#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-৫
প্রখর রোদ বিরাজমান তার মাঝে হঠাৎই ক্ষণে ক্ষণে রং পাল্টায় নীলাকাশ। চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসেছে।নীল গগণ ঢেকে যায় কালো মেঘে। যেনো এই বুঝি এলো অবিরাম বৃষ্টি।
আজ মায়া কলেজ যায়নি মনটা বিষন্নতায় ছেয়ে আছে।বাড়ির পাশের খালের ঘাটের পাটাতনের ওপর পা পানিতে চুবিয়ে আজও বসে আছে।আবহাওয়া মোটেও ভালো নয় যখন তখন বৃষ্টি নামবে কিন্তু সেদিকে ওর মোটেও খেয়াল নেই।আকাশে মেঘের এমন ঘনঘটায় পাখির উড়াউড়ি দেখে অনুমেয় জনজীবন বিপর্যস্ত করতে নামছে শ্রাবণের বারিধারা।আশেপাশের গাছের উপর ছুঁয়ে যাওয়া মেঘ আকাশের বুক চিরে বৃষ্টি হয়ে নামতে লাগলো।
বৃষ্টির মোটা জলকণা মায়াকে ছুয়ে দিতেই গা কেপে উঠলো।জায়গা থেকে সরলো না এক চুল পরিমান।মনে হচ্ছে এই বৃষ্টির অপেক্ষায় ছিলো ও।বৃষ্টির পানির সাথে মায়ার চোখের নোনা পানি গুলো মিশে যাচ্ছে।প্রকৃতি হয়তো বুঝতে পেরেছে ওর মনের কথা গুলো।তাইতো ওর সমস্ত দুঃখ কষ্ট গুলো ধুয়ে মুছে শেষ করে দিচ্ছে কিন্তু আদৌ সেটা সম্ভব হবে?
বৃষ্টির এ সময়টাতে ঘরের কোথাও বোনকে দেখতে না পেয়ে পুষ্পএকটা বড়ো পলিথিন পেচিয়ে বাইরে বের হয়।কয়েকবার ডাকলেও সাড়া পায়নি বোনের।শেষে সামনে এগিয়ে খালপার গেলে সেখানেই মায়াকে দেখতে পায়।পুষ্প মায়াকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে যায় ও বুঝতে পারে মায়া ইচ্ছে করেই ভিজছে।হাত ধরে টান দিতেই মায়ার ধ্যান ভাঙ্গে।
“বুবু এখানে কি করছো দেখছো মেঘ ডাকছে চলো।
“তুই যা আমি পরে যামুনে।
“না তুমি আমার সাথেই যাবা চলো।
মায়াকে এক প্রকার জোড় করেই পুষ্প দাঁড় করায়।
“বুবু এমন পাগলামি কেনো করছো ?শরির খারাপ হবে না কও?
তাছ্যিল্যের হাসি দিয়ে মায়া মনে মনে বলতে থাকে
“যেখানে মনটাই শতো আঘাতে জর্জরিত সেখানে শরির খারাপের চিন্তা করাটাই বোকামি।
“কি হলো বুবু কিছু কইছো না যে?
মায়া এখনও চুপ কি বলবে ?ওর এখন কিছু বলতে মন চায় না।
“বুবু তুমি কিছু না কইলেও আমি আইজ চুপ থাকুম না।মায়ের লগে আমি কথা কমু।এই বিয়াতে তোমার মত নেই।তার ওপর ঐ বেডা রমজান ওয় তো একটা খারাপ জঘন্য একটা মানুষ।
পুষ্পর কথা শুনে মায়া ওকে থামিয়ে দেয়
“নাহ বইন তুই মায়রে কিছুই কইবি না।আমি রাজি তো এই বিয়াতে।হেয় যেইটা ভালো মনে করছে ওইটাই হইবো।
“কিন্তু বুবু তুমি সবটা জানো তারপর ও রাজি হও কেমনে আমার বুঝে আসে না।
“তোর বুঝতে হইবো না আমি জানি বাজান ও রাজি না তয় তারে ও বুঝানোর দায়িত্ব আমার।
পুষ্প আরো কিছু বলতে গেলে মায়া বলতে নিষেধ করে।বোনের হাত ধরে মায়া ঘরের দিকে পা বাড়ায়।
———
আগামীকাল মেহরাবের শহরে ফেরার কথা থাকলেও আজ ফিরোজের সাথে কথা বলে জানিয়েছে আরো দুই/তিন দিন পর যাবে।ফিরোজ ওর কথা শুনে টাস্কি খায়।যে মানুষটা একটা দিন ছুটি কাটাতে চায় না সেই মানুষটার কাজ শেষ অথচ সব কিছু ফেলে আরো দু তিন থাকতে চাইছে?ব্যাপারটা সন্দেহ জনক লাগলো।ফিরোজ কিছু একটার আভাস পেয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো
“ঘটনা কি বড়োভাই যেই কাজের জন্য গিয়েছেন সেই কাজ তো শেষ হলো কিন্তু আসবেন না কেনো?
মেহরাব ওর কথা শুনে সোজা সাপ্টা উওর দেয়
“নানু বাড়ি এসেছি শুধু কি কাজের জন্য ?মন ভরে কি একটু বেড়ানো যাবে না?
“অবশ্যই যাবে ‘ বড়োভাই মন ভরে বেড়ান আমি তো আছি এখানে নো টেনশন।আর কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে বলবেন সোজা চলে আসবো।
“ঠিক আছে এখন রাখছি ।
আজ সকালে জমির ঐ জায়গাতে ঘর উঠানোর জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে।মেহরাবের ইচ্ছা ছিলো আরো কয়েকদিন পরে করার কিন্তু মতামত পরিবর্তন করে কলিমউল্লাহ মামু কে বলে নিজে দাড়িয়ে থেকে কাজটা শুরু করিয়েছে।মনে এক অন্যরকম ভালো লাগা অনুভূত হচ্ছে আরো কয়দিন থাকবে বলে।এরই মধ্যে ও মায়ার সব ডিটেইলস্ জানতে পারবে এটাই আশা করছে।শুধু তাই না মেহরাব রিতিমতো পাগল প্রায় তার মায়াবিনীকে আরেক নজর দেখার জন্য।
জমির ওখান থেকে বাসায় আসার পথেই বৃষ্টি নামে।মোটামুটি ভিজে বাড়ির ভেতর ডুকে পরে।এই মুহূর্তে রাসেল বাড়িতে নেই ওদের বাড়ি গেছে ।আর বলে গেছে আসার সময় ওর জন্য দুপুরের খাবার নিয়েই ফিরবে।মেহরাব রুমে ডুকে শার্ট খুলে হ্যাঙ্গারে রেখে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশ রুমে যায়।পরনের প্যান্ট চেন্জ করে ট্রাউজার পরে উদাম গায়ে শরির মুছতে মুছতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়ায়।হঠাৎ আয়নায় মনে হলো কিছু একটা দেখেছে।মোছা বাদ দিয়ে সামনে তাকায় কই কিছু না।দৃষ্টি সরিয়ে মুছতে লাগলে আবারও চোখ যায় আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বর জায়গায় এ কাকে দেখছে ও?
আয়নার অতি নিকটে গিয়ে “মায়াবিনী” বলে হাত বাড়িয়ে দেয়।কিন্তু কই সে? এটা যে নিজেরই প্রতিবিম্ব।নিজের মাথায় নিজেই গাট্টা মে রে হেসে ফেলে।সত্যিই মাথা খারাপ হয়ে গেছে ওর।তাই তো যখন তখন হ্যালুসিনেশন হচ্ছে ওর সাথে।
——-
অন্যদিকে বিয়ের তারিখ পাকা পাকি হওয়াতে বেজায় খুশি রমজান।হওয়ারই কথা ওর মতো মানুষ এই গ্রামের সবচাইতে সুন্দর মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে এটাতো ওর সাতজনমের কপাল।কিন্তু মায়া তো ওকে দুচোখের বি”ষ মনে করে।সেটাতে ওর কিছুই যায় আসে না।ও মায়াকে জোর করে হলেও পাবে এটাই অনেক।রমজানের এমন খুশিতে মনে হচ্ছে এই প্রথম বিয়ের পিড়িতে বসতে যাচ্ছে।খুশির জোয়ারে আর একটা দিনও দেরি করতে চায় না কালই বিয়ে করবে বলে মদন মুন্সির কাছে আবদার করে।
কথাটা শুনে মদন মুন্সি ছেলেকে বোঝাতে গেলেও ব্যর্থ হয়।হবে না কেনো এমন রগচটা নে”শা খোর ছেলে তার যা বলবে তাই করিয়ে ছাড়বে।অগত্যা মায়াদের বাড়ি খবর পাঠায় মদন মুন্সি।অবশেষে আয়মন সেটাতেই রাজি হয়।ঠিক করা হলো আগামীকাল বিয়ে করে একবারে সাথে করে নিয়ে যাবে।
আয়মন মদন মুন্সির থেকে বিয়ে বাবদ বাকি টাকাটা আজ পেয়েছে আর তাই ওর মনের আনন্দ দেখে কে।এসব দেখে কাশেম মিয়া বউ কে অনেকক্ষণ যাবত গা”লা গা”লি আর খারাপ কথা শুনায়।সেটাতে আয়মন তেমন রিয়েক্ট করে না।কাশেম মিয়া এক পর্যায়ে সহ্য করতে না পেরে হাতের কাছে থাকা মোটা লা”ঠি নিয়ে বউকে মা”রতে গেলে মায়া আর পুষ্প তাকে ঠেকায়।
বাবাকে একটু শান্ত করে মায়া বাবাকে বলে
“বাজান তুমি শান্ত হও আমি তো রাজি তাই তুমিও রাজি হইয়া যাও।হয়তো এইটাই আমার নিয়তিতে আছে।তয় তুমি উপর ওয়ালার প্রতি ভরসা রাখো।সে যদি চায় আমার খারাপ কিছু হইবো না।
মেয়ের কথা শুনে কাশেম মিয়া কান্না করে দেয়
“মারে এইটা কেমন নিয়তির খেলা।তোর মায় তোরে ইচ্ছা কইরা আ”গুনে ফেলাইতাছে আর তুই সেইটাই মাইন্যা নিছোস?ওয় তোর মা না সৎ মা
“এমন কথা কইয়ো না তুমি।একটু চুপ থাকো বাজান তোমার এমনিতেই শরির খারাপ।এমন করলে শরির আরো খারাপ হইবো যে।
“শরির দিয়ে কি করবো রে মা?বাইচ্যা থাইক্যা মাইয়্যার এমন সর্বনাশ আমি দেখতে পারুম না আল্লাহ আমারে তুলে নিয়া যাক।
এসব কথা বলে আহাজারি করছে কাশেম মিয়া।মায়া বাবাকে শান্তনা দিয়েই যাচ্ছে।অথচ এ সবে আয়মন কোনো পাওাই দিচ্ছে না।টাকার কাছে যে ওর আত্মসম্মান আর মনুষত্ব্য বিক্রি করে দিয়েছে।
——-
বিকেলে মেহরাব রাসেল কে নিয়ে গ্রামের পাশে বয়ে যাওয়া নদীর পার ঘুরতে আসে।জায়গাটা সত্যিই সুন্দর রাসেল ওকে ঘুরে ঘুরে চারদিকটা দেখাতে লাগলো।নদীর পারে অনেকটা অংশ জুড়ে পার বাঁধানো।এখানে যারা ঘুরতে আসে অনেকেই পারে বসে নদীর দৃশ্য উপভোগ করে আর আড্ডা দিয়ে থাকে।রাসেল আর মেহরাব ও এই জায়গায় বসে কথা বলছে।কথার ফাকে মেহরাব রাসেল কে জিজ্ঞেস করে
“রাসেল এই গ্রামের অনেককেই তো তুমি চিনো তাই না?
মেহরাবের কথা শুনে রাসেল বলে
“হুম অনেকরেই চিনি কিন্তু ক্যান ভাইজান?
“আচ্ছা এই গ্রামের মায়া নামের কাউকে চিনো তুমি?
রাসেল মেহরাবের মুখে এই গ্রামের কোনো মেয়ের কথা শুনে অবাক হয়।সেটা না হয় ঠিক আছে কিন্তু মেয়ের নামটা পর্যন্ত বলে দিলো এটা কেমনে সম্ভব?
“ভাইজান আপনে কোন মায়ার কথা বলছেন?
“রাসেল তুমি কোন মায়াকে চিনো আর কয়টা মায়া আছে এই গ্রামে বা আশেপাশের কোথাও?
“এই গ্রাম আর আশপাশ মিলায়ে মোট একটাই মায়াই আছে।আর এর মতো ভালো মেয়ে এই একটা গ্রামে খুঁজে পাওয়া যাবে না।কিন্তু..
“কিন্তু কি রাসেল বলো আমায়।
“ওরা খুব গরিব।আচ্ছা ভাইজান এইটা বলেন ওরে চিনলেন কেমনে আর নামই জানলেন কেমনে?
রাসেলের এমন জানার আগ্রহ দেখে মেহরাব মুচকি হাসে।
“শোনো এ সব পরে বলবো আগে একটা কাজ করে দেও আমার।তুমি ওর সম্পর্কে ডিটেইলস্ জেনে আমাকে জানাবে আর সেটা কালকের মধ্যেই ওকে।
“ওকে ভাইজান আপনি একটা মহৎ কাজ দিছেন আর আমি সেইটা করুম না এমনটা হয় বলেন।ধরেন আপনের নব্বই পার্সেন্ট কাজ হয়ে গেছে।
“ঠিক আছে চলো এবার যাই”
তখনকার মতো ওরা বাড়ি ফিরে আসলো।
~~
পরদিন মেহরাব সকাল থেকেই ওর গৃহনির্মাণ প্রকল্পের কাছেই আছে।কয়েক দিন হলো অফিসের কাজ গুলো করতে পারছে না আবার এখনই ফিরে যাবে সেটাও পারছে না।তাই বসে বসে বোর না হওয়ার চাইতে এখানে এসে কাজের খোঁজ খবর নেওটা উওম মনে হয়েছে।তা ছাড়া এটাতো ওর নিজের কাজ।এই অল্প সময়ে এখানের লেবার গুলোর সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক হয়েছে ওর।
শুধু ওর কাজ বলে নয় নানু বাড়ির এলাকার লোকজন হিসেবে ও সবার সাথে বেশ আন্তরিকতার সাথে কথা বলে,সব কিছুর খোঁজ খবর নিচ্ছে।তারাও মেহরাবের ব্যাবহারে খুশি।
মেহরাবের কাছে নিজের বিজনেস এর চাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখন মায়ার সম্পর্কে জানাটা।তাই ইচ্ছা থাকলেও এই মুহূর্তে শহরে ফিরতে চাইছে না।
সেই সকাল থেকে মনের মধ্যে একটা অস্থিরতা বিরাজ করছে কখন রাসেল আসবে সেটা ভেবে।এমনিতেই বেচারা এই দু তিন ঠিক মতো খেতে পারছে না।মাঝে মাঝে নিজের এমন অবস্থা ভেবে হেসে দেয় মেহরাব।টিনএজারদের মতো নতুন নতুন প্রেমে পরলে যা হয় আরকি।কিন্তু ও তো পরিপূর্ণ যুবক তাতে কি হইছে প্রেমে তো নতুন পরেছে তাই অস্থিরতা আর ভাবনা টা ওকে বেশ ঝেকে বসেছে।
অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে দুপুরের আগ মুহূর্তে রাসেল আসে।মেহরাব বেশ উৎসাহ নিয়ে রাসেল এর সামনে যায়।কিন্তু রাসেল ওকে যেটা বলে তাতে মনে হলো ওর মাথায় পুরো আকাশটাই ভেঙ্গে পরছে।কি শুনলো এটা হয়তো ভুল শুনেছে।কিন্তু না পর পর কয়েক বার রাসেল এর মুখ থেকে একই শব্দটা শুনতে পায় ভাইজান “মায়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে আর আজই ওর বিয়ে।”
চলবে……
#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-৬
বিয়ে বাড়ি অথচ সাজসজ্জার ছিটে ফোটাও নেই।থাকবে কি করে হুট করেই বিয়ের প্রস্তুতি চলছে।বাড়িটিতে শুধুমাত্র আয়মনের বাপের বাড়ির লোকজন আর আশেপাশের কিছু মানুষ জনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আয়মনের দুই ভাইয়ের বউ,পুষ্প আর কয়েকজন মহিলারা মিলে গ্রামের নিয়ম অনুযায়ী মায়াকে গায়ে হলুদ লাগিয়ে গোসল করিয়ে দেয়।গাছ থেকে সদ্য তুলে আনা মেহেদী পাতা পাটায় বেটে এনে রাখা হয়েছে।আয়মনের কথা মতো পুষ্প মায়ার হাতে মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছে।
অনিচ্ছা থাকা সত্বেও সেই মেহেদীর রঙে দু হাত রাঙিয়েছে মায়া।নকশাবিহীন মেহেদীতে ফর্সা হাত দুটো দেখতে অপূর্ব লাগছে।মায়া মনে মনে চেয়েছিলো এ হাতের মেহেদীর রঙ যেনো গাড়ো না হয়।ও চাইছে না এ গাড়ো রঙ টা ঐ নিকৃষ্ট মানের লোকটার চোখে পরুক।কিন্তু না মনের উইশ টা পূর্ন হলো না।মনটা বিষন্নতায় ছেয়ে আছে।
মদন মুন্সি আগেই লোক মারফত বিয়ের জিনিস পএ মায়াদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলো কিন্তু মায়া সে সব জিনিস ছুয়ে ও দেখেনি।বিয়ের শাড়ি গয়না পরাতে গেলে ও পরবে না বলে জানিয়ে দেয়।আয়মন এক দফা কটু কথা শুনিয়ে যায় মায়াকে কিন্তু মায়া সেটাতে ভ্রুক্ষেপ করে না।ওর একটাই কথা শাড়ি পরবে কিন্তু ওদের বাড়ির নয়।পরতে হলে ওর মায়ের শাড়ি পরবে।
কাশেম মিয়া তার প্রথম বউয়ের বিয়ের শাড়িটি রেখে দিয়েছিলো।মেয়ে যখন একটু বড়ো হয় তখন মায়ের জিনিস মেয়েকে দেয় কাশেম মিয়া।মায়া সেটা পরম যত্নে আগলে রাখে।মায়ের মুখটা ওর জানা নেই কিন্তু এই শাড়িটি দেখলে মায়ের কথা ভাবতো মাকে অনুভব করতো।আজ ওটা বের করেছে।কমলা রঙের শাড়ি একটা সময় গাড়ো বর্ণের থাকলেও এখন সেটার রং অনেকাংশে হালকা বর্ণের হয়ে গেছে।তবুও মায়া এটাই পরবে।
পুষ্প ওকে শাড়ি পরিয়ে নিজের সাজের প্রসাধনি দিয়েই হালকা সাজগোজ করিয়ে দেয়।আর লম্বা সোনালী চুল গুলো খোপা করে ওর কাছে থাকা সোলার গাজরা ফুল টা খোপায় পরিয়ে দেয়।
মাথায় ঘোমটা দিয়ে বোনকে সামনে বসিয়ে মায়া দেখতে থাকে।
“ইশ বুবু তোমারে দেখতে ঠিক রাণীর মতো লাগছে।এখন শুধু একটা রাজার দরকার।
মায়া কোনো কথা বলছে না চোখ থেকে টপ টপ করে পানি বের হচ্ছে।ও ভাবতেই পারছে না আজকের পর থেকে কোনো এক অমানুষের নিকট তাকে সপে দিতে হবে।চোখ বন্ধ করে উপর ওয়ালার কাছে প্রাথর্না করছে এ বিয়েটার হাত থেকে রক্ষা করো প্রভু।
পুষ্পের মনে পরে রাজা তো নয় এ তো সয়ং শয়”তানের ভাই আসতেছে। মায়ার কান্না ভরা মুখ দেখে বোনকে শান্তনা দিতে লাগে
“বুবু কাইন্দো না আমার মন কইতাছে এ বিয়ে হইবো না।দেখে নিও।
মায়া এ সবে থামে না বোন তাকে মিথ্যে সান্তনা দিচ্ছে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু এতে কি কোনো প্রকার মিরাকেল ঘটার সম্ভাবনা আছে?
~~~~
দুপুরের পর থেকেই মেহরাব রুমের খাটের ওপর চিৎ হয়ে শুয়ে আছে।চেন্জ তো দূর পায়ের সু টাও খোলেনি।বেচারার মনে প্রেম জাগার আগেই ছ্যা’কা খেয়ে নিলো ভাবতেই পারছে না এমনটা হবে।মনে মনে মায়ার জন্য কতো কিছুর অনুভব সৃষ্টি হয়েছিলো জাস্ট একটা কথা শুনে সবটাই শেষ হয়ে গেছে।কিন্তু শেষ বললেই কি শেষ করে দেওয়া যায়?
তখন রাসেলের মুখে এ সব শুনে ওর মনে হয়েছিলো মায়াদের বাড়ি ছুটে যেতে।জোড় করে হলেও ওকে নিয়ে আসবে কিন্তু যেখানে একবারের দেখায় একতরফা ভালো লাগা ভালোবাসার জন্ম সেখানে না যাওয়াটাই ভালো।যদি গিয়ে উল্টো অপমানিতো হতে হয় তা ছাড়া মেয়েটা তো আর ওকে ভালোবাসেনা।জোড় করে তো আর এ সব করা যায় না।ভাবছে বিকেলেই শহরে চলে যাবে।শোয়া থেকে উঠে বসে ফোনটা হাতে নিয়ে ফিরোজ কে কল দিতে যাবে সেই মুহূর্তে কলিমউল্লাহ মামুর ডাক শুনতে পায়।
ড্রইংরুমে বসে আছে কলিমউল্লাহ ওকে দেখে হাসি মুখে বললো
“আজ বিকেলে আমার সাথে একটা জায়গায় যাবে।
“কোথায় মামু?
“একটা বিয়ে বাড়ি যাবো।তোমাকে তো তেমন কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেতে পারিনি।আমাকে দাওয়াত দিয়ে গেলো তাই ভাবলাম তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবো।
মেহরাবের ইচ্ছে হলো না আবার মুখে নাও বলতে পারছে না।মামু আবার কি মনে করে তাই হা বলে দিলো।
“তা হলে তুমি রেডি থেকো আমি নিজে এসে তোমাকে নিয়ে যাবো।
“ঠিক আছে মামু।
কলিমউল্লাহ চলে গেলে মেহরাব ভাবছে আজও থাকা লাগবে কিন্তু এই বিষন্ন ভরা মন নিয়ে এ গ্রামে আর মন টিকছে না।কি আর করার মামুকে কথা দিয়েছে তাই যেতে হবে।আজ থেকে কালই শহরে রওয়ানা হবে সেটাই ভেবে রেখেছে।
“বরপক্ষের লোক চলে আসছে বাড়ির উঠানে সবাইকে বসতে দেওয়া হয়েছে।কাশেম মিয়ার বিয়েতে মত না থাকলেও মেয়ের বাবা হিসেবে যে সব দায়িত্ব পালন করার কথা সে টুকু বাধ্য হয়ে করছে।অল্প সময়ের মধ্যে বিয়ের আয়োজন হলেও গ্রামের কয়েকজন সম্মানিত ব্যাক্তিকে দাওয়াত দিতে ভোলেনি সে।তার মধ্যে কলিমউল্লাহ একজন।
বর বেশে রমজান এসেছে কিন্তু ওকে দেখে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।কেমন ঢুলু ঢুলু অবস্থা ওর সাথে আসা ভাই বোনরা ওকে নিয়ে বসে আছে।সামনেই মদন মুন্সি বসে পান খাচ্ছে আর চিপটি ফেলছে।মনে তার অনেক আনন্দ কাশেম মিয়ার এমন সুন্দর মাইয়্যা তার এমন অকর্মা ছেলের লগে বিয়া দেওনের জন্য।
মেহরাব কে সঙ্গে নিয়ে কলিমউল্লাহ কাশেম মিয়ার বাড়িতে আসে।কাঠের বেড়া বিশিষ্ট টিন সেড ঘর।মেঝে পুরাটাই মাটির।দেখেই বুঝা যায় কাশেম মিয়ার আর্থিক অবস্থাটা কেমন।কলিমউল্লাহ কে দেখে কাশেম মিয়া বেশ খুশি হয়।হাসিমুখ বজায় রেখে দুটো চেয়ার এনে বসতে দেয়।মেহরাব কে বসতে বলে কলিমউল্লাহ নিজেও বসে।
“কাশেম মিয়া তুমি ব্যাস্ত হইয়ো না আমরা বসছি।
কাশেম মিয়া ব্যাস্ত হয়ে ঘরের ভেতরে গেলেন কিছু চা নাস্তার ব্যাবস্থা করতে কেনোনা এখনও বিয়ে বাকি আর খেতে একটু দেরি হবে তাই।
মেহরাবের এখানে এসে মনটা কেমন দুরুদুরু করছে।অজানা এক অস্থিরতা বিরাজ করছে মনে কিন্তু কেনো সেটা ও বুঝতে পারছে না।মনে পরছে আজ তো মায়ার ও বিয়ে।মেয়েটা নিশ্চই এতো ক্ষণে বধু বেশে অপেক্ষায় আছে ওর হবু বরের জন্য।ইশ মেয়েটাকে নিশ্চিত বধু রূপে পরীর মতোই লাগছে।কি সব ভাবছে মেহরাব নাহ
আর বসে থাকতে পারছে না।তাই মামুকে বলে উঠে যায় একটু মুক্ত বাতাসে হাঁটা দরকার।মায়াদের ঘরের সাথে লাগোয়া পথ ধরে হাটতে থাকে মেহরাব।
মায়া ওর রুমের সাথে থাকা জানালা দিয়ে আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।আজ মায়ের কথা ভিষণ মনে পরছে।মা বেচে থাকলে জেনে শুনে এমন অনলের বুকে মেয়েকে নিক্ষেপ করতে পারতো না।মায়ার দু চোখ বেয়ে পানি পরছে।
মেহরাব এদিক ওদিক নজর বুলিয়ে চারপাশটা দেখছে হঠাৎ ওর চোখ যায় মায়ার জানালার দিকে।এক নজর দেখে নজর সরিয়ে ভাবলো কি দেখলো ও আবার তাকিয়ে ভাবলো হ্যালুসিনেশন হচ্ছে ওর সাথে।কিন্তু নাহ চোখ মুছে কয়েকবার নজর বুলিয়ে দেখলো এটা কোনো ভ্রম নয় সত্যি।ওর চোখের সামনে মায়া ? হুম মায়াকেই দেখছে বউ সাজে তারমানে ওরা মায়াদের বাড়িতে এসেছে?
কিন্তু ও তো চায়নি মায়ার বাড়ি আসতে।কি করবে তাই ভাবছে এখন চলে যাওয়াটাই ভালো আর কিছুক্ষণ বাদে মায়ার বিয়ে আর সেটা মেহরাব নিজে থেকে এ সব সহ্য করতে পারবে না তাই এখন চলে যাওয়াটাই মঙ্গলজনক।
সেখান থেকে ঘুরে চলে যেতে লাগলে রাস্তার পাশেই বর বেশে রমজানকে দেখতে পায়।মেহরাব ওকে একটু আগে বরের বসার জায়গায় দেখতে পেয়েছিলো তাই চিনতে সমস্যা হয়নি।কিন্তু এখানে কি করছে?সামনে এগিয়ে দেখতে পায় কি একটা খাচ্ছে।কাছে যেতেই পরিষ্কার বুঝতে পারে এই মা”ল টা বাংলা ম”দ খাচ্ছে আর ঢুলছে।মেহরাবের সারা গা রাগে কাঁপতে লাগে এই নে”শা খোঁড় মা”তাল টার সাথে মায়ার বিয়ে ঠিক করেছে এটা ভেবেই।এক সেকেন্ড দেরি না করে ওর সামনে গিয়ে পরনের পান্জাবীর কলার ধরে টানতে টানতে এনে বাড়ির উঠানে ফেলে দেয়।
উঠানে মুরুব্বিরা সবাই কথা বলছিলো হঠাৎ কিছু পরার আওয়াজে সেখানে উপস্থিত মদন মুন্সি সহ সবাই আৎকে ওঠে।কি হলো এটা?মদন মুন্সি কাছে এসে ছেলেকে ধরে আর মেহরাবের দিকে প্রশ্ন ছুরে দেয়
“আমার ছেলেরে এইভাবে ধরে আইন্যা ফেলাইছো ক্যান?
মেহরাব দাঁতে দাঁত পিশে বলতে থাকে
“কেনো করেছি সেটা আবার কোন মুখে জিজ্ঞেস করছেন?
নে”শা খোঁড় ছেলেকে সাথে করে এনেছেন আবার সে লুকিয়ে নে”শা করছে।আপনার লজ্জা করে না এমন একটা ছেলেকে দিয়ে নিষ্পাপ একটা মেয়ের জীবন জেনে শুনে নষ্ট করতে যাচ্ছেন?
কাশেম মিয়া আর কলিমউল্লাহ সহ অনেকেই এতোক্ষণ ধরে এ সব দেখছে প্রথমে তারা কিছু না বুঝলেও মেহরাবের কথায় পরে বুঝতে পারছে।আয়মন এসে মেহরাব কে বলতে লাগে
“দেখেন আপনি স্যারের লগে আইছেন মেহমান হইয়্যা ওই ভাবেই থাকেন।আমাগো এ সবে আপনার কথা কওয়া লাগবো না।মায়ার বাপ আপনে জামাইরে নিয়া বসাইয়া দেন।
কলিমউল্লাহ আর চুপ থাকতে পারলেন না
“ছি ছি কাশেম মিয়া এ তুমি কার সাথে মেয়েটার বিয়া ঠিক করছো?যে কিনা একটা নে”শা খোর?অন্তত জেনে শুনে মেয়েটার জীবন নষ্ট করতে তোমার বুক কাপলো না কাশেম মিয়া?
কাশেম মিয়া লজ্জায় মাথা নত করে ফেলে।আজ তার বউয়ের লোভের জন্য এসব কথা শোনা লাগছে।সম্মান আর থাকলো না বুঝি।বাইরের এ সব হট্টগোলের আওয়াজে ঘরের ভিতর থাকা সবাই বের হয়ে আসে।মায়া আর পুষ্প ও বের হয়ে বারান্দায় এসে দাড়িয়ে যায়।
কাশেম মিয়া আর চুপ থাকতে পারে না।নিজেকে প্রস্তুত করে বলে ফেলে
“ এই রমজানের লগে আমার মাইয়ার বিয়া দিমু না।এইটাই আমার শেষ কথা।
কাশেম মিয়ার কথা শুনে আয়মন তেরে আসে স্বামীর নিকট।
“আপনে পা”গল হইছেন বিয়া দিবেন না কইলেই হইলো
বউয়ের কথা শুনে কাশেম মিয়া ঠাস করে আয়মনের গালে একটা চড় বসিয়ে দেয়।
“আর একটা কথাও কইবি না এতোদিন ধরে সহ্য করছি আর না আমার মা মরা মাইয়্যাডারে মেলা কষ্ট দিছোস।শেষে কিনা ওর জিবনডাই নষ্ট করতে তুই একবার ও ভাবোস নাই।
আয়মন সবার সামনে স্বামীর হাতের চড় খেয়ে রাগে গোজরাতে থাকে।পাশ থেকে মদন মুন্সি বলে ওঠে
“বিয়া হইবো না এইডা কইলেই হইলো নাকি মেলা টাকা দিছি কি এমনি এমনি?
মেহরাব এ সব শুনে স্তব্ধ আর বিমূর হয়ে রয়।প্রথমত মায়ার মা নেই দ্বিতীয়ত সৎ মা টাকার বিনিময়ে এমন একটা নে”শা খোরের সাথে ওর বিয়া ঠিক করছে?উফ ইনি কি মা নাকি
ডা”ইনি? মাথায় কিছু ধরছে না নিজেকে এই মুহূর্তে
পা”গল পা”গল লাগছে এ সব কি শুনছে ও।
কাশেম মিয়া বউকে গিয়ে ধরে
“যে টাকা নিছোস সব বাইর কর ফিরায়ে দে সব।
আয়মন আমতা আমতা করে বলে
“সব তো কাছে নাই অর্ধেক টাকা কাছে আছে
বউয়ের এ সব কথা শুনে কাশেম মিয়ার রাগ আরো বাড়তে থাকে
“বাকি টাকা কি করছোস ?
“আমার বাপের বাড়ি পাঠাইছি ভাইয়ের লেইগ্যা।
কাশেম মিয়া কি বলবে ভেবে পায় না বউয়ের থেকে কাছে থাকা টাকা নিয়া মদন মুন্সির মুখে ছুরে মা রে।মদন মুন্সি এই টাকা পেয়ে বলতে থাকে
“আমার সব টাকা একলগে চাই না হলে ছেলের বিয়া দিয়া বউ নিয়া যামু।
মেহরাবের রাগের মাএা বাড়তে থাকে আর সহ্য করতে পারে না।আয়মন কে জিজ্ঞেস করে কতো টাকা নিছে ?আয়মন ছোটো আওয়াজে পুরো টাকার অংকটা বলে।মদন মুন্সির কাছ থেকে টাকার বান্ডিল টা এনে আয়মনের হাতে দেয় আর মেহরাবের ব্যাংকের একটা চেক প্যান্টের পকেটে ছিলো।যেটা ও কার্ডের সাথে সবসময় কাছে রাখে।মদন মুন্সির দেওয়া টাকার দ্বিগুন টাকার অংক চেকে লিখে সাইন করে মদন মুন্সির হাতে ধরিয়ে দেয়।নগদ টাকা কাছে না থাকায় এই মুহূর্তে মেহরাবের নিকট এটা করা ছারা আর উপায় ছিলো না।
“এই নিন আর এক্ষুনি বিদায় হোন।রমজান ও রাগে গজ গজ করতে থাকে কিন্তু কিছু বলে না মাইর খাওয়ার ভয়ে।মদন মুন্সি হুমকি ধামকি দিয়ে কাশেম মিয়ার আর মেহরাবের ওপর রাগ ঝেরে সবাইকে নিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করে।
মায়া এতোক্ষণ সবই দেখলো।বিয়েটা হবে না ভেবেই আনন্দে নিরবে কান্না করে।মনে মনে উপরওয়ালার নিকট শুকরিয়া আদায় করে।চোখ মুছে সামনের দিকে নজর দেয়,মেহরাব কে প্রথমে চিনতে পারেনি পরে মনে পরে যায়।সেদিন এই মানুষটার সাথেই তো পথে ধাক্কা লাগে।কিন্তু এই অজানা অচেনা মানুষটা ওর জন্য এতো কিছু করলো কেনো?
বোনের কথায় ধ্যান ভাঙ্গে ওর
“বুবু দেখছো কি সুন্দর দেখতে মানুষটা এক্কেরে নায়কের মতো।আল্লাহ আমি তো এর আগে এতো সুন্দর পুরুষ দেখি নাই।আমার তো তাকে দেখে কোনো রাজার রাজপুএ বলে মনে হইতেছে।
মায়া পুষ্পের কথা শুনে ভালো করে খেয়াল করে হা পুষ্পের কথাই ঠিক।মানুষটা সত্যিই সুন্দর।নিশ্চই অনেক বড়োলোক ঘরের কেউ হবে।
কলিমউল্লাহ নিরবে বিস্ময়ে সবটা দেখলেন।সে জানে মেহরাব কতো বড়ো মনের মানুষ।তাই বলে চেনা নাই জানা নাই এখানেও এতো টাকা দিতে দ্বিতীয়বার ভাবলো না?
কাশেম মিয়া মেহরাবকে উদ্দেশ্য করে বললো
“বাবা তুমি আমাদের জন্য এতো টাকা ক্যান দিলা।বাকি টাকাটা আনিয়ে পরে দিয়ে দিতাম ।
“হুম সেটা করতে পারতেন কিন্তু এই অমানুষের দল কি আপনাদের সে সুযোগটা দিতো?
কাশেম মিয়া মেহরাবের কথা শুনে ভাবে হা এটা তো সত্যি।
আয়মন এবার সুযোগ বুঝে ম”রা কান্না জুড়ে দেয়
“হায় হায় এহোন কি হইবো মেয়েটার এই ভাবে বিয়াটা ভাইঙ্গা গেলো যে।
এসব শুনে উপস্থিত সবাই আয়মনের দিকে দৃষ্টি দেয়।বাড়িতে আসা আশেপাশের মহিলারা কানা ঘুষা করতে লাগলো।কাশেম মিয়া বউকে ধমক দিয়ে থামানোর চেষ্টা করলেও ব্যার্থ হয়।
আয়মনের স্বামীর প্রতি চাপা রাগ টা বাড়তে থাকে।ও চায় মায়ার বিয়ে ভাঙ্গছে এ নিয়ে বদনাম হোক মানুষের কাছে।তাই আবার ও কান্না করে বিলাপ করতে থাকে।
“হায় হায় এইবার কে আমার মাইডারে বিয়া করবো?সবাই তো ওরে অপয়া কইয়া অপবাদ দিবো আল্লাগো এইডা কি হইয়্যা গেলো?
এবার পুষ্প বিরক্ত বয়ে মায়ের কাছে আসতে লাগলে মায়া ওকে বাধা দেয়।এতোক্ষণ ধরে মেহরাব চুপ ছিলো কিন্তু এখন আর থাকতে পারছে না।এমনিতেই এ সব ঘটনা ঘটাতে ওর মাথা এলো মেলো হলেও সেটা প্রকাশ করার সময়ই বা পেলো কোথায়।এই মুহূর্তে ওর কিছু একটা করা দরকার সামনে তাকাতেই মায়ার দিকে নজর যায়।চোখ আটকে যায় মুহূর্তে কেমন মায়া মায়া মুখটা মলিন বিষন্নতায় ছেয়ে আছে।হয়ত মেয়েটা ও এই বিয়েতে রাজি ছিলো না তাই নিরবে কান্না করেছে।মায়ার দিকে চোখ স্থির করে কোনো প্রকার ভনিতা ছাড়াই বলে ফেলে
“আপনারা রাজি থাকলে আমি মায়াকে বিয়ে করতে চাই এক্ষুনি এই মুহূর্তে”
চলবে……