#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-৭
“আপনারা রাজি থাকলে আমি মায়াকে বিয়ে করতে চাই এক্ষুনি এই মুহূর্তে”
মেহরাবের আকস্মিক বিয়ের প্রস্তাবে পিনপতন নিরবতা চলছিলো সকলের মাঝে।বিস্ময় ভরা চোখ নিয়ে একে অপরের দিকে নজর বুলাচ্ছে।এটা কি বললো মেহরাব?
আয়মন ন্যাকা কান্না বন্ধ করে স্থির হয়ে রয়।মায়ার বদনাম হোক সেটাই চেয়েছিলো কিন্তু এই ভাবে মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিবে সেটা তো চায়নি।কাশেম মিয়ার কান শুনতে ভুল করেছে এটা ভেবে মেহরাবের উদ্দেশ্য বললো
“বাবা ঐ শয়”তানটার হাত থেইক্যা মাইডারে বাচাইছো এইডাই অনেক।কিন্তু আমার মতো গরিবের মাইয়া বিয়ে করবা এ সব কইয়া লজ্জা দিও না।
“কিন্তু আমি তো জেনে শুনেই বিয়ে করতে চাইছি।
কাশেম মিয়া কলিমউল্লাহর নিকট থেকে মেহরাবের সম্পর্কে সবটাই শুনে ছিলো।এতো ধনী হওয়া সত্বেও মেয়েকে বিয়ে করতে চায় তাই এমন প্রস্তাবে সে কিছুটা ঘাবরে যায়।অসহায় চোখে কলিমউল্লাহ কে বলে
“স্যার আপনে তারে বুঝান আমি গরিব মানুষ আমার সাথে আত্নীয়তা করতে চাওয়া টা কি ঠিক?
কলিমউল্লাহ মেহরাব কে কিছু বলার আগেই মেহরাব জবাব দেয়
“আমি জানি মামু আপনি কি বলবেন “এই মেহরাব একবার যেটা বলে সেটাই করে আর যেটা করে ভেবে চিন্তেই করে।
এটুকু বলে মেহরাব মায়ার দিকে তাকায়।চোখে চোখ পরতেই মায়া দৃষ্টি নত করে ফেলে।মেহরাব আবার বলতে লাগে
“আর মায়ার সম্পর্কে যতোটুকু শুনেছি তাতে মীর মেহরাব হুসাইন এর বউ হওয়ার যোগ্যতা সে রাখে।তাই আমি চাই আপনি আমার একান্ত অভিবাবক হিসেবে বিয়ের দায়িত্বটা পালন করুন।
কলিমউল্লাহ এবার বুঝতে পারে মেহরাব যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা বুঝেশুনে নিয়েছে।ভেবে দেখলো বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে মায়ার মতো এতো ভালো মেয়ে হয় না।এই মেয়েকে বিয়ে করলে মেহরাব সুখি হবে তাই আর অমত করে না।কাশেম মিয়াকে সে বুঝায় এবার কাশেম মিয়া কলিমউল্লাহর ওপর ভরসা করে বিয়েতে মত দিয়ে দেয়।
শব্দ করে আলহামদুলিল্লাহ বলে সে।এরপর কাশেম মিয়াকে দেরি না করে কাজী ডাকতে বললে তখনই কাজী ডেকে নিয়ে আসা হয়।পুষ্প তো খুশিতে এক লাফ দিয়ে বোনকে জড়িয়ে ধরে।মায়া কি রিয়েকশন দিবে বুঝতে পারছে না।সেখানে আর এক মুহূর্ত না থেকে ঘরের মধ্যে চলে যায়।
পুষ্প বোনের পিছু যায় বোনের কাছে গিয়ে বলে
“বুবু আমি কইছি না তোমার জন্য কোনো রাজপুএ আসবো দেখছো বুবু তাই হইছে।বুবু তোমার তো রাজকপাল।আমার যে কি আনন্দ লাগছে বলে বুঝাইতে পারুম না।
মায়া কিছুই বলতে পারছে না।
অন্যদিকে আয়মনের মনে রাগ জমতে থাকে কিছু বলতে যাবে তখনই কাশেম মিয়া বাধা দেয়।সে জানে এমন একটা খুশির দিনে বউ আবার কোনো ঝামেলা করতে পারে।স্বামীর এমন কাজে আয়মন মোটেও খুশি হয় না।একদম চুপ থাকতে বলে।
“অবশেষে কবুল বলে বিয়ে নামক বৈধ সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে গেলো দুটি মানব মানবীর জীবন।”
মায়া যেনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে।কি থেকে কি হয়ে গেলো?কিছুক্ষণ আগেও জীবনে একটা তিক্ত সময় অতিবাহিতো করছিলো।মুহূর্তেই পাল্টে গেলো সব।কোনো কিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না মনে হচ্ছে এটা কোনো স্বপ্ন।কিন্তু না আজ থেকে সে মীর মেহরাব হুসাইন এর সহধর্মিনী।তবে ওর মনে প্রশ্ন থেকেই যায়।”এই বিয়েটা করার কি উদ্দেশ্য ছিলো তার?বিয়ে ভাঙ্গার বদনামের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য ?নাকি অন্যকিছুর জন্য?
মেহরাব আর দেরি করতে চায় না ।এমনিতেই যে সব ঘটনা আজ ঘটে গেছে।তাই আজই মায়াকে নিয়ে শহরের বাড়িতে ফিরতে চায় ও।ফিরোজ কে বলে দিয়েছে আর্জেন্ট গাড়ি পাঠাতে।গাড়ি আসতে একটু দেরি হবে তাই মেহরাব বিয়ের কাজ সম্পন্ন হতেই মায়ার বাড়ির সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কলিমউল্লাহ মামুর বাড়িতে মায়াকে নিয়ে আসে।ওখানের সবাই বেশ খুশি হয় নতুন বউ পেয়ে।
সন্ধ্যার পর গাড়ি চলে আসে সাথে ফিরোজ।ও ভেবেছিলো এতো তারাহুরো করে গাড়ি পাঠাতে বলেছে মেহরাবের কিছু হলো কিনা।তাই বেশি কিছু না ভেবে নিজেও রওয়ানা হয়।
ফিরোজ কে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি।এখানে এসে এ সব দেখে বেচারা এক প্রকার অজ্ঞান হয়ে যাবার মতো উপক্রম।অভিমানের সুরে কষ্ট ভরা মন নিয়ে বলতে থাকে।
“বড়ো ভাই এইটা কোনো কথা? কওয়া নাই বলা নাই ডিরেক্ট বিয়ে করে নিলেন?
“ফিরোজ বন্ধ করো ভাই তোমার ড্রামা এবার আমাদের রওয়ানা হতে হবে।বাকি কথা বাসায় গিয়ে শুনবো।
মেহরাব সবাইকে বিদায় জানিয়ে মায়াকে নিয়ে গাড়িতে উঠে পরে।বড্ড ক্লান্ত লাগছে ওর শারিরিক ভাবে নয় তবে মানসিক ভাবে।ফিরোজ সামনে বসে আর মায়াকে নিয়ে মেহরাব পিছনে বসে।গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার পর থেকে মায়া কান্না করেই চলছে।এই প্রথম ওর শহরে যাএা।আপন মানুষ আর চেনা পরিচিতো গ্রাম ছেরে অজানা অচেনা পথে পাড়ি দিচ্ছে।যার সাথে যাচ্ছে তার সম্পর্কে ও অজানা ওর সেটা ভেবে বুকের মধ্যে আবার ও হু হু করে ওঠে।মেহরাব বার কয়েক মায়াকে শান্ত হতে বলে কিন্তু ও থামে না।একটা সময় ওর কান্না করতে করতে হিচকি ওঠে যায়।মেহরাব পানির বোতল বের করে মায়ার হাতে দেয়।মায়া বোতল টি নিয়ে কয়েক ঢোক খেয়ে নেয়।
আজ এতো কিছু ঘটে গেলো এর মাঝে মায়া ঠিক মতো খাবারটা ও খেতে পারেনি।খিদে পেয়েছে খুব কিন্তু এই মুহূর্তে এসব কথা ও মেহরাব কে বলতে পারছে না।কি ভাবে বলবে একে তো নতুন বউ তার ওপর ওর সাথে কথা বলতেও কেমন একটা দ্বিধা বোধ হচ্ছে।মেহরাব ওর সাথে যে কয় বার কথা বলছে ও শুধু হুম বলেই মাথা নাড়িয়েছে।
মেহরাব মাথা পেছনে এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।কিছুক্ষণ পরে চোখ খুলে দেখতে পায় মায়া মাথা নিচু করা অবস্থাতেই পানির বোতলটি ওর সামনে ধরে আছে।নাজানি কতোক্ষণ এভাবে ধরে আছে,কিছুটা বিরক্ত লাগলো ওর কাছে এভাবে ধরে না রেখে মুখে তো বলতে পারতো।মেহরাব বোতলটি নিয়ে আগের জায়গায় রেখে দেয়।মনে মনে ভাবে
“এতো কাঁঠ খর পুরিয়ে বিয়েটা করলাম অথচ নিজ থেকে একটা কথাও বলছে না।”
মায়ার মুখের দিকে চায় ও গাড়ি ভেতরের হালকা আলোতে খেয়াল করে কান্না করতে করতে মেয়েটার মুখটা শুকিয়ে গেছে তবে সেটার আরেকটা কারন ও আছে।কি একটা ভেবে ফিরোজ কে বললো সামনে কোনো ভালো রেস্টুরেন্ট দেখলে যেনো গাড়ি থামায়।মেইন রাস্তার পাশে দূর পাল্লার গাড়ি গুলোর যাএা বিরতির যে সব হোটেল রেস্টুরেন্ট থাকে সে রকম একটা সামনে আসতেই গাড়ি থামাতে বলে।গাড়ি পার্কিং করে ওরা তিনজন রেস্টুরেন্ট এর ভেতরে যায়।ফাঁকা দেখে একটা টেবিলে বসে পরে।মেহরাব মায়াকে কি খাবে বলে জিজ্ঞেস করলে ভাত খাবে বলে জানায়।ফিরোজ কে পাঠায় ওর জন্য খাবার আনতে সঙ্গে ওদের দু জনের জন্যও।
মায়া ওর শাড়ির আচঁল দিয়ে নিজেকে আরেকটু জড়িয়ে নিচ্ছে।এ সব জায়গাতে ও এই প্রথম এসেছে তাই নিজের কাছে একটু অসস্থি লাগছে।আর আশে পাশেও অনেক লোক জনের আনাগোনা।মেহরাব মুগ্ধ নয়নে মায়াকে দেখছে।
“পরনের শাড়িটি যে নতুন নয় এটা ও বেশ বুঝতে পারে।তারপরও ফর্সা গায়ের রঙ্গের সাথে এই শাড়িটিতে মায়াকে বেশ মানিয়েছে।চেহারায় মেকআপের কোনো আস্তর নেই,নেই অধর জোড়ায় কৃএিম রংয়ের ছাপ তবুও এক ঝলক দৃষ্টিতে যেনো নয়ন ফেরানো যাচ্ছে না।”
মায়া মেহরাবের দিকে তাকালে লক্ষ্য করে মেহরাবের দৃষ্টি ওর দিকেই।খানিক টা লজ্জা পায় ও এতো মানুষ চারপাশে আর সে এ ভাবে এ ধ্যানে চেয়ে আছে।এ সব দেখলে কে কি ভাববে?এ সব ভেবে মাথা নত করে আছে মায়া।
“এই যে বড়ো ভাই খাবারটা আগে খেয়ে নিন তারপর বাসায় গিয়ে যতোখুশি মন ভরে ভাবিকে দেখবেন।
ফিরোজের কথায় মেহরাব চোখ সরিয়ে নেয়।মায়া যেনো আরো লজ্জায় পরে যায়।
“ভাবি আপনার জন্য ডাল আর ভর্তাই পেয়েছি ওদের মাছ মাংস সব শেষ হয়ে গেছে অনেকক্ষণ আগে।এটা একটু কষ্ট করে খেয়ে নিন।
মায়া মাথা নাড়িয়ে ক্ষীণ স্বরে বলে “সমস্যা নাই ভাইয়া এটাই ঠিক আছে।
মায়ার কথা শুনে ফিরোজ বলে ওঠে
“আল্লাহ আপনি বোবা নন কথা বলতে পারেন?থ্যাং আল্লাহ
ওর কথা শুনে মেহরাব বলে
“বোবা মানে ?
“আরে বড়ো ভাই আমি তো এই পর্যন্ত কথাই শুনিনাই ভাবির তাই ভাবলাম..
“আজকাল একটু বেশি ভাবো তুমি
“আচ্ছা ভাবি আপনারা খান আমি অন্য জায়গায় গিয়ে খাই বলে পাশের টেবিলে গিয়ে বসে ও।
মায়া ভাত খেতে শুরু করে,অনেকটা ক্ষিদে পাওয়াতে বেশ তৃপ্তি করেই খেতে আরম্ভ করে।মেহরাব ওর খাবার টা একটু খেয়ে মায়ার খাবার খাওয়া দেখতে লাগে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে মেয়েটা কতো ক্ষুদার্থ ছিলো অথচ মুখে বললো না?
খাওয়া শেষ করে মেহরাব ওয়ান টাইম কাপে করে তিন কাপ কফি নিয়ে আসে।ফিরোজ একটা নিয়ে নেয়।টেবিলে এসে মায়ার দিকে একটা কাপ এগিয়ে দেয়।এক চুমুক খেয়ে আর খাবে না বলে জানায়।মেহরাব ওর নিজের টা খেয়ে মায়ার কফির কাপটা নিয়ে নেয়।
আবার ওরা শহরের পথে যাএা শুরু করে দেয়।রাত বারোটা ছুঁই ছুঁই ,পৌছাতে আর ঘন্টা দেরেক সময় লাগবে।এর মধ্যে মায়া ঘুমিয়ে গেছে পেছনের দিকে মাথা হেলান দেওয়া ওর।মেহরাব মায়ার মাথা আলতো হাতে ধরে ওর কাঁধের ওপর রাখে।মায়া এবার একটু আরাম পায়।ঘুমের ভেতরই ওর বাহু চেপে ধরে।এমনটা হওয়াতে মেহরাবের একটা অন্যরকম ভালোলাগা ময় সুখানুভূতি হচ্ছে।পরম আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে।ও মায়াকে পেয়েছে সত্যি পেয়েছে ?এটা ওর কাছে এখনও অবিশ্বাসের মতো মনে হচ্ছে।ডান হাত বাড়িতে মায়ার গালে ছুয়ে দেয়।নাহ সত্যিই ওর মায়াবিনীকে পেয়েছে।এই তো ওর একান্ত কাছেই আছে এভাবেই ও আগলে রাখবে ওর মায়াকে।
“একটা সময় ওরা ওদের গন্তব্যে চলে আসে।গাড়ির হর্ণ শুনে দুজন লোক চলে আসে তাদের পিছু দুজন মহিলাও আসে।গাড়ি থেকে ফিরোজ আগে বের হয়ে।মেহরাব মায়াকে আস্তে করে ডেকে তুলে।মায়া চোখ খুলে তাকায় ,মেহরাব ওকে বলে চলে এসেছি এবার নামতে হবে।মেহরাব নেমে ওর হাত বাড়িতে দেয় মায়ার দিকে।মায়া প্রথমে হাত দেয় না মেহরাব এবার মুখে বলে হাত ধরার জন্য তখন মায়া ওর হাত ধরে নামে।বাড়ির বড়ো গেটের সামনে নামে ওরা।মায়ার চোখ যায় গেটের পাশে লেখাটা পাশে বড়ো অক্ষরে লেখা রয়েছে “মীর ম্যানশন”তারমানে এটাই মেহরাবের বাড়ি।রাতের বেলা হলেও চারপাশের বৈদ্যুতিক আলোতে বুঝা যাচ্ছে দুইতলা বিশিষ্ট ডুপ্লেক্স বাড়িটি বেশ বড়ো।এতো বাড়ি ও কখনও দেখেনি।
তখনও মেহরাব ওর হাত ছাড়ে না বাড়ির দরজা পর্যন্ত ওকে সাথে করে নিয়ে আসে।এরপর হাত ছেড়ে দিয়ে ভেতরে চলে যায়।মহিলা দুজন এসে একজন বললো ভাবি আমি শায়লা আরেক জন বলে আম্মা আমি সিতারা খাতুন।ফিরোজ এসে একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।এই পুরো বাড়ির দায়িত্বে চারজন আর এরা এক পরিবারের বাবা ছেলে শ্বাশুড়ি আর ছেলের বউ।একজন দারোয়ান আর একজন কেয়ার টেকার।শায়লা আর সিতারা মায়াকে নিয়ে ড্রইং রুমে বসায়।মায়াতো বাড়ির ভেতরের দৃশ্য দেখে হা হয়ে যায়
“এতো সুন্দর সাজানো গোছানো আরো কতো কি আছে।এ সব দেখে ও স্তব্ধ ।শায়লা বলে ওঠে ভাবি কি সুন্দর গো দেখতে আপনে।আমাগো ভাইয়া কি সুন্দর পরী ধইরা আনছে গো।সিতারা বেগম ও অনেক প্রশংসা করলো।মায়া ওদের সাথে কথা বলে ওর ভালো লাগে।সরল মনে কতো কিছু বললো ওকে।একটু পরে মেহরাব চলে আসে মায়া ওর দিকে চায় বুঝতে পারে লোকটা কাপড় চেন্জ করে চলে আসছে।মায়াকে সঙ্গে নিয়ে মেহরাব ওর রুমে যায়।এখানে এসে তো মায়া আরেক বার টাস্কি খায়।কি সুন্দর রুম এর বর্ণনা ও দিতে পারছে না।মেহরাব ওকে বসিয়ে দেয় আর বলে আজ থেকে এটা তোমার রুম।
রাত অনেক হইছে তুমি ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরো আমি পাশের রুমে যাচ্ছি।মায়া আর কিছু বলে না নিজের ব্যাগ থেকে একটা প্রিন্টের থ্রিপিচ বের করে বসে আছে।দরজায় টোকা দিয়ে শায়লা ডাকতে থাকে মায়া এগিয়ে যায়।“কিছু দরকার হইলে বলবেন কিন্তু ভাবি ।আচ্ছা বলে মাথা নাড়ায়।শায়লা চলে যায় মায়া রুমে ডুকে দেখতে থাকে কোথায় কি আছে।সবদিকে নজর বুলিয়ে দেখে।ওর কাছে এখনও স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।পুষ্প ভুল বলেনি সত্যিই ওর রাজকপাল।পরক্ষণে ওয়াশরুমে ডুকে পরে মায়া।
ফিরোজ মেহরাবকে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে চলে যায়।ছাদের এক কোনায় মেহরাব দাঁড়িয়ে আছে।ফিরোজ সামনে গিয়ে বলে “নতুন ভাবি রেখে এতো রাতে এখানে কেনো বড়োভাই?মেহরাবের নিরোওর চাওনি দেখে মনে হচ্ছে ওর মনে অস্থিরতা বিরাজ করছে।জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলে না।ফিরোজ আবার ও জিজ্ঞেস করলে মেহরাবের সাথে যা যা ঘটেছে সব ফিরোজকে জানায়।সবটা শুনে ফিরোজ তো অবাক “এতো কিছু ঘটে গেছে বড়ো ভাই?আর আমাকে জানালেন না।যাই হোক ভাবিকে পেয়েছেন এটাই শুকরিয়া।
মেহরাব ফিরোজ কে বলে
“জানো ফিরোজ যখন শুনেছি মায়ার বিয়ে ঠিক তখন যে আমার মনে ঝড় বয়ে গেছে সেটা আমি এখনও ভাবতে পারছি না।আবার এটাও ভাবতে পারছি না কিভাবে আমি আমার মায়াবিনীকে পেলাম?আমি তো আশা ছেড়ে দিয়ে চলে আসতে চাইছিলাম কিন্তু উপরওয়ালা সহায় ছিলো,না হলে এমন মিরাকেল আমার সাথে ঘটবে আমি তো ভাবতেই পারছি না।
“ভালো মানুষকে আল্লাহ নিরাশ করে না বড়োভাই।
এখন মন কে শান্ত করে রুমে যান নতুন বউ একা রুমে।
মেহরাব ছাদ থেকে রুমে আসে ততক্ষণে মায়া গভীর ঘুমে নিমগ্ন।মেহরাব কিছুক্ষণ ওর মায়াবিনীকে মন ভরে দেখে।লম্বা চুল গুলো ছেরে দেওয়া এলো মেলো হয়ে আছে সেগুলো।হাত বাড়িয়ে আলতো করে চুলগুলো একপাশে গুঁজে দেয়।
নাহ আর এখানে এক মুহূর্তে ও থাকতে পারবে না।তা হলে নিজেকে নিয়ন্তন করা দায় হয়ে পরবে।ও চায় না এখনই এমন কিছু করতে যেটাতে মায়া অসস্থি বোধ করে।খারাপ ভাবে ওর সম্পর্কে।এক বাড়িতে থেকেই না হয় আলাদা থাকি তাতে দুঃখ নেই।সারাজীবনের জন্য সঙ্গী হিসেবে পেয়েছি এটাই অনেক।মায়াবিনী যেদিন নিজ থেকে আমাকে কাছে টেনে নিবে ঐ দিন তোমাকে আমার মনের সকল চাওয়া পাওয়াসহিসেব করে মিটিয়ে দিতে হবে।
“বিশ্বাস করো সেদিন থেকে এই মেহরাব তোমায় তার ভালোবাসায় ভরিয়ে দিবে এক বিন্দু কষ্টের আঁচ তোমার জীবন থাকবে না প্রমিজ।”
চলবে….
#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-৮
নিশির আঁধার ছাপিয়ে আরেকটি মিষ্টি ভোরের শুভ সূচনা হলো।জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে রোদেরা উকিঝুকি দিচ্ছে।
চোখে রোদের ঝলকানি পরতেই পিটপিট চাওনিতে চোখ মেলে তাকায় মায়া।নিজের অবস্থান মনে করতে কয়েক সেকেন্ড লেগে যায়।পরক্ষণে মনে পরে যায় ও কোথায় আছে।
সদ্য বিয়ে হয়ে আসা শ্বশুর বাড়িতে আছে।শোয়া থেকে উঠে বসে চারদিকে নজর বুলিয়ে বুঝলো এখানে ও একাই আছে কিন্তু সে কোথায়?আর রাতে কি সে রুমে আসেনি!মায়া মনে মনে ভাবছে এ সব ভেবে কি হবে রাতে তো মেহরাবের জন্য ও অপেক্ষা করেনি আগেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো।ভাবনার মাঝেই শায়লা মায়াকে ডাক দিলে মায়া ওকে ভেতরে আসতে বলে।শায়লা এসে মায়ার কাছে দাঁড়ায়।
“ভাবি আপনের ঘুম ভালো হইছে ?
“হুম হয়েছে
“তাইলে আপনে উঠে ফ্রেশ হোন আমি বিছানা গুছাইয়া রুমটা ঝার দিয়া দেই
“না না আমি পারবো আপনি যান
“কন কি ভাবি আপনে এ সব কাজ করবেন?আপনি জানেন না এ সব কাজ আমরাই সামলাই।তা ছাড়া আপনি এ বাড়ির বউ আর মেহরাব ভাই এ সব জানতে পারলে খবর আছে।
“আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আমি ফ্রেশ হয়ে আসি আপনি গুছান।
“ভাবি আপনে তুমি কইরা নাম ধইরা ডাকবেন।আপনে মেহরাব ভাইয়ের বউ বইলা কথা।
মায়া মুচকি হেসে বলে
“আচ্ছা ঠিক আছে
কিছুক্ষণ বাদে মায়া ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে এসে বিছানায় বসে পরে।শায়লা ততক্ষণে রুমটা গুছিয়ে নিয়েছে।
“ভাবি একটা কথা কই?
“বলো
“আপনে দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি আপনের চুলগুলাও।আমি এমন চুল বাস্তবে দেখি নাই তয় নাটক সিনেমায় দেখছি।আমাগো ভাই আপনেরে বিয়া কইরা জিতছে এইটা আমি জোড় গলায় কইতে পারি।
ওর কথা শুনে মায়া হাসছে।মেয়েটা সত্যি সহজ সরল মুখে যা আসে বলে দিচ্ছে।
“ভাবি চলেন নিচে যাই আপনের বাড়ি আপনের সংসার টা কেমন দেখবেন না?চলেন ঘুরে ঘুরে দেখবেন।
মায়া শায়লার সাথে নিয়ে নিচে চলে যায়।ওকে দেখে সিতারা কাছে আসে।হাসি মুখে বলে “আম্মা আসেন রান্না শেষ সকালের নাস্তাটা খেয়ে নিন।সিতারার কথা শুনে মায়ার ভালো লাগে।কিন্তু ও এখন খাবে না বলে জানায়।পুরো বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখতে ইচ্ছে হয়েছে ওর তাই আর সিতারা জোড় করে না।
“মেহরাবের ছোটো বেলা থেকেই সিতারা আর তার স্বামী মকবুল এ বাড়িতে আছে।এর পর সিতারার ছেলে হালিম ও এ বাড়ির কাজে আছে এখন ওর বউ ও।ওদের নিজস্ব বাড়ি আছে সেটা কাছেই।মকবুল আর হালিম এ বাড়ির কেয়ারটেকার আর গার্ড বলে বেশির ভাগ সময় ওরা এখানেই থাকে।সিতারা আর শায়লা বাসার সব কাজ করে দিন শেষে নিজ বাসায় যায়।মেহরাব ওদের নিজের আপনজনের চাইতেও বেশি ভালো জানে।বাপ মা হারা মেহরাবকে সিতারা ছেলের মতোই জানে।
সিতারা সব সময় উপর ওয়ালার কাছে দোয়া করতো।মেহরাবের জীবনে এমন কেউ আসুক যে কিনা ওর সংসারটাকে আগলে রাখবে।ওর জীবনের না পাওয়া কষ্ট গুলো ঘুচে দিবে।অবশেষে একজন ওর জীবনে এলো।আর মেহরাব ওর জীবন সঙ্গী নিজেই পছন্দ করে এনেছে।সত্যি ওর পছন্দ আছে এক টুকরা চাঁদ কে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে।এ সব ভেবে খুশিতে সিতারার চোখে জল চলে আসে।
শায়লাকে সঙ্গে নিয়ে মায়া পুরো বাড়িটি ঘুরে দেখলো এতো সুন্দর বাড়ি আর বাড়ির প্রত্যেকটা রুমে কারুকাজ করা ফার্নিচার দিয়ে সাজানো গোছানো।সবটা দেখে ওর ভিষণ ভালো লাগে।এরপরে শায়লার সাথে ও বাগানে যায়।বাগানের ফুল গাছ গুলোর পরিচর্চা শায়লার স্বামী হালিম করে তবে মাঝে মাঝে শায়লা গাছে পানি দেয়।আজও শায়লা পানি দিয়ে চলে যায়।মায়া গাছ গুলো দেখতে থাকে।
“মর্নিং ওয়াক শেষ করে বাড়ির ভেতর আসে মেহরাব।মেইন দরজা দিয়ে ডুকতে যাবে ঐ মুহূর্তে বাড়ির বাগানে চোখ যায়।মায়া বাগানের এক পাশে গোলাপ গাছের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।নানা রংয়ের ফুটন্ত গোলাপ গুলো ছুয়ে ছুয়ে দেখছে।ওর ফুল গাছ খুব প্রিয়।মেহরাবের কাছে এই মুহূর্তে মনে হলো ওর সদ্য বিয়ে করে আনা মায়া নামক গোলাপটির কাছে বাগানের ফুটন্ত গোলাপ গুলো তুচ্ছ।সাজগোজ ছারা অতি সাধারন মেয়েটাকে বেশ স্নিগ্ধ লাগছে।পলকহীন চোখে কয়েক মিনিট মায়াকে দেখে নিলো কিন্তু আর পারছে না এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে।বাসার ভেতরে ডুকে যায় মেহরাব।
শায়লা মেহরাব কে দেখতে পেয়ে মায়ার কাছে ছুটে যায় “ভাবি ভাইজান আইছে আপনে রুমে যান।শায়লার কথা শুনে মায়া রুমে চলে আসে।মেহরাব রুমে নেই মায়ার বুকটা দুরুদুরু করছে।মানুষটার সাথে ভালো করে কথাই হলো না আর সেটার সুযোগ হলো কোথায়?সামনে পরলেই কি বলবে সেটা ভাবছে।
ওয়াশরুম থেকে শব্দ আসছে মায়া বুঝতে পারে মেহরাব ফ্রেশ হচ্ছে।মায়া বেলকনিতে এসে দাড়ায়।বেশ বড়ো জায়গাটা এখানেও কিছু ফুল গাছের টব রাখা আছে।কিছু গাছে ফুল এসেছে।বেলকনি থেকে বাড়ির বাগানটা পুরোপুরি দেখা যায়।সেখানটা দেখতে বেশ ভালো লাগছে ওর।
ভাবনার মাঝেই পরক্ষণে মনটা কেমন খারাপ লাগা শুরু করে।গ্রামে যখন তখন খোলা জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছে কিন্তু শহরের বুকে সেটা করা যাবে না।আবার পরিবারের মানুষ গুলোর কথাও মনে পরে যায়।কি করছে ওরা?মায়ার কথা কি কেউ ভাবছে নাকি মেয়েকে বিদেয় দিয়ে সবাই হাফ ছেরে বেঁচেছে?
ওয়াশ রুমের দরজা খোলার শব্দে মায়া পেছন ঘুরে তাকায়।খালি গায়ে টাওয়াল পরে মেহরাব বের হয়েছে।ওকে ঐ অবস্থায় এক নজর দেখে চোখ বন্ধ করে আবারও ঘুরে দাড়ায়।লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে ইশ কি দেখে ফেললো ও।না জানি এখন কি মনে করে মানুষটা।মায়ার এমন কাজ মেহরাবের চোখ এরায় না মুচকি হেসে চেন্জ করে নেয়।মায়া তখনও নত জানু হয়ে আছে।এতো লজ্জা মেয়েটার?মেহরাব ওর ঠিক পেছনে গিয়ে দাড়ায়।আর বলে
“মাথা উঁচু করো
মায়া ওর কন্ঠ স্বর পেয়ে নাক মুখ আরো খিচে ফেলে।হায় আল্লাহ এ অবস্থায় মানুষটা ওর নিকট এসেছে এখন ও কিভাবে আবার তাকাবে?পেছন না ফিরে মাথা সোজা করে।মোহরাব ওর থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরত্ব রেখে মায়ার খোপা করা চুলের ক্লিপটা খুলে ফেলে।সঙ্গে সঙ্গে লম্বা সোনালী চুল গুলো হাটু ছাড়িয়ে পরেছে।আচমকা এমনটি হওয়াতে মায়া হকচকিয়ে যায়।মেহরাব মায়াকে ওর সামনের দিকে ফিরতে বলে।মায়া ধীরে ধীরে পেছন ঘুরে মেহরাবের দিকে চেয়ে হাফ ছাড়ে মনে মনে বলে উফ বাঁচা গেলো কাপড় পরে নিয়েছে।মেহরাব মায়াকে বলে-
“আমার সামনে সব সময় চুল এভাবে খোলা রাখবে আর রুমের বাইরে সব সময় চুল বেধে রাখবে মনে থাকবে?
মায়ার মেহরাবের এমন কথা শুনে আগামাথা কিছুই বুঝে আসে না।শুধু ওর কথায় মাথা উপর নিচ করে সায় দিলো।মেহরাব ওকে আসতে বলে রুমের ভিতর গেলো ।মায়া পিছু পিছু গেলো।মেহরাব ওকে বসতে বলে মাথার চুল গুলো আয়নায় ঠিকঠাক করে বলতে লাগলো
“বাড়ি কেমন লাগলো সবটা ঘুরে দেখেছো?
“হুম দেখছি অনেক সুন্দর।
“শুনেছি তুমি নাকি আগামীবছর এইস এস সি পরিক্ষা দিবে?
“হুম
“লেখা পড়ায় কেমন তুমি?মানে লেখা পড়া কি বাকিটা শেষ করতে চাও?
এ কথা শুনে মায়ার হার্টবিট বেড়ে যায়।ওর তো লেখাপড়া করতে তেমন ভালো লাগে না আর মোটামুটি ছাএি ভালোই।তারপরও লেখাপড়া করতে আগ্রহী না এসব মেহরাব কে মুখে বলতেও পারবে না তাই অনিচ্ছা সত্বেও বলতে হলো
“হুম লেখা পড়া করতে চাই।
ওর মুখ থেকে এ কথাটা শুনে মেহরাব খুশি হয়
“ভেরি গুড আমি এটাই শুনতে চেয়েছিলাম আফটার অল মীর মেহরাব এর স্ত্রী বলে কথা।কেউ যেনো না বলতে পারে এসএসসি পাশ মেয়ে বিয়ে করেছি।ভাবছি আমি তোমার সব কাগজপএ আনার ব্যাবস্থা করে এখানেই ভর্তি করিয়ে দিবো।
ওর কথা শুনে মায়ার মুখটা চুপসে যায়।ইশ শান্তিতে একটু সংসার করবে তা না লেখাপড়ার চাপ টা আগেই দিয়ে দিলো।
মেহরাব আজ অফিস যাবে ফিরোজ অনেক বার নিষেধ করে।নতুন বউ রেখে অফিস না আসতে কিন্তু মেহরাব এর এক কথা ও যাবে।মায়ার সামনে ও নিজেকে পরিপাটি করে নেয়।মায়া ওকে কয়েকবার চেয়ে চেয়ে দেখে।কি সুন্দর করে নিজেকে ফিট করে নিলো।দেখতে ও মা শাহ আল্লাহ সুন্দর লাগছে।মেহরাব মায়ার উদ্দেশ্য বললো
“এভাবে চোরা দৃষ্টি না দিয়ে সরাসরি দেখার অভ্যস্ত করো।
মায়া এবারও লজ্জা পায়।মানুষটাকে দেখে ভদ্র মনে হয় কিন্তু এতো দেখছি ঠোঁট কাটা প্রকৃতির কথা বলতেও দ্বিধা বোধ করে না।
মেহরাব মায়াকে নিয়ে নিচে গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে।শায়লা আর সিতারা খাবার পরিবেশন করে।অনেক প্রকার নাস্তা দেখে মায়া অবাক এতো কিছু খাবে কি করে?মায়ার পুরোনো কিছু স্মৃতি মনে পরে যায়।সকাল বেলা তেমন ভালো খেতে পারতো না।বেশির ভাগ সময়ই আয়মন ইচ্ছা কৃত পান্তা ভাত না হয় শুকনো রুটি তরকারি দিলেও সে সব খেয়ে ওর পেট ভরতো না।এসব মনে করে বুকের মাঝে হু হু করে ওঠে।মায়াকে অনমনস্ক দেখে মেহরাব ডাক দেয়।মায়া ওর প্লেটের দিকে তাকিয়ে দেখে মেহরাব খাবার উঠিয়ে দিয়েছে।
ইশারা করে খেতে কিন্তু মায়া খাচ্ছে না।সামনে সিতারা আর শায়লা দাড়িয়ে ওদের রেখে খেতে কেমন সংকোচ হচ্ছে ওর।তাই ওদের কে সাথে খেতে বলে মায়া।শায়লা জানায় ওরা খুব সকালে বাসা থেকে খেয়ে এসেছে পরে খাবে।
মায়া খাচ্ছে এর মাঝে মেহরাব বলে
“রান্না করতে পারো?
“পারি একটু একটু
“তাতেই চলবে
মেহরাব খাওয়া শেষ করে উঠে যায়।মায়া উঠতে গেলে ওকে হাত নাড়িয়ে ইশারা করে না উঠতে।খাওয়া শেষ করে যেনো ওঠে তাই বলে।মায়া খাচ্ছে আর পাশ থেকে শায়লা এইটা সেইটা নিয়ে গল্প শুনাচ্ছে।
“অনেক দিন পর অফিস যায় মেহরাব।ফিরোজের কাছ থেকে বিয়ের খবরটা পায় সবাই তাই ও যেতেই সবাই একসাথে ফুলের বড়ো তোরা দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়।আর সবাই আবদার করে স্যার কে ট্রিট হিসেবে পার্টি দেওয়ার জন্য।মেহরাব সবাই কে আস্বস্ত করে এই বলে “একটু ফ্রি হয়ে কোনো একদিন অফিসেই পার্টি দিবে।সবাই বেশ খুশি হয়।
মেহরাব অন্যান্য দিনের মতো আজ কাজে মনোনিবেশ করতে পারছে না।কাজের মাঝে ঘুরে ফিরে মায়ার কথা মনে পরছে।
কি করছে ওর মায়াবিনী?ওকে তো একটু সময় দেওয়া দরকার।
ভাবনা চিন্তার মাঝে ফোন আসে ওর।কয়েক মিনিট কথা বলে ফোন রাখে।ফিরোজ কে বলে দুপুরের পরে অফিস থেকে বের হয়ে যায় মেহরাব।বাসায় এসে রুমে মায়াকে দেখতে পায় না।ফ্রেশ হয়ে রুমের বাইরে এসে সিতারার কাছে শুনতে পায় মায়া ছাদে গেছে।ও ছাদের দিকে পা বাড়ায় সেখানে গিয়ে দেখতে পায় মায়া ছাদের রেলিং ধরে সামনের দৃশ্য দেখছে।
নিঃশব্দে মেহরাব মায়ার পেছনে গিয়ে দাড়ায়।চুলগুলো খোলা অবস্থায় আছে।মেহরাবের কি জানি কি হলো একটু ঝুকে চুলের ওপর নাক স্পর্শ করে।বার কয়েক নিঃশ্বাস নিয়ে চুলের ঘ্রাণ নেয় মেহরাব,আসলে চুলের আলাদা কোনো ঘ্রাণ হয় না কিন্তু যার যার কাছে তার তার প্রিয় মানুষটার চুলের ঘ্রাণটা নেশালো মাধকতাময় মনে হয়।এ এক অন্যরকম অনুভূতি সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
কারো উপস্থিতি টের পেয়ে মায়া ঘুরে দাড়ায়।হঠাৎ করে মেহরাব কে দেখে চমকে যায়।লোকটা কখন আসলো তাও এতোটা কাছে একটু ও টের পেলো না যে?
“আপনি কখন আসলেন?
“এই তো এক থেকে দুই মিনিট হবে
মনেমনে মেহরাব একটু বিরক্ত ইশ একটু রোমান্স করতে চাইলাম দিলো না করতে।কবে যে সেই পার্ফেক্ট সময়টা আসবে আল্লাহই জানে।
বলে ট্রাউজারের পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে একটা নম্বরে কল দেয়,কল রিসিভ হতেই মায়ার হাতে মোবাইল দিয়ে কথা বলতে বলে।মায়া মোবাইল হাতে নিয়ে হ্যালো বলতেই ওপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসা কন্ঠস্বর শুনে মায়ার বিষন্ন মনটা মুহূর্তেই ভালো হয়ে যায়।গতোকাল থেকে পরিবারের লোকজনের কথা খুব করে মনে পরতেছিলো।কিন্তু ও মেহরাব কে কথা টা বলতে পারেনি।
প্রথমে বাবার সাথে পরে বোনের সাথে অনেকক্ষণ কথা বললো।মায়ার এমন মায়ামাখা খুশিময় মুখ টা দেখে মেহরাব ও খুশি।
কলিমউল্লাহ মামুর বাড়িতে কাশেম মিয়া আর পুষ্পের অবস্থান।নিজের একটা ফোন নেই বলে সেখানে যায় মেয়ের খোঁজ খবর নিবে বলে।মেহরাবকে কল করলে ও তখনই অফিসে থেকে চলে আসে মায়ার সাথে তাদের কথা বলিয়ে দিবে বলে।পুষ্পের সাথে বেশ অনেক সময় ধরে কথা বলে মায়া।দেখেই বুঝা যাচ্ছে মায়া অনেক খুশি।কথা শেষ করে মোবাইলটা মেহরাবের হাতে দেয়।ও একটু দুষ্টুমি স্বরে মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে
“আমি তো জানতাম তুমি কম কথা বলো কিন্তু এখন দেখলাম তুমি বেশ অনেক কথাই বলতে পারো।
“আমার জায়গায় আপনি হলে এমনটাই করতেন।
কথাটা খুব ধীর কন্ঠে বললেও মেহরাবের শুনতে কষ্ট হয় না।সত্যিই আপন জনদের ছেরে দূরে থাকাটা অনেক কষ্টের।আর “আপন মানুষ গুলো জীবনে না থাকাটা যে কতো কষ্টের সেটা ওর চাইতে কেউ ভালো জানে না।”
চলবে……
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন )