স্নিগ্ধ পরশ পর্ব-১০+১১

0
1228

#স্নিগ্ধ পরশ
#পর্ব_১০(বোনাস) ও ১১
#তানজিম_তানাজ

আহনাফের চোখ হালকা লাল বর্ণ দেখাচ্ছে।সিরাত থমকে দাঁড়িয়ে রইলো।আহনাফ উঠে সিরাতের দিকে আগাতেই সিরাত পিছিয়ে গেলো।আহনাফ সিরাতের কাছে আসতেই সিরাত রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে হাতে জোড়ে ব্যাথা অনুভব হতেই দাঁড়িয়ে গেলো।ব্যাথায় চোখমুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে রইলো।আহনাফ সিরাতের কনুইয়ের কাছে ধরে টান দিলে সিরাত আহনাফের দিকে তাকালো।আহনাফ ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো,
“ফোন ধরো নি কেনো!কতবার ফোন দিয়েছি!”

অনেকটা চেঁচিয়ে বললো কথাটা।সিরাত কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
“খেয়াল করিনি।”

সিরাতের কথাটা যেন আহনাফের রাগকে আরো ক্ষিপ্ত করলো।দ্বিগুন রাগ দেখিয়ে আহনাফ বললো,

“খেয়াল কই থাকে তোমার! আর কার অনুমতিতে তুমি বাহিরে গিয়েছিলে!”

সিরাত চুপ করে রইলো।সিরাতের চুপ থাকা যেন আহনাফের রাগকে আরো বাড়িয়ে তুলচ্ছে।আহনাফ চেচিয়ে বললো,

“আজ থেকে বাহিরে বের হওয়া বন্ধ তোমার।”

কথাটা বলেই সিরাতকে ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে আসলো আহনাফ।আকষ্মিক ধাক্কায় তাল সামলে না পেরে সিরাত ছিটকে ফ্লোরে পড়লো।হাতে থাকা কাচের চুড়ি ভেঙ্গে সব তার বাম হাতে বিধলো।উঠে হাত চেপে বসে রইলো সিরাত।নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে তার।অনেকসময় পর উঠে ওয়াশরুমে গেলো।হাতে গাঁথা কাচ গুলো বের করে ফেললো।হাতে পানি লাগাতেই প্রচন্ড জ্বালা করলো।কিন্তুু এই জ্বালা তার মনের জ্বালা থেকে কম।হাতে লেগে থাকা রক্ত পরিষ্কার করার সময় দেখলো ডান হাতে কনুইয়ের কাছে অনেকটা জায়গা জুড়ে কালশিটে দাগ পড়ে রয়েছে।সিরাত সেইদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখমুখে পানি ছিটিয়ে বেরিয়ে আসলো।প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে তার।রুমের লাইট বন্ধ করে বিছানায় গিয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লো।অনেকসময় বাদে ঘুমিয়ে পড়েছে।

—————–
সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসলো সিরাত।কিছুসময় বসে থেকে হাতের দিকে তাকাতেই চমকে গেলো।তার দুইহাতে ব্যান্ডজ করা। কিন্তুু ব্যান্ডজ কে করলো ভাবতেই আহনাফের কথা আসলো।দ্রুত সোফার দিকে তাকালো।সোফায় আহনাফকে ঘুমন্ত অবস্থায় পেলো।গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সে।নিজের অজান্তেই এক চিলতে হাসি ফুটলো সিরাতের মুখে।হাতে ব্যাথাও কালকের থেকে অনেকটা কম।পাশে তাকাতেই দেখলো সাইড টেবিলে বাটিতে পানি আর রুমাল রাখা। তারমানে রাতে তার আবার জ্বর উঠেছিলো।মুগ্ধ নয়নে তাকালো আহনাফের দিকে।কিন্তুু ক্ষানিকক্ষন বাদে বিরক্তি নিয়ে অন্যদিকে তাকালো।কালকে ঘটনা মনে পড়তেই মন তিক্ত হয়ে উঠছে।বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

———
নাদিয়া বেগমরা সকাল সকাল চলে এসেছেন।খাবার টেবিলে সবাই বসা।সিরাত গায়ে এমনভাবে ওড়না জড়িয়ে রেখেছে যাতে ব্যান্ডজ না দেখা যায়।নাদিয়া বেগম সিরাতের দিকে তাকিয়ে আহনাফের দিকে ইশারা করে পানি দিতে বললো।সিরাত গ্লাসে পানি ঢেলে এগিয়ে দেওয়ার সময় হাত থেকে ওড়না ক্ষাণিকটা সরে যাওয়ায় বাম হাতে ব্যান্ডেজ দেখা যাচ্ছে।সেটা দেখে অবাক কন্ঠে ফারিহা বললো,

“একি সিরাত! তোমার হাতে কী হয়েছে!ব্যান্ডজ করা কেনো!”

সিরাত দ্রুত হাত ওড়না দিয়ে ঢেকে নিলো।এক বিপাকে পড়ে গেলো এখন সে। সবাই কে কী বলবে!যদি কালকের ঘটনার কথা বলে তাহলে নাদিয়া বেগম কষ্ট পাবে।ফারিহা সিরাতের পাশের চেয়ারেই বসা ছিল।সিরাতের হাত ধরে দেখতে লাগলো।নাদিয়া বেগম চিন্তিত হয়ে বললেন,
“কীভাবে হলো এমন!”

সিরাত একপলক আহনাফের দিকে তাকালো।সে প্লেটের দিকে তাকিয়ে মনোযোগ সহকারে খাচ্ছে।যেন এখানে কিছু হয়নি।টেবিলের সবার আকর্ষন সিরাতের দিকে শুধু আহনাফ বাদে।আহনাফের এমন কান্ড দেখে সিরাতের রাগ লাগলো।তার জন্য এমন পরিস্থিতে পরতে হয়েছে তাকে।নাদিয়ে বেগম পুনরায় জিঙ্গেস করলেন, “কী হলো বলো!”

সিরাত আমতা আমতা করে বললো,”আআসলে মা।সিঁড়ি থেকে নামতে গিয়ে পড়েগিয়েছিলাম।আর তখন চুড়ি ভেঙ্গে হাতে গেঁথে গিয়েছিলো।”

কথাটা বলে আহনাফের দিকে তাকাতেই দেখলো আহনাফ অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।সিরাত অন্যদিকে তাকালো।নাদিয়া বেগম ব্যাস্থ হয়ে বললেন,”দেখে চলবি তো।এরপর থেকে সাবধানে থাকবে।”

সিরাত উপর নিচে মাথা নাড়ালো।রোকেয়া বেগমের এসব ভালো লাগচ্ছেনা।তিনি বিরক্তি নিয়ে উঠে বললেন,

“খাবার টেবিলে এতো নাটক দেখার ইচ্ছা আমার আর নেই।আমি উঠলাম।”

কথাটা বলেই তিনি উঠে চলে গেলেন।ফারিহা অবশ্য তার মা’কে ডেকে ছিলো কিন্তুু রোকেয়া বেগম চলে গেলেন।সিরাত স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো।ফারিহা সিরাতের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো তার মায়ের আচরণে সিরাত কষ্ট পেয়েছে।ফারিহা সিরাতের কাঁধে হাত রেখে বললো,

“মায়ের কথা শুনে কষ্ট পেয়না।মা একটু ওমনই।”

সিরাত অনিচ্ছা শর্তেও মুখে হাসি আভা রেখে বললো,

“আমি কষ্ট পাইনি ফারিহা আপু।”

ফারিহা আহনাফের দিকে তাকিয়ে ব্যাস্থ কন্ঠে বললো,

“চল। এখন আমরা বের হই।”

আহনাফ ফারিহার কথায় সায় মিলিয়ে উঠে দাঁড়ালো।আহনাফ যাওয়ার পর ফারিহা নাদিয়া বেগমকে বলে বেরিয়ে পড়লো।নাদিয়া বেগম একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সিরাতের দিকে তাকিয়ে বললো,

“ফারিহার সাথে আহনাফের বিয়ের কথা চলতে ছিল।মূলত রোকেয়া তুলেছিলো কথা।ফারিহাও রাজি ছিল।আমিতো ভেবেছিলাম তোর আর আহনাফের বিয়ের ব্যাপারটা ফারিহা সহজে মেনে নিবেনা।কিন্তুু ফারিহা সব ভালোভাবে মেনে নিয়েছে।ভালোই হয়েছে।ফারিহাও তোকে আপন করে নিয়েছে।”

সিরাত নাদিয়া বেগমের কথা শুনে অবাক হলো।নাদিয়া বেগম উঠে রান্না ঘরে গেলেন।সিরাত টেবিলে বসে আনমনে ভাবচ্ছে,”তাহলে কী উনিও ফারিহা আপুকে পচ্ছন্দ করেন!বিয়ের কথা যখন হতে ছিলো তাহলে নিশ্চয়ই উনিও ফারিহা আপুকে পচ্ছন্দ করে।আমার কারণে তাহলে তাদের বিয়েটা হলো না।আমি বাঁধা তাদের মধ্যে।উনি তাহলে ফারিহা আপুকে ভালোবাসেন তাই আমাকে মেনে নেন নি।

কথাটা ভাবতেই আনমনেই সিরাতের চোখ থেকে একবিন্দু অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়লো।

—————

দেখতে দেখতে পুরো এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে।সেইদিনের রাতের পর থেকে আহনাফের সাথে সিরাতের কথা হয়নি।একই ছাঁদের নিচে এক রুমে থেকেও তাদের মাঝে কোনো কথা হয়নি।পুরো এক সপ্তাহ আহনাফ অনেক ব্যাস্থ ছিলো।কখন অনেক সকালে বের হয়ে গিয়েছে তারপর অনেক রাত করে বাসায় এসে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে আবার কখন নাইট ডিউটি করে সারাদিন ঘুমিয়ে রয়েছে।মাঝে মাঝে চোখেচোখ পড়তেই সিরাত দ্রুত অন্যদিকে তাকিয়েছে।

আজকে আহনাফের ছুটি তাই সারাদিন বাসায়ই রয়েছে।কিন্তুু সিরাতের সাথে কথা হয়নি।সিরাত মূলত আহনাফের সামনে পড়েনি ইচ্ছাকৃতভাবে।রাত এগারোটা বাজে।খাওয়া দেওয়া শেষে সোফায় নাদিয়া বেগম আহনাফ বসে কথা বলছেন।সিরাত রান্না ঘরে ছিল।রুমে যাওয়ার জন্য তাদের সামনে থেকে যেতে নাদিয়া বেগম সিরাতকে দাঁড়াতে বলে।সিরাত নাদিয়া বেগমের কাছে এসে দাঁড়ায়। নাদিয়া বেগম গম্ভীর কন্ঠে আহনাফের দিকে তাকিয়ে বললেন,

“দেখো আহনাফ আমি কোনো কথা শুনতে চাইনা।সবই যখন নিজের বউ নিয়ে যাবে এই ট্যুরে তখন তুমিও তোমার বউকে নিয়ে যাবে।আর এই বাসায় আসার পর সিরাত কোথাও যায়নি।তুমি ওকে নিয়ে যাবে।”

সিরাত থমকে দাঁড়িয়ে রইলো কোথায় যাওয়ার কথা বলছে!নাদিয়া বেগম উঠে বললেন,

“আশা করি আমার কথা তুমি শুনবে। ”

কথাটা বলেই নাদিয়া বেগম তার রুমে চলে গেলেন।আহনাফও উঠে নিজের রুমে চলে গেলো।সিরাত আহনাফের পিছু পিছু গিয়ে বললো,

“দেখুন আপনাকে বাধ্য হয়ে আমাকে নিয়ে যেতে হবেনা।আমি মা’কে বুঝিয়ে বলবো।”

আহনাফ ল্যাপটপ নিয়ে সোফায় বসেছিলো মাত্র। সিরাত দিকে একপলক তাকিয়ে পুনরায় ল্যাপটপের দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে বললো,

“কালকে অনেক সকাল সকাল বের হবো।রেডি হয়ে থেকো।তোমার জন্য জানি দেরি না হয়।”

সিরাত বাঁধা দিয়ে বললো,”আপনার আমাকে নিয়ে যেতে হবেনা।”

আহনাফ বিরক্তি নিয়ে সিরাতের দিকে তাকিয়ে বললো,

“এতো বেশি কথা বলো কেনো তুমি!”

সিরাত থমকে দাঁড়িয়ে রইলো।আহনাফ কিছুক্ষণ চুপ থেকে নির্বিকার কন্ঠে বললো,

“ওখানে গিয়ে সবার সামনে এমনভাবে থাকবে যেন আর বাকি পাঁচটা সাধারন স্বামী স্ত্রীয়ের মতো আমাদের মনে হয়। আমাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা নেই এমন থাকবে।কিন্তুু তার মানে এই নয় যে আমি তোমাকে মেনে নিয়েছি।শুধু আমার স্ত্রী হওয়ার নাটক করবে।”

সিরাত স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।আহনাফ পুনরায় তার কাজে মনোযোগ দিলো।

—————–

সকাল সকালই দ্রুত রেডি হয়ে গেলো সিরাত।নাদিয়া বেগমকে বলে আহনাফের পিছুপিছু সিরাত বাহিরে আসলো।ফারিহা গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো সিরাতকে দেখে কিছুটা আশাহতো হলো।ভারাক্রান্ত কন্ঠে বললো,

“তুমিও যাবে আমাদের সাথে!”

সিরাত কিছুটা অপ্রস্তুুত হয়ে পড়লো।সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে মাথা নাড়লো।ফারিয়া আর কিছুনা বলে গাড়ির পিছনের সীটে বসলো।সিরাতও পিছনের সীটে বসতে নিলে আহনাফ বললো সামনে বসো।সিরাত আর কিছুনা বলে সামনে আহনাফের পাশে বসলো।গাড়ি চলছে তার নিজ গতিতে।খুব সকাল হওয়ায় খুব একটা গাড়ি নেই রাস্তায়।তবে কমও না।সিরাত লুকিংগ্লাস দিয়ে ফারিয়ার দিকে নজর পড়তেই ভাবতে লাগলো,

“এসে তো প্রথমে অনেক উচ্ছাসিত দেখছিলাম ফারিহা আপুকে।হঠাৎ এমন মনভার করে রইলো কেনো!কী এমন হলো!”

চলবে!

#স্নিগ্ধ পরশ
#পর্ব_১১
#তানজিম_তানাজ

কিছুক্ষণ বাদে একজায়গায় এসে গাড়ি থামলো।আহনাফ ইশারায় নামতে বলে সেও নেমে পড়লো।সামনে একটা বড় বাস রয়েছে।আহনাফ একজনকে গাড়ির চাবি দিয়ে দিলো।এনাকে অনেকবার দেখছে সিরাত বাসায়।নাদিয়া বেগম যখন বের হতো তখন উনিই গাড়ি চালাতো।লোকটি চাবি নিয়ে গাড়িতে বসলো।গাড়ি চালিয়ে চলে গেলো।বাসের সামনেই দশ বা বারো জনের মতো মানুষ রয়েছে। ফারিহা আর আহনাফ সেদিকে এগিয়ে গেলো।সিরাতও পিছুপিছু এগিয়ে আহনাফের পিছনে দাঁড়ালো।সবার কথায় মনে হচ্ছে এরা সবাই ডাক্তার বা কেউ কেউ ডাক্তারের বউ।আহনাফ আর ফারিহা সবার সাথে কথা বলছে আর সিরাত স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।ক্ষাণিকটা অসস্থি লাগচ্ছে।তখনই এক মেয়ে সিরাতের দিকে এগিয়ে এসে হাসিমুখে বললো,

“তুমি নিশ্চয়ই আহনাফ ভাইয়া বউ!”

সিরাত আহনাফের দিকে তাকালো।আহনাফ একপলক পিছনে ফিরে আবার সামনে ফিরে কথা বলতে থাকলো।সিরাত স্লান হাসি দিয়ে মাথা নাড়ালো।মেয়েটি হাত বাড়িয়ে বললো,”আমি সুমনা।তুমি!”

সিরাতও হাত বাড়িয়ে হাত মিলালো।হাসিমুখে বললো,

“সিরাত।”

সুমান তার স্বামীর দিকে ইশারা করে পরিচয় করিয়ে দিলো।তার স্বামী সৌরভ হাসি মুখে সালাম দিলো।সিরাতও সালামের উত্তর দিলো।সুমনা অনেকটা মিশুক নিজ থেকে সিরাতের সাথে অনেক কথা বলচ্ছে।সিরাতের ব্যাপারটা ভালোই লাগলো। একটা সঙ্গী পেলো।না হলে একা একা অনেকটা অস্থি হতে ছিলো।সুমনার সাথে কথা বলার পর থেকে আর লাগচ্ছেনা।হঠাৎ নিজের নাম কারো মুখে উচ্চারিত হতে শুনে সিরাত সেইদিকে তাকালো।আহনাফও সেইদিকে ভ্রুকুচকে তাকালো।
সমানে সাদাদ দাঁড়িয়ে রয়েছে।নির্মলভাবে চেয়ে আছে সিরাতের দিকে।সিরাত সাদাদকে দেখে অবাক হলো।সাদাদ সিরাতের দিকে এসে বললো,”তুমিও যাচ্ছো আমাদের সাথে!”
সিরাত মাথা নাড়ালো।সুমনা আগ্রহ নিয়ে বললো,

“তোমার কী দুইজন পরিচিত!”

সাদাদ বললো,”হ্যাঁ আমরা পূর্ব পরিচিত।”

সুমনা কিছু বলতে নিবে তখনই একজন বললো সবাইকে বাসে উঠতে। সুমনা কিছু না বলে সিরাতের হাত ধরে টেনে বাসের দিকে গেলো।

———–

ফারিহা আর সিরাত একসাথে বসেছে।সিরাত জানলার পাশে বসেছে।সামনের সীটে আহনাফ আর সাদাদ বসেছে।হঠাৎ ফারিহা উঠে দাঁড়ালো। সিরাত ভ্রুকুচকে ফারিহার দিকে তাকালো।আহনাফ জানালার পাশে বসেছে।ফারিহা সাদাদের পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
“তুমি একটু পিছনে বসবে!তুমি আর সিরাততো পূর্বপরিচিত।আমার আহনাফের সাথে রোগীর ব্যাপারে কিছু আলোচনা করার ছিল।”
সাদাদ কিছুএকটা রাজি হয়ে গেলো।সাদাদ সিরাতের পাশে বসতেই সিরাত নিজেকে একটু গুটিয়ে বসলো।অসস্থি কাজ করছে তার মধ্যে।ফারিহা পাশে বসতেই আহনাফ অবাক হয়ে বললো, “তুই এখানে কেনো আসলি!”
আহনাফ এতো সময় মোবাইলে মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা দেখতে ছিলো।ফারিহা বসতেই উক্ত কথাটি বললো।ফারিয়া বললো,
“ওরা আগে থেকেই পূর্বপরিচিত।একসাথে গল্প করুক।তোর সাথে আমার একটা রোগীর ব্যাপারে কিছু আলোচনা করার ছিলো।”
আহনাফ বিরক্তি নিয়ে বললো,
“এখন কেনো! এটা তো পড়েই বলা যেতো।”

বাস মাত্র ছেড়েছে।সিরাত জানালা দিকে তাকিয়ে রয়েছে।জানলা বন্ধ।খুব খুলতে ইচ্ছা করচ্ছে।তাই হাত বাড়িয়ে জানালা খুলতে নিলো।কিন্তুু পারচ্ছেনা।সাদাদ তা দেখে বললো,”আমি খুলে দিবো!”
সিরাত ইতস্ত হয়ে বললো,”না থাক।খোলা লাগবেনা।”
সাদাদ সিরাতের কথা শুনলোনা।সে উঠে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে জানালা খুললো।
সিরাত বাহিরে তাকিয়ে প্রকৃতি দেখতে ব্যাস্থ।কপালের কাছ থেকে কিছু চুল বেড়িয়ে রয়েছে।বাতাসে তা বার বার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে আর সিরাত তা ঠিক করতে ব্যাস্ত।একসময় সে হাল ছেড়ে দিলো।এলোমেলোই থাকতে দিলো চুলগুলো কে।তারপরও মাঝেমাঝে চোখের উপর পড়তেই বিরক্তি নিয়ে তা ঠিক করচ্ছে।কানে গুজে রাখলোও থাকচ্ছে।বড়ই অবাধ্য তার চুলগুলো।সিরাত পাশে থাকাতেই থমকে গেলো।সাদাদ দিকে তাকিয়ে ছিলো।সাদাদ হেসে বললো,”যে উড়তে চায় তাকে উড়তে দাও।বাঁধা দিওনা।”
সিরাত কিছুসময় সাদাদের দিকে তাকিয়ে থেকে বুঝতে পাড়লো সাদাদ চুলের কথা বলছে।সাদাদ কথা বলেই যাচ্ছে আর সিরাত তা শুনচ্ছে।সাদাদের কথাশুনে বুঝলো তারা সাজেক যাচ্ছে।সাদাদ থেমে বললো,

“এতো সময় আমিই কথা বললাম।এখন তুমি বলো।”

সিরাত চমকে উঠলো।ইতস্তত হয়ে বললো,”আমি কী বলবো!আপনিই বলুন। আমি শুনি।”

সাদাদ কিছুটা আগ্রহ নিয়ে বললো,”তাহলে তোমার বিয়ের ব্যাপারে বলো।”

আহনাফ ঘাড় ঘুরে পিছে তাকালো।সাদাদের দিকে একপলক তাকিয়ে আবার সামনে ফিরলো।সিরাত থমকে বললো,

“আমাদের বিয়ে নিয়ে তেমন কোনো বলার কিছু নাই।”

সাদাদ আর কিছু বললোনা সিরাতের দিকে তাকিয়ে রইলো।কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করছে সে সিরাতের দিকে তাকিয়ে।সিরাত জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো।সীটে মাথা হেলিয়ে দিয়ে বাহিরের প্রকৃতি দেখচ্ছে।এক সময় ঘুমিয়ে পড়লো।

————
ঘুম ভাঙ্গতেই সিরাত আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো বাসে কেউ নেই।দ্রুত উঠে দাঁড়ালো। পুরো বাস খালি কেউ নেই।তখনই বাহিরে দাঁড়িয়ে জানালার কাছে এসে সাদাদ বললো,

“ভয় পেও না।সবাই বাহিরে আছে।তুমিও আসো।”

সিরাত স্বস্থির নিশ্বাস ত্যাগ করলো।বাস থেকে নামতেই সুমনা সিরাতের কাছে এগিয়ে এসে বললো,

“ঘুম কেমন হলো তোমার!”

সিরাত স্লান হাসলো।সুমনা মুচকি বললো,

“তুমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আহনাফ ভাইয়া সাদাদ ভাইয়াকে উঠিয়ে নিজের জায়গায় বসতে বলে। আর আহনাফ ভাইয়া তোমার পাশে বসে।তোমার পুরোটা পথ আহনাফ ভাইয়া কাঁধে ঘুমিয়ে কাটিয়েছো।”

সিরাত অবাক হয়ে আহনাফের দিকে তাকালো।আহনাফ একজনের সাথে কথা বলচ্ছে।সিরাত সুমনার দিকে তাকালো।সুমনা তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসচ্ছে।সিরাত লজ্জায় পড়ে গেলো।সুমনা জোড়ে হেসে বললো,

“আর লজ্জা পেতে হবেনা।চলো এখানেই সবাই দুপুরের খাবার খাবে।”

সিরাত লাজুক হেসে সুমনার সাথে গেলো।

————–
একটা টেবিলে ছয়জন করে বসা যায়। একপাশে সিরাত, সুমনা, ফারিহা বসেছে।তার বিপরীত পাশে আহনাফ, সাদাদ আর সৌরভ বসেছে।খিচুড়ি ওর্ডার দিয়েছে।এখন সকাল আর দুপুর দুটোই একসাথে খাচ্ছে সবাই।অবশ্য বাসে হালকা খাবার খেয়েছিলো সবাই।সাদাদ সৌরভের ছোট ভাই। সেই হিসেবে এখানে আসা।

খাবার খাওয়া শেষ করে সবাই জিপ গাড়িতে বসে রয়েছে।এবার সিরাতের পাশে ফারিহাই বসেছে।ফারিহা সিরাতকে ফোনে কিছু দেখাচ্ছে।মূলত দুইজন ফোন নিয়ে পড়ে রয়েছে।আর্মি চেক করার পর এখানের সব গাড়ি একসাথে সাজেক যাবে।তিনটায় গাড়ি ছাড়লো।গাড়ি আস্তে উপরে দিকে যাচ্ছে। একসময় মনে হলো হাত বাড়িয়ে মেঘ ছোঁয়া যাবে।নিচের দিকে তাকালে গাছগাছালির সবুজ মেলা দেখা যায়।

সবাই একটা রিসোর্টে উঠেছে।পুরো রিসোর্টে বাশের বেড়া দেওয়া চারপাশে বারান্দা। সবাই ফ্রেস হতে নিজ নিজ রুমে চলে গিয়েছে।এখানে ফারিহা আর সাদাদ বাদে সবাই বিবাহিত।প্রত্যেক স্বামী স্ত্রীর জন্য একটা করে রুম। আর সাদাদ আর ফারিহার জন্য আলাদা আলাদা দুইটা।

সিরাত গোসল করে বের হতেই আহনাফ বললো,

“একা নিজে রুমের বাহিরে যেওনা। আমি বের হলে তারপর একসাথে যাবো। ”

সিরাত মাথা নাড়ালো।আহনাফ ওয়াশরুমে চলে গেলো।সিরাত সকাল থেকে খেয়াল করেছে আহনাফ সবার সাথেই একটু কম কথা বলে। অনেকটাই গম্ভীর সে।সিরাত এতো দিন ভাবতো শুধু তার সাথেই গম্ভীর কিন্তুু আজকে বুঝলো আহনাফ গম্ভীর প্রকৃতির।

সিরাত বারান্দায় গেলো।বারান্দায় দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে একটু হাত বাড়ালেই যেন মেঘ ছুতে পারবে সে।সূর্য অস্ত যাচ্ছে।পুরো আকাশ সূর্যাস্তের রূপ ধারণ করেছে।অসম্ভব সুন্দর সেই সুন্দর সেই দৃশ্য।নিচের দিকে তাকালে গভীর খাদ তার মধ্যে সুবজ গাছপালা দেখা যাচ্ছে।

চলবে!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে