#স্বচ্ছ_প্রণয়াসক্ত
#পর্ব_৪
#মুসফিরাত_জান্নাত
“ঐশী তুমি এসেছো!অবশেষে তোমার দেখা পেলাম।”
কারো ব্যগ্র কন্ঠ শুনে ভারী নেত্র পল্লব তুলে তাকায় ঐশী।দৃশ্যপটে ভেসে ওঠে মীরার চেহারা।মেজাজ বিগড়ে যায় তার।এক ঝটকায় মীরার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়।কাঠ কাঠ গলায় বলে,
“স্ট্রেঞ্জ ম্যান!আমার হাত ধরার সাহস কি করে হলো আপনার?”
মীরা নিভু নয়নে তাকালো।নিস্প্রভ গলায় আওয়াজ তোলে সে,
“দুঃখিত ঐশী।তোমাকে দেখে উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম।তোমার সাথে কিছু কথা বলার ছিলো।”
ক্রুদ্ধ হয় ঐশী।
“কিন্তু আপনারর সাথে আমার কোনো কথা নেই।”
চলতি পথে পা বাড়ায় ঐশী। পিছু ডাকে মীরা।অনিচ্ছা সত্বেও পিছু ফেরে সে।শান্ত অথচ জোড়ালো গলায় বলে,
“আমি কোনো সিনক্রিয়েট করতে চাইছি না।চলে যান আমার সামনে থেকে।”
শাণিত গলায় প্রতিউত্তরে মীরা বলে,
“এমনটা হোক আমিও চাই না।আমি তো এখানে শান্তিপূর্ণভাবে সব কিছুর সমাধান করতে এসেছি।”
“আমাদের মাঝে যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে আপু।নতুন কোনো সমাধান আমি চাইছি না।বা নতুন কোনো বিষয়ও টেনে আনতে চাইছি না।”
“আমি নতুন করে কিছু টানছি না।কোথাও বসি চলো।ঠান্ডা মাথায় কথা হোক।আমি তোমাকে কিছু বিষয় এক্সপ্লেইন করতে চাই।”
চেতে ওঠে ঐশী।দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“কোথাও বসার প্রস্তাব দিচ্ছেন কেনো?আবারও অপমান করার জন্য?সেদিন অপমান করেও সাধ মেটে নি তাই না?”
“সেদিনের জন্য আমি দুঃখিত ঐশী।কীভাবে যেন ওইদিন আমরা তোমার সাথে খারাপ আচরণ করেছিলাম।তার জন্য সবার হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি।তুমি মাহিনকে এড়িয়ে চলাতে আমাদের প্রচুর ব্লেইম করছে ও। এবার তো একটু বোঝো।”
“লাইক সিরিয়াসলি!তলে গাছ কে’টে উপরে পানি ঢাললেই হয়ে যাবে?সেদিন যতটা অপমান করেছেন এখন ক্ষমা চাইলেই সেসব ধুলোয় মিশে যাবে?আমাকে এতোটাই আহাম্মক মনে হয় আপনার?”
“আচ্ছা দোষটা না হয় আমাদের, মাহিনের তো কোনো দোষ ছিলো না।ওর সাথে একটু দেখা করলে কি হয়?এতোদিনে তোমার সাথে একটু কথা বলতে পা’গল হয়ে গিয়েছে ও।”
“দুঃখিত,আমি কারো সাথে দেখা করতে পারব না।ঘটনার উৎস বিন্দুতে মাহিন ভাইয়ার হাত না থাকলেও ঘটনায় হাত ছিলো।সে চাইলেই আপনাদের থামিয়ে দিতে পারতো।অথচ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সার্কাস দেখেছে।অনেক মজা নিয়ে কোনো মেয়েকে অপমানিত হতে দেখা দর্শক যে কোন কোয়ালিটির তা আমার জানা আছে।মাহিন ভাই আপনাদের চেয়ে বেশি জঘন্য।সে প্রতিবাদ না করে দাড়িয়ে এসব দেখেছে বলেই আপনারা উৎসাহ পেয়েছেন।এখন তার পা’গলামোতে আমার কিছু যায় আসে না।চলি।”
কিছু একটা বলতে উদ্যত হচ্ছিলো মীরা।কিন্তু তাকে দ্বিরুক্তি করার সুযোগ না দিয়ে শহীদ মিনারের দিকে পা বাড়ায় ঐশী। ঠায় দাঁড়িয়ে রয় মীরা।অসহায় দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকে মেয়েটির যাত্রাপথে।শেষ চেষ্টা ফলাতে আওয়াজ তোলে,
“প্লিজ ঐশী, একটা সুযোগ দাও।ওর সাথে একবার কথা বলতে তো কোনো অসুবিধা নেই।”
মীরার গলাটা বেশ উঁচু হওয়ায় আশেপাশের সবার নজর ওদের দিকে পতিত হয়।ছুটে আসে ঐশীর বন্ধুমহল।মীরার নত চেহারা ও ঐশীর কঠোর মুখ পাণে তাকিয়ে দেখে বার বার।ঘটনার মুল বুঝতে কিছু সময় লাগে তাদের।সব বুঝে সিন্থিয়া উশখুশ করতে থাকে।ভাইয়ের বউকে বউয়ের পছন্দের মানুষের সান্নিধ্যে যাওয়ার প্রস্তাব পেতে দেখাটা যে কারো জন্যই অস্বস্তিকর।তবে পরিস্থিতির বিবেচনায় নিজের অনুভূতি প্রকাশে অক্ষম সে।কিছু বললেই যে সাদাতের সাথে তাদের সম্পর্কটা জানাজানি হয়ে যাবে।সবকিছু বুঝতে পেরে তাসনিম ঐশীর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে,
“মাহিন হয়তো সত্যি তোকে ফিল করছে।একবার গিয়ে দেখ কি বলে।তুই শান্তিমতো কথা না বলা পর্যন্ত আল্লাহর বান্দা থামবে না।কয়েকদিন হলো জ্বালিয়ে মা’রছে আমাদের।এখন এই আপুদেরও জ্বালাচ্ছে হয়তো।ওদের আর তোকে অপমান করার উপায় নেই।এবার তো তারাই তোকে নিজে থেকে ডাকছে।যদি আবারও অপমানিত করে তো দ্বিগুন অপমান ফেরত পাবে।”
তাসনিমের কথায় মন গলে ঐশীর।নিঃশব্দে হেটে সাইডে যায়।ইতিবাচক সাড়া পেয়ে মীরাও এগিয়ে যায়।অধরের কোনে হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে সে।
_______
শহীদ মিনার থেকে খানিকটা দুরে নাম না জানা ঝাকড়া একটা গাছের নিচে দাড়িয়ে আছে ঐশী, মাহিন।আশেপাশে খুব একটা মানুষের আসা যাওয়া নেই।নির্জন ও কোলাহল মুক্ত পরিবেশ।স্নিগ্ধ মন মাতানো বাতাস বইছে।সাথে ভাসছে দোয়েলের মিষ্ট কলধ্বনি।পরিবেশটা মোহনীয় হলেও সবটাই অস্বস্তিতে রূপ নিয়েছে মাহিনের উপস্থিতিতে।এই মানুষটার ছায়াও এখন ঐশীর জন্য অস্বস্তিকর।সহ্য হয় না একদম।বরং রাগ হয়।মাহিনের প্রতি নয় নিজের প্রতি।কোন আক্কেলে এই মানুষটাকে প্রস্তাব দিয়েছিলো সে?মাহিনের প্রতি কোনো এক অবেলায় ক্রাশ খেয়েছিলো ঐশী।সময় গড়িয়ে অনেকদিন পেরুলে সপ্তাহ খানেক আগে বান্ধবীদের প্ররোচনায় দেখা করে মাহিনের সাথে।তাকে নিজের অনুভুতি ব্যক্ত করলে সু কৌশলে কিছুদিন ভাবার জন্য সময় চেয়ে এড়িয়ে যায় মাহিন।বিষন্ন মনে ফিরে যাচ্ছিলো ঐশী।অথচ মাহিনের বন্ধুমহল জেঁকে ধরে ঐশীকে।অকথ্য ভাষায় অপমান করে তাকে।সবদিক দিয়েই ঐশী মাহিনের অযোগ্য এটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখায়।নিশ্চুপ থেকে এসব দেখে যায় মাহিন।কোনো দ্বিরুক্তি করে না।ভরা ক্যাম্পাসের মাঝখানে অপমানিত হয়ে চুরমার হয়ে যায় মেয়েটি।অথচ তাকে আগলে ধরার কেও থাকে না।নিজের অশ্রু সংবরন করে কোনো মতো বাড়ি ফেরে সে।লজ্জায় অপমানে এরপর আর কলেজে আসে নি সে।যার দরুন তাদের মুখোমুখি হতে হয় নি।তাই একের পর একজনকে দিয়ে ঐশীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা চালিয়েছে মাহিন।এমনকি ঐশীকে অপমান করা কাছের বন্ধুদেরও কটু কথা শোনাতে দু দন্ড ভাবেনি।এখন তাদের এমন অবস্থা নিজেদের বন্ধুত্বই আর টিকবে না।বাধ্য হয়ে ঐশীর কাছে নত হয়েছে মীরা।নয়তো ঐশীর এতো মেজাজ সে কখনোই সহ্য করতো না।এখন ঐশীকে কনভিন্স করে মাহিনের সান্নিধ্যে রেখে একটু দূরে অবস্থান নিচ্ছে সে।মাহিনের চেহারা দেখে অস্বস্তি লাগছে ঐশীর।যার দরুন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে সে।মাহিনকে বিয়ের কথাটা যে কীভাবে বলবে বুঝে আসে না তার।কিছু সময় এভাবেই কে’টে যায়।অবশেষে নিরাবতা ঠেলে মাহিন বলে,
“সেদিনের আচরণে সত্যি আমি দুঃখিত।কিন্তু বিশ্বাস করো ওরা যে ওইরকম করবে আমি ভাবতে পারিনি।”
“সেদিন যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে।অতীতকে না টেনে এখন কি বলতে চান তাই বলেন।”
কঠিন মুখের জবাব তার।মেয়েটির রুষ্ট ভাব বোঝে বিচক্ষণ মাহিন।আবারও ঐশীকে বোঝাতে বলে,
“দেখো ঐশী।রিমাও তোমার মতো আমাকে পছন্দ করে।সে কারণেই হয়তো সে বেশি সিনক্রিয়েট করে ফেলেছে।আর রিমার হয়েই মীরাসহ অন্যরা তোমাকে ইনসাল্ট করেছে।ওদের হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি।”
“এটা তো তখন মীরা আপুও বলেছে।আর কিছু বলার থাকলে বলেন।আমার সময় সল্প।”
“এমন করো না ঐশী।তোমার মনের কষ্ট আমাকে পীড়া দিচ্ছে।তুমি একটু হালকা হও।ওদের ওই আচরণটা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে আমার কাছে তুমি কতোটা গুরুত্বপূর্ণ।আমরা কি আমাদের সম্পর্কটা আগাতে পারি না।”
“না পারি না।”
“কিন্তু কেনো?তুমিই তো সেদিন আমাকে তোমার অনুভুতি জানালে।”
“তখন আমার পরিস্থিতি অন্যরকম ছিলো।আর এখন অন্যরকম।বিয়ে হয়ে গিয়েছে আমার।আশা করছি আর বিরক্ত করবেন না।”
“মিথ্যা কেনো বলছো ঐশী?দেখো আমার ভুল হয়েছে।সেদিন তোমার হয়ে প্রতিবাদ করা উচিৎ ছিল আমার।তারজন্য আমি তো সরি বলছি।তাও এমন করো না।”
নির্লিপ্ত ভাব নিয়ে ঐশী প্রশ্ন করে,
“আজব! মিথ্যা কেনো বলতে যাবো?”
পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাহিনের হবাব,
“কারণ আমার উপর অভিমান জমেছে তোমার।সেই জায়গা থেকেই এমনটা বলছো।”
“আমি কোনো মিথ্যা বলিনি।সত্যি এটাই যে এখন আমি বিবাহিত।”
“যদি সত্যিই তোমার বিয়ে হয় তবে ফেসবুকের রিলেশনশীপ স্ট্যাটাস এখনো সিঙ্গেল রেখেছো কেনো?”
নিরুত্তর রয় ঐশী।এর উত্তরটা যে সে কোনোভাবেই দিতে পারবে না।কীভাবে সে বলবে যে এমন এক ব্যক্তির সাথে তার জীবন জুড়ে গিয়েছে যার সাথে তার বৈবাহিক জীবন প্রকাশ্য আনা লজ্জার।ঐশীকে নিরব দেখে ওর এক হাত জাপ্টে ধরে মাহিন।কাতর কণ্ঠে বলে,
“ঐশী এবারের জন্যও কি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নই আমি?তুমি না আমাকে ভালোবাসতে?এইটুকু ভুলই যদি ক্ষমা না করতে পারো তবে আমি কিসে ভরসা করব বলো?
মাহিনের আকুতিপূর্ণ গলায় কিছুটা খারাপ লাগে ঐশীর।নিভৃতেই নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেয় সে।শাণিত গলায় বলে,
“আপনাকে আর ভরসা করতে হবে না মাহিন ভাইয়া।আমি সেদিনের প্রস্তাব ফিরিয়ে নিচ্ছি।আমার পিছে ঘুরে কোনো লাভ হবে না।আমি আর একা নই।অন্য কারো মাঝে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছি।বুঝতে চেষ্টা করছেন না কেনো আপনি?”
“এটা আমি বিশ্বাস করি না।”
জোরপূর্বক কণ্ঠে আওয়াজ তোলে মাহিন।
“বিশ্বাস অবিশ্বাস একান্ত আপনার ব্যক্তিগত বিষয়।আমার যা বলার ছিলো বলে দিয়েছি।চলি।”
ঐশীর কথাগুলোতে এতোটাই জোর ছিলো যে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রয় মাহিন।মেয়েটির চোখের গভীরতা স্পষ্ট বলছে সে সত্যি বলছে।কথাগুলো বলে চলে যেতে নিতে ঐশীর চোখ যায় দোতলায় অফিস রুমের দিকে।জানালা দিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে এক জোড়া গভীর চোখ।সাদাতের চোখে চোখ পড়তেই মাথায় অন্য চিন্তার দল এসে হানা দেয়।তড়িৎ জায়গা ত্যাগ করে সে।দুচোখ হাত দিয়ে ঢেকে ফোঁপাতে থাকে মাহিন।চোখে তার ব্যাথার জল।প্রেয়সীর মুখের এমন নাকচ যে তার জন্য প্রচুর ব্যাথার।
_______
মৃদু মন্দ বাতাসে নড়ছে বিশালদেহী বটবৃক্ষের সবুজ পাতা।গাছের ডালে ডালে উড়ছে চড়ুই পাখির দল।তাদের ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ শব্দে মুখরিত পরিবেশ।এক ডাল থেকে আরেক ডালে উড়ে যাওয়ার সময় ফেলে দিচ্ছে লালচে ছোট ফল।মাঝে মাঝে সবুজ পত্র ভেদ করে দৃষ্টি যাচ্ছে ঐশীদের বন্ধুমহলে।সকলের দৃষ্টি ঐশীতে নিবদ্ধ।মনোযোগী হয়ে শুনছে ইতিপূর্বের ঘটনা।সিন্থিয়া, তাসনিম, জেবা ও অর্ক ঐশীর মন বোঝার চেষ্টা করছে।তারা জানে মাহিনকে কতোটা পছন্দ করতো সে।অথচ ঐশী নির্বিকার, যার দরূন তার ভিতরকার অনুভুতি ধরা যাচ্ছে না।অর্ক মন্থর কন্ঠে প্রশ্ন করে,
“ওসব কেনো বললি দোস্ত?সত্যি কি তোর বিয়ে হয়ে গিয়েছে?”
“হুম।”
ছোট্ট অথচ দৃঢ় কন্ঠে উত্তর দেয় ঐশী।
“কেমনে কি?তোর বর কেডা?”
বিষ্মিত হয়ে প্রশ্ন করে জেবা।হাঁসফাঁস শুরু করে দেয় সিন্থিয়া।ঐশী কী আকষ্মিক ঘটনার বসে একান্ত গোপন কথা বলে ফেলবে?কিন্তু এর পরবর্তী ঘটনা কতোটা ভয়াবহ হতে পারে ভাবতেই শিউরে ওঠে।সাদাত জানলে মোটেও ভালো হবে না।ঐশীর উত্তর দেয়ার আগেই সবার মনোযোগ কেড়ে নিয়ে সিন্থিয়া বলে,
“ক্লাস শুরু হবে এখন। চল তাড়াতাড়ি।”
দোতলার রুমে তাকিয়ে অফিস রুম থেকে সাদাতকে উঠতে দেখে উঠে পড়ে সকলে।তড়িঘড়ি করে ক্লাসের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।হাঁফ ছাড়ে সিন্থিয়া।যাক ব্যাপারটা ধামাচাপা দেওয়া গেলো।
______
ক্লাস শেষে সবাই যখন ফিরতি পথে পা বাড়াচ্ছিলো,তখন কিছু একটা বাহানা দিয়ে কলেজে থেকে যায় ঐশী।সাদাতের কালো মার্সিডিজ এর আশেপাশে ঘুরঘুর করে সে। অপেক্ষায় থাকে কখন সাদাতের উপস্থিতি হবে।অফিস রুম থেকে বেড়িয়ে ঐশীকে অপেক্ষা রত দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায় সাদাত।মেয়েটির উদ্দেশ্য বুঝতে পারে না সে।আশেপাশে তাকিয়ে পুরো ক্যাম্পাস ফাঁকা দেখতে পায়।এগিয়ে গিয়ে ঐশীকে গাড়িতে উঠতে বলে দ্বিরুক্তি করার সুযোগ না দিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে।কিছু সময় ইতস্তত করে ঐশীও পাশের সিটে গা এলিয়ে দেয়।গাড়ি স্টার্ট দেয় সাদাত।সারা রাস্তা জড়তা কাটিয়ে কিছু বলে উঠতে পারে না ঐশী।বাড়ি পৌছে যায়।তবুও গাড়ি থেকে নামে না।অথচ লজ্জায় অস্বস্তিতে মুখ ফুটে কিছু বলে উঠতে পারে না।মেয়েটির দিকে সুক্ষ্ম নয়নে তাকিয়ে থেকে পর্যবেক্ষণ করে সাদাত।স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজেই জিজ্ঞেস করে,
“কিছু বলবে?”
দুই শব্দের একটি বাক্য।অথচ কেঁপে ওঠে ঐশী।এই প্রথম সাদাত তুমি সম্বোধন করলো তাকে।ভড়কে গেলো সে।অস্বস্তিতে ছেয়ে গেলো মুখ।শব্দরা হরতাল পাকালো।মাথা নাড়িয়ে জানান দিলো সে কিছু বলতে চায়।সাদাত লম্বা শ্বাস টেনে কোনো ভণিতা ছাড়াই বললো,
“যা বলতে চাও বলে ফেলো।টিচারের বাইরে আমি তোমার স্বামী হই।এতো ইতস্ততার কিছু নেই।”
কিছুটা স্বাভাবিক হলো ঐশী।গলা খাকাড়ি দিয়ে সহজ হওয়ার চেষ্টা করলো।কিছুটা সময় নিলো নিজেকে ধাতস্থ করতে।অতপর কোনো ভণিতা ছাড়া বললো,
“মাহিন ভাইয়ার সাথে একটা বিষয় নিয়ে এমনি টুকটাক কথা হচ্ছিলো তখন।এছাড়া আমাদের মাঝে কিছু নেই।..”
ঐশীকে থামিয়ে দেয় সাদাত।দৃঢ় কন্ঠে বলে,
“ব্যাখ্যা করার কিছু নেই।সবটাই আমার জানা।ওসবে কিছু মনে করিনা আমি।”
কিছু সময় নিরব থাকে সে।অতপর বলে,
“তুমি একবার যখন আমার হয়েছো নিজের কোনো কিছুই তখন তোমার নেই।এমনকি অতীতও নয়।”
দুই বাক্যের সংলাপটিতে অন্যরকম মাধুর্যের ছোঁয়া খুঁজে পেলো ঐশী।যা বাক্যহারা করে দিলো তাকে।থমকে গেলো সে।সাদাত হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে টাইম দেখে নামিয়ে দিলো ঐশীকে।গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।ঐশী সেদিকেই আয়তলোচনা চোখ দুটি মেলে নিরলস তাকিয়ে রয়।কালো মার্সিডিজ এর মাঝে খুঁজে চলে সুদর্শন পুরুষটিকে।অনাকাঙ্ক্ষিত ভালোলাগার সুচনা বুঝি এভাবেই শুরু হয়!
চলবে