স্বপ্ন হলেও সত্যি পর্বঃ-১৬
আফসানা মিমি
—আপু একটা কথা জানার ছিল!
—কি কথা?
—ভেবে চিন্তে সঠিক উত্তরটা দিবা, ওকে?
—আচ্ছা বলো।
—তুমি কি এখনো ভাইয়াকে আগের মতো করেই চাও?
—আগের চেয়েও বেশি চাই। কিন্তু এটা অসম্ভব। কারণ আমি চাইলেই শুধু হবে না। সেই মানুষটাকেও চায়তে হবে।
—না আমি বলতে চাচ্ছি যে তোমাকে যদি একটা সুযোগ দেওয়া হয় যে ভাইয়ার লাইফে ফের তুমি আসতে পারবে তাহলে কি আসবে? দ্যাখো ভাইয়ার বিয়ের কথা চলছে। আমি আম্মুকে তোমার কথা বলেছি। এখন শুধু ভাইয়াকে বলা বাকি। বলবো ভাইয়াকে?
আপু আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো
—এতো ভালো কেন তুমি? সবাইকে নিয়ে এতো ভাবো অথচ নিজের বেলায় শূন্য! নিশ্চয়ই আগের জন্মে তোমার সাথে আমার পরিচয় ছিল। সেখানেও হয়তো তুমি আমাকে এভাবেই সাহস জোগাতে, সাপোর্ট করতে, ভালবাসতে।
আপুর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বললাম
—ধুউউউর! এসব পুনর্জন্মে আমি বিশ্বাসী নই। আমি জাস্ট তোমাদের দুইজনের কষ্ট চোখের সামনে অবলোকন করে সহ্য করতে পারছি না।
—কিন্তু তোমার বেলায় এর উল্টো কেন সানা? নিজের কষ্টগুলোকে এভাবে বুকে চাপা রেখে ভারী করছো কেন ভিতরটা?
—আমার কথা বাদ দাও তো আপু! কপালে যা আছে তা-ই হবে।
—সবকিছু ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিতে নেই। নিজেরটা নিজে ছিনিয়ে নিতে হয়।
—ছিনিয়ে নেওয়ার স্বভাব আমার নেই। এখন সময় হচ্ছে তোমার অধিকার, ভালবাসা অন্যকেউ এন্ট্রি নেয়ার আগে নিজেরটা নিজে ছিনিয়ে নেওয়া। নয়তো পরে কপাল চাপড়াতে হবে বলে দিলাম! এখন আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
—তার আগে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দাও তো!
—কি বলো!
—আমার যতটুকু মনে পড়ে তুমি একবার আমাকে বলেছিলে তোমার ভাইয়াকে যে ছেড়ে চলে গেছে তাকে কখনো ক্ষমা করবে না তুমি। তার জন্য তোমার ভাইয়ার লাইফটা অগোছালো হয়ে গেছে। আগের চেয়ে অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছে। ডিপ্রেশনে চলে যাওয়ার পর তোমরা অনেক কষ্টে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছো। সেই মেয়েটা তো আমি যার জন্য হৃদের আজ এই অবস্থা। আমার ওপর এখনো রেগে আছো নিশ্চয়ই!
—না আপু রেগে নেই। আমি কষ্ট পেয়েছিলাম এই ভেবে যে আমার ভাইয়ার মতো এমন ভালো ছেলের সাথেও কেউ কিভাবে বিট্রে করতে পারে! এটা ভেবো না যে নিজের ভাই বলে তাকে ভালো বলছি। সেটা তুমি নিজেও জানো যে ভাইয়া কিরকম ছেলে। তো যা বলছিলাম, অজান্তে কিছুটা রাগ নিজের মাঝে পুষেছিলাম। কিন্তু তা এখন আর নেই। কারণ তুমি নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছো। আবারো ভাইয়ার লাইফে আসতে চায়ছো। আমিও আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো ভাইয়াকে মানানোর।
—কিন্তু তুমি আমার জন্য এতোকিছু কেন করবে?
—কারণ আমি জানি বুঝি ভালবাসার মানুষটার অনাগ্রহতা কতটা কষ্ট দেয়! কতটা যন্ত্রণা হয় এই বুকের ভিতর। তাই আমি আর চাই না দুইজন ভালবাসার মানুষ দুই প্রান্তে পড়ে থেকে ভিতরে ভিতরে কষ্ট পেয়ে তড়পাক। দুইজনকে এক হতে দেখে আমার চক্ষু দুইটা শীতল করবো। নিজে ভালবাসার মানুষটাকে পাইনি তো কি হয়েছে! আরেক জোড়া ভালবাসার মানুষকে তো এক করতে পারবো! বলতে পারো তাতেই নিজের সুখ খুঁজে নিব।
—এতো ভালো না হলেও পারতে তুমি সানা। আমার এখন সত্যিই খুব খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার কথা ভেবে। কারণ ভালবাসা না পাওয়ার যন্ত্রণা দুজনই খুব ভালো করে বুঝতে পারছি। আর আমার ভাই তো একটা গাধা! যে কিনা একটা ফুলের মতো মেয়েকে অবহেলা করেছে। তার নিখাদ ভালবাসাটা বুঝতে পারেনি। তার ভালো হবে না দেখো, ভালো হবে না তার। এই আমি বলে দিচ্ছি।
—ছিঃ আপু! অভিশাপ দিও না উনাকে। উনার কোন দোষ নেই। দোষ তো আমার। এই পোড়াকপালির। যে কিনা নিজের ভালবাসা বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। বহুবার বলতে গিয়েও আটকে গেছি। তবে ভালোই হয়েছে নিজের জায়গাটা কোথায় তা দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছি। কারণ উনার জীবনে আমি নিতান্তই একটা অনাহূত মেয়ে। উনার সাথে আমার কিছুতেই যায় না। উনার ভালবাসা পাওয়ার যোগ্যই না আমার মতো মেয়ে।
—ছিঃ সানা! এভাবে বোলো না। তুমি অনাহূত হতে যাবা কেন? বরং ওর তো কপাল খারাপ বলা যায় তোমার মতো মেয়ের ভালবাসা সে বুঝে না। সে নিজেই তোমার ভালবাসা ডিজার্ভ করে না।
—আচ্ছা বাদ দাও এসব। উনার কথা মনে হলে আরো খারাপ লাগে। তাই যতটা সম্ভব ভুলে থাকতে চাই।
—এতো সহজ না সবকিছু। যতই ভুলতে চায়বে ততই যেন আরো বেশি করে মনে পড়বে। এটাই যেন ভালবাসার নীতি।
—আমরা বোধহয় তোমার আর ভাইয়ার ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলছিলাম। আচ্ছা যা-ই হোক এখন বলো যে তুমি কি চাও! ভাইয়াকে আবারো ফিরে পেতে চাও নাকি না!
—দ্যাখো সানা……
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
সেই মুহূর্তে আম্মুর ডাক শোনা গেল। লাঞ্চ রেডি খেতে ডাকছে। উফফ্! আরেকটু পরে ডাকলে কি এমন ক্ষতি হতো! ধুউউর ভাল্লাগে না!
—কি হলো আপু থেমে গেলা কেন? বলো!
—চলো আন্টি ডাকছে।
—ধ্যাৎ..!ডাকার আর সময় পেল না? বিরক্তি নিয়ে বললাম
—চলো তো! টেনে রুম থেকে ডায়নিং টেবিলের কাছে নিয়ে এলো।
তিনজনে খেতে বসেছি। শুরুও করিনি অমনিই কলিংবেলটা সশব্দে বেজে ওঠলো। এই ভর দুপুরবেলায় আবার কে এলো! আমিই গেলাম দরজা খুলতে। খুলে আমি হা হয়ে গেলাম। ভাইয়া তো কখনো দুপুরে আসে না! তাহলে আজ কিভাবে! এটা কি কো-ইন্সিডেন্স ছিল!
—কিরে এতো বড় হা করে দাঁড়িয়ে রইলি কেন? ভিতরে ঢুকতে দিবি না?
—তুমি..মানে তুমি তো দুপুরবেলায় কখনো আসো না। আজকে হঠাৎ……
ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো
—আরে বসের বাড়িতে রাতে সবার দাওয়াত। সেজন্য সবাইকে তাড়াতাড়িই ছুটি দিয়ে দিয়েছে। আর…..
ভাইয়ার মুখের কথা মুখেই রয়ে গেল। ভাইয়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখি ডায়নিং টেবিলের দিকে চোখ স্থির হয়ে আছে। আপুকে এখান থেকে সরাসরি দেখা যায়। ভাইয়া সেদিকেই তাকিয়ে আছে। পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে দরজা আঁটকানোর কথা বলে রুমের ভিতর পা বাড়ালো। আম্মু জিজ্ঞাসা করলো
—কিরে কে এলো এই অসময়ে?
—ভাইয়া আসছে।
—এখন? কিরে সুহৃদ! এই দুপুরবেলা তুই চলে এলি! শরীর ঠিক আছে তো?
ভাইয়া থেমে গিয়ে বললো
—হ্যাঁ মা ঠিক আছি আমি। আসলে বসের বাড়িতে আজ রাতে ডিনারে সবাইকে ইনভাইট করেছে বড় কোম্পানির সাথে ডিল সাইন হওয়া উপলক্ষ্যে। তাই তাড়াতাড়িই ছুটি দিয়ে দিয়েছে। রুমে যাই আম্মু। শাওয়ার নিব একটা। প্রচুর গরম পড়েছে।
—ঠিক আছে আয়। আমরা অপেক্ষা করি।
—না না তার দরকার নেই। তোমরা শুরু করে দাও।
—কথা না বাড়িয়ে যা তো! বেশিক্ষণ লাগবে না তোর। বসছি আমরা।
—আচ্ছা দশ মিনিটের মধ্যেই আসছি আমি।
ভাইয়া যতক্ষণ এখানে ছিল ততক্ষণ আপু মাথা নিচু করেই বসেছিল। এখন সোজা হয়েই বললো
—আন্টি আজ যাই আমি! আরেকদিন আসবো।
—কিসব বলছো তুমি আরাদ্ধা? না খেয়ে এক পাও নড়তে পারবা না এখান থেকে।
—না আসলে আন্টি একটা দরকারি কাজ….
—এখন কিন্তু মারবো তোমাকে! ছোটবেলায় যেমন আদর করতাম এখন কিন্তু শাসনও করতে পারবো। কথা না বলে চুপচাপ বসে থাকো তো। বেশ বুঝতে পারছি আমি কি দরকারি কাজ যে তুমি করবে গিয়ে!
আম্মুর কথায় আমার হাসি পেয়ে গেল। আপু অসহায় চোখে আমার দিকে তাকালো। আমি চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করলাম কিচ্ছু হবে না। চিন্তা কোরো না। আম্মু আর আমি সব ম্যানেজ করে নিব। এর মধ্যেই ভাইয়া চলে এলো। এসেই আম্মুর পাশে গিয়ে বসলো। আমার পাশে আপু বসেছে। তারা দুজন মুখোমুখি হয়ে গেল। ভাইয়া আসার পরই আপু কেমন যেন উসখুস করতে লাগলো। কোন সমস্যা হচ্ছে নাকি! জিজ্ঞাসা করলাম
—আপু আর ইউ ওকে? এনি প্রবলেম?
আমার প্রশ্নে ভাইয়া আপুর দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিল।
—না না সানা কোন সমস্যা না, আমি ঠিক আছি।
খেতে বসে টুকটাক কথা হচ্ছে। তবে আপু বেশিরভাগই নিশ্চুপ থেকেছে। একটু পর পর খেয়াল করছি আপু আড়চোখে ভাইয়ার তাকাচ্ছে। তবে ভাইয়া আগের মতোই মাথা নিচু করে চুপচাপ নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে খাচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম কেন তাকাচ্ছে! কপালে লেপ্টে থাকা ভেজা চুলগুলোর দিকেই বারবার তাকাচ্ছে আপু। আপুর তাকানো দেখে ঝট করে একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। আপুদের বাসায় থাকাকালীন একবার বিকেলে নাস্তার সময় সবাই একসাথে বসে নাস্তা করছিলাম। শ্রাবণ ছিল না সেখানে। তার একটু পরেই শ্রাবণ সেখানে এসে হাজির। প্রথমবার তাকিয়েই আমার চোখ আটকে গেল শ্রাবণের ওপর। মাত্রই শাওয়ার নিয়ে আসায় একটা স্নিগ্ধ ভাব এসেছে চেহারায়। ফর্সা শরীরে কালো টিশার্ট পরায় অসম্ভব সুন্দর লাগছিল। যাকে বলে নজরকাড়া লাগছিল একেবারে। চুলগুলো ভালো করে বোধহয় মুছেনি। যার ফলে ক্ষণে ক্ষণে টুপ টুপ করে পানির ফোঁটা ললাট বেয়ে পড়ছিল। কপালে চুল লেপ্টে থাকায় কি যে দারুণ লাগছিল ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। চোখই ফেরাতে পারছিলাম না। বেহায়ার মতো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম সব ভুলে। একটিবারের জন্য যদি ঐ চুলগুলো ছুঁয়ে দিতে পারতাম! হঠাৎই শ্রাবণের চোখে চোখ পড়ে যাওয়ায় লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নিচু করে বসেছিলাম। কান দিয়ে যেন ধোঁয়া বের হচ্ছিল আর সারা মুখমণ্ডল দিয়ে আগুনের তাপ বের হচ্ছিল যেন। লজ্জা ঢাকতে সেখান থেকে এক দৌড়ে চলে এসেছিলাম রুমে।
আচানক আম্মুর কথায় আমার ভাবনায় বাধা পড়লো। যাক ভালোই হলো। বেহায়া মনটা না চায়তেই বারবার শ্রাবণকে নিয়ে ভাবতে বসে যায়।
—কিরে একটু মালাইকারী নে না!
দেখলাম ভাইয়া আর আপু একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে ভাইয়া বললো
—রেখে দাও আম্মু। খাব না।
—আমি ভেবে পাই না প্রিয় খাবার কেউ চোখের সামনে দেখেও কিভাবে না খেয়ে থাকতে পারে!
—তুমি তো জানো আম্মু আমি খাই না। তবুও কেন জোর করছো?
—কেন খাস না আমাকে জবাব দে!
—প্লিজ প্যারা দিও না তো মা! ভালো লাগে না।
—কেন? কারণটা বল আমাকে!
অবস্থা বেগতিক দেখে আম্মুকে থামিয়ে দিয়ে বললাম
—আহা আম্মু বাদ দাও না! খেতে না চায়লে জোর করে খাওয়াবা তুমি?
—তোরা দুই ভাইবোনকে মাঝেমাঝে আসলেই বুঝতে পারি না আমি। তুমি নাও মামনি!
—আন্টি দুঃখিত। খেতে পারবো না।
—আপু তোমারও না ফেভারিট এটা! তাহলে খাবা না কেন?
—আসলে ডাক্তারের নিষেধ আছে তাই।
—কেন নিষেধ দিয়েছে? কোন সমস্যা?
—হ্যাঁ কিছুটা। গুরুতর কোন সমস্যা না বাদ দাও।
ভাইয়া একবার তাকিয়ে আবার খাওয়ায় মনযোগ দিল। যতই মনের অনুভূতিগুলো লুকানোর চেষ্টা করো না কেন ভাইয়া, তাতে সফল হবে না কখনোই তোমরা দুজন। খুব বেশিদিন আর অভিনয় করতে হবে না। চারটি হাত এক করতে আর সময় নেব না আমরা। আর একটু অপেক্ষা করো। অপেক্ষার ফল সুমিষ্ট হয়।
চলবে……..