#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
স্বপ্ন সারথি পর্ব-১৩
টি এ অনন্যা
পূর্ণতা মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে সাইফের কল। খুব বেশি আশা করে দৌড়ে এসেছিল সে। কারণ তার ভাবনায় ছিল এতক্ষণে তূর্ণ হয়তো ফোন চেক করে তার কল দেখে রাগ কমেছে। তাই পূর্ণতাকে কল করেছে। কিন্তু পূর্ণতার ধারণা মিথ্যা হয়ে যায় মোবাইলের স্ক্রিনে দেখা সাইফের ইনকামিং কল দেখে। প্রীতুলা পড়ার টেবিলে বসে পড়ছিল। তাই ওর সমস্যা হবে ভেবে পূর্ণতা বেলকনিতে গিয়ে কল রিসিভ করে,
” হ্যালো, সাইফ বল। কী খবর? ”
সাইফ টিউশনি থেকে বাসায় ফিরছল। হাটতে হাটতে বলল, “পূর্ণতা আজ তোর সাথে তূর্ণর কথা হয়েছে সারাদিনে?”
পূর্ণতা চাইছে না তূর্ণ আর ওর সকালের ব্যাপারটা কাউকে জানাতে। তাই সাইফের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করল, “কেন কী হয়েছে তূর্ণর?”
“জানি নারে। আন্টি সন্ধ্যার আগে কল করেছিলেন তূর্ণ না-কি সকালে ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফিরে নিজের ঘরে দরজা লাগিয়েছে। এখন ডাকাডাকি করেও দরজা খুলতে পারছে না। আমি পরে বললাম ও তো ক্যাম্পাসে আসেনি আজ। তা শুনে আন্ট আরও বেশি অস্থির হয়ে পড়েছেন। ও নাকি সকালে বের হয়েছিল জরুরি ক্লাস আছে বলে। আমি এতক্ষণ টিউশনে ছিলাম। এখন বের হয়ে তূর্ণকে কল দিলাম দেখি ওর ফোন সুইচ অফ। তাই তোকে-ই কল করলাম।”
সাইফের কথা শুনে পূর্ণতার আত্তা যেন শুকিয়ে আসে। তবুও নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখে বলল, “আরে গাধা তুই তো আমাকে কল না করে আগে আন্টিকে কল করে এখন জিজ্ঞাসা করবি ওর কী খবর। আসলে তোর মাথায় আর বুদ্ধি-সুদ্ধি কিছু হবে না কখনো। ”
সাইফ নিজের মাথায় আঘাত করে আফসোসের ভঙ্গিতে বলল, “ওহ শিট। আসলেই আমি গাধা। এতক্ষণে তো আমি আন্টিকে কল করলেই খবর পেয়ে যেতাম। অবশ্য তোকে কল করারও কারণ আছে।”
পূর্ণতা কিছুটা ভীত স্বরে জিজ্ঞাসা করল, “কী কারণ? ”
“তূর্ণ আজ ক্যাম্পাসেই যায়নি কিন্তু আন্টি বলল সকালে না-কি ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যেই বেরিয়েছে এবং বাসায় ফিরেও বলেছে ক্যাম্পাসের কাজ শেষ তাই বাসায় ফিরেছে। আজ আবার দেখলাম তুইও কেমন জানি অন্যরকম ছিলি। কাউকে কিছু জানালি না। একটা ক্লাস না করেই চলে আসলি। তাই ভাবলাম সকালে কি ও সত্যিই এসেছিল কি-না? আর তোর সাথে দেখা হয়েছে কি-না?”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
সাইফের কথার উত্তরে কী বলবে পূর্ণতা! আজ তো দেখা হয়েছিল তূর্ণর সাথে। আর ওর সাথে রাগ করেই ক্লাস না করে বেরিয়ে যায় তূর্ণ। কিন্তু সাইফকে আপাতত এসব জানানো যাবে না। তাই সে উত্তরে বলল, “না, দেখা হয়নি। তুই ফোন রাখ আমি দেখি আন্টিকে কল করে। ”
“আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে তুই কল দে। আমি আর না দিলাম। তুই আমাকে জানাইস কী খবর।”
“আচ্ছা।”
তূর্ণ দীর্ঘক্ষণ শাওয়ার নেওয়ার পরেও মাথাটা ঝিমঝিম করছিল। তাই খাওয়ার পরে আবার নিজের ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। লিপি তূর্ণর ঘর গুছিয়ে এসে মাসুদকে কিছুই জানায় না। এমনকি খাওয়ার সময় তূর্ণকেও কিছুই জিজ্ঞাসা করেন না। তূর্ণ খেয়ে ঘরে চলে যাওয়ার পরে তিনি মাসুদকে তূর্ণর ঘরে দেখা সব জানায়। মাসুদ নিজেও স্ত্রীর কথায় ভয় পেয়ে যান।
লিপি এবং মাসুদ কথা বলতে বলতে লিপির ফোনের কলিং রিংটোন বেজে উঠে। লিপি বসা থেকে উঠে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখেন পূর্ণতা কল করেছে।
লিপি কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে পূর্ণতা বলল, “আন্টি আসসালামু আলাইকুম। ”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো মা?”
“আলহামদুলিল্লাহ আন্টি আমি ভালো আছি। আপনি এবং আংকেল কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ আমরা ভালো আছি। তোমার বাবা-মা কেমন আছেন?”
“তারাও ভালো আছেন। ইয়ে মানে আন্টি তূর্ণর কোথায়? ওকে ফোনে পাচ্ছি না। একটু কথার দরকার ছিল। ”
তূর্ণর কথা বলায় লিপির মনটা আবার বিষন্ন হয়ে যায়। একবার চাইছেন পূর্ণতাকে তূর্ণর ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসা করবেন আবার ভাবলেন সাইফ তো বলল আজ তূর্ণ ক্যাম্পাসে যায়নি তাহলে পূর্ণতাও তো জানে না।
লিপি বললেন, “তূর্ণর শরীরটা ভালো না মা। মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়েছে। তাই সকাল থেকেই ঘুমিয়েছিল। একটু আগে উঠে খেয়ে ওর ঘরে গেল।”
“ওর ফোন তো সুইচ অফ আন্টি আপনি একটু ডেকে দিবেন প্লিজ?”
“আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি লাইনে থাকো আমি ওকে ডেকে দিচ্ছি।”
তূর্ণ ভালো আছে শুনে পূর্ণতার মন পুলকিত হয়। অস্থিরতা কমে আসে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে তূর্ণ কখন এসে ফোনটা নিবে আর পূর্ণতার সাথে কথা বলবে।
লিপি তূর্ণের ঘরের সামনে এসে দেখেন ভেতর থেকে দরজা লাগানো। তিনি কিছুক্ষণ নক করার পর তূর্ণ ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে বলল, “কী হয়েছে মামনি আবার ডাকছ কেন?”
“পূর্ণতা কল করেছে উঠে কথা বল। তোর ফোন না-কি বন্ধ তাই আমাকে কল করেছে।”
“এখন কারো সাথে কথা বলতে পারব না আমি ঘুমাচ্ছি। বলে দাও পরে কল দিতে।”
“এই এখন তোর আবার কীসের ঘুম? সারাদিন ঘুমিয়ে কাটালি। উঠ এবার ওর সাথে কথা বলে বাইরে আয়। আজ ছাদে আড্ডা দিব তোর বাবাইও আমাদের সাথে থাকবে আজ।”
“উফ মামনি তুমি যাও তো এখন। আমি ঘুমে চোখ খুলতে পারছি না। ”
তূর্ণকে ডেকেও যখন কাজ হয় না তখন লিপি কানে ফোন নিয়ে পূর্ণতাকে জানিয়ে দিল তূর্ণ এখন ঘুমাচ্ছে। সে যেন কাল কল করে। পূর্ণতা ভাবেনি তূর্ণ তার সাথে কথা বলবে না। তার আত্মবিশ্বাস ছিল তার নাম শুনলে তূর্ণ অবশ্যই কথা বলবে। কিন্তু তাকে নিরাশ করে দিয়ে তূর্ণ কথা বলল না আজ। পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে সে কী এমন অপরাধ করেছে! তূর্ণ কেন এমন করছে তার সাথে। মন খারাল করে ফোনটা ওয়্যারড্রব এর উপর রেখে ছাদে চলে যায়।
রাতে খাবার টেবিলে মোশাররফ লক্ষ্য করেন পূর্ণতা খাবার না আমার শুধুই নাড়াচাড়া করছে। তাই দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “পূর্ণ, কী হয়েছে তোর মা? সন্ধ্যায় আমাদের সাথে নাস্তা করতে এলি না। একা একাই ছাদে বসে রইলি। এখনো নাড়াচাড়া করছিস। তোর কী শরীর খারাপ? ”
পূর্ণতা মুখে কৃত্রিম হাসি নিয়ে বলল “না, আব্বু আমি ঠিক আছি। এই তো খাচ্ছি। তোমরাও খাও।”
রেহানাও লক্ষ্য করেছেন পূর্ণতা আজ স্বাভাবিক নেই। তাই তিনিও জিজ্ঞেস করলেন, ” আজ বাসায় ফেরার পর থেকে তুই স্বাভাবিক নেই পূর্ণতা। তুই কি কিছু নিয়ে চিন্তিত? ক্যাম্পাসে কিছু হয়েছে? কিছু হলে আমাদের জানা।”
পূর্ণতা ভাবছে তূর্ণর কথা বলবে। কিন্তু তারা যদি জানতে চায় তূর্ণ কেন রাগ করেছে পূর্ণতার সাথে তাহলে কী জবাব দিবে সে? বাবা-মা’কে তো এসব বলা যায় না। তাই মনের কথা লুকিয়ে বলল, “না, আম্মু কিছুই হয়নি। আমি স্বাভাবিক আছি। আব্বু তুমি ঠিকঠাক ওষুধ খেও কিন্তু। আর আম্মু তুমি কিন্তু আব্বুকে কোনো কারণে চিন্তা করতে দিবে না। আল্লাহ আমাদের কিছু না কিছু ব্যবস্থা একটা করবে তাই নিয়ে এত চিন্তা করা যাবে না।”
“আমায় নিয়ে তুই এত চিন্তা করিস না পূর্ণ। আমি এখন আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি। তোর মা আর তোরা থাকতে আমার কিছু হবে না। যেভাবে তোরা পরিচর্যা করছিস আমি তো ক্যান্সার হলেও সুস্থ হয়ে যেতাম।”
পূর্ণতা তার বাবার এ কথায় কপট রাগ দেখিয়ে বলল, “আব্বু! কী বলছো তুমি এসব? একদম বাজে কথা বলবে না।”
রেহানাও মেয়ের সাথে সায় দিয়ে বললেন, “তুমি কী বলো এসব অলুক্ষণে কথা? তোমার মাথা ঠিক আছে? কতদিন বলেছি আজেবাজে কথা না বলতে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে আর বলব না। প্রীতুলা কোথায়? ও’কে ডাকলে না তোমরা! ও কখন খাবে?”
রেহানা বললেন, “তোমার মেয়ের না-কি আজ গলা পর্যন্ত পেট ভরা। ওর পছন্দের আলুপুরি পেলে ও আচ্ছা মতো খায় জানোই তো। এখন না-কি আর কিছু খেতে পারবে না।”
“হা হা হা। থাক জোর করে খাওয়ার দরকার নেই। আমারও তো খুব প্রিয় ছিল ডালপুরি। ওর প্রিয় আলুপুরি। এখন তো আর খেতে পারি না।” কথা শেষ করেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন মোশাররফ।
পূর্ণতা বাবাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, “এভাবে বলো না আব্বু। তোমার জন্য যেসব খাবার এখন অনুপযোগী আজ থেকে আমাদের বাড়িতে সেসব খাদ্য নিষিদ্ধ। ”
“আরে না না কী বলিস এসব! তোরা খেলেই আমার খাওয়া হবে।”
রেহানা বললেন, “এসব ভাজা পোড়া খাবার না খাওয়াই ভালো সবার জন্যই।”
এভাবে অনেক কথা বলতে বলতে খাবার শেখার করে যে যার মতো নিজ নিজ ঘরে চলে যায় সবাই।
আজ তিনদিন হয়ে গেল তূর্ণ ক্যাম্পাসে আসে না। পূর্ণতা প্রতিদিন অপেক্ষা করে তূর্ণর জন্য।
চলবে…….