকে বুকে আগলে ধরলো।কেন যেন সোহান আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।চোখ থেকে তার জল বেরিয়ে পড়লো।নিশির কান্নাতে তার বুকটা ভিজে যাচ্ছে।নিশির ফুফিয়ে ফুফিয়ে কান্নাটা সে বুকে নিয়ে শুনতে লাগলো।কাদুক না একটু কাদলে কি হয়?এতোদিনের ভালোবাসাটা না হয় একটু চোখের পানি দিয়েই মিটিয়ে নিক।
.
.
গভির রাতে সোহান একটু পাশ কাটতেই,,
—কেউ আমাকে একটু পাশে রাখেনা।সবাই আমাকে পর ভাবে।
বিছানাটা ভিজিয়ে একাকার করে দিয়েছে।এখনো কান্নাটা থামাইনি।সোহানের অসহ্য লাগছিলো।শীতের ভিতর এভাবে ভেজা শরীর নিয়ে ঘুমানো যাই?নিশিকে আবার বুকে টেনে জড়িয়ে ধরলো।আর ভাবতে থাকলো এই মেয়েটা নির্ঘাত আমাকে প্রতি রাতে এই রকম ভিজিয়ে মারবে।
আবার ভাবলো একটু ভিজলে এমন কি হবে?লক্ষিটি তো তারই বউ।সামী হিসেবে এটুকু তো সহ্য করতেই হবে।

নিশিকে বুকে নিয়ে তাদের কাহীনি সে সেখানেই শেষ করে দিলো।রাতের এই সুন্দর দৃশ্যটা এই ঘরটাকে আলোই ফুটিয়ে তুলেছে।বাইরে থেকে আজকেও ঠিক ওই সুরটাই আসছে,,
আমি এমন একটা তুমি চাই,,
এমন একটা তুমি চাই,,
যে তুমি আমি ছাড়া অন্য কেহ নাই,,
টু টু টু টু টু টু,,
.
সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে