স্বর্ণকেশী মায়াবিনী পর্ব-২৮+২৯+৩০

0
14

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-২৮

মায়া আর পুষ্প শপিংমলের সামনে দাড়িয়ে আছে।
ওরা দুজন সময় দেখছে আর কারোর জন্য অপেক্ষা করছে।প্রায় আধ ঘন্টা পরেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ফিরোজ আর ফারজানা আসে।ফারজানা এসেই মায়াকে জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করে।সেই যে ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে বলে মায়া ওদের বাসায় গিয়েছিলো আর দেখা হয়নি ওর সাথে।কারন আফিয়ার মৃ’ত্যুর পর পরই বিয়েটা হয়েছিলো।আর তখন মেহরাবের অবস্থা ভালো ছিলো না বিধায় মেহরাব আর মায়া বিয়েতে যেতে পারেনি।ফারজানা শ্বশুর বাড়ি থেকে এসেছে সেটা মায়া শুনেছিলো ফিরোজের মুখে।তাই আজ যেনো ওকে ফিরোজ নিয়ে আসে সে কথা আগেই বলে দিয়েছিলো।মায়া পুষ্পের সাথে ফারজানার পরিচয় করিয়ে দেয়।ফারজানা ওকে দেখে বেশ হাসিখুশি মনে পরিচিতো হয়।আর বলে

-বাহ তুমি দেখতে তো বেশ মিষ্টি একদম মায়া ভাবির মতোই।

পুষ্প শুনে মুচকি হাসে।অন্যদিকে ফিরোজ ওর বোনের কথা শুনে মাথা চুলকে একটু লাজুক লাজুক ভাব দেয়।ওকে দেখে মনে হচ্ছিলো ফারজানা ওর বিয়ের জন্য পাএি দেখতে এসে পাএি ঠিক ও করে ফেলেছে।ভাইয়ের দিকে একবার নজর দিয়ে বলতে থাকে

-কি ব্যাপার ভাইয়া তুমি কেমন লজ্জা পাচ্ছো ঘটনা কি?

-কই না তো

-হইছে কিছু বলতে হবে না বুঝতে পেরেছি।তোমার চয়েজ আছে বলতে হবে।

আসলে ফারজানা ফিরোজের মনের কথা সবই জানে।ফিরোজ বোনের কাছে আগেই সব কিছু শেয়ার করেছে।আজ শপিং তো উছিলা মূলত ও পুষ্প কে দেখতে এসেছে।দুই ভাই বোনের মধ্যকার ফিস ফিস করে কথা বলাটা মায়া লক্ষ্য করে।জিজ্ঞেস করলে ফারজানা “কিছু না ভাবি”বলে ভেতরে যেতে বলে।ভেতরে ডুকে ওদের ফিক্সড করা দোকানে যায়।প্রথমে মায়ার জন্য কিছু শাড়ি আর ড্রেস দেখে কিন্তু মায়া ঠিক পছন্দ করতে ই পারছে না।অনেক গুলো শাড়ি সামনে রাখা ছিলো।এতো এতো কালার আর ডিজাইন দেখে তিন জন মেয়ে কেউ কোনো শাড়ি পছন্দ করতে পারছিলো না।অবশেষে হিরোর আগমন ঘটে।মেহরাব মায়ার পাশের চেয়ারটি টেনে বসে।ওকে দেখে মায়া স্বস্থির নিঃশ্বাস ছাড়ে।ও জানতো মেহরাব ছাড়া ওর গতি নেই।কিন্তু মালুষটাকে এতো বার কল করলাম আসলো না শুধু বলছে নিজের যা পছন্দ হবে নিয়ে নিও।কিন্তু মেহরাব ওর বউয়ের স্বভাব সমন্ধে জানা আছে।ও যা পছন্দ করে দিবে সেটাই মায়ার মনে ধরবে।আর না হলে সময় চলে যাবে কিন্তু পছন্দ হবে না প্রয়োজনে সেদিনের মতো খালি হাতে বাসায় চলে আসবে।একে একে মেহরাব শাড়ি গাউন থ্রিপিচ পছন্দ করে দেয়।নিজ পরিবারের সকলের জন্য সাথে ফিরোজের পরিবারের জন্যও কেনাকাটা করা হয়।

মেহরাবের জন্য যা যা কেনা হয়েছে সে গুলো মায়া পছন্দ করে দিয়েছে।নিজের জন্য পছন্দ করতে না পারলেও বরের জন্য ঠিক পছন্দ করতে পারে।ওর পছন্দ কে মেহরাব ও মূল্য দেয়।
সে দিনের মতো সবাই বাসায় চলে আসে।সবাই কে ড্রইংরুমে ডাকা হলো।আজ রাত হলেও সিতারা আর শায়লা কে বাসায় থাকতে বলা হয়েছিলো।ওরাও এসেছে সাথে সিতারার স্বামী আর ছেলেও ছিলো।একে একে সব কিছু বের করে যার যার জন্য যে সব কেনা কাটা করা হয়েছে সে গুলো তার তার হাতে দেওয়া হয়ছে।সিতারার পরিবারের সবাই অনেক খুশি হয়।উপহার পেয়ে,খুশি মনে ওরা বিদায় নিয়ে ওদের বাসায় চলে যায়।

অন্যদিকে কাশেম মিয়া আর আয়মন ও খুব খুশি মেয়ে জামাই অনেক কিছু কিনে দিয়েছে তাদের।আয়মন তো মহাখুশি সে তো ভাবতেই পারেনি জামাই তাদের জন্য এতোসব উপহার আনবে।পুষ্প ওর পছন্দ মতো সব কিছু নিয়েছে ও অনেক খুশি।শপিং এর জিনিস পএ দেখতে আর গুছাতে বেশ সময় চলে যায়।
ডিনার সেরে সবার ঘুমাতে যেতে একটু দেরি হয়ে যায়।মেহরাবের আজ একটু ক্লান্ত লাগছে তাই আগে আগে শুয়ে পরে।ক্লান্ত বিধায় অল্প সময়ের মধ্যে চোখে ঘুম চলে আসে।ঘুমের মধ্যে মেহরাব মায়াকে জরিয়ে না ধরলে ওর ঠিক ঠাক ঘুম হয় না।তাই এপাশ থেকে ওপাশ ফিরতেই হাত খালি জায়গায় পরলে ঘুম অবস্থাতেই হাত দিয়ে মায়াকে খুঁজতে থাকে।জায়গা ফাঁকা বুঝতে পেরে চোখ খুলে তাকায়।শোয়া থেকে উঠে রুমের চারদিকে চোখ বুলালে কোথাও মায়াকে দেখতে পায়না।মনে একটু চিন্তার উদয় হয়।বারন্দায় দরজার দিকে নজর বুলালে দেখতে পায় দরজা একটু খোলা।তারমানে ও ওখানেই আছে।কিছু একটা ভেবে খাট থেকে নেমে বারান্দার দিকে পা বাড়ায়।বারান্দায় কালারফুল আলো জ্বলছে।তাতে সবটাই দৃশ্যমান।মায়ার দিকে এক নজর চেয়েই মেহরাবের চোখ থেকে আধো আধো ঘুম উবে যায়।ওর মায়াবিনী ওকে তার কতো রূপে ঘায়েল করবে সেটা ওর জানা নেই।এই মুহূর্তে মায়া পিং কালারের সিল্কের পাতলা নাইটি পড়া অবস্থায় আছে।পেছনে লম্বা স্বর্ণকেশ গুলো ছেড়ে দেওয়া।এমন দৃশ্য দেখে মেহরাবের মাথা নষ্ট।সামনের দিকে এগিয়ে পেছন থেকে মায়াকে জড়িয়ে ধরে চুলের মধ্যে নাক ডুবিয়ে দেয়।

মায়া আজ আচমকা ভয় পায় না।ও হয়ত মেহরাবের আসার অপেক্ষায় ছিলো।চুল গুলো একপাশে সরিয়ে গলায় ভালোবাসার পরশ দিতে থাকে।প্রিয় মানুষটার নেশাচুর ছোয়াতে মায়া যেনো ভালোলাগাময় এক অন্য জগতে হারিয়ে যাচ্ছে।
ঘরির কর্কশ এলার্মে মেহরাবের ব্যাঘাত ঘটে।মুখে এক রাশ বিরক্তির ছাপ।
-এই সময় এলার্ম কেনো
মায়া ওর কথা শুনে মেহরাবের গলা জড়িয়ে বলতে থাকে
-আমি সেট করেছিলাম জনাব
-কিন্তু কেনো ?
-কারন আপনাকে উইশ করার জন্য।হ্যাপি ম্যারেজ এনিভার্সারি মাই ডিয়ার স্বামী টা।
বলেই মেহরাবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।মেহরাব ও মায়াকে ওর দু হাতের বাধনে শক্ত করে আকরে ধরে।

কিছুক্ষণ পর মায়া মেহরাব কে ছেরে ওর হাত ধরে রুমের মধ্যে নিয়ে আসে।খাটের পাশে সাইড টেবিলে রাখা একটা ট্রে।তার মধ্যে সুন্দর একটা চকোলেট কেক রাখা।ওটা মায়া মেহরাবের হাতে ধরিয়ে দেয়।মেহরাব একটু অবাক হয়।কেক পেয়েছে কই জিজ্ঞেস করলে মায়া জানায় ও নিজেই বানিয়ে রেখেছিলো।স্পেশালি মেহরাবের জন্য।মেহরাব কেকটা দেখে খুব প্রশংসা করে।আর বলে
-দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও মনে হয় তার চাইতে দ্বিগুন স্বাদের হবে।আফটার অল মীর মেহরাবের বউয়ের হাতের কেক বলে কথা।
-হয়েছে আর প্রশংসা করতে হবে না এবার কেটে নিন।
-না তুমিই কাটো।
-না আপনি
-না তুমি

এ ভাবে দুজনের মধ্যে কথা চলতে থাকলে মেহরাব বসা থেকে উঠে দাড়ায়।রুমের কোনায় রাখা ভাজ করা একটা ছোটো টেবিল নিয়ে আসে।সেটা সেট করে তার ওপর কেকের ট্রে টা রেখে মায়াকে সামনে দাড় করায়।মেহরাব মায়ার পেছনে দাঁড়িয়ে ওর দু হাতে হাত রেখে একসাথে কেকটি কাটে।মায়া কেকের একটা টুকরো হাতে নেয়।মেহরাবের দিকে ঘুরে হা করতে বললে মেহরাব হা করে মুখে কেক নেয়।তখন মায়া একটু দুষ্টুমি করে।খানিকটা ক্রিম ওর ঠোঁটের পাশেও লাগিয়ে দেয়।মেহরাব ওর হাত ধরে ফেলে,হাতের পাঁচ আঙুল লেগে থাকা ক্রিম গুলোর দিকে নজর যায়।একে একে প্রত্যেকটি আঙুলের ক্রিম খেয়ে নেয়।মায়া নিষেধ করলেও শোনে না।খাওয়া শেষ করে এবার মেহরাব দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে

-এবার তোমার পালা
-মানে
-মানে আমি তোমার আঙুল পরিষ্কার করেছি এবার তুমিও আমার মুখের ক্রিম ঠিক একই ভাবে পরিষ্কার করে দিবে।
মায়া এ কথা শুনে একটু লজ্জা পায়।ওর অবস্থা দেখে মেহরাব বলে
-এতো দেরি হচ্ছে কেনো ফটাফট করে দেও বলছি না হলে কিন্তু অন্য ব্যবস্থা নিবো।
মায়া এবার দেরি করে না ঠোঁটের পাশের ক্রিম টুকু খেয়ে নেয়।মায়া একটু সরে আসতে লাগলে মেহরাব ওকে ফেলে।
-উহুম সরে যাওয়া চলবে না।স্পেশাল রাত তাই এ রাত টাকে স্মরনিয় করে রাখা দরকার।না হলে যে কোনো কিছুর পরিপূর্ণতা পাবে না।মায়া ওর বুকে মুখ লুকায়।ও তো চায় এই মানুষটার মাঝে সব সময় নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে।তার ভালোবাসার সাগরে সবসময় হাবুডুবু খেতে।একটা সময় আবার দুজন দুজনার মাঝে হারিয়ে যায়।

~~~~~

পরদিন বেশ বড়োসরো করে মীর ম্যানসনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।কাছের দূরের অনেকেই এসেছিলো।মায়াকে পুষ্প আর ফারজানা পার্লার থেকে সাজিয়ে এনেছিলো।মায়াকে জামদানী শাড়িতে একদমই নতুন বউ বউ লাগছিলো ।ওরা দুজন ও শাড়ি পরেছিলো।এদিকে পুষ্পের সাজ দেখে ফিরোজের মাথা নষ্ট।বেচারা পারছে না অনুষ্ঠানে ওর দায়িত্বে থাকা কোনো কাজে মন দিতে।একটু পর পর শুধু দু চোখ পুষ্পকে খুঁজে বেরিয়েছে।মেহরাব পান্জাবী পরেছিলো।এমনিতেই মেহরাব যেই পোষাক পরুক না কেনো পারফেক্ট মানান সই লাগে।আজ তো মায়া ওর থেকে চোখ সরাতে কষ্ট হয়েছে।মনে মনে শতো বার আওরিয়েছে “ইশ আমার বরটা এতো কিউট ক্যান”
মেহরাব অবশ্য ওর চাওনির মানে বুঝতে পেরেছিলো তাই তো বরাবরের মতো ওকে মুচকি হাসি উপহার দিয়েছে মেহরাব।তাতেই যেনো মায়ার মন টা খুশিতে পরিপূর্ণ হয়েছে।

সবকিছু শেষ হলে মায়ার বাবা মা বোন চলে যায় বাড়িতে।মায়া আবার একা হয়ে যায়।কয়েকদিন বাসাটা বেশ জাকজমক ছিলো।পুষ্পের সামনে পরিক্ষা তাই ওকেও রাখা সম্ভব হচ্ছিলো না।কি আর করার কয়েক দিন মন খারাপ থাকলেও একটা সময় সবটা স্বাভাবিক হয়ে যায়।আজকাল মেহরাব ওকে বেশি বেশি সময় দেয়।যার কারনে মায়ার একাকিত্ব লাগে না।এভাবে দিন সপ্তাহ মাস পার হতে থাকে।

কিছুদিন ধরে মায়ার শরির টা ভালো যাচ্ছে না।ঠিক মতো খেতে পারছে না।ঘুম ও কম হয়।মেহরাব কে কিছু না বললেও মেহরাব সেটা লক্ষ্য করেছে।জিজ্ঞেস করলে বলে কিছু না হয়ত প্রেসার লো তাই এমনটা হচ্ছে।মেহরাব ও তাই ভাবলো হয়তো তাই হবে।সে জন্য ওকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে নিয়মিতো বেশি বেশি খেতে।যাতে করে প্রেশার ঠিক থাকে।দিনের যতোটুকু সময় ও কাছে থাকে না ঐ টুকু সময় সিতারা কে দায়িত্ব দিয়েছে যেনো মায়া কোনোরকমের অনিয়ম না করে।তাই সিতারা আর শায়লা একটু পর পরই ওকে এইটা সেইটা খেতে দেয়।না খেতে চাইলে এক প্রকার জোড় করেই খাওয়ায়।মায়া মনে মনে ভাবে “এ কাদের পাল্লায় পরলাম আমি?

“অনেকদিন ধরে ফিরোজের মা মেহরাব আর মায়াকে দেখতে চাচ্ছে।এমনিতেই বেশির ভাগ সময় তার শরির টা ভালো থাকে না বিধায় কোথাও সে যেতে পারে না।ফিরোজ আগেই বলে রেখেছে আগামী কাল বন্ধের দিনে ওদের দুজনকে যেতে হবে।মেহরাব মায়াকে বলে রাখে ফিরোজের বাসায় যাওয়ার কথা।
পরদিন,ফিরোজের বাসায় যাওয়ার জন্য মেহরাব রেডি হয়ে মায়াকে তারা দিচ্ছে।শাড়ি পরতেছিলো মায়া কিন্তু এই শাড়ি পরতে গেলেই ওর যতো ঝামেলা।শাড়ির কুচিটা ঠিক মতো দিতে পারেনা।শেষে মেহরাব কে ডাকে।ও এসে সুন্দর করে গুছিয়ে দেয়।
-এ জন্যই শাড়ি পরতে চাই না কিন্তু না আপনার জন্যই পরতে হয়।
-আরে এতো রাগ হচ্ছো কেনো আমি আছি না?নো টেনশন
-হুম ঠিক আছে কিন্তু সবসময় তো শাড়ি পরার সময় তো আর কাছে থাকবেন না তখন কি করবো?
মেহরাব ওর সামনে গিয়ে দু গালে হাত রেখে কোমল স্বরে বলে
-আমি থাকাকালীন তুমি শাড়ি পরবে অন্যসময় না।না হলে শাড়ি গুছিয়ে দেওয়ার মানুষ পাবে না যে!
-হইছে এবার চলুন।

ফিরোজদের বাসায় যেতেই ফিরোজের মা ওদের দুজনকে দেখে অনেক খুশি হয়।অসুস্থ্য শরির নিয়ে অনেক রান্না বান্না করেছে ওদের জন্য।এতো পদের রান্না করা দেখে মায়ার খুব কষ্ট লাগে।ইশ কতো কষ্ট হয়েছে তার।তাই খাবারের সময় মায়া ফিরোজের মাকে বসিয়ে দিয়ে শাড়ির আচল কোমরে গুজে সব খাবার দাবার একার হাতে এনে সবাইকে সার্ভ করেছে।এতোদিনে কিন্তু মায়া পাকা গৃহিনী হয়ে উঠেছে।খাবার খেতে খেতে পুরো মুহূর্তটা মেহরাব মায়াকে দেখছিলো।আজ মায়াকে অন্যরকম সুন্দর লাগছিলো।কি সুন্দর দায়িত্ব নিয়ে সবটা সামলিয়েছে ভেবে মনে মনে ভালো লাগা কাজ করে।খাওয়া দাওয়া শেষে একটা সময় ফিরোজের মা মেহরাব কে বলে “আমার শরিরটা বেশি ভালো যাচ্ছে না তাই আমার ইচ্ছা ছেলেটা বিয়ে করুক।মেহরাব বাবা তুমি ওর বিয়ের দায়িত্ব টা নেও।আমার কোনো কথাই তো ও শুনতে নারাজ।বলেছি পছন্দের কেউ আছে কিনা তাও বলছে না বলে সময় হোক তারপর বিয়ে করবে।”
মেহরাব সবটা শুনে তাকে আশ্বাস দেয় ফিরোজের বিয়ের সব দায়িত্ব ওর।ও দেখে শুনে ভালো মেয়ে দেখে বিয়ের ব্যবস্থা করবে।ওর কথায় ফিরোজের মা স্বস্থি পায়।
সেদিনের মতো ওরা ফিরোজদের বাসা থেকে চলে আসে।

একদিন অফিসের কাজের ফাকে মেহরাব ফিরোজকে ডাকে।ফিরোজ এসে বলে
-বড়োভাই এতো জরুরী ভাবে ডেকেছেন কিছু বলবেন?
-হা খুব ইম্পটেন্ট কথা আছে তাই
-কি বলবেন বড়োভাই?
-আগামীকাল তুমি একজনের সাথে দেখা করতে যাবে।
-কার সাথে বড়োভাই?
-তোমার বিয়ে দিবো পাএির সন্ধান পেয়েছি।আর পাএির সাথেই দেখা করতে যাবে।
-হোয়াট?
-এ ভাবে রিয়েক্ট করলে যে? প্রেম ট্রেম কিছু করো নাকি?
এই কথার ওপর ফিরোজ এখন ও পারছে না নিজের মনের কথাটা বলতে।ঢোক গিলে বলে
-না সে রকম কিছু না বড়োভাই
-তা হলে সমস্যা কোথায়?লোকেশন পাঠিয়ে দিবো কাল সময় মতো দেখা করবে।আর পাএি পছন্দ হলেই সবাই মিলে বাসায় গিয়ে কথা বলবো।
-ঠিক আছে বড়োভাই।
বলেই উঠে যায়।এ টুকু সময়ের মধ্যে ফিরোজ অস্থির হয়ে পুরো ঘেমে যায়।জীবনের সব কথা মেহরাব কে শেয়ার করতে পারলেও এই একটা কথা অনেক বার বলতে চেয়েও পারছে না।আবার মায়াকেও না।বলতে না পারলে তো পুষ্প কে হারাবে।আবার বলেও যদি উল্টা পাল্টা কিছু হয়?তখন তো মেহরাব ওকে ভুল বুঝবে।এ সব বাজে চিন্তা ভাবনা করে অবশেষে সিদ্ধান্ত নেয় যা হয় হোক ও আগামীকাল পাএির সাথে দেখা করবে।”

চলবে……

(লেখার ভুলত্রুটি মার্জনীয়)

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-২৯

“বৃষ্টি ভেজা পরন্ত বিকেল,আবহাওয়াটা বেশ লাগছে।শহরের বুকে এই সময়টায় বাহিরে মানুষের আনাগোনা বেশি।একটু বেড়ানো গল্প গুজবে আড্ডায় মেতে ওঠা।এমন পরিবেশে পরিবার পরিজন বন্ধু বান্ধব নিয়ে,একটু আনন্দ বিনোদনের জন্য বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বাইরে সময় কাটাতে অনেকেই পছন্দ করে।”

এমন একটা আবহাওয়াতে ফিরোজ বাইরে বের হয়ে শহরের একটা নাম করা কফি হাউজে এসে বসে।কোনো স্পেশাল মানুষ নিয়ে যদি এখানে আসতে পারতো তা হলে ওর মনে অনেক আনন্দ থাকতো।কিন্তু এখন আনন্দ নয় একরাশ বিরক্ত নিয়ে কারোর জন্য অপেক্ষা করছে।নিহাত বড়োভাইকে শ্রদ্ধা করে বলে তার কথাটা ফেলতে পারেনি।অন্য কেউ বললে জীবনেও আসতো না।
আধ ঘন্টা পেরিয়ে যায় এ টুকু সময়ের মধ্যে দু কাপ কফি খাওয়া শেষ।বুকের মধ্যে দুরুদুরু করছে সামনে কি হবে সেটাই ভেবে।কফি কাপ হাতের মুঠোয় নিয়ে আনমনে ভাবনা চিন্তায় বিভোর তখনই মেয়েলি কন্ঠে ভাবনা জগত থেকে চেতনা ফিরে।পাশ ফিরতেই কাংক্ষিতো মানুষটির দিকে চোখ যায় ফিরোজের।সুন্দর আর যথেষ্ট স্মার্ট একটি মেয়ে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।মেয়েটি কথার জবাব না পেয়ে আবার বললো

-আপনি মি.ফিরোজ?

-জ্বী জ্বী বসুন প্লিজ

-ধন্যবাদ আমি ইমা

বলেই মেয়েটি ওপর প্রান্তে ওর মুখোমুখি বসে পরে।

-কেমন আছেন

-জ্বী ভালো আপনি?

-আমিও ভালো আছি বলে মেয়েটি

এর পরে কিছুক্ষণ নিরবতা।দুজনেই চুপ একটা সময় নিরবতা ভেঙে ফিরোজ ই কথা বলতে শুরু করে।এর পর দুজনের মধ্যেই অনেক কথা হয়।ঘন্টা খানেক বাদে দুজনের আলাপ চারিতা শেষে কফি হাউজ থেকে দুজনেই বেরিয়ে পরে।

~~~~~~

পরদিন ফিরোজ অফিস গেলেও মনের মধ্যে একটা ভয় আতংঙ্ক বিরাজ করছিলো।এই বুঝি বড়ো ভাইয়ের ডাক আসলো ভেবে।একটা সময় ডাক আসে কিন্তু ওর সামনে গেলে মেহরাব ওকে কাজের কথা ছাড়া আর কিছুই বলে না।কিন্তু এতেও যেনো ফিরোজের মনে শান্তি মিলছে না।ও তো চেয়েছিলো বড়ো ভাই ওকে বকা দিবে বেশি কথা শুনাবে কিন্তু নাহ তার কিছুই হলো না?কি করবে ভেবে পাচ্ছে না ও কি তাহলে বড়ো ভুল করে ফেললো?সারা দিন পেরিয়ে যায় এমনকি এর পর তিন দিন পেরিয়ে গেলেও মেহরাব আর ফিরোজের সাথে কাজের বিষয় ছাড়া বাড়তি কোনো কথা বলে না।মেহরাবের এই এড়িয়ে যাওয়াটা ফিরোজের আর সহ্য হচ্ছে না।অফিসে বসে কিছু বলতে পারছে না কিন্তু বাসায় বসে তো এর একটা সমাধান দরকার।আপুর থেকেও হেল্প পাওয়া যাবে তাই পরদিন সকাল সকাল ফিরোজ মীর ম্যানসনে হাজির হয়ে যায়।

ওকে দেখে মায়া অনেক খুশি হয়।হাসিমুখে বসতে বললে ও ড্রইং রুমে বসে পরে।একটু পরেই মেহরাব চলে আসে।ওর পাশে বসতে বসতে বলে

-ফিরোজ এসেছো ভালোই হইছে আমার আর ডাকতে হলো না।
আমতা আমতা করে ফিরোজ বলতে লাগে

-বড়ো ভাই সবকিছুর জন্য সরি।

-মেহরাব ওর কাঁধে হাত রেখে বলে

-আরে সরি কিসের জন্য যাই হোক আসল কথায় আসি আগামী কাল আমরা সবাই মায়াদের বাড়ি যাবো।পুষ্পের বিয়ে ঠিক হয়েছে আর এই শুক্রবারই বিয়ে।

কথাটা শুনে ফিরোজের মাথায় আকাশ ভাঙ্গার মতো অবস্থা।গলা বুক শুকিয়ে আসছে ওর।কি শুনলো ও?না ভুল শোনেনি একদম সঠিক টাই শুনেছে।মেহরাব আবার বলতে লাগে

-তো এই কয়দিন তুমি অফিস সামলিয়ে রেখো আর হা বিয়ের দিন পারলে তুমিও আসবে কিন্তু।

পাশ থেকে মায়াও বলে উঠলো

-হা ভাইয়া আপনিও থাকবেন সম্ভব হলে আগেই চলে আসবেন।আর আন্টির সাথে কথা হলে বাসায় সবাইকে দাওয়াত করে দিবো।

ফিরোজ আর কথা বলতে পারে না মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।মেহরাব সকালের নাস্তা করবে ওকেও আসতে বলে টেবিলে গিয়ে বসে।কিন্তু ফিরোজ খেয়ে এসেছে এটা বলে বের হয়ে যায়।মেহরাব আর ওকে জোড় করে না।বাইরে এসে ওর কেমন দম বন্ধ হয়ে যাবার মতো অবস্থা।মাথার চুল গুলো এলো মেলো ভাবে টানছে।কি করবে কি করবে এখন ভেবে পাচ্ছে না।আর এখন তো কিছু করা ও যাবে না।এলোমেলো চিন্তায় ও শেষ এভাবেই অফিসে চলে যায়।সারাদিন একটুও কাজে মন বসাতে পারেনি।শেষমেষ এতো বড়ো একটা ছ্যা কা খাবে ভাবতেই পারেনি।
প্রয়োজনীয় অনেক জিনিস পএ কেনা কাটা দরকার।তাই মায়া মেহরাব কে সঙ্গে নিয়ে আজও কিছু শপিং করে নেয়।মায়ার মনে খুব উৎফুল্লতা কাজ করছে।একমাএ ছোটো বোনের বিয়ে বলে কথা।

পরদিন খুব সকালে মায়া আর মেহরাব মায়ার বাড়ির উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়।ফিরোজের মা আর ফারজানা কে আগে থেকেই বলা ছিলো আলাদা না গিয়ে ওদের সাথে যেনো যায়।তাই ওরা যাবার পথে দুজন কে সঙ্গে নিয়ে নেয়।ফারজানার বর ও যাবে কিন্তু জরুরী কাজে ব্যাস্ত থাকায় বিয়ের দিন যাবে বলে বেচারা আজ আর যেতে পারেনি।সবাই বেশ আনন্দের সাথে মায়াদের বাড়ি পৌছে যায়।
কাশেম মিয়া আর আয়মন সবাই কে পেয়ে অনেক খুশি।আর খুশি হবে না কেনো “বড়ো জামাইর জন্য ছোটো মেয়েকে ভালো বর আর ঘর দেখে বিয়ে দিতে পারবে এটার চেয়ে খুশির আর কি হতে পারে।আয়মন তো মনে প্রাণে এটাই চেয়েছিলো অবশেষে মনের আশা পূর্ণ হতে চলছে।কাশেম মিয়া মেহমান দেখে তাদের আপ্যায়নের জন্য ব্যাতি ব্যাস্ত হয়ে পরেছে।

“এতো দিনে কাশেম মিয়া তার বাড়ি ঘর অনেক টা ঠিক ঠাক করে ফেলেছে।অবশ্য এটা মেহরাব ই অবদান।কাশেম মিয়া প্রথমে চাইছিলো না মেয়ে জামাইর থেকে এতো কিছু নিতে।কিন্তু মেহরাবের একটাই কথা ও তাদের যেমন মেয়ে জামাই তেমনি ভাবে একে ছেলের মতো যেনো ভাবে।না হলে ভিষণ কষ্ট পাবে।মেয়ে জামাইর এমন কথায় আর তার মন রক্ষার্থে শ্বশুর আর না করতে পারেনি।যদিও এতোদিনে আয়মনের মনের উন্নতি ঘটেছে।স্বামীর সাথে সেও না করেছিলো পরে আবার সায় দেয়।”

মেহমানদের আলাদা রুমে থাকার ব্যাবস্থা করে।পুষ্প আর নতুন জামাইর জন্য নতুন রুম করা হয়েছে।পুষ্প ওখানেই ছিলো।মায়া বোনের সাথে দেখা করে পুষ্প মায়াকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে।সেই মুহূর্তে ফারজানাও যায়।বুঝা যাচ্ছে এই বিয়ে নিয়ে পুষ্প বেশ খুশি।আবার লজ্জা ও পাচ্ছে।মায়া আর ফারজানা ওকে এইটা সেইটা বলে আরো লজ্জায় ফেলে দিচ্ছিলো।
মায়া বোনের জন্য যা যা এনেছে সব পুষ্প কে দেয়।আয়মন সেখানে ছিলো এতো কিছু দেখে আয়মন খুশিতে কান্না করে দেয়।মায়া সে সব দেখে মাকে নিষেধ করে একদমই কান্না করা যাবে না।কিন্তু আয়মনের কথা এটা খুশির কান্না।মনে মনে ভাবে যাকে একটা সময় কতো নির্মম ভাবে অবহেলা নির্যাতন করেছে আজ সেই মেয়ের উছিলায় তার সংসারটা সুখি সুন্দর হয়ে উঠেছে।চোখের পানি মুছে মায়াকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খায়।মায়াও ওর মাকে জড়িয়ে ধরে মায়ের আদর অনুভব করতে থাকে।এটাই তো প্রকৃত শান্তি।এটার অপেক্ষাতেই ও ছিলো।ওর তো এর চেয়ে বেশি কিছু চাওয়ার নেই।

বিকেল থেকে বাড়ি আর গেট সাজানোর লোক এসে তাদের কাজ শুরু করে দেয়।মেহরাব তাদের সবটা বুঝিয়ে দিয়েছে।কলিমউল্লাহ মামুকে বলা ছিলো আগে থেকেই।বিকেল বেলা মামু রাসেল কে সঙ্গে নিয়ে আসে।অনেকক্ষণ কাশেম মিয়া আর মেহরাবের সাথে গল্প করে আবার চলে যায়।বলে গেছে বিয়ের দিন আবার আসবে।রাসেল থেকে যায় মেহরাব এর সঙ্গে।অনেক দিন পর রাসেল মেহরাব কে পেয়ে খুব খুশি।আগের মতো এইটা সেইটা নিয়ে গল্প করতে থাকে আর মেহরাব চুপচাপ ওর কথা শুনতে থাকে।সত্যিই ছেলেটা সহজ সরল মনের।

এদিকে মায়া ওর বরটাকে দায়িত্বের সাথে সবটা সামলাতে দেখে বেশ খুশি।মনে হচ্ছে বড়ো ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করছে।সেই আসার পর থেকে বিকেল হয়ে গেছে এখনও লোকজনদের কোথায় কি করতে হবে সেই কাজের ডিরেকশন দিয়ে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর মেহরাব কিছু একটা দরকারে ওর রুমে আসলে পেছন থেকে মায়া দরজা আটকে দেয়।মেহরাব পেছনে ফিরতেই দেখে এটা আর কেউ না ওর কলিজার বউটা।তবে ও তেমন পাওা দেয় না মায়া কে,নিজের কি একটা কাজ মন দিয়ে করছিলো।মায়ার এটা দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।সামনে এসে কোমরে হাত রেখে বলে
-কি ব্যাপার সামনে আসলাম অথচ দেখে মনে হচ্ছে দেখতে পাচ্ছেন না আমাকে।

-আরে কাজে আছি সরো তো।তা ছাড়া সবসময় ই তো চোখের সামনে থাকো।

ওর হাত থেকে কিছু একটা নিয়ে পাশে রেখে মায়া মেহরাবের কলার ধরে নিজের দিকে টান দেয় আর বলে

-এতো কাজ করতে হবে না আগে আমি পরে সবটা।

মেহরাব মনে মনে হাসে আর ভাবে মায়াবিনীকে আরেকটু রাগাই

-দেখো এটা বিয়ে বাড়ি কতো কাজ পরে আছে এখন যাও তো জ্বা’লাতন করো না।

-কি আমি জ্বা’লাচ্ছি ?দেখাচ্ছি তোমার কাজ।
বলেই মেহরাবকে নিজের দিকে এনে অধরে অধর মিলিত করে দেয় মায়া।মেহরাব যেনো এটাই চেয়েছিলো।হঠাৎ মায়াবিনীর এহেন কাজে মুগ্ধ সে।কয়েক মিনিট পর ছেরে দেয় মায়া কিন্তু মেহরাব এবার ছাড়তে চায় না।মায়ার এখন মনে হচ্ছে অসময়ে নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনছে।

-উহুম একদমই যাওয়া চলবে না।আ’গুন জ্বা’লিয়ে দিয়ে সেটা না নিভিয়ে দেওয়া পর্যন্ত যেতে দিবো না।

এ কথা শুনে মায়ার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায়।এটা ও কি করলো আর এখন এই মুহূর্তে কি সব করতে চাইছে মেহরাব।ইশারায় বেশ অনুনয় বিনয় করলেও মেহরাব ছারে না বরং পেছন থেকে বেশ শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
মায়া কিছুক্ষণ ছোটার জন্য চেষ্টা করলেও পরে স্থির হয়ে রয়।মেহরাব ওকে ছেরে সামনের দিকে ফেরায়।হেসে দিয়ে বলে

-কি ভয় পেলে নাকি?যাই হোক এখন আপাততো এ টুকুই থাক।ছেরে দিলাম বাকিটা রাতের জন্য তোলা থাক।
বলেই টুপ করে গালে একটা চুমু খেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।মায়া স্টাচুর মতো বসে থাকে।গালে হাত দিয়ে বলতে থাকে আমার পা’গল বর টা।

~~~~~~

অনেক দেরি করে ফিরোজ বাসায় ফিরে।একা একা কিছুই ভালো লাগছে না।সবকিছু কেমন বিষাক্ত মনে হচ্ছে।মনে মনে ভাবছে কি করাল আমার যাকে ভালোবাসি তার জন্য দেবদাস হয়ে যাচ্ছি অথচ নিজের মা বোন তারই বিয়ে খেতে চলে গেছে।পুষ্প তুমিও বুঝলানা আমার অবুঝ মনের ভালোবাসাটা।কতো ভাবেই তো বোঝাতে চেয়েছি অন্য কেউ হলে ঠিক বুঝতো কিন্তু হৃদয়হীনা মেয়ে তুমি কিছুই বুঝলা না।
এলো মেলো অসংখ্য চিন্তা ভাবনা গুলো করে যাচ্ছে।একটা সময় মনে হচ্ছে এখনই চলে যাই আর বরোভাইকে গিয়ে বলি”বড়োভাই আমি পুষ্প কে ভালোবাসি।আমি ওকে চাই,ভিষণ ভাবে চাই ।বিয়ে করতে চাই ওকে,আপনি এই কাজ টা নিজে দায়িত্ব নিয়ে করিয়ে দেন প্লিজ প্লিজ।”কিন্তু কথা গুলো মনের মধ্যেই চাপা দিয়ে দেয়।আর সময় নেই।সবটা এখানেই শেষ,মনকে বুঝ দেয়-

“এক তরফা ভালোবাসাগুলো বেশিরভাগই পূর্ণতা পায় না।”

চলবে…..

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-৩০

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতের আধার নেমেছে।বিয়ের গেট থেকে বাড়ির চারপাশটা ছোটো ছোটো মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছিলো সে গুলো জ্বলছে আবার নিভছে।এখন পরিপূর্ণ ভাবে বুঝা যাচ্ছে এটা একটা বিয়ে বাড়ি।তবে গান বাজনা সম্পূর্ণ বন্ধ রেখেছে।এ সব শব্দ কোলাহল মেহরাবের একদমই পছন্দ না তাই কাশেম মিয়া ও নিষেধ করে দিয়েছে।এর মধ্যে কাছের আত্নীয় স্বজন আর পাড়া প্রতিবেশিরা বিয়ে বাড়ি হাজির হয়েছে।একসাথে মিলেমিশে বিভিন্ন ধরনের পিঠা বানাচ্ছে আর নিজেদের গলায় গীত/গান গাইছে।তাদের কাজের কাছে চেয়ার পেতে ফারজানার মা ফারজানা মায়া ওরা বসে সবটা উপভোগ করছে।আয়মন বেশ ব্যাস্ততার সাথে সবটা সামলাচ্ছে।মুখে তার সুখের হাসি মেয়েটার ভালো জায়গায় বিয়ে হচ্ছে এই ভেবে।আয়মনের বাবার বাড়ির সবাই এসেছে।তারাও হাতে হাতে এইটা সেইটা করে যাচ্ছে।

কাশেম মিয়া বড়ো জামাই মেহরাব কে সাথে নিয়ে বিকেল বেলা বাজার ঘাট করে নিয়ে এসেছে।বিয়ের দিনে খাবারে যেই যেই আইটেম থাকবে সে সব এখন দুজন মিলে বাবুর্চি দের বুঝিয়ে দিচ্ছে।যদিও সব কিছু মেহরাব দায়িত্বের সাথে সবটা সামলে নিচ্ছে।জামাইয়ের এমন কাজে কাশেম মিয়া বেশ খুশি।শুধু মাএ মেয়ে জামাই নয় বরং বড়ো ছেলের দায়িত্ব পালন করছে।কাশেম মিয়ার সামর্থ ছিলো না বেশি লোকজনদের খাওয়ানোর।মেহরাব নিজে থেকে শ্বশুরকে বলেছে অনেক লোকের আয়োজন করতে।সবথেকে ছোটো মেয়ে আর মায়ার বিয়েতে সে রকম ঘটা করে আয়োজন করতে পারেনি বলে কাশেম মিয়ার মনে কম কষ্ট না।তাই শ্বশুর এবার যাতে কোনো কষ্ট অনুভব করতে না পারে সে জন্যই মেহরাব নিজে সবটার দায়িত্ব নিয়েছে।তা ছাড়া ওর ছোটো বোন থাকলে তো অনেক খরচ করে বড়ো আয়োজন করতো।তাই ছোটো বোন হিসেবে পুষ্পের জন্য এটুকু করা মেহরাবের অবশ্যই দায়িত্য কর্তব্যের মধ্যে পরে।

পুষ্প কে ওর রুমে বসিয়ে ফারজানা মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছে।আলাদা ভাবে কোনো হলুদের অনুষ্ঠান হয়নি তাই বিয়ের আগেই ঘরোয়া ভাবে কাল হলুদ ছোয়াবে।ফারজানা মেহেদী লাগানো আর মেকআপ করাতে বেশ পটু তাই পুষ্পের সাজ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই।এ সবের দায়িত্ব ফারজানা নিয়েছে।মেহরাব মায়াকে আগেই বলে রেখেছে দু হাত ভর্তি মেহেদী দিতে।তাই মায়া অপেক্ষা করছে পুষ্পের মেহেদী পরা শেষ হলেই ওর টা লাগাবে।মায়ার মেহেদী পরতেই অনেক রাত হয়ে গেছে।
হাত ভর্তি মেহেদী নিয়ে মায়া পরেছে এক বিপাকে।রাতের খাবারটাও খায়নি।এদিকে ভালো রং পেতে হলে শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।রুমে গিয়ে মুখ ভার করে বসে রয়েছে।মেহরাব শ্বশুরের সাথে বেশ আয়েশ করে রাতের খাবার খেয়ে রুমে আসে।সাথে এক প্লেট ভাত তরকারী এনেছে।দরজা লাগিয়ে প্লেটটি হাতে নিয়ে মায়ার সামনে গিয়ে বসে।ভাতের প্লেট দেখে মায়া বলে ওঠে

-খাবার আনতে গেলেন কেনো?দেখছেন না হাত ফাঁকা নেই খাবো কিভাবে?

ওর কথায় কর্ণপাত না করে মেহরাব মায়ার দু’হাতের মেহেদী দেখতে লাগে।মেহরাবের বেশ ভালো লাগে।
মেহেদীর নকশার ভেতরে ছোটো করে ইংরেজি অক্ষরে মেহরাবের নাম লেখা।এটা দেখে মেহরাব মুচকি হাসে।ভাত মাখিয়ে এক লোকমা মায়ার সামনে তুলে ধরে।আর বলে

-আমি থাকতে তুমি কেনো কষ্ট করবে জান।আমার জন্যই তো মেহেদির রঙে রাঙিয়েছো।তাই কোনো কথা নয় চুপ চাপ খেয়ে নেও।
মেহরাবের মুখে এমন কথা শুনে মায়ার নিমিষেই মন খারাপ
দূর হয়ে যায়।হা করে খাবার তুলে নেয় মুখে।এভাবে পুরো খাবার খাইয়ে দিয়ে মেহরাব ওঠে।সব কিছু ঠিক ঠাক করে মেহরাব শুয়ে পরে।মায়াকে বসে থাকতে দেখে বলে

-কি হলো সারারাত কি বসে কাটিয়ে দিবে না কি ঘুমাবে?

-এই মেহেদী ভর্তি হাত নিয়ে ঘুমাবো কি করে?

-সমস্যা নেই আসো আমি দেখিয়ে দিচ্ছি কিভাবে ঘুমাবে।

ওর কথা শুনে মায়া গিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পরে।মেহরাব ওর হাত দেখে বলে

-প্রায় শুকিয়ে গেছে আর চিন্তা নেই তবে এভাবেই শুয়ে থেকো।একদমই নড়াচড়া করবে না কিন্তু।
মায়া ওর কথা শুনে মাথা নাড়ায়।মেহরাব ওর পেট জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নেয়।

~~~~~

এ দিকে সারারাত চোখের পাতা এক করতে পারেনি ফিরোজ।তাই সকালের দিকে একটু চোখ লেগে আসে।কিছুক্ষণ পরই কলিং বেলের আওয়াজে ওর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।পর পর কয়েক বার কলিংবেলের আওয়াজে বিরক্ত মনে এসে দরজা খুলে দেখে ওর বোন জামাই সায়েম দাঁড়ানো।ওকে দেখে ফিরোজের ভ্রু কুচকে যায়।সায়েম হাসিমুখে সালাম দিয়ে ভেতরে ঢোকে।ফিরোজ সালামের জবাব দিয়ে দরজা লক করে ভেতরে আসে।সায়েম কে জিজ্ঞেস করে

-এতো সকালে এখানে আসলে তোমার মা মায়া ভাবিদের বাড়ি যাওয়ার কথা?

-ভাইয়া যাবো তো সঙ্গে আপনাকে নিয়ে যাবো তাই আসলাম।

-আমি তো যাবো না আগেই বলে দিছি তোমাকে ফারজানা বলেনি?

-বলেছে কিন্তু ভাইয়া আমি তো ওখান টা ভালো চিনি না তাই ভাবলাম আপনি গেলে ভালো হবে।

-আমি লোকেশন বলে দিচ্ছি তুমি চলে যাও।

-ভাইয়া চলেন না এক সাথে আড্ডা দিতে দিতে জার্নি করার মজাই আলাদা।

ওর কথা শুনে ফিরোজের মনে মনে রাগ লাগে।কিন্তু বোন জামাই বলে কথা বেশি কিছু বলতেও পারছে না।

-সায়েম এসেছো রেস্ট নাও পরে একাই চলে যেও আমাকে জোড় করো না।

-কেনো ভাইয়া আপনার কি শরির ভালো না?নাকি মন ভালো না?আমাকে বলতে পারেন প্রমিজ করছি মন ভালো করার চেষ্টা করবো।

-নো থ্যাংকস,ভাই তুমি যাও দূর থেকে এসেছো ফ্রেশ হয়ে নেও আমি নাস্তা বানাচ্ছি।

সায়েম আর কথা বাড়ায় না।ফিরেজ নাস্তা বানিয়ে আনে।দুজন মিলে সকালের খাবার খেয়ে নেয়।

~~~~

বেলা গড়াবার সাথে সাথে বিয়ে বাড়িতে রান্না বান্না লোক জনের সমাগম শুরু হয়ে গেছে।পুষ্প কে ঘরোয়া ভাবে সবাই মিলে হলুদ ছুয়ে দিয়ে গোসল করিয়ে দেয়।ফারজানা মায়া আয়েশা আর বিয়ে বাড়িতে আসা আরো কয়েক জন হলুদ শাড়ি পড়েছে।মেহরাব বিয়ে বাড়ি সামলানোর ফাকে ফাকে তার বউ টা কে দেখছে।একদমই হলুদ পরীর মতো লাগছে।কিন্তু দূর থেকে দেখলে হবে না কাছ থেকে ছুয়ে দেখতে মন চাচ্ছে যে।পাশেই রাসেল ছিলো ওকে মায়ার কাছে পাঠায় এক গ্লাস পানির জন্য।রাসেল মায়ার কাছে মেহরাবের পানি খাওয়ার কথা বললে মায়া এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে দেখে বাইরে কোথাও মেহরাব নেই।রাসেল কে জিজ্ঞেস করলে বলে “ভাইজান রুমে গেছে ওখানে নিয়ে জান”
মায়া পানি নিয়ে ওদের রুমে আসতেই পেছন থেকে মেহরাব মায়া কে জড়িয়ে ধরে।পরে ওর খোপা করা চুল গুলো ছেরে দেয়।মায়া ওর কাজে চমকে যায়।

-আরে কি করছেন দরজা খোলা আর বাইরে কতো লোকজন সে খেয়াল আছে আপনার?

-উফ এই জন্য ই ভালো লাগে না দারজা টা লাগিয়ে দেই।
বলে দরজা লাগিয়ে আবার মায়ার কাছে যায়।

-এই নিন পানি

-ওটা রাখো পরে খাবো আগে মিষ্টি কিছু খাবো তারপরে পানি খাবো।

-আরে সেটা তো বলতে পারতেন তা হলে তো পিঠা আর মিষ্টি নিয়ে আসতাম।আপনি বসেন আমি নিয়ে আসতেছি।

বলেই মায়া পা বাড়াবে অমনি মেহরাব মায়ার হাত টান দিয়ে ওর বুকে নিয়ে আসে।

-এতো টা বোকা কেনো তুমি?নাকি আমার কাছে আসলে বোকা হওয়ার ভান করো?

-মানে?

-মানে হলো মিষ্টি খাবার তো আমার বউয়ের কাছে সব সময়ই থাকে শুধু সময় মতো পাই না।এই যেমন তোমার পোলাপি ঠোঁট জোড়া।এটার পরশ পেলেই আমি মিষ্টির স্বাদ পাই।

-ধূর ও কি যে বলেন।এতো আদর দেই তাও আপনার মন ভরে না।

-না মন ভরে না,বেশি বেশি আদর চাই যে।

-এখন ছাড়েন পরে দিবো।

-উহুম এই মেহরাব এ সব বিষয়ে সিরিয়াস বাকি রাখতে পছন্দ করে না জানো না তুমি?
বলেই কপালে অধর ছোয়ায়।মায়ার থুতনি ধরে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে।মায়া বেশিক্ষণ মেহরাবের চোখে চোখ রাখতে পারে না।চোখ বন্ধ করে নেয়।মেহরাব ওর দু চোখের পাতায় অধর ছোয়ায়।এরপরে গাড়ো খয়েরি রঙে রাঙানো অধরের সাথে নিজের অধর ছোয়ায়।তবে সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী করে না।ছেরে দেয় মায়া কে।

-এটুকুই থাক নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিলাম আর হা চুল টা বেধে বাইরে আসো।
বলে মেহরাব বের হয়ে যায়।মায়ার মনে একরাশ ভালোলাগা অনুভূত হয়।মেহরাব ওকে ওর ভাবনার চাইতেও বেশি ভালোবাসে।চুলগুলো ঠিকঠাক খোপা করে বাইরে বের হয়ে আসে মায়া।

~~~~~

অবশেষে ফিরোজ মন স্থির করে ও মায়াদের বাড়ি যাবে।সবার মতো ও বিয়ের দাওয়াত খেতে যাবে।অবশ্য ও দেখতে চায় পুষ্পের বর কে।নিজের চোখে কোনো ভালোবাসার মানুষের বিয়ে দেখার মতো সাহোস কারো আছে কিনা ওর জানা নেই।তবে ও এই দুঃসাহোস টা করে দেখতে চায়।তাই সায়েমকে বলে ও যাবে।সায়মে শুনে খুব খুশি হয়।সায়েম সুন্দর একটা পান্জাবি পরে নেয়।আর ফিরোজ কে ও পান্জাবি পরতে বলে।ফিরোজ একটা হাতের কাজ করা গর্জিয়াস পান্জাবি পরে নেয়।যাবেই যখন একটু সেজে গুজে ই যাওয়া ভালো।ওকে দেখে সায়েম বলে ফেলে

-আরেহ বাহ ভাইয়া আজ তো বিয়ে বাড়িতে আপনাকে দেখলে নির্ঘাত জামাই ভেবে সবাই ভুল করবে।হেব্বি লাগছে ভাইয়া।

-ধন্যবাদ এবার চলো যাওয়া যাক।

দুজনে এক সঙ্গে বিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়।

“দুপুর গড়িয়ে বিকেল প্রায়,ইতিমধ্যে অনেক লোকজনের খাওয়া দাওয়া হয়ে গেছে।পুষ্প কে বউ সাজানো হয়ে গেছে।ওর রুমে ওকে বসিয়ে রাখা হয়েছে।সাথে মায়া আয়েশা আরো কয়েকজন কে সাজিয়ে দিয়ে বেচারী ফারজানা ঘেমে শেষ।সাজানোর দায়িত্ব নিয়ে যেনো বিপাকে পরেছে।অবশেষে নিজেও একটু সাজগোজ করে নেয়।সায়েম এসে পরিপাটি না দেখলে আবার রাগ হবে।এখন বরের জন্য অপেক্ষা শুধু।বাড়ির সবাই সাথে আত্নীয়স্বজনরাও বরের জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে।অবশেষে বরের আগমন ঘটতেই বিয়ে বাড়ির গেটেই ছোটো বড়ো অনেকেই বরকে ঘিরে ধরে।

“বর আসার খবরটা পুষ্পের কানে যায়।খবরটা শুনে পুষ্পের মনের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে।এটা খারাপ লাগা নয় বরং ভালো লাগাময় অনুভূত হচ্ছে।ইতিমধ্যে বুকের মাঝে দ্রিম দ্রিম শব্দে যেনো নিঃশ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম।সাথে একরাশ লজ্জাও মনের মধ্যে ভর করে।দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে বিয়েটা হতে যাচ্ছে তাহলে।”

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে