#স্বচ্ছ_প্রণয়াসক্ত
#পর্ব_২৬
#মুসফিরাত_জান্নাত
বিজ্ঞানীদের অভিমতে, বৃষ্টির শব্দ এমন এক ছন্দবৃত্ত ধ্বনির উৎপত্তি করে যা অন্য কর্কশ শব্দকে মানব মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। বৃষ্টির টিপটাপ ছন্দে অন্য সব বিরাগভাজন শব্দ বিতাড়িত হয়ে যায়।এই সুমধুর ধ্বনি ছাপিয়ে নিজেদের বহিঃপ্রকাশ করতে ব্যর্থ হয় সেসব শব্দরা।বিশেষজ্ঞরা পাতার মর্মর বা বৃষ্টির শব্দকে ‘পিংক নয়েজ ইফেক্ট’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। যা অন্য শব্দকে মস্তিষ্কে প্রবেশের সুযোগ কমিয়ে দিয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমাতে সাহায্য করে।
ঝুম বৃষ্টির এই ছন্দময় ধ্বনি প্রকৃতির কণ্ঠে গাওয়া ঘুমপাড়ানি গানের মতো কাজ করে।যা সহজেই একজন মানুষকে ঘুমে তলিয়ে দেয়।জাগ্রত চোখেও ঘুমের আনাগোনা দেখা দেয়।ঐশীর চোখেও আষাঢ়ে বৃষ্টির প্রভাব আঠার ন্যায় লেপ্টে যাচ্ছে।দীর্ঘদিন পর আজকের হাঁটাহাঁটি ও হালকা কাজ করায় শরীরে ক্লান্তি এসেছে।তাই অলস বিকেলের এই সময়টায় বিছানায় যাওয়ার জন্য ছোক ছোক করছে সে।কিন্তু সাদাতের কড়া শাসনের যাতাকলে সুবিধা করে উঠতে পারছে না।বাইরের বৈরী আবহাওয়ায় বিকেলের হাঁটাও থেমে গিয়েছে তাদের।এজন্য গভীর মনোযোগ দিয়ে সাদাত ইউটিউব ঘেঁটে চলেছে।উদ্দেশ্য বিগিনারদের জন্য ঘরের মাঝেই ফ্রী হ্যান্ড এক্সারসাইজ গুলোর মাঝে থেকে যেকোনো একটা ঐশীর জন্য সিলেক্ট করা।সাদাতের এই কার্যকালাপে ঝিম ধরে যাচ্ছে ঐশী।নিরবতার পর্দা ঘুমকে আরও গাঢ় করে দিচ্ছে।সাদাতের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে নিঃশব্দে বিছানায় শোয়ার চেষ্টা করে ঐশী।খপ করে তার হাত ধরে ফেলে সাদাত।ধীর কণ্ঠে বলে,
“পেয়ে গিয়েছি।এপ্রিল হান এর এই টুয়েন্টিন মিনিটস বিগিনার ফ্রেন্ডলি ফুল বডি ফ্যাট বার্নিং ওয়ার্ক আউটটা করবে তুমি।”
সাদাতের দৃঢ় কন্ঠে বিড়াল ছানার ন্যায় করুন দৃষ্টি মেলে ঐশী।ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে ভিডিওটি দেখতেই আঁতকে ওঠে সে।হকচকিয়ে গিয়ে বলে,
“ইয়া আল্লাহ!এসব দেখতেই সহজ লাগে,করতে গেলে অনেক প্যারা।এতো কঠিন এক্সারসাইজ আমি কিভাবে করবো?”
“যেভাবে শুয়ে বসে অনিয়মিত জীবন যাপন করে ওয়েট গেইন করেছো,ওভাবেই করবে।”
“ওয়েট লস করা কি ওয়েট গেইন করার মতো কমফোর্টেবল নাকি?এসব করতে পারব না আমি।সকাল বিকাল পঁয়তাল্লিশ মিনিট করে হাঁটলেই এনাফ।”
“হ্যাঁ সকল বিকাল হাঁটলেই এনাফ।কিন্তু এই বৈরী সিজনের হুটহাট বৃষ্টিতে নিয়ম করে হাঁটবে কি করে তুমি?তাই এই এক্সারসাইজ তোমায় করতেই হবে এন্ড এখন থেকে স্টার্ট করবে তুমি।ত্রিশ মিনিট ট্রেড মিলে হেঁটে বারো মিনিটের ওয়ার্কআউট।আর ডায়েট প্ল্যান তো আছেই। ব্যাস এক মাসেই ওয়েট অনেক কমে যাবে।এখন জলদি ওঠো।”
কলেজ থেকে ফিরতি পথে মার্কেটে ঢুকে নিয়মিত ওজন চেক দেয়ার যন্ত্র,বৃষ্টির মাঝেও ঘরে বসে হাঁটা চালু রাখার জন্য যন্ত্র ও ম্যাট কিনে এনে দিয়েছে সাদাত।যথা স্থানে ম্যাট পেতে ঐশীকে ওখানে ডাকে সে।
মুখ ভার করে ঐশী।ঝুম বৃষ্টির এই অবেলায় ওয়ার্ক আউট করার একটুও ইচ্ছে হচ্ছে না তার।ঘরের বিছানাটা তাকে টানছে ভিষন।ঘুমানোর জন্য মন আকুতি মিনুতি করছে।বাইরেও ঘুম ঘোরে নিয়ে চলা বৃষ্টি।এদিকে সাদাতের দৃঢ় কন্ঠে বিছানায়ও যেতে পারছে না।করুন কণ্ঠে সে বলে,
“আপনি তো ভীষণ বেরসিক মানুষ।এই রোম্যান্টিক আবহাওয়ায় কেও বউকে দিয়ে এক্সারসাইজ করায়?করায় না তো?তাই আমিও আজকে ওয়ার্ক আউট করবো না।বিছানাটা আমাকে টানছে খুব।একটু ঘুম দিবো এখন।”
ঐশীর কথায় কোনো প্রভাব পড়ে না সাদাতের উপর।এই কথার বিপরীতে সরু চোখে তাকায় সে।ঐশীর এক হাত টেনে ধরে বলে,
“কোনো বাহানা এলাও করা হবে না।সময় গড়িয়ে যাচ্ছে।নিয়ম মতো সব করতে হবে।তাড়াতাড়ি উঠো।এখন আমি তোমার ওয়ার্ক আউট ট্রেইনার।”
সাদাতের শক্ত হাতের টানে উঠে পরে ঐশী।মলিন মুখে এগিয়ে যায় সে।হটাৎ মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি খেলে যায় তার।এদিকে সেদিকে তাকিয়ে সে বাঁকা হেসে বলে,
“বাহানা একটা এলাও হবে মনে হয়।ইভেন আপনি নিজেই বলবেন,থাক ঐশী আজকে আর ওয়ার্ক আউট করতে হবে না তোমার।বিছানায় চলো।দেখতে চান?”
কথাটা বলে ঐশী খট করে দরজা লাগিয়ে দেয়।তারপর এক পা দু পা করে এগিয়ে আসে সাদাতের দিকে।আবেদনময়ী ভঙ্গিমা।দুপুরে গোছল করার পর ভেজা চুলগুলো যে মেলে দিয়েছিলো তা এখনো বাঁধন ছাড়া রয়েছে।সেগুলোকে আরও একটু এলোমেলো করে দিয়ে সাদাতের নিকটে আসতে লাগে সে।এসব দেখে শুষ্ক ঢোক গিলে সাদাত।নিজেকে সংযত করতে হাঁসফাঁস করে সে।মুখ শুকনো করে বলে,
“ব্যাপারটা একদমই ভালো হবে না ঐশী।ভুলে যেও না আমি তোমার টিচার হই।তার সাথে এমন করতে লজ্জা লাগছে না তোমার?”
ঐশীর কুটিল হাসি আরও প্রশস্ত হয়।সয়তানি কণ্ঠে সে বলে,
“টিচার তো অন্য সময়ও থাকেন।তখন যে আমাকে লজ্জা ভাঙিয়ে দিয়েছেন,তার কি হবে?তাছাড়া একজন জামাই রুপি প্রকৃত শিক্ষকের সব কিছুরই শিক্ষা দেওয়া উচিৎ।সেই সুবাদে এখন আপনি আমার ওয়ার্ক আউট ট্রেইনার না, প্রেমের ট্রেইনার হবেন।”
কথাটা বলে সাদাতের ওষ্ঠের কাছাকাছি নিজের ওষ্ঠযুগল এগিয়ে নেয় ঐশী।দুচোখ বন্ধ করে তড়িৎ পিছিয়ে যায় সাদাত।মুখ দিয়ে অস্পষ্ট করে বলে,
“আস্তাগফিরুল্লাহ!দিনের বেলায় আমার সম্মান খোয়াবে নাকি তুমি!”
সাদাতের অভিব্যক্তিতে মুখ টিপে হাসে ঐশী।সে আবারও এগিয়ে যেতে উদ্যত হয়।কিন্তু তার পূর্বেই তাকে দুই হাতে পাজা কোলে তুলে ট্রেড মিলের উপর দাঁড় করিয়ে সুইচ চেপে যন্ত্রটা চালু করে দেয়।আকষ্মিক ঘটনায় ভড়কে যায় ঐশী।সে পরিকল্পনা করলো কি আর হলো কি।চলন্ত যন্ত্রের উপর ভারসাম্য রক্ষার্থে পা চালাতে বাধ্য হয় সে।সুইচ বন্ধ করে যে নেমে পড়বে তার উপায়ও নেই।সাদাত তার বলিষ্ঠ হাত দিয়ে সুইচ ঢেকে রেখেছে।ঐশীর দিকে তাকিয়ে ধাতস্থ কণ্ঠে বলে,
“একজন প্রকৃত শিক্ষক জানে কখন কোন ট্রেইনিং দিতে হয়।আমি ঘড়ি ধরে রেখেছি।এখন ত্রিশ মিনিট হাঁটার বদলে দৌড়াবে তুমি।আমাকে হেনস্তা করার পরিকল্পনার শাস্তি এটা।”
কথাটা বলে যন্ত্রের গতি বাড়িয়ে দেয় সাদাত।ভারসাম্য রক্ষার্থে দৌড়ানো শুরু করে ঐশী।লজ্জায়, অপমানে কান্না পাচ্ছে তার।সে এগিয়ে গেলো,আর সাদাত তাকে এভাবে প্রত্যাখান করলো?বিষয়টা তার কোমল মস্তিষ্ক নিতে পারলো না।জেদ চাপলো মনে।টানা আধা ঘণ্টা দৌড়ালো সে।ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে পড়লেও তার জেদ ভেঙে পড়েনি।সাদাত বার বার মানা করলেও জেদের বসে ক্লোই টিং এর ফুল বডি ফ্যাট বার্নিং ওয়ার্ক আউট করলো সে।মনে চাপা জেদের কাছে এই কষ্টদায়ক ব্যায়াম তাকে হার মানাতে ব্যর্থ হলো।মেয়েটির মনের জেদ দেখে অসহায়ের ন্যায় তাকিয়ে রইলো সাদাত।এতো জেদী মেয়েটা?কোনো কথাই তার শুনতে চাইছে না।ধরতে গেলেও কেমন ছ্যাৎ করে উঠছে।শশুর বাড়িতে নিজের সন্মান খোয়ানোর ভয়ে দমে গেলো সাদাত।নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে।সেদিকে যেনো তোয়াক্কাই করলো না মেয়েটি।
_____
ব্যায়াম শেষে স্ট্রেচিং করার সময় মাগরিবের আযান ভেসে আসলে ক্ষ্যান্ত হলো ঐশী।ওয়াশরুমে গিয়ে ঘর্মাক্ত শরীরের ঘামে ভেজা পোশাকটা বদলে অন্য আরেক সেট জামা পড়লো সে।ওজু করে এসে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলো।তার নামাযের সঙ্গী হলো সাদাত।মাগরিব নামায শেষের ওজীফাটা একটু দীর্ঘ হয়।সেই দীর্ঘ ওজীফা শেষ করে মোনাজাত ধরলো সে।স্ত্রীর সুস্থতার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করলো।তারপর ইতস্তত করে এগিয়ে গেলো কিচেনের দিকে।
কিচেনে দাঁড়িয়ে চপ বোর্ড থেকে সদ্য কেটে রাখা আধা পাকা পেঁপের টুকরো গুলো বাটিতে উঠাচ্ছিলেন সালেহা খাঁনম।মেয়ের জামাইকে এগিয়ে আসতে দেখে লজ্জিত হলেন তিনি।অস্বস্তি মিশ্রিত কণ্ঠে বললেন,
“তুমি আসতে গেলে কেনো বাবা?আমিই সায়াহ্ন বেলার নাস্তা নিয়ে যাচ্ছিলাম।নামায পড়তে গিয়ে আজ একটু দেরি হয়ে গেলো।”
“ভাবলাম আপনার কষ্ট হয়ে যাচ্ছে মা।তাই!”
কথাটা বলে থেমে গেলো সাদাত।শাশুড়ীর সাথে কাজে সাহায্য করাটাও অস্বস্তিকর।এদিকে ঐশীর নাস্তার টাইম পেরিয়ে যাচ্ছে জন্য বাধ্য হয়ে কিচেনে এসেছে সে।সাদাতকে ঘরে পাঠিয়ে দিতে সালেহা খাঁনম বললেন,
“আমার একটুও কষ্ট হচ্ছে না বাবা।সবটা তৈরি হয়ে গিয়েছে।তুমি ঘরে যাও আমি সব পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
কথাটা বলে তুষারকে ডাক দিলেন তিনি।তুষার এসে ঐশীর জন্য আলাদা পিরিচ এ রাখা ৩০গ্রাম সিদ্ধ ছোলা সাথে মাঝারি সাইজের অর্ধেকটা কেটে রাখা পেঁপের বাটি ট্রেতে তুলে নিলো।পাশে স্থান দিলো সাদাতের জন্য এক কাপ লাল চা ও আলাদা আলাদা পিরিচ এ পেঁপে,বিস্কিট,পাকোড়া ও কাঁঠালের বিজ এর হালুয়া।এসব নিয়ে ঐশীদের ঘরে গেলো তুষার।নাশতাগুলো পরিবেশন করে বেরিয়ে আসার সময় সাদাত বললো,
“বিস্কিট,পাকোড়া ও হালুয়ার পিরিচটা ফিরিয়ে নিয়ে যাও।”
সাদাতের এক বাক্যের কথাটার বিপরীতে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো তুষার।
“কেনো দুলাভাই?এসব তো খেতে অনেক মজা হয়েছে।”
“কিন্তু আমার এখন এসব খেতে ইচ্ছে করছে না।তুমি খাও।”
কথাটা বলে জোরপূর্বক তুষারের কাছে পিরিচগুলো স্থানান্তরিত করে দিলো সাদাত।আড়চোখে ব্যাপারটা লক্ষ করে গেলো ঐশী।খানিকটা বিষ্মিতও হলো সে।কাঁঠালের হালুয়া ও আলুর পাকোড়া ভীষণ পছন্দ সাদাতের।এটা সে বেশ ভালোই জানে।কিন্তু এই মুহুর্তে এসব ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো যুক্তি খুঁজে পেলো না সে।তার বিষ্মিত মস্তিষ্কে রাগটা হালকা হয়ে এলো।দ্বিধাভরে সে জিজ্ঞেস করলো,
“এসব তো আপনার পছন্দের খাবার।ফিরিয়ে দিলেন কেনো?”
“এসব তো তোমারও পছন্দের খাবার।অথচ তুমি খেতে পারছো না।তোমাকে এসব থেকে বঞ্চিত করে আমি এসব খাবো ভাবলে কি করে?”
নির্লিপ্ত কণ্ঠে জবাব তার।সাদাতের কথার ব্যাখ্যায় আশ্চর্য হলো ঐশী।শুধুমাত্র সে খেতে পারবে না বলে লোকটা নিজেকে এসব থেকে দূরে রাখছে?বিষ্মিত হয়ে সে বললো,
“আমার হিসেব আর আপনার হিসেব এক হলো?আমার এসব খাওয়া বারণ,আপনার তো নয়।তবে খাবেন না কেনো?আমি এক্ষুনি এনে দিচ্ছি। সবটা খাবেন আপনি।”
কথাটা বলে উঠতে নিতেই ঐশীর এক হাত টেনে ধরে সাদাত।তাকে পাশে বসিয়ে বলে,
“আমার এক অর্ধাংশ যেখানে বঞ্চিত বাকি অর্ধাংশ সেখানে সমৃদ্ধ হতে পারবে না।যতদিন তুমি লোভনীয় খাবারের লোভ সামলে কষ্ট করে চলবে,সেই চলার পথের সঙ্গী আমি হবো।যদি তোমার থেকে নিজেকে আলাদা করে রাখি তবে এক হবো কি করে বলো?”
“যতোই চেষ্টা করেন,চাইলেও কখনো এক হতে পারবেন না।আপনার আর আমার যোগফলে যেমন আমরা হবে।তেমনি আপনি এক আর আমি একের যোগফল দুই হবে।তাহলে এক হলাম কি করে বলেন?তাই এসব আবেগ রেখে এনে দিচ্ছি খেয়ে নেন।”
সাদাতের কথার বিপরীতে ত্যাড়া কণ্ঠে জবাব দেয় ঐশী।উদ্দেশ্য লোকটাকে খাবার গুলো খাওয়ানো।কিন্তু সে তো জানে না তার নাছোড়বান্দা জামাইকে কথার দ্বারাও হারানো দায়।ঐশীর দিকে সুক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে সাদাত প্রতিউত্তরে বলে,
“তোমার দৃষ্টিতে একে একে দুই হলেও আমার দৃষ্টিতে একে একে এক’ই হয়।”
বিষ্মিত হয় ঐশী।
“কিভাবে?”
জবাবে দৃঢ় কণ্ঠে সাদাত বলে,
“এক যোগ এক এই ইকুয়েশনটা একটা মানুষের সাথে অন্য সব সম্পর্কের জন্য বরাদ্দ হতে পারলেও স্বামী স্ত্রীর জন্য এক যোগ এক ইকুয়েশন ভুল।এখানে একজনের একের সাথে অপর একের গুণ হয়।তাই দুজনের দৃষ্টিভঙ্গি ও দেহ ভিন্ন হলেও দুজন মিলে এক সত্ত্বাই হয়।”
সাদাতের কথার মাঝে আবারও ভিন্নধর্মী চিন্তার প্রকাশ পেলো ঐশী।যা হারতে বাধ্য করলো তাকে।সাথে বিমোহিতও হলো সে।লোকটার প্রতি ভালোলাগার রেশ আরও বৃদ্ধি পেলো।এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকলো সে সাদাতের দিকে।তার মন্ত্রমুগ্ধ কথার রেশ ফুটে রয়েছে ঐশীর ঠোঁটে।মনের সব রাগ কখন পালিয়ে গিয়েছে বুঝতেই পারলো না সে।বিমুগ্ধ কণ্ঠে সে বললো,
“আপনি সত্যি অন্যপুরুষ।”
হালকা হেসে সাদাত বললো,
“তাই?”
“হুম।”
নিষ্কম্প গলায় জবাব তার।আরও একটু হাসলো সাদাত।লম্বা শ্বাস টেনে বললো,
“তাহলে এই অন্যপুরুষের পাওনাটা এখন মিটিয়ে দেও।”
বিষ্মিত হলো ঐশী।
“আপনার আবার কিসের পাওনা?”
“বারে!এইযে এতো কষ্ট করে নিজেকে সংযত করে ওয়ার্ক আউট করালাম তোমাকে, সন্ধ্যার নাশতা করালাম,আবার মুগ্ধও করলাম।এসব কি ফ্রী পাবে নাকি?আমার একটা পারিশ্রমিক আছে না?”
“কি পারিশ্রমিক লাগবে আপনার?”
সরু চোখে তাকিয়ে প্রশ্নটা করলো ঐশী।সাদাতের ঠোঁট প্রশস্ত হলো।ঠোঁট কামড়ে সে বললো,
“সেটা না হয় এখনই দেখো।”
কথাটা বলে ঐশীর মতো করে কুটিল হেসে দরজা লাগিয়ে দিলো সে।এক পা এক পা করে ঐশীর দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই তখনের ঘটনাটা মাথায় এসে হানা দিলো ঐশীর।আবারও রাগ চাপলো মনে।কপট রাগ দেখিয়ে সে বললো,
“আমি কাওকে এসব করতে বলিনি তাই পারিশ্রমিক ও দিতে পারবো না।”
“কিন্তু এতোটা বোকাও নই আমি যে কারো কাজ করে দিয়ে পেমেন্ট না করলে তাকে ছেড়ে দিবো। নিজের পাওনা আদায় করে নিবো আমি।বিশ্বাস করো তখন নিজেকে সামলে নিতে খুব কষ্ট হয়েছে আমার।সেই কষ্টটা এখন পুষিয়ে নেওয়ার সময় হয়েছে।”
কথাটা বলে এক হাতে ঐশীকে কাছে টেনে নিলো সে।
“খবরদার।”
বাধা দিয়ে ঐশী ছোটার জন্য ছটফট করলেও শক্ত হাতের বাঁধন থেকে মুক্ত হতে পারলো না।উল্টো তার ওষ্ঠের বাঁধনে আটকা পড়ে গেলো।ডুব দিলো গভীর স্পর্শে।
চলবে