স্বর্ণকেশী মায়াবিনী পর্ব-১৬+১৭+১৮

0
22

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-১৬

মাথা নিচু করে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আছে মায়া।বুকের ভেতর হাতুরি পেটার ক্রিয়া কলাপ চলছে।সামনের মানুষটার দিকে ভয়ে তাকাতে পারছে না।আ’গুন চোখে দৃষ্টিরত মায়ার ওপর,দেখেই বুঝা যায় ঐ চোখে চোখ রাখলে নির্ঘাত ভষ্ম হয়ে যাবে যে কেউ।

কিছুক্ষণ আগের কথা”
শরিরের মোহময় ঘ্রাণে বুঝতে পারে এই শক্ত পোক্ত পুরুষটা আর কেউ নয়।এ তো মেহরাব নিজেই।যাকে মায়া খুব করে চেয়েছিলো।মায়ার দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে মেহরাব।ওর দিকে এক নজর তাকিয়ে মায়া বুঝতে পারে দুনিয়ার যতো রাগ তেজ সবটুকু দিয়েই ওকে চেপে ধরছে।ব্যাথাতুর নয়নে তাকিয়ে থাকে মেহরাবের পানে।কোনো চিৎকার মুখ দিয়ে বের হয় না।শুধু অশ্রু গড়িয়ে দুচোখ দিয়ে ঝরতে থাকে।মেহরাব ওর চোখের নোনা জল দেখে একটু হুসে আসে।পরক্ষনে নিজেকে ঠিক করে কিছু না বলে এক হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় একটা নির্জন জায়গায়।সন্ধ্যা শেষ রাতের প্রহর শুরু।জোস্না রাত হওয়ায় কাছের সবকিছুই স্পষ্ট দৃশ্যমান।

মেহরাব আর চুপ থাকতে পারে না।মায়াকে দেখেই বুঝতে পারছে নিশ্চিত কোনো বিপদে পরতে যাচ্ছিলো।তবে সেটা পরে দেখবে’আপাততো মায়ার সাথে ওর নিজের ফয়সালাটা আগে চুকাতে হবে।
মাথার চুল গুলো দু হাত দিয়ে উল্টাতে থাকে মেহরাব।কি দিয়ে শুরু করবে বুঝতে পারছে না।এই মেয়ে তো ওকে পা’গল করে দিলো।

-তুমি আমাকে না জানিয়ে কেনো চলে এসেছো?

মায়া ওর ধমকের সুরে প্রশ্ন করা শুনে ভয়ে গুটিয়ে যাচ্ছে।তবুও একটু সাহোস নিয়ে বলে

-চলে আসার কাজ করেছেন তাই চলে এসেছি।

-হোয়াট ? আমি কি এমন করেছি যার জন্য আমি ঘুম অবস্থায় কাউকে কিছু না বলেই চলে এসেছো বলো?

মায়া যেটা বলতে চায় সেটা বলতে পারে না।

-তুমি জানো আমি তোমাকে না পেয়ে সারা বাড়ি খুঁজেছি।সব জায়গায় খুঁজেছি।মোবাইল টা পর্যন্ত নিয়ে আসোনি।দারোয়ান কাকার কাছ থেকে যখন শুনেছি তুমি গাড়ি নিয়ে বের হইছো তখন ড্রাইভার কে কল করে জেনেছি তুমি বাড়ি চলে আসছো।তখন একটু চিন্তা মুক্ত হয়েছিলাম।

মেহরাব ওর দুহাত দিয়ে মায়ার দু গালে হাত রাখে।বেশ নরম গলায় বলে

-জানো এর আগ মুহূর্তে আমি কতো কি খারাপ চিন্তা তোমাকে নিয়ে করে ফেলেছি তুমি বুঝবে না।তুমি বুঝবে কি করে তুমি তো আমাকেই এখন অব্দি বোঝার চেষ্টা করোনি।

এ সব কথা শুনে মায়া পরে দোটানায়।কি বলছে মানুষটা আমার সাথে যা করছে আবার আমাকে নিয়েই চিন্তা করছে এ সব কি হচ্ছে ওর মাথায় ডুকছে না।

-বুঝে কি হবে ?সব কিছু তো শেষ করে দিছেন।

ওর এমন কথা শুনে মেহরাব এর মুখে আবার কাঠিন্যভাব দেখা দেয়

-কি বললে আবার বলো মায়া,শেষ করে দিছি মানে কি?

-হা আমাদের মাঝে সবটা শুরুর আগেই শেষ করে দিয়েছেন তাই আমি বাধ্য হয়ে চলে এসেছি তা ছাড়া আজ তো আপনার আনন্দের দিন এখানে কেনো এসেছেন?

এসব আজগুবি কথা শুনে মেহরাবের মাথা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে এই মেয়ে কি ওকে সত্যি সত্যি পাগল করে দিবে?

-হা আনন্দের দিন ছিলো সেটার সবটুকুই তুমি শেষ করে দিছো।

-অমি কেনো করতে যাবো আমি তো আপনাকে মুক্তি দিয়েই এসেছি।

উফ এবার সত্যিই মাথায় কাজ করছে না।কি সব বলছে আমাকে মুক্তি দিয়েছে?নাহ কিছু তো একটা হয়েছে সবটা আগে শুনতে হবে।

-মায়া কি হয়েছে একটু খুলে বলোতো আমি না তোমার এমন ঘুরপ্যাঁচ কথার আগামাথা বুঝতে পারছি না।এমনিতেই সারা দিন ধরে ব্যাস্ততায় ছিলাম তার ওপর তোমার টেনশন।আমি বড্ড ক্লান্ত প্লিজ বলো আমায়।

-খুলে বলার কি আছে যাকে ভালোবাসতেন সে তো আপনার জীবনে চলে এসেছে।তাকে বিয়ে ও করে নিয়েছেন আর কি।

-ওহ এ কথা আরে যাকে পছন্দ করেছিলাম তাকেই তো বিয়ে করেছি এটা নতুন কি।হয়তো তুমি সেটা জানতে না।

-হা জানতাম না এটাই আমার জীবনের বড়ো ভুল ছিলো।

এবার আর মেহরাব সহ্য করতে পারছে না ওর সামনে এসে আবারও দুই বাহু ধরে বলে

-মায়া সত্যি করে বলোতো কেনো চলে এসেছো?তুমি মকবুল চাচা কে বলে এসেছো তোমার বাবা অসুস্থ্য কিন্তু আমি বাড়ি কল দিয়ে জেনেছি সে সুস্থ্য আছে।তারপর ও তারা যাতে কিছু না মনে করে তাই বলেছি তুমি এমনি দেখতে এসেছো তাদের।

মেহরাব মায়ার চোখ মুখের দিকে দৃষ্টি দিয়ে আছে।আকুলতা ভরা সেই দৃষ্টিতে।মায়া ঢোক গিলে নিচু স্বরে বলতে লাগে

-আপনি তো টয়া আপু কে পছন্দ করেন।আজ তো আপনাদের দুজনের বিয়ে তাই আমি সেটা সহ্য করতে না পেরে চলে এসেছি।

এমন আহম্মক মার্কা কথা শুনে মেহরাব এর চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।ওকে ছেরে দিয়ে উল্টো ঘুরে রাগে মাথা চুলকাতে থাকে।এই মেয় বলে কি।হৃদয় বলতে কি এই মেয়ের কিছু নেই?একটা বার ও কি ঘুণাক্ষরে টের পায়নি তাকে কতোটা ভালোবাসি।একটা বড়োসরো দম ছেরে বলতে লাগে

-আর ইউ ক্রেজি মায়া?এ সবই বুঝতে পারলে।সত্যিকার অর্থে এই মেহরাব কে তুমি এক বিন্দু বুঝতে পারলে না।এতো দিন হয়ে গেলো তবুও না।আমারই ভুল হইছে তোমাকে সময় না দিয়ে গায়ের জোড় দেখিয়ে নিজের ভালোবাসা আদায় করলে ইঠিক হতো।

-বুঝে কি হবে? আমি আপনার পথ থেকে যাতে দূরে সরে আসি সেই ব্যাবস্থাটাও করে দিয়েছেন।

-ওহ রিয়েলি এটাও করে দিয়েছি তা কিভাবে একটু বলবে?

-বলার কি আছে রাতেই তো কি সব কাগজে সাইন নিলেন।জিজ্ঞেস করছিলাম বলেছিলেন ওটা ডিভোর্স এর কাগজ।

এ সব শুনে মেহরাব সত্যিই বোকা বনে গেলো।এমন একজন সফল বিজনেস ম্যান যে কিনা কোনো দিন কোনো কাজে হারেনি।সবাই তাকে জিনিয়াস ভাবে।আর আজ ওর এই বোকা সোকা বউ সে কিনা নিজেই ওকে বোকা বানিয়ে ঘোল খাওয়াচ্ছে।মেহরাব এটাই কি তোর কপালে ছিলো।

-ওয়েট ওয়েট আমি বলেছি আর তুমি সেটা মেনে নিয়েছো।তা হলে পুরো পেপার গুলো পড়োনি কেনো?

একটু ধমকের সুরে বলাতে মায়া ভয়ে কেপে ওঠে।

-আর কি বললে টয়ার সাথে আমার রিলেশন আবার বিয়ে।আরে আমি বলেছিলাম না আমার বাবার বিজনেস পার্টনার এক চাচা ছিলো।সেই চাচার মেয়েই টয়া।একটা সময় আমরা কাছাকাছি থাকতাম,একসঙ্গে লেখাপড়ার করতাম।কিন্তু পরে ওরা ফ্যামিলি সহ ইউকেতে স্যাটেল হয়।ওর একজনের সাথে রিলেশন আর আগে থেকেই বিয়ে ঠিক।সেও ইউকেতে চলে যাবে।আজই ওদের বিয়ে ছিলো।ওর তেমন আত্নীয় না থাকায় চাচা আমার ওপর বিয়ের সব কিছুর দায়িত্ব দেয়।একদিকে তোমার টেনশন অন্যদিকে বিয়ের আয়োজন।পুষ্প কে কল দিয়ে তোমার সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে সারাদিন ধরে বিয়ের কার্যক্রম শেষ করেই রওয়ানা হয়েছি।তুমি জানো?টয়া তোমাকে না পেয়ে অনেক মন খারাপ করেছিলো তাই ওকে বুঝ দিয়েছি তোমার মিথ্যে বলা কথা টা দিয়ে।
সারাটা দিন ব্যাস্ততায় থাকলেও মন টা আমার এখানে পরে ছিলো।আর তুমি কিনা উফ কি সব ভেবেছো…!

এ সব শুনে মায়া স্তব্দ কিছু বলার ভাষা নেই।মানুষ টাকে ও এভাবে ভুল বুঝলো।আসলে পুরো কথা না জেনেই কিছু ভাবা ঠিক নয়।

মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে।এটাই সেই কাগজ।কাগজটির ওপর আলো ধরে ওকে পড়তে বলে।মায়া এবার চোখ বুলিয়ে প্রথম পাতাটি দেখেই বুঝতে পারে এটা কোনো ডিভোর্স পেপার নয় বরং এটা একটি দলিল।পরের পাতাটি পড়ার মতো আর ইচ্ছা নেই ওর।চোখ সরিয়ে নেয় বুঝতে পারে কতো বড়ো বুঝার ভুল হয়েছে ওর।কিন্তু কিসের দলিল আর কেনোই বা ওর সই নিলো।

-হয়েছে দেখা?এই টুকু কাজ তো সাইন দেওয়ার সময় পড়লে আজ আর অপরাধীর কাঠগোড়ায় আমাকে দাঁড়ানো লাগতো না।তুমি থাকো তোমার বাড়ি আমি গেলাম।

মেহরাব যেইনা ঘুরে সামনের দিকে পা বাড়াতে যাবে ঠিক সেই সময় মায়া ওর হাত ধরে।কিন্তু মেহরাব ফিরে না।

-হাত ছাড়ো মায়া আমার মাথা ঠিক নেই দেখা যাবে রাগের বশে খারাপ কিছু করে বসবো।

-আপনার যা খুশি তাই করেন তবুও আপনি আমাকে রেখে যাবেন না।

মেহরাব ওর দিকে ঘুরে তাকায়।ওর মায়াবিনীর কান্নারত মুখ খানি দেখছে।প্রিয়তমার কান্না ভেজা মুখখানি দেখতে ও মেহরাবের ভিষণ ভালো লাগছে।ওর জন্য ওর মায়া কাঁদছে ।এখন শান্তি লাগছে।তারমানে এই মেয়েটাও আমাকে ভালোবাসে?মনে মনে আওড়ায় যতো মন চায় কান্না করো আমাকে অনেক পু’ড়িয়েছো।কয়েক মিনিট পরে

-এবার কান্না থামাও

-আগে বলেন আপনি যাবেন না।আর সবকিছুর জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ।আমি আর না জেনে না বুঝে আপনাকে ভুল বুঝবো না।কথা দিলাম

-ঠিক আছে যাবো না কিন্তু থেকেই কি হবে সেই তো একা একাই রাত পার করা লাগে।বউয়ের কাছ থেকে কিছু পাই না।আর কি বললে ক্ষমা,সেটা করতে পারি একটা শর্তে।

-শর্ত?

-হা আমাকে খুশি করাতে হবে।

-কিভাবে বলুন আমি আপনাকে খুশি করতে সব কিছু করবো।

মেহরাব ওর কথা শুনে দুষ্টুমির স্বরে মায়ার কানের কাছে ওর মুখ নিয়ে বলতে থাকে

-আমার সকল পাওনা আমাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।আমি সব কিছু সুদে আসলে বুঝে নিতে চাই।তাহলে আমি ভেবে দেখবো তোমাকে ক্ষমা করা যায় কিনা।

মেহরাবের এমন কথায় মায়ার কান গরম হয়ে যায়।ও বেশ বুঝতে পারছে মেহরাব ওকে কিসের ইঙ্গিত দিয়েছে।লজ্জায় লান নীল বেগুনী হওয়ার মতো অবস্থা।মেহরাব ঠোঁট চেপে হাসে।ওর মায়াবিনী লজ্জায় মাথা নত করে আছে।হুট করেই মেহরাব মায়াকে পাঁজাকোলে করে নেয়।হঠাৎ এমন হওয়াতে মায়া চমকে যায়।দু হাত দিয়ে মেহরাবের গলা জড়িয়ে ধরে।বুকের হার্টবিট বেড়ে যায়।দুজনের দৃষ্টি এক হতেই মেহরাব দুষ্টুমির হাসি দিয়ে চোখ টিপ মারে।মায়া ওর কার্যকলাপে লজ্জা পেয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।মেহরাব বলতে লাগে

“অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছি আর নয়।এবার মীর মেহরাবের নিকট নিজেকে সোপর্দ করার জন্য প্রস্তুত হন মিসেস মেহরাব”

চলবে……

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-১৭ (স্পেশাল পর্ব)

টয়ার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতেই মেহরাব ফুলপুরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে।রওয়ানা দেওয়ার আগে পুষ্পকে বলে রাখে কিন্তু মায়াকে বলতে নিষেধ করেছিলো।গ্রামে পৌঁছাতেই সন্ধ্যা লেগে যায়।সাথে করে আনা জিনিসপএ লোক মারফত আগেই মায়াদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে ও কলিমউল্লাহ মামুর সাথে দেখা করতে যায়।সেখানে মামুর সাথে সৌজন্য মূলক সাক্ষাত সেরে শ্বশুর বাড়ির দিকে হাঁটা দেয়।তারপর পথের মাঝে আকস্মিক মায়ার সাথে দেখা।

জামাই আসবে শুনে স্বল্প সময়ের মধ্যে বেশ ভালোই আয়োজন করে ফেলেছে কাশেম মিয়া আর আয়মন।এটুকু তো করতেই হবে না হলে যে মান থাকবে না।মেহরাব এর সামনে অনেক ধরনের খাবার।খাবারের এতো পদ দেখে ভাবে কেমনে খাবে এসব?ও তো রাতে খুব অল্প খায়।তা ছাড়া বেশি খেলে তো সমস্যা হবে।ভদ্রতার খাতিরে অল্প অল্প করে খেয়ে ওঠে।যা খেয়েছে ওর জন্য বেশি খাওয়া হয়েছে তাই বাইরে গিয়ে একটু হাঁটা হাঁটি করছে মেহরাব।

এদিকে নতুন জামাইয়ের আজ প্রথম শ্বশুর বাড়িতে রাএিযাপন একটু ভালো বিছানা পাতি তো দিতে হবে।মেয়ের বিয়ের পর কাশেম মিয়ার থাকার ঘরের পাশে ছোটো করে নতুন টিন শেডের ঘর করে।নতুন জামাই জন এসে এখানে থাকবে সেই ভেবে।এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে কয়দিন পর আরেক মেয়ের বিয়ে দিবে এ সব ভেবেই এই ঘরটা করা।আয়মন আর পুষ্প মিলে খাটে নতুন বিছানা বিছিয়ে বেশ পরিপাটি করে দেয়।সেই সাথে প্রয়োজনীয় জিনিস পাতি দিয়ে যায়।এদিকে মায়ার মনে অন্যকিছু চলছে।লজ্জা ভয় সংশয় জড়তা সব কিছু এসে ভর করছে।
সেই সময় মেহরাব ওকে কোলে করে ঘর পর্যন্ত এনে নামিয়ে দিয়েছিলো।এর পর ও ঘরের মধ্যে ডুকেছে আর মেহরাবের সামনে আসেনি।মনের অস্থিরতায় খাবারটাও ঠিক মতো খেতে পারেনি।

পুষ্প মেহরাবের কাছে এসে বলে

-দুলাভাই আর বাইরে না থেকে ঘরে যান।সব কিছু গুছিয়ে দিয়েছি।কিছুর দরকার হলে ডাক দিয়েন।

-পুষ্প তোমার বোন কোথায়?

-বুবু সে তো ঘরের মধ্যেই আছে,যান গেলেই দেখতে পাবেন।

-আমার আনা প্যাকেট টা দিয়েছিলে?

-দুলাভাই..গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ দিয়েছেন আর সেইটা করতে ভুলে যাবো?আর দাঁড়িয়ে থাকবেন না ভেতরে যান।

মেহরাব ঘরে ডুকে রুমের চারপাশ টা দেখে নেয়।আস্তে করে ঘরের দরজার খিল টা লাগিয়ে দেয়।চোখ দুটো একজনকে খুব করে খুঁজছে।ঘরে বৈদ্যুতিক সংযোগ রয়েছে,ছোট্ট হলুদ আলোর একটি বাল্ব জ্বলছে।রুমের এক কোনে মেহরাব ওর প্রিয়তমা স্ত্রী কে দেখতে পায়।তার সোনালী চুল গুলো ছেরে দেওয়া।কাছে গিয়ে দু কাঁধে হাত রাখে চুলের মধ্যে নাক ডুবিয়ে দেয়,এমন কিছু হতেই মায়া কেপে ওঠে।শিহরণ বয়ে যায় সারা শরির জুড়ে।ভালোবাসার মানুষের পবিএ ছোয়ায় যে এক অন্যরকম শান্তি অনুভূত হয়।মায়া সেটা অনুভব করতে পারছে।মেহরাব ওকে নিজের দিকে ফেরায়।এতো দিন ধরে একসাথে থেকেছে কখনও এমন লাজে রাঙ্গা মুখটি দেখেনি।হয়ত সে সময় গুলো আর আজকের সময়টার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে তাই।এখনও মায়া মাথা নিচু করে আছে।

মেহরাবের পছন্দ করে আনা শাড়িটি পরেছে মায়া।টকটকে লাল রংয়ের শাড়ি।ইচ্ছে ছিলো বিয়ের সময়ে এরকম শাড়িরে বউ সাজিয়ে ওর ইচ্ছাটা পূরণ করবে।সেটা হয়নি তো কি হয়েছে আজ সেই ইচ্ছাটা পূর্ণ হলো।লজ্জায় লাল হওয়া লাজুক লতার মুখ খানি কাছ থেকে দেখতে থাকে।

-মা শাহ আল্লাহ কি সুন্দর লাগছে আমার বউ টাকে।আমি এ ভাবেই মন ভরে সারা জীবন তোমায় দেখতে চাই বউ।

মায়া লাজে মেহরাবের বুকে মুখ লুকায়।

-উহুম এভাবে নিজেকে লুকালে চলবে না।অনেক সময় নিয়ে দেখতে চাই।বড্ড দেরি করালে বউ,জানো কতো কষ্টে আমার সময় গুলো পার করেছি শুধু এই দিনটির আশায়।

মায়া এবার সাহোস করে মেহরাবের চোখে চোখ রাখে।ঐ চোখে রয়েছে অজস্র ভালোবাসা আর অনেকদিনের জমানো আকুলতা।বুকের মধ্যে মোচর দিয়ে ওঠে মায়ার।ও তো এসবের কিছুই ভাবেনি।ভাববে কি করে ওকে তো মেহরাব ঘুণাক্ষরে বুঝতে দেয়নি মেহরাব ওকে কতোটা ভালোবাসে।কয়েক মিনিট ধরে দুজন দুজনের প্রতি নিষ্ফলক দৃষ্টি বিনিময় হয়।এতো শক্ত পোক্ত ব্যাক্তির চোখ লাল দেখে মায়ার মনটা হা হা কার করে ওঠে।পুরুষ মানুষের চোখ থেকে এতো সহজে জল গড়ায় না।কিন্তু হারানোর ভয় তো সবার মনেই থাকে।এই প্রথম মায়াকে হারানোর ভয় মেহরাব পায়নি?আরো আগেই সেটা পেয়েছিলো।হাল ছেরে দিয়েছিলো কিন্তু ভাগ্য ওকে হারতে দেয়নি।সঠিক সময়ে মেহরাব ওর মনের রাণীকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেলেও অপেক্ষায় ছিলো মায়ার সম্মতির জন্য।আজ ওর জন্য খুশির দিন,তাই আনন্দে চোখে জল আসতেই পারে।

“এই পুরুষটিকে আর কষ্ট পেতে দিবো না।নিজেকে সপে দিবো তার কাছে।ভালো তো আমিও বেসেছি খুব খুব।আর নয় দূরত্ব!উজার করে সবটুকু ভালোবাসা দিতে চাই।”

মায়া একটু উঁচু হয়,মেহরাবের নাগাল পাচ্ছে না।মেহরাব বুঝতে পেরে একটু ঝুকে মায়ার দিকে।মায়া এবার নাগাল পেতেই মেহরাবের দু চোখে পর পর অধর ছুইয়ে দেয়।এই প্রথম প্রিয়তমার ভালেবাসার স্পর্শ পেয়ে মেহরাবের সারা শরিরে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যায়।মায়ার শরির কাঁপছে একটু সরে যেতে চায় মেহরাব ওকে ধরে ফেলে।দুষ্টু হাসি দিয়ে হাতের আঙ্গুল দিয়ে নিজের ঠোঁটের দিকে ঈশারা করে।
তার মানে হলো এই যে…

“শুধু এ টুকুতেই শেষ?এখানটাই তো আসল জায়গা,দাও না তোমার ঐ গোলাপী ঠোঁটের ছোয়া।না হলে যে কোনো কিছুই পূর্ণতা পাবে না”

মায়া ওর ইশারা বুঝতে পেরে পারেনা মাটির সাথে মিশে যেতে।এই লোকটা এতো নির্লজ্জ ক্যান?

মনে মনে ভাবলেও মেহরাব সেটার প্রতিউওর মুখে দিয়ে দেয়

-শখের নারীর কাছে সব পুরুষই নির্লজ্জ হয়ে থাকে,জানো না তুমি?না জানলেও সমস্যা নেই আজ প্রাকটিক্যালি বুঝিয়ে দিবো।

এমন কথায় মায়া ওকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে পেছনে ঘুরে দাড়ায়। দুজনের মাঝে দূরত্ব ঘুচিয়ে মায়ার ডান কাঁধের এক পাশের চুল গুলো সরিয়ে গলায় নাক ডুবিয়ে দেয় মেহরাব।ওর বাম হাত মায়ার শাড়ি ভেদ করে পেট স্পর্শ করে।মায়া ওর এমন পা’গলাটে ছোঁয়ায় নিজেও পা’গল প্রায়।কয়েক মিনিট এভাবে চলার পর মেহরাব মায়াকে ওর দিকে ঘুরিয়ে অধরে অধর রাখে।এ যেনো এক অন্যরকম সর্গীয় সুখ,দুজনের মাঝে সুখের আদান প্রদানের ক্রিয়া চলছে।মায়ার দম বন্ধ হয়ে যাবার মতো অবস্থা।মেহরাব ওকে ছেরে দেয়,হাফসাতে থাকে দুজনই কিন্তু এটুকুতে যেনো থেমে থাকতে চায় না দুটি মন।একটা সময় প্রিয়তমার মাঝে পরম সুখ পেতে হারিয়ে যায় দুটি মন।মায়ার মাঝে ডুব দেয় মীর মেহরাব”দুটি হৃদয়ের মিলনের মধ্য দিয়ে এতো দিনের অপেক্ষার অবসান ঘটে।

~~~~~~

মধ্য রাত চারদিকে নিরবতা বিস্তার করছে।আধ খোলা জানালার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো হাতছানি দিচ্ছে।মুহূর্ত টা বেশ মনোরম পরিবেশ।এই সময়টা কখনও মেহরাব উপভোগ করেনি।আজ ওর মায়াবিনীকে সাথে করে সময়টা উপভোগ করছে।মেহরাবের খোলা বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে রেখেছে মায়া।চোখ বন্ধ কিন্তু মেহরাব জানে মেয়েটা এখনও লজ্জায় ইচ্ছে করেই চোখ বন্ধ করে রেখেছে।বাইর থেকে আসা জোস্নার আলোতে মায়ার মুখ খানি দেখছে।ওর তো মাঝে মধ্যে বিশ্বাসই হয় না প্রথম দেখার সেই মেয়েটি আজ ওর ঘরনী?এ সব ভাবতেই জোড়ে ঝাপটে ধরে মায়াকে।মায়া মৃদু স্বরে আহ শব্দ করে ওঠে।

ঠোটের কোনে দুষ্টু হাসি ঝুলিয়ে বলে

-এই টুকু চাপে ব্যাথা পাও অথচ সওর কেজি ওজন তো ঠিকই সহ্য করতে পেরেছো।

মেহরাবের ঠোঁট কাটা কথা শুনে মায়ার আবার কান গরম হয়ে ওঠে।বুকে কয়েকটা কিল বসিয়ে দেয়।

-ছিঃ এতোটা বেশরম আপনি?

-আরে ব্যাথা পাই যে,আর কি বললে বেশরম?সবটা আমার এই বউটার জন্যই হয়েছি বুঝলে।আর বউয়ের জন্য নির্লজ্জ হতে দোষের কিছু নেই।

মায়া একটু আমতা আমতা করে মেহরাব কে বলে

-একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

-করো তবে সময় বেশি নিবে না দ্বিতীয় রাউন্ডে চলে যেতে চাই।

-আপনি থামবেন?নাকি আমি উঠে সোজা বড়ো ঘরে গিয়ে পুষ্পের সাথে শুয়ে পরবো।

-তুমি ইচ্ছে করলেও পারবে না এটা আমার বিশ্বাস।এবার বলে ফেলো ফটাফট।

-সই করা কাগজটা কিসের দলিল ছিলো?

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেরে মেহরাব বলে

-সেটা শুনে এখন কি হবে?যে আশায় ছিলাম সেটাতো তুমি ভেস্তে দিলে।

-তবুও বলেন না,না শুনা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছি না।

-কি বললে এতো কিছু করলাম তাও শান্তি পাচ্ছো না।

-উফ আবার ইয়ার্কি?

-আচ্ছা শুনো তা হলে..আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো শহরের বাইরে মনোরম পরিবেশে একটা বাংলো বাড়ি করার।তবে সেটা আর করা লাগে নি।রেডিমেড পছন্দ মতো বাংলো বাড়ি পেয়েও যাই।আর দেরি না করে কিনে নেই।আর সেটা তোমার নামে।ভেবেছিলাম ঐ খানে ছোটো খাটো হানিমুনে গিয়ে প্রথম বাসর টা সেরে নিবো।কিন্তু দেখো কি ভাগ্য আমার বাংলো বাড়ি রেখে শ্বশুর বাড়িতেই প্রথম বাসরটা হলো।
বলেই মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে ফেলে।

এসব শুনে মায়ার মনটা ভিষণ খারাপ হয়ে যায়।মেহরাব কি করলো আর ও কি বুঝলো।এ জন্যই বলে অতি চালাকে গলায় দ”ড়ি।মেহরাব ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে কথা গুলো শুনে ওর মন খারাপ করেছে।কিন্তু মেহরাব সেটা করার সুযোগ দেয় না।জড়িয়ে ধরে আদর করতে থাকে মায়াকে।একটা সময় আবার মায়ার মাঝে ডুব দেয় মেহরাব।অতল সুখে হারিয়ে যায় দুটি মন একসাথে।

চলবে…..

#স্বর্ণকেশী_মায়াবিনী
#লেখনীতে-বর্ণ(Borno)
#পর্ব-১৮

শ্বশুরের দেওয়া লুঙ্গি আর স্যান্ডো গেন্জি পরে আছে মেহরাব।এক হাত দিয়ে লুঙ্গি ধরে অন্য হাতে নিমের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করছে।এমন লুকে মেহরাবকে দেখতে বেশ লাগছে।পাশেই মায়া তোয়ালে হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।মেহরাব কে দেখছে আর মিটি মিটি হাসছে।ওর এমন হাসি দেখে মেহরাব ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে কেনো হাসছে?মায়া মুখ চেপে হাসছে আর বলে

-আপনাকে লুঙ্গি আর এই গেন্জিতে বেশ সুন্দর লাগছে।

-সুন্দর কে সবসময়ই সুন্দর লাগে।শহরের হোক আর গ্রামীন পোষাকে ই হোক না কেনো।তা ছারা আমি কখনও এ গুলো পরিনি।শ্বশুর আব্বা এতো শখ করে আনছে তার মান তো রাখাই লাগবে নাকি?

-হুম সেটা ঠিক আছে কিন্তু লুঙ্গি টা সাবধানে সামলিয়ে রাখবেন কিন্তু।

-কেনো আগে পরিনি বলে কি সামলাতে পারবো না?শোনো যে ভাবে পরেছি তুমি এটার সাথে ঝুলে থাকলেও খুলে পরবে না বুঝতে পারছো?

-হুম বুঝলাম কিন্তু আপনার জন্য বাড়ির ভেতরেই তো পানির ব্যাবস্থা করা হয়েছে এখানে আসলেন কেনো?আপনি তো এর আগে খালে কখনও গোসল করেননি।

-করিনি আজ করবো।কোনো একদিন বলতে তো পারবো শ্বশুর বাড়ির পাশে খাল আছে।আর মন ভরে সকাল সকাল খাল থেকে গোসল করেছি।এটাও কম কিসে বলো?

কথা বলতে বলতে কাঠের ঘাটলার সিড়ি বেয়ে নেমে শেষ প্রান্তে গিয়ে বসে মেহরাব।মায়া মগ দিয়ে গোসল করার কথা বললে মেহরাব জানায় ও নিচে পানিতে নেমে ডুব দিয়ে গোসল করবে।মায়া আর কিছু বলে না।এই মুহূর্তে মানুষটা ওর নিষেধ মানবে না ওর বুঝা হয়ে গেছে।
ঠিক ঐ সময়ে পুষ্প আসে মায়ার সামনে।মনে হচ্ছে ও এখানে দৌড়ে আসছে,হাফসাতে লাগে।মায়া ওর অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে?পুষ্প একটু দম নিয়ে বলতে লাগে

-বুবু একটা সু সংবাদ আছে

-সু সংবাদ..কিসের বল তো?

-শুনলাম ঐ শয়তান রমজান কে রাইতের বেলায় কারা জানি হাত পা বাইন্ধা খুব মারছে।প্রায় আধমরা কইরা ফালায়া রাখছে।এহোন নাকি পঙ্গু হাসপাতাল নিয়া ভর্তি করছে।

এ কথা শুনে মায়া চমকে ওঠে।

-কি বলিস কারা করছে এসব?

-সেইটা আমি কেমনে কমু তয় এক্কেরে ঠিক হইছে।বদের হাড্ডি কোথাকার এবার কর বেশি বেশি বিয়া আর মাইয়্যা গো জ্বা’লাতন।

মায়ার গতোকাল সন্ধ্যার কথা মনে পরে।এদিকে সব কথাই পাশ থেকে মেহরাব শুনছে।ঢোক গিলে মায়া সন্দেহের চোখে মেহরাবের দিকে তাকায় কিন্তু লোকটার মধ্যে কোনো ভাবান্তর নেই।মায়া নজর সরিয়ে নেয়।এ সব ও কি ভাবছে ? সে কেনো এমন করবে?তা ছাড়া ও তো কিছু বলেনি আর মেহরাবের তো জানারই কথা নয়।ওদের কথার মাঝে মেহরাব পানিতে নেমে কয়েকটা ডুব দিয়ে উপরে চলে আসে।পুষ্প চলে যায় মেহরাব মায়ার কাছে এসে দাড়ায়।ওকে অন্যমনস্ক দেখে ডাক দিয়ে বলে

-এ ভাবে দাড়িয়ে অন্য কারোর কথা না ভেবে দয়া করে তোয়ালে টা দাও।না হলে এ অবস্থায় সারাদিন এখানেই দাড়িয়ে থাকতে হবে কিন্তু।শেষে দেখা যাবে ভেজা অবস্থায় থেকে থেকে জ্বর হয়ে গেছে।

মায়া ওর কথা শুনে তারা তারি হাতের তোয়ালে টা এগিয়ে দেয়।মেহরাব ওর কান্ড দেখে একটু ইমোশনাল ফেস করে বলতে লাগে

-রাত ভর আমাকে দিয়ে এতো কষ্ট করালে,নিজেই নিজের গোসলটাও সেরে নিলাম আবার এখন এই কাজ টাও নিজের করতে হবে? হাহ…মেহরাব এই ছিলো তোর কপালে তোর বউ তো স্বামী সেবার কিছুই বুঝে না।

ওর কথা শুনে মায়ার ওপর আবার ও একরাশ লজ্জা ভর করে।না চাইতেও এই খোলা জায়গায় তোয়ালে দিয়ে মেহরাবের মাথা মুছে দেয়।বুকের কাছ টা মুছে দিতে চাইলে মেহরাব ওর হাত ধরে ফেলে।

-উহুম আর লাগবে না বাকিটা আমি নিজেই করতে পারবো।এসব প্রাইভেট পার্ট গুলোর সেবা শুশ্রুষা তোলা থাক।ব্যাক্তিগত রুমের মধ্যে করে দিও।

লজ্জার ওপর লজ্জা দিচ্ছে ওকে মেহরাব।

-হয়েছে এবার চলো আমাদের কিন্তু শহরের দিকে রওয়ানা হতে হবে।

মায়া মাথা নেরে সম্মতি জানায়।সকালের খাবার সেরে নিজের সব কিছু গুছিয়ে নেয় মায়া।ওদের গাড়ি কলিমউল্লাহ মামুর বাড়িতে।মেহরাব ড্রাইভার কে কল করলে মায়াদের বাড়ি পর্যন্ত গাড়ি আসে।সবার থেকে বিদায় নিয়ে ওরা রওয়ানা হয় শহরের পথে।
আজকের জার্নিটা ওদের কাছে আলাদা স্পেশাল।দুজনের মনেই খুশি খুশি বিরাজমান।মায়া গাড়ির কাঁচ নামিয়ে মুখ বের করে দিয়ে রেখেছে।আজও মেহরাব ওর চুল থেকে ক্লিপটা খুলে দেয়।বাতাসে চুল গুলো এলোমেলো ভাবে উড়ছে।মেহরাব ওর বউয়ের এমন রূপ দেখে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকে।

যাএা পথে কয়েক বার গাড়ি থামিয়ে মায়া নেমেছে।এটা ওটা খেয়েছে,এতে মেহরাব বাধা দেয়নি ওর সাথে নিজেও এ সময়টা উপভোগ করেছে।ওর মতে জীবনের প্রতিটি ভালো সময় গুলো স্মরনীয় রাখতে হলে প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতে হবে।না হলে জীবনের সুখ বলতে যে জিনিসটা রয়েছে সেটা অজানা অচেনা রয়ে যাবে।

গাড়িতে বসেই মেহরাব নিজের ল্যাপটপ ওপেন করে অফিসিয়াল কাজ করছে।অন্যদিকে মায়া ঘুমিয়ে গেছে মেহরাবের কাঁধে ওর মাথা।মেহরাব মায়াকে সরিয়ে এনে এক সিটে পা দিয়ে ওর মাথা নিজের কোলে দিয়ে শোয়ায়।ঘুমের মধ্যেই মায়া ওর পেট জড়িয়ে ধরে।মেহরাব ওর মায়াবিনীর এমন কাজে মুচকি হাসে।আলতো করে ওর কপালে অধর ছুয়ে দেয়।এই অবস্থায় ওর আর কাজ করতে মন চাচ্ছে না।ল্যাপটপ বন্ধ করে পাশে রেখে নিজেও সিটে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে।

~~~~~~

দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন কেটে যায়।মেহরাব ভিষণ ব্যাস্ত ওর বিজনেস নিয়ে।এর মধ্যে মায়ার রেজাল্ট বের হয়েছে।ও যে রকম ভাবছিলো তার চাইতে বেশি ভালো করেছে।মেহরাব ওর এই ফলাফলে সন্তুষ্ট।যদিও মায়া এই বিষয়ে বেশ চিন্তিত ছিলো।যাক সব চিন্তার অবসান ঘটিয়ে ভালো একটি ভার্সিটি তে এডমিট হয়।
শহরের নাম করা পাঁচ তারকা হোটেলে আজ সন্ধ্যার পরে মেহরাবের অফিসিয়াল মিটিং এর আয়োজন করা হয়েছে।ভেবে রেখেছে মায়াকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে।বিকেলে বাসায় ফিরে মায়াকে বললে ও খুব খুশি হয়।মেহরাব মাঝে মধ্যে মায়ার জন্য গিপ্ট নিয়ে আসে।সে গুলো পেয়ে মায়া অনেক খুশি হয় আর এই খুশিটা দেখার জন্যই মেহরাব এই কাজ টা করে।আজও মেহরাব মায়ার জন্য একটা গিপ্ট আনে।প্যাকেট খুলে দেখে একটা সাদা রংয়ের গাউন।এটা পেয়ে মায়া অনেক খুশি হয়।মেহরাব বলে রেখেছে এটা যেনো আজকে পরে যায়।

সন্ধ্যার পর মেহরাব রেডি হয়ে অপেক্ষা করছে মায়ার জন্য।কতোক্ষণ ড্রইংরুমে বসে ঘরি দেখে আবার রুমের দিকে পা বাড়ায়।মনে মনে ভাবে সত্যি সব মেয়েরাই একই রকম। কোথাও যাওয়ার জন্য রেডি হতেই সময় লাগায় অনেক।রুমে ডুকেই দেখে মায়া পিঠে হাত দিয়ে কিছু একটা করছে।কাছে গিয়ে দেখে জামার পেছনের চেইন লাগাতে গিয়ে চুলে আটকে গেছে।আর পারছে না চেইন উপরে তুলতে।মেহরাবের এবার রাগ লাগে মায়ার ওপর।

-আমাকে ডাক দিতে পারতে,কি করেছো এ গুলো?দেখেছো কতো গুলো চুল আটকে গেছে?আরেকটু হলে তো সব ছিরে ফেলতে।

এ দিকে মায়া অবাক হচ্ছে ,চুল আটকে গেছে ব্যাথা আমি পাচ্ছি উল্টো সে চুল নিয়ে পরে আছে।আমার চাইতে তার চুলের প্রতি দরদ কতো।
মায়াকে সামনে তাকাতে বলে মেহরাব খুব সাবধানে চেইন থেকে চুল গুলো ছারিয়ে নেয়।একটা চুল ও ছিরতে দেয়না।

-চুল গুলো আগে বাধলে তো এমন টা হতো না।এরপর থেকে আগে চুল বেধে তারপর ড্রেস পরবে।ওকে

-ঠিকআছে

-গেট রেডি নাউ

মায়া সাজগোজ শেষ করে আয়নায় নিজেকে দেখে নেয় সব ঠিক আছে কিনা।তখনই চাখ পরে ওর পেছনে মেহরাব দাঁড়িয়ে।ঘোর লাগা দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে আছে বধূর পানে।মায়া ওর দিকে ঘুরে দাড়ায়।

-চলুন আমি রেডি

মেহরাব ওকে এক মিনিট থামতে বলে,ড্রেসিং টেবিলের ওপর মায়ার সাজের জিনিস পএ ঘেটে একটা কালো টিপ নিয়ে ওর কপালে পরিয়ে দেয়।

-এখন আমার মায়াকে কোনো অপ্সরার চাইতে কম সুন্দর লাগছে না।বরং বেশি সুন্দর লাগছে।

কথাটা শুনে মায়া অনেক লজ্জা পায়।মেহরাব ওর অতি নিকটে আসে।

-মন চাচ্ছে মিটিং ক্যান্সেল করে বউকে ঘন্টার পর ঘন্টা আদর করি।

এ কথা শুনে মায়া ওকে মৃদু ধাক্কা দেয়।কিন্তু মেহরাব সরে না আরো কাছে আসে।গোলাপী রাঙ্গা ঠোঁটে আজ হালকা কৃএিম রংয়ের ছোয়া পেয়েছে।মেহরাব আলতো করে মায়ার অধরে ওর অধর চেপে ধরে কয়েক সেকেন্ডের জন্য।মায়ার শরিরে ভালোলাগার শিহরন বয়ে যায়।স্বল্প সময়ের ব্যাবধানে ছেরে দিয়ে কপালের কালো টিপ টি নিয়ে নেয়।

-টিপ পরা অবস্থায় শুধুমাত্র মীর মেহরাবই দেখবে আর কেউ নয়।এখন ছেরে দিচ্ছি রাতে কিন্তু নো ছাড়াছাড়ি।

মায়া আর এ সব শুনতে রাজি নয় তারাহুরো করে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
ঘন্টাখানেক পরে হোটেলের সামনে গাড়ি থামে।দুজনে গাড়ি থেকে নামে।ফিরোজ আসে ওদের নামতে দেখে আর বলতে শুরু করে

-বড়োভাই এতো দেরি করলে হবে?ভাবি তো আর চলে যাচ্ছে না যখন তখন পাচ্ছেন তো।

-কি বলতে চাও ফিরোজ ক্লিয়ার করে বলো।

-না মানে কইতে চাইছিলাম যেটা ভাবছেন ওইটা না।

-আমি বুঝতে পারছি ফিরোজ তোমার মনের কথা।আর শুনো ঘড়ি দেখো আমি ঠিক সময়ে আসছি বরং তুমিই অনেক আগে চলে আসছো।ব্যাপার কি বলো তো?

-নাহ তেমন কিছু না।
ফিরোজ এর মনে তো অনেক কিছুই চলছে বেচারা পারছে না সে গুলো কারো কাছে প্রকাশ করতে।কেমনে কি বলবে ভেবেই মুখটা কালো করে ফেলে।বিরবির করে বলতে থাকে

“আজ সিঙ্গেল বলে মনের কথা কেউ বুঝে না।ফিরোজ তোর ব্যাবস্থা তোকেই নিতে হবে দেখছি”

“ভেতরে ডুকে সবার সাথে সৌজন্য মূলক সাক্ষাত সেরে নেয়।এরপরে মিটিং শুরু হয়ে যায়।মেহরাব মায়াকে কাছেই একটা জায়গায় বসিয়ে দেয়।বেচারি বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে গেছে।এই সময়ের মধ্যে কয়েক গ্লাস কোমল পানিয় খেয়ে নেয়।মিটিং শেষ হলে এক সাথে সবাই ডিনার সেরে নিবে তাই ইচ্ছে করলেই এখন খাওয়া যাবে না।মায়া আর বসে থাকতে পারছে না।
আবার মেহরাব ওকে বারবার বলেছে এখান থেকে যেনো না ওঠে।কিন্তু এতো সুন্দর জায়গা একটু ঘুরে তো দেখা দরকার।সেটা ভেবেই উঠে পরে।আশপাশটা একটু ঘুরে দেখে।সেখানে বুফে খাবারের আয়োজন তার একটা পাশে অনেক ধরনের ড্রিংস রাখা।সে গুলো আবার বিভিন্ন রংয়ের।মায়ার খুব ইচ্ছে হয় সে গুলো খেতে।কাছে গিয়ে প্রথমে কমলা রংয়ের পরে কালো রংয়ের ড্রিংস খায়।মূলত ওটা কোক ভেবেই খাওয়া।একটা খেয়ে আরেক টা ধরেছে এভাবে কয়েক গ্লাস খেয়ে নিয়েছে।গ্লাস গুলো আকারে ছোটো তাই বেশি খেতে পেরেছিলো।

এ দিকে ফিরোজ ওর বসার জায়গা ওকে না পেয়ে খুঁজতে থাকে।মেহরাবের এখনও মিটিং শেষ হয়নি।ফিরোজ একটু ঘাবরে যায় মায়া কই গেলো ভেবে।ওকে না পেলে বড়োভাই তো অনেক রেগে যাবে।তাই ফিরোজ দেখতে থাকে।একটু এগিয়ে পেয়ে যায় মায়াকে।কাছে যেতেই মায়া ফিরোজকে দেখে একটা হাসি দেয়।আর ওকেও খেতে বলে।ফিরোজ বুঝে যায় ঘটনা কি হয়েছে।ও মোটেও এখন স্বাভাবিক পর্যায়ে নেই।ততোক্ষণে মিটিং শেষ করে মেহরাব বাইরে চলে আসে। ফিরোজ ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে কিছু একটা বলে।মেহরাব শুনেই মায়ার নিকট গিয়ে দেখে মায়া কেমন কেমন করছে।কি হয়েছে বুঝতে বাকি নেই।এখানে আর এক মুহূর্ত তাকে নিয়ে থাকা যাবে না।তাই ফিরোজ কে এখানের বাকি কাজের দায়িত্ব দিয়ে মায়াকে নিয়ে মেহরাব বেরিয়ে পরে।

নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে ওকে নিজে সোজা ওর নতুন কেনা বাংলো বাড়ির দিকে রওয়ানা হয়।আজ ওর প্লান ছিলো এখানে আসার কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো।সারাটা পথ মায়া আবোল তাবোল বকেছে।মেহরাব সবটাই বেশ কষ্টের সাথে সহ্য করছে।কি আর করার প্রাণপ্রিয় স্ত্রী বলে কথা।

চলবে……..

(লেখার ভুল ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে