#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-১৪
ওয়াশরুমের শাওয়ার ছেরে ঘন্টা খানেক ধরে বসে আছে মায়া।
দু চোখে তার অশ্রুর ধারা বহমান।মনে অজানা এক ভয়ের ছাপ।হৃদয়টা ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে।মনে মনে আওরাচ্ছে সত্যিই কি খুব দেরি করে ফেললাম?হারিয়ে ফেললাম বুঝি আমি আমার একান্ত আপন মানুষটাকে?যার জন্য ওর কোনো অনুভূতি ছিলো না।ধীরে ধীরে সেই মানুষটাকে ও ভালোবাসতে শুরু করেছে।হয়তো সেও ভালোবাসে কিন্তু আজ ওর ধারনা ভুল বলে প্রমাণিতো হলো।মেঝেতে বসে দুই হাঁটুর মাঝে মুখ গুঁজে শব্দহীন কান্নার রেশ টা আবার বাড়িয়ে দেয়।
মায়া মেহরাবের নজরে আসার জন্য নিজেকে সাজায়।এতোদিনে ও সব কিছুই শিখে গেছে।গ্রামের সেই মায়া এখন শহরের আধুনিকতার ছোয়ায় নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে।ড্রেসিং টেবিলের সামনে ছোটো টুলে বসে আয়নায় নিজেকে দেখে মুগ্ধ।আজ অন্য রকম লাগছে মায়াকে।নিজেই নিজেকে চিনতে পারছে না।এতো পরিবর্তন সব কিছু সম্ভব হয়েছে মেহরাবের জন্য।এতো সুন্দর একটা জীবন ওকে উপহার না দিলে আজ হয়ত কোনো অস্তিত্ব থাকতো না ওর।
সন্ধ্যার আগেই মেহরাব অফিস থেকে চলে আসে।মায়া সেজেগুঁজে আরেক রুমে বসে আছে।মেহরাবের সামনে যেতে ওর লজ্জা লাগছে।তবুও যেতে হবে যে,রুম থেকে বের হয়ে মেহরাবের রুমে এসে দেখে ও নেই।ড্রইং রুম থেকে মেয়েলী কন্ঠ ওর কানে আসে।একটু এগিয়ে ড্রইংরুমের দিকে যায়।থমকে যায় মায়া এটা ও কি দেখছে?একটি মেয়ে যে কিনা মেহরাব কে জড়িয়ে ধরে আছে।দেখে বুঝা যাচ্ছে মেহরাব ও বেশ মজা নিয়ে ধরে আছে মেয়েটিকে।আলিঙ্গন শেষে দুজন সোফায় বসে আয়েশী ভঙ্গিতে গল্প করছে আবার হাসছে।মায়া আর সামনে এগোয় না।
-তারপর.. এ ভাবে না জানিয়ে এসেছো এটা কিন্তু ঠিক করোনি।
-কি করবো মনটা যে দেশে পরে আছে তাই হুট করেই চলে আসলাম।তা শুনলাম আমাদের হিরো মীর মেহরাব নাকি বিয়ে শাদি করে সিঙ্গেল থেকে মিঙ্গেল হয়ে গেছে।
-হুম ঠিক শুনেছো
দুষ্টুমির স্বরে মেয়েটি বললো
-এখন আমার কি হবে?
মেহরাব তাকে বলে
-তোমার ব্যাবস্থা টাও শিগ্রই করে ফেলবো নো টেনশন
মেয়েটি ওর কথা শুনে মুচকি হাসে
-তা মিসেস মেহরাব কোথায় একটু দেখা করিয়ে দাও।
এদিকে মায়ার এমন একটা সিন দেখা লাগবে ও কখনও ভাবেনি।মনে মনে কষ্ট অনুভূত হলেও রাগ হচ্ছে প্রচুর।এই মেয়ের সাথে নির্ঘাত কোনো চক্কর আছে মেহরাবের।না হলে এভাবে জড়িয়ে ধরে?হেসে হেসে কথা বলে ?কই এতো দিন ধরে বিয়ে হইছে একটা দিনও তো ওকে ধরলো না।এতো হেসে হেসে ও তো কথা বললো না।ওহ ধরবে কেনো আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে সে আমায়।তাই বলে কি অধিকার দিবে আমায়?সত্যিই আমি কতো বোকা।চোখের বাধ ভাঙ্গা জল আর সামলাতে পারছে না।চোখ মুছে দ্রুত ওয়াশ রুমে ডুকে শাওয়ার ছেরে দেয়।
রুমের দরজায় কড়া নারার শব্দ।কয়েক বার ডাকলেও মায়া সারা দেয় না।এতে মেহরাবের মনে দুঃচিন্তা উদয় হয়।এবার জোড়ে জোড়ে মায়ার নাম ধরে ডাকতে থাকে।মেহরাবের ডাকে মাথা তোলে মায়া মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না।অতিরিক্ত ভেজার ফলে গায়ে কাপুনি চলে আসছে।কোনো মতে ভেজা শরির নিয়ে রুমে এসে কাপড় পাল্টে রুমের দরজা খোলে।হন্তদন্ত হয়ে মেহরাব রুমে ডুকে মায়ার সামনে আসে।মাথায় তোয়ালে পেচানো দেখে কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করে
-এই অসময়ে শাওয়ার নিয়েছো কেনো?
নিচের দিকে নত দৃষ্টি রেখে মায়া জবাব দেয়
-এমনি মন চাইলো তাই।
মেহরাব আর কথা বাড়ায় না।
-আমার সাথে আসো
-কোথায়?
-গেলেই দেখতে পাবে
মেহরাব মায়ার হাত ধরে ড্রইং রুমে নিয়ে আসে।
বাড়িতে আসা অতিথির সাথে মেহরাব মায়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
-মায়া এই হলো টয়া।ইউকেতে থাকে তোমাকে একটা সময় আমরা স্কুল আর কলেজ লাইফে এক সাথে পড়ালেখা করেছিলাম।
না চাইতেও মুখে হাসিটা বজায় রেখে মায়া টয়ার সাথে সৌজন্য মূলক কুশল বিনিময় করে।
-মেহরাব তোমার বউ তো দেখছি ভারি মিষ্টি একটা মেয়ে।কিন্তু মেহরাব আমাকে তোমার চোখে পরলো না?শেষমেশ কিনা এতো পিচ্ছি একটা মেয়েকে বিয়ে করলে?
কথাটা শুনে মেহরাব হাসে কিন্তু মায়ার মনে মনে রাগ লাগে।মন চাইছে ওকে কিছু কথা শুনাতে”পিচ্চি বিয়ে করছে তাতে আপনার কি? কিন্তু সেটা মুখে আর বলতে পারে না।
-তা মেহরাব তোমার বউ এই সময়ে শাওয়ার নিলো যে।ব্যাপার কি বলোতো?
-আরে সে রকম কিছু না ওর মন চাইছে তাই।
-ওহ আমি আরো ভাবলাম মেয়েটার ওপর মনে হয় যখন তখন ঝড় বয়ে যায়।
কথাটা বলেই টয়া মুখ চেপে হাসে।মেহরাব একটু কেশে নিয়ে বলে
-এই ছাড়ো এসব ফ্রেশ হয়ে নেও।রাতে এক সাথে খাওয়া দাওয়া করবো।
মায়ার তো রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।কি সব লজ্জা ছাড়া কথা বার্তা বলছে আর সে গুলো শুনে মেহরাব মজা পাচ্ছে।টয়াকে গেস্ট রুমে নিয়ে যায় মেহরাব।মায়ার এ সব একদমই সহ্য হচ্ছে না।
রাতের খাবার সেরে মেহরাব টয়ার সাথে গল্পে মেতে উঠেছে।মায়াকে ডাকলে মায়ার শরির ভালো নেই এ কথা বলে মায়া রুমে চলে যায়।মায়া রুমে বসে কান্না করতে থাকে “আমার সুখের ঘরে এ কোন আপদ আসলো।কিছু ভালো লাগছে না।মাথা টা কেমন করেছে আবার শরিরের তপমাএা বেশি মনে হচ্ছে।এরপরে মায়া মাথা ঘুরিয়ে পরে যায় আর কিছু মনে নেই ওর।
কেটে যায় দুদিন টয়া এখনও আছে ও নাকি আরো তিন চার দিন থাকবে।এ কয় দিন মেহরাব মায়ার সাথে তেমন কথা বলেনি।বলতে গেলে বেশি একটা সময় ওকে দেয়নি।যতোটুকু সময় ও ফ্রি থাকে সেটুকু সময় টয়াকে নিয়ে বাইরে সময় কাটায়।
আজ ছুটির দিন মেহরাব ঘুমিয়ে আছে।মায়া আরেক রুমে জানালার পাশে আনমনে বসে আকাশ দেখছে।টয়া ওর রুমে ডুকলে মায়া ফিরে তাকায়।টয়াকে বসতে বলে মায়া কিন্তু টয়া বসে না।মায়ার ছেরে রাখা লম্বা সোনালী চুল গুলো দেখে অবাক হয়ে যায়।
-ওয়াও মায়া তোমার চুল গুলে কতো সুন্দর।আমার তো মনে হয় মেহরাব তোমার চুল গুলো দেখেই পা’গল হয়েছিলো।
-আপনি ভুল বলছেন পা’গল তো দূরের কথা চুল রূপ কিছুই নয় ,সে আমাকে পরিস্থিতির চাপে পরে বিয়েটা করেছে।
কথাটা মায়া মনে মনে আওড়ায়।
-মায়া কি ভাবছো?
-কিছুনা
-আজ কিন্তু তুমি আমার সাথে বাইরে যাবে।
-কেনো?
-সামনে আমার বিয়ে মেহরাব তোমাকে কিছু জানায়নি?
-নাহ তাছাড়া তার এতো সময় কোথায় এ সব আমাকে জানানোর।
-হয়ত ওর মনে নেই আচ্ছা শুনো বিয়ের অনেক কেনাকাটা বাকি প্লিজ তোমাকে যেতেই হবে।
মায়া আর না করে না।বিকেলের দিকে মায়া আর টয়া বের হয়।শপিংমলের সামনে গিয়ে দেখে মেহরাব ওদের জন্য অপেক্ষা করছে।মায়া ওকে দেখে বুকের মধ্যে ধক করে ওঠে।
“ওহ সাহেব ও হাজির দেখছি তা হলে আমাকে আনার কি দরকার ছিলো।বিয়ে পর্যন্ত ঠিক ঠাক কেনাকাটা ও চলছে আর আমি কিছুই জানি না।আর জেনে কি হবে এবার তো পথের কাটা দূর করার জন্য কিছু একটা করতে হবে মায়ার।”
মায়াকে অন্যমনস্ক দেখে টয়া ওকে ডাক দেয়।মায়া নিজেকে ঠিক করে ওদের সাথে পা বাড়ায়।যা ঘটে ঘটুক ক্ষত বিক্ষত মন নিয়ে ওকে স্বাভাবিক থাকতে হবে কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না।টয়া বেছে বেছে ওর বিয়ের জন্য পোশাক কিনলো।কয়েকটা মায়ার পছন্দের ও।অন্যদিকে মেহরাব কয়েকটা ড্রেস আলাদা ভাবে নিয়ে নিলো।সে সব মায়ার নজর এড়ায়নি।
“বাহ বিয়ের জন্য এতো এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে তার মধ্যে?বউয়ের জন্য বেছে বেছে ড্রেস ও কেনা হচ্ছে।মায়ার আর সহ্য হচ্ছে না।”
কেনাকাটা শেষে বাইর থেকেই ওরা খেয়ে দেয়ে বাসায় ফিরে।মায়া আজ আর ওদের রুমে যায় না।অন্য রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।মন ভালো করার জন্য বাড়িতে কল দিয়ে পুষ্পের সাথে কথা বলে।তবে ওকে ওর মন খারাপের কথা কিছুই জানায় না।কথা শেষ করে মায়া ঘুমিয়ে পরে।মেহরাব ওকে ডাকতে আসে কয়েক বার ডাক দিয়ে সারাশব্দ না পেয়ে বুঝতে পারে মায়া ঘুম।নিজের রুমে ফিরে যায় মেহরাব।
—-
খুব সকালে মেহরাব আর টয়া বের হয়ে যায় একসাথে।আগামীকাল ওর বিয়ে।বিয়েটা বাইরের কোনো এক কমিউনিটি সেন্টারে হবে।মেহরাব টয়া কে বলেছিলো মীর ম্যানশনে বিয়টা করতে কিন্তু ওর ইচ্ছে ওখানে করার।তাই আর মেহরাব না করে না।
সারাদিন পার হয়ে যায় দুজনের কেউ আসেছে না দেখে মায়ার মন আরো বিষন্নতায় ভরে ওঠে।অবশেষে ওরা দুজনেই একসাথে বাড়িতে ফেরে।ড্রইং রুমে মায়া বসে ছিলো দুজনকে একসাথে হাসিমুখে দেখে মায়ার পিওি জ্ব”লে যাবার মতো অবস্থা।টয়া মায়ার সঙ্গে কথা বলে নিজের রুমে চলে যায়।মেহরাব ও রুমের দিকে পা বাড়ায় তবে মায়াকে ওর রুমে আসতে বলে।মায়া আর না করতে পারে না।মেহরাব ফ্রেশ হয়ে একটা প্যাকেট এনে মায়ার সামনে রাখে।প্যাকেট টি খুলতেই দেখে এটা একটা বিয়ের শেরওয়ানি।খুবই সুন্দর আর দেখেই মনে হচ্ছে অনেক দামি।মেহরাব মায়ারে জিজ্ঞেস করে
-দেখোতো কেমন হয়েছে ?
বেচারি এমনিতেই মেগরাবের শোকে কাতর তার ওপর বিয়ের শেরওয়ানি দেখে দম বন্ধ হবার মতো অবস্থা হয়েছে।কোনো মতে চাপা গলায় বললো
-খুব সুন্দর হয়েছে
-আচ্ছা বলোতো এটা পরলে মানাবে তো?
-হুম খুব মানাবে
বলেই টুপ করে চোখ থেকে এক ফোটা জল গরিয়ে পরে তবে সেটা মেহরাব দেখতে পায় না।মায়া রুম থেকে চলে যেতে লাগলে মেহরাব ওকে বসতে বলে।মায়া বিছানার ওপর বসে পরে।মেহরাব আলমারির ড্রয়ার থেকে একটা ফাইল বের করে আনে।সেখান থেকে একটা কাগজ বের করে।দু তিন পৃষ্ঠার কাগজ হবে।মায়ার হাতে এনে দেয় সে গুলো।মায়া কিছুই বুঝতে পারে না কি করবে এ গুলো দিয়ে।মেহরাব একটা কলম দিয়ে বললো
-এই কাগজ গুলোতে সাইন করে দাও
-কিসের কাগজ এ গুলো?
-এগুলো ডিভোর্স পেপার দাও তো জলদি সাইন করে দাও।
এ কথা শুনে মায়ার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পরে।হা ও যা যা ভেবেছে সবই সত্যি।এটাই তো বাকি ছিলো না হলে বিয়েটা করবে কিভাবে? মন কে বুঝ দিয়ে বহু কষ্টে কাপা হাতে তিনটা পেপারে মেহরাবের নির্দেশ মতো সাইন করে দেয় মায়া।মেহরাব হাসিমুখে পেপারস গুলো নিয়ে নেয়।
মায়া ভাবে “এই পর্যন্তই বুঝি ওর সংসার জিবনের সমাপ্তি ঘটলো।কিন্তু একটা বার পেপারস্ গুলো মায়া পড়ে দেখেনি অবশ্য পড়ার দরকার ও নেই।তা হলে কষ্টটা দ্বিগুন হয়ে ওর মনে আরো পীড়া দিবে।শুধু রাত টা পার হওয়া বাকি এরপরই ওর আসল গন্তব্যে রওয়ানা দিবে।”
চলবে…..
#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-১৫
বালিশে মুখ গুঁজে ফুপিয়ে কান্না করে যাচ্ছে মায়া।বুকে অজস্র ব্যাথা যন্ত্রণায় জর্জরিতো।মনে হচ্ছে চিৎকার করে কান্না করতে পারলে বুকের কষ্ট টা একটু হলেও লাগব হতো।এই মুহূর্তে কাউকে বুকে চেপে রাখা কথা গুলো বলতে পারলে শান্তি পেতো।কিন্তু নাহ এ সব কথা কাউকে জানতে দেওয়া যাবে না।
“সকাল সকাল কাজে যাবার জন্য সবটা গুছিয়ে বের হতে যাচ্ছিলেন কাশেম মিয়া।ঐ সময়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে মায়া।মেয়েকে এ সময়ে আসতে দেখে খানিকটা অবাক হন।হাতের জিনিসপএ রেখে এগিয়ে যান মেয়ের নিকট।হাসিমুখে বাবার সাথে কথা বললো মায়া।ড্রাইভার কে বিদেয় দিয়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে বাবা মেয়ে।আয়মন কে জোড়ে জোড়ে ডাকতে লাগলেন কাশেম মিয়া।আয়মন একটু বিরক্ত মুখ নিয়ে সামনে আসতেই মায়াকে দেখে বিরক্ত মুখ খানা মুহূর্তে পরিবর্তন করে ফেলে।হাসি মুখ বজায় রেখে মায়ার সাথে কথা বলে।বাড়ির কুশলাদি জিজ্ঞেস করে।মায়াও ঘুনাক্ষরে টের পেতে দেয় না যে মায়া রাগ করে চলে এসেছে।”
-বুবু তুমি কানতাছো ?
পুষ্পের কথা শুনে চোখ নাক মুখ ওরনার আচঁল দিয়ে মুছে নেয় মায়া।মুখে মিথ্যে হাসির রেখা ঝুলিয়ে বলে
-কই নাতো কান্না করুম ক্যা?
-কিন্তু বুবু আমি স্পষ্ট দেখতাছি তুমি কানছো আর তোমার চোখ মুখ ফুইলা গেছে।
মায়া ওকে থামতে বলে কেউ শুনে ফেলবে আস্তে বলতে বলে।
-বুবু আমি সেই ছোট্টটি নেই অনেক কিছু বুঝি ।আমি এইটাও বুঝছি তুমি দুলাভাইর লগে মান অভিমান কইরা চইলা আইছো।কিন্তু বুবু আমার ওমন ভালো দুলাভাইর লগে তুমি ঝগড়া করতে পারলা?
পুষ্পের কথা শুনে মায়ার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।ওকে কি ভাবে বলবে ওর দুলাভাই ওকে ঠকাচ্ছে।আরেকজনকে বিয়ে করতাছে।শুধু তাই না মেহরাব ওকে দিয়ে ডিভোর্স এর কাগজে সই ও করিয়ে নিয়েছে।
-বুবু এতো কি ভাবতাছো? আমারে কও কি হইছে আমি কাউরে কিছু কমু না কসম করলাম।
পুষ্পের কথা শুনে মায়া তবুও কিছু বলে না।কিন্তু একটা কিছু বলে তো বুঝ দিতে হবে
-শোন বইন তার সাথে আমার তেমন কিছুই হয় নাই।আর প্রতিটি সংসারে জামাই বৌর মধ্যে একটু একটু ঝগড়া হয়ে থাকে।আর এমনিতেও বাড়ির সবাইর জন্য মন পুড়’তেছিলো তাই চইলা আসলাম আর কিছু না।
পুষ্প এবার একটু চিন্তা মুক্ত হয়।তবুও বুঝতে পারে মায়ার মন খারাপ।হয়তো দুলাভাইর জন্য মন পুড়’তাছে।তাই বোনকে জোড় করে বাইরে নিয়ে যায়।
-বুবু আসো আমরা আজ গাছ থেইক্যা কাঁচা তেতুল চালতা আমড়া এ সব ছিরে মাখা খাবো।মায়ার ও খুব মন চাইছে এসব খেতে।অনেকদিন এসব নিজের হাতে পেরে খাওয়া হয় না তাই দু বোন বাড়ির বাইরে বের হয়ে যায় এ সব খাওয়ার জন্য।
——-
আজ আয়মন মেলা খুশি।বড়ো মেয়ে আসছে শহর থেকে।তাই ভালো মন্দ রান্না করার জন্য রান্না ঘরের কাজে লেগে পরছে।বড়োলোক বাড়ির বৌ এখন তো মেলা খাতির যত্নাদি দরকার।শুধু আজ বলে কথা নয় সবসময়ই আয়মনকে যে এই কাজটা করতে হবে।কারন আয়মন মনে মনে ভেবে রেখেছে যে করেই হোক বড়ো মেয়ের জামাইর মাধ্যমে ছোটো মেয়ের বিয়েটা দিতে পারলে নিশ্চিত এমন একটা বড়োলোক জামাই পাবে।তাই ওর যা যা করার ও করবে।এ সব ভাবতে ভাবতে মায়ার পছন্দের রান্না গুলো আয়মন গুছিয়ে রান্না বসিয়ে দেয়।
আসপাশের পাড়া ঘুরে দুপুরের দিকে মায়া আর পুষ্প বাড়ির পাশের খাল থেকে গোসল সেরে বাড়ি আসে।
সবাই এক সাথে খাবার খেতে বসে।মায়া খেতে বসে,সামনে তাকিয়ে দেখে “ওর পছন্দের খাবার গুলো আয়মন রান্না করছে।মনে মনে খুব খুশি হয়।আয়মন নিজ হাতে মায়ার প্লেটে খাবার বেরে দিচ্ছে।মায়ার আনন্দ হচ্ছে আবার কষ্ট ও হচ্ছে।আগের কথা গুলো মনে পরছে।একটা সময় কতোই না খাবারের কষ্ট পেয়েছে।পছন্দের খাবার খাওয়া তো দূর পেট ভরেই শুধু ভাত ও আয়মন খেতে দিতো না ওকে।আর আজ সেই মানুষটা নিজ হাতে খাবার বেরে দিচ্ছে মায়াকে।
কি অদ্ভুত তাই না?
এর মাঝে আরেক ভয় ওর মনে হানা দেয়।ও তো একেবারে চলে এসেছে।এ সব শুনলে সাবাই কি বলবে? কিভাবে এসব মেনে নিবে?আবার তো ওকে সেই আগের মতো ঘৃণা করবে আয়মন।ওর ভাবনার মাঝে আয়মন বলে ওঠে
-মায়া কি ভাবছিস মা খেয়ে নে।
মায়া আপাততো খেতে চায় এ সব পরে দেখা যাবে।যদি এ বাড়িতে জায়গা না হয় তো অন্য কোথাও চলে যাবে।এখন জীবন মানে ওর কাছে অনেক কিছু।দরকার পরলে নিজেই নিজের দায়িত্ব নিবে।সেই ভরসা ওর নিজের ওপর আছে।মায়া মনোযোগ সহকারে খেতে থাকে।এর মধ্যে কাশেম মিয়া বলে
-একা আসলি যে মা?জামাইরে নিয়া আসলেই পারতি।
বাবার কথা শুনে মায়ার বিশম লাগে।কাশতে থাকে অনবরত পাশ থেকে আয়মন এর গ্লাস পানি এগিয়ে দেয় মায়াকে।মায়া হাত বাড়িতে পানি নিয়ে খেতে থাকে।পুষ্প ওর মাথায় ফু দিচ্ছে।আয়মন স্বামীর ওপর রাগ দেখায়
-দেখছেন মাইয়্যাটা খাচ্ছে,খাওনের সময় এতো কথা কইতে হয় না।জামাই ব্যাস্ত মানুষ হেয় কি সব সময় আসবার পারবো?
বউয়ের কথা শুনে কাশেম মিয়া এবার বুঝতে পারে।মায়াকে আরামে ধীরে ধীরে খেতে বলে।বুঝে নেয় আসলেই তো মেহরাব ব্যাস্ত মানুষ চাইলেই সব সময় আসতে পারে না।মেয়েকে আর কিছু জিজ্ঞেস করে না।মায়ার কাশি থেমে যায় বেশ তৃপ্তি নিয়ে খেয়ে রুমে চলে যায়।
~~
বিকেল হতে চললো’এতো সময় পেরিয়ে গেলো কিন্তু মেহরাব একটা বার ওর খোঁজ নিলো না।ভাবতেই আবার বুকটা মোচর দিয়ে উঠলো।আবার নিজেকে নিজে শান্তনা দেয় কেনো মনে করবে সে যেটা চাইছে আমি তো তো সেটা করে তাকে মুক্তি দিয়ে আসছি।এতোক্ষণে নিশ্চই বিয়েটা হয়ে গেছে না হলে হবে।মনে হয় ঐ শেরওয়ানিটা পরছে।কেমন লাগছে তাকে? নিশ্চই অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে।লাগার কথা সে তো সবসময়ই সুন্দর।এ সব ভাবতেই চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।পরক্ষণে নিজেকে ঠিক রাখার বৃথা চেষ্টা করে।যা খুশি তাই করুক আমার কি?যে আমাকে চায় না তাকে নিয়ে এতো ভেবে কি হবে।সুখে থাক তার নতুন বউকে নিয়ে।
সে সময় পুষ্প ওকে ডাকতে ডাকতে রুমে ডুকে।
-বুবু তোমার মোবাইল কই?
পুষ্পের কথায় মায়ার মনে পরে যায় ও তো ফোন আনেনি।ইচ্ছা করেই আনেনি শুধু তাই না মায়া মেহরাবের কোনো জিনিসপএ ই আনেনি তাই ফোনটা আনার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
-ইশ রে ফোনটা ভুলে বাসায় রেখে এসেছি।
-বুবু তোমার ভুলো মন কবে থেকে হইলো?তুমি তো এমনটা ছিলা না।
পুষ্পর কথা শুনে মায়া কি বলবে ভেবে পায় না।বাদ দে তো আগে বল ফোন দিয়ে কি করবি?
মায়ার এমন কথা আর চাওনি তে বুঝতে পারে কিছু একটা ও লুকাচ্ছে।তাই আর পুষ্প বেশি কিছু বলে না।
মায়ার আর ঘরের মধ্যে শুয়ে বসে থাকতে ভালো লাগছে না।একটু বের হতে পারলে ভালো লাগতো।আসার পরে পুষ্পের থেকে শুনেছে ওর বান্ধবী আয়েশার নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে।তাই ভাবলো ওর কাছ থেকে একটু ঘুরে আসা যাক।তাহলে মনটাও ভালো লাগবে।
নিজেকে একটু ঠিকঠাক করে ওরনাটা ভালো ভাবে শরিরে জড়িয়ে মায়া বের হয় আয়েশার বাড়ির দিকে।ওদের বাড়ির দূরত্ব দশ থেকে পনেরো মিনিট এর।অনেক দিন পরে চেনা জানা পথে হাটছে মায়া ভালো লাগছে তবে এর মাঝে একটু ভয় ও করছে।পুরোনো কিছু কথা ওর মনে পরে যায়।তবে ভালো ভাবেই আয়েশার বাড়িতে পৌছে যায় মায়া।মায়াকে দেখে আয়েশা জড়িয়ে ধরে।অনেক খুশি আয়েশা।ও তো ভাবতেই পারছে না মায়া ওর সাথে দেখা করতে এসেছে।আয়েশা জানে মায়া অনেক বড়োলোক বাড়ির বউ।আয়েশা এর আগের বার ওদের বাড়ি গিয়ে দেখা করেছে আর আজ কোনো খবর ছারাই মায়া ওকে দেখতে এসেছে।
দুজনের মধ্যে অনেক দিনের জমানো কথা বলা শুরু হয়ে যায়।আয়েশার হবু বর কে?কোথায় থাকে?কি করে?কোথায় বাড়ি?এ সব নিয়ে নিয়ে দুজনের মধ্যে অনেক কথা বার্তা হয়।
আয়েশা মেহরাব কে নিয়ে কিছু বলতে গেলে মায়ার মনটা আবার খারাপ হয়ে যায়।কিছু বলে না ওর এভাবে চুপসে যাওয়া দেখে মায়া কিছু বুঝতে পারে।
-থাক মায়া মন খারাপ করিস না।বুঝতে পারছি ভাইয়া কে রেখে একা এসেছিস তাই মন খারাপ।থাক এ সব আর জিজ্ঞেস করুম না।
মায়া এবার মনে মনে হাফ ছাড়ে যাক ও তা হলে অন্য কিছু ভাবছে।এদিকে প্রায় সন্ধ্যা হতে চললো কিন্তু দুজনের মধ্য কার গল্প শেষ হয় না।সূর্য্য ডুবে যায় মাগরিবের আজান পরতেই মায়ার টনক নারে।
-এই রে এখন যেতে হবে অনেক সময় পার হয়ে গেছে।
আয়েশার থেকে বিদেয় নিয়ে মায়া আবার বাড়ির পথে হাঁটা দেয়।আয়েশা কিছু দূর এগিয়ে দিয়ে চলে আসে।মায়া একটু তারাহুরা করে হাটতে লাগে।কিন্তু ও মনে মনে যেইটা ভেবেছিলো সেই বিপদ ওর সামনে খারা।হঠাৎ করে ওর পথ আগলে দাড়ায় কেউ সে আর কেউ না ওকে বিয়ে করতে চাওয়া লু চ্চা রমজান।মায়া ওকে দেখে মনে হচ্ছে মায়ার জানে পানি নেই।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে।কি করবে এখন?এই মুহূর্তে কি করার আছে ওর?
এ দিকে রমজান ওর বিশ্রিরি মার্কা হাসি দিয়া বলে-
-অনেকদিন পর সুন্দরী তোমারে হাতের কাছে পাইছি।বিয়া করতে পারি নাই তো কি হইছে আইজ অন্যের বিয়া করা বউরে নিয়া মজা করুম।
বলতেই ওর কাছে এগিয়ে আসতে লাগে।ও কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।মনে মনে উপর ওয়ালাকে ডাকতে লাগে।আর ভিষণ ভাবে মেহরাবের কথা মনে পরে।আজ যদি মেহরাব ওর পাশে থাকতো কোনো অপশক্তি ওর ক্ষতি করতে পারতো না।কিন্তু এখন নিজেকে নিজের বাঁচাতে হবে।কোনে মতে এই শয় তানের হাতে নিজেকে সোপে দেওয়া যাবে না।মায়া পেছনে যাচ্ছে আর রমজান সামনে আগাচ্ছে।মায়া সামনে তো আর যেতে পারবে না তাই উল্টো দিকে না গিয়ে পাশের আরেকটি রাস্তা ধরে দৌড় দেয়।রমজান ও ওর পেছনে দৌড়াতে থাকে।কিন্তু হাতের নাগালে পাচ্ছে না।মায়া প্রাণপনে দৌড়াচ্ছে ওর হুস নেই রমজান ওর কতো নিকটে আছে।কয়েক মিনিট দৌড়ে হঠাৎ কিছু একটার সাথে ধাক্কা লাগে মায়ার।
দশ ফুট দূরত্বে রমজান মায়ার কাছে আর আসে না সেখান থেকেই পেছন ঘুরে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে মায়া জোড়ে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতে লাগে কিন্তু পরতে পারেনি।শক্ত দু হাতের বন্ধনীতে নিজেকে আবিষ্কার করে।এতোক্ষণ কোনো হুসে ছিলো না মায়া।কিন্তু চেনা জানা একটা সুপরিচিতো ঘ্রাণ নাকে যেতেই ওর মস্তিষ্ক সচল হয়ে যায়।
এটা কি ভাবে সম্ভব?এটা কি স্বপ্ন নাকি বাস্তব?
চলবে……