স্বপ্ন হলেও সত্যি পর্বঃ১
#আফসানা_মিমি
ঘুম থেকে ওঠার পর আজকে সবকিছুই
কেমন যেন অন্যরকম লাগছে। চারপাশে
এতটা স্নিগ্ধতা চোখে পড়েনি কখনো। ওঠে
ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা করে কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। কয়েক মিনিট হেঁটে সি.এন.জি
স্টেশন যেতে হয়। সি.এন.জি তে উঠব সেই মুহূর্তে আমার স্কুল ফ্রেন্ড মিনা ডাক দিল। বলল
তার সাথে সি.এন.জি তে উঠতে। তার সাথে
উঠে পড়লাম। সে নিজে থেকেই বলল
—আজকে আমরা এক জায়গায় যাব।
—কোথায়? আর আমরা মানে? কে কে?
—অপেক্ষা কর। কলেজে গেলেই দেখতে পাবে।
কলেজে আসার পর দেখি সুমি, স্বর্ণা, দিপা,
আরবি তারা দাঁড়িয়ে আছে। একটা অবাক
হওয়ার বিষয় লক্ষ্য করলাম। সবাই এক ড্রেস
পরেই দাঁড়িয়ে আছে। শুধু আমারটা অন্যরকম। সুমিকে জিজ্ঞেস করলাম
—তোমরা সবাই এক ড্রেসে যে! কোথাও যাবে নাকি?
—হ্যা যাব তো। সাথে তুমিও যাবে।
—মানে আমি কেন যাব?
—আমরা যাব তাই। আর তোমাকে না নিয়ে
আমরা যাব না।
—এটার কোন মানে হয়? হুট করেই তো আর কোথাও যাওয়া যায়না। একটা প্রস্তুতির দরকার আছে না?
—সাথে মোবাইল আছে তো?
—হুম তা তো আছেই।
—তাহলেই হবে। বাসায় ফোন করে দাও যে কয়েকদিনের জন্য বাসায় আসতে পারবে না।
আর বলো যে তোমার বিকাশ একাউন্টে যেন
হাজার দশেক টাকা পাঠিয়ে দেয়।
—এত টাকা দিয়ে কি হবে?
—আরে বুদ্ধু! যেখানে যাব সেখানে গিয়ে খরচ
করতে হবেনা? আর তাছাড়া তোমার জামাকাপড় কিনতে হবে তো।
—ঠিক আছে বলে দিচ্ছি।
আম্মুকে সবকিছু বুঝিয়ে বললাম। আম্মু প্রথমে
একটু নাকচ করেছিল কিন্তু তারা আম্মুকে
বুঝিয়ে বলার পর রাজি হয়েছে। এবার আমাদের রওয়ানা দেওয়ার পালা। তাদেরকে বলার পর বলল আগে শপিংমলে গিয়ে কেনাকাটা করে তারপর রওয়ানা দিবে। তাদের কথামত তাই করলাম।
যখন ট্রেনে উঠে বসলাম তখন মিনাকে
জিজ্ঞেস করলাম
—বললে না তো কোথায় যাচ্ছি আমরা!
—সারপ্রাইজ। বলা যাবে না।
—শুধু কি আমিই জানিনা নাকি এখানের কেউই জানেনা?
—চুপচাপ বসে চারপাশের প্রকৃতি দেখো।
এত কথা বলতে হবেনা।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
কি আর করা! তাদের কথা-ই মানতে হল। ট্রেন
জার্নি আমার পছন্দের। আর সিটটা যদি পড়ে জানালার পাশে তাহলে তো কোন কথা-ই নেই।
দীর্ঘ জার্নির পর একটা জায়গায় আসলাম।
আসতে আসতে বিকেল হয়ে গেছে। এসেই
আমার মনটা জুড়িয়ে গেল। এত সুন্দর জায়গা
জীবনে প্রথম দেখলাম। আর যেখানে আমাদের
থাকতে দেওয়া হয়েছে সেই ঘরগুলাও অসাধারন। কটেজগুলো সব কাঠের তৈরি। ঘরের ভিতর সব আসবাবপত্র কাঠের। সবগুলো রুমে একই ধরনের আসবাবপত্র, একই রকমভাবে সাজানো হয়েছে। প্রত্যেকটা কটেজের বারান্দাগুলাও অসম্ভব
সুন্দর। এত পুলকিত আমি কখনো হইনি।
আমাদের ছয়জনের জন্য তিনটা রুম বরাদ্দ
করা হয়েছে। প্রথম কর্নারের রুমটা আমার
আর স্বর্ণার, দ্বিতীয় বা মাঝেরটা দিপা আর
আরবির, আর লাস্ট কর্নারেরটা মিনা আর সুমির।
বারান্দাটা রুমের পূর্বপাশে। রুমের পশ্চিমপাশের দেয়ালের জায়গায় পুরোটাই থাই গ্লাস লাগানো।
গ্লাসের ওপর সাদা পর্দা ঝুলানো। মুগ্ধতার ছোঁয়া
লেগে আছে যেন রুমের পুরোটাই। ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা করে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। কেন যেন খুব ভাল লাগছে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে। প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিলাম। নাইবা জানলাম জায়গাটার নাম।
তার সৌন্দর্য উপভোগ করতেই বা সমস্যা কোথায়?
“এত সুন্দর জায়গা জীবনে কমই দেখেছি।
এখানের সৌন্দর্য আমাকে সবকিছু ভুলিয়ে
দিয়েছে। প্রকৃতি! তুমি এত সুন্দর কেন? প্রকৃতির
মত এখানের মানুষগুলোর আচার ব্যবহারও
কি সুন্দর হবে?”
ডায়েরিটা রেখে দূর আকাশপানে তাকিয়ে রইলাম। পুরো আকাশে তারার মেলা। সেই তারার মেলার মাঝে থালার মত বড় একটা চাঁদ। আচ্ছা আজ কি পূর্ণিমা? চারপাশ চাঁদের আলোয় ঝিকিমিকি করছে।
হঠাৎ করেই আমাদের পাশের একটা কটেজের
দিকে নজর গেল। আমাদের কটেজের
দক্ষিণপাশে ঐ কটেজটা। আজকে আসার পর
খেয়াল করেছিলাম পাশের কটেজটা বেশ বড়।
আর বারান্দাটাও। বারান্দায় আবার গ্রিল দেওয়া। কাঠের ঘরেও কেউ গ্রিল দেয়? আমার জানা
ছিল না। তবে আরেকটা সৌন্দর্য চোখে পড়েছে।
তা হল বারান্দার রেলিংয়ে অনেকগুলো পার্পল
রোজের গাছ। উফফ! কি সুন্দর দেখাচ্ছে।
বিকালে দেখেছিলাম ঘরটা তালাবদ্ধ।
কিন্তু এখন কেন জানি মনে হচ্ছে কেউ আছে এর ভেতরে। যাকে দেখার জন্য আমার মন অপেক্ষা করছে। কেমন যেন অস্থিরতা বিরাজ করছে
আমার মনে। এমনটা আগে কখনো হয়নি। আচ্ছা আদৌ কি এই ঘরের ভিতরে কেউ আছে?
—আফসানা, এই আফসানা তাড়াতাড়ি ওঠ।(স্বর্ণা)
—এত সকাল সকাল ডাকছো কেন?
—আরে বাইরে চলো। সবাই আমাদের জন্য
অপেক্ষা করছে।
—এত সকালে ওঠে গেছে কেন? কিছু হয়েছে নাকি?
—ওঠ তো তুমি। ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসো। এসে দেখো কি সুন্দর প্রকৃতি! মনপ্রাণ জুড়িয়ে যাবে একদম। তোমার মনটায় ভাল হয়ে যাবে।
—আচ্ছা যাও আমি আসছি।
বাইরে এসে দেখি স্বর্ণার কথা সত্যিই। সকালের
হালকা ঠান্ডা বাতাসে যেন প্রাণটা জুড়িয়ে গেল।
এখনো সূর্য উঠেনি তবে উঠে যাবে বেশি দেরি নেই।
একটু পর লাল আভার মত পুব আকাশে সূর্য
উঁকি দিচ্ছে। আস্তে আস্তে পুরোটা উঠতে লাগলো।
এত বড় সূর্য মনে হয় জীবনে প্রথম দেখেছি আমি। আসলেই আমি মুগ্ধ হয় গেছি সূর্যোদয়টা দেখে।
মনে হয়না কোনদিন আমি সূর্যোদয় দেখেছি।
আজই প্রথম দেখলাম। একটা ভাল লাগার
শিহরন বয়ে গেল পুরো শরীরে।
নাস্তা করার পর বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। চোখ
সেই পাশের কটেজে। আমি নিজেই বুঝতে
পারছি না ঐ কটেজটা এত টানছে কেন আমাকে?
আমার পাশে সুমি এসে কখন দাঁড়িয়েছে খেয়াল করিনি। তার হঠাৎ কথা বলায় আমি চমকে উঠলাম।
—ঐ কটেজটা নাকি একটা ছেলে কিনে নিয়েছে।
—তুই জানলি কিভাবে?
—এখানের মালকিন আমাকে বলেছে। ছেলেটার
নাম নাকি আকাশ। বেশ সুদর্শন। লম্বা বডি, ফর্সা গোলগাল চেহারা। অত্যন্ত স্মার্ট। কয়েকদিন
পরপরই নাকি এখানে এসে থেকে যায়।
কালকে রাতেই নাকি এসেছে ছেলেটা।
কথাটা শুনে আমি চমকে উঠলাম। তার জন্যই
তো কাল রাতে আমার মনে হয়ে হয়েছিল যে এর ভিতরে কেউ আছে। কিন্তু আমার এরকমটা মনে হওয়ার কারন কি?
দুপুরে আর কোথাও বের হতে মন চায়লো না।
খেয়ে দেয়ে শুয়ে আছি। মাথায় শুধু পাশের ঘরের ছেলেটার কথা ঘুরঘুর করছে। অথচ তাকে একটিবারের জন্যও দেখিনি। কিন্তু আমার এরকম লাগছে কেন? কেমন অস্থির অস্থির! মনে হচ্ছে ছেলেটাকে না দেখা পর্যন্ত আমি শান্তি পাব না।
নিজের কাছে নিজেকে পাগল পাগল লাগছে।
কোন ছেলের প্রতি কোনকালেই আমার কোন এট্রাকশন ছিলনা। কবে আজকে কেন এরকম
লাগছে? উফফ! মাথার চুলগুলা মনে হচ্ছে
একটা একটা করে টেনে ছিঁড়ে ফেলি।
বিকেলে আশপাশটা ঘুরে তাদেরকে রেখেই
চলে আসলাম।কিছুই ভাল লাগছেনা। আগে যদি জানতাম এখানে এসে এরকম অস্থিরতায় ভুগব
তাহলে এখানে আসতামই না। বারান্দায় হেলান
দিয়ে কাঠের ফ্লোরে বসে রইলাম। তখনই মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল। দেখি আমার বাগদত্তা
ফোন দিয়েছে। আমার যে একজনের সাথে
বিয়ে ঠিক হয়ে আছে আমার খেয়ালই নেই।
—হ্যালো তুমি কোথায় বলো তো?
—বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে এসেছি।
—কোথায় সেটা?
—আমি নিজেও জানিনা।
—ফাজলামো হচ্ছে? তুমি গিয়েছ তুমি জানো না?
—সত্যিই জানিনা।
—মিথ্যে বলা বন্ধ কর।
—মিথ্যে বলার প্রশ্নই আসেনা।
উফফ! খিটখিট করা শুরু হয়ে গেছে। কেন যে
আল্লাহ্ এর সাথেই আমার ভাগ্য লিখে দিয়েছে!
—ভাল লাগছেনা পরে ফোন দেই।
এটা বলেই রেখে দিলাম। এমনিতেই মনমেজাজ
ভাল না। তার ওপর আবার এই ছেলের
প্যানপ্যানানি। জাস্ট অসহ্য লাগছে।
“কি তোমার সাহেব ফোন দিয়েছিল নাকি?”
মুখ তুলে ওপরে তাকিয়ে দেখি দিপা দাঁড়িয়ে।
মুচকি হেসে মাথা নাড়ালাম।
রাতে খাওয়াদাওয়া করে আম্মুর সাথে একটু
কথা বলে বান্ধবীরা মিলে অনেকক্ষণ আড্ডা
দিলাম। যার দরুন মনটা কিছুটা ভাল হল। রাত এগারোটার দিকে সবাই যার যার রুমে চলে গেল। শোয়ে কিছুক্ষণ ফেসবুকে নিউজফিড স্ক্রল করে অফলাইনে চলে আসলাম। কিছুই ভাল লাগছেনা। মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। এই রুমের ভিতর আমার যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে। মনটা এরকম হঠাৎ
হঠাৎ বিক্ষিপ্ত হওয়ার কারন খোঁজে পাইনা
দুইতিন দিন যাবৎ। ছেলেটাকে এ পর্যন্ত একবারও দেখিনি। আচ্ছা ছেলেটাকে দেখার জন্যই কি
আমার মনটা এরকম অশান্ত হয়ে আছে?
বারান্দায় এসে একটা বেতের সোফায় বসলাম।
সবাই ঘুমে বিভোর। একমাত্র আমিই মনে হয়
জেগে আছি। মাঝে মাঝে ঝিঁঝিঁপোকা ডাকছে।
মাঝে মাঝে একটা পাখি খুব করুণ স্বরে ডাকছে।
তার মনটাও হয়তোবা আমার মতই খারাপ।
চোরা চোখটা বারবার পাশের ঘরটায় চলে যাচ্ছে। আজ যেন নিজের কাছেই নিজেকে বড্ড
অপরিচিত লাগছে।
আজকেও আকাশে ভরা পূর্ণিমা। চাঁদের আলোয় সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বসা থেকে ওঠে দক্ষিণ পাশের কাঠের দেয়ালটায় দুই হাত রেখে সামনে
ঝুকে দাঁড়িয়ে রইলাম। এক ধ্যানে ঐ ঘরটার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
হঠাৎ করেই দরজা খুলে একটা লম্বা অবয়ব
বারান্দায় আসলো। অবয়বটা দেখেই যেন
আমার সারা শরীরে একটা ঠান্ডা বাতাস
ছোঁয়ে গেল। বুকের ঢিপঢিপ শব্দটা গাঢ়
হচ্ছে, পা যেন অবশ হয়ে আসছে। অথচ
আমার চোখ দুটো ঐ বারান্দাতেই স্থির।
অবয়বটা হেঁটে বারান্দার গ্রিলের পাশে এসে
দাঁড়াল। দেখেই যেন আমার মুখ, কান গরম
হয়ে গেল। শরীর গরম হয়ে মুহূর্তেই বরফের
মত ঠান্ডা অসাড় হয়ে গেল। নির্মল চাঁদের আলোয়
লম্বা মতোন ফর্সা ছেলেটার মুখটা যেন একেবারে
ফুটন্ত গোলাপ ফুলের মত লাগছে। ছেলেটা
এত সুন্দর কেন? চাঁদের আলোয় ছেলেটার
চেহারা একদম নিখুঁতভাবে বুঝা যাচ্ছে।
মাথায় ঘন কালো চুল, ঘন কুঁচকুচে কালো
ভ্রু, ভ্রু এর নিচে দুইটা মাঝারি সাইজের চোখ,
চোখের মনি ঠিক সম্ভবত নীল হবে, সরু চিকন
নাক। সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিসটা হচ্ছে ঠোঁট।
ঠোঁটজোড়া একদম গোলাপি। গোলাপের
পাপড়ির মত ঠোঁটজোড়া। আচ্ছা ছেলেটা কি
স্মোক করে? নাহ, করলে তো ঠোঁট কালো হত।
আচ্ছা আমি যে ছেলেটার দিকে এতক্ষণ যাবৎ
তাকিয়ে আছি ছেলেটা কি আমাকে খেয়াল
করছে না? সে কি টের পাচ্ছে না এক অবলা নারী
মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকে মন প্রাণ উজার করে দেখছে?
আমি বুঝতে পারছি না আমার সাথে এরকম
হচ্ছে কেন! ছেলেটাকে দেখে আমার সারাদিনের
সকল ক্লান্তি, অবসাদ, মন খারাপ, বিক্ষিপ্ত
ভাবটা নিমিষেই চলে গেছে।
বহু প্রতিক্ষার পর চারটা চোখ এক হলো।
তৃষ্ণাতুর চোখে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছি।
মনে হচ্ছে যেন এখন চারপাশের সবকিছু উল্টে
গেলেও আমার চোখের দৃষ্টি অনড় থাকবে।
চোখে আমার বড্ড তৃষ্ণা। তৃষ্ণা আমার বক্ষ জুড়ে।
এই অনুভূতির সাথে আমি পরিচিত নই। ভিতরে
এমন উত্থাল পাতাল করছে কেন?
ঐ গভীর নীলাভ চোখে আমি ডুব দিয়েছি
বহুক্ষণ আগে। কিন্তু সাঁতরে উঠতে পারছিনা
তীরে। কেমন ঘোর লাগা দৃষ্টি ছেলেটার। এমন
চোখ আমার জীবনে আমি প্রথম দেখলাম।
এমনকি এরকম চোখে জীবনের প্রথমবার
আমি ডুব দিয়েছি। সাধারণত আমি সরাসরি
ছেলেদের চোখের দিকে তাকাই না। কিন্তু এখন
আমি তার চোখ থেকে দৃষ্টি সরাতে পারছি না। মনে হচ্ছে খুব বড় রকমের একটা ভুল করে ফেলেছি। মনেপ্রাণে দোয়া করছি যাতে ছেলেটা চোখ সরিয়ে নেয়। আর একটু হলে যেন আমি মারা-ই যাব।
মনে মনে প্রার্থনা করছি হে আল্লাহ্! প্লিজ একটা
কিছু করো। তুমি তো জানো আমার ভিতরে কি
হচ্ছে! প্লিজ একটু সদয় হও এই অধমের প্রতি।
তার চোখটা আমার দিক থেকে সরাও প্লিজ!
আল্লাহ্ মনে হচ্ছে আমার কথা শুনেছে। ছেলেটা
তার চোখ সরিয়ে নিয়েছে। আমি আর এক
মুহূর্তও সেখানে দাঁড়ালাম না। এক প্রকার
দৌড়েই রুমে চলে আসলাম। উফফ!
কি এক মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে আমার ভিতরে!
রাতে একফোঁটাও ঘুমাতে পারলাম না। সারারাত ছটফট করেছি। বারবার ঐ গভীর নীলাভ
আঁখির চাহনি আমার চোখে ভাসছে। আমার
ঘুম কেঁড়ে নিয়েছে ঐ মাদকতাপূর্ণ চাহনি।
চোখ বন্ধ করলেই যেন মনে হচ্ছে সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দিলাম।
ফজরের আজানে আমার ভাবন রাজ্যে বাঁধা
পরলো। উঠে অজু করে নামাজ আদায় করে
বাইরে বের হলাম। এখনো আঁধার কাটেনি
পুরোপুরি। হালকা কুয়াশাও পরেছে। এত সকালে
মনে হয়না কখনো বাইরে বের হয়েছি। একা
দাঁড়িয়ে থাকতে ভাল লাগছে না। এর চেয়ে ঢের
ভাল হবে কিছুক্ষণ হাঁটলে। রুমের ভিতর গিয়ে
গায়ে একটা শাল জড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে
আসলাম। হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা এগিয়ে
আসলাম। এসে একটা টিলার ওপর দাঁড়ালাম।
এখান থেকে অনেক দূরের পাহাড় পর্বতগুলো
পিপড়ার মত দেখাচ্ছে। আস্তে আস্তে চারপাশ
ফর্সা হচ্ছে। দিনের আলো ফুটে ওঠছে।
একটু পরই মনে হয় সূর্য ওঠবে।
“এই মেয়ে, এত সকালে এখানে দাঁড়িয়ে কি করছেন?”
হঠাৎ একটা ঝঙ্কারময় পুরুষালী কণ্ঠ শুনে
চমকে উঠলাম। জীবনের প্রথমবার এত সুন্দর
কণ্ঠ শুনলাম। মনে হচ্ছে এতকাল ধরে এই
কণ্ঠের অধিকারী একজনের জন্য অপেক্ষা
করছিলাম। বহুকাল পর মনে হচ্ছে তার
দেখা পেলাম।
পিছনে তাকিয়ে আমি স্তব্ধ, নির্বাক, চমৎকৃত।
সকালের হালকা আলোয় সামনে দাঁড়ানো
ছেলেটাকে অপরূপ লাগছে। এমন সৌন্দর্য
জীবনে কমই দেখেছি। স্নিগ্ধ দুটি গভীর নীলাভ
আঁখি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার
অস্বস্তি লাগা শুরু করল। পা অবশ হয়ে আসছে
আমার। টের পেলাম শরীর কাঁপছে। তাড়াতাড়ি
চোখ নামিয়ে ফেললাম। বেশিক্ষণ তাকিয়ে
থাকলে আজ আমি এখানেই শেষ।
আবার বলল
—কি হল কথা বলতে পারেন না নাকি?
আপনি কি বোবা?
চলবে……