স্বামীর অধিকার পর্ব-০৪

0
508

#স্বামীর_অধিকার
.
#পর্ব_০৪
.
#writter_সোহানুর_রহমান_সোহান
.
কিন্তু নিশি কি এইখানে তার জন্যই এসেছে নাকি সে হসপিতালে অভির সাথে দেখা করতে এসেছে?
হটাৎ নিশির মা নিশিকে ডেকে সোহানের পাশে বসিয়ে দিলো।বসার ইচ্ছা না থাকতেও মা বাবাকে পাশে দেখে বসে পড়লো।সোহানের পাশে বসলেই নিশির ভিতরটা কেমন যেন করে।এটা শুধু এক্ষুনি নয় বরং অনেক আগে থেকেই সে সোহানের পাশে বসলেই নিজেকে কোথাই যেন হারিয়ে নেই।সবাই পুরো ঘটনা জানতে চাইলে নিশি খুব ভয় পেয়ে যাই।কিন্তু সোহান সবকিছু এড়িয়ে যেয়ে,,
— রাতে অফিসে দ্রুত একটা কাজের জন্য যেতে হয়।আসার পথে হটাৎ একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগতেই এমন অবস্থা হয়।
— সোহান এই দিনেও কি তোমাকে কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে?
— ততোটা আঘাত লাগেনি দু এক দিনের ভিতর ঠিক হয়ে যাবো।
কথাটা শুনে নিশি কপাল থেকে ঘামটা শাড়ির আচল দিয়ে মুছে নিলো।রুমে ঢুকেই ডাক্তার বললো,,
— আপনারা স্যারকে আজকেই নিয়ে যেতে পারেন।তবে আজকে পুরোদিন রেষ্ট নিলে তিনি একদম সুস্থ হয়ে যাবে।কালকে নিয়ে গেলে ভালো হবে।
সবাই ডাক্তারের কথা শুনে ভরসা পেলো।ডাক্তার সবাইকে কিছুক্ষনে জন্য বাইরে পাঠিয়ে দিলো।ডাক্তার শুভ সাহেব সোহানের পাশে গিয়ে বসলো,,

— সোহান আমি কিন্তু বুঝতে পেরেছি এসবের পিছনে তোর বউ এর হাত রয়েছে, তাহলে মিথ্যা কেন বললি?
কথাটা বলতেই ওদিকে নিশি সুযোগ পেয়েই চারদিকে রুমগুলো ভালো করে খুজতে লাগলো।আর এদিকে,,
— শুভ এতোদিন ধরে যাকে ভালোবেসেছি তাকে কি একটা ভুলের জন্য শাস্তি দিতে হবে?
— তাহলে দেরী কেন করছিছ?নিশিকে সব ঘটনা খুলে বললেই তো সবকিছু মিটে যায়।
— ভালোবাসার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে বলে এমন হাল করেছে তাহলে ভাব মেয়েটা কতোটা আবেগী?তবে একসময় বুঝতে পারবে।
— কিন্তু অভি এই হ..?
— সেটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।তুই শুধু ওই লোকগুলোর বর্তমান খবরটা জানা।
— শহরে নতুন এসেছে।তাই একটু বাড়াবাড়ি করতেছে।তোর নাম শুনেছে কিন্তু কখনো দেখেনি বিধাই বুঝতে পারেনি।
— ঠিক আছে এখন তুই এখান থেকে যা।আমাকে একা থাকতে দে।
— চশমাটা অনেক সুন্দরভাবে মানিয়ে নিয়েছিছ।
কথাটা শেষ হতেই দুজনের মুখে একটা অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠলো।শুভ রুম থেকে বের হয়ে গেলো অন্যদিকে নিশি সব কেবিনগুলো ভালো করে দেখতে লাগলো।কিন্তু কোনো রুমেই সে দেখতে না পেয়ে সরাসরি অপারেশন রুমে চলে এলো।দৌড়ে অপারেশন রুমে যেতেই থমকে দাড়ালো সে,,
মনে হচ্ছিলো তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।

তিল তিল পায়ে সে বেডের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলো।কেউ একজন বেডের উপর শুয়ে রয়েছে।মুখে অস্কিজেন মাস্ক লাগানো।মুখে পোকা লেগে গিয়েছে।পা ব্যান্ডেস করা রয়েছে।পুরো শরীরে ব্যান্ডেস রয়েছে।দেখে মনে হচ্ছে এই সেই অভি।পাশ থেকে একটা ছেলে বের হয়ে গেলো এই সেই ছেলে যে বাসর রাতে সোহানকে ধাক্কা মেরে দৌড়ে এসেছিলো।নিশির চোখে পানি টলমল করছে।হাউমাউ করে কেদে ফেললো নিশি।জীবনে কখনো কষ্ট পেতে হয়নি তাকে।কিন্তু আজকের কষ্টটা তার একদম সহ্য হচ্ছে না।কাছে গিয়ে অভির হাত ধরে কাদতে থাকলো।অভি নিশির উপস্থিতি টের পেয়ে জেগে উঠলো।হাতটা ধীরে ধীরে নিশির মাথাই রাখতে নিশি অভির দিকে তাকালো।নিশিকে কাদতে দেখে চুপ করে রইলো।তার কথা বলার মতো পরিস্থিতি নেই।হাত দিয়ে ইশারা করতেই নিশি কান্না থামিয়ে ফেললো।ইশারাই অভি জানতে চাইলো যে, তুমি এখানে কিভাবে এলে আর এভাবে কাদছো কেন?অভির কথা শুনে ওখানে হতাশ হয়ে বসে পড়লো।
— অভি আমাদের সব ইচ্ছা ভেঙে গিয়েছে।ওই ওই সোহান আমাকে (ফোফাতে ফোফাতে)
— থেমে গেলে কেন?সোহান তোমাকে কি করেছে?(ইশারাই)
— অভি তুমি না থাকাই সোহান আমাকে জোর করে বিয়ে করে নিয়েছে।অনেক বারন করার পরেও একটুও আমার কথা শুনেনাই।(ফোপাতে ফোপাতে)

বিয়ের কথাটা শুনে অভির মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।হইতো অভি এটাই চেয়েছিলো।দীর্ঘ একটা নিষ্শাষ ছেড়ে দিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে রইলো সে।কিন্তু পরক্ষনেই আবার নিশি বলে উঠলো,,
— কিন্তু আমি সোহানকে ছেড়ে দেইনি আর ছেড়ে দেবোনা।অভি জানো আমি সোহানকে অনেক মেরেছি আর ধীরে ধীরে আরো কষ্ট দিবো।(রাগি লুক নিয়ে)
নিশির কথাই অভি থমকে দাড়ালো।সোহানের গায়ে হাত দিয়েছে কথাটা শুনেই অভি রেগে গেলে।তার বন্ধুর গায়ে হাত দিয়েছে,,
— তুমি সোহানকে কেন কষ্ট দিয়েছো?
— ও আমাকে তোমার থেকে কেড়ে নিয়েছে সেজন্য।
— তাহলে গতকাল রাতে তোমাদের বাসর হয়নি?(ইশারাই)
— নাহ সেই রাতে আমি ওকে লোক দিয়ে অনেক পিটিয়েছি।আজ আমি তোমার প্রতিশোধ নিতে পেরে অনেক খুশি।জানো ও এই হসপিতালেই ভর্তি রয়েছে।
কথাটা শুনেই অভি নিশির হাত থেকে তার হাতটা সরিয়ে নিলো।নিশি খেয়াল করলো অভি কেমন যেন নড়াচড়া করতে লাগলো।অভি মুখ থেকে মাস্ক সরাতেই,,
—অভি কি করছো?অসুস্থ হয়ে যাবেতো।
—তুমি শুধু সোহানকেই না বরং আমাকেও কষ্ট দিয়েছো।তুমি ভুলে যাচ্ছো সোহান তোমার স্বামি।(নিষ্ষাস জোড়ে নিয়ে)
—অভি তুমি মুখে মাস্ক পড়ে নাও নাহলে মারা যাবেতো।(কাছে গিয়ে)
—আমার কাছে আসার চেষ্টা করো না।তুমি একটা প্রতারক আমি তোমার মুখ দেখতে চাইনা।
—অভি তুমি এমন করছো কেন?
—তুমি সোহানকে তোমার বরের মর্যাদা দিবে আর তোমার সবকিছু ওর হাতেই অর্পর্ন করবে।ভেবে নাও এটাই আমার শেষ ইচ্ছা।(বুকে হাত দিয়ে)
নিশি কিছু বলার আগেই অভি নিশিকে রুম থেকে তাড়িয়ে দিলো।ডাক্তারের জন্য সে আর ভিতরে যেতে পারলো না।তবে সে এটুকু জেনেছে অভির হত্যার পিছনে সোহানের কোনো হাত নেই।কিন্তু সে কিভাবে তার সবকিছু সোহানকে বিলিয়ে দিবে?আর কি মুখে সে সোহানের সামনে দাড়াবে।সে অভিকে নাহয় কিছু করেনি কিন্তু আমাকে তো জোর করে বিয়ে করেছে।
কিন্তু অভি কেন আমাকে তাড়িয়ে দিলো?কেনই বা সে তার ভালোবাসাকে নিজের হাতে অন্যকে দিয়ে দিবে?এটা ভাবতেই নিশি অবাক হয়ে যাচ্ছে।
চুপিচুপি সোহানের রুমে এসে দেখে পাশে শুধু নার্স রয়েছে।এখন সে না পারছে সোহানের সামনে থেকে যেতে আর না পারছে তার কাছে বসতে।হটাৎ নার্স,,
—মেডাম আপনি দাড়িয়ে আছেন কেন?ভিতরে আসুন।
—না মানে হ্যা আসছি।(ভয়ে ভয়ে)
পাশে বসেই তার ভিতরে কেমন যেন অস্থিরতা বাড়তে থাকলো।খেয়াল করলো সোহান ঘুমিয়ে রয়েছে।নার্স এর থেকে জানতে পারলো তাকে ঘূমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে।তখন নিশি একটু সস্থির নিষ্শাষ ফেললো।
রাতে সবাই সিদ্ধান্ত নিলো নিশিকে সোহানের রুমে রাখা হবে।কথাটা শুনতেই নিশির ভিতরটা কেমন যেন করে উঠলো।যদি একা পেয়ে সোহান তাকে কিছু করে ফেলে?কিন্তু শেষমেষ তাকেই রেখে যাওয়া হলো।রাতে তাদের রুমে একটা নার্স আর তাকে রেখে যাওয়া হলো।নিশি সোহানের পাশে বসে সোহানকে ভালো করে দেখছিলো।কিভাবে সে নিজের মুখে অভির কথাটা উল্লেখ করবে এসব ভাবতে ভাবতে সে সোহানের হাতের উপর ঘুমিয়ে পড়লো।রাতটা ধীরে ধীরে কাটতে থাকলো।মাঝরাত চারদিকে সবকিছু নিশ্চুপ হয়ে রয়েছে।হটাৎ নিশির মনে হলো কে যেন তাকে ধরে রেখেছে।চোখ খুলতেই দেখে সোহান তাকে জোড় করে বেডের উপর শুইয়ে দিয়েই তার শরীরের উপর উঠেই জড়িয়ে ধরেছে।নিশি ভয় পেয়ে চিৎকার করতে লাগলো কিন্তু কেউ কাছে এগিয়ে এলো এলো।নিশির শরির থেকে শাড়িটা খুলে ছুড়ে ফেলে দিলো সোহান।কোমরটা চেপে ধরেই ঠোটটা কামড়ে ধরলো নিশির।শক্ত করে জড়িয়ে ধরেই,,
.
চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে