#স্নিগ্ধ পরশ
#পর্ব_১২ ও ১৩
#তানজিম_তানাজ
রাতের খাবারের পর সবাই কিছু সময় আড্ডা যে যার রুমে চলে এসেছে। সবাই ক্লান্ত। আজকে আর কেউ বের হয়নি।কালকে সকাল সকাল বের হয়ে আশেপাশে ঘুরবে।সিরাত রুমে ভাবতে লাগলো একবার তার চাচাতো বোন নিশিকে ফোন দিবে।সকালে নিশি ফোন দিছিলো যখন শুনলো তারা ট্যুরে যাচ্ছে তখন বলেছিলো পৌঁছে জানাতে।সিরাত তা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো।ফোন হতে নিয়ে কল দিতেই দেখলো ফোনের ব্যালেন্স শেষ। এখন কী করবে সে।আহনাফ এত সময় বারান্দায় কারো সাথে কথা বলতে ছিলো।আহনাফ রুমে আসতেই সিরাত আহনাফের দিকে তাকালো।কিছু বলবে বলবে এমন ভাব তার।বলতে নিয়েও বলতে পারচ্ছে না সে।আহনাফ ভ্রু কুচকে সিরাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
“কিছু বলবে!”
আহনাফ জিঙ্গেস করতেই যেন সিরাত বলার স্বস্থি পেলো।আমতা আমতা করে বললো,
“আসলে আমার ফোনে ব্যালেন্স নেই। আপনার ফোনটা একটু দেওয়া যাবে!”
আহনাফ সিরাতের কাছে এসে হাত বাড়িয়ে ফোন দিলো।সিরাত ফোন হাতে নিয়ে তারপর কল দিলো।সিরাত কথা বলা শেষ করে খেয়াল করলো আহনাফ রুমে নেই। “এতো রাতে উনি কই গেলেন!”ভেবে চারপাশে চোখবুলাতেই দেখলো আহনাফ রুমে প্রবেশ করছে।
আহনাফ আসতেই ফোন এগিয়ে দিলো সিরাত।আহনাফ ফোন হাতে নিয়ে বললো,
” নামো”
সিরাত হতভম্ব হয়ে গেলো।আহনাফ পুনরায় বললো,
“নামো।আমি ঘুমাবো।”
সিরাত রাগ দেখিয়ে বললো,”মানে!আর আমি কোথায় ঘুমাবো!”
আহনাফ সিরাতের হাত ধরে টেনে তুললো।নিজের বিছানায় গিয়ে শুয়ে বললো,
“তুমি কোথায় ঘুমাবে তা আমি কী জানি!”
কথাটা শুনে সিরাত কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
“আমাকে আপনি নিয়ে এসেছেন।তাই আমার কথা আপনাকে ভাবতে হবে।সারারাত কী আমি এখন না ঘুমিয়ে কাটাবো!”
আহনাফ উঠে বসলো।নির্বিকার কন্ঠে বললো,
“তুমি সারারাত ঘুমাবে নাকি জেগে থাকবে তা সম্পূর্ণ তোমার ইচ্ছা। আর তোমার সাথে আমি এক বিছানায় ঘুমাতে পারবো।ভুলে যেওনা আমি এখনো তোমাকে আমার স্ত্রী হিসাবে মানিনা।”
সিরাত কিছুটা সামনে এগিয়ে আহনাফের দিকে আঙ্গুল তুলে চোখ রাঙ্গিয়ে বললো,
“এই যে মিস্টার আপনাকেও আমার স্বামী হিসাবে মানতে বয়েই গেছে। তাই আপনি আমাকে স্ত্রী হিসেবে মানেন না এইটা সারাদিন গান গাইতে হবেনা । আর আমি শখ নিয়ে আপনার মতো বদ,ক্যাকটাসের সাথে এক বিছানা শুবো সেইদিন আর সূর্য উঠবেনা।এখন আমি সম্পূর্ণ আমার নিজ অনিচ্ছায় এখানে শুবো শুধুমাত্র আর কোথায় ঘুমানোর জায়গা নেই বলে।ইচ্ছে হলে একপাশে ঘুমানে না হলে নেমে যান।”
কথাটা বলেই সিরাত আহনাফের অপর পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো।কাঁথা মুড়িয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে। না জানি আহনাফ এখন কী বলবে!রুমে শুধু একটাই বিছানা কোনো সোফা নেই।আহনাফ স্তব্ধ হয়ে বসে রয়েছে।সিরাতের ব্যবহার তার হজম হচ্ছেনা।পাশ ফিরে সিরাতের দিকে তাকালো।সিরাত গায়ে কাঁথা জড়িয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে রয়েছে।আহনাফ নেমে রুমের লাইট ওফ করে শুয়ে পড়লো।
———–
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সবাই নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়েছে।সাজেক ভ্যালি রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নের একটি বিখ্যাত পর্যটন স্থল। এটি রাঙ্গামাটি জেলার সর্বউত্তরে মিজোরাম সিমান্তে অবস্থিত। সাজেক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন, যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। এর উত্তরে ভারতের ত্রিপুড়া, দক্ষিণে রাঙ্গামাটির লংগদু, পূর্বে ভারতের মিজোরাম ও পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা অবস্থিত। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফুট উচ্চতার সাজেক ভ্যালি যেন এক প্রাকৃতিক ভূ-স্বর্গ। প্রকৃতি এখানে সকাল বিকাল রঙ বদলায়। চারপাশে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো বিস্তীর্ণ পাহাড় সারি, আর তুলোর মতো মেঘ, এরই মধ্যে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে রয়েছে নৈস্বর্গিক সাজেক ভ্যালি।সাজেক রুইলুইপাড়া, হামারিপাড়া এবং কংলাক পাড়া, এই তিনটি পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত। সাজেকে মূলত লুসাই, পাংখোয়া এবং ত্রিপুরা উপজাতি বসবাস করে।
চারপাশে মনোরম পাহাড়ের সারি,সাদা তুলোর মতো মেঘ সবই মনোমুগ্ধকর। যেন মেঘগুলো পাহাড় থেকে পাহাড় উড়াউড়ি করচ্ছে।দুপুরের দিকে সবাই রিসোর্টে ফিরে আসে।পুরোটা সময় অবশ্য সিরাত আহনাফের সাথেই সাথেই ছিল।কিছু কিছু সময় আবার আহনাফ সিরাতের হাত ধরে হেঁটেছে।এই প্রথম আহনাফ তার হাত ধরেছিলো।আহনাফের থেকে প্রথম স্পর্শ। আহনাফের হাত ধরে থাকার ব্যাপারটা সিরাতের কাছে ভালোই লেগেছে।লোক দেখানোর জন্য হলেও সিরাতের কাছে এটাই অনেক।
সময়টা রাত। সবাই রিসোর্ট পিছনে একটা খোলা জায়গা রয়েছে সেখানে সবাই চেয়ার পেতে বসে রয়েছে।আজকে সবাই খোলা আকাশের নিচে বসে বার বি কিউ সাথে নানরুটি খাবে।সবাই চেয়ারে বসে হাতে নিয়ে খাচ্ছে।আগে যারা সাজেকে ঘুরতে এসেছিলো তারা তাদের আগের অভিজ্ঞতার কথা বলতে রয়েছে।ঘুরতে গিয়েও আমারা ভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করি। হঠাৎ খাওয়ার মধ্যে সিরাত বিষম খেলো।আহনাফ উঠে সিরাতের কাছে আসতে নিলেই দেখলো তার আগে সাদাদ সিরাতের কাছে গিয়ে পানি দিয়েছে।আহনাফ নিজ স্থানেই দাঁড়িয়ে রইলো।সাদাদ পানির বোতল দিতেই সিরাত তা হাতে নিয়ে দ্রুত খেলো।সুমনা এসে সিরাতের পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।ফারিহা আহনাফের দিকে তাকিয়ে বললো,
“তুমি দাড়িয়ে রয়েচ্ছিস কেনো!ওরা দেখচ্ছে তো সিরাতকে। তুই বসে খেওয়া শুরু কর। ”
ফারিহার কথা যেন আহনাফের কনে যায়নি। তার মনোযোগ তো সিরাতের দিকে।আহনাফ খাবারের প্লেট চেয়ারের উপর রেখে সিরাতের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,
“ঠিক আছো তুমি!”
সিরাত মাথা নাড়লো।সাদাদ সিরাতের দিকে একটা রুমাল এগিয়ে দিলো।সুমনা একটু পানি ছিটিয়ে ছিলো সিরাতের মুখে।আহনাফ ভ্রুকুচকে সাদাদের দিকে তাকালো।সিরাত স্লান হেঁসে সাদাদের হাত থেকে রুমাল নিলো।আহনাফ নিজ চেয়ারে চলে আসলো।
খাওয়া দাওয়ার পরে সবাই গোল করে বসে রয়েছে।উপরে খোলা তারাময় আকাশ আর সাথে নির্মল বাতাস।সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে।সিরাত সবার আগে রুমে চলে আসলো।রুমে এসে বারান্দায় গিয়ে বসলো।বারান্দায় সুন্দর একটা দোলনা রয়েছে।দোলনায় বসে আকাশের দিকে তাকাতেই দেখলো মিল্কিওয়ে দেখা যাচ্ছে।সিরাত অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।কিছুক্ষণ পর হালকা শীত শীত অনুভব হতে লাগলো।সিরাত উঠার জন্য পাশ ফিরে তাকাতেই থমকে গেলো।আহনাফ একহাত দূরে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।সিরাত মনে মনে ভাবলো, “উনি কখন আসলেন!”
আহনাফ আকাশের দিকে দৃষ্টি রেখে নির্বিকার কন্ঠে বললো,
“সাদাদের সাথে তোমার পরিচয় কীভাবে!”
সিরাত আহনাফের প্রশ্নে ক্ষানিকটা অবাক হলো।কিছুটা ক্ষোভমিশ্রিত কন্ঠে বললো,
“সেদিন আপনি রাতে যখন আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে একা বাড়ি যেতে বলেছেন সেইদিন।আমার কাছে কোনো টাকা ছিলোনা তাই হাটতে ছিলাম। তখনই একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগতে নিলে উনি এসে আমাকে এসে বাঁচান। তারপর উনি বিবেকবোধে আমাকে বাড়ি নামিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। পরে একদিন চাচার বাসায় দেখা হয়েছিলো তখন জানলাম উনি নিশি আপুর বন্ধু।”
আহনাফ কিছু বললোনা। সিরাত প্রশ্নাতুর কন্ঠে বললো,
“একটা প্রশ্ন করবো!যদি আপনি কিছু মনে না করেন।”
আহনাফ কিছু বললোনা। সে এখনো আকাশের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে।সিরাত ক্ষানিকটা অসস্থি নিয়ে বললো,
“মা’য়ের কাছে শুনলাম।আপনার নাকি ফারিহা আপুর সাথে বিয়ের কথা হতে ছিলো।আপনি কী ফারিহা আপুকে পচ্ছন্দ করেন!”
আহনাফ সিরাতের দিকে তাকালো।নির্বিকার চোখে তাকিয়ে বললো,
“কী মনে হয় তোমার!”
সিরাত কিছু বললোনা।সিরাতকে চুপ থাকতে দেখে আহনাফ বললো,
“নিজেই বুঝতে চেষ্টা করো। তাহলেই উত্তর পেয়ে যাবে।”
আহনাফ রুমে চলে গেলো।সিরাত আহনাফের যাওয়ার পানে কিছুসময় তাকিয়ে রইলো।এইদিন থেকে আহনাফ তার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করেনি।মনে আশা হতে লাগলো হয়তো আহনাফ তাকে মেনে নিবে।হয়তো তার ভালোবাসার #স্নিগ্ধ পরশে কাছে টেনে নিবে।সিরাত দোলানায় মাথা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রইলো।
————
সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই সিরাত থমকে গেলো।আহনাফ তার দিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে আছে।হকচকিয়ে উঠে বসলো সে।সে তো কাল রাতে দোলনায় ঘুমিয়ে পড়েছিলো তাহলে বিছানায় আসলো কীভাবে!প্রশ্নটা আনমনে করে আহনাফের দিকে তাকালো। আনমনে হেসে উঠলো সে।আজকে তাদের বাড়ি ফেরার দিন।সকাল সকালই বের হবে।দ্রুত রেডি হতে হবে। বাকি সবাই রেডি হয়ে গিয়েছে কীনা কী জানি। কথাটা ভেবে সিরাতের একবার মনে হলো আহনাফকে ডাকা উচিত।কিন্তুু এখন সে বিপাকে পরে গেলো।কী বলে ডাকবে!আহনাফকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“এই যে শুনচ্ছেন!”
পরপর কয়েকবার ডাকলো।আহনাফের কোনো সাড়া নেই।সিরাত এবার জোড়ে চেঁচিয়ে বললো,
“এই যে শুনচ্ছেন!সকাল হয়ে গিয়েছে।দ্রুত উঠুন। ”
আহনাফ লাফিয়ে উঠে বসলো।ঘুম ঘুম চোখ বিরক্তি নিয়ে বললো,
“সকাল সকাল গাধার মতো চেচাঁচ্ছো কেনো! ”
সিরাত বিছানা থেকে নেমে রাগমিশ্রিত কন্ঠে বললো,
“আপনি যেভাবে ঘুমে বেঘোর ছিলেন তাতে আর বের হওয়া লাগতো না। তাই আপনাকে জাগাতে আমার চেঁচানো লাগচ্ছে।প্রথমে স্বাভাবিকভাবে ডেকেছিলাম কিন্তুু আপনিই শুনেননাই।”
কথাটা বলে সিরাত ওয়াশরুমে চলে গেলো।
সিরাত ওয়াশরুমে থেকে বের হয়ে দরজার দিকে তাকাতেই থমকে গেলো।ফারিহা আহনাফকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার।আহনাফ ফারিহাকে দূরে সরিয়ে সামনে তাকিয়ে সিরাতকে দেখেই কিছু বলতে নিলে….
চলবে!
#স্নিগ্ধ পরশ
#পর্ব_১৩
#তানজিম_তানাজ
বাস চলছে তার নিজ গন্তব্যে।ঢাকায় পৌঁছাতে আর কিছু সময় বাকি।যেখান থেকে তারা বাসে উঠছিলো সেইখানেই বাস থামবে তারপর যে যার মতো বাড়ি চলে যাবে।আহনাফ আর সিরাত পাশাপাশি বসে রয়েছে। সিরাত জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রয়েছে।তার মূর্হত যেন থমকে রয়েছে।সবকিছু অসহ্য লাগচ্ছে তার।সকালের ঘটনার পর থেকে ভিতরটা কেমন উত্তাল হয়ে রয়েছে।এক মূর্হতেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে গিয়েছে।তার সকল সুপ্ত অনুভূতি গুলো থমকে গেছে।সিরাতের মনে কালো মেঘের বাসা বেধেছে।সকালের কথা যতবার মনে হয় ততবারই কোথায় যেন ব্যাথা অনুভূত হয়।সময়টা যেন থমকে যায় তার কাছে।বার বার মনে হয় এটা একটা স্বপ্ন ঘুম ভাঙ্গলেই দেখবে এমন কিছু ঘটেনি।তার বার বার আফসোস হচ্ছে এটা কেনো একটা স্বপ্ন নয়!কেনো তার চোখের ভ্রম নয়!সকাল থেকে আর সিরাত আহনাফের সাথে কথা বলেনি।তখন আহনাফ কিছু বলতে নিলেই সিরাত আহনাফের কথা না শুনে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।তারপর আরো দুইবার আহনাফ সিরাতের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো কিন্তুু সিরাত আহনাফকে কিছু বলার সুযোগ দেয়নি।সিরাতদের সীটের বিপরীত সীটে সাদাদ বসে রয়েছে।একবার সিরাতের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে সামনে তাকালো।
বাস নিজ গন্তব্যে আসতেই সবাই এক এক করে বাস থেকে নেমে পড়লো।সুমনা যাওয়ার আগে সিরাতের সাথে কথা কিছু সময় কথা বলে চলে গেলো।
রাত আটটা।গাড়ি ড্রাইভার চালাচ্ছে।সামনের সীটে ফারিহা বসেছে।আর পিছনের সীটে আহনাফ আর সিরাত।গাড়ি বাড়িতে এসে পৌঁছাতেই সিরাত আগে আগে নেমে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।
——————
সিরাত সোফায় বসে ফোনের চালাচ্ছে।হঠাৎ একটা মেসেজে দেখলো তার মোবাইল সেদিন রাতে রির্চাজ করা হয়েছে যেদিন তারা সাজেক গিয়েছিলো।তার মানে সেদিন এতো রাতে আহনাফ তার ফোন রির্চাজ করতে বের হয়েছিলো!সিরাত আহনাফকে বুঝতেই পারচ্ছেনা।কালকে রাতে যখন জিঙ্গেস করলো সে ফারিহাকে ভালোবাসে কীনা!সরাসরি কিছু বললোনা।আবার আজকে সকালে ওই ঘটনা।সিরাত সিরাত মনে মনে ভাবলো,”তাহলে কী উনি সত্যিই ফারিহা আপুকে পচ্ছন্দ করে!”একটা চাপা নিঃশ্বাস ফেলে শুয়ে পড়লো।
আহনাফ কিছুসময় পর রুমে আসতেই দেখলো সিরাত ঘুমিয়ে রয়েছে।তার হাতে একটা কাগজ ছিলো।কাগজটার দিকে একপলক তাকিয়ে তা গুছিয়ে রেখে দিলো।আহনাফও বিছানায় শুয়ে পড়লো।
সকালে নাস্তার পর নাদিয়া বেগম আর সিরাত সোফায় বসে গল্প করছে এমন সময় কলিং বেল বাজতেই সিরাত উঠে দরজা খুলতে চলে গেলো।দরজা খুলে নিশিকে দেখতে অবাক হয়ে গেলো।নিশি হাসিমুখে ভিতরে ঢুকলো।নাদিয়া বেগম আগে নিশিকে দেখেনি তাই তিনি প্রশ্ন করলেন,
“তুমি কে মা! তোমাকে তো চিনলাম না।”
তখনই আহনাফ সিড়ি থেকে নেমে নাদিয়া বেগমের কাছে এসে বললো,
“ও নিশি। সিরাতের চাচাতো বোন।আমি একটা কাজে আসতে বলেছি!”
নাদিয়া বেগম হাসিমুখে বললেন,”কেমন আছো মা!”
নিশি স্লান হাসি দিয়ে বললো,”আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি!”
নাদিয়া বেগম মাথা নেড়ে বললেন ভালো আছেন। আহনাফ নিশিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“কাগজগুলো এনেছো?”
নিশি মাথা নেড়ে একটা ফাইল আহনাফের দিকে এগিয়ে দিলো।আহনাফ ফাইলটা হাতে নিয়ে কাগজগুলো দেখতে লাগলো।সিরাত কিছুই বুঝতে পারচ্ছেনা।নিশিকে প্রশ্ন করলো,
“এগুলো কীসের কাগজ আপু!”
নিশি কিছু বলার আগে আহনাফ বললো,”এগুলো তোমার সার্টিফিকেট।আজকে তোমাকে একটা প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে ভর্তি করে দিয়ে আসবো।দ্রুত রেডি হয়ে নেও।আমরা এখনি বের হবো।”
সিরাত অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।নাদিয়া বেগম আগ্রহ নিয়ে সিরাতকে দ্রুত রেডি হতে যেতে বললো।সিরাত রুমে রেডি হতে চলে গেলো।তিনি আজকে ছেলে কাজে অনেক খুশি হয়েছে এই ভেবে আহনাফ তাহলে সিরাতকে মেনে নিয়েছে।নিশি যেতে নিলে নাদিয়া বেগম বাঁধা দিলেন।কিন্তুু নিশির যেতেই হবে তাই নাদিয়া বেগমকে কথা দিলো আরেক দিন এসে অনেক সময় থাকবে বলেই চলে গেলো।আজকে সে আবার হোস্টেলে ফিরে যাবে।বাসায় যেয়ে দ্রুত রেডি হয়ে তাকে আবার বের হতে হবে।তাই দ্রুত চলে গেলো সে।
————
আহনাফ আর সিরাত গাড়িতে পাশাপাশি বসে রয়েছে।আহনাফ মনোযোগ দিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করচ্ছে। সিরাত আহনাফের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আপনার আমার উপর এতো করুণা করার দরকার নেই।”
আহনাফ ভ্রুকুচকে সিরাতের দিকে তাকালো।পুনরায় সামনে ফিরলো।সিরাত একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললো,
“আর এমনও না যে আমি নিজে আমার পড়ার খরচ চালতে পারবো।তাহলে অনেক আগে আমি নিজেই ভর্তি হতাম৷ আপনার আমাকে একবার জিঙ্গেস করা উচিত ছিলো। আপনি বাড়ি চলুন।”
আহনাফ এক সাইডে গাড়ি থামালো। সিরাত ভাবলো পুনরায় হয়তো আবার তাকে মাঝ রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হবে।আহনাফ কিছু বলতে নিলে সিরাত তাকে থামিয়ে বললো,
“আপনার কিছু বলতে হবেনা।আমি বুঝে গিয়েছি এখন আমাকে গাড়ি থেকে নেমে একা বাড়ি ফিরতে হবে।”
সিরাত নামতে উদ্যত হতেই আহনাফ সিরাতের হাত ধরে চেচিয়ে বললো,
“তোমাকে আমি একবারও বলছি নামতে!”
সিরাত আমতা আমতা করে বললো,
“না মানে না আসলে…….”
আহনাফ ধমক দিয়ে বললো,”চুপ।”
সিরাত কেঁপে উঠলো।হাতে প্রুচর ব্যাথা পাচ্ছে সে।আহনাফ অনেক শক্ত করে ধরে রেখেছে হাত।সিরাত হাতের দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে রইলো।আহনাফ বুঝতে পেরে হাত ছেড়ে দিলো।একবার জোড়ে শ্বাস নিয়ে ত্যাগ করে চোখ বন্ধ করলো।চোখ খুলে শান্ত কন্ঠে বললো,
“আমি তোমাকে করুণা করার জন্য এসব করছিনা।তোমার উপর দায়িত্ব বোধ থেকে করতে আছি।তুমি এখন আমার দায়িত্ব। আর তোমার টাকা থাকার প্রয়োজন নেই।তোমার পড়াশুনার সব খরচ আমি চালাবো।তবে তোমাকে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আমার সব টাকা ফেরত দিয়ে দিতে হবে।এমনি এমনি আমি কিছু করতে আছিনা।”
সিরাত অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।আহনাফ আর কিছু বললোনা। গাড়ি চালানো শুরু করলো।কলেজে ভর্তি করার সময় আহনাফ সিরাতকে নিজের স্ত্রী’র পরিচয়ে ভর্তি করছে।যেখানে তাদের ক্লাস হবে সেইটা দেখিয়ে নিয়ে আসলো।আহনাফ সিরাতকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে বললো,
“তুমি ভিতরে যাও।আমার একটা কাজ আছে।”
কথাটা বলে আহনাফ গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।গাড়িটি যতক্ষণ দেখা যায় ততসময় সিরাত দাঁড়িয়ে রইলো।গেটের ভিতর ঢুকতেই তার ফারিহার সাথে দেখা। ফারিহা সিরাতকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলো।সিরাত পাশকাটিয়ে যেতে নিলেই ফারিহা বললো,
“সিরাত দাঁড়াও। আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে।”
সিরাত দাঁড়িয়ে গেলো।পিছনে ফিরে স্লান হাসি দিয়ে ফারিহাকে বললো,
“জ্বি আপু। বলো।”
অনিচ্ছা শর্তেও ফারিহার কথা শুনার জন্য দাঁড়িয়ে গেলো। শুধুমাত্র ভদ্রতার জন্য ফারিহার কথা শুনের জন্য তাদের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে রইলো।ফারিহা হঠাৎ সিরাতের হাত ধরে বললো,
“তুমি আহনাফকে প্লিজ ছেড়ে দেও সিরাত।”
সিরাত থমকে গেলো।অবাক হয়ে বললো,
“এসব কী বলছো আপু!তোমার মাথা ঠিক আছে!”
ফারিহা করুণ চোখে বললো,
“আমি ঠিকই বলছি। তুমি আহনাফকে ছেড়ে দেও।আমি আহনাফকে অনেক ভালোবাসি আর আহনাফও আমাকে অনেক ভালোবাসে।সেদিন দেখলেনা আমি জড়িয়ে ধরে ছিলাম!আমি আহনাফকে কতবার বললাম ও যেন তোমাকে আমাদের ব্যাপারে বলে। কিন্তুু মামনি কষ্ট পাবে তাই তোমাকে কিছু বলছেনা। প্লিজ তুমি ছেড়ে দেও আহনাফকে তাহলে মামনি কষ্ট কম পাবে।আহনাফ তোমাকে ছেড়ে দিলে উনি বেশি কষ্ট পাবেন।”
সিরাতের গা হাতপা অবশ হয়ে যাচ্ছে। মাথা কাজ করছেনা কী বলবে সে!চোখ দিয়ে একবিন্দু অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।বুকের গহীনে ব্যাথা অনুভব হতে লাগলো।গলায় ব্যাথা করছে।কন্ঠ দলাপাকিয়ে আসছে।ফারিহা সিরাতকে বললো,
“আমি যে তোমাকে এই কথা বলেছি।তুমি কাউকে বলিও না।বিশেষ করে আহনাফকে বলিওনা।আমি আহনাফকে ছাড়া বাঁচবো না।তুমি আহনাফকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেও।”
সিরাত ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো ফারিহার দিকে।
চলবে!