স্বর্ণকেশী মায়াবিনী পর্ব-৩১+৩২

0
105

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-৩১

বিয়ের কার্যক্রম শেষ হতেই ঝিম ধরে বসে আছে ফিরোজ।ওর সাথে এটা কি ঘটে গেলো ভাবতেই মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে।যা ঘটছে সেটা কি স্বপ্ন নাকি বাস্তব এ সব এলোমেলো চিন্তার মাঝে নিজের হাতে নিজেই চিমটি কাটে।নাহ এটা স্বপ্ন না সত্যি।

কিছুক্ষণ আগের ঘটনা,
বিয়ে বাড়ির গেটে আসতেই ছোটো বড়োরা মিলে ফিরোজ আর সায়েম কে ঘিরে রাখে।বাড়ির ভেতর প্রবেশ করতে দেয় না।ফিরোজের এমনিতেই মন মেজাজ ভালো নেই তার ওপর বর পক্ষ ভেবে ওদের কাছ থেকে টাকা চাইছে।ও কিছু বলতে চাইলে সায়েম ওকে আটকায়।সায়েম ওদের সাথে কথা বলে চাহিদা মতো টাকা দিয়ে বিদায় দেয়।সায়েম ফিরোজ কে নিয়ে বাড়ির ভেতর ডুকতেই পুষ্পের দুজন মামা আর রাসেল মিলে ওকে বরের আসনে বসিয়ে দেয়।এবারও ফিরোজ কিছু বলতে গেলে সায়েম বাধা দেয়।ফিরোজ বোকা চাওনি দিয়ে আছে সবার দিকে।ভাবছে এরা কি পা’গল নাকি?কে বর কে অতিথি এটাও জানে না?কাশেম মিয়া তরিঘরি করে কাজী নিয়ে আসলে সে বিয়ে পড়ানো শুরু করে দেয়।ফিরোজ কে কবুল বলতে বললে ও অবাক হয়ে যায়।এরা কি ঠিক আছে নাকি আমিই ঠিক নাই।নাকি এটা ওর সাথে কোনো প্রকার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে।হাত দিয়ে চোখ দুটো কচলে আবার তাকায় নাহ এটা কোনো প্রকার হ্যালুসিনেশন নয়।
ভাবনা চিন্তার মধ্য দিয়ে কাজীর নির্দেশ মতো কবুল বলে কাবিন নামায় সাক্ষর করে দেয় ফিরোজ।
বুঝতে আর বাকি নেই শেষমেশ পুষ্পের সাথে পবিএ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেছে।বিয়ে হয়ে গেছে দুজনের এখন ওরা স্বামী স্ত্রী,কিন্তু কেমনে কি হলো।এটা কি কোনো মিরাকেল ছিলো নাকি আগে থেকেই করা প্লান ছিলো?বেচারা বসে বসে এটাই ভাবতেছিলো।

বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ফিরোজ কে রুমের ভেতর নেওয়া হয়।পুষ্প লম্বা ঘোমটা টেনে বসে আছে।ওর পাশেই ফিরোজকে বসিয়ে দেওয়া হয়।এবার একে একে মেহরাব মায়া ফারজানা সায়েম আসে।একসাথে সবাইকে দেখে ফিরোজ এবার একটু নড়েচরে বসে।ঢোক গিলে একে একে সবার দিকে নজর বুলাতে থাকে।এবার মেহরাব ফিরোজের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে।

-কেমন সারপ্রাইজ দিলাম ফিরোজ?

ফিরোজ থমথমে মুখে মেহরাবের দিকে তাকায়।পাশ থেকে ফারজানা বলে ওঠে

-আহারে সারপ্রাইজ পেয়ে আমার সোনার টুকরো ভাইটা চিন্তায় কেমন শুকিয়ে গেছে।

ওদের কথা শুনে মায়া বলে ওঠে

-এই তোমরা থামো তো আমার বোন জামাইকে আর লজ্জা দিও না।বেচারা এমনিতেই লজ্জায় ভয়ে আমাদের কে কিছু বলতে পারেনি।

সায়েম ও চুপ থাকেনি বলতে থাকে

-ভাইয়া আমি কিন্তু কিছু জানি না

ফারজানা ওর কথা শুনে বলে

-এই এই তুমি জানো না মানে তুমিই তো এই পুরো নাটকের মাস্টার প্লান দিছো।এখন ইনোসেন্ট সাজার চেষ্টা করবে না।

ওদের কথা শুনে ফিরোজ এবার মুখ খোলে।

-আচ্ছা সবাই একটু থামবে।আর একটু হলে আমার জান যেতো আর সবাই মজা নিচ্ছে।আমার কষ্ট টা কি কেউ বুঝবে না?

মেহরাব বলে ওঠে

-ফিরোজ তোমাকে নিয়ে কেউ মজা করছে না বরং তুমিই নিজের মনের কথা চেপে রেখে অন্যায় করেছো।আজ তোমার সাথে বিয়েটা না হয়ে অন্য কারোর সাথে পুষ্পের বিয়ে হতো তা হলে কি করতে তুমি?ভেবে দেখেছো একবারও।বড়োভাই ডাকো কিন্তু মনের কথাটা বলতে পারোনি এটা ভেবে আমার নিজের কাছে অনেক খারাপ লাগছে।

ফিরোজ বসা থেকে উঠে মেহরাবের হাত ধরে বলে

-বড়োভাই বিশ্বাস করুন আমি অনেকবার বলতে চেয়েও পারিনি।ভেবেছিলাম বললে যদি আপনি সেটা অন্য ভাবে নেন তাই বলতে পারিনি।আমি চাই নি আপনার আমার মধ্য কোনো ভুল বুঝাবুঝি হোক।

-আমি কিন্তু বুঝতে পেরেছিলাম।তবে তোমার পেট থেকে আসল কথাটা বের করতে না করতে পেরে অবশেষে শিওর হওয়ার জন্য,পাএি দেখার নাম করে তোমাকে ইমার সাথে দেখা করতে পাঠাই।আর ঐ দিন তোমার বলা সব কথা গুলো ইমার কাছ থেকে শুনে পুরোটা শিওর হয়েছিলাম।

মেহরাবের কথা শেষ হতেই মায়া বলতে লাগে

-আর তখন ফারজানার কাছ থেকে বাকি টা শুনে বুঝতে বাকি নেই আমাদের ধারনা পুরোপুরি ঠিক।তবে ভাই আমার বোনটাও তোমাকে ভালবাসতো হয়তো ও নিজেও এ কথাটা কাউকে বলতো না।আমরা যেখানেই ওকে বিয়ে দিতাম ও রাজি হতো কিন্তু মনের দিক দিয়ে তো ও সুখি থাকতো না।

ওদের কথা শুনে ফিরোজ চুপ থাকে কি বলবে কিছু বুঝতে পারে না।নিরবতা ভেঙ্গে মেহরাব ফিরোজ কে বুকে জড়িয়ে ধরে।

-ফিরোজ যা হয়েছে এ সব ছাড়ো ভাই।ছোটো ভাই থেকে তো শ্যালিকা জামাই হয়ে গেলে।এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে।

মেহরাবের এমন কথায় ও কাজে ফিরোজ মনে মনে স্বস্থি পায়।সত্যি মেহরাব ওর জন্য যা যা করেছে আপন ভাই এটা করতো না।এ ঋণ কখনও শোধ করার মতো নয়।দুজনের আলিঙ্গন শেষ করে মেহরাব ওকে ছারে।

-বেলা প্রায় শেষের পথে বাকি আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আমাদের বেড়িয়ে পরতে হবে।বলে মেহরাব রুম থেকে বের হয়ে যায়।ওর পিছু বাকিরাও বের হয়ে যায়।ফিরোজ খাটের এক প্রান্তে বসে পরে কিন্তু পুষ্পের সাথে কথা বলতে পারছে না।মনে বেশ সংকোচ হচ্ছে।বেচারা সত্যি সত্যি আর কিছু বলতেই পারেনি তখন।অপর দিকে পুষ্প ও ওর সাথে কোনো কথা বলেনি।
অবশেষে কাশেম মিয়া চোখে অশ্রু নিয়ে তার ছোটো মেয়েকে ফিরোজের মায়ের হাতে তুলে দেয়।ফিরোজের মা খুশি মনে কাশেম মিয়া কে কথা দেয় পুষ্প কে কখনও কষ্ট পেতে দিবে না।বৌয়ের যথাযত মর্যাদা দিয়ে পুষ্প কে আগলে রাখার চেষ্টা করবে।তার কথা শুনে কাশেম মিয়ার মন একটু শান্ত হয়।আয়মন ও কান্নায় ভেঙ্গে পরে।মায়ার বিয়ের পরে পুষ্প কে নিয়ে দুজনের সংসার ছিলো এখন একেবারেই একা হয়ে গেলো।এটা ভেবেই আয়মন বার হার ডুকরে কান্না করে ওঠে।
উপস্থিত সবাই আয়মনকে সান্তনা দিতে থাকে।
ফিরোজ শ্বশুড় শ্বাশুড়ীর থেকে বিদায় নেয়।তার মন ভরে জামাইর মাথায় হাত রেখে দোয়া করে দেয়।কনে বিদায় এর সময় কনের বাড়ির অবস্থা কেমন হয় সেটার বর্ণনা আর করতে পারছি না।সবাইতো ব্যাপারটা বুঝে।

বিদায় শেষে ফারজানা ওর মা আর সায়েম এক গাড়িতে ওঠে।মেহরাব ওর নিজের গাড়িতে ওঠে তবে ড্রাইভিং ও করবে তাই মায়া ওর পাশে বসে।পেছনে ফিরোজ আর পুষ্প বসে।
গাড়ি স্টার্ট দিয়ে শহরের পথে রওয়ানা হয়ে গেছে।সন্ধ্যার পর পরই ওরা বেরিয়েছে।ফিরোজের মনে লাড্ডু ফুটছে কিন্তু এ প্রযন্ত পুষ্পের কোনো সারা শব্দই পেলো না তাই মনটা খারাপ করে ফেললো।একটু সাহোস নিয়ে পুষ্পের হাতের ওপর হাত রাখতেই পুষ্প এক ঝামটায় হাত সরিয়ে নেয়।ফিরোজ একটু অবাক হয় ভাবে এটা কি হলো।আবার ভাবছে পুষ্প মনে হয় রেগে আছে কিন্তু রাগ তো এখন ভাঙ্গানো যাবে না।বাসায় গিয়েই যে ভাবে হোক রাগ ভাঙিয়ে ছারবে।বেচারা আর কোনো চেষ্টা না করে হাত গুটিয়ে বসে থাকে দুজনের মাঝে বেশ দূরত্ব বজায় থাকে।
এদিকে মায়া ঘুমিয়ে গেছে।সারা দিনের ক্লান্তি ওকে ঘিরে ধরেছে।মেহরাব ওর কোলের মধ্যে মায়ার মাথা নিয়ে ওকে কাত করে শুয়ে রাখে।মাঝে মাঝে এক হাত দিয়ে বউটাকে সামলে রেখেছে।যেনো হালকা ব্রেকে বা ঝাকুনিতে মায়া গড়িয়ে না পরে।পেছন থেকে ফিরোজ এ সব সিন দেখে আফসোস করছে।কোথায় বউটাকে এক হাত দিয়ে পিঠ জড়িয়ে ধরে রাখবে,সময় সুযোগ বুঝে এই অল্প আলো আঁধারে একটু আদর করবে তা না।বোম হয়ে লুচির মতো ফুলে আছে।কি করে যে এর রাগ ভাঙাবে সেটাই মাথায় ডুকছে না।বিয়ে করে সত্যি হাজারটা টেনশনে পরে গেলো।এর চাইতে বিয়ে না করেই চিন্তা মুক্ত ছিলো।দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেরে অবলা বাচ্চার মতো চুপচাপ বসে রয়।

শহরের কাছা কাছি ওদের গাড়ি চলে এসেছে প্রায়।রাত বারোটা পার হয়ে গেছে।ফিরোজের চোখে বাধ ভাঙ্গা ঘুম।একটা সময় ঘুমের ঘোরে পুষ্পের গায়ের ওপর পরতেই পুষ্প ওর দু হাত দিয়ে জোড়ে ধাক্কা দিকেই ফিরোজ আৎকে ওঠে।সত্যি সত্যি ভিষণ ভয় পেয়ে যায়।ওর চিল্লানো শুনে মায়ার ঘুম ভেঙ্গে যায়।মেহরাব মিররের দিকে চেয়ে বলে

-ভাই দুজন মিলে যা করার বাসায় গিয়ে করো।তোমার জন্য আমার নিষ্পাপ বউটার ঘুম ভেঙে গেছে।শুধু তাই না ভয় ও পাইছে।দেখো কেমন কাঁপছে।
বলেই ওকে পিঠ জড়িয়ে ধরে রাখে।পুষ্প আবার জানালার পাশ ঘেষে বসে।মুখে কিছু না বললেও বুঝা যাচ্ছে পুষ্প রেগে আছে।বেচারা ফিরোজের হৃদপিন্ডটা ও জোরে জোরে লাফাচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে..

“বাপরে এ কি মেয়ে নাকি বো”ম্বাই মরিচ,এতো ঝাঁঝ ক্যা..?

চলবে….

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-৩২

রাত একটা,
বাসর ঘরে বউ রেখে ফিরোজ আরেক রুমে পায়চারী করছে।মোটেও সাহোস হচ্ছে না নিজের রুমে যেতে।তখনই ফারজানা আর সায়েম আসে।

-কি ব্যাপার ভাইয়া আর কতোক্ষণ রুমের বাইরে থাকবে?এবার চলো তোমাকে তোমার রুমে দিয়ে আসি।

বেনের কথা শুনে ফিরোজ মনে মনে একটু সাহোস পায়।যতো যাই হোক ওর রুমে তো যেতে হবে আর এভাবে ভিতুর পরিচয় দিলে তো ওকে নিয়ে সবাই হাসা হাসি করবে।তাই ফিরোজ ওর রুমের দিকে পা বাড়াতে চাইলে সায়েম ওকে ধরে বসে।

-আরে ভাইয়া এভাবে কেনো যাবেন আমরা দুজন আপনাকে আপনার রুমে সম্মানের সহিত পৌছে দিবো।

ফিরোজ আর কথা বাড়ায় না ওদের পিছু যায়।কিন্তু ওদের মনে কি চলছে সেটা ফিরোজ বুঝতে পারে না।রুমের দরজায় যেতেই দুজন ফিরোজের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে বসে।না হলে রুমে ডুকতে দিবে না।ফিরোজ ওদের কথা শুনে এক ঝটকা খায়।ওর নিজের বোন আর বোন জামাই ওকে ফাদে ফেলে দিলো?ইশ আরো আগে যদি চুপি চুপি চলে আসতাম তা হলেই ভালো হতো।

-কি হলো ভাইয়া দাও,এতো কষ্ট করে এসে তোমাদের জন্য রুম সাজালাম আর বিনিময় কিছু পাবো না তা তো হবে না।

উপায় না পেয়ে ফিরোজ মায়া আর মেহরাব কে ডাকে।ফিরোজের ডাকে ওর দুজন ও চলে আসে।সব কথা শুনে মেহরাব আর মায়া ও ফারজানার দলে যোগ দেয়।বেচারা ফিরোজ কি আর করবে মানিব্যাগ শুদ্ধ বোনের হাতে তুলে দিয়ে রুমে ডুকে দরজা লক করে দেয়।
বড়োসরো একটা দম ছেরে পুষ্পের সামনে দাড়ায়।পুষ্প তখনও ঘোমটা টানা অবস্থায় বসে আছে।ফিরোজ বেশ সাহসিকতার সাথে ওর সামনে গিয়ে বসে।বুকে ফু দিয়ে ঘোমটা উঠাতে গেলেই পুষ্প ওকে বাধা দেয়।ফিরোজ থেমে যায়।পুষ্প নিজেই ঘোমটা সরিয়ে বলতে থাকে

-একদম ছোয়ার চেষ্টা করবেন না।

ওর কথা শুনে ফিরোজ অবাক।কি বলে এই মেয়ে?বিয়ে করা বউ ওর আর ও ছুতে পারবে না?তারপরও জিজ্ঞেস করে কেনো?

-কারন যে আমাকে ভালোবাসে না মনের কথা মুখ ফুটে বলতে পারে না এমন ভিতুর ডিম আমাকে ছোয়ার অধিকার পাবে না।

-কিন্তু পুষ্প আমি তো তোমাকে অনেক ভালোবাসি।

-কই কখনও বলতে পারছেন নাকি বুঝাতে পারছেন।

-হা বলতে পারিনি কিন্তু বুঝাতে তো অনেক বার চেষ্টা করেছি।বরং তুমিই বুঝতে পারোনি।এখন যে ভাবেই হোক বিয়েটা তো হয়েছে?

-হুম সেটা হইছে কিন্তু আপনি আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছেন।অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়েছে সেটা শুনেছেন,তবুও চুপ থেকেছেন তাই আপনাকে আমি ক্ষমা করতে পারবো না।

-পুষ্প প্লিজ তাই বলে এতো রাগ করো না আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি তো।সরি বলছি কান ধরছি দেখো।

-কোনো কিছুতে কাজ হবে না আপনাকে এর জন্য শাস্তি পেতেই হবে।

-শাস্তি?

-হা শোনেন আমার খুব ঘুম পাচ্ছে আমি এখন ঘুমাবো।কিন্তু খবরদার এই খাটে আসার একদমই চেষ্টা করবেন না।আপনি রুমের যে কোনো জায়গায় ঘুমিয়ে পরুন।আর হা একদমই আমাকে জ্বা লাতন করতে আসবেন না।

বলেই পুষ্প খাটে শুয়ে পরে।ফিরোজ আর কি করবে এই সুন্দর রাতটা কষ্টের রাতে পরিনত হবে সেটা ও ভাবতে পারেনি।বেচারা রুমের মধ্যে পায়চারি করতে থাকে।জীবনের একটা অন্যতম রাত বাসর রাত।সেটাও মিস হয়ে যাচ্ছে কি আর করার।তার ওপর বউ ওয়ার্নিং দিয়েছে ধারে কাছে ঘেষা যাবে না।তাই ফ্রেশ হয়ে রুমে থাকা ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে দেয়।ভাগ্যিস এটা ছিলো না হলে তো ওকে ফ্লোরে শুতে হতো।পুষ্পের কথা গুলো মনে করতে থাকে ফিরোজ।আর হাসে ওর পিচ্চি বউয়ের ওর ওপর অনেক অভিমান জমে আছে।আর সেটাই স্বাভাবিক।তখন ওর ভেতরের সত্বা ওকে বলতে থাকে “কষ্ট নিস না মনে যাকে চেয়েছিলি তাকে তো পেয়েছিস।চোখের সামনেই তো সে থাকবে।এক দিন ঠিক পুষ্প ওর সব রাগ ভুলে তোকে কাছে টেনে নিবে শুধু সময়ের অপেক্ষা।”

~~~~

দেখতে দেখতে কয়েক টা মাস পার হয়ে গেছে।প্রথম প্রথম পুষ্প ফিরোজ কে পাওা না দিলেও ফিরোজ সব সময় পুষ্প কে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করতো।আর একটা সময় পুষ্পের মান অভিমান ঠিক হয়ে দু জনের মধ্যে একটা স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।দু জনে এখন সুখী কাপল।

অপর দিকে মায়া ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা।শরীর টা বেশি ভালো নেই এই ভালো এই খারাপ।এই সময় এসেও মায়ার আজ ভিষণ আচার খেতে ইচ্ছে হয়েছিলো।মেহরাব সেটা শুনে এক বক্স আচার নিয়ে আসে।মায়া এতো বড়ো বক্স দেখে মেহরাব কে বলে

-দু তিন প্যাকেট হলেই চলতো তা না মহাশয় পারলে পুরো দোকানই শুদ্ধ ই নিয়ে আসে।

মেহরাব ওর কথা শুনে মায়ার সামনে এসে বসে।পেটের ওপর হাত রেখে বলে

-তুমি জানো না মায়া এখন আমি কতো টা খুশি তে থাকি।শুধু তাই না সবসময় অপেক্ষায় থাকি কখন তুমি কিছু খাওয়ার জন্য আমার কাছে বায়না ধরবে।আমি তো তখন পারলে সব নিয়ে আসি।আমি চাই না এ সময়টা তুমি কোনো কিছু নিয়ে আফসোসে থাকো।আল্লাহ আমাকে যথেষ্ট দিয়েছে।তার চাইতে বড়ো কথা হলো একবার আমি তোমার কাছ থেকে বড়ো কিছু হারিয়েছি।অনেক কষ্ট পাইছি তাই দ্বিতীয়বার আর কষ্ট পেতে চাই না।যখন যা মনে চাইবে বলবা।কোনো কিছু নিয়ে আমার বউ বাচ্চা যেনো কষ্ট না পায়।

-হুম হয়েছে,যা যা করছেন আমার জন্য কোনো কিছু চাওয়ার ই সুযোগ রাখেন নি।চাওয়ার আগেই তো হাজির করে ফেলেন।

মায়ার হাত মেহরাবের হাতের মুঠোয় নিয়ে চুমু খায় আর বলে

-তোমরাই তো আমার জীবনের সব।

মেহরাবের প্রতিটি কথায় মায়া অন্যরকম শান্তি পায়।একটা মানুষ কতোটা ভালো বাসতে পারে সেটা মেহরাব কে না দেখলে মায়ার ধারনা হতো না।চোখ বন্ধ করে নেয় মায়া আনন্দে চোখ থেকে টুপ করে এক ফোটা জল গরিয়ে পরে।এটাই ওর সুখের অশ্রু।ভাবতে থাকে পাঁচ মাস আগের ঘটনা গুলোর কথা..

বোনের বিয়ের পরে প্রথম ফিরোজের বাসার সবাইকে দাওয়াত করা হয় মীর ম্যানসনে।আগে এক সম্পর্ক আর এখন সেটা আরেক সম্পর্কে রুপ নিয়েছে।তাই বড়ো সরো আয়োজন করে মেহরাব।মায়া সিতারা আর শায়লা কে সঙ্গে নিয়ে সব রান্না বান্না করে।সবাই আসার পর আদর আপ্যায়ন করা হয়।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই গল্প গুজব আড্ডায় মেতে ওঠে।সেদিনের মতো ওরা সবাই মীর ম্যানসনে থেকে যায়।রাতে হঠাৎ করে মায়া অসুস্থ্য হয়ে পরে।মেহরাব আর দেরি করেনা রাতেই গাড়ি করে কাছের একটা ক্লিনিকে নিয়ে যায়।ডাক্তার দেখিয়ে টেষ্ট করানো হলে মেহরাব ওর জীবনের আরেকবার সু খবরটা পায়।এবার ওর নিজের কানে শুনতে পারে মায়া প্রেগন্যান্ট।সেদিন ও মায়াকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ ধরে কান্না করে।মায়া অনেক থামতে বললেও থামেনি ও।এটা ওর আনন্দঅশ্রু এই দিনটার জন্য ও অধির অপেক্ষায় ছিলো।আর ঐ দিন মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলো মায়াকে একদমই চোখের আড়াল করতে দিবে না।

সত্যিই তাই প্রথম তিন মাস মায়াকে একদমই বাসার বাইরে যেতে দেয় নি তবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিন ছারা।যেমন ভার্সিটিতে মাঝে মাঝে যাওয়া লাগতো।তাও মেহরাব নিজে নিয়ে যেতো যতোক্ষণ ক্লাস হতো ততোক্ষণ অপেক্ষা করতো আবার নিজেই নিয়ে আসতো।অফিসে নিয়মিতো যেতো না।সব কিছুই ফিরোজের ওপর চাপিয়ে দেয় তবে বাসায় বসে বাকি গুলো অনলাইনে করে নিতো।সারাক্ষণ মায়ার কাছে থাকতো মায়া এতোটা পাগলামী করতে নিষেধ করলেও ও শুনতো না।যখন যেটা লাগতো তখন সেটা মেহরাব এনে দিতো।ওর কথা হলো শেষ পর্যন্ত ও মায়ার পাশে থেকে সবটা করতে চায়।এই দিন গুলো মায়াকে কোনো প্রকার একা ছাড়তে রাজি নয়।

পেছনের কথা গুলোর ভাবনা থেকে মায়া ফিরে আসে।
শরির টা দিন দিন ভারি হয়ে যাচ্ছে ওর।কিন্তু এ সময় যতো টুকু ওজন থাকার কথা তার চেয়ে বেশি আছে।এটা নিয়ে মায়া ইদানিং একটু বেশি চিন্তা করে।মেহরাব ওকে বরাবরের মতো নিষেধ করে দেয় এতো চিন্তা কিসের?এ সময় টা কারো কারো এমনটা হয়।মেহরাবের কথায় মায়া স্বস্থি পায়।ওর যতো দুঃচিন্তা থাকুক না কেনো এই মানুষটার ভরসায় আর তার বুকের মাঝে মাথা রাখলেই ওর সব ক্লান্তি চিন্তা দূর হয়ে যায়।
সাত মাসের সময়টাতে মায়ার বাবা মা আসে ওকে দেখতে।এ সময়টা অনেকেই ঘটা করে আয়োজন করে।মেয়ের জন্য অনেক কিছু নিয়ে আসে কাশেম মিয়া আর আয়মন।ওদের পেয়ে মায়া অনেক খুশি হয়।কিন্তু বেশিদিন তারা থাকতে পারেনা।ছোটো মেয়ের শ্বশুর বাড়ি দুদিন থেকেই আবার বাড়ি ফিরে যায় তারা।পুষ্প মাঝে মধ্যেই বোনের কাছে আসে আবার চলে যায়।

প্রতি মাসে মেহরাব ওকে নিয়ম মতো ক্লিনিকে চেকআপের জন্য নিয়ে যায়।মায়ার শরিরের কন্ডিশন ভালো তবে এইবার আল্ট্রা করে জানতে পারে ওর টুইন বেবি হবে এটা শুনেই মেহরাব তো মহা খুশি।মায়া ও ভিষণ খুশি তবে মেহরাবের হাসি মাখা মুখটি দেখেই মায়া বরাবরের মতো দ্বিগুন খুশি।আর ভাবতে থাকে “কি অদ্ভুত মানুষ অনাগত বাচ্চাদের নিয়ে এতোটা আনন্দ উচ্ছাস করতে ওর জীবনে একমাএ মেহরাব কেই দেখছে।”নিঃসন্দেহে বলা যায় ও একজন ভালো বাবা হবে।
মেহরাব আর দেরি করে না খুশির সংবাদ টা মেহরাব একে একে সবাইকে দিয়ে দেয়।খুশিতে সেদিন মায়াকে মেহরাব ক্লিনিক থেকে কোলো তুলে নেয়।মায়া অনেকবার নিষেধ করলেও শোনে না।ক্লিনিকের সব নার্স ডাক্তাররা হা হয়ে ওর কান্ড দেখতে থাকে।এমন পাগল বর মনে হয় তারা কখনও দেখেনি।বাইরে এসে গাড়ি পর্যন্ত এনে দাড় করায়।ওর কাছে মনে হয় এখন মায়া হাঁটলেও পেটে থাকা ওর বাচ্চারা কষ্ট পাবে।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে