#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-১১
“আম্মিজান”এতোদিনে আপনার এই ছেলেটার কথা একবারও মনে পরে নি? ফিরোজ কে না পাঠালে মনে হয় আজ ও আসতেন না।”
মেহরাবের অভিমান জড়ানো কথা গুলো শুনে মুচকি হাসে সামনে বসা আফিয়া আনজুম।আদরমাখা হাতে মেহরাবের মাথায় পরম যত্নে স্নেহের হাত বুলিয়ে দেয় আফিয়া।আর বলে
“মা সবসময়ই সন্তানের কথা মনে করে।কিন্তু আব্বু আমার তো ছেলে মেয়ে আছে,সংসার আছে।বয়স হয়েছে তাই তারা একদমই ছাড়তে চায় না।
মেহরাব এবার অধিকারের স্বরে বলে
“এবার কিন্তু যেতে দিবো না অনেক দিন থাকতে হবে।”
ওর কথা শুনে আফিয়া আবারও নিশব্দে হেসে ফেলে আর বলে
“পাগল ছেলে একটা।একদমই বদলায়নি সেই ছোটোটি ই রয়ে গেলে আব্বু।
“হুম দেখতে হবে না ছেলেটার কার”
মায়া পাশে দাঁড়িয়ে থেকে দুজনের আলাপ চারিতা শুনতে থাকে কিন্তু ওর মাথায় কিছুই ডুকছে না।কে এই মহিলা আর মেহরাব তাকে আম্মি সম্মোধন করলো কেনো?ও যতোদূর জানে মেহরাব এর মা বাবা কেউ বেচে নেই।
ওর ভাবনার মাঝে মেহরাব মায়ার হাত ধরে আফিয়ার পাশে বসায়।
“আম্মি এই হলো মীর ম্যানশনের একমাএ পুএবধু আপনার বৌমা।আপনি বলতেন না এই বাড়িটি পরিপূর্ণ করতে হলে একজন কে খুব দরকার এখন বলেন আপনার ছেলের পছন্দ ঠিক আছে কিনা?
মায়া আফিয়া কে সালাম দিলে আফিয়া সালামের জবাব দেয়।মায়ার থুতনি ধরে উঁচু করে ধরে।কয়েক সেকেন্ড নজর বুলিয়ে মা শাহ আল্লাহ বলে।
মেহরাব আফিয়ার কথা শুনে খুশি হয় তারমানে আম্মাজানেরও পছন্দ হয়েছে।আফিয়া খুশি মনে বলে
“যেখানে আমার ছেলের পছন্দ সেখানে খারাব হওয়ার প্রশ্ন ই ওঠে না।আমি মন ভরে দোয়া করে দিলাম মা তোমাকে।
হ্যান্ড ব্যাগ থেকে একটা বক্স বের করে আফিয়া।তার মধ্যে দুটো সোনার চুড়ি।আফিয়া নিজে মায়ার হাতে চুড়ি দুটো পরিয়ে দিয়ে বলে
“অনেক দিন ধরে এ দুটো নিজের কাছে যত্নে রেখেছিলাম।মেহরাবের বৌকে দিবো বলে,আজ তোমার জিনিস তোমাকে দিতে পেরে মনে শান্তি পাচ্ছি মা।
মেহরাব আব্বু দেখো বৌমার হাতে চুড়ি দুটো কি সুন্দর মানিয়েছে।
মায়ার ফর্সা দুটো হাতে চকচকে চুড়ি দুটো সত্যিই মানিয়েছে।মনে মনে ভিষণ খুশি হয় মেহরাব।
অন্যদিকে মায়ার মনে সবকিছু খটকা লাগলেও আপাততো এ সব বিষয় নিয়ে আর ভাবতে পারছে না।এই অল্প সময়ে আফিয়ার আচরনে মায়া মুগ্ধ হয়ে গেছে।আফিয়ার মুখে মা ডাকটা শুনে ওর মনে খুব ইচ্ছা জাগলো আফিয়াকে ও মা ডাকার।দ্বিধা দ্বন্দ ছাড়াই বলে ফেললো
“আমি আপনাকে মা বলে ডাকি?
ওর কথা শুনে আফিয়া ও খুশি হয়।মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।মায়া খুশিতে মা বলে আফিয়া কে জড়িয়ে ধরে।একটা অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করে ওর মধ্যে।মায়ের আদর বুঝি এমনই হয়?এই প্রথম ওর জীবনে এমন ভালোবাসার পরশ পেলো যেটা ওর খুব দরকার ছিলো।
দুজনের এমন আদরমাখা মুহূর্ত দেখে মেহরাব মাথা চুলকে দুষ্টুমি সুরে বলে
“এই রে আমার আদর বুঝি এবার কমে গেলো।“ওর কথা শুনে আফিয়া ওকে বলে
“অনেক আদর পেয়েছো আব্বু এখন থেকে মায়া মা আমার সব আদর পাবে।
রাতে খাবার পরে আফিয়ার সাথে মায়া অনেক গল্প করে।আফিয়ার কথা গুলে মায়ার বেশ ভালো লাগে।প্রথম দেখাতেই মনে হবে অনেক গম্ভির কথা কম বলে।কিন্তু কথা বলার পর বুঝা যায় ধারনা একদমই ভুল।আর কি সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলে।শুধু শুনতেই ইচ্ছে করে।কথার এক ফাকে আফিয়া মায়ার উদ্দেশ্যে বলে
“আমি জানি প্রথম দেখাতেই আমাকে নিয়ে তোমার মনে প্রশ্ন জেগেছে আমি কে।মেহরাব কেনো আমাকে আম্মি সম্মোধন করেছে?সবটাই তোমাকে বলবো তবে এখন না আরেকদিন।আছি তো সবটা জানতে পারবে মা।
মায়া মাথা নাড়িয়ে বুঝায় ঠিক আছে।এরপরে অনেক রাত পর্যন্ত দুজনের গল্প চলতে থাকলে একটা সময় আফিয়া নিজ থেকেই মায়াকে বলে “আজ আর না ঘুমিয়ে পরো আবার কাল কথা হবে।যাও মেহরাব মনে হয় তোমার অপেক্ষা করছে।
মায়া আফিয়ার মুখে মেহরাবের কথা শুনে মনে মনে বলে”আপনি তো জানেন না মা সে আমার জন্য ঘোরার ডিমের অপেক্ষা করে।এই কয়দিন তো একা একাই কাটিয়ে দিয়েছি।কথা গুলো মনে হয় আফিয়া কে বলতে পারলে মনে শান্তি পেতো মায়া।কিন্তু না নিজের মধ্যেই লুকিয়ে রেখে রুমের দিকে পা বাড়ালো।
রুমে এসে লাইট অন করতে চক্ষু ছানা বড়া হয়ে গেছে মায়ার।বেডে মেহরাব শুয়ে আছে এটা দেখে ও ভিষণ পরিমানে অবাক।হা করে তাকিয়ে আছে ,মেহরাবের চোখে আলো পরতেই বিরক্ত স্বরে বলে ওঠে
“ওখানে দাঁড়িয়ে রাত পার করবে নাকি আলো বন্ধ করে শুয়ে পরবে?
ওর কথা শুনে আলো বলে ওঠে
“আমি কোথায় ঘুমাবো?আপনি তো আমার বিছানায় শুয়ে আছেন।
“তো কি হয়েছে পাশে তো জায়গা রয়েছে এসে ঘুমিয়ে পরো।
আলো নিভিয়ে মেহরাবের পাশে দূরত্ব রেখেই ঘুমিয়ে পরে মায়া।এই প্রথম দুজন একসাথে একই বিছানায়।কিন্তু মাঝখানে বাধা হয়ে থাকলো পাশ বালিস টা।মায়া ঘুমিয়ে গেলেও মেহরাবের দু চোখে ঘুম নেই।কবে ওর মায়াবিনীর কাছ থেকে ভালোবাসার স্বীকারোক্তি পাবে।কবে ওর অপেক্ষার অবসান ঘটবে।কবে ওর মায়াকে বুকের মাঝে নিয়ে ঘুম পরবে।এ সব ভাবনা চিন্তার মধ্যে মগ্ন হয় মেহরাব।অপেক্ষা যে ওকে করতেই হবে।কিন্তু এখন যে ওর মায়াকে বুকের মাঝে নিতে মন চাইছে এ টুকু তো ও করতেই পার।মাঝের বালিস টা সরিয়ে ওকে কাছে টেনে নেয়।কপালে অধর দ্বারা ভালোবাসার স্পর্শ একে দিয়ে মায়ার চুলে নাক ডুবিয়ে দেয়।গভির ঘুমে মগ্ন মায়া ,সকাল হওয়া অব্দি ও বুঝতেই পারলো না সারারাত ও মেহরাবের বুকের মাঝে ওর বাহু বন্ধনে আবদ্ধ ছিলো।যদি জানতো তা হলে বুঝতো মেহরাব ওকে বুকে নিয়ে সারারাত জেগেই কাটিয়ে দিয়েছে।আবার সকাল হতেই আগেই উঠে মর্নিং ওয়ার্ক এ চলে যায়।
“সকালে শায়লা আর সিতারা এসে আফিয়া কে দেখে অনেক খুশি হয়।আফিয়া ওদের শ্বাশুড়ি বৌকে খুব ভালো জানে।একটা সময় এই বাড়িতে সিতারাকে আফিয়াই কাজের জন্য রেখে দেয়।মকবুল আর সিতারার সততার জন্য আজ পর্যন্ত এখানেই থেকে যায়।এই বাড়ির সবার ভালোবাসা আর মায়ায় পরে অন্য কোথাও যাওয়ার কথা কখনও ভাবেনি মকবুল আর সিতারা।
~~~~~
অফিসে আয়োজনকৃত অনুষ্ঠান সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হবে।স্টাফ সহ বাইরের অনেককেই মেহরাব ফ্যামিলি সহ ইনভাইট করেছে।তাদের মধ্যে ওর কিছু পুরোনো বন্ধুদের ও আসতে বলেছে।মেহরাবের ইচ্ছা মায়া আজ একটি গর্জিয়াস শাড়ি পরবে আর সেটা ওর পছন্দের ব্লাক কালারের।যেটা মেহরাব ড্রেসের সাথে কিনে দিয়েছিলো।বাসায় পার্লারের দুটো মেয়েকে আনিয়েছে মেহরাব।ও চায় না মায়া বাইরে গিয়ে সাজুক।মেয়ে দুটো মায়াকে শাড়ি পরিয়ে তার সাথে মানান সই সাজে সাজিয়ে দিয়েছে।মেয়ে দুটো চলে যেতেই মেহরাব ওকে নিতে রুমে আসে।এক ঝলক দেখেই বুকের মাঝে হাতুরি পেটা শুরু হয়ে যায়।এই মেয়ে নির্ঘাত ওকে ওর রূপের জাদুতে মে”রে ফেলবে।
ব্লাক কালারের শাড়ি ,ফুল হাতার ব্লাউজ আর ম্যাচিং হিজাবে মায়াকে দেখে চোখ সরানো টা মুশকিল হয়ে পরেছে। মেহরাব যে ভাবে বলেছিলো সে ভাবেই ও সেজেছে।
মায়ার দিকে এভাবে হা হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে মায়া মেহরাবকে বলে “চলুন এবার যাওয়া যাক”ওর কথা শুনে মেহরাব নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে কিন্তু ও কি স্বাভাবিক হতে পারবে?মায়া আফিয়ার সামলে যায়।আফিয়া মায়ার বেশ প্রশংসা করে।ওরা দু জনেই আফিয়াকে যেতে অনুরোধ করলেও আফিয়া রাজি হয় না।বলে “তোমরাই যাও আর আনন্দ করে আসো।তা ছারা আমার শরির টা বেশি একটা ভালো নেই।”
এরপরে ওরা রওয়ানা হয় গাড়ি নিয়ে।আজ দুজনেই পেছনের সিটে বসেছে।মেহরাবের তো মায়ার ওপর থেকে চোখ সরছেই না।একটু পর পর চোরা নজরে দেখতে থাকে আর এভাবেই পথের সমাপ্তি ঘটিয়ে অফিসের সামনে চলে আসে।
পার্টিতে প্রায় সবাই চলে আসে।ওদের দুজনকে দেখে ফিরোজ সহ আরো কয়েকজন এসে মায়ার হাতে ফুলের তোরা দিয়ে ওদেরকে স্বাগতম জানায়।ওদের দুজনের জন্য বসার আলাদা জায়গা করা হয়।সেখানে মায়াকে নিয়ে মেহরাব গিয়ে মায়াকে বসতে বলে।ফ্যামিলি সহ যারা এসেছে সবাই মায়ার সাথে গিয়ে পরিচিতো হয়ে কথা বলে।মায়ার সবটা দেখে খুব ভালো লাগে।ভেবেছিলো জায়গা টা কেমন কি হবে,সেখানে আসা মানুষগুলো না জানি কেমন হয়।কিন্তু ওর ভুল ভেঙ্গে যায় ।সবাই বেশ আন্তরিকতার সাথে কুশল বিনিময় করছে।
ফিরোজ এর পক্ষ থেকে কেকের আয়োজন করা হয়।মেহরাব নিষেধ করলেও শোনেনি।ওর কথা সবকিছুই তো বড়োভাই আয়োজন করছে । ছোটো ভাই হিসেবে না হয় একটু কেকের আয়োজন করুক।মেহরাব এ কথা শুনে আর না করেনি।
কেক কেটে সবাই মিলে আগে কেক খেয়ে নেয়।মেহরাবের তিনচা বন্ধু চলে আসলে মেহরাব মায়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।তাদের মধ্যে সামিন আর সিয়াম বেশ নম্র আর বিনয়ী ভাবে ওর সাথে কথা বলে।কিন্তু রিমন নামের বন্ধুটি মায়ার সাথে কথার বলার সময় কেমন জানি একটু অন্য রকম নজরে ওর দিকে তাকায়।কথা বলার ধরনও ভালো লাগেনি মায়ার।তবুও সৌজন্য মুলক হাসি দিয়ে কথা বলে মায়া একটু সরে এসে ওর স্থানে বসে পরে।দূর থেকে রিমন ওর দিকে কয়েক বার ভিন্ন নজরে তাকিয়েছে।মায়া সেটা লক্ষ্য করলেও মেহরাবকে কিছু বলে না।
ওর এতোক্ষণ বেশ ভালো লেগেছিলো।কিন্তু এখন কেমন জানি দম বন্ধ হবার মতো লাগছে।মেহরাব গেস্ট দের সাথে কথা বলতে বলতে একটু দূরে সরে যেতেই রিমন মায়ার সামনে হাজির হয়।শয়”তানি হাসি দিয়ে বলে
“ভাবি আপনি কিন্তু অনেক “হট এন্ড ভেরি বিউটিফুল লেডি”আমার বন্ধু দেখছি একদম পার্ফেক্ট জিনিসটাই পছন্দ করে আনছে।গ্রামে এতো সুন্দর পদ্ম ফুল পাওয়া যায় আগে জানলে গ্রামেই আপনার মতো সুন্দরী খুঁজে বিয়ে করে নিতাম।
ওর এমন কথায় মায়ার গা গুলিয়ে আসে।মেহরাবের এ কেমন বন্ধু যার কথা বার্তা শুনে ওর ব”মি পাচ্ছে।
মনে মনে মেহরাব কে খুঁজছে একটু পর মেহরাব আসলে মায়াকে বেশ চিন্তা যুক্ত দেখতে পায়।কি হয়েছে দিজ্ঞেস করলে বলে
“আমার ভালো লাগছে না একটু ওয়াশ রুমে যেতাম।
মেহরাব ওকে ওয়াশ রুম পর্যন্ত নিয়ে যায় ।ও ভেতরে ডুকলে মেহরাব বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে।কাজ শেষে মায়া ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে দেখে মেহরাব নেই।এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে নেয় কোথাও দেখছে না।এর মধ্যে ও খেয়াল করে ওর কোমরের এক পাশের পেছানো শাড়ি থেকে সেপটিপিন খুলে শাড়ি একটু ঝুলে রয়েছে ।যার ফলে কোমরের এক পাশ দৃশ্যমান হয়ে আছে।ও তখনই সেপটিপিন খুঁজতে লাগে হয়তো এখানেই কোথাও পরেছে।খোঁজার এক ফাকে ওর কোমরে কারোর হাতের স্পর্শ পায়।শুধু তাই না শক্ত হাতের আঙ্গুল দ্বারা নরম জায়গাটা মুঠ করে একটু চেপে ধরে।সাথে সাথে মায়া ঘুরে তাকিয়ে সামনে যাকে দেখে তাতে স্তব্ধ ও বিমূর হয়ে যায়।
এমন কিছুর জন্য ও মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
মনে মনে ঘৃণার স্বরে বলে
“ছিঃ এটা সে কেমনে করতে পারলো?
চলবে……..
#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-১২
“রিমনের গালে কষে একটা চড় বসিয়ে দেয় মায়া।
শরিরের আপওিকর জায়গায় স্পর্শ এটা কোনো মেয়েই সহ্য করতে পারবে না।পুষ্পের বলা কথাটি মায়ার মনে পরে যায়।এ সব মানুষ রুপি পশুদের নিজ হাতে শায়েস্তা করতে হয় না হলে ওরা পিছু ছাড়ে না।আর সে জন্যই মায়া পেরেছে এই অসাধ্য কাজ টা করতে।তবে ঘৃণায় মুখ থেকে কথা বের হচ্ছিলো না মায়ার।সারা শরির ওর রাগে কাঁপছে।
রিমন গালে হাত দিয়ে রাগে ফুলতেছিলো মন চাচ্ছে এখনই মায়ার খারাপ কিছু একটা করে ফেলতে।কিন্তু এদিকে লোকজন চলে আসতে পারে।তাই ওভাবেই গাল ডলতে ডলতে রাগি দৃষ্টি নিয়ে বের হয়ে যায়।কয়েক সেকেন্ড পরেই মেহরাব মায়ার কাছে আসে।মায়ার চেহারায় কেমন ভয়ের ছাপ।মেহরাব জিজ্ঞেস করলে মায়া কিছু বলতে পারে না।কান্না করে দেয়
“কোথায় ছিলেন আমি তো খুজতেছিলাম।
“আরে কান্নার কি আছে তখন আমার কল আসছিলো আর এখানে ভালো কথা শোনা যায়নি বলে বাইরে গিয়েছিলাম কথা বলতে।আচ্ছা হয়েছি কি বলো আমায়।
মায়া চিন্তা করলো এসব কথা এখন বললে অনুষ্ঠানটাই বরবাদ হয়ে যাবে।মেহরাব এর রাগ সম্পর্কে মায়ার জানা নেই তবে একেবারেই যে দেখেনি তা নয়।তাই এখন না বলে পরে বলবে বলে ঠিক করে।মেহরাব অস্থির হয়ে পরে ওর কান্না দেখে।কিন্তু মায়া ওকে দেখতে না পেয়ে কান্না করে সেটাই বলে দেয়।মেহরাব একটু শান্ত হয় মায়াকে সঙ্গে নিয়ে সবার সামনে যায়।ঘন্টা খানেক সময় কাটিয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে মেহরাব মায়াকে নিয়ে চলে আসে।যতোক্ষণ ছিলো এর মধ্যে আর রিমন কে দেখা যায়নি তাই মায়ার মনে মনে স্বস্থি পায়।মায়াকে বাড়ি পৌছে দিয়ে গরুত্বপূর্ণ কাজ আছে সেটা বলে মেহরাব আবার গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায়।মায়া কিছু জিজ্ঞেস করে না।
ফ্রেশ হয়ে আফিয়ার রুমে যায়।আফিয়ার মায়াকে দেখে কাছে বসতে বলে।সময়টা কেমন কাটলো জিজ্ঞেস করে আফিয়া।কথাটা শুনে মায়ার সাথে ঘটা সময়টাকে কথা মনে পরে যায়।প্রথমে সময়টা ভালো কাটলেও পরের সময়টা তিক্ততায় কেটেছে।কিন্তু এ সব কথা তো আফিয়াকেও বলা যাবে না।তাই মুখে হাসির রেখা টেনে “ভালো কেটেছে মা” বলে দেয়।আফিয়া কিছু একটা ভেবে বলে “মন খারাপ নাকি মা বলো আমায়।” মায়া এবার আর কিছু বলে না।ওর চুপ থাকা দেখে আফিয়া বলে “বুঝতে পারছি বাড়ির জন্য মন খারাপ তাই না?আমার পাগল ছেলেটা সেই যে তোমাকে নিয়ে আসলো আর তো নিয়ে গেলো না।তুমি মন খারাপ করো না ওকে আমি বলবো তোমাকে নিয়ে যেতে।আসলে ও তো অনেক নিয়ম কানুন জানে না আর দেখোই তো কতো ব্যাস্ত তা ও তো এখন দেখছি সময় মতো বাসায় আসে ।আগে তো বেশির ভাগ সময়ই কাজের জন্য বাইরে থাকতো।
মায়া শুধু আফিয়ার কথা গুলো শুনছে।ওর আজ কথা বলতে ভালো লাগছে না।
“মা আমি একটু আপনার কোলে মাথা রাখি?
মায়ার এমন আবদারে আফিয়া খুশি হয়ে ওকে কাছে টানে।মায়া আফিয়ার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে।এ এক অন্যরকম অনুভূতি “মনে মনে ভাবছে আয়মনের সাথে ওর সম্পর্ক টা এমন হলে ক্ষতি কি ছিলো।একটা দিনের জন্যও মেয়ে মনে করে আদর ভালোবাসা দেয়নি।দিনের পর দিন কতো চেয়েছে পুষ্পকে দেওয়া আদর ভালোবাসার একটু ওকে দিক।কিন্তু না সবসময়ই ওকে অবহেলা করেছে।আয়মন কখনই বোঝোনি ও যে ভালোবাসার কাঙ্গাল।সে সব দুঃখ কষ্ট ছাপিয়ে উপর ওয়ালা ওকে সুন্দর একটা সংসার দিয়েছে।মেহরাবের আসল মা না হয়েও আফিয়ার মতো এমন একজন কে মা বলে ডাকতে পারছে এটাই ওর কাছে অনেক বড়ো পাওয়া।
আফিয়ার কোলে মাথা রেখেই মায়া ঘুমিয়ে যায়।আফিয়া আর জাগায়নি ওকে এক সাথেই ঘুমিয়ে পরে দুজন।
অনেক রাতে বাসায় ফেরে মেহরাব।রুমে মায়াকে দেখতে না পেয়ে আফিয়ার রুমের সামনে যায়।সাবধানে দরজা ঠেলে রুমে উকি দেয়।বুঝতে পারে আজ মায়া আফিয়ার সাথে ঘুমিয়েছে।আবার দরজা টেনে নিজের রুমে চলে যায়।খুব ক্লান্ত লাগছে একটা ভালো ঘুমের দরকার।রুমে গিয়ে শুয়ে পরে মেহরাব আজ ওর শান্তি মতো ঘুমাতে পারবে।
পরদিন সকালে মায়া রুমে এসে দেখে মেহরাব এখনও ঘুমিয়ে আছে।মায়া মেহরাবের পাশে এসে বসে ওর ঘুমন্ত মুখ খানা দেখতে থাকে।কি সুন্দর স্নিগ্ধ লাগছে মানুষটাকে দেখতে।কিন্তু সে কি উঠবে না?অফিসে যাবে না?এই ভেবে মেহরাব কে কয়েকবার ডাক দেয়।মেহরাব ঘুমের ঘোরেই সারা দেয় এপাশ থেকে ওপাশ ফিরে আবার ঘুমিয়ে যায়।মায়া ডাকলে এবার একটু বিরক্তি সুরে বলে “যাও তো ঘুমাতে দেও এমনিতেই অনেক রাত করে এসেছি আরো ঘুমাবো আমি।মায়া আর ডাকে না কিন্তু ভাবতে থাকে অনেক রাতে এসেছে মানে?এতো রাত পর্যন্ত কই ছিলো ?
এতো দিন ধরে মায়াকে রান্না বান্নার কাজে হাত লাগাতে দেয়নি সিতারা ,যেহেতু মেহরাবের কড়া নির্দেশ ছিলো।কিন্তু মায়ার আর ভালো লাগে না হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে।ওর মন চায় নিজের হাতে রান্না করবে।সিতারাকে আগেই বলে রেখেছে আজকের রান্নাটা ও নিজের হাতেই করবে।মেহরাব কি কি খেতে পছন্দ করে সেগুলো আফিয়ার থেকে শুনে ও সব রান্না শেষ করেছে।এখন ওর শান্তি লাগছে তবে মেহরাবের পছন্দ হবে কিনা এ জন্য একটু চিন্তায় আছে।দেখা যাক কি হয়।
অনেক বেলা করে মেহরাবের ঘুম ভাঙ্গে।ফ্রেশ হয়ে অফিসের কিছু জমানো কাজ করছিলো।মায়া এসে ওর পাশে দাড়ায় কিছু বলবে কিনা মেহরাব জানতে চায়।
“আপনি খাবেন না ?
“হুম খাবো যাও আসতেছি।
মেহরাবের গম্ভির স্বরে কথা বলাটা মায়ার পছন্দ হলো না।এমনভাবে তো সে কথা বলে না।মনে হচ্ছে তার কিছু একটা হয়েছে,ও জানে জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলবে না তাই আর কিছু না জিজ্ঞেস করে চলে যায়।
টেবিলে সবাই একসাথে খেতে বসেছে।মেহরাব খাচ্ছে কিছু বলছে না কিন্তু মায়া অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে কিছু শোনার জন্য।পাশ থেকে আফিয়া মেহরাব কে উদ্দেশ্যে করে বলে “খাবারটা কেমন হয়েছে আব্বু?
মেহরাব তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া না করে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো “ভালো হয়েছে তবে প্রতিদিনের চেয়ে একটু আলাদা স্বাদ পাচ্ছি।
হুম পাবে ই তো আজকের সব রান্না মায়া করেছে যে।
মেহরাব কথাটা শুনে মনে মনে খুশি হয় ও ভেবেছিলো মায়া রান্না পারলেও হয়ত সেটা মোটামুটি কিন্তু না ওর ভাবনার চাইতে অনেক গুন বেশি ভালো হয়েছে।
মায়ার দিকে চেয়ে একটা মিষ্টি হাসি দেয়।মায়া ওর হাসিটা দেখেই মনটা খুশিতে ভরে ওঠে।
ঠিক ঐ সময়ে মেহরাবের ফোনে কল আসে।কথা বলে কল কেটে দিয়ে কতোক্ষন চুপ থেকে আবার খেতে শুরু করে।আফিয়া কিছু একটা টের পেয়ে জিজ্ঞেস করলো “কে ফোন করেছিলো?কোনো সমস্যা আব্বু?
“সিয়ামের কল ছিলো রিমন নাকি হসপিটালে ভর্তি।
কথাটা শুনে মায়ার মন আৎকে ওঠে।আফিয়া জিজ্ঞেস করে কিভাবে এ সব হয়েছে।
“রাতে নাকি ওকে কয়েকজন অনেক মেরেছে আর খুব বাজে ভাবে ,অবস্থা নাকি বেশি ভালো না।
এ টুকু শুনে মায়া আরো ভাবনায় পরে যায় কে মারতে পারে?তবে যেই মারুক লোকটা অনেক খারাপ তার শাস্তি পেয়েছে।কিন্তু ওর মাথায় আসছে না কে মারতে পারে?মায়া মেহরাবের দিকে দৃষ্টি দেয় খুব আরাম করে খাচ্ছে।আচ্ছা কোনো ভাবে এর সাথে মেহরাব জড়িত নয় তো আবার?কিন্তু এ সব মায়া কি ভাবছে?মায়া তো মেহরাবকে কিছুই বলেনি আর ও তো এ সবের কিছুই জানো না।মন কে বুঝ দেয় না জেনে বুঝে মেহরাব কে সন্দেহ করা ঠিক হবে না।
খাওয়া শেষ করে মেহরাব বেরিয়ে পরে পসপিটালের উদ্দেশ্যে ।হসপিটাল গিয়ে শুনে রিমন কে ওপারেশন থিয়েটার নেওয়া হয়েছে।ওর বাবা মা মেহরাব কে দেখে এগিয়ে আসে। ভিষণ কান্না কাটি করতে থাকে।তাদের শান্তনা দেয় রিমনের কিছু হবে না বলে।কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বের হয়ে আসলে শুনতে পায় এখন অনেকটা বিপদ মুক্ত কিন্তু এতো বাজে ভাবে হাত আর পা ভাঙ্গছে যে ঠিক হতে বছর খানিক এর ও বেশি সময় লাগবে।ওখানে অনেক ক্ষণ থেকে মেহরাব বাসায় চলে আসে।আজ আর অফিস যায়নি।বাসায় আসতেই আফিয়া মেহরাবের কাছ থেকে রিমনের সম্পর্কে জানতে পারে।মায়ার আর সাহোস হয় না ওকে রিমনের কথা জিজ্ঞেস করার তবে ও পাশ থেকে সবটা শুনেছে।
দুই দিন পরে,
মায়া আজ ওদের গ্রামের বাড়ি যাবে খুব খুশিতে আছে ও।সেই যে হঠাৎ মেহরাবের সাথে বিয়ে আবার গ্রাম থেকে শহরে আসা এর মাঝে আর যাওয়া হয়নি।শুধু সবার সাথে ফোনেই যোগাযোগ হয়েছে ।মাঝে মাঝে মায়ার মন খারাপ দেখে আফিয়া মেহরাব কে বলে গ্রাম থেকে ঘুরে আসতে।মেহরাবের কোনো ইচ্ছে ছিলো না ওকে নিয়ে যাওয়ার।এমনিতেই মায়াকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় থাকে ও।হয়তো সেটা মায়া নিজেও জানে না।
আম্মিজানের কথায় আর না করতে পারে না।কিন্তু ওর একটাই কথা সকালে যাবে বিকেলে আবার চলে আসবে।সেটা শুনে মায়ার প্রথমে মন খারাপ হলেও মেহরাবের কথা মেনে নেয়।বিয়ের পরে এই প্রথম যাচ্ছে তাই আগেই মেহরাব অনেক কেনাকাটা করে রাখে।ওদের সাথে ফিরোজ ও যাবে।মনে হচ্ছে মায়ার চাইতে ফিরোজবেশি খুশি কিন্তু ব্যাপারটা কি হতে পারে?
খুব সকালে বেলা ওরা রওয়ানা হয়।
মায়ার কাছে আজকের এই সময়টা বেশ লাগছে।যেদিন ও প্রথম এসেছিলো ঐ দিনের যাএাটা ছিলো সম্পূর্ণ আলাদা।রাতের অন্ধকার,বধূবেশে কান্নারত অবস্থা,অচেনা মানুষ টার পাশে বসা ইশ ঐ দিনের কথা মনে পরতেই আপন মনে হেসে ফেলে মায়া।মেহরাব ওর হাসির কারন জানতে চাইলে ও “কিছুনা”বলে মাথা নাড়ায়।
কোনো কথা ছাড়াই মায়ার খোপা করা চুল গুলো খুলে দেয়।মায়া এতে অবাক হয় না এটা মেহরাবের একটা অভ্যাস।মায়াকে বলে হয়েছিলো ওর সামনে চুল খোলা রাখতে কিন্তু মায়া সেটা না করলে মেহরাব নিজেই চুল গুলো খুলে ফেলে।গাড়ির কাঁচ নামানো বিধায় মায়ার খোলা চুল গুলো বাতাসে উড়ছে।একটা সময় মেহরাবের চোখে মুখে ওর অবাধ্য চুল গুলো এলো মেলো ভাবে আছড়ে পরছে।মেহরাব বিরক্ত হয় না।কেনোই বা হবে মায়াবিনীর এই স্বর্ণকেশ গুলো যে ওর বড়ই প্রিয়।
দুপুরের আগেই ওরা গ্রামে পৌছে যায়।ওরা আগে মায়ার বাড়িতে যায়।অনেকদিন পর মেয়েকে পেয়ে কাশেম মিয়া আবেগ আপ্লুত হয়ে পরে।পুষ্প তো সেই খুশি।আয়মন এখন একটু নরম স্বভাবের হয়েছে আর সেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক।মেয়ে এখন বড়োলোক বাড়ির বউ।আগের মতো অবহেলা করলে তো ওরই ক্ষতি।তাই মায়াকে দেখে বেশ হাসি খুশি ভাবে কথা বলেছে।জামাইর তরফ থেকে আনা জিনিস পএ দেখে আয়মনের চোখ বড়োবড়ো হয়ে যায়।এতো সব পাবে এটা ওর কল্পনার বাইরে।
ওরা আসবে জেনে কাশেম মিয়ার বৌকে আজ আর বেশি কিছু বলা লাগেনি।নিজের থেকেই অনেক কিছুর আয়োজন করেছিলো।কাশেম মিয়া বুঝতে পারে আয়মন এ সব কেনো করছে ।সে তো কোনো কিছু স্বার্থ ছাড়া কারো না।তারপরও এটা ভেবে খুশি হয় বউয়ের মনে যাই থাক মেয়ের জামাইকে সময় মতো আদর আপ্যায়ন টা করুক তাতেই সম্মান টা তো বাঁচবে।
এ বাড়ি এসে মেহরাবের চাইতে ফিরোজ কে বেশি খুশি খুশি লাগছে।ওকে দেখে মনে হচ্ছিলো এ বাড়ির নতুন জামাই মেহরাব নয় ফিরোজ নিজেই।
আজ মায়াকে কোনো কাজে হাত লাগাতে দেয়নি আয়মন।বড়োলোক বাড়ির বউ বলে কথা।পুষ্প কে সাথে নিয়ে আয়মন সবাইকে খাবার দাবার পরিবেশন করে।মোটামুটি অনেক পদের খাবারের আয়োজন করেছে।এ সব দেখে মায়া অনেক খুশি হয়।ও তো ভেবেছিলো আয়মনের আদর যত্ন মেহরাব পাবে না।কিন্তু এসব কেনো করা হয়েছে এটা মায়া বুঝতে না পারলেও মেহরাব ঠিক বুঝতে পারে।
মেহরাব তপ্ত নিশ্বাস ছারে আর ভাবে “প্রতিষ্ঠিত না হলে সত্যি পৃথিবীতে কারোর কোনো মূল্য নেই।একটা সময় যে মা তার সৎ মেয়েকে নে”শা খোরের কাছে টাকার জন্য বিক্রি করতে দ্বিধা বোধ করেনি আজ সেই মা তার সৎ মেয়েকে কেমন আদর যত্নে নিজ হাতে বেড়ে খাওয়াচ্ছে।
এদিকে আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত ফিরোজের দৃষ্টি একজনের দিকেই আবদ্ধ।কিন্তু যার পানে এই দৃষ্টি সে তো ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারছে না।ইশ শেষমেশ কিনা পিচ্চি মেয়ের প্রেম পরলো ও?এ কথা ও কাকে বলবে কিভাবে বলবে?মেহরাব কে তো নাই শেষে কিনা বড়োভাই ওকে ভুল বুঝবে।তাই এখন চুপ থাকাই ভালো।মনে মনে ভেবে নেয় “কোনো একদিন সুযোগ বুঝেই পছন্দের মানুষটাকে প্রপোজ করে দিবে।”
চলবে…..
#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-১৩
“পূর্ণিমা রাত আর তারার মেলা আকাশে…শুধু তুমি নেই এ সময়…আমারই পাশে।”
গুনগুনিয়ে মনের দুঃখে গান গাইছে ফিরোজ।গ্রামে বেশ আনন্দ নিয়ে বেড়াতে গেলেও আসার পর থেকেই মন খারাপ।পুষ্পের সাথে ইনিয়ে বিনিয়ে মনের কথাটা জানাতে চাইলেও পুষ্প সে গুলোকে পাওা দেয়নি।এমন ভাব যেনো ভালোবাসা মানে কি সেটাই ও বোঝে না।নিজেই নিজেকে বলতে থাকে “আরে আজকাল তো সিক্সে পড়া মেয়েরাও এসব বোঝে আর এই মেয়ে এতো বড়ো হয়েও কিছু বোঝে না? নাকি না বোঝার ভান করে?আসার আগে ওর সাথে করে নিয়ে যাওয়া ছোট্ট একটি গিপ্ট সুযোগ বুঝে পুষ্পকে দিতে চাইলে পুষ্প শর্ত জুড়ে দেয়।গিপ্ট নিবে তবে সেটা ভাই হিসেবে অন্য কিছু নয়।
নিজের কপাল চাপরে বলতে থাকে”আরে কোন জন্মের ভাই লাগি ওর”এই মাইয়্যা কবে বুঝবে?কি আর করার কেউ দেখে ফেলার ভয়ে পুষ্পের কথায় কাজি হয়ে গিপ্ট টা ওর হাতে দেয়।ঐ সময় ফিরোজের মুখের এক্সপ্রেশন দেখে পুষ্প অনেক হাসে।হয়তো সে হাসিটা ফিরোজের অন্তরালে থাকায় ও কিছুই টের পায় নি।তবে পুষ্পের হাসির পেছনে একটা অন্যরকম অনুভূতির রেশ ছিলো সেটাকে কি বলা যায়..?
“ভালোলাগা নাকি ভালোবাসা..?
“কয়েকদিন ধরে লেখাপড়ার মন বসছে না মায়ার।মাথায় শুধু অন্য কিছু ঘুরছে।শতো চেষ্টা করেও ঝেরে ফেলতে পারছে না।আবার এ সব নিয়ে বেশি ভাবতেও পারছে না কি করবে এখন ও?
একদিনের জন্য বাড়িতে গিয়ে শহরে ফেরার আগে ওর বেস্টু আয়েশা দেখা করার জন্য ওদের বাড়ি আসে।কিছুক্ষণ একাকি আলাপ করে।তখন আয়েশা ওর কাছ থেকে জানতে পায় মেহরাব আর ওর মাঝে এখনও ঘনিষ্ট কোনো সম্পর্কই গড়ে ওঠেনি।আয়েশার শুনেই তো মাথায় হাত।এ মেয়ে কেমনে পারলো এভাবে থাকতে?তাও এমন একটা হিরোর মতো বর সামনে পেয়ে।
“মায়ারে আমি তো এমন একটা বর পেলে নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে বরের বুকের সাথে লেপ্টে থাকতাম।আর তুই কিনা..আচ্ছা তোর কি কোনো সমস্যা আছে মানে শারিরিক?
ওর কথা শুনে মায়া টাস্কি খায় এই মেয়ে কি বলে ..!
“আরে আমার কেনো সমস্যা থাকবে?আর শোন আমি কেনো তার কাছে সেধে সেধে যাবো।সেই তো আমাকে পছন্দ করে না।যদি করতো আমাকে কি দূরে রাখতে পারতো বল সই?
ওর এমন বোকা মার্কা কথা শুনে আয়েশার রাগ হয়।এই মেয়ে এতো আলাভোলা ক্যান।
“আরে গা”ধী ভাইয়া তোকে পছন্দ না করলে বিয়েটা হতো না।আচ্ছা ভেবে দেখ তো..বিয়ের দিন সে যা যা করছে এ সব কি অন্য কেউ হলে করতো?
মায়া ভেবে দেখে হা তাই তো।তার জায়গায় অন্য কেউ হলে এতো কিছু করতো না।হয়তো বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়ে তার কাজটা শেষ করতো।কিন্তু সে কখনই একটা খারাপ মানুষের কাছ থেকে বাচিয়ে মায়ার দায়িত্ব নেওয়ার মতো সৎ সাহোস দেখাতো না।
গ্রাম বলে কথা…এখানে মেয়েদের বিয়ের দিনে বিয়ে ভাঙ্গলে সেই মেয়ের একটা খারাপ কলঙ্ক রটে যায়।আর এসব মেয়ের বিয়ে দেওয়াটা সেই পরিবারের বেশ ধকল পোহাতে হয়।কিন্তু ওর বেলায় সেটা হয় না।মেহরাব ওর এক বিন্দু সম্মান হানি হতে দেয় নি।বরং সম্মানের সাথে বিয়ে করে একটা সুখী সুন্দর জীবন দিয়েছে।যেটা ও আজও বুঝতে পারেনি।ওর শুধু মনে হয়েছে মেহরাব যা যা করেছে সবই ওকে করুনা করে।কিন্তু করুনা করে যে বিয়ের মতো এতো বড়ো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।যদি এটা করুনা বা সাহায্য হতো তা হলে সেটা বিয়ের মাধ্যমে নয় বরং টাকা দিয়ে সেই অবস্থার ব্যাবস্থা নেওয়া হতো।
আয়েশা আরো বলে
“আমি শতোভাগ শিওর ভাইয়া তোকে অনেক ভালোবাসে।হয়তো সে তোর কাছ থেকে সবটা আশা করছে।তাই স্পেস দিচ্ছে তোকে।তুই নিজে তাকে কাছে টেনে নিবি,ভালোবাসবি,তাকে মনের কথা গুলো বলবি।না হলে কিন্তু পরে পস্তাবে হবে।
মায়া এ সব শুনে চুপ করে থাকে।সত্যিই তো আয়েশার প্রতিটি কথায় যুক্তি আছে।আর এ সব বোঝার মতো গিলু ওর মাথায় নেই।আয়েশা ওকে আরো অনেক কিছু বলেছে বুঝিয়েছে।এখনও সময় আছে আর সময় থাকতেই নিজের কাছের মানুষটাকে আরো কাছে টেনে নেওয়ার জন্য যা যা করার করতে হবে।না হলে পরে ভিষণ ভাবে পাস্তাতে হবে।
হতাশার গ্লানিতে ভুগছে মায়া।এখন আর আফসোস নয় বরং মিশনে নেমে পরতে হবে।এতোদিনে ও পুরোপুরি বুঝতে পেরেছে মেহরাবের প্রতি ওর যেই অনুভূতি কাজ করে সেটা আর কিছু নয় সেটাই ভালোবাসা….হা
“ভালোবাসা নামক মায়ায় মেহরাব নামক রোগে ওকে ধরেছে।যেটার রোগ প্রতিশোধক এন্টিডোস শুধুমাত্র মেহরাবের নিকটই আছে।”
এ সব ভাবতেই তনু মনে নতুন প্রেমের উওাল ঢেউ খেলে যায় মায়ার মনে।এতো লজ্জা লাগছে কেনো মানুষটার কথা ভাবতে?
“লেখাপড়া বাদ দিয়ে শুধু কলম কাম”ড়ালে হবে?
কথাটা শুনেই পাশ ফিরে চায় মায়া।মিনিট খানেক ধরে মেহরাব ওর পাশে এসে দাঁড়ানো।মায়ার সে দিকে খেয়াল নেই।ভাবনার জগতে প্রবেশ করে বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে মুখে কলম পুরে কাম”ড়াচ্ছে।মেহরাবের কথায় মুখ থেকে কলম পরে যায়।ওকে দেখে বেশ লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে বই দিয়ে মুখ লুকায় মায়া।এই অবস্থা দেখে মেহরাব এর বুঝে আসে না এর আবার কি হলো?
“সামনে পরিক্ষা তাই আজে বাজে চিন্তা না করে মন দিয়ে লেখাপড়া করো।ভালো রেজাল্ট করতে হবে।
কথাটা বলে মেহরাব রুম থেকে যেতেই মায়া হাফ ছেরে বাচে।ইশ এমন লাগছে কেনো?আগেই তো ভালো ছিলাম আর এখন তো মনে হচ্ছে যখন তখন হার্ট এটাক হয়ে যাবে।
মাথা থেকে আজেবাজে সব চিন্তা ঝেরে ফেলে মায়া ওর পরিক্ষার দিন গুলো ভালোভাবেই শেষ করে।মেহরাব ওকে সবসময় নজরে রেখেছে।একটু হেলাফেলা করতে দেয়নি।এর মধ্যে আফিয়া চলে যেতে চাইলে মায়ার পরিক্ষার জন্য রয়ে গেছে।তা ছাড়া মায়ার সাথে আফিয়ার সম্পর্ক টা বলতে গেলে বন্ধুর মতো হয়ে গেছে।পরিক্ষা শেষ হতেই আফিয়া আর দেরি করতে চায় নি।অনেক দিন হলো এসেছে এবার চলে যেতে চায়।
আফিয়ার সবসময় মেহরাব কে নিয়ে একটা দুঃচিন্তা ছিলো।কিন্তু এখন আর কোনো ধরনের চিন্তা নেই।আফিয়ার বিশ্বাস মায়ার মতো মেয়ে মেহরাব সহ পুরো সংসারটাকে ভালো ভাবেই সামলাতে পারবে।
সকালের নাস্তা সেরে আফিয়া যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়।আফিয়াকে জড়িয়ে ধরে মায়া কাঁদছে।মায়ের মতো আদর ভালোবাসা পেয়ে মা হারা অনাথ মেয়েটি এতোদিন ভুলেই গিয়েছিলো সব দুঃখ কষ্ট গুলো।আফিয়া শান্তনা দেয় আবার আসবে শুধু তাই না মায়াকে কথা দেওয়া লাগছে শিগ্রই আসতে হবে।আফিয়া ওর মাথায় হাত রেখে মন ভরে দোয়া করে দেয়।আর বলে
“আবার যখন আসবো তখন যেনো একটা সুখবর পাই ।আমি কিন্তু অপেক্ষায় থাকবো।”
মায়া খুব লজ্জা পায়।পাশ থেকে মেহরাব এ কথা শুনে মনে মনে বলে
“এখন পর্যন্ত বাসর ই সারতে পারলাম না আর দাদী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।
“কিছু বললে আব্বু?
“না আম্মিজান কিছু না চলেন এবার যেতে হবে।”
আফিয়াকে নিয়ে মেহরাব বের হয়ে যায়।
—-
মীর ম্যানশন আজ বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।মায়ার কিছু ভালো লাগছে না।সারাদিন শায়লা আর সিতারার সাথে সময় কাটিয়েছে।কিন্তু এখন তো কেউ নেই।সন্ধ্যার পরে মেহরাব আসে।ফ্রেশ হয়ে ওর কিছু কাজ করছিলো মায়া তখন অন্য রুমে ছিলো।রুমে এসে দেখে মেহরাব নেই।বের হয়ে সবখানে দেখে কোথাও নেই।ভাবছে গেলো কই?কিছু একটা মনে করে ছাদের দিকে যায়।আজকের রাতটা জোস্না রাত।আলো ছাড়াও বাইরের সব কিছু স্পষ্ট দৃশ্যমান।মায়া ছাদে উঠে এদিক সেদিক চোখ বুলিয়ে ছাদের এক কোনায় মেহরাব কে দেখতে পায়।ছাদের রেলিংয়ে দু হাত রেখে দূরে তাকিয়ে আনমনা হয়ে আছে।
মায়া বুঝতে পারে ওর কি হয়েছে।মেহরাবের এক হাতের ওপর মায়ার হাত রাখে।মেহরাব দৃষ্টি ঘুরিয়ে মায়ার দিকে চায়।
“তুমি এখানে কিছু বলবে?
“নাহ
“তা হলে এসেছো কেনো?
“আপনাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না বলে।
এবার মেহরাব বুকে দু হাত গুঁজে মায়ার উদ্দেশ্য বলে
আমাকে কেনো খুজতেছো কি দরকার বলোতো?
“নাহ এমনি বাদ দেন তো এসব ।আপনার মন খারাপ সেটা আমি বুঝতে পারছি।
“তাই বুঝি ?মনে হচ্ছে আমাকে একটু একটু বুঝতে শিখে গেছো।
“পুরোটা না ঐ একটু আধটু।
“ওটা হলেই চলবে।
..
“মায়া”আজ তোমাকে আমার অজানা কিছু কথা বলতে চাই।
মায়া ওর কথা শুনে নিরব হয়ে আছে।অতি আগ্রহের সাথে মেহরাবকে বলে-
“আপনি বলুন আমি সবটা ধৈয্য নিয়ে শুনবো।
মেহরাব বলতে শুরু করে
“আমার বাবা মীর মোশারফ হুসাইন ছিলেন এই শহরের নাম করা একজন বিজনেস ম্যান।আমার দাদাও ছিলেন ধনী ব্যাক্তিদের একজন।বাবা লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজেদের ব্যাবসা সামলাতো।একটা সময় নিজেই সবটার দায়িত্ব নেয়।পরিপূর্ণ বয়স হওয়ায় দাদাজান তাকে তার পছন্দের মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করে।কিন্তু বাবা পছন্দ করতো আরেকজনকে।এদিকে দাদাজানের কথার ওপর কথা বলার সাহোস ছিলো না তার।দাদাজানের পছন্দের মেয়ের সাথে বিয়ে হয় আমার বাবার।একটা দিনের জন্য সে তার নতুন বউকে স্ত্রীর মর্যাদা দেয়নি।পরবর্তীতে সে জানতে পারে আমার বাবার পছন্দের মেয়ের কথা।স্বামীর এমন অবহেলা সহ্য করতে পারে না,যেখানে অন্য একজনের সাথে সম্পর্ক সেখানে এই ভাবে তার সংসারে পরে থাকাটাই অনর্থক।তা ছারা সে ছিলো একজন শিক্ষিতো মেয়ে।সময় থাকতে সেপারেশন করলে দুজনের জন্যই মঙ্গল জনক।তাই বাধ্য হয়ে পারিবারিক ভাবেই ডিভোর্স হয় দুজনের মধ্যে।
বাবা অনেক খুশি অপরদিকে দাদাজান অখুশি থাকলেও পরবর্তীতে মত দেয় ছেলের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করানোর জন্য।বিয়েটাও হয়ে যায়।অন্যদিকে বাবার প্রাক্তন স্ত্রীর ও খুব ভালো জায়গায় বিয়ে হয়ে যায়।আমার বাবার সংসারটা খুব সুন্দর ভাবে কাটতে থাকে।এর মধ্যে অসুস্থতার জন্য দাদাজান এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে যান।বাবা একা হয়ে যায়।বছর খানেক বাদে মীর পরিবারের ঘর আলো করে একটি পুএ সন্তানের জন্ম হয় আর সেই সন্তানই আজকের আমি।
কথা গুলো বলে মেহরাব থামে।মায়া আগ্রহ নিয়ে বলে
তারপর..?
মেহরাব আবার বলতে শুরু করে
“আমাদের পরিবার টা বেশ হাসি খুশিতেই দিন কাটতে লাগে।তবে ভালোর মধ্যে খারাপের উপস্থিতি ঘটে।এমন সুখি পরিবারের প্রতি তখন কু’নজর লেগে যায়।
আমার বয়স যখন পাঁচ বছর তখন বাবা মা আমি কোনো এক জায়গা বেড়াতে যাই।ঠিক আসার পথে বড়ো ধরনের এক্সিডেন্ট হয়।সেখানেই স্পট ডেট হয় বাবা মার।কিন্তু অলৌকিক ভাবে উপরওয়ালা আমাকে রক্ষা করে।বেচে যাই আমি।আমাদের সবাইকে হসপিটাল নেওয়া হলে সেখানে উপস্থিত হয় বাবার দুঃস্পর্কের চাচা।আমার বাবা একমাএ ছেলে ছিলো।আমার কোনো আপন চাচা ফুপি ছিলো না।এই চাচা আবার বাবার ছোটো অংশের বিজনেস পার্টনার ছিলো। চাচা আমার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই কোনো একজন শুভাকাংক্ষি আমার দায়িত্ব নিয়ে নেয়।শুধু আমার নয় আমাদের বাড়ি বাবার ব্যাবসা এসবের ও দেখাশুনা করতো।সেদিনের পর থেকে তার নিজের সন্তানের জায়গায় আমাকে স্থান দেয়।আর সেই থেকে এই পর্যন্ত আমি তার ছেলে হয়েই আছি।আর সেই হৃদয়বান মহিয়সী নারীই হলো আমার আম্মিজান “আফিয়া আনজুম”
এ পর্যন্ত শুনেই মায়ার স্তব্ধ হয়ে যায়।ওর মুখ দিয়ে আর কথা বের হয় না।
“আমি জানি এসব কথা কেউ শুনলে বিশ্বাস করবে না কিন্তু এটাই চিরন্তন সত্য।বাবার সাথে বিচ্ছেদ হলেও আম্মিজান সবসময় তার খোঁজ খবর নিতেন।এমনকি আমার ও।তাইতো এক্সিডেন্ট এর কথা শুনে অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন আর যখন শুনেছে আমি বেচে আছি ভালো আছি তখনই তার স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে হসপিটাল চলে এসেছিলেন।তার স্বামী একজন বড়ো মনের মানুষ ছিলেন।তাইতো আম্মিজানের কোনো ইচ্ছাতে সে অমত করেনি বরং তাকে সবসময় সাপোর্ট করেছিলেন।
আমি জানি আম্মিজান এসব কথা তোমাকে বলতে চেয়েছিলো।কিন্তু সে কখনই এ সব কথা বলতে পারতো না।তা ছাড়া সে চেয়েছিলো আমি তোমাকে এ সব বলি।
তারপর..?
আস্ত আস্তে বড়ো হতে থাকি।আম্মিজান তার নিজের ছেলে মেয়েদের মতো সমান আদর ভালোবাসা দিতো।মানুষের মতো মানুষ হবার জন্য সবসময় সচেষ্ট থাকতো।বাবা মা হারা এতিম ছেলেটাকে কখনও কোনো কষ্টের আঁচ লাগতে দেয়নি।আমার নিজের মা সে নয় এটা আমি এক সেকেন্ডের জন্যও ভাবতে পারিনি।আসলে ভাবার সেই সুযোগ টা সে আমাকে কখনও দেয়নি।
আম্মিজানের এতো খেয়ালের মাঝেও একটা সময় বিগরে গিয়েছিলাম।খারাপ বন্ধুদের সাথে মিশতাম আড্ডা দিতাম।বলতে গেলে অন্ধকার জগতে প্রবেশ হয়ে গিয়েছিলো আমার।এ সব জানতে পেরে আম্মিজান অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন।তার ইচ্ছা ছিলো আমাকে বিদেশ পাঠিয়ে দিবে ।কিন্তু আমার অনিচ্ছা থাকায় সেটা আর হয় না।আমার খারাপ পথে যাবার কথা শুনে আম্মিজান অসুস্থ হয়ে পরে।ডাক্তার জানায় তার বড়ো ধরনের স্ট্রোক হয়েছে।এর পরে যদি আরো মারাত্মক কোনো আঘাত পায় তা হলে এর চাইতে খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে।
সত্যিকার অর্থে ঐ দিন মা হারাবার ভয়টা আমারা ভিতর ডুকে পরে।এক মাকে হারিয়েছি এ মাকে আর হারাতে চাই না।সিদ্ধান্ত নেই খারাপ সব কিছু ছেরে সুস্থ্য ভাবে ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলবো।আর সেটাই করি।আম্মিজান অনেক দিন আমার সাথে কথা বলেনি।আমার প্রতিটা দিন খুব কষ্টে কাটতো।আম্মিজানের উপেক্ষা আমি সহ্য করতে পারতাম না।একটা সময় উপর ওয়ালা সব ঠিক করে দেয়।আবার আমি আমার জীবনে আগের সেই আম্মিজানকে ফিরে পাই।সব কিছু ক্ষমা করে তার আরেক ছেলে মেহরাব কে বুকে টেনে নেয়।
কথা গুলো বলে মেহরাব দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।
মায়া ভাবতে থাকে এমন মানুষ ও আছে দুনিয়াতে ? হা আছে আর আছে বলেই দুনিয়াটা আজও সুন্দর রূপে আছে।আজও সে সকল মানুষ আছে বলে তাদের সান্নিধ্যে থেকে দুঃখি মানুষগুলো সুখে আছে।ভালো থাকুক সবসময় ভালো মনের মানুষ গুলো।
চলবে…..
(ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন )