#স্বামীর_অধিকার
.
#পর্ব_০৩
.
#writter_সোহানুর_রহমান_সোহান
.
বাসর রাতের মতো গোলাপের পাপড়িগুলোও সোহানের হাত থেকে পড়ে গেলো।হইতো এই রাতটা তার ভাগ্যে লেখা ছিলোনা।রক্তমাখা শরীর আর কাটা হাত নিয়ে তার দাড়াতেও অসুবিধা হচ্ছিলো।ছাদে উঠার চেষ্টা করছে কিন্তু সে অনেক ক্লান্ত।তবুও উঠার চেষ্টা করছে আর হোচট খেয়ে পড়ছে।কিন্তু কোনোকিছু সোহানের কাছে অসম্ভবের কিছু নেই।ছাদে উঠেই সোজা দোলনার উপর শুয়ে পড়লো।পকেট থেকে রুমাল বের করে হাত বাধার চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু হাতগুলোর উপর এতোটা অত্যাচার হয়েছে যে তার হাতগুলো দিয়ে কিছুই করানো গেলোনা।শেষমেষ রুমালটা হাতের উপর রেখে দিতে বাধ্য হলো।উপরে তাকিয়ে আকাশের গতিবিধি লক্ষ্য করতে লাগলো।তার ভাবনাটা একদম ভুল ছিলো হইতো নিশি তাকে চিনতে পারেনি।কিন্তু সে তো তাকে অনেক ভালোবাসে কি করে ভুলবে সে নিশিকে।সোহানের চোখদুটো ভিজে যাচ্ছে।হইতো সে কিছু একটা চিৎকার দিয়ে বলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।চোখের পানিগুলো টলমল করে ঝড়ছে।ভালোবাসাটা যখন অভিশাপ হয়ে দাড়ায় তখনি সেই অভাগা লোকটি টের সেই মুহূর্তগুলো কেমন।চোখদুটো লাল হয়ে যাচ্ছে।না পারছে নিজেকে মানিয়ে নিতে আর না পারছে নিজেকে আঘার করতে।পাশ থেকে স্যাভলনের কৌটা খুলে
হাতের উপর ঢেলে নিলো।হইতো সেটাই ঠিক ছিলো যখন বিয়ের ঠিক কিছুক্ষন আগে নিশি বলেছিলো,,
— সোহান আমি তোকে ভালোবাসি ঠিকই কিন্তু তুই জানিস অভি আমার সব।অভির সাথে আমার সৃতি অনেক পুরনো ভাবে জড়িয়ে রয়েছে।আমাদের ৩ বছরের রিলেশনশিপটা তুই কিন্তু এভাবে নষ্ট করতে পারিস না।
কিন্তু সে নিশিকে তবুও জোর করে বিয়ে করেছে।শেষবারেও বিয়ের মন্চে বসে যখন কাদোকাদো মুখে নিশি বলেছিলো,,
— সোহান এখনো সময় আছে তুই বিয়েটা বন্ধ করে দে।(কাদো কাদো হয়ে)
তবুও সে তখনো নিশির কথাগুলো শোনেনি।নাকি এর পিছনে কোনো একটা রহস্য রয়েছে?নাকি সোহান নিশিকে নিজের করার জন্য জোরবশত বিয়ে করেছে।
.
হাতটা কোনরকমে পেচিয়ে ছাদের একপাশে গিয়ে নিশ্চুপ হয়ে রয়েছে।মুখটা একদম শুকিয়ে গিয়েছে।চোখ থেকে তখনো পানি ঝড়ছে।নিরবে গুনগুন করে কেদে যাচ্ছে সোহান।শীতের তাপে থরথর করে কেপেই যাচ্ছে।দুর থেকে ভেসে কিছু একটার আওয়াজ,,
আমি এমন একটা তুমি চাই,.
এমন একটা তুমি চাই,,
যে তুমিতে তুমি ছাড়া অন্য কেহ নাই,,
সুরটার সাথে সাথে সোহানের ভাবনা আর ভালোবাসাটা বাতাসে মিলিয়ে যেতে থাকলো।রাতটা গভির হতে থাকলো আর ছায়াগুলো হাতছানি দিতে থাকলো।রাতটা কাটার সাথে সাথেই আবার শুরু হবে সোহানের সাথে নতুন কিছু কাহীনি।
কিন্তু এখনো আমরা এদের পরিচয় সম্পর্কে কিছুই জানতে পারিনি।চলুন জেনে আসি এদের পরিচয়।
নিশি নামটা যেমন ফাকা ফাকা ঠিক মেয়েটাও তেমনি একা।দেখতে একদম পরির মতো।যেমন মায়াবী ঠিক ততোতাই আবেগী।যার কারনে হইতো সোহানের এমন অবস্থা।
আর অভি হলো এই গল্পের সব।যার পুরোটাই নিশির সাথে জড়িয়ে রয়েছে আর সোহান হলো অভির বন্ধু আর সেখান থেকে এদের তিনজনের বন্ধুত্ব যদিও এখানে অনেক রহস্য যেটা পরে দেখতে পাওয়া যাবে।সোহান হলো এই শহরের সবচেয়ে গন্যমান্য পরিবারের ছেলে।দেখতে পুরোই সুন্দর কিন্তু মেজাজটা শুধু নম্র নয় কারন বড় পরিবারের ছেলেরা কখনো ভালো হয়না।
.
রাতটা ধীরে ধীরে কেটে গিয়ে সকালে পরিনত হলো।অভিশাপের রাতটা কাটতেই সকালে নিশির চিৎকারে পুরো বাড়িতে রহরহ পরিবেশ সৃষ্টি হলো।কিছুক্ষনের ভিতরই পুরো বাড়ির সবাই ছাদে উপস্থিত হয়ে গেলো।কেউ বলছে তোমরা দাড়িয়ে আছো কেন তারাতারি ওকে উঠাও।আবার কেঊ বলছে তারাতারি এম্বুলেস্ন ডাকো।নিলা এসে দেখে সোহান ছাদের এককোনে পড়ে রয়েছে আর তার পাশেই বসে আছে নিশি।নিশি সোহানের কাছে বসে কাদছে।ভাইয়ের কাছে গিয়ে নিলা বসতেই নিশি অভিনয়ের সুরে বলতে লাগলো,,
— কাল সারারাত বাসায় ফিরেনি।রাতে অনেকবার ফোন দিয়েছি কিন্তু আমার ফোন উঠাইনি।
সারারাত অনেক চেষ্টা করেও কোনো যোগাযোগ করতে পারিনি।সকালে যখন ছাদে এলাম তখনি দেখি ছাদে এভাবে পড়ে রয়েছে।
সবাই সোহানকে তাড়াতাড়ি করে হসপিতালের দিকে নিয়ে যেতে থাকলো।গাড়িতে সোহানকে যখন নিশি উঠিয়ে দিলো ঠিক তখনি মনের মধ্যে একটা হাসি দিয়ে সোহানের হাতটা চেপে ধরে মনে মনে বলতে লাগলো,,
— দোয়া করি তুই যেন পঙ্গু হয়ে বেচে ফিরিস।নাহলে তোর সাথে প্রতিশোধের খেলাটা কখন জমবে?
সবাই যখন চিন্তাই আহামরি অবস্থা ঠিক তখনি নিশি তার রুমে চলে গেলো।বুঝতে বাকি রইলো না যে,কালকে রাতে তার কথাতেই সোহানের উপর আক্রমন করা হয়েছিলো।রুমে গিয়ে ছুরিটা ধুয়ে রেখে দিলো।লাল শাড়িটা সবার আড়ালে পুড়িয়ে দিলো।ফ্রেশ হয়ে এসে তার মনে পড়লো সে বাসা থেকে শাড়ি আনতে ভুলে গিয়েছে।তাহলে এখন কি পড়বো?এটা ভাবতেই সোহানের আলমারির দিকে নজর যেতেই দৌড়ে গিয়ে আলমারিটা খুলে ফেললো।কিন্তু সেখানে তেমন কিছুই না পেয়ে একটু নিচে নজর যেতেই খেয়াল হলো সেখানে একটা নীল রঙের শাড়ি রয়েছে।শাড়িটা কিভাবে এলো এটা না ভেবেই শাড়িটা পড়ে আয়নার সামনে বসে পড়লো।নিশিকে বেশ শান্ত দেখাচ্ছে।সোহানের প্রতি তার একটু কেমন যেন লাগছিলো।রাতে ওমন আচরন করাটা তার ঠিক হয়নি।হাজার হোক এখন সেতো তার বর।
কিন্তু নিশি ঠিক করে নিয়েছে, বর হিসেবে সে কখনোই সোহানকে মেনে নিবে না।ভাবনার ভিতর ডুবে থাকতেই হটাৎ পিছন থেকে কে যেন তাকে ভাবী বলে ডেকে উঠলো।পিছনে তাকিয়ে দেখে নিলা এসেছে।সাথে সাথেই আবার কান্নার অভিনয়টা শুরু করে দিলো।নিলা পাশে এসে শান্তনা দিয়ে।দুজনেই হসপিতালের উদ্দেশ্য রওনা দিয়ে দিলো।কিন্তু নিশিকে হসপিতালে যাওয়ার জন্য খুব আগ্রহী মনে হচ্ছে নাকি সেখানেও কিছু একটা করতে চলেছে সে?
গাড়ি থেকে নেমে সোজা হসপিতালের ভিতর চলে গেলো দুজনেই।দুজনেই সোজা সোহানের কেবিনের দিকে যেতে লাগলো।নিশি ভাবছে যদি সোহান তার প্রতিশোধ নিতে চাই তাহলে কি হবে?রাতে নেশার ঘরে সে একটু বেশীই খারাপ আচরন করে ফেলেছি।জানিনা সোহানের সামনে গেলে ও আমাকে কি বলবে?
খুব সাবধানে রুমের ভিতর ঢুকে যেতেই খেয়াল করলো সোহান হেলান দিয়ে বসে রয়েছে।হাত ব্যান্ডেস আর পাটা ব্যান্ডেজ করা রয়েছে।সোহানের সামনে যেতেই চোখ নিচু করে নিলো।
এতক্ষন সোহান যার অপেক্ষা করছিলো সে সামনে হাজির দেখেই এক পলক তাকিয়ে নিলো।রাতে তো একটি বারের মতোও দেখতে পাইনি।তাকিয়ে দেখে তার নীল শাড়িটাই পড়ে এসেছে।দেখতে একদম তার মায়াবী রাজকন্যার মতোন হয়েছে।নিশি যতই তার দিকে এগোচ্ছিলো সে ঠিক ততোই তার দিকে মুগ্ধ হয়ে
তাকাতে থাকলো।রাতের সবকিছু এক নিমিষেই তার মন থেকে মুছে গেলো।কিন্তু নিশি কি এখানে তার জন্যই এসেছে নাকি এই হসপিতালে অভি সাথে দেখা করতে এসেছে?তাহলে কি এই হসপিতালেই অভি,,,
.
চলবে,,
.