#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
স্বপ্ন সারথি পর্ব-১২
টি এ অনন্যা
বিকেলের দিকেও তূর্ণ ঘর থেকে বের না হওয়াতে লিপি অনেকক্ষণ ধরে তাকে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু তূর্ণ ভেতর থেকে কোনো সাড়া দিচ্ছে না তাই দেখে তার স্বামী মাসুদকে কল করেন তূর্ণর কথা জানানোর জন্য। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে দুবার রিং হওয়ার পরে ফোন তুলছে না মাসুদ।
অবশ্য তৃতীয় বারের বেলায় রিং ঢুকতেই ওপাশ থেকে কল রিসিভ করেন মাসুদ। বাম হাতে ফোন কানে নিয়ে ডান হাতে কিছু একটা লিখতে লিখতে বললেন, “হ্যালো তূর্ণর আম্মু বলো।”
“হ্যালো শুনছো? তুমি কি অফিসে খুব বেশি ব্যস্ত?”
“না, তেমন ব্যস্ত না। কয়েকটা ফাইল চেক করছিলাম এই আর কি। তবে তেমন ইম্পর্ট্যান্ট নয়। কেন কী হয়েছে? কিছু বলবে?”
” তূর্ণ সেই সকালেই ক্যাম্পাস থেকে এসে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে আছে। আমাকে বলল বিরক্ত না করতে য়াই আমি দুপুরেও ডাকিনি।”
“এটা নিয়ে এত চিন্তা করার কী আছে? হয়তো ঘুমিয়ে আছে। ওকে একা থাকতে দাও।”
লিপি মুখে দুঃশ্চিন্তা আর ভয়ের ছাপ নিয়ে বললেন, “একাই তো থাকতে দিয়েছি। দুপুরে খেতেও ডাকিনি। ভাবছিলাম উঠে যাবে। কিন্তু এখন বিকেল গড়িয়ে যাচ্ছে তাও খবর নেই উঠার। আমি অনেকক্ষণ ডেকেও কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছি না। সকালে ছেলেটা না খেয়ে গেছে আজ। দুপুরেও খেল না। আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা ঝামেলা হয়েছে। ”
মাসুদ বললেন, “আচ্ছা তাহলে অপেক্ষা করো আর কিছুক্ষণ। দেখো উঠে কি-না। আর আমিও আসছি একটু পর।”
লিপি রেগে গিয়ে বললেন, “সেই সকাল থেকে আমার ছেলেটা ঘরে নিজেকে আবদ্ধ করে রেখেছে আর তুমি বলছ আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে। আমি কোনো কথা শুনতে চাই না। এখনই তুমি বাসায় আসো।”
মাসুদ মোবাইল কানে নিয়েই চেয়ার হতে নিজের স্যুটটা হাতে নিতে নিতে বললেন, “আচ্ছা আমি আসছি এখনই। আর তুমি এক কাজ করো, সাইফকে কল দিয়ে জিজ্ঞাসা করো ওরা কিছু জানে কি-না?”
“আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি তাড়াতাড়ি আসো প্লিজ। টেক কেয়ার।”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
পূর্ণতা সাওয়ার নিয়ে খাওয়া-দাওয়ার পরে আবারও বাক কয়েক চেষ্টা করেও তূর্ণকে না পেয়ে তূর্ণর দেয়া কবিতাটা ব্যাগ থেকে বের করে পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমের দেশে চলে যায় নিজেও টের পায় না। হঠাৎ ঘুম ভাঙার পর হকচকিয়ে উঠতেই জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে।
পূর্ণতা বিছানা ছেড়ে উঠে জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে দেখে সমস্ত আকাশ জুড়ে সূর্যাস্তের রক্তিম আভার বিচ্ছুরিত খেলা। পাখিরা ফিরছে নীড়ে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে পুলকিত পূর্ণতার অন্তর। কিন্তু হঠাৎ মনে পড়ে যায় তূর্ণর কথা। আবার বেড়ে যায় তার অস্থিরতা। তাড়াতাড়ি করে টেবিলের উপর থেকে মোবাইলটা নিয়ে তূর্ণর নাম্বারে কল দেয়। কিন্তু ফোনের ওপাশ থেকে এক ভদ্র মহিলা মিষ্টি স্বরে জানায়, “সরি দা নাম্বার ইউ ডায়াল ইজ সুইচড অফ নাউ।”
পূর্ণতা কী করবে ভাবতে পারছিল না। তূর্ণর নাম্বার অফ শুনে তার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। হঠাৎ করে মনে পড়ে তার কাছে তো তূর্ণর মায়ের নাম্বার আছে। সে নাম্বারে কল করলেই তো তূর্ণর খবর পাওয়া যায়। নিজের মাথায় নিজেই থাপ্পড় দিয়ে মনে মনে বলল, “ইস কী বোকা আমি! আন্টিকে কল করলেই তো পারতাম আমি।”
পূর্ণতা ঠোঁটের কোণে এভারেস্ট জয়ের হাসি নিয়ে তূর্ণর মা লিপি বেগমকে কল করে। কারণ এবার সে নিশ্চিত তূর্ণর খবর পাবে এতক্ষণে। কিন্তু পূর্ণতার আশার বাতি দপ করে নিভে যায় যখন বারবার কল দেওয়া সত্ত্বেও তূর্ণর মা কল রিসিভ না করে। ঠোঁটের কোণে ভেসে আসা হাসিটা মুহূর্তেই কালো অন্ধকার হয়ে ছড়িয়ে পড়ে পূর্ণতার সমস্ত মুখ জুড়ে। আবার তাকে নানান চিন্তায় ঘিরে ধরে। বুকের ভেতর বাড়তে থাকে অস্থিরতা।
“দেখেছ সন্ধ্যা হয়ে গেল এখনো আমার ছেলেটা দরজা খুলছে না। প্লিজ তুমি কিছু একটা করো।”
তূর্ণর বাবা মাসুদের কথামতো লিপি সাইফকে কল করেছিলেন। কিন্তু সাইফ জানায় তূর্ণ আজ ক্যাম্পাসেই যায়নি। তারপর থেকেই শুরু হয়েছে লিপির কান্না। মাসুদ আসার পরে দু’জন মিলে ডাকাডাকি করেও লাভ হচ্ছে না।
মাসুদ যখন দরজা ভাঙার জন্য উদ্যোগ নেয় এবং মানুষ ডাকার জন্য নিচে যেতে পা বাড়ায় ঠিক তখনই তূর্ণ দরজা খুলে বেরিয়ে আসে।
ঘুম ঘুম চোখে দরজায় হেলান দিয়ে বলল, “কী হয়েছে মামনি? এত চিল্লাচিল্লি করছ কেন? আমাকে কি একটু শান্তি মতো ঘুমাতে দিবে না?”
ছেলেকে দেখেই সারা গায়ে হাত বুলিয়ে জড়িয়ে ধরেন লিপি। অশ্রুসিক্ত চোখে ভাঙা গলায় জিজ্ঞাসা করেন, “বাবা তুই ঠিক আছিস তো? কী হয়েছে তোর?”
তূর্ণ ঘুম জড়ানো চোখেই উত্তরে বলল, “আমি তো ঠিক আছি। কিছু হয়নি আমার। তোমাদের কী হয়েছে সেটা বলো। এমন অস্থির হচ্ছো কেন?”
মাসুদ বললেন, “আমরা অস্থির হবো না কেন? তোর মা বলল তুই সেই সকালে এসে দরজা লাগিয়েছিস। দুপুর, বিকেল গড়িয়ে এখন সন্ধ্যা হয়েছে। সেই খবর আছে তোর? তুই ঠিক থাকলে এত ঘুমালি কেন? সত্যি করে বল তোর কী হয়েছে?”
“উফ বাবাই তুমি অযথা চিন্তা করছ আমায় নিয়ে। আমি পুরোপুরি ঠিক আছি। মাইগ্রেনের সমস্যাটা একটু বেড়েছিল সকালে। তাই ঘুমিয়েছিলাম। কখন এত বেলা হলো বুঝতেই পারিনি।”
লিপি তূর্ণর মাথায় হাত দিয়ে অস্থিরতা নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন , “এখন কেমন আছিস বাবা? এখনো ব্যথা করছে? মা’কে সব বল বাবা কেমন লাগছে তোর?”
“তোর মাইগ্রেন সমস্যা হচ্ছে তা আমাদের জানানোর প্রয়োজনটাও কি মনে করিসনি? তোর মা’কে তো বলতে পারতি। তোর ডাক্তার আংকেলকে খবর দিত।”
তূর্ণর এতক্ষণে ঘুমের নেশাটা কেটেছে। সে বলল, “আরে তোমরা এত অস্থির হচ্ছো কেন? আমার তেমন কিছু হয়নি। আমি এখন ভালো আছি। মামনি যাও বাবাইকে নাস্তা দাও। বাবাই তুমি বাইরে থেকে এসেছ ফ্রেশ হয়ে নাও।”
“আমার কথা ভাবতে হবে না তোকে। আগে তুই ফ্রেশ হয়ে আয়। তোর মামনি তোকে খায়িয়ে দিবে নাহয় তার মন শান্তি পাবে না। তুই তো চিনিস তোর মামনিকে। ও কিন্তু তোর জন্য খায়নি দুপুরে।”
“হ্যাঁ বাবা যা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়।”
“আচ্ছা যাচ্ছি। কিন্তু মামনি তুমি এটা একদম ঠিক করোনি। ”
“আমি আবার কী করলাম। শোনো ছেলের কথা! ”
“তুমি না খেয়ে আছো কেন? কত বেলা হয়েছে সে খেয়াল আছে তোমার?”
“আমি তো তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ভাবছি তুই উঠলে মা – ছেলে একসাথে খাব। কিন্তু তুই তো দিয়েছিস আমার চিন্তা বাড়িয়ে। ”
“আচ্ছা এখন তুমি যাও নাস্তা তৈরি করো। আমি সাওয়ারে গেলাম।”
তাওয়াল আর ট্রাউজার নিয়ে তূর্ণ বাথরুমে যাওয়ার পরে লিপি তূর্ণ ঘরে ঢুকেন বিছানা গুছানোর জন্য। বাড়িতে কাজের মানুষ থাকা সত্ত্বেও ছেলের কাজ নিজ হাতে করতে ভিন্ন অনুভূতি হয় লিপির।
তিনি বিছানা গুছানোর পরে হঠাৎ তার নজর যায় খাটের পাশে থাকা টেবিলের উপর যেখানে এক পাতা ঘুমের ঔষুধ রাখা। সেই পাতায় দুটো ঘুমের ওষুধ নেই। তা দেখে লিপির হৃদয়ে মোচড় দেয়। মনে মনে ভাবতে থাকেন তিনি তূর্ণ তাহলে ঘুমের ওষুধ খেয়েই সকাল থেকে ঘুমালো। ব্যাপারটা তার কাছে হালকাই মনে হয়েছে। কারণ তূর্ণ বলেছে তার মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়েছে। তাই হয়তো ঘুমের জন্য ওষুধ নিয়েছে। কিন্তু টেবিলের পাশে ফ্লোরে ছড়িয়ে থাকা রক্তবিন্দু তার কলিজায় টান দেয়। ভয়ে আৎকে উঠেন লিপি।
সবকিছুই যেন রহস্যময় লাগছে লিপির কাছে। তূর্ণ যা বলেছে তা এখন আর তার কাছে বিশ্বাস্য মনে হচ্ছে না। তূর্ণ নিশ্চয় কিছু একটা লুকাচ্ছে তার কাছে। সে বলেছে ক্যাম্পাসে গিয়েছে কিন্তু সাইফ বলেছে তূর্ণ ক্যাম্পাসেই যায়নি আজ। সব মিলিয়ে কোনো কিছুই মিল পাচ্ছেন না লিপি। তূর্ণ তো তার কাছে কখনো মিথ্যা বলে না। আজ কী এমন হলো! যার কারণে তূর্ণ তাকে বারবার মিথ্যা বলছে!
এসব ভাবতে ভাবতেই একটা ন্যাকড়া এনে ফ্লোরের রক্ত মুছে তূর্ণ বের হওয়ার আগেই নিজের ঘরে চলে যান লিপি।
“পূর্ণতা! এই পূর্ণতা কী হয়েছে তোর? এমন অন্যমনস্ক হয়ে আছিস কেন?”
তূর্ণর মা-ও যখন কল রিসিভ না করে তখন ফোন রেখে আজানের পর নামাজ পরে রান্নাঘরে আসে মা’কে নাস্তা তৈরি করতে সাহায্য করার জন্য। কিন্তু আজ তার কাজেও মন বসছে না। তার ভাবনায় শুধু তূর্ণ। সেই সকাল হতে এখনো সে তূর্ণর কোনো খোঁজ পায়নি। কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। রেহানা বুঝতে পারেন তার মেয়ের মনের ভেতর কিছু একটা চলছে। অন্যমনস্ক হয়ে আছে সে।
রেহানার কথায় ধ্যান ভাঙে পূর্ণতার। সে যখনই মায়ের কথার উত্তর দিতে যাবে তার ঘর থেকে ভেসে আসে মোবাইলের কলিং রিংটোন। পূর্ণতা ভাবে এই বুঝি তূর্ণ কল দিয়েছে। তাই মায়ের কথার জবাব না দিয়ে দৌড়ে যায় নিজের ঘরে।
চলবে……..
ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আপনার গঠনমূলক মন্তব্য লেখার অনুপ্রেরণা।