স্বামীর অধিকার পর্ব-০২

0
652

#স্বামীর_অধিকার
.
#পর্ব_০২
.
#সোহানুর_রহমান_সোহান
.
সোহানকে এক থাপ্পড়ে সজোরে ফ্লোরে ফেলে দিলো নিশি।যেখানে আজ সোহানকে বাসর রাতে বিছানাই থাকার কথা সেখানে আজ সে ফ্লোরে পড়ে রয়েছে।নিশি জানতো আজ সোহানকে সে ইচ্ছামতো যা খুশি তাই করতে পারবে।নিশি তার পিছন থেকে ছুরিটা বের করে ধীরে ধীরে সোহানের দিকে এগিয়ে গেলো।আজ তার সোহানকে অনেক কিছু বলার আছে।সোহানের পাশে বসে নিশি একটা হাসি দিয়ে,,
—তুই কি ভেবেছিলি বিয়ে করে নিলেই আমি তোকে ছেড়ে দিবো?এটা ভাবলে তুই একদম ভুল করবি।কারো ভালোবাসা কারো থেকে ছিনিয়ে নেওয়াটা কতো বড় অপরাধ সেটা কি জানিস।
কথাটা বলে ছুরিটা সোহানের গলাই বসিয়ে দিলো।গলাই চাপ পড়ার কারনে রক্ত বের হতে একটুও সময় নিলোনা কিন্তু সোহানকে তখনো একদম নিশ্চুম দেখাচ্ছে।সোহানের গলাটা শুকিয়ে গিয়েছে সে বুঝতে পারছিলো না কেন নিশি এতোটা রেগে গেলো।সোহানের নিষ্শাষ বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো।চোখদুটো এখনো বন্ধ করে রেখেছে।এখনো সে নিশির মায়াবী মুখটা দেখতে পাইনি।
— আহ নিশি ব্যথা লাগছে প্লিজ এমন করোনা।
— কিরে ছুরি দেখেই ভয় পেয়ে গেলি?এখনোতো কিছুই করিনি।তোকে তো এতো তারাতারি মারবো না।আসতে আসতে কষ্ট দিয়ে মারবো যেভাবে তুই আমাকে কষ্ট দিয়েছিছ।

— নিশি সত্যি আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।(দম আটকে রেখে)
— দেখ আমার রাগ বাড়ানোর একটুও চেষ্টা করিস না।আর তোর মতো একটা পাগলের সাথে কেই বা থাকতে চাইবে?(চশমাটা চোখ থেকে খুলে ফেলে দিয়ে)
হটাৎ নিশি ছুরিটা ফেলে দিয়ে সোহানের পাশে বসে পড়লো।চারদিকে চুপচাপ দেখে সোহান চোখটা খুলে দেখে নিশি তার পাশে বসে রয়েছে।সে নিশির চোখে জল দেখতে পাচ্ছে।কিন্তু কিছুই করতে পারছিলো না।সে না নড়তে পারছিলো আর না কথা বলতে পারছিলো।সোহানের নড়াচড়ার শব্দ পেয়ে,,
— তুই আমার অভিকে মেরে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলি না?ও তোর কি এমন ক্ষতি করেছিলো?ওকে তো এভাবে কষ্ট না দিলেও তো পারতি।তোর আমার দেহ কে ভালোলাগতো তো আমাকে বলতি,আমি তোকে তোর ইচ্ছাটা পূরন করে দিতাম।কিন্তু তুই অভিকে কেন হত্যা করলি?
কথাগুলো শোনার পর সোহানের মধ্যে কিছু একটার হতাশার ভাব দেখা যাচ্ছিলো।উঠতে পারছিলো না তাই হাতটা নিশির দিকে বাড়িয়ে দিলো।কিন্তু কোনো লাভ হলো না।হাতটা বাড়ানোর সাথে সাথে নিশি সোহানের হাতে ছুরি চালিয়ে দিলো।
— তোর আমাকে স্পর্শ করার কোনো অধিকার নেই।
ধারালো ছুরির আঘাতে সোহানের হাতের রগ ভেদ করে মাংশের ভিতর দিয়ে কেটে গেলো।আঘাতটা সহ্য করতে না পেরে নিমিষেই চিৎকার দিয়ে উঠলো সোহান।
হাত দিয়ে রক্ত বের হতেই সে অন্যহাত দিয়ে হাতটা চেপে ধরলো।নিশি সোহানের কষ্টটা বাড়ানোর জন্য তার দু হাত দিয়ে সোহানের বুকের উপর অনবরত আঘাত করতে লাগলো।
— জানিস ওই ছেলেটা এসে আমাকে কি জানিয়ে গেলো?অভি মনে হয় আর বাচবে না।আরে এগুলো তোকে বলছি কেন? তোর আমার দেহ দরকাল ছিলো তো?
এটা বলেই নিশি তার শরীর থেকে কাপড় সরিড়ে ফেলে দিলো।সোহানের বুকের উপর বসে,,
— নে এবার তোর ক্ষুধা মেটা?দেখ আমার বুকের উপর তাকা।দেখ আমার ঠোটটা দেখ কত্ত লাল।
সোহানের মুখটা নিশি তার বুকের সাথে চেপে ধরে মদের বোতলটা তার বুকে ঢেলে দিলো।
— নে তোর ক্ষুধা মেটা।আজ তোর জন্য আমার সহ ফ্রি।
এটুকু শোনার পর একটা চিৎকারের পর সোহানের চোখদুটো বন্ধ হয়ে এলো।কিন্তু কেউ তার পাশে এগিয়ে এলো না কারন শব্দটা তার ঘর থেকে বাইরে বের হতে পারেনি।নিশি তার মাথাটা বুক থেকে সরিয়েই মাথাটা ফ্লোরে সাথে ধাক্কা দিয়েই সোহানকে বেহুশ করে দিয়েছে।এদিকে নিশি কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে সোহানের উপর থেকে উঠে দাড়িয়ে চিৎকার করে হাসতে থাকলো।আর বলতে থাকলো,,
— আমি তোমার প্রতিশোধ নিতে পেরেছি অভি।তুমি যেভাবে শুয়ে আছো আমিও একে এভাবে শুয়ে রেখেছি।
এরপরেও যেন নিশিকে শান্ত হতে দেখা যাচ্ছে না।

নিশি গিয়ে সোহানের দিকে নজর দিয়ে দেখতে লাগলো।প্রথম থেকে আঘাত পেতে পেতে তার শরীর থেকে প্রচুর রক্ত বের হয়ে গিয়েছে।চারদিকে তার হাতের রক্ত ছড়িয়ে রয়েছে।নিচে সে অসহায়ের মতো পড়ে রয়েছে।নিশি সোহানের হাতগুলো ধরে টানতে টানতে দরজার বাইরে ফেলে দিলো যেখান আজ এই হাতটাই নিশির কপালটাই হাত বুলিয়ে দেবার কথা ছিলো।আসার পথে ওষুধ বাকসো টা ছাদে ফেলে রেখে দিলো।সে নিজেও চাইছিলো সোহানকে এতো তারাতারি শেষ করার।রুমটা বন্ধ করে দিয়ে সে বিছানাই ঘুমিয়ে পড়লো।

এদিকে দরজার বাইরে বেহুশ অবস্থাই পড়ে রয়েছে।শরীর থেকে প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ রক্ত বের হয়ে গিয়েছে।চারদিকে সোহানের এই করুন কাহীনি দেখে জোনাকিরা আলো দিতেও ভয় পাচ্ছে।মশারাও তার কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে।আকাশের তারাগুলোও নিভে যাচ্ছে।কিন্তু সবার মনে একটাই প্রশ্ন, কেন আজ সোহানকে দরজার বাইরে ফেলে রাখা হয়েছে?কি এমন করেছে যে তার প্রতি এতো ঘূনা রয়ে গিয়েছে।আজকের রাতটা শুধু বাসর রাতই নয়।এটিকে জিবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন রাত বলা হয়।
সোহানের গায়ে মাটি আর রক্ত মিশে একটা আলো তৈরি করছে।হইতো আজ আমাবস্যা তাই সোহানকে আজ অঘোর ঘুমে আচ্ছন্ন দেখা যাচ্ছে।আজ সোহানের ভিতরটা একদম নিরব রয়ে গিয়েছে।হইতো দেওয়ালের সাথে হেলান
দিয়ে সে বাসর রাতের সুখটা অনুভব করছে।রাতটা ধীরে ধীরে বয়ে যাচ্ছে।প্রচন্ড শীতের ভিতর সোহানের গায়ের লোমগুলো দাড়িয়ে গিয়েছে।কিন্তু নিশি কি করছে?চলুন ভিতর থেকে দেখে আসি।কেউ একজনের চোখে এখনো পানি টলমল করছে।বুকের উপর কারো ছবি দেখা যাচ্ছে।এই ছেলেটি কে নাকি এই ছেলেটির কারনে আজ সোহানের এমন দশা।নিজের বাসর রাতেও সোহান তার ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের চোখে ভালো করে দেখতে পাইনি কি এই ছেলের জন্য?সে যাইহোক এইসবের পিছনে এই ছেলেটারই হাত রয়েছে।রাতটা পেরিয়ে মাঝরাত হয়ে গিয়েছে।কিন্তু একি এতক্ষন সবাই কি করছিলো?যাদের নিয়ে কথা হচ্ছে তারা এখন কি করছে?একি মনে হচ্ছে সোহানের হুশ ফিরে এসেছে।চোখদুটো মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে খুলছে।হাতদুটো হইতো শীতের কারনে কাপছে।ব্যথাই সোহান নড়তেও পারছিলো।চোখটা খুলে যখন সে জানার চেষ্টা করলো সে কোথাই?তখন সে দেখলো সে তার রুমের বাইরে পড়ে রয়েছে।চারদিকে শীত নিবারনের জন্য কিছু খুজেও পেলোনা।পান্জাবীর পকেট থেকে একটা গোলাপ বের করলো যেটা তার নিশিকে দেবার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু সেই মেয়েটার আঘাতেই ফুলটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।তবুও সোহানের মুখে হাসি ফূটে উঠেছে।যেন ফুলগুলো তাকে এখনো বলছিলো নিশি তোমার ছিলো আর তোমারি থাকবে।
.
চলবে,,
.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে