#স্বামীর_অধিকার
.
#পর্ব_০৫
.
#writter_সোহানুর_রহমান_সোহান
.
নিশির শরীর থেকে কাপরটা ছুরে ফেলে দিলো সোহান।কোমরটা চেপে ধরেই ঠোটটা কামড়ে ধরলো নিশির।শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিশির চোখের দিকে তাকালো সোহান।বাল্বের আলোই সোহানের চোখদুটো লাল টকটকে দেখাচ্ছে।নিশির মনে হচ্ছিলো সোহান তার কাধটা চেপে ধরে কষ্ট দিচ্ছিলো।মুখটা জোড় করে তার মুখের কাছে নিয়ে আবারো ঠোটটা কামড়ে ধরলো সে।হাতদুটো দু হাত দিয়ে চেপে ধরে নিশিকে অসহ্য যন্তনা দিতে লাগলো,,
—তোর সতীত্বের বরাই করিস?সেদিন নাহয় কিছু বলিনি কিন্তু আজকে তোর সবকিছু এক এক করে দেখে নিবো।
—সোহান প্লিজ এমন করোনা, আমাকে ছেড়ে দাও।
—আজকে তোর দেমাগটা আমি দেখতে চাই।
—তুমি আমার দেহ পেলেও মন কখনোই পাবেনা।
কিন্তু সোহান তার কোনো কথাই কর্নপাত করলো না।জোড় করেই নিশিকে উল্টো করে পিঠের জোরে আঘাত করতে থাকলো।হটাৎ কে যেন বলে উঠলো,,
—ম্যাডাম আপনি এভাবে চেচাচ্ছেন কেন?
ম্যাডাম কথাটি শুনে লাফিয়ে উঠে পড়লো নিশি।তাকিয়ে দেখে তার পড়নে সবকিছু ঠিক ঠাকই আছে।সোহানের দিকে খেয়াল করতেই দেখে সোহান ঘুমিয়ে রয়েছে।
—একটু আগেই সো সো হান আ আমাকে?(থতমত হয়)
—কি যে বলেন ম্যাম?তাকে তো রেষ্টের জন্য ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে।
সকাল না হওয়া পর্যন্ত তার ঘুম ভাঙবে না।(নার্স)
কথাটা শুনেই নিশি অবাক হয়ে যাই।তারমান সে এতক্ষন সপ্ন দেখছিলো।পাশ থেকে এক গ্লাস পানি খেয়া।হসপিতালের এক পাশে জানালার কাছে গিয়ে দাড়িয়ে পড়লো।তার শরীরের ভিতর এখনো কাপছে।অভির কথাই তার ভিতরে একটা ভয় সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে।ঘুমের ঘরে এভাবে বাজে সপ্ন দেখাটা একদম ঠিক হয়নি তার।কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকার পর নিশি সোহানের পাশে গিয়ে বসলো।সে সোহানের চোখের দিকে তাকিয়ে পরিক্ষা করছিলো আসলেই সে ঘুমিয়ে আছে কি না?পরক্ষনেই দেখলো নার্স ঠিকই বলেছে।সোহানের দিকে আগে কখনো সে এভাবে তাকাইনি।তার মুখের মধ্যে নিশি কিছু একটা দেখতে পাচ্ছে কিন্তু কেন যেন বুঝতে পারছিলো না।তার মায়াবী চেহারার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পরই কে যেন বলছে,,
—এ তুই কি করছিছ নিশি?এভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলে মায়ার পরে যাবি।(নিশির মন)
কথাটা ভাবার পরেই চোখ সরিয়ে অন্য দিকে নজর দিলো সে।সেই রাতে আর তার চোখে একটুও ঘুমে এলোনা।রাতটা কেটে যেতে যেতে ধীরে ধীরে দু দিন পার হয়ে গেলো।
আজ সোহান একদম সুস্থ।আজকে তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে এবং সে নিজের পায়ের বাসাই ফিরবে।যদিও নিশির কোনো ইচ্ছাই ছিলোনা সোহানকে এভাবে সুস্থ শরীরে দেখা।
বেডে শুয়ে রয়েছে এমন সময় নার্স যখন ওষুধ দিতে আসবে ঠিক তখনি তার ডাক পড়তেই সে চলে যাই।এদিকে সোহানের ওষুধ দেবার সময় হয়ে গিয়েছে কিন্তু ওষুধ খাওয়ানোর জন্য কেউ নেই।তখনি কোথা থেকে যেন রুমে ঢুকে পড়লো নিশি।দুজনেরই চোখাচোখি হতেই নিশি চুপিসারে তার পাশে গিয়ে কি যেন খুজছিলো,,
—নিশি শুনছো?
—আমাকে ডাকছেন?(চারদিকে তাকিয়ে)
—হ্যা।পাশ থেকে ওষুধটা দাও তো।
—আমাকে কি তোমার কাজের লোক মনে হয়?নিজের কাজ নিজেই সেরে নাও।(রাগি লুক নিয়ে)
—একটু ওষুধ টাই তো দিতে বলেছি।এতে এমন কি অনর্থ হবে?
—দেখ বিয়ে করেছো বলে জোড় দেখাতে এসোনা।আমার সাথে মিশতে হলে আমার কথাই তোমাকে শুনতে হবে।পরবর্তীতে এইরকম কোনো আদেশ যেন না করা হয়।
—তাহলে এখন রুমে আসলে কেন?
— এখানে আমি মোবাইল নিতে এসেছি।তাছাড়া আর কোনো কাজ করতে আসিনি।
কথাটা বলে হনহন করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো নিশি।সোহান চুপচাপ বসে রইলো।কিন্তু কাউকেই দেখতে না পেয়ে মনমরা হয়ে নিজেই ওষুধ আনবার জন্য পা বাড়ানোর জন্য অগ্রসর হলো।হটাৎ তাকিয়ে দেখে নিশি আবারো রুমে ঢুকছে।এবার সোজা ওষুধ নিয়ে সোহানের পাশে ছুরে মারলো।পানির গ্লাসটা একটু জোরে রেখে দিয়েই আবারো হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আর বেরোনোর সময় বলে গেলো,,
—ওষুধ দেবার কেউ ছিলোনা তাই রেখে গেলাম।তাই বলে আবার ভাববেন না যে, আমি তোমাকে স্বামি বলে মেনে নিয়েছি?আর তুমি করে বলছি যাতে কেউ আমাকে সন্দেহ না করে।
নিশি রুম থেকে বের হতেই সোহান একটা মুচকি হাসি দিয়ে ওষুধটা খেয়ে নিলো।যাক এতো অত্যাচারের পরে তাহলে মেয়েটার একটু হলেও মনে গলেছে।
কিছুক্ষন পরে সোহানকে নিয়ে সবাই বাসায় ফিরে আসলো।সোহান এখন একদম সুস্থ।বাসার এসে সে নিজের সবকিছু গুছিয়ে রেখে দিলো।নিশি রুমে আসাই আগেই রুম থেকে বের হয়ে গেলো।ওদিকে নিশি এসে রুমটা ভালো করে দেখতে লাগলো।তার চিন্তা রাতকে নিয়ে।কিভাবে রাতে সে একা থাকবে?একা থাকতে তো তার খুব ভয় করে।কিন্তু সোহানকে তো রাতে তার রুমে থাকতে দেওয়া যাবেনা।নিশি জানতো রাত না হওয়া পর্যন্ত সোহান বাসায় ফিরবে না তাই যা করার আগে থেকেই করতে হবে।আজকে সোহানকে যেভাবেই হোক অপমান করতেই হবে কিন্তু কীভাবে?
ওদিকে বিকেল কেটে গিয়ে রাত নেমে এসেছে।রাতে বাসায় এসে খাবার খাওয়ার পর রুমে যেতেই দেখে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত নিশি।কিন্তু মোবাইল হাতে কেন রয়েছে সেটা একটুও খেয়াল করলো না সে।এখনো পেটে কিছু পড়েনি এটা টের পেয়ে সোহান নিশির পাশে গিয়ে,,
—রাতে খাবার খাওনি?
কোনো জবাব আসলো না।
কোনো জবাব না পেয়ে সে নিজেই খাবার নিয়ে নিশির সামনে হাজির হয়ে গেলো।হইতো এতক্ষন নিশির এই মুহুর্তের জন্যই অপেক্ষা করছিলো।প্লেটটা নিশির দিকে এগিয়ে দিয়ে,,
—খাবারটা খেয়ে নাও নাহলে শরীর খারাপ করবে।
প্লেটের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে, পাশ থেকে গ্লাশের জল সোহানের মুখে ছুড়ে মারলো,,
—জানিস না আমি এইসব খাইনা।তারপরেও এইসব আজেবাজে খাবার আনিস।চামচানি করতে হলে একটু ভালো কিছু আনতে হয়।(চিৎকার করে)
কথাটা বলেই খাবারটা ছুরে মারলো সোহানের মুখে।
চশমার কারনে চোখটা বেচে গেলো কিন্তু পুরো শরির তরকারীতে ভরে গেলো।পরেরবার একই ভুল করাতে এবার কসে এক থাপ্পড় মারলো সোহানকে।কিছু না বলে মুখে হাত নিয়ে বের হয়ে সোহান।চশমাটা খুলে চোখটা মুছে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো।অনেক্ষন পেরিয়ে যেতে নিশির টনক নড়লো।তবে সে মহাখুশি কারন থাপ্পড়টা বেশ জোড়েই দিতে পেরেছে।কিন্তু অনেক্ষন রুমে না আসাতে সে মনে মনে খুজতে থাকলো সোহানকে।
ধীরে ধীরে মাঝরাত পেরিয়ে গেলো।কিন্তু নিশির চোখে ঘুম নেই।কারো আসার জন্য অপেক্ষা করছে।তাছাড়া পেটে ক্ষুদাও লেগেছে।ভাবতে ভাবতে হটাৎ খেয়াল করলো কে যেন তার সামনে দাড়িয়ে রয়েছে।
চোখদুটো লাল টকটকে হয়ে গিয়েছে।দেখে বোঝাই যাচ্ছে বেশ শীত লেগেছে।এবার গিয়ে হাত উঠাতে যেতেই খাবারটা দেখে থেমে গেলো।নিশি ভাবতেও পারেনি এতো রাতে তার নিজের বাসা থেকে তার জন্য খাবার আনলো কেমন করে?খাবারটা সোহানের হাত থেকে নিয়ে ভাবছে কিভাবে এতো কষ্ট সহ্য করতে পারে এই ছেলেটা?
.
চলবে,,