স্বপ্ন হলেও সত্যি পর্বঃ-৩

0
1140

স্বপ্ন হলেও সত্যি পর্বঃ-৩
আফসানা মিমি

একটা নারী কণ্ঠ শুনে ভাবনার রাজ্য থেকে
বাস্তবে ফিরলাম। শোয়া থেকে তাড়াহুড়ো করে
বসে বললাম

—জ্বী আন্টি, আমি জেগেই। ক্লান্ত লাগছিল
এমনিই শুয়ে ছিলাম।
—ক্লান্ত লাগারই কথা। অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছো। এই নাও কফিটা খাও। কফি শেষ
করে নিচে চলে এসো নাস্তা করার জন্য।
—আন্টি আপনি শুধু শুধু কষ্ট করতে গেলেন কেন? আমি নিজেই করে খেতাম।
—আমাকে পর ভাবছো তুমি মেয়ে?
—না না আন্টি কি যে বলেন!
—লজ্জা পাবে না একদম বুঝেছো? নিজের বাসা
মনে করবে এটাকে মনে থাকবে?
—জ্বী আন্টি।
—তাহলে আমি এখন যাই তুমি একটু পর চলে
এস ঠিক আছে?
—ওকে আন্টি।
—লক্ষী মেয়ে আমার।(আমার থুতনিতে উনার হাতে স্পর্শ করে সেখানে চুমু খেয়ে বললেন)

আন্টিকে দেখে খুব সহজ সরল মনে হলো। মনে কোন প্যাঁচগোচ নেই। কি সাবলীল কথাবার্তা! যেন
বহুদিনের পরিচিত আমার সাথে।

এই প্রথম ব্যালকনিতে আসলাম। পশ্চিমমুখী ব্যালকনিটা। টবে ঝুলানো কিছু নাম না জানা
ফুলের গাছ। একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম
ব্যালকনি থেকে নিচে নামার জন্য একটা
স্টিলের আঁকাবাঁকা সিঁড়ি আছে। এটা দেখে একটু অবাকই হলাম বটে। এখানে সিঁড়ি দেওয়ার কোন কারন খোঁজে পেলাম না।

আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করলাম। তা হল বাড়ির
পিছনে বা পশ্চিমপাশে একটা খুব সুন্দর কাঠের
ঘর। কাঠের ঘরটা দেখে আমার স্বপ্নের কথা মনে
পড়ে গেল। এই কাঠের ঘরটার বারান্দার
তিনপাশেই ফুলের টব ঝুলানো। বিভিন্ন প্রজাতির, বিভিন্ন রঙ বেরঙ্গের ফুল ফুটে রয়েছে। যেই এ
কাজটা করেছে তার পছন্দের তারিফ করতে হয়!
আসলেই তার রুচিবোধ দারুণ।

রাতে ডিনার করে আঙ্কেল আন্টির সাথে বসে
কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে রুমে চলে আসলাম।
প্রথমে মনে করেছিলাম আঙ্কেল আন্টি
একলাই। তাদের কোন সন্তান-সন্তুতি নেই।
কিন্তু আমার ধারনা ভুল। তাদের এক ছেলে
এক মেয়ে। মেয়ে নাকি লন্ডন থেকে লেখাপড়া
করছে। আর ছেলে নাকি ইঞ্জিনিয়ার। বাসায়
নাকি প্রায় সময়ই আসতে পারে না।

আজকে আমার সহজে ঘুম আসবে না। কারন
জায়গা নতুন, বিছানা নতুন, পরিবেশ নতুন।
মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগবে। ব্যালকনিতে
একটা সোফা রাখা। যেখানে তিনজন বসতে
পারবে এবং একজন অনায়াসেই ঘুমাতেও
পারবে। কি যে করি কিছুই ভাল লাগছে না।

সেই ঘরটার দিকে চোখ গেল হঠাৎ। বারান্দায়
নীল বাতির ছড়াছড়ি। যার আলোতে ফুল গাছ
গুলো অপূর্ব লাগছে।

“এখানে এসে বারবার শুধু কাল রাতের দেখা
স্বপ্নটার কথা মনে পড়ছে। স্বপ্নে যেমন ঐ কাঠের
ঘরটা আমায় খুব করে টানতো! তেমনি এখানে
এসেও আমাকে ঐ কাঠের ঘরটা বারবার টানছে।
চোখ শুধু ঐদিকে তাকাচ্ছে বারবার। কেন
এরকমটা হচ্ছে আমার সাথে?”

ডায়েরিটা রেখে সোফায় বসেই রইলাম। ঘুমের
মাসি যেন আমার সাথে আড়ি কেটেছে। মাথার ভিতর যন্ত্রণা হচ্ছে প্রচুর। আল্লাহ্ একটু ঘুম দাও চোখে!

ফজরের আজান কানে আসতেই ঘুম ভেঙে গেল।
কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানিনা। রুমে গিয়ে
অজু করে নামাজ পড়ে আবার ব্যালকনিতে
আসলাম। পাখির কিচিরমিচির ডাক শুরু হয়ে
গেছে। চারপাশে হালকা আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


নিচে নেমে দেখি আন্টি ওঠে পড়েছে। উনাকে
রান্নাঘরে দেখে সেখানে গেলাম। আমাকে
দেখেই হাসিমুখে বলল
—গুড মর্নিং মামনি।
—আন্টি মর্নিং।
—ঘুম কেমন হলো তোমার?
—জ্বী আন্টি ভালো।
—কি খাবে তুমি চা নাকি কফি?
—আন্টি আমার কফি খাওয়ার অভ্যাস।
—ও আচ্ছা আমি তো চা করেছি। তুমি একটু
দাঁড়াও আমি তোমাকে কফি করে দিচ্ছি।
—আন্টি আপনাকে কষ্ট করতে হবে না আমিই
বানিয়ে নিচ্ছি।
—তুমি পারবে?
—জ্বী আন্টি বাসায় সবসময় আমারটা আমি
নিজেই করে খাই।
—এটাও কিন্তু তোমারই বাসা মনে থাকবে? যখন
যা ইচ্ছা করে খেতে পারো, ঠিক আছে? আর না
পারলে আমাকে বলবে ওকে ডিয়ার?
—জ্বী আন্টি।
—আচ্ছা আমি তাহলে তোমার আঙ্কেলকে চা
দিয়ে আসি।
—অবশ্যই আন্টি।

কফি নিয়ে গিয়ে ড্রয়িংরুমে বসলাম। এই হল রুমটা অনেক বড়। চারপাশের দেয়ালে বিভিন্ন আর্টিস্টদের পেইন্টিং ঝুলানো। তাদের মধ্যে মোনালিসার ফটোফ্রেমটা সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় লাগছে। মুগ্ধতার ছোঁয়া যেন লেগে আছে ঘরের প্রতিটি কোণায়।

ব্রেকফাস্ট করে রুমে এসে আম্মু আর ভাইয়ার
সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে একটু রেস্ট নিলাম।
ক্লান্ত লাগছে খুব। হঠাৎ কানে একটা পাখির
ডাক এল। যেন খুব কাছ থেকে আসছে। শুয়ে
থেকেই ব্যালকনিতে তাকালাম। থাই গ্লাস থাকার কারনে জানালা দিয়ে দেখতে পেলাম খুব সুন্দর
একটা পাখি। ওঠে ব্যালকনিতে গেলাম। গ্রিলে
বসে আছে পাখিটা। পালক এবং শরীরের
পুরোটা অংশ হলুদ আর পশ্চাদ্ভাগের একটু
অংশ লাল। পাখিটার নাম ইষ্টিকুটুম নাকি কি
যেন মনে পড়ছে না।

বাসায় আসলাম দুপুর দুইটার দিকে। আঙ্কেলের
সাথে আজকে গিয়ে সবকিছু ঠিক করে এলাম।
কোচিং কোথায় করাবে, কয়টায় করাবে সব
জেনে আসলাম। খুব গরম লাগছে। এখন
আপাতত লম্বা একটা শাওয়ার নিতে হবে।
শরীর ঘেমে একাকার অবস্থা।

শাওয়ার শেষে চুলগুলো টাওয়াল দিয়ে পেঁচিয়ে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালাম। কিছুক্ষণ পর
টাওয়ালটা খুলে চুলগুলো মুছছিলাম। হঠাৎই
সামনের কাঠের ঘরের বারান্দায় চোখ গেল। বেশ
লম্বা মতোন একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখগুলো আমার দিকেই নিবদ্ধ। একটু দূরে হলেও বুঝতে পারলাম ছেলেটার গায়ের রঙ একেবারে দুধে আলতা। বাপরে! এত ফর্সা মানুষ হয় নাকি! মনে
হচ্ছে যেন ছেলেটার বিদেশে জন্ম হয়েছে। কিন্তু চেহারা বর্ণনা করতে পারছি না। ছেলেটার কি লজ্জা নেই নাকি? এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে কেন? কেমন যেন অস্বস্তি লাগছিল তাই রুমে চলে আসলাম।

ডাক পড়েছে লাঞ্চ করার জন্য। ক্ষিদেও পেয়েছে অনেক। দেখলাম আঙ্কেল আন্টি আমার অপেক্ষায় বসে আছে। আমাকে দেখেই আঙ্কেল বলল
—ডিয়ার তাড়াতাড়ি এসো। এসে বসো।
—জ্বী আঙ্কেল।

খাওয়া শুরু করার কয়েক মিনিট পর আঙ্কেল
আন্টিকে বলছে
—শ্রাবণ কোথায়? দেখছি না যে! খাবে না নাকি?
—কোথায় আবার? তার নিজের ডেরায়। তুমিই বলো অবসর সময়ের মধ্যে সে কয় মিনিট এই বাসায় থাকে? শুধু খাওয়ার সময়টা হলে এসে খেয়ে চলে যায়। মাঝে মাঝে আমার জানো কি মনে হয়! সে এ বাসার সদস্যই না। রোবটের মতো চলাফেরা!
—এভাবে বলছো কেন? তার সেখানে ভালো লাগে
বলেই না থাকে!
—তাই বলে কি ঠিকমতো খাবেও না এসে?
—দাঁড়াও ফোন দিচ্ছি।

আঙ্কেল ফোন দেওয়ার পর শুনলাম আশেপাশেই ফোনটা বাজছে।

—আব্বু ফোন দিয়েছো কেন?

অসাধারন এক সুমধুর পুরুষালী কণ্ঠের অধিকারী একজন বলে ওঠল।

সেদিকে তাকিয়েই যেন আমার গলায় খাবার আঁটকে গেছে। সুদর্শন এই ছেলেটির উচ্চতা না হলেও ৬ ফিটের কাছাকাছি হবে। অত্যন্ত ফর্সা, ঘন কালো জোড়া ভ্রু, ঘন কালো লম্বা চোখের পাপড়ি, চোখের কোল ঘেষে লম্বা লম্বা পাপড়ির ছায়া পড়ায় একটা মায়াবী ভাব ফুটে ওঠেছে। কুচকুচে কালো চোখের মনি, কান জোড়া খরগোশের কানের মতো লম্বা লম্বা, গোলাপের পাপড়ির মত ঠোঁট আর থুতনির নিচের অংশটার জায়গায় একটু গর্তের মতো দেবে গেছে। সব মিলিয়ে অচিনপুরের রাজপুত্রের মতো। তবে একটু বেশি ফর্সা এটাই আমার ভাল লাগেনি। আঙ্কেলের কথায় আমার ঘোর ভাঙল। ছেলেটি আমার দিকে তাকানোর আগেই আমার চোখ সরিয়ে ফেলা উচিৎ। নয়তো আবার বেহায়া ভেবে বসতে পারে। ঠিক নাই।

—খাওয়ার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে সেই খেয়াল
আছে তোর?
—একটু ব্যস্ত ছিলাম তাই দেরি হয়ে গেল।
—তুই যে বাসায় আসলে কি নিয়ে ব্যস্ত থাকিস তা আমরা জানি। এখন তাড়াতাড়ি খেতে বস।

—ওহ ভুলেই গিয়েছিলাম শ্রাবণ, ও হচ্ছে আফসানা। তোর রেজওয়ান আঙ্কেলের মেয়ে। এখানে থেকেই ভার্সিটি এডমিশনের জন্য কোচিং করবে।(আঙ্কেল)
—আর আফসানা, এই হচ্ছে আমার দুইমাত্র গুণধর ছেলে শ্রাবণ। দুইমাত্র বলার কারন হচ্ছে তার ছোটবোন ফাল্গুনী লন্ডনে থেকে পড়াশোনা করছে। সামনের মাসেই হয়তো আসবে।

ছেলেটির দিকে আবারো তাকাতে হলো।
—হাই।
—হ্যালো।
বেশিক্ষণ তাকানো যাবে না। কারন ছেলেটির চোখদুটো গভীর। ডুবে মরার সম্ভাবনা আছে।

ছেলেটি মানে শ্রাবণ একেবারে আমার সামনাসামনি বসেছে। সে আমার দিকে একটু পর পর তাকাচ্ছে বেশ বুঝতে পারছি। আমার কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে। তাই কোনমতে খেয়ে তাড়াতাড়ি রুমে চলে আসলাম।

তখন তো এই ছেলেটিকেই দেখেছিলাম ঐ ঘরের বারান্দায় থেকে আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিল। তার মানে সে ঐখানেই বেশিরভাগ সময় কাটায়!

“মানুষের চোখের মনি এতো কালো হয়? হয়তোবা হালকা কালো হয় আর নাহয় বিড়ালচোখী হয়
কিন্তু এতো গাঢ় কালো মনি এই প্রথম দেখলাম। আকাশের চোখের মনি ছিল নীল। যেই চোখে
একবার তাকিয়েই ডুব দিয়েছিলাম। আজ
দ্বিতীয়বারের মত এতো সুন্দর চোখ দেখলাম।
যে চোখে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না। তাকালে নির্ঘাত ডুবে মারা যাবে, সাঁতরে তীরে ওঠতে
পারবে না। আর শ্রাবণের ঠোঁটগুলো একদম
আকাশের ঠোঁটের মতোই। যেন গোলাপের
পাপড়ি। আকাশের ঠোঁটে তো চুমু খেতে
পারিনি। তবে এবার কি সেটা পূরণ হবে?”

আজ থেকেই কোচিং শুরু হবে সকাল ১০ টায়।
আমি একাই এসেছি কোচিং সেন্টারে। আঙ্কেল অবশ্য আসতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমিই মানা করে দিই।

কোচিং শেষে বাসায় ফেরার পথে কে যেন আমার
নাম ধরে ডাক দেয়। পিছনে ফিরে দেখি একটা
ছেলে দাঁড়িয়ে। আমার সমবয়সী মনে হচ্ছে।
কাছে আসার পর চিনতে পারলাম।
—আরে রেহান তুই এখানে?
—হ্যা রে আমি।
—তা এতদিন কোথায় ছিলি? সেই যে ক্লাস
সেভেনে থাকতে স্কুল ছেড়েছিলি তারপর থেকে
তো আর কোন খবরই নেই তোর। বেঁচে আছিস
নাকি মরে গেছিস কিছুই জানতাম না।
—তুই তো জানিসই কেন স্কুল ছেড়েছিলাম। নানু
বাসায় থেকেই সেখান থেকে স্কুল কলেজ পার
করে ঢাকায় আসা। ঢাকায় পা রাখার একমাত্র
উদ্দেশ্য হচ্ছে এডমিশন টেস্টের প্রিপারেশন নেওয়া। এখানেই একটা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছি।
—কোনটাতে ভর্তি হয়েছিস?
—প্রমিজে।
—আরে আমিও তো ঐটাতেই।
—হ্যা ক্লাসে প্রথম তোকে দেখে চিনতেই পারিনি।
কত বড় হয়ে গেছিস!
—তুইও তো বড় হয়ে গেছিস। তা এখানে কোথায় থাকছিস?
—আন্টির বাসায়। আর তুই?
—আব্বুর এক ফ্রেন্ডের বাসায়।
—চল তোকে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে দিতে
কথা বলি!
—হ্যা চল।

আমরা হেঁটে কথা বলতে বলতে বাসার সামনে
পর্যন্ত এলাম। অনেক বললাম বাসার ভিতরে
আসতে কিন্তু আসলো না। অন্য একদিন আসবে
বলেছে। তাই রেহানকে বিদায় দিয়ে বাসার
ভিতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই দেখি
মিঃ খরগোশ উপস স্যরি মিঃ শ্রাবণ গেটের
সামনে ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে। আমিও
এতটা পাত্তা না দিয়ে ভিতরে চলে গেলাম।
যেতে যেতে মনে হলো রেহানের ফোন নাম্বারটাই
নেওয়া হয়নি। রেহান আর আমি সেই ক্লাস
ওয়ান থেকেই পরিচিত। ক্লাসের অন্যকোন
ছেলেদের সাথে কথা বলতাম না। একমাত্র
রেহানের সাথেই বলতাম। একই এলাকায়
বাড়ি হওয়ায় একসাথে স্কুলে যেতাম আসতাম।
খুব ভাল বন্ধুত্ব ছিল আমাদের মধ্যে। সাড়ে
ছয় বছর একসাথে লেখাপড়া করেছি। ক্লাস
সেভেনে ওঠার কয়েক মাস পর রেহানের মা
রেহানকে নিয়ে তার নানুবাসায় চলে যায়।
কারন তার বাবা মায়ের বিচ্ছেদ। তারপর
থেকে আর তার সাথে যোগাযোগ হয়নি।

বেশ কয়েকদিন হলো কোচিং শুরু করেছি। এ
বাসায় আসার পর আঙ্কেল আন্টির সাথে খুব
ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। কিন্তু তাদের
ছেলে মিঃ খরগোশের সাথে ভাল করে একদিনও
কথা হয় নি। মাঝে মাঝে খাওয়ার টেবিলে দেখা যায় আর মাঝে মাঝে তার ঐ কাঠের ঘরটার বারান্দায় দেখা যায়। আমার দিকে যখনই তাকায় তখনই দেখি ভ্রু কোঁচকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু এর কোন কারন খুঁজে
পাইনা কখনো। মাঝে মাঝে ভাবি তার ভ্রুতে নিশ্চয় কোন সমস্যা আছে। এ পর্যন্ত একদিনও তার মুখে হাসি দেখিনি। কাঠখোট্টা একটা!

আজকে আঙ্কেল আন্টি কেউই বাসায় নেই। ফাল্গুনী আপুকে আনতে এয়ারপোর্ট গেছে। শ্রাবণ যায়নি। ব্রেকফাস্ট করার সময় সে আমার পাশাপাশি এসে বসলো। কেমন বাঁদর ছেলে! সারা টেবিলে কি জায়গা কম পড়ে আছে?

—তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে মিমি?

সে আমার কাছে এসে বসার পরই আমার
কাঁপাকাপি অবস্থা। তার কথার উত্তর দিব কি?
এই প্রথম মনে হচ্ছে তার সাথে একান্তে কথা হচ্ছে
আমার। সে কাছে আসলে আমার হার্টবিটের যে
কি হয়! থামার নামগন্ধও নেয় না।

—জ্বী ভালো।
—তোমার জিপিএ কত ছিল?
—৪.৮২
—খারাপ না। কি নিয়ে পড়ার ইচ্ছা আছে?
—কেমিস্ট্রি।
—আচ্ছা সেদিন একটা ছেলেকে দেখলাম তোমার সাথে। ছেলেটা তোমার কি হয়?
—আমার ফ্রেন্ড।
—শুধুই ফ্রেন্ড নাকি…..
—জ্বী শুধুই ফ্রেন্ড। কেন? এ কথা জিজ্ঞেস করছেন কেন?
—এমনিই জাস্ট জানতে চাইলাম আর কি। আব্বু বলেছে আজকে তোমাকে নিয়ে যেতে।
—কোথায়?
—যেখানে কোচিং করো।
—দরকার নেই আমি যেতে পারব।
—আমার কিছু করার নেই। আব্বু বলেছে নিয়ে
যেতেই হবে নয়তো আবার বকা খেতে হবে।
—আচ্ছা ঠিক আছে।(কিছুক্ষণ ভেবে)
—আচ্ছা তুমি রেডি হয়ে এসো আমি অপেক্ষা করছি।

এই ছেলের হাবভাব বুঝতে পারছিনা। আঙ্কেল কি সত্যিই বলেছে আমাকে নিয়ে যেতে? কইএ পর্যন্ত কেউ তো আমার সাথে যায়নি। তাহলে মিঃ খরগোশের আজ কি হলো হঠাৎ? নিজ থেকে যেতে চায়ছে কেন?

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে