স্বপ্ন হলেও সত্যি পর্বঃ-২
আফসানা মিমি
—কি হল কথা বলতে পারেন না নাকি?
আপনি কি বোবা?
—বোবা কেন হবো? ঘুরতে আসলাম একটু।
—টিলার এত সাইডে এসে দাঁড়িয়েছেন কেন?
কেউ যদি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়!
—আজব! কে ধাক্কা দিবে? এখানে তো কেউ নেই।
—পেছন থেকে আমিই যদি এসে ধাক্কা দিতাম তাহলে তো আপনি এতক্ষণে ঐ খাদে মরে পরে থাকতেন।
এটা শুনে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।
এই ছেলে বলে কি! পাগল নাকি?
—আপনি ধাক্কা দিতে যাবেন কেন শুধু শুধু?
—যদি মন চায়তো!
—মগের মুল্লুক নাকি? আমার মনে হচ্ছে কি জানেন! আপনি নিশ্চয় কোন পাগলাগারদ থেকে পলাতক পাগল। সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ এ কাজ সজ্ঞানে করবে না।
আমার কথা শুনে ছেলেটা ভূবন ভুলানো হাসি
দিল। আমার মনে হল এমন হাসি আজ প্রথম
শুনলাম এবং দেখলাম। এত সুন্দর কারো
হাসি হয়! বিস্মিত নয়নে তার দিকে তাকিয়ে
আছি। সময়টা যদি এখানে থমকে যেতো!
হাসিটা যদি চিরকাল এভাবে চলতে থাকতো!
আমার ঘোর কাটলো সামনে দাঁড়ানো ছেলেটার কথায়।
—এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
—কিছুনা এমনিই।
—আচ্ছা কাল রাতে কি আপনিই ঐ বারান্দায়
দাঁড়িয়ে ছিলেন?
কথাটা শুনেই আমার বুকটা ধুক করে ওঠল।
কথাটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বললাম
—ডিস্টার্ব করবেন না তো। এখন সূর্যোদয় দেখব আমি।
এটা বলেই আমি পূর্ব আকাশে তাকিয়ে রইলাম।
—ওখেই।
বলেই প্যান্টের পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। এটা আমি বেশ বুঝতে পারছি।
আমি সূর্যোদয় দেখায় ব্যস্ত আর ছেলেটি আমাকে দেখায় ব্যস্ত।
অস্বস্তি লাগছিল খুব। থাকতে না পেরে তাই
জিজ্ঞেস করেই ফেললাম
—আপনি এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন?
আমার দিকে কেউ এভাবে তাকিয়ে থাকলে আমার অস্বস্তি হয়।
—সুন্দর জিনিস দেখতে মানা নেই। আপনার
যেমন সূর্যোদয় দেখতে ভাল লাগছে আমার
তেমন সূর্যের ঐ রক্তিম আভায় আলোকিত
আপনার মুখটি দেখতে ভালো লাগছে। ঐ
প্রাণোচ্ছল মুখটি দেখতে বেশ আকর্ষণীয়
লাগছে। এই দৃশ্য আমি আমার লাইফে
প্রথম উপভোগ করলাম।
মুহূর্তেই আমার মনটা ভাল লাগায় ছেয়ে গেল।
অস্বস্তিও কাটতে শুরু করেছে ছেলেটির কথায়।
এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে ছেলেটি!
—এই তুমি এখানে কি করছো? কখন থেকে তোমাকে খুঁজে খুঁজে পাগলপ্রায় হয়ে যাচ্ছিলাম!
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
পিছনে ফিরে দেখি আমার সব বান্ধবীরা দাঁড়িয়ে আছে। তাদেরকে দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম
—আমাকে এত খুঁজার কি আছে? এইতো
একটু হাঁটতে বের হয়েছিলাম।
—আমরা তো ভাবলাম রাতে আবার কোন জ্বীন পেত্নী আমাদের রাজকন্যাকে তুলে নিয়ে গেল কিনা!
—শুধুশুধু আমাকে নিতে আসবে কেন? আর কিসের রাজকন্যা! ধ্যাৎ! কি যে বলো না তোমরা!
আমাদের কথা শুনে ছেলেটি মিটিমিটি হাসতে
লাগলো। তার হাসি দেখে আমি লজ্জায় অন্যদিকে
মুখ ফিরিয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখায় ব্যস্ত হলাম।
আরো কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তারা
সবাই ছেলেটির সাথে পরিচিত হয়ে নিল।
ছেলেটির নাম আকাশ। এতক্ষণে মনে পড়লো কাল
সুমি বলেছিল এটা। কিন্তু আমার মনেই ছিল না।
আশেপাশের বেশ কিছু স্থানই দেখা হয়ে গেল এই চার পাঁচ দিনে। কিন্তু মনটা এখন আর ঘরে থাকতে চায় না। বড্ড ছটফট করে কিছু একটার জন্য। রাতে একদমই
ঘুমাতে পারছি না। যেন কেউ যাদুমন্ত্র করেছে ঘরে
না থাকার জন্য। আমি থাকি এই ঘরে আর
আমার অবাধ্য মনটা গিয়ে পরে থাকে ঐ
দক্ষিণপাশের ঘরটায়, ঘরের বারান্দায়। এমন
হলে যে আমি মরেই যাব। যদি নিজের মন
নিজের সাথে না থাকে।
রাত মনে হয় দশটা কি সাড়ে দশটা। বাইরে
বেরিয়ে আসলাম। ঘরে থাকতে অসহ্য লাগছে।
এমন ছন্নছাড়া অবস্থা হয়েছে আমার কোনকিছুতেই
মন টিকছে না। যদি তাকে একটিবার খুব জোড়ে
জড়িয়ে ধরতে পারতাম, তার হৃদস্পন্দনটা শুনতে পারতাম একটিবারের জন্য তাহলে বোধহয়
মনটা শান্ত হতো। পোড়া বুকটা ক্ষান্ত হতো।
হাঁটতে হাঁটতে কতদূর এখন জানিনা। আচ্ছা সে
কি ঘুমিয়ে পড়েছে? আমার কথা কি তার
একটিবারের জন্যও মনে পড়ছে? উফফ!
সবকিছুতে এমন খেই হারিয়ে ফেলছি কেন?
“আধো রাতে যদি ঘুম ভেঙ্গে যায়!
মনে পড়ে মোরে প্রিয় ও ও ও….
চাঁদ হয়ে রবো আকাশের ও গায়,
বাতায়ন খুলে দিও।”
“সেথা জোসনার আলোরও খনিকা
যেনো সে তোমার প্রেমেরও মনিকা
সেথা জোসনার আলোরও খনিকা
যেনো সে তোমার প্রেমেরও মনিকা।”
“কলঙ্ক সাথে জড়ায়ে রয়েছে,
প্রেমের কলঙ্ক সাথে জড়ায়ে রয়েছে;
আঁখি ভরে নিড় ও প্রিয় ও ও ও…
চাঁদ হয়ে রব আকাশের ও গায়
বাতায়ন খুলে দিও।”
“আধো রাতে যদি ঘুম ভেঙ্গে যায়!
মনে পড়ে মোরে প্রিয় ও ও ও…
চাঁদ হয়ে রবো আকাশেরও গায়,
বাতায়ন খুলে দিও।”
হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন শক্ত দুটি পেশিবহুল হাত দিয়ে আমার কোমর পেঁচিয়ে ধরলো। মুহূর্তের মধ্যেই আমার শরীরে লজ্জা, ভয়, ভাল লাগার এক অদ্ভুত শিহরন খেলে গেলো। মিশ্র একটা অনুভূতি অনুভব করছি। যারপরনাই বিস্মিত হলাম। আমি কিছু বলার আগেই লোকটা কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে উঠল
“প্রথমটুকু আবার গাইবে প্লিজ!”
এমন মাদকতায় মেশা কণ্ঠস্বর শুনে আমি হালকা
কেঁপে ওঠলাম। এত অবাক আমি জীবনেও হইনি। সে এখানে কি করে এলো? আর কেনই বা এলো? তার অনুরোধ অগ্রাহ্য করার মত দুঃসাহস আমার নেই।
“আধো রাতে যদি ঘুম ভেঙ্গে যায়!
মনে পড়ে মোরে প্রিয় ও ও ও….
চাঁদ হয়ে রবো আকাশের ও গায়,
বাতায়ন খুলে দিও।”
—গানটা কি আমার জন্য গাওয়া হয়েছে?
—ত..তা কে…কেন হ..হবে?
—কিন্তু আমার তো তাই মনে হলো।
আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। জীবনের এই প্রথম
কোন পুরুষ আমার এতটা কাছাকাছি। নিঃশ্বাস
নিতে কষ্ট হচ্ছে যেভাবে ধরেছে। শক্ত করেই
ধরেছে। হালকা ভাবে ধরলে সেই কখনই মাটিতে
পড়ে যেতাম। কারন হাত পা আমার অবশ হয়ে গেছে। হৃদপিণ্ডটা যেন বুক ফেটে বেড়িয়ে আসতে চায়ছে।
এত জোরে বিট করছে কেন হার্ট?
—আপনার তো কতকিছুই মনে হবে।
—গানের প্রত্যেকটা কথা আমার সাথে মিলে গেছে।
ঘুম আসছিল না একদম। বারবার তোমার কথা
মনে পড়ছিল। বাতায়ন খুলে দিয়েছিলাম তো।
কিন্তু আকাশের গায়ে তো চাঁদ হয়ে তুমি নেই।
তোমার অপেক্ষাই তো করছিলাম। তোমাকে শত খুঁজেও আকাশের গায়ে পাইনি। তুমি তো
আকাশের বুকের ভিতরে, একজম হৃদমাঝারে।
—প্লিজ ছাড়ুন না!
—ছাড়ার জন্য তো ধরিনি। এভাবে সারাজীবন
বেঁধে রাখার জন্যই ধরেছি।
—প্লিজ ছাড়ুন! আমার কেমন যেন লাগছে!
—তুমি কি কিচ্ছু বুঝো না? এত পিচ্চি কেন তুমি? একটাবার বুঝার চেষ্টা করো আমাকে। তোমাকে
সেদিন রাত থেকে দেখার পর আমি তোমাকে
চোখে হারাচ্ছি। জানো সেদিন রাতে আমি সবচেয়ে সুন্দর একটি দৃশ্য উপভোগ করেছি। যা আমার
চোখে কোনকালেই কখনো পড়েনি। এত সুন্দর
চোখ কারো হয়! তোমার দিকে একরকম
অজান্তেই তাকিয়েছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল
দুটো চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আকস্মিক তোমার চোখে চোখ পড়ার পর
চোখ সরাতেই পারছিলাম না। বেহায়া মনটা
বাঁধা দিচ্ছিল তোমার চোখ থেকে চোখ সরাতে।
মন ভরেই দেখছিলাম। তারপর কি মনে করে
অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে আবার তোমার দিকে তাকিয়েছিলাম। কিন্তু ততক্ষণে দেখলাম তুমি
দৌড়ে রুমের ভিতর চলে গেলে।
বুকের ভিতরটাই একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছিলাম তখন। সারারাত চোখের পাতায়
একটুও ঘুম ভর করেনি। খুব সকালে যখন রুম
থেকে বের হলাম তখন দেখলাম তুমি কোথায়
যেন যাচ্ছো। তোমার পিছু নিলাম। গিয়ে তোমার
আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু যখন আর
পারছিলাম না তোমাকে সামনে থেকে দেখার লোভটা সামলাতে। তখন তোমার কাছে গেলাম। সূর্যের আলোয়
তোমাকে যে কি অপরূপা লাগছিল! সেটা আমার
হৃদপিণ্য জানান দিয়েছিল ক্ষণে ক্ষণে হার্টবিটের মাধ্যমে। রাতে চাঁদের আলোয় তোমাকে মোহময়ী লাগছিল অনেক। আর সকালের সূর্যের আলোয় তোমাকে লাগছিল যেন হাজার হাজার ঘুমন্ত ফুলের মাঝে একটি সদ্য ফুটন্ত তাজা গোলাপ। যে গোলাপটা
শুধুমাত্র আমার জন্যই ফুটেছে সবার আগে। কারন
বহুল প্রতীক্ষিত ফুলটি ফুটার জন্যই আমি
এতকাল যাবৎ অপেক্ষা করছিলাম।
আকাশের কথাগুলো শুনে আমার সুখে মরে
যেতে ইচ্ছে করছিল। এতটা সুন্দর করে, এতটা
গুছিয়ে কেউ কথা বলতে পারে? সে তার কথার
জাদুতেই আমাকে মেরে ফেলবে। আমার হৃদয়ের
কম্পন যেন কিছুতেই কমছে না। আল্লাহ্! একটু
বিরতি দাও। নয়তো আমি মারা যাব।
তার শরীরের সাথে ভর দিয়ে দাঁড়ালাম। নয়তো পড়ে যাব। কারন পায়ে দাঁড়াবার মত একটুও শক্তি নেই।
—আচ্ছা এত রাতে তুমি এখানে কেন এসেছো?
—এমনিই ভালো লাগছিল না।
—কেন ভালো লাগছিল না?
—জানিনা। শুধু জানি ঘরে আমার মন টিকছিল না। সবকিছুই কেমন যেন খাপছাড়া মনে হচ্ছিল।
কারো জন্য মনটা খুব ছটফট করছিল। দৌড়ে
তার কাছে চলে যেতে ইচ্ছে করছিল। তার বুকে
মুখ লুকিয়ে খুব কাঁদতে মন চায়ছিল। তাকে
আমার মনের অস্থিরতাটা বুঝাতে চায়ছিল
আমার মন। তাই চলে আসলাম এখানে
নিরিবিলিতে অশান্ত মনটা শান্ত করার জন্য।
—তা কার জন্য এত অস্থিরতা তোমার? আর
এখানে কার কাছেই বা বলতে এসেছো তোমার ভিতরের অস্থিরতার কথা?
—যার বুঝার ক্ষমতা নেই তাকে বুঝিয়েও লাভ নেই।
—একবার বলেই দেখো না বুঝে কিনা!
আকাশের দিকে একটা আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে বললাম
—ঐ আকাশের কাছে বলতে এসেছিলাম যে কারো জন্য মনটা খুব পুড়ছিল। কিন্তু আকাশ তো বুঝেনা আমার ভিতরকার অবস্থা।
আমাকে তার দিকে ফিরিয়ে বলল
—ঐ আকাশের কাছে বললে কি হবে? আমাকে
বলো তো আমার জন্য তোমার মন পুড়েনা? মিস করেনা তোমার মনটা? এই যে তোমার সামনে
সশরীরে দাঁড়িয়ে আছে তোমার আকাশ।
চোখে পড়ছে না তোমার?
কথাগুলো বলেই খুব জোড়ে আমাকে জড়িয়ে
ধরলো। এমন জোড়ে ধরেছে যে এখন কোন প্রলয়
আসলেও আমাকে তার কাছ থেকে ছুটানো
যাবেনা। দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে কিন্তু সে আমাকে
কোনমতেই এক মুহূর্তের জন্যও ছাড়বে না।
এত শক্ত করে কেউ জড়িয়ে ধরে? মনে হচ্ছে
বুকের ভিতর ঢুকিয়ে ফেলবে।
আমার হার্ট যেমন বিট করছে। তেমনি তার
হার্টও খুব দ্রুত বিট করছে। এই বুকে এত শান্তি
কেন? এই বুকে মাথা রেখে অনায়াসেই মৃত্যুকে
বরন করে নিতে পারব আমি।
খুব ঘুম পাচ্ছে আমার। মনে হচ্ছে যেন বহুদিন
যাবৎ ঘুমাই না। আজ এই বুকে মাথা রেখেই
একটা শান্তির ঘুম দিব। মৃত্যুর আগেও যেন এই
ঘুম না ভাঙে। তার বুকে মাথা রেখেই আমি
ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলাম।
***
“এই বেলা, ১০ টা বাজতেছে আর কত ঘুমাবি?
১০-১১ টা পর্যন্ত ঘুমে পড়ে থাকিস, সকালে ঠিকমত খাস না এই জন্যই তো শরীরের এই অবস্থা। উঠ, তাড়াতাড়ি উঠ ঘুম থেকে। উঠে খাওয়া দাওয়া কর। আর কত জ্বালাবি আমাকে!”
ঘুম ভেঙেই এসব শুনতে হল আম্মুর মুখে।
চারদিকে তাকিয়ে দেখি আমি আমার রুমে
ঘুমিয়ে আছি। অবাক লাগছে নিজের কাছেই।
এতক্ষণ কি তাহলে আমি স্বপ্ন দেখছিলাম?
আল্লাহ্! এরকমটা আমার সাথে করতে পারলে
তুমি? স্বপ্ন না হয়ে এটা বাস্তব হলে কি এমন
ক্ষতি হতো? এবার একটু মুখ তুলে তাকাও না
আমার দিকে! আকাশের মত একটা জীবনসঙ্গী
জুড়ে দাও না আমার ভাগ্যে!
যাক কি আর করা! বাস্তবে না হয় নাই খুঁজে
পেলাম কোন ছেলেকে ভালবাসার মতো এখনো। কিন্তু স্বপ্নে তো পেয়েছি! তাও আবার দুই দুইজনকে।
এটাই বা কম কি? বাট আফসোস হচ্ছে স্বপ্নের
কথা ভেবে। থাক, যা কপালে নেই তা হবে কিভাবে?
ইশ! ভাবতেই গায়ে একটা শিহরন অনুভব হচ্ছে। আমার স্বপ্নের ভালবাসার মানুষ আকাশ কত্ত রোমান্টিক ছিল! আল্লাহ্ আর কিছু চাই না
তোমার কাছে। আমার ইচ্ছেটা পূরণ কোরো!
—কি হলো? আজ কি ঘুম থেকে উঠবি না?
সারাজীবনের ঘুম কি আজ ঘুমাবি নাকি?
—আরে আম্মু উঠতেছি।
এমনিতেই তুমি আমার স্বপ্নের তেরোটা বাজাইছো।(বিড়বিড় করে)
—পরীক্ষা শেষ হইছে বলে কি দেরিতে ঘুম
থেকে উঠবি?
—মাফ চাই আম্মু মাফ চাই। উঠতেছি।
উফফ! একটু শান্তিতে ঘুমাতেও দিবেনা। নামাজ
তো পড়ছিই ভোরে। তবুও যে কেন আমাকে শোয়ে থাকতে দেখলে আম্মু এরকম করে কে জানে!
মাত্র কলেজের গন্ডি পার করলাম। আব্বু, ভাইয়া
বলছে এডমিশন টেস্টের জন্য কোচিং করতে।
কিন্তু আমাদের এলাকাটা মফস্বল হওয়ায়
তেমন সুব্যবস্থা নেই। তাই শহরে যেতে হবে। কিন্তু
আমার কেন যেন শহরের কোলাহল একটুও ভাল
লাগে না। গ্রামে যেরকম প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস
নেওয়া যায়, ইট পাথরের শহরে তা দুর্লভ।
আব্বু, আম্মু, ভাইয়াকে ছেড়ে যেতে অনেক
কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তাদেরকে বুঝতে দিলাম না
আমার খারাপ লাগার কথা। কিছুই করার নেই।
অবশ্য আব্বু আমার সাথে যাচ্ছে। কিন্তু গেলেই
বা কি? আবার তো আমাকে রেখে চলেই আসবে। বুকের ভিতরটায় কেমন যেন চাপা কষ্ট ভর করে আছে।
আব্বুর ছোটবেলার বেস্টফ্রেন্ড সোহরাব আঙ্কেলের বাসায় এসে পৌঁছুলাম বিকেল ৫ টার দিকে। আব্বু সন্ধ্যার দিকে চলে যায়। নিজেকে খুব একা লাগছে।
আমাকে দুতলার হাতের ডানপাশের একটা কর্ণারের রুমে থাকতে দেয়া হলো। খুব পরিপাটি করে রাখা রুমটি। রুমে ঢুকে একেবারে সোজা দরজা বরাবর একটি খাট রাখা, দরজার সাথে একটা ওয়্যারড্রোব, খাটের দক্ষিণ আর পূর্বপাশে মিলিয়ে সোফা রাখা, একটি সেন্টার টেবিল, খাটের ঠিক কয়েক হাত দক্ষিণ দিকে বেলকনিতে যাওয়ার দরজা এবং দরজার পাশেই ড্রেসিংটেবিল আর একটা টুল রাখা। মনটা ভাল হয়ে গেল গোছগাছ রুমটি দেখে।
ভিষন ক্লান্ত লাগছিল তাই ফ্রেশ না হয়েই শুয়ে
পড়লাম। আজ থেকে আমার নতুন জীবন শুরু
নতুন একটা জায়গায়। নিজের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে
এগিয়ে যেতে হবে সামনে। আব্বু, আম্মু, ভাইয়ার
জন্য হলেও আমাকে কঠিন পরিশ্রম করতে হবে।
কেননা আমাকে নিয়ে তাদের অনেক স্বপ্ন, আশা।
“মামনি তুমি কি জেগে আছো?”
একটা নারী কণ্ঠ শুনে ভাবনার রাজ্য থেকে
বাস্তবে ফিরলাম। শুয়া থেকে তাড়াহুড়ো করে
ওঠে বসে বললাম
চলবে……