#স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি
#পার্টঃ০৫
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
২৬.
ইনশিয়া…
‘পেছনে কারো কন্ঠে নিজের নাম শুনে চমকে যায় ইনশিয়া জান্নাত। তাড়াতাড়ি মুখ ঢেকে পিছনে তাকায় সে। পেছনে তাকাতেই ছলছল চোখে মুচকি হাসে ইনশিয়া।
“কেমন আছেন আদ্র ভাইয়া।
‘আদ্র ইনশিয়ার চোখের পানি টা হাত দিয়ে মুছে বললো,
‘ভালো আছি বোন। তুমি ভালো আছো?
‘ভাইয়া ভালোতো আমিই থাকবো। খারাপতো শুধু থাকবে কাব্য চৌধুরী।
” মানে?
“কিছুদিন আগে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে এসেছিলো তাদের ফ্রেন্ড নাকি কাব্যের ফাঁদে পা দিয়েছে। তারা আমার কাছে সাহায্য চেয়েছে। আর আমি আমার দিক দিয়ে যতোটা সম্ভব ততোটাই সাহায্য করবো ভাইয়া।
‘আদ্র কিছুক্ষণ কিছু একটা ভেবে পকেট থেকে ফোনটা বের করে, ইনশিয়ার সামনে ধরে বললো,
” এই ছেলেমেয়েগুলো ইনশিয়া?
‘হে হে এরাই। এদেরকে তুমি চিনো আদ্র ভাই?
‘আদ্র ভাবশেলীন হয়ে মনে মনে বললো, “অয়নি আর রুপ!
২৭.
অয়নি কলেজে যেতেই দেখলো রুপ আর অয়নি একটা গাছের নিচে বসে কথা বলছে। অয়নি ওইদিক দিয়ে যেতেই… সামনে আদ্র এসে পড়ে। আদ্র দুই হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হেসে বললো,
‘ইচ্ছে পরী…তুমি কি জানো? খুব তাড়াতাড়ি তুমি আমার হতে যাচ্ছো?
‘এইসব কি যাতা বলছেন আদ্র ভাই?
‘আজকে তোমাদের বাসায় আমরা সবাই আসছি।
” ইচ্ছে অবাক হয়ে গেলো। কারণ উচ্ছ্বাস অদ্রিতাকে নিয়ে চলে যাওয়ার পর ফুপ্পিদের বাসার কেউ কখনো তাদের বাসায় আসেনি। আর তারাও যায়নি।
‘ইচ্ছে পরী..
‘আদ্রের ডাকে হুঁশ ফিরে ইচ্ছের।
‘আদ্র ভাই মজা করছেন?
‘আ’ম সিরিয়াস ইচ্ছে পরী।
‘এইটা কিভাবে সম্ভব হয়েছে? না মানে কিভাবে! বাবা…
‘ইচ্ছেকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আদ্র বললো,
‘আমরা আসলেই বুঝতে পারবা। আর আজ খুব বড় একটা চমক আছে সবার জন্য।
ইচ্ছে ভ্রু কুঁচকে বললো, “কি চমক?
‘চমকতো চমক ওই হয় ইচ্ছে পরী। জাস্ট ওয়েট এন্ড সি…।
অয়নি আদ্রের কথার মাঝে হঠাৎ গলা একটু কাশি কাশি ভাব দিয়ে অয়নি বললো,
‘ডিস্টার্ব করলাম নাতো?
‘তুই না ওখানে ছিলি? এইখানে কখন আসলি?
‘তুই আদ্র ভাইয়ার সাথে কথা বলাই এতোটাই মগ্ন ছিলি যে দেখতে পাসনি।
” হ্যাঁ ঠিক বলেছো অয়নি।
‘রুপের কথায় সবাই পেছনে তাকায়। রুপের অবস্থা নাজেহাল। রুপের এই অবস্থা দেখো সবাই কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দেয়।
‘কিরে রুপ অয়নি কি আজকে বেশি ডোজ দিয়ে ফেলছে?
‘আদ্র তুই ও?
‘না মানে তোর শার্টে গালে কিছু একটা ঠোঁট ঠোঁট ভাব দেখছিতো তাই… অয়নি লজ্জায় পড়ে যায় ব্যাপারটায়।
২৮.
অদ্রি রান্নাঘরে রান্না করছিলো। উচ্ছ্বাস গোসল দিয়ে বের হয়ে অদ্রির কাছে গেলো। অদ্রিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘আমার অদ্রিজার আম্মুটা কি রান্না করছে এখন?
“ইশশ উচ্ছ্বাস এখনোতো বেবি কনসিভই হলাম না এর আগেই মেয়ের নাম নিয়ে ডাকা শুরু করলে?
‘হয়নি তে কি হয়েছে হবেতো।
” সে না হয় হবে। যাও টেবিলে গিয়ে বসো আমি খাবার আনছি।
‘হঠাৎ ফোনের রিংটোন বাজতেই.. উচ্ছ্বাস বিরক্ত নিয়ে বললো, ‘ওফ এখন আবার কে কল দিলো? আমার বউটার সাথে একটু সময়ও কাটাতে পারিনা শান্তিতে। অদ্রি ফিক করে হেসে দেয় উচ্ছ্বাসের বলার ধরণ দেখে। উচ্ছ্বাস গিয়ে কল ধরতেই যা শুনলো তাতে সপ্তম আকাশে চলে গেছে সে বিষ্ময়ে। উচ্ছ্বাস ফোনটা কেটে কান্নায় ফ্লোরে বসে পড়ে। রান্নাঘর থেকে অদ্রি রুমে আসতেই চমকে যায়। যে উচ্ছ্বাসকে কখনো কাঁদতে দেখেনি সে আজ কাঁদছে!
২৯.
ফিমা… সারা বাড়ী এইভাবে সাজাচ্ছিস কেনো?
‘ফিমা একটু লজ্জা লজ্জা ভাব লইয়া বললো,
‘ওমা আফা আমনে মনে হয় জানেন না যে কেরে বাসা সাজগুজ করতাছি।
‘ইচ্ছে একটা ধমক দিয়ে বললো, “হপ..বল আজকে বাসায় কি কিছু আছে?
‘ফিমা একটু চুপসে ভাবে বললো, ” হো আফা…আমনেরে…’এই ফিমা তুই এইখানে কেনো? যা আশাকে রান্নার কাজে সহায়তা কর।
‘ফিমা পুরো কথা শেষ না করতেই নিহাল চৌধুরী ফিমাকে ধমক দিয়ে রান্নাঘরে পাঠিয়ে দেয়। ইচ্ছে বললো,
“বাবা আজ বাসায় কিছু আছে?
” হুম। আছে। পরে বলবো মা। তুই বরং তাড়াতাড়ি গোসল সেড়ে একটু পরিপাটি হয়ে থাক।
‘আমি কেনো পরিপাটি হয়ে থাকবো বাবা?
‘আরে বোকা মেয়ে বাড়িতে মেহমান আসলে কি যেমন তেমন ভাবে থাকা যায়?
‘ইচ্ছে একটু ভেবে বললো,
‘হুম তাতো ঠিকি। আচ্ছা আমি বরং যায়।
‘ইচ্ছে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। আর নিহাল চৌধুরী ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো,
“তোর মা মারা যাওয়ার আগে যা চেয়েছিলো তাই হচ্ছেরে মা।
৩০.
‘আদ্র বাবা দেখতো মাকে কোন শাড়ীটা পড়লে মানাবে..
‘আদ্র পিসিতে কাজ করছিলো। মায়ের কথায় মায়ের দিকে তাকালো। অনেকদিন পর তার মায়ের চোখে মুখে খুশির ছাপ সে দেখতে পাচ্ছে। আদ্র পিসি বন্ধ করে..মায়ের সামনে গেলো। পেছন থেকে তার মাকে জড়িয়ে ধরে আয়নায় তাকিয়ে হেসে বললো, ” মা তোমাকে সব কিছুতেই ভীষণ ভালো লাগবে৷
‘ইশ তাও তুই বলনারে বাবা।
‘আদ্র মাকে ছেড়ে সবগুলো শাড়ী দেখতে লাগলো বিছানায় বসে। বললো,মা..তুমি বরং ব্লু কালার শাড়ীটা পড়ো।
‘মিসেস আনেয়া নীড় খুশিতে গদগদ হয়ে ছেলের রুম থেকে চলে গেলেন। মা বের হতেই আদ্র ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,
‘বাবাকে ঠিক করতে অনেক সময় লেগেছে মা। কিন্তু আমি জানতাম না..মামার জন্য তোমার মন সবসময় এতোটা অখুশি থাকতো। যাকগে..মাতো মায়ের টা চুজ করে নিলো। আমি এখন কি পড়বো? আচ্ছা আমি বরং রুপকে একটা কল দেয়। এইটা ভাবতেই আদ্র বিছানায় পড়ে থাকা ফোনটা হাতে নিলো। তড়িঘড়ি করে কল লাগালো রুপের নাম্বারে।
৩১.
ইশ…এই অয়নিটা যে কেনো…কল দিয়ে কেনো বিকেলে ঘুরতে যেতে বললো৷ তাও কি পড়ে! নীল শাড়ী পড়ে। আজব। আমি কি শাড়ী পড়তে পারি নাকি! তাও পড়তে হবে মহারাণীর জন্য।
‘খুব বিরক্তি নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই নিজের সাথে কথা গুলো বললো ইচ্ছে।
অনেক যুদ্ধের পড় ইচ্ছের শাড়ী পড়া শেষ হতেই নিহাল চৌধুরী মেয়ের রুমে প্রবেশ করেন। নিহাল চৌধুরী গলাটা একটু কাশি দিয়ে ঝেড়ে বললো, “বাহ মা তুই আজ হঠাৎ শাড়ী পড়লি যে?
ইচ্ছে বিরক্ত নিয়ে বললো, “আর বলোনা বাবা। অয়নি নাকি বিকেলে ঘুরতে যাবে। কিন্তু শাড়ী পড়েই নাকি আমায় যেতে হবে। সে শাড়ী পড়বে কিনা! তাই ভাবলাম..মেহমানও আসবে আর বেরও হবো। আর তাছাড়া বিকেলতো প্রায় হয়ে গেলো পড়ে দেখা যাবে সময় নেই শাড়ী পড়ার তাই পড়ে ফেলেছি আগে।
নিহাল চৌধুরী মনে মনে হাসলেন। আফটার অল অয়নিকেতো তিনিই বলেছেন ইচ্ছেকে ভুলিয়ে বালিয়ে শাড়ী পড়াতে।
৩২.
‘ভাইয়া…আমার মুখে ভীষণ জ্বালা পোড়া করছে। আমি আর পারছিনা…প্লিজ ভাইয়া তাড়াতাড়ি আসুন’
‘ফোনের ওপাশ থেকে কারো কন্ঠে এই কথাটা শুনে..তড়িঘড়ি করে আদ্র ফোনটা কেটে মাকে বললো,
‘মা তুমি আর বাবা গাড়িতে করে চলে যাও আমি সময়মতো চলে আসবো।
‘তুই কোথায় যাবি?
‘আদ্র কোনো উত্তর না দিয়ে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে পড়ে।
‘আদ্র শুন..কোথায় যাচ্ছিস বাবা?
আদ্র যতোটা সম্ভব গাড়ি চালিয়ে…যথা জায়গায় গিয়ে পৌঁছাতেই চিৎকার করে বললো, ‘ইনশিয়া…ইনশিয়া…
চলবে….