স্বামীর অধিকার পর্ব-০৯

0
665

#স্বামীর_অধিকার
.
#পর্ব_০৯
.
#সোহানুর_রহমান_সোহান
.
সেদিন সকালে দুজনেই রেডি হতে ব্যস্ত।আজকে নিশিকে বেশ খুশি খুশি লাগছে।হটাৎ নিশি ডেকে উঠলো,,
—ওগো শুনছো?
—হ্যা বলো?
—আমার কাপরের কুচিটা একটু ঠিক করে দিবে?
কথাটা শুনেই সোহান দৌড়ে এসে নিশির সামনে দাড়িয়ে পড়লো।
—নাও শাড়িটার কুচি ঠিক করে দাও?
—তোমার পেছনে গিয়ে ঠিক করে দিই?(হাসি দিয়ে)
—একদম না।পিছনে গেলেই দুষ্টামি শুরু করবে।সামনে থেকেই ঠিক করে দাও।দেখছো না হাতে মেহেদী লাগিয়েছি।(চোখ বাকা করে)
নিশির কথার ধরন দেখে সোহান হাটু গেড়ে বসে শাড়ির কুচিগুলো ঠিক করে কোমরে হাতটা গুজিয়ে দিয়ে নিশির দিকে তাকালো।
—এভাবে আমাকে পটানো এতো সোজা না।তাই তাড়াতাড়ি কাজ সেরে নাও।
সোহান কুচিটা ঠিক করে দিয়ে চলে গেলো।নিশি আবারো আয়নার সামনে বসে পড়লো।আজকে তাকে খুব ভালোভাবে সাজতে হবে।আজকে অভিকে হসপিতাল থেকে আনা হবে তাও আবার একদম সুস্থ।তাই তাকে খুব সুন্দর করে সেজে অভির সামনে যেতে হবে।
এদিকে সোহানের মুখে কোনো মলিনতার ছাপ নেই।কারন সে নিশিকে যতোটুকু পেরেছে ততোটুকুই ভালোবাসা দিয়েছে।এখন ভাগ্য তাকে নির্ধারন করে দিবে নিশিকে সে পাবে নাকি অভি।তাই সে বেশীকিছু না ভেবে রেডি হয়ে নিলো।
দুজনেই খাবার খেয়ে বাসা থেকে রওনা দিলো অভিকে আনার জন্য।হসপিতালে পৌছানোর পর সোহান নিশিকে নামিয়ে দিয়ে,,
—তুমি অভির কাছে যাও।আমি অফিস থেকে একটা কাজ সেরেই তোমাদেরকে নিয়ে যাবো।
সোহান একটা দির্ঘ নিষ্শাষ নিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।এদিকে নিশি হাসিমুখে হসপিতালে চলে গেলো।অভির রুমে ঢুকেই নিশির সাথে অভির দেখা হয়ে গেলো।অভির পাশে গিয়ে নিশি বসে তার হাতটা ধরতেই অভি কেপে উঠলো।অভির ভিতরে একটা ভয় কাজ করতে লাগলো।নিশির হাতটা তার হাতে কখনোই যেতে পারেনা।যদি সোহান এটা দেখতে পারে তাহলে সে আমাকে নির্ঘাত মেরে ফেলবে।কিন্তু সোহানের সাথে তো তার এমন কথা ছিলোনা।তাহলে কি ও নিশিকে কিছুই জানাইনি?
নিশির হাতে হাত রাখতেই অভি বেশ অস্থিরতা ভোগ করতে লাগলো।
— কি ব্যাপার অভি তুমি কথা বলছো না কেন?আমাকে দেখে খুশি হওনি?
—না মানে ইয়ে হ্যা হ্যা অবশ্যই খুশি হয়েছি।সো সোহান কো কোথাই?
—ও একটু অফিসের কাজে বাইরে রয়েছে।বিকেল হলেই চলে আসবে।
—তোমাকে সোহান কিছু বলেনাই?
—হ্যা বলেছো তো।
—কি বলেছে?
—জানো অভি সোহান আমাদের ভালোবাসাটাকে মেনে নিয়েছে।ও আমাদেরকে নিজেই এক করে দিতে চেয়েছে আর সময় হলে ডিবোর্স পেপারটাও সই করে দিবে।

এবারের কথাটা শুনে অভি ভয়ে কেপে উঠলো।সে ভাবতেই পারছে না নিশির সাথে এতোদিন সোহান কিভাবে ভদ্র থাকার অভিনয়টা চালিয়ে গিয়েছে।
নিশি অভির মাথাই হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
—নিশি তোমাকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।
—তোমার জন্যই তো সেজেছি।(হেসে ফেলে)
—এতোদিন সোহানের সাথে থেকে নিশ্চয় ও কে ভালোবেসে ফেলেছো।
—ও কে আমার বেশ ভালো লাগে আর ওর আর তোমার মাঝে অনেক মিল রয়েছে।কিন্তু তুমি ভুলে যাচ্ছো আমি তোমাকে ভালোবেসেছি আর তোমাকে ভালোবাসবো।
—আচ্ছা এখন আমরা কোথাই যাবো?
—এখন আমরা সোজা আমাদের বাসায় গিয়ে উঠবো।সেখানে তুমি থাকবে কিছুদিন।তারপর যখন ডিবোর্স পেপারটা হাতে পেয়ে যাবো তখনি দুজনেই নিজেদের মতো আলাদা হয়ে যাবো।তারপর আমরা আমাদের সুন্দর লাইফটা একসাথে কাটিয়ে দিবো।
নিশির কথা দিকে অভির একটুও নজর নেই।কারন অভি জানে সোহানের রাগের কাছে বন্দুত্ব নামক জিনিসটির কোনো দাম নেই।অভির মন চাইছিলো এখান থেকে পালিয়ে যেতে আর নিশিকে সবকিছু বলে দিতে।কিন্তু কেন যেন কিছু বলতে গিয়ে বলতে পারছিলো না।নিশির চোখে সে তার ভালোবাসাটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।কেন যে সে মিথ্যা কথা বলে নিশির সাথে সেদিন দেখা করেছিল?যদি নিশি সবকিছু এখন জানতে না পারে তাহলে পরে সে কি ভাববে?

কিন্তু নিশি তাকে ছাড়তেই চাইছে না।নিশি অভির সাথে কথা বলতে বলতে অভির বুকে ঘুমিয়ে পড়লো।অভি না চাইতেও নিশির মাথাই হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
.
এদিকে সোহানের কিছুতেই অফিসের কাজে মন বসতে চাইছে না।মাথাটা বনবন করে ঘুরছে।চশমাটা খুলে আছাড় মেরে ফেলে দিলো।বিকেল হতেই সে হসপিতালে পৌছে গেলো।ওদিকে নিশি ঘুম থেকে উঠে অভির দিকে তাকিয়ে থাকলো।সোহান রুমের সামনে এসে হটাৎ করে দাড়িয়ে পড়লো।অভি নিশিকে দেখে কিছুটা মোহে পড়ে গেলো আর নিশি ধীরে ধীরে অভির দিকে এগোতে লাগলো।অভি নিশির কাধে হাত রাখতেই সোহানের চোখদুটো রাগে লাল হয়ে গেলো।অভির সাহস দেখে সে অবাক হয়ে গিয়েছে।কিছু হবার আগেই সোহান পাশ থেকে ছুরিটা নিয়ে নিশিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।অভিকে টান দিয়ে এক ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিলো।বুকের উপর পাড়া দিয়ে ছুরিটা সজোড়ে হাতের উপর দিয়ে চালিয়ে দিলো।অভি কিছু বলার আগেই মুখটা চেপে ধরে সজোরে আঘাত করতে লাগলো তার বুকে।ওদিকে নিশি পড়ে যেতেই প্রচন্ড আঘাত পেয়ে উঠেই অভির উপর আক্রমন দেখে রেগে গেলো।এতো বড় সাহস অভিকে আঘাত করছে?আশেপাশে তাকিয়ে পাশ থেকে একটা রড দেখেই রডটা নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো।সোহান অভির উপর আরেকবার ছুরি চালাতে যেতেই হটাৎ করে কিছু একটা আঘাতে ছিটকে ফ্লোরে

পড়ে গেলো।এক আঘাতেই সোহান খেয়াল করলো তার মাথা থেকে রক্ত বের হতে শুরু করেছে।কিছু বলতে গিয়েও আর কিছু বলতে পারছে না।শুধু খেয়াল করলো নিশির হাতে একটা রড।সে ভাবতেও পারছে না নিশি তাকে আঘাত করেছে।বেশীকিছু বলার আর সময় পেলোনা।ওভাবেই চোখটা বন্ধ করে লুটিয়ে পড়লো।শুধু ছোখ থেকে কিছু জল বের হয়ে এলো।সবকিছু এতো তাড়াতাড়ি ঘটলো যে কেউ বুঝতেই পারছে কি হচ্ছে এখানে?
.
নিশি ধপ করে পড়ে গেলো।সে ভাবতেও পারছে না সে করেছে?হটাৎ করেই তার চোখ থেকে পানি বের হয়ে এলো।অভি সবকিছু বুঝতেই চিৎকার দিয়ে ডাক্তারকে ডাকতে লাগলো।সোহানকে টান দিয়ে উঠিয়ে দৌড়ে অপারেশন রুমের দিকে নিয়ে যেতে থাকলো।তার জীবনে তার মায়ের থেকেও সে সোহানকে বেশী ভালোবাসে।ছোট থেকেই সে তার সাথেই বেড়ে উঠেছে।যদি কেউ তার বাবা মায়ের কষ্টতা বুঝতো তাহলে সে শুধু সোহানই ছিল।তাড়াতাড়ি করে সে সোহানকে অপারেশন রুমে পাঠিয়ে দিলো।নিশি বাইরে এসে বুঝতে পারলো না অভি কেন এতো নার্ভাস ছিলো।পাশে গিয়ে হাত দিতেই রেগে গিয়ে অভি নিশির হাতটা টান দিয়ে সরিয়ে দিলো।এক থাপ্পড়ে নিশিকে ফেলে দিলো।হাতটা টান দিয়ে হসপিতালের একটা ফাকা জাইগাই নিয়ে দাড় করিয়ে দিলো,,

—নিশি তুমি কি জানো তুমি কী করেছো?(রেগে গিয়ে)
—ও তোমাকে আঘাত করছিলো তাই তোমাকে বাচাতে…
—কাকে বাচাতে চেয়েছো?আমাকে?আমাকে কি তুমি চিনো?
—এমন কেন করছো অভি?
—আজ তোমার কিছু কথা জানা প্রয়োজন সেটা হলো,,
তুমি যাকে অভি ভাবো আসলে অভি না।আমি অভি ঠিকই কিন্তু তুমি যে অভিকে ভালোবাসো সেটা আমি না।
অভির কথা শুনে নিশি অবাক হয়ে গেলো।
—তুমি এসব কি বলছো?সেদিন তো তুমিই আমার সাথে দেখা করেছিলে।
—হ্যা সেটাই আমার ভুল ছিলো।সোহান দেখতে চেয়েছিলো তুমি তাকে চিনতে পারো কি না?তাই সে তার জাইগাই আমাকে পাঠিয়েছিলো।সোহান এই হলো তোমার সেই অভি যাকে তুমি ৩ বছর না দেখেই ভালোবেসেছো।ও শুধু তোমাকে যাচাই করার জন্যই এসব করেছে।
.
কথাটা শোনামাত্র নিশি ধপ করে পড়ে গেলো।
.
চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে