#স্নিগ্ধ পরশ
#পর্ব_৪ ও ৫
#তানজিম_তানাজ
“কেমন আচ্ছিস ফারিহা!”
মেয়েটি নাদিয়া বেগমকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
“এই তো ভালো মামনি।”
ফারিহা সিরাতের দিকে ইশারা করে বললো,”এই কী আহনাফের বউ!”নাদিয়া বেগম হাসিমুখে মাথা নাড়লেন।ফারিয়া উৎফুল্ল কন্ঠে বললো,
”আমি আগেই বুঝেছিলাম তুমিই সিরাত।”
সিরাত সৌজন্যমূলক হাসি দিলো।নাদিয়া বেগম সিরাতকে ফারিয়ার দিকে ইশারা করে বললো,”এই হলো তোমার ননদ।রোকেয়ার মেয়ে। আহনাফের ফুফাতো বোন।”
সিরাত ফারিহার দিকে তাকিয়ে সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে মাথা নাড়ালো।আহনাফ এখনো একজায়গায় ঠাই দাঁড়িয়ে রয়েছে।নাদিয়া বেগম সবাইকে ত্যাড়া দিয়ে বললেন,”সবাই খেতে আসো। ”
বলেই তিনি রান্না ঘরে চলে গেলেন।সিরাতও নাদিয়া বেগমের সাথে চলে গেলো।ফারিয়া আহনাফের দিকে তাকিয়ে বললো,
“কীরে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি!”
আহনাফ আপনমনে কিছু একটা ভাবতে ছিলো।ফারিয়ার কথায় আহনাফের ভাবনায় ছেদ ঘটলো।”আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।” বলেই আহনাফ উপরে চলে গেলো।ফারিয়া আহনাফের যাওয়ার পানে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে একফালি নিশ্বাস ফেলে চলে গেলো।
খাবার টেবিলে নাদিয়া বেগম খাবার গুছিয়ে রাখছে। নাদিয়া বেগমের সাথে সাথে সিরাতও হাতে হাতে কাজ করছে।ফারিয়া ফ্রেস হয়ে এসে চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো
“মামুনি মা কোথায়? মা’কে যে দেখছিনা!”
“তোর মা তার এক বান্ধবীর বাসায় গিয়েছে।চলে আসবে বিকেলের মধ্যে।”(নাদিয়া বেগম)
” আমি বরং আহনাফকে ডেকে নিয়ে আসি।” বলেই চেয়ার ঠেলে উঠতে নিলে নাদিয়া বেগম বাঁধা দিয়ে বললেন “তুই বস।সিরাত গিয়ে ডেকে নিয়ে আসুক।”
সিরাত আমতা আমতা করে বললো,”আআআমি!থাক আপুই যাক।”
নাদিয়া বেগম গম্ভীর নয়নে তাকিয়ে বললেন,”তুমিই যাবে।যাও তাড়াতাড়ি আহনাফকে ডেকে নিয়ে আসো।খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
সিরাত অনিচ্ছা শর্তেও আহনাফকে ডাকতে চলে গেলো।আহনাফ সবে গোসল করে বেড়িয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুচ্ছে।পরনে গেন্জি আর ট্রাউজার। সিরাত দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাত কচলাচ্ছে।কী বলবে বুঝে উঠতে পারচ্ছেনা।সিরাত এইটুকু বুঝছে তার উপস্থিতি আহনাফের পছন্দ না।আয়নায় সিরাতের বিম্ব দেখে আহনাফ ভ্রু কুচকে বললো,
“কী সমস্যা?”
সিরাত চমকে উঠলো।মূর্হতেই নিজকে সামলে আমতা আমতা করে বললো,
“আসসলে….আসলে……..”
আহনাফ বিরক্ত চোখে পিছন ফিরে সিরাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আসলে… নকলে কী!”
সিরাত নিজেকে ধাতস্ত করে নির্বিকার কন্ঠে বললো,
“আপনাকে খেতে ডাকছে।”
আহনাফ কিছু বললোনা।পুনরায় চুল মুছতে শুরু করলো।সিরাত আহনাফের দিকে রয়েছে।আহনাফ এমন ভান করছে যেন এখানে কেউ নেই।সিরাত দ্বিধাদন্ডে পরে গেলো।আহনাফ তো উত্তরে কিছু বললোনা। সে এখন কী করবে! চলে যাব!সিরাতের ভাবনার মাঝেই আহনাফ টাওয়াল মেলে দিয়ে সিরাতকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।একবারও সিরাতের দিকে তাকায়নি।মনে হলো এখনে সিরাত অদৃশ্য।সিরাতের ব্যাপারটা খারাপ লাগলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে আসলো।
খাবার টেবিলে কেউ তেমন কোনো কথা বলেনি।মাঝে মাঝে ফারিহা আহনাফের সাথে কথা বলছে। আহনাফ শুধু তার হু হ্যাঁ জবাব দিয়েছে।সিরাত নিরবে খাওয়া শেষ করছে।একে একে সবাই যে যার রুমে চলে গেলো।সিরাত পরলো আরেক বিপাকে। এখন সে কী করবে! রুমে তো উনি আছেন।আমি গেলে তো বিরক্ত হবেন।ভেবেই সিরাত আর উপরে গেলোনা।সোফায় গিয়ে বসে পড়লো।সোফায় হেলান চোখ বন্ধ করে বসে রইলো।কিছুক্ষন পর কারো গলার খিকরির শব্দে সিরাত চোখ মেলে তাকালো।চোখ খুলে আহনাফকে দেখে সোজা হয়ে বসলো।আহনাফ নির্বিকার কন্ঠে বললো,
“তুমি আমার সাথে এক জায়গায় যাবে।তাড়াতাড়ি আসো।”
সিরাত অবাক হয়ে বসে রইলো।কথাটা তার বোধগম্য হলো না ঠিক। কোথায় যাবে সে!সিরাতের কোনো হেলদোল না দেখে আহনাফ বললো,
“কী হলো!”
সিরাত উঠে দাঁড়ালো। আহনাফকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে বাহিরে কোথাও যাবে।সেরকমই রেডি হওয়া। সিরাত আহনাফের পিছন পিছন চলে গেলো।আহনাফ গাড়িতে ড্রাইভিং সীটে বসে বললো,
“তাড়াতাড়ি উঠো।”
সিরাত আহনাফের পাশের সীটেই বসলো।আহনাফ সিরাতের দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে বললো,
“সীট বেল্ট লাগাও।”
সিরাত মাথা নাড়ালো।সিরাত সীট বেল্ট লাগিয়ে চুপচাপ বসে রইলো।আহনাফ কাউকে কল দিয়ে “আমরা তাড়াতাড়ি আসতেছি।” বলে রেখে দিলো।একবার সিরাতের দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।সিরাত একবার জিঙ্গেস করছে আহনাফকে তারা কোথায় যাচ্ছে কিন্তুু আহনাফ কিছু বলেনি।সিরাত জানালার কাচ ভেদ করে বাহিরে তাকিয়ে ভাবচ্ছে আহনাফ তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে!তাকে কী তার চাচার বাসায় রেখে দিয়ে আসবে আহনাফ!আকাশকুসুম চিন্তা করতে করতে সময় পার করলো সিরাত।গাড়ি থামলো প্রায় একঘন্টা পর।এর মধ্যে অনেক সময় জ্যামে পরেছিলো তারা।সিরাত গাড়ি থেকে নেমে বুঝলো তারা একটা হসপিটালের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আহনাফ হসপিটালের ভিতর প্রবেশ করলো।সিরাতও আহনাফের পিছন পিছন গেলো।আহনাফ তিনতলার করিডরের শেষ প্রান্তে এক কেবিনে প্রবেশ করলো।সিরাত বুঝতে পারছেনা তারা এখনে কেনো এসেছে!কারো কী কিছু হয়েছে!সিরাত কেবিনে ঢুকতেই অবাক হয়ে গেলো।বেডে তার চাচা শুয়ে রয়েছে।সিরাত দ্রুত বেডের কাছে এগিয়ে গেলো।পাশেই তার চাচি আঞ্জুমান বেগম বসে রয়েছেন।আহনাফ একপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে।সিরাত ব্যাস্ত হয়ে জিঙ্গেস করলো,
“কী হয়েছে চাচার!”
“হঠাৎ রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পরে গিয়েছিলো।তারপর লোকজন ধড়াধড়ি করে এখানে নিয়ে এসেছে।আমি আসার সময় আহনাফ বাবাকে ফোন দিয়ে বলেছিলাম।আহনাফ বাবাও তো ডাক্তার তাই।আমি আসতেই ডাক্তার বললো রক্তচাপ অনেক কমে গিয়েছে যার কারণে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।এখন ঘুমাচ্ছে।”
সিরাত চিন্তিত হয়ে পড়লো।আজকে তার চাচার এই অবস্থার জন্য সিরাত নিজেকে দায়ী করছে।তাকে নিয়ে চিন্তা করতে করতেই তার চাচার এই অবস্থা।
/////////////////////////////
সন্ধ্যা ছয়টা।সিরাত তার চাচার পাশে বসে রয়েছে।আহনাফ কেবিনের বাহিরে দাঁড়িয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলছে।উনি তাহলে ডাক্তার। হার্টসার্জন।তখন চাচির কথায় খেয়াল না করলেও পারে জানতে পেরেছে সে।এমন সময় আহনাফ কেবিনে ঢুকে বললো,”আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলছি।কালকে সকালেই আপনাকে ছেড়ে দিবে।আমাকে এখন যেতে হবে চাচা।”
সিরাতের চাচা আজমল সাহবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আহনাফ সিরাতের পাশে দাঁড়িয়ে বললো, “চলো, তোমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আমাকে দ্রুত যেতে হবে। একটা ওটি রয়েছে।”
সিরাত অনুনয় করে বললো,” আমি এখনেই থাকি আজকে?”
আহনাফ কিছু বলার আগেই সিরাতের চাচা বাধা দিয়ে বললেন, “তোর চাচি আছে তো। চিন্তা করিসনা। তুই বরং জামাই বাবাজির সাথে চলে যা।”
সিরাত অনিচ্ছা শর্তেও আহনাফের সাথে চলে আসলো। সিরাত বাহিরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আহনাফ আপন মনে গাড়ি চালাচ্ছে।হাঠাৎ গাড়ি থামায় সিরাত নড়েচড়ে বসলো।এটা তো বাড়ির সামনে না।তাহলে উনি এখনে কেনো থামিয়েছেন!সিরাতের ভাবনার মাঝেই আহনাফ বললো,”নামো।”
সিরাত হকচকিয়ে উঠলো।মাঝ রাস্তায় কেনো নামবে!চারপাশে সাই সাই করে দ্রুত গতি গাড়ি চলছে।আহনাফ পুনরায় বললো, “দ্রত নামো।”
সিরাত নামতেই আহনাফ বললো,”আমি তোমাকে নিয়ে যেতে পারবোনা।একাই বাড়িতে চলে যাও। ”
সিরাতকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আহনাফ চলে গেলো।সিরাত রোডের পাশে দাঁড়িয়ে রইলো।কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে হাঁটা শুরু করলো।তার কাছে এক টাকাও নেই।আনমনে ব্যাস্ত রাস্তায় হাঁটছে সিরাত।আনমনে জীবনের সমীকরণ মিলাচ্ছে।জীবন বড়ই অদ্ভুত । শত কষ্ট থাকা শর্তেও হাসিমুখে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যেতে হয়।হাঠাৎ চোখে অনেক আলো পরতে সামনে তাকাতেই থমকে গেলো।তারদিকে একটা গাড়ি দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে। এইমনে হয় তার জীবন শেষ ভাবতেই সিরাত চোখ বন্ধ করে নিলো আর মূর্হতেই,
চলবে!
#স্নিগ্ধ পরশ
#পর্ব_৫
#তানজিম_তানাজ
হঠাৎ হেচকা টানে কেউ সরিয়ে নিলো সিরাতকে।গাড়িটা সিরাতের পাশ থেকে চলে গেলো দ্রুত গতিতে। সিরাতের অনেক কাছ থেকেই অতিক্রম করেছে গাড়িটি। আর একটু হলেই সিরাতকে আঘাত করতো।একটুর জন্য বেঁচে গেলো।জোরে টান দেওয়ায় তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নিলেই এক শক্ত পুরুষালি বলষ্ঠি হাত তার বাহু ধরে ভারসাম্য বজায় রাখলো।সিরাত চোখ মেলে তাকতেই দ্রুতগতিতে ছিটকে সরে আসলো।লোকটি আসস্ত করতে নরম কন্ঠে বললো,
“রিলেক্স।ভয় নেই।আমি শুধু আপনাকে বাঁচানোর জন্য ধরেছিলাম।আপনি ঠিক আছেন তো!”
সিরাত উপরে নিচে মাথা নাড়ালো।চোখ মুখে তার ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।হাঠাৎ আচমকা এমন কান্ডে ভয় পেয়েছে খানিকটা।ভেবেছিলো আজকেই তার শেষদিন।গাড়িটা যে স্পিডে আসতে ছিলো তাতে তার বাঁচার সম্ভবনা ছিলোনা বলেই চলে।ভাগ্যক্রমে লোকটি তাকে বাঁচিয়ে নিলো।সিরাত কৃতজ্ঞতা কন্ঠে বললো,
“ধন্যবাদ।”
“ইট’স ওকে।আমার নাম সাদাদ।আপনি!”
সিরাত ভ্রুকুচকে তাকিয়ে রইলো।পরে কিছু একটা মনে করে বললো,
“সিরাত।”
সাদাদ হাস্যজ্বল মুখে বললো,”নাইস নেইম।তা আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি কিছু নিয়ে চিন্তিত।আনমনে যেভাবে হাঁটতে ছিলেন তাই বললাম আর কী।”
সিরাত কথা এড়িয়ে বললো,”আমি আসি তাহলে।”
সিরাতে এক পা বাড়াতেই সাদাদ বাঁধা দিয়ে বললো,
“চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি। ”
সিরাত সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বললো,”প্রয়োজন নেই।আমি একাই যেতেই পারবো।”
সাদাদা আপত্তি জানিয়ে বললো,”আপনি যেমন আনমনে হাঁটতে ছিলেন পুনরায়ও আবার আনমনে হয়ে গেলে কোনো বিপত্তি হতে পারে।আর বড় কথা হলো সামনের রাস্তা নির্জন তাই আপনার একা একা যাওয়াটা ঠিক হবেনা।”
সিরাত পুনরায় বাঁধা দিতে নিলেই সাদাদ হাত উচু করে সিরাতকে থামিয়ে বললো,”আমি আপনার কোনো কথা শুনছিনা।আমি আপনাকে একা যেতে দিতে পারবোনা। তাইলে বিবেকবোধ তাড়া করবে সারাক্ষণ। ”
সিরাত অাপত্তি থাকা শর্তেও আর বাঁধা দিলোনা রাজি হয়ে গেলো।আসলেই একা একা যাওয়াটা ঠিক হবেনা আর লোকটাকে দেখে ভালো মানুষই মনে হচ্ছে। অনন্ত বিবেকহীন না।কথাটা সিরাত আহনাফকে উদ্দেশ্য করে ভাবলো।সিরাতের ভাবনার মাঝেই সাদাদ তার গাড়ি নিয়ে হাজির হলো।সাদাদ গাড়িতে উঠতে বললে সিরাত অসস্থি নিয়ে গাড়িতে উঠলো।
/////////////////
আহনাফের যে ওটি করার কথা ছিল তা রোগীর কিছু সমস্যার কারণে করা হয়নি।কালকে অপারেশন হবে।তাই আহনাফ বাসায় চলে আসলো।বাসায় এসে সোফায় গা হেলিয়ে বসতেই নাদিয়া বেগম হতদন্ড করে এসে বললো,
“তুই একা যে!সিরাত মা কই!”
আহনাফ সোফায় মাথা হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে ছিলো।নাদিয়া বেগমের এমন কথা শুনে ধপ করে চোখ মেলে তাকালো।মাথা সোজা করে বললো,
“কই মানে!বাসায় আসেনি!”
নাদিয়া বেগম অবাক হয়ে বললেন,”তোদের তো একসাথে আসার কথা! তাহলে ও আগে আসবে কীভাবে।”
আহনাফ উঠে দাঁড়ালো।কিছুনা বলে দ্রুত বেরিয়ে গেলো।নাদিয়া বেগম চিন্তিত হয়ে সোফায় বসে রইলো।আহনাফ গাড়ি নিয়ে যেখানে সিরাতকে রেখে এসেছিলো সেখানে বেরিয়ে গেলো।
////////////////////////////
ধীর গতিতে গাড়ি চলছে।সিরাত বাহিরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।সাদাদ টুকটাক কথা বলছে।সিরাত শুধু কথায় সায় মিলাচ্ছে নিজে কিছু বলেনি।হঠাৎ সিরাত গাড়ি থামাতে বলতেই সাদাদ গাড়ি থামিয়ে বললো,
“কী হলো!এখানে থামতে বললেন কেনো!”
সিরাত গাড়ি থেকে নামার জন্য উদ্ধত হয়ে বললো,
“বাড়ির সামনে এসে গেছি।”
সাদাদকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সিরাত গাড়ি থেকে নেমে পড়লো।সিরাত গাড়ির বাহিরে দাঁড়িয়ে সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বললো,
“ধন্যবাদ।”
সাদাদ মুচকি হসে বললো,”শুধু ধন্যবাদে হবেনা। পরের বার দেখা হলে এক কাপ কফি খাওয়ালেই হবে।”
সিরাত মাথা নাড়িয়ে চলে আসলো।সাদাদ বাড়িটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে আসলো।
সিরাত বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতেই নাদিয়া বেগম সোফা থেকে উঠে সিরাতের কাছে এগিয়ে গেলো।চিন্তিত কন্ঠে বললো,
“কোথায় ছিলি এতোসময়!আমি তো কিছুই বুঝতেছিনা।তোদের তো একসাথে আসার কথা ছিলো।আহনাফ আগে আসলো আবার বেরিয়ে গেলো তুই এখন একা আসলি।”
সিরাত আসস্ত করে বললো,”আসলে ওনার জরুরি কাজ ছিলো তাই উনি আগে এসেছিলেন আর আমি হস্পিটালে ছিলাম আমিই ওনাকে বলেছিলাম চলে যেতে আমি একা যেতে পারবো।”
সিরাত নাদিয়া বেগমের সাথে মিথ্যা কথা বললো।যদি সত্যি কথা বলতো তাহলে নাদিয়া বেগম অনেক কষ্ট পেতো।এমনিতেই সকালে আহনাফের ব্যবহারে অনেক কষ্ট পেয়েছেন তিনি তাই সিরাত মিথ্যা বললো।নাদিয়া বেগম সিরাতের চাচার ব্যাপারে জিঙ্গেস করলো।সিরাত নাদিয়া বেগমের সাথে কিছুসময় কথা বলে উপরে চলে আসলো।
///////////////////////
সিরাত রুমে এসে সোজা গোসলে চলে গেছিলো।অনেকসময় নিয়ে গোসল করে বেরিয়ে আহনাফকে বেডে বসে থাকতে দেখে ক্ষানিকটা চমকে উঠলো। আহনাফকে অন্যরকম দেখাচ্ছে।সিরাত সেদিকে বেশি খেয়াল না দিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।আচমকা আহনাফ উঠে এসে সিরাতের বাহু শক্ত করে ধরে দেয়ালে ঠেকিয়ে বললো,
“আমি তোমাকে নামিয়ে দিছিলাম কত সময় আগে!বাড়ি আসতে এত দেরী হলো কেনো!”
আহনাফ এমনভাবে ধরেছে যে সিরাত প্রচুর ব্যাথা পাচ্ছে।তার উপর আহনাফের এমন কথা শুনে সিরাতের অনেক রাগ লাগলো। কিন্তুু চুপ করে থেকে নিজের রাগকে সংযোত করতে লাগলো।আহনাফ সিরাতকে চুপ থাকতে দেখে পুনরায় অগ্নি চোখে বললো,
“কী হলো! কথা বলছোনা কেনো!এতসময় রাতে একা রাস্তায় থাকার মানে কী?তোমাকে আমি যেখানে নামিয়ে দিয়েছিলাম তোমার আরো আগে বাসায় আসার কথা ছিল।এতো রাতে রাস্তায় থাকার মানে কী! যদি কিছু হয়ে যেত!
এবার আর সিরাত চুপ থাকতে পারলোনা।ক্ষোভে বললো,
“একা একটা মেয়েকে মাঝ রাস্তায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়ার সময় আপনার এটা মাথায় রাখা উচিত ছিল।কিছু হতে পারতো!কোনো বিপদ হতে পারতো! নামিয়ে দেওয়ার সময় যখন আপনার বিবেকে বাঁধেনি তাহলে এখনও আমি দেরী করছি তাতে আমার কিছু হতে পারতো এইভেবে আপনার সময় নষ্ট করার দরকার নেই।”
আহনাফের মুখশ্রীতে এতো সময় ফুটে থাকা রাগ নিমেষে মিহিয়ে গেলো।হাতের বাধান আগলা হতেই সিরাত আহনাফকে ধাক্কা দিয়ে সরে আসলো।মাথার টাওয়াল খুলে চেয়ারে মেলে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।আহনাফ আনমনে কিছু একটা ভাবতে থাকলো।
রাত বারোটা বাজে।সিরাত এতো সময় রুমে আসেনি।খাবার টেবিলে আহনাফের দিকে একবারও তাকায়নি।আহনাফের সামনেই পরতে ইচ্ছা করছে না তার।অনিচ্ছা শর্তেও ধীর পায়ে রুমে ঢুকলো। রুমে চোখ বুলিয়ে দেখলো আহনাফ কোথাও নেই।বারান্দার কাছে যেতেই বুঝতে পারলো আহনাফ বারান্দায় দাঁড়িয়ে কারো সাথে কথা বলছে।সিরাত দ্রুত বেড থেকে বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো।গায়ে একটা কাঁথাও মুড়িয়ে নিলো।ক্ষানিক সময় পর আহনাফ রুমে আসলো।সোফার সামনে এসে দাঁড়িয়ে নির্বিকার চোখে সিরাতের দিকে তাকিয়ে থাকলো।তার সিরাতের সাথে কিছু কথা ছিলো।অনেক সময় অপেক্ষা করেছিলো সিরাতের জন্য কিন্তুু সিরাত এতো সময় রুমে আসেনি।একটা কল আসায় বারান্দায় গিয়েছিলো এখন রুমে এসে দেখে সিরাত ঘুমিয়ে গিয়েছে।কাঁথা গায়ে মুড়িয়ে থাকার ব্যাপারটা খেয়াল হতেই আহনাফ বিরক্ত নিয়ে বললো,”আসলেই বিরক্ততিকর।এই গরমে কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে আছে।”
কথা আহনাফ জোরে বলায় সিরাতও শুনতে পেলো।সে ঘুমায়নি।চোখ বন্ধ করে রয়েছে।মনে মনে বললো,”আর আপনি তো আসলে মিঃক্যাকটাস। যার ব্যবহার কাঁটার মতো।”
আহনাফ রুমে লাইট বন্ধ করে বেডে শুয়ে পড়লো।জানালা দিয়ে রুমে মৃদু আলো এসে পড়ছে।আকাশে জ্বলছে অসংখ্য তারা সাথে চাঁদের আলোয় আলোকিত বাহিরে পরিবেশ।যার খানিকটা ছোঁয়া ভিতরের পরিবেশেও পাচ্ছে।রুম জুড়ে চাঁদের আলোয় আলোকিত ভিতরের পরিবেশ।
//////////////
সকাল হয়েছে অনেক আগেই সিরাত আড়মোড়া ভেঙে বসে রইলো। মাত্রই ঘুম থেকে উঠেছে।ঘুম ঘুম চোখে সামনে তাকাতেই আহনাফকে দেখে চমকে উঠলো।দ্রুত চোখ কচলে আবার সামনে তাকালো।আহনাফ তার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হাতে একটা ব্যাগ যা সিরাতের দিকে এগিয়ে ধরে রেখেছে।আহনাফ ইশারায় সিরাতকে ব্যাগটা নিতে বললো।সিরাত বিষ্ময় নিয়ে ব্যাগটা হাতে নিলো।ব্যাগ খুলে দেখলো ভিতরে একটা বক্স রয়েছে। বক্স হতে নিতেই পুনরায় বিষ্ময় চোখে আহনাফের দিকে তাকালো।
চলবে!