#স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি
#পার্টঃ০৭
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
৩৮.
অদ্রি আর উচ্ছ্বাসকে দেখে অবাক হয়ে যায় বাড়ি সদ্য লোক। অদ্রির চোখে পানি। উচ্ছ্বাসের গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। অদ্রি গিয়ে জড়িয়ে ধরে আনেয়া নীড়কে। আর ইচ্ছে! সে দৌঁড়ে যায় তার ভাইয়ের কাছে। উচ্ছ্বাসের গাল ধরে অপলক দৃষ্টিতে উচ্ছ্বাসের দিকে তাকাতেই জড়িয়ে ধরে উচ্ছ্বাসকে। এ যেনো এক মিলন মেলা। উচ্ছ্বাস ইচ্ছেকে ছেড়ে দিয়ে ধীর পায়ে বাবার সামনে যায়। গিয়ে পায়ে ধরে ফেলে। কান্না করতে করতে বললো,
‘বাবা…বাবাগো। তোমার এই অবুঝ ছেলেটাকে ক্ষমা করে দাও বাবা।
‘নিহাল চৌধুরীর চোখে পানি৷ নিহাল চৌধুরী ছেলেকে নিচ থেকে উঠিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
আর এই দিকে আদ্রের মুখে এক অসীম হাসি৷ বিজয়ের হাসি। সে পেরেছে পরিবার গুলোর মুখে হাসি আনতে।
৩৯.
‘ওইসময় ভাইয়ারা এসেছিলো বলে আমি কিছু বলিনি। এইগুলো কি করেছো বাবা?
‘নিহাল চৌধুরীর রুমে এসে কথাগুলো এক নিশ্বাসে বললো ইচ্ছে। নিহাল চৌধুরী চায়ের কাপটা..সাইড কেনিটে রেখে বললো,
‘কি করেছি?
‘আমাকে রিং পড়ানো হয়েছে কেনো?
‘এইটা হওয়ার ছিলো তাই।
‘মানে?
‘মানে তোমার আর আদ্রের বিয়ে সেই ছোট থেকেই ঠিক করা। তোমার মা বেঁচে থাকতেই।
‘বাবা..
‘চিৎকার করে লাভ নেই ইচ্ছে এইটাই সত্যি।
‘আমার পক্ষে আদ্র ভাইকে সারাজীবন মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। আমি একজনকে ভালোবাসি বাবা।
‘কাব্য চৌধুরীকে তাইতো?
‘তুমি কি করে জানলে বাবা!
‘নিহাল চৌধুরী শব্দ করে একটু হেসে বললেন,
“বাবা হই আমি তোমার। তাই মেয়ের খুঁজতো রাখতেই হবে। তবে ইচ্ছে আমি একটা কথা তোমাকে আফ সাফ বলে দিচ্ছি এই ছেলের সঙ্গ তুমি ত্যাগ করো। ছেলেটা মোটেও ভালো নয়। ইচ্ছে…চুপচাপ তখন রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
৪০.
উচ্ছ্বাস ফোনে কথা বলছিলো অদ্রির সাথে। অদ্রিকে নিয়ে গেছে আনেয়া নীড়। কারণ অদ্রি আর উচ্ছ্বাসের অনুষ্ঠান করে আবার বিয়ে হবে। এইটা কারোর নয় আদ্রের চাওয়া।
‘আমার অদ্রিজার আম্মু কি করে?
‘ভালো লাগছেনা উচ্ছ্বাস।
‘কেনো হুম?
‘তোমাকে ছাড়া একা লাগছে ভীষণ।
‘তাইনা?
‘হুম। জানোতো.. তোমার বুকে ছাড়া এমনিতে আমার ঘুম আসেনা।
‘আচ্ছা আমার অদ্রিজার আম্মুর কাছে কাল আমি চলে আসবো হ্যাপি? এখন যাওতো…গিয়ে শুয়ে পড়ো। উচ্ছ্বাস কল কাটতেই…একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল এলো। কে ধরতেই ওপাশ থেকে পুরুষালী একটা কন্ঠে শুনতে পেলো,
‘নিজের বোনকে ভালো অবস্থায় দেখতে চাইলে তাড়াতাড়ি ওর রুমে যাও।
‘কে? কে আপনি?
” যেইটা আগে বলছি ওইটা করো।
‘উচ্ছ্বাস লাইন না কেটেই তাড়াতাড়ি ইচ্ছের রুমে যায়।
৪১.
ঠাসস…
ইচ্ছে গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে৷ উচ্ছ্বাস রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে ইচ্ছের পানে। ইচ্ছে কেঁদেই যাচ্ছে এক নাগাড়ে।
‘তুই এইটা কি করতে যাচ্ছিলি জানিস?
‘হে জানি। বিষ খেতে যাচ্ছিলাম৷ কারণ আমি কাব্যকে ছাড়া বাঁচতে চায়না।
‘ইচ্ছে….
‘ঠিকি বলছি ভাইয়া। আদ্র ভাইকে কখনো আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। জোর করে সব হয় তবে ভালোবাসা পাওয়া যায়না।
‘উচ্ছ্বাস মনে মনে কিছু একটা ভেবে, ইচ্ছের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, ‘বনু..তুই ছাড়া আমাদের আছে কে বলতো? আজকে তোর একটা কিছু হয়ে গেলে বাবার কি হতো ভেবে দেখেছিস? আচ্ছা তুই বরং বিয়ের আগে কাব্যকে নিয়ে পালিয়ে যাস।
‘উচ্ছ্বাসের কথা শুনে ইচ্ছে অবাক। চুখ গুলো এখনে বিষ্ময়কর নিয়ে তাকিয়ে আছে উচ্ছ্বাসের দিকে।
‘কি বললে!
‘হুম ঠিকি বলেছি। তুই বরং ঘুমা। আর হ্যাঁ ভুলেও খারাপ কিছু করবিনা।
ইচ্ছের রুম থেকে বের হতেই উচ্ছাস বেলকনিতে এসে নিচের দিকে তাকায়। আদ্রও বেলকনির দিকেই তাকিয়ে আছে৷ উচ্ছ্বাসকে দেখেই মুচকি হেসে দেয় আদ্র। উচ্ছ্বাস পকেট থেকে ফোনটা বের করে কানে নিয়ে মুচকি হেসে বললো,
‘আদ্র এতো রাতেও আমার বোনটার দিকে নজর রাখছিস? এতো ভালোবাসলে…জোর করে তুলে নিয়ে যাচ্ছিস না কেনো?
‘আদ্র নিচ থেকে বেলকনির দিকে তাকিয়ে কানের ব্লুটুথ নিয়ে..কালো গাড়িটায় হেলান দিয়ে বললো,
‘কি করবো বল..ইচ্ছে পরী যে আমার জান পাখি।আর বাকি রইলো জোর করার কথা..। আমি চায়না যে ওর থেকে জোর করে ভালোবাসা আদায় করি।
৪২.
আদ্র…রুমে ফিরতেই..সোফায় হাত পা ছেড়ে বসে..ব্লেজার খুলে শার্টের দুটো বোতাম খোলা রেখে কলারটা পেছনে নেয় একটু। তারপর মাথা রেখে দেয় সোফায়। এক হাত দিয়ে কপাল চাপড়ে ধরে সে। চোখ বুঝে ভাবে বিবর্ষ সেই দৃশ্য। ভাগ্যিস..সে ওইদিন গিয়ে ইচ্ছের রুমে ক্যামেরা সেট করে এসেছিলো৷ নয়তো আজ…এইসব ভাবতেই রুহ কেঁপে উঠে আদ্রের।
৪৩.
নির্জন নগরীতে বাড়ছে মানুষের আনাগোনা। সূর্য হেলে উঠেছে নতুন সাজে৷ বাহিরে পাখিরা করছে কিচিমিচি৷ চোখে চকচকে..রোদ পড়তেই আড়মোড় ভেঙে ঘুম থেকে ছোট ছোট চোখ খুলে তাকায় আদ্র। আদ্র চোখ খুলতেই ঝাপসা চোখে..ইচ্ছেকে দেখতে পায়৷ ইচ্ছে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আদ্রকে দেখে হাসছে৷ আদ্র বিড়বিড় করে ঘুম ঘুম চোখে বললো,
‘ইচ্ছে পরী ভালোবাসি তোমায়। ভীষণ ভালোবাসি। আমার এই #স্নিগ্ধ_প্রেমের_অনুভূতি তুমি কেনো বুঝোনা বলোতো? আদ্রের এইসব বিড়বিড় করে কথা বলাগুলো কোনোটাই ইচ্ছের কান এড়ায়নি। ইচ্ছে সাথে সাথে হাসি বন্ধ করে দেয়। আদ্র বললো,
‘আমার স্বপ্নে এসেও…আমার প্রতি অনুভূতিহীন দেখাচ্ছো ইচ্ছে পরী?
হঠাৎ আদ্র কি একটা ভেবে যেনো ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে। সত্যি সত্যি ইচ্ছে তার সামনে!
৪৪.
অদ্রি গোসল থেকে বের হতেই দেখলো বিছানার শুয়ে কেউ একজন ফোন টিপছে। মুখটা বুঝা যাচ্ছেনা। মুখটা দেখতে একটু সামনে যায় সে। সামনে যেতেই অবাক!।
‘উচ্ছ্বাস তুমি!
‘ওমা অদ্রিজার আম্মু, আমার জায়গায় অন্য কাউকে আশা করেছিলে বুঝি?
‘না মানে আমি জানতাম আজ তুমি আসবে। তবে সকাল সকাল চলে আসবে তাতো জানতাম না।
‘আরে বলোনা..কাল রাত থেকেই তোমাকে ছাড়া ভালো লাগছিলোনা৷ তো ভাবলাম সকাল সকালই চলে আসি৷ তাই ইচ্ছে আর আমি চলে আসলাম।
‘তাইনা?
‘উচ্ছ্বাস বিছানা থেকে উঠে…যেই অদ্রিকে জড়িয়ে ধরতে যাবে হঠাৎ ‘অদ্রিকে ডাকতে ডাকতে ইচ্ছে রুমে চলে আসে।
ইচ্ছে তখন সাথে সাথে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বললো,
‘সরি সরি ভুল সময়ে চলে এসেছি। আম আম্ আমি কিছু দেখিনি।
‘অদ্রি লজ্জায় নুইয়ে গেলো। আর উচ্ছ্বাস বললো,
‘তবে রে.. এই কোথায় পালাচ্ছিস? দাঁড়া দাঁড়া বলছি।
৪৫.
রুপ তুমি যাবে? আদ্র ভাইয়াদের বাসায়।
‘কেনো?
‘ইচ্ছেরা মনে হয় আজ সেইখানে গিয়েছে তাই।
‘যেতে মন চাইছে?
‘হে। ভীষণ।
“চলো তাহলে…
‘কলেজ মাঠে একে অপরের হাত ধরে ধরে যাচ্ছিলো রুপ আর অয়নি। হঠাৎ রুপের ফোনে একটা কল আসে। রুপ নাম্বারটা দেখেই অবাক হয়ে যায়।
‘এই রুপ স্টেচু হয়ে আছো কেনো? কে কল করেছে?
‘ইনশিয়া জান্নাত।
৪৬.
‘ খাবার টেবিলে সবাই খেতে বসেছে। হঠাৎ ইচ্ছে খেয়াল করলো আদ্র কোথাও নেই৷ উচ্ছ্বাস খেয়াল করলো ইচ্ছে চারিদিকে তাকিয়ে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। উচ্ছ্বাস গলাটা কাশি দিয়ে ঝেড়ে বললো,
‘অদ্রি…আদ্রকে কোথাও দেখছিনা যে..?
‘উক্ত কথাটি আঁড়চোখে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে বললো উচ্ছ্বাস।
‘ইচ্ছে উচ্ছ্বাসের কন্ঠ শুনেই চট করে খাবার খেতে মন দিলো। যেনো তার কিছু যায় আসেনা।
‘আদ্র ভাইয়া…একটা কাজে বাইরে গেছে।
‘কি কাজ? আমিতো আদ্রকে দেখলামইনা।
‘দেখলাম তো তাড়াহুড়ো করে কোথায় যেনো গেলো।
হঠাৎ কলিং বেল বাজতেই..অদ্রি উঠতে যাবে..এমন সময় মিসেস আনেয়া নীড় বললো,
‘থাক তুই বস। আমি খুলছি।
‘মিসেস আনেয়া নীড় দরজা খুলতেই অবাক।
চলবে….