#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-৯
বৃষ্টির মৌসুম যখন তখন আকাশের বুকে মেঘ জমে।মনে হচ্ছে নিত্য দিনের মতো আজও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।মায়া ওর রুমের বারান্দায় বসে আছে।ভাবছে অনেক দিন বৃষ্টিতে ভিজে না আজ ভিজবে।তাই অপেক্ষা করছে কখন বৃষ্টি হবে।
“দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন কেটে গেছে।মেহরাবের সাথে ওর সম্পর্কটা আগের মতোই আছে।এখন অব্দি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে রূপ নেয় নি দুজনের মাঝে।এ ব্যাপারে না মায়া কিছু ভাবছে না মেহরাব ওকে কিছু বলছে।তবে মায়া যখন মেহরাবের সামনে আসে ওর মনে অন্যরকম একটা অনুভূতির সৃষ্টি হয়।কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে পারে না।পারবে কি ভাবে প্রেম ভালোবাসা এ সব সম্পর্কে ও জ্ঞাত নয়।ওর জীবনে যে ভালোবাসার বড্ড অভাব ছিলো হয়ত সে জন্য এটার সম্পর্কে অবগত নয়।”
ভাবনার মাঝেই আকাশের বুক চিরে বৃষ্টি পরতে শুরু করে।মায়া উৎফুল্ল চিওে বসা থেকে উঠে সোজা সাদের দিকে পা বাড়ায়।শায়লা আর সিতারা তখন রান্নার কাজে ব্যাস্ত।ছাদে যেতেই বৃষ্টির প্রখরতা আরো বৃদ্ধি পায়।মায়া মনের আনন্দে দুহাত ছড়িয়ে ভিজতে থাকে।কয়েক মিনিট পরই মেহরাব গাড়ি নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।গাড়ি থেকে নামতেই ছাদের দিকে নজর যায়।মুহূর্তে চোখ দুটো আটকে যায় বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা ওর একান্ত রমনীর দিকে।যাকে এ অবস্থায় দেখার অধিকার শুধু ওর ই।
“স্যার ভিজে যাচ্ছেন তো বাসার মধ্যে যান”ড্রাইভারের কথা শুনে নজর ফিরিয়ে বাড়ির মধ্যে ডুকে যায় মেহরাব।রুমে না গিয়ে সোজা ছাদের দিকে হাটতে লাগে।ছাদে পৌঁছাতেই আরেক দফায় ঝটকা খায় ও।এক রাশ খুশি আর আনন্দ নিয়ে মায়া বৃষ্টি বিলাস করছে।মায়ার গায়ের পোষাক টা ভিজে শরিরের সর্বাঙ্গের ভাজ দৃশ্যমান হয়ে ওঠেছে।ওর অজান্তে চুল গুলো খোপা থেকে কখন খুলে গেছে একদমই টের পায়নি।লম্বা চুল গুলো ভিজে পিঠের সাথে লেপ্টে আছে।
এই মুহূর্তে মেহরাবের নিজেকে সামলানো টা বড়ো কষ্ট কর হয়ে দাঁড়িয়েছে ।এমন দৃশ্য ও দেখবে এটা ভাবতেই পারেনি।ধীরে ধীরে পা বাড়াচ্ছে সামনের দিকে।একটা সময় মায়ার পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়।মেহরাব ও ভিজে একাকার আর পারছে না নিজেকে সামলাতে।মায়ার দু”কাঁধে হাত দিয়ে নিজের দিকে ফেরায়।মায়া ওর স্পর্শে কেপে ওঠে।মাথা নিচু করে আছে মায়া,মেহরাব বুঝতে পারছে মেয়েটার শরির কাঁপছে।হয়ত প্রিয় মানুষটা ছুয়েছে বলে।থুতনি ধরে উঁচু করে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে দেখে।আবেশে চক্ষুদ্বয় বন্ধ করে আছে মায়া।গোলাপের পাপরির ন্যায় অধর জোড়া ও কাঁপছে।মেহরাবের মনে নিষিদ্ধ চাওয়া গুলো হুট করে জেগে ওঠে।খুব করে চাইছে গোলাপী অধরজোড়ার সুধা পান করতে।ধীরে ধীরে মেহরাব ওর ওষ্ঠদ্বয় এগিয়ে নেয় মায়ার পানে ঠিক তখনই এক পশলা বৃষ্টির ঝাপটা ওর দিকে আছরে পরে।
মেহরাব ভিষণ বিরক্ত হয় এতো সুন্দর মুহূর্তে বাধা প্রাপ্ত হওয়াতে।
মায়ার হাসির শব্দে ওর ভাবনার অবসান ঘটে।তারমানে এতোক্ষণ যা ঘটেছে সবটাই ওর কল্পনা?দূর আজও কাজটা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।
মায়া বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে একটা সময় পেছন ফিরে মেহরাব কে দেখে চমকে ওঠে।কিন্তু মেহরাব মায়ার দিকে একধ্যানে চেয়ে আছে।এটা দেখে মায়া কয়েক বার ডাকলে ওর কোনো হেলদোল না দেখে ছাদে জমানো পানি দুহাতে ভর্তি করে মেহরাবের দিকে ছুরে মারে।তবে এতেও ওর কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে একটু ভরকে যায়।ভেবেছে মেহরাব মনে হয় ওর প্রতি রেগে আছে।নিমিষেই ওর মুখের হাসিটা বিলিন হয়ে যায়।মেহরাব ওর একটু কাছে এসে ডান হাতটি ধরে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যায়।মায়া ভয় পাচ্ছে বৃষ্টিতে ভিজেছি বলে আবার কিছু না বলে।রুমের মধ্যে এসে মেহরাব ওর হাত ছাড়ে আর এভাবে ভেজার জন্য রাগ করে।ওকে কাপর চেন্জ করতে বলে নিজেও রুম থেকে বের হয়ে যায়।
“বিকেল বেলা মেহরাবের নিকট ফিরোজ আসে।মেহরাব তখন ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কিছু কাজ করতেছিলো।ফিরোজ আসতেই ওকে বসতে বলে।ফিরোজ মেহরাববের উদ্দেশ্য বলে
“বড়ো ভাই কাজটা ঠিক করেননি কিন্তু।
মেহরাব ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে?
“কি হয়নি বলেন আপনার যে একটা শ্যালিকা আছে সেটা তো আমাকে বলেননি।
মেহরাব স্বাভাবিক ভাবেই বলতে থাকে
“এটা বলার কি আছে জেনে তো গেছো নাকি?
“হা সেটা ঠিক।
এবার ফিরোজ মাথা চুলকে বলতে লাগে “বড়ো ভাই ভাবি ও যেমন সুন্দর তার বোন ও কিন্তু সেই সুন্দর আছে।শুধু তাই না আমাকে কিন্তু সেই রকমের আদর আপ্যায়ন করছে।তখন নিজেকে কেমন একটা নতুন জামাই জামাই ফিল হইছে।
বলে একটা মুচকি হাসি দেয়।
“এ সব বাদ দাও ফিরোজ যে কাজের জন্য গেছো সেটার কি খবর?
“বড়ো ভাই যেমন বলেছেন তেমনটাই করেছি।
“ঐ দিকের প্রজেক্টের কি খবর কাজ ভালো ভাবে চলছে?
“হা বড়োভাই আর লেবারদের এই সপ্তাহের টাকাটাও বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি।আর এই নিন ফাইল এখানে আপনার কথা মতো সব কাগজ পএ আনা হয়েছে।আর যা যা বলছেন সে ভাবেই কাজ করেছি।
“ঠিক আছে রাখো
“বড়োভাই এবার আমি উঠি বাসায় যেতে হবে।গতোকাল যাবার পর থেকেই মা অনেক চিন্তা করছে পরে আবার আসবো বলে ফিরোজ চলে যায়।
“মেহরাব ফাইলগুলো হাতে নিয়ে মায়া কে ডাকতে লাগে।
মায়া তখন শায়লার সাথে গল্পে মগ্ন।ডাক শুনতেই শায়লা গল্প থামিয়ে মায়াকে বলে “ভাবি আপনে যান ভাইজান ডাকতাছে।মায়া রুমে আসলে মেহরাব ওকে পাশে বসতে বলে।মায়া ওর পাশে বসলে ফাইলটা ওর হাতে দেয়।এটা কিসের ফাইল জানতে চাইলে মেহরাব বলে “তোমার স্কুল কলেজের আর তোমার যাবতীয় দরকারী কাগজপএ আছে এখানে।মায়া এ সব শুনে তো অবাক এ গুলো এখানে কেমনে?ওর চেহারায় প্রশ্নের ছাপ তাই মেহরাব নিজেই বলে “আমি আনিয়েছি ফিরোজকে দিয়ে ।গতোকাল ওকে পাঠিয়েছিলাম তাছারা কলেজে ভর্তি হতে তো এ সবের প্রয়োজন তাই।কথাটা বলে মেহরাব ওর পাশে রাখা একটা বক্স মায়ার হাতে দেয়।মায়া বুঝতে পারছে না এটা আবার কিসের বক্স।জিজ্ঞাসা করলে মেহরাব বলে
“তোমার জন্য একটা নতুন মোবাইল এনেছি আর হা তোমাদের বাড়িতে একটা পাঠিয়েছি ফিরোজকে দিয়ে।এখন থেকে যখন তখন কথা বলতে পারবে ইচ্ছে করলে দেখতে ও পারবে।আশা করি বাড়ির জন্য আর মন খারাপ হবে না।
মায়া খুব খুশি হয়।মনে মনে ভাবে মেহরাব ওর জন্য এতোটা ভাবে?যাই হোক মানুষ টা ভালো খারাপ না।মেহরাব ওকে মোবাইল এর সব কিছু শিখিয়ে দেয়।মায়া তখন ওদের বাড়ি কল দিতে চাইলে মেহরাব কল দিয়ে দেয়।হাসিমুখে মায়া কথা বলতে থাকে আর এই হাসি মুখটা দেখে মেহরাবের মনটায় তৃপ্তি পায়।এ ভাবেই মায়াকে ও খুশিতে আজীবন ওর কাছে রাখবে কষ্টের আঁচ লাগতে দিবে না।
“পরদিন মেহরাব মায়াকে নিয়ে কলেজের উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়।ভর্তি শেষ করে ক্লাস রুম দেখিয়ে কলেজের ভেতরটাও ঘুরিয়ে আনে মায়াকে।মায়ার বেশ ভালো লাগে কলেজের পরিবেশটা।কিন্তু এতো সুন্দর হলেও ওর গ্রামের কলেজটাই যেনো ওর কাছে বেশি সুন্দর।অনেক বড়ো মাঠ বিশিষ্ট কলেজ।এখানটায় তেমন বড়ো মাঠ নেই তুলনামূলক অনেক ছোটো।ভর্তি শেষ করে ওরা আবার রওয়ানা হয় কিছুদূর আসতেই মায়ার খুব ইচ্ছে করে নেমে একটু ঘুরবে।ভাবনার মাঝেই গাড়ি থামে মেহরাব গাড়ি থেকে বের হয়ে ওর পাশে এসে দরজা খুলে ওকে বের হতে বলে।মায়া উৎফুল্ল মনে বের হয়।এটা পার্কের মতোই অনেক লোকজনের সমাগম।একটু হেটে চারপাশ টা দেখতে লাগলো।মেহরাব গাড়ি লক করে গাড়ির সাথেই হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়।এক দৃষ্টিতে মায়ার খুশিময় মুখটা দেখতে থাকে।মন কে জিজ্ঞেস করে “সাজবিহীন সাদামাটা ড্রেসে ও একটা মেয়েকে এতোটা সুন্দর লাগতে পারে? মন উওর দেয়
“হা লাগে আর সেটা নিজের ভালোবাসার মানুষটাকেই।ভালোবাসার রং দিয়ে তাকে রাঙ্গাতে পারলে সে মানুষটা যেভাবেই থাক না কেনো তাকেই পৃথিবীর সব সুন্দরের মধ্যে একটি শ্রেষ্ঠ সুন্দর মনে হবে।”
“মেহরাব কখনও প্রেমে পরেনি তবে ইচ্ছা ছিলো বিয়ের পরে বউয়ের সাথে জমিয়ে প্রেম করবে।হায় পিচ্চি একটা কপালে জুটছে ভালোবাসার মানে টানে বোঝে কিনা কে জানে? তবে ও চায় ধীরে ধীরে আবারও নতুন করে মায়ার প্রেমে পরবে।মায়াকে আবার নতুন করে ভালোবাসবে।খুনশুটিময় হবে ওদের প্রেমময় মুহূর্ত গুলো।একটা সময় মায়া ওর মায়ায় পরে মেহরাবের আগে মায়া ই ওকে প্রপোজ করবে।হয়ত সে দিনটাই ওর জীবট টা সার্থক হবে।দেরিতে হলেও এর অপেক্ষা মেহরাব করবে।”
মায়ার এই মুহূর্তে একটা জিনিস খুব খেতে মন চাইছে কিন্তু মেহরাব কে বললে দিবে তো? যদি উল্টো রাগ করে তাই আর বলে না।মেহরাব ওর কাছে এসে জিজ্ঞেস করে কিছু খাবে কিনা?ওর আবার বাইরের স্ট্রিট ফুড পছন্দ না।আগে যখন খেতো বেশির ভাগ সময়ই পেট খারাপ করতো তাই ছাএ জীবন থেকে এই পর্যন্ত এ সব খাবার ও এড়িয়ে গেছে।মায়া আমতা আমতা করে বলে আমি ঝালমুড়ি খাবো।মেহরাব সামনে এগিয়ে গিয়ে ঝালমুড়ি ওয়ালা মামার কাছে যায়।অল্প ঝাল দিয়ে মাখাতে বলে একটু পাশে গিয়ে দাড়ায়।এই সুযোগে মায়া ঝাল একটু বেশি দিতে বলে।
আর মনে মনে ভাবে “ইশ কতো দিন এই ভাবে খাই না।আগে ওর বান্ধবী আয়েশা কে নিয়ে কড়া ঝাল দিয়ে ঝালমুড়ি খেতো।মামার হাত থেকে ঝালমুড়ি নিয়ে মায়া খেতে শুরু করে।অনেক মজার কিন্তু এরপরেই টের পায় ঝাল টা একটু বেশি লাগা শুরু করে।মনেহচ্ছে কাচা মরিচ কম এর মধ্যে বোম্বাই মরিচ কুচি দিয়েছে বেশি।অনেক কষ্টে খেয়ে ওর জান শেষ।চোখ দিয়ে পানি পরতে শুরু করেছে।মেহরাব এসব দেখে এগিয়ে এসে লোকটাকে বলে ঝাল তো কম দিতে বলেছিলাম কিন্তু যখন শোনে মায়াই দিতে বলছে তখন ওর রাগটা দ্বিগুন হয়ে যায়।
ঠান্ডা পানি কিনে খাওয়ায় কিন্তু তাতেও কাজ হয় না পরে কতো গুলো মিষ্টি চকলেট কিনে দেয়।তাতে একটু কমলে মায়াকে নিয়ে গাড়িতে ওঠে বসে।মায়ার ফর্সা চেহারা ঝাঁলের প্রকটে একদম লাল হয়ে গেছে।চোখ দুটো ও তাই বাকি রইলো ঠোঁট সেটার কথা আর কি বলবে।মেহরাবের তো মন চাইছে অন্য কিছু করতে।ওই ঠোঁট জোড়ার দিকে আর নজর দিতে পারছে না রাগ টাকে দমন করে মায়াকে বলে”আর কখনও এমন টা করতে গেলে তোমার ঠোঁটের বারোটা বাজিয়ে ছাড়বো বলে দিলাম।”
বেচারী মায়া মেহরাবের এই হুমকির আসল রহস্য ধরতে পারেনি।ওর ঠোঁটে আবার কি করলো বুঝতে পারে না কিছু বোকা চাওনি দিয়ে চুপচাপ বসে থাকে।
চলবে……..
#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-১০
বিষণ্ণ আর ভারাক্রান্ত মন’সাথে একরাশ অভিমান নিয়ে বসে আছে মায়া।চোখ দুটো ও ছলছল করছে।এই মুহূর্তে কিছুই ভালো লাগছে না ওর।
বাড়ির যে পাশে ফুলের বাগান তার ওপর পাশে ছোটো একটা সুইমিং পুল রয়েছে।এটা মেহরাব শখের বশে করেছিলো কিন্তু সুইমিং করা হয় না।প্রথম দেখাতেই মায়ার এই জিনিস টা বেশ ভালো লাগে।এখানে গোসল করতে না পারলেও মন খারাপ বিধায় এখানে এসে পুলের স্বচ্চ নীল জলে পা দুটো ডুবিয়ে রেখেছে।যেমনটি ও গ্রামে থাকতে করতো।
কলেজ থেকে আসার পর ঘন্টা খানেক ধরে এখানেই বসে আছে।কয়েক বার শায়লা আর সিতারা ডাকলেও ও যায়নি।মন খারাপের কথা গুলো কাউকে বলতে পারছে না।এর কারনটা মেহরাব নিজে।
কলেজে ভর্তির পর ক্লাসের প্রথমদিন মেহরাব নিজে ওকে নিয়ে যায়।ক্লাস পর্যন্ত ওকে পৌছে দিয়ে অফিস চলে যায় ।তবে তার আগে মায়াকে বলেছিলো “তোমার যে বিয়ে হইছে সেটা ভুলে গিয়ে এখন থেকে মন দিয়ে লেখা পড়া করবে।না হলে কিন্তু মন বসবে না লেখাপড়ায়।”
ওর কথা শুনে মায়া শুধু মাথা নাড়িয়েছিলো।
কিন্তু কথাটা শুনে খুশি হয় না মায়া।ও এমনিতেই দ্বিধা দ্বন্ধে ছিলো মেহরাব ওকে বিয়েটা নিজ ইচ্ছায় করেছিলো নাকি পরিস্থিতি ওকে বাধ্য করেছে?তার ওপর দুজনের সম্পর্ক ও স্বামী স্ত্রীর মতো না তাই ও ধরেই নিয়েছে মায়াকে মেহরাব পছন্দ করে না।শুধুমাত্র ওর দায়িত্ব পালন করছে।আর আজ বিয়ে হয়েছে সেটা ভুলে যেতে বলেছে ?তার মানে এই লোক ওকে ভালোবাসে না।ওর প্রতি যা দেখায় সেটা করুনা হা সেটাই হবে।আর আমি তাকে কতো ভালো ভেবেছিলাম এ সব ভেবে মনে মনে ফুসতে থাকে।
ওর সাথে মেহরাব কে দেখে ওর ক্লাসের অনেক মেয়ে হা করে তাকিয়ে দেখছিলো শুধু তাই না কলেজের অনেক মেয়েরাই একটু ভিন্ন নজরে মেহরাব এর দিকে তাকিয়েছিলো।আর তাকাবে না কেনো এতো সুন্দর স্মার্ট ড্যাসিং লুকে আসলে যে কেউ এক দেখায় প্রেমে পরবে।এ সব কিছুই মায়ার চোখ এড়ায়নি।তখন মায়া ব্যাপারটা স্বাভাবিক হিসেবে নিয়েছিলো কিন্তু আজকের ঘটনার পর ওর মাথা ঠিক নেই।
দ্বিতীয়দিন মেহরাব ওকে সময়মতো কলেজে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।ক্লাসে যেতেই কয়েকটা মেয়ে এসে ওর সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করে।মায়াও একই ক্লাসের হওয়ায় সহজেই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরন করে।দুইদিনেই ভালো সম্পর্ক হয়ে যায় ওদের মধ্যে।তবে মায়া যে বিবাহিত সেটা মায়া বলে না।কারন মেহরাব ওকে যে কথাটা বলেছিলো সেটা মনে করে চাপা অভিমানে ও নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়েছিলো।আর আজ ওকে ওর মেয়ে বন্ধুরা মেহরাবের কথা জিজ্ঞেস করে।ওর সাথে কি সম্পর্ক সেটা জিজ্ঞেস করলে ও কিছু বলে না।পাশ থেকে একজন বলে মনে হয় কাজিন হবে তাই না?মায়া তখনও কিছু বলে না তাই ওরা ভেবেই নিয়েছে কাজিন ই হবে।
এদের মধ্যে সবচাইতে স্টাইলিশ মেয়ে জুহি সে ওকে খুব রিকোয়েস্ট করে ওর হয়ে একটা কাজ করে দেওয়ার জন্য।কথাটা কি সেটা আগে জানতে চায় মায়া।
মেয়েটা আমতা আমতা করে ওকে বলে “মায়া তোমার ঐ কাজিনটাকে আমি প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছি।প্লিজ ওকে গিয়ে আমার কথা বলবা আর রাজি করাবা প্লিজ প্লিজ পারবে না?
মায়ার এ শুনেই গায়ে আ”গুন ধরে যাবার মতো অবস্থা।এই মেয়ে বলে কি?কিন্তু মুখে সেটা প্রকাশ করতে পারছে না।যেনো এ সব কথা শুনে ওর মন চাইছে মেয়েটার চুল গুলো মুট পাকিয়ে ওকে ধরে ঘুরাতে।কতো বড়ো সাহোস আরেক জনের জামাইর দিকে নজর দিছে।কিন্তু মেয়েটা তো আর এ সব জানে না।তাই বোকা হাসি দিয়ে ওদের বুঝায় ঠিক আছে।
তারপরেই বাসায় এসে ওর রাগ আরো বাড়তে থাকে।এ কয়দিনে মায়ার মেহরাবের প্রতি একটা অন্যরকম অনুভূতি তৈরি হয়েছে।কিন্তু সেটা কি ও পারবে মেহরাব বলতে?
আজ একটু তারাতারি মেহরাব অফিস থেকে বাসায় আসে।মেইন গেট দিয়ে ডুকতেই সুইমিংপুলের দিক নজর যায়।হালিম কে ডেকে ওর হাতের ব্যাগটা ভেতরে পাঠিয়ে পুলের কাছে এগোয়।মেহরাব ঠিক বুঝতে পেরেছে ওর মায়াবিনীর কোনো একটি কারনে মুড অফ।মায়া ওর উপস্থিতি টের পায় না এক ধ্যানে কিছু একটা ভাবছে।মেহরাব এর প্যান্ট নিচ থেকে ভাজ করে কিছুটা উপরে উঠিয়ে মায়ার পাশে গিয়ে বসে আর ওর মতোই পা দুটো পানিতে ডুবিয়ে দেয়।মায়া পাশে কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে তাকায়।মেহরাব কে দেখে কিছুটা ঘাবরে যায় ভাবছে হয়তো এভাবে বসে থাকার জন্য রাগ করবে কিন্তু না দেখে সেও পানিতে পা রেখেছে।মায়া কিছু না বলে আবার সামনের দিকে তাকায়।মেহরাব ওর কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে জিজ্ঞেস করে “কি হয়েছে ঝটপট বলে ফেলো।মায়া “কিছুনা”বলে আবার চুপ থাকে।মেহরাব আবার বলে “বলতে বলছি ভালোয় ভালোয় বলো কি হয়েছে?
মায়া এবার বলে “আমার ক্লাসের সবচাইতে সুন্দর মেয়েটা আপনাকে পছন্দ করে,আপনাকে ভালোবাসে আর এটাই ও আপনাকে বলতে বলছে।
মেহরাবের নিকট এবার সবটা ক্লিয়ার যা বুঝার বুঝে গেছে।
“ওহ এই কথা আমি ভাবলাম কি না কি হয়েছে।
মায়ার এবার রাগ লাগে
“তো আপনার কিছু বলার নেই?
“হুম বলার তো আছেই।কাছের মানুষ তো আর আমার ফিলিংস বুঝে না দেখছো অন্যরা কিন্তু ঠিক বুঝে।আর এমনিতেও মীর মেহরাব হুসাইন কে এক দেখায় যে কেউ তার গলায় ঝুলে পরতে প্রস্তুত”শুধু একজন ছাড়া।
মনে মনে ভাবছে হা এই জন্যই বিয়ের কথা বলতে নিষেধ করেছে বুঝি তো প্রচন্ড জেলাসি ফিল হচ্ছে মায়ার।কিছু বলতে পারছে না।অন্যদিকে মেহরাব ও মনে মনে বেশ মজা পাচ্ছে।বৌ টা ওকে একটু একটু ভালোবাসতে শুরু করেছে।ওর জন্য অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে।কিন্তু মুখে বলতে পারছে না।তবে যতোদিন মায়া মেহরাব কে নিজথেকে কাছে টেনে না নিবে ততোদিন নিজেকে সংযত রাখবো এটাই মেহরাব ভেবে রাখে।ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করতে নারাজ ও।
পরদিন মেহরাব ওকে নিয়ে কলেজে পৌছে নিজেও ওর সাথে ভিতরে যায়।ক্লাসে ঢোকার আগেই জুহি সহ অন্য মেয়েদের সাথে বাইরে দেখা হলে জুহি তো সেই রকমের এক্সাইটেড হয়ে যায়।লজ্জায় কেমন মাথা নুইয়ে আছে।মনে মনে ভাবছে “ইশ মেহরাব কে মনে হয় মায়া রাজি করিয়ে এনেছে।কিন্তু হায় এ সব ভাবনায় এক বালতি জল ডেলে দেয় মেহরাব।চোখে পরিহিতো সানগ্লাসটি খুলে হাতে নিয়ে বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে বলে “গাইস সি ইজ মাই অন এন্ড অনলি লাভলি ওয়াইফ।সো আশা করি সবটা বুঝতে পারছো?কথাটা বলেই চোখে চশমা এটে মায়ার থেকে বিদায় নিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করে।মায়ার তো কথাটা শুনে বিশ্বাস ই হচ্ছিলো না এমন একটা কথা শুনবে ও।খুশিতে ওর দম বন্ধ হয়ে যাবার মতো অবস্থা কিন্তু আবার ভাবে এটা মনে হয় শুধুই ওকে বিবাহিতো বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছে।
অন্যদিকে কথা গুলো শুনে জুহি তো হার্ট এটাক করার মতো বাকিরাও তাই।মেহরাব যেতেই জুহি সহ সবাই মায়াকে ধরে কেনো সে আসল কথাটা বলেনি।মায়া এসব নিয়ে আর বেশি কিছু বলে না।জুহির এর পরে কান ধরে ভালো ভাবে কারোর সম্পর্কে না জেনে আর ক্রাশ খাবে না।এরপর ওরা ঠিক করে মায়ার সাথে ভালো বন্ধু হিসেবেই থাকবে কারন মায়া কে ওদের খুব পছন্দ হয়েছে আর মায়ার জুহি সহ সবার সাথে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়ে যায়।
“আজকাল অফিসের কাজের চাপে মেহরাব মায়ার তেমন খোঁজ খবর রাখতে পারে না।ওর নিজের বায়িং হাউজ তাই বিদেশী বায়ারদের সাথে প্রতিদিনই মিটিং এ ব্যাস্ত থাকতে হয়।কয়েকটা দিন এমন হওয়ার পর একটু ফ্রি হয়।আর ও অফিসের সবাইকে জানিয়ে দেয় সবার জন্য পার্টির একটা আয়োজন করবে।শুনে সবাই বেশ খুশি হয়।
বাসায় এসে মায়াকে ডাকে কিন্তু মায়া আসে না।নিজের ওর কাছে যায়।বুঝতে পারে মায়া এবারও অভিমান করে আছে।হাত ধরে টেনে এনে খাটে বসায়।
ওর সামনে বসে মেহরাব বলে আগামী পরশু অফিসে একটা পার্টির আয়োজন করেছি।মায়া শুনে ওর মন খারাপ দূর হয়ে যায়।কিন্তু আবার ওর মন খারাপ হয়ে যায়।মেহরাব বুঝতে পারে না হঠাৎ হঠাৎ এই মেয়েটার কি হয় কি জানি।
বেশ আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে।মায়া এবার বলে “আসলে শুনেছি এ সব জায়গায় যেতে হলে অনেক ভালো ড্রেস পরে যেতে হয় কিন্তু আমার তো..আর কিছু বলতে দেয় না মেহরাব ওকে।
কাজের চাপে একটা দিনও মায়াকে কোনো কেনাকাটা করে দিতে পারেনি এটা সত্যিই ওর বড়ো ধরনের ভুল হয়েছে।তাই ও খুব লজ্জিত।তাছাড়া বিয়ে উপলক্ষে অল্প সময়ে যা পেরেছে কলিমউল্লাহ মামুর স্ত্রী মায়াকে কিছু জামা কাপড় কিনে দিয়েছিলো।মেহরাব কিনতে চাইলেও ওকে একদমই কিনতে দেয়নি।তবুও ওর তো উচিত ছিলো আর এ কয়েকটা দিন তো আরো কেয়ার নিতে পারেনি তাই আরো অনুতপ্ত।সরি ও বলেছে অনেকবার ।আজ ভেবে রেখেছে মায়াকে নিয়ে কাল শপিংয়ে গিয়ে ওর পছন্দ মতো অনেক অনেক কেনাকাটা করে দিবে।
মায়াও অনেক খুশি হয় নিমিষেই মন খারাপ দূর হয়ে যায়।এই খুশিটাই মেহরাব দেখতে চেয়েছে।এখন ওর খুব শান্তি লাগছে।
পরদিন বিকেলে মায়াকে নিয়ে মেহরাব শপিং করতে যায়।সুপার মলে ডুকে তো মায়া অবাক।এই প্রথম এমন জায়গায় এসেছে আবার এতো লোকের ভীর এতো বড়ো জায়গা যদি ও হারিয়ে যায় তাই মেহরাবের হাত আকরে ধরে।মেহরাব ওকে শান্ত হতে বলে চলন্ত সিঁড়ির কাছে গেলে মায়া ভয়ে পা দিতে পারে না বলে ওরা গ্লাস ক্যাপসুল লিফ্টের সাহায্যে উপরে ওঠে।মায়া তো সেই পরিমানের অবাক যদিও মুখ দিয়ে কোনো টু শব্দ করেনি।অবশেষে ড্রেসের দোকানে গিয়ে মেহরাবের পছন্দ মতো অনেক শাড়ি থ্রিপিচ আরো অন্যান্য জিনিস কিনে দেয়।এ সব দেখে মায়ার চোখে পানি আসে।এতো সুখ এতো কিছু ওর কপালে ছিলো।ইশ এ সব যদি পুষ্প দেখতো অনেক খুশি হতো।আড়ালে ওড়নার আচলে চোখ মুছে নেয়।কেনাকাটা শেষ করে ওরা রেস্টুরেন্ট এ ডুকে।মেনুকার্ড দেখিয়ে মায়ার ইচ্ছে মতে খাবার খায়।আসলেই খাবার গুলো খুব মজার ছিলো তারপরে ওরা বাসার দিকে রওয়ানা হয়।
বাসায় আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।ভেতরে ডুকতেই ফিরোজের সাথে দেখা।মেহরাব ওকে জিজ্ঞেস করে কখন এসেছে?ফিরোজ “এই তো দশমিনিট আগেই এসেছি বলে।বড়ো ভাই আমি গেলাম আর আপনাদের জন্য খালাম্মা ড্রইং রুমে অপেক্ষা করছে।কথাটা শুনেই মেহরাবের মন খুশিতে ভরে ওঠে মায়াকে সঙ্গে নিয়ে ড্রইং রুমে আসে।সিঙ্গেল সোফায় বসে আছে একজন ..সে ওর জীবনের অতি আপন একজন।ওদের জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে সে।তার সামনে এসে হাটু ভেঙ্গে বসে পরে মেহরাব।অতি সন্তপর্ণে ডানহাতটি ধরে অধর ছুয়ে দেয় মেহরাব।খুব নমনীয়তার স্বরে বলে
“আম্মিজান” কেমন আছেন?
চলবে…….
(ভুলত্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)