স্বর্ণকেশী মায়াবিনী পর্ব-৩৩ এবং শেষ পর্ব

0
21

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#অন্তিম_পর্ব

বছরের শেষ প্রায়,চারদিকে শীতের প্রকোপ শুরু হয়ে গেছে।জনজীবনের মধ্যে শীত তার উষ্ণ শীতলতা ছড়িয়ে দিচ্ছে।সময়টা বেশ উপভোগ্য বলা চলে।

মাস খানেক পরেই মায়ার ডেলিভারির ডেট।শেষ সময় চলছে আর কয়েকদিন ধরেই মায়ার শরির ও ভালো যাচ্ছে না।সকালে ফিরোজ পুষ্প কে মায়ার কাছে দিয়ে গেছে।মূলত বোনের যত্ন নেওয়া আর বেবি হওয়া পর্যন্ত ও থাকবে সে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে।তার ওপর এই সময়টা অফিসের অনেক চাপ তাই মেহরাব চাইলেও বাসায় সবসময় থাকতে পারছে না।পুষ্প আসাতে মেহরাবের অনেকটা স্বস্থি মেলে।তবুও ঘন্টায় ঘন্টায় কল করে ওর খবর নিয়ে থাকে।মায়ার শরির অনেক ভারি হয়ে গেছে।পায়ে পানি এসে ফুলে গেছে।মাঝে মাঝেই হঠাৎ করে পেটে ব্যাথা হয়।সবমিলিয়ে সাহসি মায়া এখন কেমন ভীতু হয়ে গেছে।সারাক্ষণ দুঃচিন্তায় মগ্ন থাকে।যদিও মেহরাবের সামনে এসবের প্রকাশ করে না।কিন্তু মেহরাবের অনুপস্থিতিতে ও সারাক্ষণ এইটা সেইটা চিন্তা করে।

পরন্ত শেষ বিকেল..পাতলা চাদর গায়ে জড়িয়ে বারান্দার চেয়ারে বসে আছে মায়া।মেহরাবের আসার অপেক্ষা করছে।এই মানুষটা সামনে থাকলে যেনো পৃথিবীর হাজারো চিন্তা ওর মাথা থেকে গায়েব হয়ে যায়।পেছনের কয়েক মাস মেহরাব শুধু ওর জন্য পাগলামী করে গেছে।নিজের হাতে ওর সবটা করেছে।বলতে গেলে বেশির ভাগ সময় খাবারটাও মেহরাব ওকে খাইয়ে দিছে।বাগানে নানা ধরনের ফুল ফুটে আছে মায়ার মন চাচ্ছে একটু নিচে গিয়ে গাছের ফুল গুলোকে ছুয়ে দিতে।কিন্তু সেটা সম্ভব নয় ওর এখন একদমই সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা করা নিষেধ।কিছুক্ষণপরই মেহরাব কে গেট দিয়ে ডুকতে দেখে মায়ার অশান্ত মনটা শান্ত হয়ে যায়।মনে অন্যরকম উৎফুল্ল বিরাজ করছে।ধীরে ধীরে চেয়ার ছেরে উঠে দাড়ায়।আস্তে ধীরে পা বাড়িয়ে রুমের মধ্যে আসে।মেহরাব রুমে ডুকেই কাঁধের ব্যাগ টি রেখে গলার টাই খুলতে লাগে।মায়া এসে ওকে ছুতে চাইলে মায়াকে থামতে বলে।কিন্তু মায়া ওর কথা শুনতে নারাজ।জড়িয়ে ধরে সোজা মেহরাবের বক্ষ মাঝে মায়ার মাথা রাখে।কি আর করার প্রিয়তমা স্ত্রী যে ওর কথা শুনবে না সেটা জানা সত্বেও বারন করে।

-আচ্ছা এ সব পাগলামী না করলে হয় না।বাইর থেকে আসছি শরিরে ঘাম জড়ানো গন্ধ লাগে না।ফ্রেশ হলে পরে না হয় কাছে আসতে।

-আপনাকে রোজ রোজ এই একটা কথা বলতে আমার বোর লাগে।
“আপনি তো জানেন এই ঘাম জড়ানো শার্টের গন্ধটা আমার কতোটা প্রিয়।আপনি দিনের যতোটুকু সময় আমার থেকে দূরে থাকেন সেই সময়টা আমি যতোটুকু একাকিত্ব বোধ করি দিন শেষে এই ঘামে ভেজা বুকে নিজের মাথা রাখলে সব দূরত্ব মন খারাব নিমিষেই ঘুচে যায় যে।”

মেহরাব ওর কথা গুলো শুনে বুক ভরা আনন্দের নিঃশ্বাস ছারে।দু হাত দিয়ে জড়িয়ে রাখে মায়াকে।কাজের ব্যাস্ততায় বাইরে থাকলেও মনটা ওর মায়ার কাছেই পরে থাকে।এখন বউকে বুকের মাঝে পেয়ে শান্তি লাগছে।মায়াকে ছেরে দিয়ে ওকে খাটে বসায়।ও হাটু গেড়ে মায়ার সামনে বসে পরে।মায়া ওর একটা হাত নিয়ে পেটের ওপর রাখে

-দেখেন না কতো দুষ্ট বাবুরা ,আজ বেশি বেশি কিক মা’রছে।

মেহরাব সত্যি সত্যি সেটা টের পেয়েছে।অদ্ভুত এক অনুভুতি হচ্ছে ওর মধ্যে।মায়া এবার ওর পা দুটো দেখতে বলে

-দেখেন না কতো মোটা হয়ে গেছি পা দুটো ফুলে কেমন পাইপের মতো হয়ে গেছে।

মেহরাব ওর এমন কথা শুনে হেসে ফেলে।

-আরে শেষ সময় এমনটা হয় চিন্তার কিছু নেই ডাক্তার তো বলে দিলো।আর তোমায় কিন্তু এই ফোলা শরিরে বেশ গুলুমুলু লাগছে।
বলেই গাল দুটো টেনে দেয়।এরপরে মেহরাব মায়া কে ছেরে ও ফ্রেশ হতে যায়।আর মায়া কেমন হতাশ মনে বসে থাকে।

~~~~~

রাতের ডিনার শেষে মায়া রুমের মধ্যে একটু হাটাহাটি করে নেয়।ঘুমের সময় মেহরাব পুষ্প কে ডাকলে ও রুমে আসে।

-জ্বী ভাইয়া বলেন।

-পুষ্প তুমি তোমার বুবুর সাথে ঘুমাও।আমি আর ফিরোজ একসাথে ঘুমাবো।
বলে ও বের হয়ে যায়।পুষ্প আর কিছু বলে না।ও এসে মায়ার পাশে শুয়ে পরে।

আসলে মেহরাব মায়াকে জড়িয়ে না ধরলে ঘুম আসে না।তাই ঘুমের মধ্যে যদি জোরে ধরে বা এপাশ ওপাশ করার জন্য যদি মায়ার পেটে কোনো আঘাত লাগে?মূলত ঐ জন্যই মেহরাব পুষ্প কে এখানে ঘুমাতে বলে।মায়া নিষেধ করলেও মেহরাব শুনেনি।দু বোন আলাদা পাতলা কম্বল গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পরে।এদিকে কয়েক দিন ধরে ফিরোজ পুষ্প কে মিস করছে বলে আজ অফিস থেকেই সোজা এখানে চলে আসে।কই ভেবেছে বউকে কাছে পেয়েছে একটু আদর করবে।কিন্তু না কি হলো এটা।দুজন দু রুমে।
মেহরাব ঘুমিয়ে গেলেও ফিরোজের চোখে ঘুম নেই।বউয়ের একটু ভালোবাসার পরশ যে খুব করে ওর দরকার না হলে যে এই চোখে আজ আর ঘুম হবে না।খাট থেকে উঠে আস্তে করে নেমে নিঃশব্দে পা বাড়িয়ে মায়াদের রুমের সামনে আসে।বুকে ফু দিয়ে চাপানো দরজা ধীরে ধীরে খুলে রুমের ভিতর যায়।ড্রিম লাইটের আলোতে বেশ ভালোই সব কিছু বোঝা যাচ্ছে।কিন্তু কম্বল মুড়ো দেওয়াতে বুঝতে পারছে না কে কোনটা।ভালো করে দেখে অনুমান করে সামনে জনই পুষ্প।ফিস ফিস করে নাম ধরে ডাকতে থাকে।ওর ডাক শুনে মায়ার ঘুম ভেঙ্গে যায়।আসলে ফিরোজের অনুমান ভুল ওটা মায়া ছিলো তাই মায়া ওকে বুঝানোর জন্য কেশে ওঠে।ফিরোজ বুঝতে পেরে দরজার বাইরে চলে আসে।মায়া বুঝতে পারে ফিরোজ আবার আসতে পারে তাই পুষ্প কে ডেকে ওর জায়গায় শুইয়ে দিয়ে ওপর পাশে মায়া শুয়ে পরে।কিছুক্ষণ পরে ফিরোজ আবার আসে।এবার ওপর পাশে গিয়ে পুষ্প কে ডাকতে থাকে।

আহারে বেচারা জানেই না ওরা জায়গা বদল করেছে।এবার মায়া পরছে একটা বিপদে।কথা বললেও ফিরোজ লজ্জায় পরবে তাই আবার ওকে বুঝানোর জন্য কেশে ওঠে।ফিরোজ এবার ও লজ্জায় বাইরে চলে আসে।ও চলে যেতেই মায়া উঠে বসে।মনে মনে ভাবে নাহ এদের দুজন কে আলাদা রাখা যাবে না।তাহলে আজ আর ঘুম হবে না।পুষ্প কে ডেকে তোলে মায়া,পুষ্প উঠে লাইট জ্বালায়।কেনো ডাকছে জানতে চাইলে মায়া বলে

-বোন তোর আর এখানে ঘুমানো লাগবে না।এক কাজ কর তোর ভাইয়া কে এখানে পাঠিয়ে দে ফিরোজ কে নিয়ে শুয়ে পর।ও বেচারা কয়দিন ধরে বউকে কাছে পাচ্ছে না।পুষ্প তো ঘুম ঘুম চোখে কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছে না।বেশি কথা বাড়ায় না।”কি আর করার উঠে রুমে গিয়ে দেখে দুজনে ঘুম।মেহরাব কে ডেকে তুললে ও প্রথমে একটু ঘাবরে যায়।যখন শুনছে মায়া ওকে রুমে যেতে বলছে ও আর দেরি করে না।দ্রুত রুমে চলে যায়।
পুষ্প লাইট বন্ধ করে শুয়ে পরতেই পেছন থেকে ফিরোজ ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গলায় ঘারে নাক ডুবিয়ে দেয়।

-আরেহ আপনি সজাগ?

-হুম তোমাকে ছাড়া একদমই ঘুম আসছিলো না।খুব মিস করছি এই কয়দিন।

-তাই বুঝি?

-হুম খুব খুব

এদিকে মেহরাব রুমে গিয়ে দেখে মায়া বসে আছে।

-কি ব্যাপার এতো রাতে ডেকে পাঠালে যে? কোনো সমস্যা?

-না আপনি শুয়ে পরুন আর আমাকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমান কিছু হবে না আমার।
যদিও মেহরাব চেয়েছিলো মাঝখানে পাশ বালিস রাখতে কিন্তু মায়া দিতে দেয়নি।

~~~~

আজকাল মায়ার প্রেশার টা একটু বেশি হয়ে গেছে।এদিকে এক সপ্তাহ বাকি নেই ডেলিভারীর।ডাক্তার ওকে একদমই চিন্তা করতে বারন করে দিয়েছে।আর এমনটা হলে মা আর অনাগত বাচ্চাদের জীবনের ঝুঁকি আছে।বিশেষ করে নরমালে না হলেও সিজার করতে গেলে প্রেসার হাই থাকলে কোনো মতেই ডেলিভারী সম্ভব নয়।ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করলে সে মেহরাব কে জানায় মায়া ওর টুইন বেবি নিয়ে বেশি চিন্তা করে।এটা সবার ক্ষেএে হয় না।দূর্বল মনের মানুষরা এ সময়ে একটু বেবি হওয়া নিয়ে বেশি হাইপার হয়ে যায়।যার ফলে প্রেশার হাই থাকে।
মায়ার শরিরের যে কন্ডিশন তাতে শীগ্রই সিজার করতে হবে।তাই ডাক্তার বলে দিয়েছে মেহরাব যেনো মায়াকে বুঝিয়ে শুনিয়ে মন কে শান্ত করে।না হলে হিতে বিপরীত কিছু ঘটে যেতে পারে।
এসব কথা শুনে মেহরাব ই এখন চিন্তিত হয়ে পরে।নানান ধরনের খারাপ চিন্তা মনের মাঝে উকি দিচ্ছে।মেহরাব ডাক্তারের কথা মতো মায়াকে সব সময় বুঝাতে থাকে।কিন্তু ও যেনো কিছুই বুঝতে চায় না।এ সময় মেয়ের পাশে থাকার জন্য কাশেম মিয়া আয়মন ওরাও আসে।বাবা মাকে দেখে ওর মন একটু শান্ত হয়।

অনেক চেষ্টার পর মায়া একটু স্বাভাবিক হয়।তবে মায়া একটা সেকেন্ডের জন্যও মেহরাব কে ছাড়তে চায় না।যেনো এই মানুষটা চোখের আড়াল হলেই ওর শরির মন দুটোই দূর্বল হয়ে যায়।
পরেরদিন সকালে ওকে ক্লিনিকে নেওয়া হয়।ওটিতে নেওয়া হলে সাথে মেহরাব ও যায়।সিজারের পুরোটা সময় ওর হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো মেহরাব।মায়া ওর মুখের দিকেই তাকিয়ে ছিলো।কি হচ্ছে ওর সাথে সেটাই ও টের পায়নি।মেহরাবের চোখে মুখে ছিলো ভয়ের ছাপ।বউ আর বাচ্চাদের জন্য সারাক্ষণ মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করে গেছে।জীবনের প্রতিটি প্রিয় মানুষদের হারিয়ে ও নিঃস্ব প্রায়।এক মাএ মায়া কে নিয়েই ওর সবকিছু।আর এখন তো বাচ্চাদের নিয়ে।কারোর খারাপ কিছু না হোক তা না হলে ওর আর বাঁচার পথ থাকবে না।

অবশেষে এক ছেলে আর এক মেয়ের বাবা মা হয়েছে ওরা দুজন।মা আর বাচ্চারা সুস্থ্য আছে।ওটি থেকে কেবিনে শিফট করলে সর্বপ্রথম মেহরাবের কোলে দেওয়া হয় বাচ্চাদের।কাপা কাপা হাতে বেবিদের কোলে নেয়।ছোটো ছোটো চাওনিতে ওরা দুজন বাবাকে দেখতে থাকে।এমন মায়াবী ছোটো ছোটো মুখ দেখে মেহরাব শব্দ করে খুশিতে কান্না করে দেয়।একটা সময় আলতো করে দুজনের গোলাপী গালে চুমু খায়।এ জেনো অন্য রকম পরম শান্তি অনুভূত হলো মনের মাঝে।সবটা কেমন স্বপ্নের মতো।ও বাবা হয়েছে একটা সময় বাবা মা কে এক সাথে হারিয়েছিলো।উপর ওয়ালা ওকে দুটি সন্তান দিয়ে সেই বাবা মা ডাক দেওয়ার জন্য সুযোগ করে দিয়েছে।

কয়েক দিন পরে…মীর ম্যানশন আজ হাসি খুশি শান্তিতে পরিপূর্ণ।মায়াকে বাসায় আনা হয়েছে।দুজন কে সামলাতে ও পারছে না।কেউ না কেউ ওর কাছে থাকছে।মেহরাব তো বাসা থেকেই বের হতে চায় না।মন চায় সারাক্ষণ ওদের পাশে বসে থাকতে।মায়া ওর পাগল বরটা পাগলামী গুলো দেখে আর মনে মনে হাসে।আসলেই অতিরিক্ত খুশিতেও মানুষ পাগলামী করে।
এভাবে কেটে যায় কয়েকটা মাস।বেবিরা একটু বড়ো হয়েছে।এখন মায়া দুজনকে সামলাতে শিখে গেছে।যদিও মেহরাব ওকে অনেক সাহায্য করে।বেচারা মেহরাব বউকে ঠিক ঠাক আদর ও করতে পারছে না।রাতে একান্ত সময় গুলো কাটাতে পারে না।যখনই বউকে নিয়ে একটু রোমান্স করতে যায় তখনই এক জন না একজন ঘুম থেকে উঠে কান্না জুড়ে দেয়।এদিকে একজনের কান্না শুনলে আরেক জন ওঠে পরে।কি আর করার অসহায় ফেস করে দুজনেই বাচ্চা সামলাতে ব্যাস্ত হয়ে যায়।

~~~~

শীতের রাত তারওপর ভরা জোস্না।সবমিলিয়ে আজকের রাতটা অন্যরকম সুন্দর।
বাচ্চাদের ঘুম পারাতে অনেকটা সময় লেগে গেছে মায়ার।আজ মেহরাব মায়ার জন্য একটা কালো জর্জেট শাড়ি এনেছে।অনেকদিন শাড়ি পরা হয় না,আজ ও মেহরাবের আনা শাড়ি পরে অনেক সাজুগুজু করে।অনেকদিন বরটাকে সেজে গুজে দেখানো হয় না।জর্জেট শাড়িতে মোটা বেশি বুঝা যাচ্ছে।মায়া আফসোস করে আগেই কতো স্লিম ছিলো আর এখন টমেটো হয়ে গেছে।কি আর করার বরের নাকি এখনই বেশি ভালো লাগে।সাজ শেষ হতেই মেহরাব রুমে আসে।মায়াকে একনজর দেখেই হা করে তাকিয়ে থাকে।আজ তো মায়ার এই হট লুকে ওর প্রাণ যায় যায়।
মায়াকে নিয়ে রুমের বাইরে এসে দরজা চাপিয়ে দিয়ে মায়াকে কোলে তুলে নেয়।সবসময়ের ন্যায় মায়া ওর গলা জড়িয়ে ধরে।ধীরে ধীরে ছাদের দিকে পা বাড়ায় মেহরাব।

ছাদে গিয়ে মায়াকে কোল থেকে নামিয়ে দেয়।মায়া ছাদের রেলিংয়ের পাশে যায়।চারপাশ টা দেখতে লাগে।সত্যি কি অসাধারন এই জোস্না রাতের রূপ।মেহরাব এগিয়ে গিয়ে মায়ার খোপাটা খুলে ফেলে।লম্বা স্বর্ণকেশ গুলোতে নাক ডুবিয়ে দেয়।নেশালো কন্ঠে বলতে থাকে

-জানো মায়া প্রথম যেদিন তোমাকে দেখেছিলাম সেদিন প্রথমে তোমার মুখ পরে তোমার এই দীঘল সোনালী কেশ গুলোর প্রেমে পরেছিলাম।সেদিনের পর থেকে আমার প্রতিটি সেকেন্ড তোমাকে ভেবে কেটেছে।এই আমি কতো সুন্দরী মেয়েদের প্রপোজ পেয়েছিলাম কিন্তু কোনো দিন কারোর মোহে নিজেকে জড়াতে পারিনি।কিন্তু তুমি সেটা পেরেছো।যখন তোমার বিয়ের কথা শুনি আমি পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছিলাম ।তোমার বাবার মান সম্মান এর কথা ভেবে আমি কিছু করিনি না হলে চিন্তা করেছিলাম তুলে নিয়ে আসবো।কিন্তু দেখো ভাগ্যের কি খেলা সেই তোমার বিয়ের অতিথি হয়েই আমি গিয়েছিলাম।আর অতিথি হয়ে যেয়ে বিয়ে টা আমাকেই করতে হয়েছে।এ টুকু বলেই মেহরাব থামে।

এ সব শুনে মায়া তো থ হয়ে যায়।মেহরাব আবার বলতে থাকে”যদি আমি তোমাকে আমার জীবনে না পেতাম তা হলে মনে হয় পাগলই হয়ে যেতাম।কথাটা বলেই ওর গলা ধরে আসে।মায়া এবার ওর দিকে তাকায় মেহরাবের দিকে চেয়ে বরাবরের মতো উঁচু হয়ে ওর কপালে অধর ছোয়ায় আর বলে

“আমি তো আপনারই তাই তো বিধাতা আপনার সাথে আমাকে মিলিয়ে দিয়েছে।আমি আপনাকে পেয়ে সার্থক।”

এই আলোতেও দুজন দুজনের চোখের দিকে দৃষ্টি দিয়ে আছে।একটা সময় মেহরাব ওর অধরে অধর ছোয়ায়।পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয় মায়া।অধর ছেড়ে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।যেনো ছেরে দিলেই মায়া হারিয়ে যাবে।
এবার মায়া বলে

“আপনি জানেন?এই বুকটা হলো আমার জন্য সবচাইতে নিরাপদ জায়গা।আমার মনে যতো চিন্তা আর শরিরের যতো ক্লান্তি থাকুক না কেনো এই প্রশস্থ বুকে নিজেকে রাখতে পারলেই পরম শান্তি অনুভূত হয়।”

মেহরাবের গালে হাত বুলাতে থাকে মায়া।

“আপনি জানেন এই যে খোঁচা খোঁচা চাপ দাড়িতে আপনাকে অনেক কিউট লাগে।এক দম খেয়ে ফেলতে মন চায়”

মুচকি হেসে মেহরাব উওর দেয়

-তাই বুঝি?

-হুম”

-তা হলে চলো।

-কোথায়?

-বারে আমাকে খাওয়ার জন্য তোমাকে সুযোগ করে দিতে হবে না?

ওর কথা শুনে মায়া ওর বুকে আলতো করে কিল দেয়।

-আচ্ছা আজ একটা সত্যি কথার উওর দিবেন?

-কি বলো দেওয়ার মতো হলে দিবো

-রিমন ভাই আর রমজানের খারাপ অবস্থার জন্য কি আপনার কোনো প্রকার হাত আছে?

এতোদিন বাদে এ সব কথা শুনে মেহরাব চমকে ওঠে।মনে মনে একটু ঘাবরে গেলেও বাইরে প্রকাশ করে না।

-আরেহ কি সব বলছো।এতো সুন্দর মোমেন্টে কি সব বলছো।

-উওর পাইনি কিন্তু

-মায়া আমি এসব নিয়ে কিছু বলতে চাই না।তবে শুনে রাখো আমার কলিজার যে হাত দেওয়ার চেষ্টা করবে তার হাত নয় তার জানটা কেরে নিতে আমি দ্বিধা বোধ করবো না।

ওর কথা শুনে মায়া যা বুঝার বুঝে গেছে।আর কথা বাড়ায় না।মেহরাবের মাইন্ড স্বাভাবিক করার জন্য আবার ওকে জড়িয়ে ধরে।মেহরাব ওর মাথা বুকের ওপর শক্ত করে চেপে ধরে।এক হাত মায়ার কোমরের ফাকে স্পর্শ করে।মায়া কেপে ওঠে।ফর্সা কোমরের খালি অংশ দৃশ্যমান।মেহরাবের মাথা নষ্ট হবার উপক্রম।
মেহরাব বলে ওঠে

-চলো রুমে যাই

-থাকি না আরো কিছুক্ষণ অনেকদিন হলো এমন জোস্নাবিলাস করি না।

কি আর করার মহারাণীর হুকুম তো পালন করতে হবে।
মেহরাব ওকে নিয়ে ছাদের একটি বসার জায়গায় বসে।ওর কোলের ওপর মায়াকে বসিয়ে দেয়।পেছন থেকে ওর বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে মায়াকে।মায়া ওর হাতের পিঠে চুমু খায়।মেহরাব একটু নিচু হয়ে ওর গালের সাথে গাল ঘসে আর বলে

“আমি ধন্য এই ছোট্ট জীবনে আমার মায়াবিনীকে পেয়ে।সারাজীবন আমি আমার স্বর্ণকেশী মায়াবিনীকে এভাবেই বুকের মাঝে আকড়ে ধরে রাখবো।কখনও কোনো প্রকার কষ্ট পেতে দিবো না জান প্রমিজ করছি।তুমি আমার অপূর্ণ জীবনটাকে সবকিছু দিয়ে পরিপূর্ণ করে দিয়েছো।“

(সমাপ্ত)

(লেখার ভুল ত্রুটি মার্জনীয়)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে