স্তব্ধের স্নিগ্ধতা পর্ব-২৭ এবং শেষ পর্ব

0
1869

#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:২৭(অন্তিম পর্ব)

স্নিগ্ধতার জ্ঞান ফিরেছে,চোখের সামনে স্তব্ধকে দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।ভোর রাতের দিকে স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরেছে তখন স্নিগ্ধতার জ্ঞান ছিল না। অরিত্রি শিকদার ছাড়া আর কাউকে কিছু জানানো হয়নি। ওই ঘটনাটা মনে পড়তেই স্নিগ্ধতার ভেতরে আবারও ভয় জাগ্ৰত হয়েছে চোখ থেকে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো।স্তব্ধকে শক্ত করে ধরলো,স্তব্ধ ঘুমঘুম কন্ঠে বলল,

– নড়ছো কেন স্নিগ্ধ?

স্নিগ্ধতা কোনো উত্তর দিল না ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে। স্তব্ধের সব ঘুম নিমিষেই উধাও হয়ে গেল দ্রত একহাত দিয়ে পেছনে টেবিলে রাখা টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে স্নিগ্ধতার থুতনি ধরে মুখ উঁচু করে বলল,

– কাঁদছো কেন?

এবারও কোনো উত্তর পাওয়া গেল না,স্তব্ধ বিষয়টা বুঝতে পেরে স্নিগ্ধতার কপালে চুমু দিয়ে চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বলল,
– কেন বুঝতে চাও না তোমার চোখের পানি দেখতে আমার ভালো লাগে না অনেক কষ্ট হয়, এখন তো তুমি আমার কাছেই আছো তারপরেও কেন কাঁদছো?

– মানুষ কতটা নোংরা মস্তিষ্কের হলে এমন একটা জঘন্য কাজ করতে যায়, যদি খারাপ কিছু হয়ে যেত তাহলে মৃত্যু ছাড়া আমার কোনো উপায় থাকতো না।

স্তব্ধ ধমক দিয়ে বলল,
– কেন আজেবাজে কথা বলছো কিছু হয়নি তো, আমি থাকতে তোমার কিছু হতে দিব না অনেক শিক্ষা হয়েছে এরপর থেকে তোমাকে কোথাও একা ছাড়বো না।

স্তব্ধ আবারও বলল,
– তোমাকে না পেয়ে আমার তো মাথাই কাজ করছিল না ড্যড কি সুন্দর মাথা ঠান্ডা করে কাজ করল,ড্যড এর বুদ্ধির কারণেই তোমাকে ফিরে পেলাম।

– নাতাশা আদ্রিক ওদের কি হয়েছে?

– জেলখানায় বসে বসে মশা মারছে।

স্নিগ্ধতা চুপ করে আছে,স্তব্ধ আহ্লাদি সুরে বলল,
– ভয় করছে স্নিগ্ধ?

– হু।

– কিসের এত ভয়?

– তখন মনে হয়েছিল আমি যেন তোমাকে হারিয়ে ফেলব খুব কষ্ট হচ্ছিল।

– সব ভয় দূর করে দিচ্ছি।

বলেই স্নিগ্ধতার মুখে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতে লাগলো স্তব্ধ।স্নিগ্ধতা পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো।
______________

সকাল হতেই অরিত্রি শিকদার নিজে ঘরে এসে খাইয়ে দিয়ে গেছে স্নিগ্ধতাকে। গতকালের ঘটনা মনে গেঁথে আছে কিছুতেই ভুলতে পারছে না,নিচেও যেতে ইচ্ছে করছে না লজ্জায়।স্তব্ধ নিচে গেছে নাস্তা করতে অরিত্রি শিকদার জোর করে নিচে পাঠিয়েছে।

নাস্তা করে স্তব্ধ ঘরে আসলো স্নিগ্ধতাকে চুপচাপ বিছানায় হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেখে বিরক্ত হলো। স্তব্ধ যে ঘরে এসেছে সে খেয়াল নেই স্নিগ্ধতার কি যেন ভেবে যাচ্ছে,স্তব্ধ কিছুক্ষণ দাড়িয়ে স্নিগ্ধতাকে দেখলো তারপর হুট করে গিয়ে স্নিগ্ধতার কোলে মাথা রেখে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল।স্নিগ্ধতা কিছুটা ঘাবড়ে গেল,স্তব্ধ স্নিগ্ধতার শাড়ির আঁচল আঙ্গুলে প্যাচাতে প্যাচাতে বলল,

– বলেছি না গতকালের কথা ভুলে যেতে বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করো যত অতীত নিয়ে চিন্তা করবে ততোই ভেতরে পীড়া দিবে।

– চেষ্টা করছি ভুলে যাওয়ার।

– হুম দ্রুত চেষ্টা করো নইলে তোমাকে কামড়ে দিব।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্নিগ্ধতা হেসে দিল যতোই মন খারাপ থাকুক কিংবা রাগ হোক না কেন স্তব্ধের কিছু কিছু কথায় না হেসে থাকা যায় না। স্তব্ধ বরাবরের মতই মুগ্ধ হয়ে স্নিগ্ধতার হাসি দেখছে,স্নিগ্ধতার গালে হাত রেখে বলল,

– এভাবেই সবসময় হাসিখুশি থাকবে, তোমার হাসিটাই যে আমার ভালো থাকার কারণ।

– তুমি থাকতে হাসি অটোমেটিক চলে আসবে।

শিরিন গতকাল রাত থেকে স্নিগ্ধতাকে একবারও দেখেনি নাস্তা করার সময়ও টেবিলে দেখেনি বুঝতে পারছে না কি হয়েছে তাই কিছু না ভেবেই দরজা খোলা দেখে স্নিগ্ধতার ঘরে চলে আসলো। ঘরে এসেই একরাশ লজ্জা ভর করলো শিরিনের মুখে,স্তব্ধ স্নিগ্ধতার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে আর দু’জনে কথা বলছে হাসছে। শিরিন ইচ্ছে করে জোরে কাশি দিল,কাশির শব্দে স্তব্ধ-স্নিগ্ধতা দু’জনেই দরজার দিকে ফিরে তাকালো।স্তব্ধ উঠে বসতেই স্নিগ্ধতা বিছানা থেকে নেমে বলল,

– শিরিন তুই! ভেতরে আয়।

– তোদের রোমান্সে বিরক্ত করে ফেললাম স্যরি।

স্তব্ধ ব্রু কুঁচকে বলল,
– একে তো দরজা নক না করেই ঢুকে পরলে আবার ঢং করে স্যরি বলা হচ্ছে? কাশিটা না দিয়ে আস্তে করে চলে গেলেই পারতে।

– আপনারও উচিত ছিল দরজা লক করে বউয়ের সঙ্গে রোমান্স করার।

– আমার দরজা আমি সারাদিন খোলা রাখব তুমি কেন নক না করে আসবে?

– এখন সব দোষ আমার?

– অবশ্যই।

– স্নিগ্ধা দেখ দুলাভাই আমার সঙ্গে ঝগড়া করছে।

– তুমি কি চুপ করে ছিলে নাকি?

শিরিন কিছু বলতে যাবে তার আগেই স্নিগ্ধতা চেঁচিয়ে বলল,
– এবার তোমরা থামো।

– আচ্ছা থামলাম দুলাভাই আপনি বাইরে যান আমার বান্ধবীর সঙ্গে আমার অনেক কথা আছে।(শিরিন)

– কথা পরে বলো এখন ঘর থেকে বের হতে পারছি না।

– ঠিক আছে থাকুন আপনি আপনার ঘরে স্নিগ্ধা তুই চল আমার ঘরে।

বলেই শিরিন স্নিগ্ধতার হাত ধরল,স্তব্ধ রাগ দেখিয়ে বলল,
– আমার বউ তোমার ঘরে যাবে কেন? তিহান কোথায়? তিহানের কাছে যাও।

– তিহান বাড়িতেই আছে আর আপনি এত বউ বউ করবেন না, স্নিগ্ধা চল তো।

স্তব্ধের আর কোনো কথা না শুনেই শিরিন স্নিগ্ধতাকে টানতে টানতে নিজের ঘরে নিয়ে গেল। তারা যাওয়ার কয়েক মিনিট পরেই তিহানের আগমন ঘটে স্তব্ধের ঘরে।তিহান এসেই শুয়ে পড়ল,স্তব্ধ জিজ্ঞেস করল,

– কি ব্যাপার টায়ার্ড মনে হচ্ছে রাতে ঘুম হয়নি?

– শিরিনকে সারপ্রাইজ দিতে দিতেই রাত পেরিয়ে গেল সকালে একটু ঘুমিয়ে ছিলাম ঘর থেকে বের করে দিল।

– বউকে সামলে রাখতে শিখ তোর বউ বাড়িতে আসতে না আসতেই আমার বউকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে চলে গেল।

– আহারে কষ্ট পাস না ভাইয়া আমার পাশে শুয়ে পর দু’জনে ঘুমাই।

– তুই ঘুমা ইডিয়ট।
____________

আশরাফ খাঁন আদ্রিকের খবরটা শুনেই ভালো উকিলের সঙ্গে কথা বলে থানায় ছুটে গেলেন।আদ্রিকের নামে তেমন বড় কোনো মামলা না হওয়ায় বিকেলের দিকেই থানা থেকে বাড়িতে যেতে পেরেছে। বাড়িতে আসার পর আদ্রিকের বাবা আদ্রিককে অনেক বকাঝকা করেন কিন্তু বকাঝকা করে কি লাভ ছেলে তো আগেই হাতের বাহিরে চলে গেছে।

নাতাশা এবং রুশির নামে শক্তপোক্ত মামলা দেওয়ায় কেইসটা কোর্টে উঠবে অনেক বছর জেলও হতে পারে।রুশির এমন খারাপ চিন্তা ভাবনার কারণে অনেক আগেই তার স্বামীর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটেছিল নাতাশা-নিতুকে তাদের বাবা নিজের কাছে নিয়ে বড় করতে চেয়েছিলেন কিন্তু রুশির কারণেই পারেননি। নিতু এখন স্তব্ধদের বাড়িতেই আছে রাতুল শিকদার যেতে দেননি।

আদ্রিক ভাবছে কিভাবে স্তব্ধ-স্নিগ্ধতার ক্ষতি করবে। সন্ধ্যের পরে রিয়াদের নাম্বার থেকে আদ্রিকের মোবাইলে কল আসে কিছুক্ষণ দু’জনের মধ্যে কথা হতেই আদ্রিক বাড়ি থেকে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে বের হতে নেয় তখনি পেছন থেকে ডাক পরে,

– থানা থেকে আসতে না আসতেই আবারো বাইরে যাচ্ছো, এবার কিছু ঘটিয়ে আসলে আমি কিন্তু যাব না বলে দিলাম।

– চিন্তা করো না বাবা এমন কিছুই হবে না।

আদ্রিক বেরিয়ে গেল আশরাফ খাঁন দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
.
.
.
একটা গোডাউনে স্তব্ধ,নিলয়,রাজ এবং তাদের আরো কয়েকজন বন্ধু আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে স্তব্ধ বাদে বাকি সবার মুখ ডাকা আর গোডাউনের মাঝখানে রিয়াদকে একটা চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে শরীরে মা’রের চিহ্ন। ঠোঁট, কপাল থেকে রক্ত বের হচ্ছে গালে কয়েক অংশে দাগ।আদ্রিক রিয়াদের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী গোডাউনে পৌঁছে গেছে, চারিদিকে আবছা আলো ভেতরে প্রবেশ করতেই গোডাউনের দরজা আটকে গেল।আদ্রিক জোরে জোরে ডাকতে লাগল,

– রিয়াদ কোথায় তুই?

কারো কোনো শব্দ না পেয়ে আদ্রিকের ভেতরে অস্বস্তি সৃষ্টি হয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে গোডাউনের মাঝখানে চলে এসেছে, মাঝখানে আসতেই সব আলো জ্বলে উঠলো। রিয়াদের দিকে দৃষ্টি যেতেই আদ্রিক অবাকের সাথে সাথে ভয় পেয়ে গেল, রিয়াদের গালে হালকা চাপড় দিয়ে জিজ্ঞেস করল,

– রিয়াদ তোর এই অবস্থা কে করল? তুই দেশে কেন ব্যাক করলি?

পেছন থেকে রাজ বলল,
– আমরা করেছি।

আদ্রিক পেছনে ঘুরতেই রাজকে দেখতে পেল তবে মুখ বাঁধা তাই চেহারা বুঝতে পারলো না ধীরে ধীরে সবাই বেরিয়ে আসলো। কাউকে আদ্রিক চিনতে পারছে না এবার স্তব্ধ এসে সামনে দাড়াতেই আদ্রিক চমকে গেল কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,

– স্তব্ধ!

স্তব্ধ বাঁকা হেসে হাতের রড নিজের কাঁধে রেখে বলল,
– চিনতে পেরেছ?

– তুমি এখানে?

– তোমার কাছেই এসেছি।

– রিয়াদকে কেন মে’রেছ?

– জেনেও কেন জিজ্ঞেস করছো?

– আমি কিছু জানি না।

– আমি জানিয়ে দিচ্ছি, এই রিয়াদের সঙ্গে প্লান করে তুমি স্নিগ্ধতার সঙ্গে বিয়ে দিতে চেয়েছিলে প্লান যখন কাজে দিল না একে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিলে তারপরেও আমার স্নিগ্ধর ক্ষতি করার বারবার চেষ্টা করলে, আমিও প্লান করে রিয়াদকে তোমার নাম করে দেশে এনেছি আবার রিয়াদকে দিয়ে তোমায় এখানে এনেছি। তুমি কি ভেবেছ তোমাদের এত সহজে ছেড়ে দিব? আমার প্রপার্টির উপর হাত দেওয়ার চেষ্টা করেছ শাস্তি তো পেতেই হবে এবার এমন অবস্থা করবো চাইলেও আর আমার স্নিগ্ধতার দিকে নজরও দিতে পারবে না।

– স্তব্ধ ভালো হবে না বলে দিলাম।

– ভালো তো হবেই না তবে তোমার সঙ্গে।

সবার হাতেই রড, স্তব্ধের ইশারা পেতেই সবাই হামলে পড়ল আদ্রিকের উপর হাত পায়ে অনবরত মা’রতে লাগল। পুরো গোডাউন আদ্রিকের বেদনাদায়ক চিৎকারে কেঁপে উঠছে, অনেকক্ষণ পেটানোর পর রাজ হাঁপিয়ে গিয়ে বলল,

– এবার অফ যা যেই মা’র দিয়েছি মনে হয় না এই জীবনে নিজ পায়ে দাড়াতে পারবে আর না নিজ হাতে খেতে পারবে।

সবাই থেমে গেল নিলয় বলল,
– শরীর অনেক চাঙ্গা লাগছে অনেকদিন পর কাউকে ইচ্ছে মতো পেটাতে পারলাম।

স্তব্ধ মুখটা অসহায় করে বলল,
– আমার তো মন ভরছে না ইচ্ছে করছে একেবারে মে’রে দেই কতবড় সাহস আমার বউকে কাঁদায়, আমার বউকে কাঁদাবোও আমি হাসাবোও আমি ওর সাহস হয় কিভাবে?

রাজ আর নিলয় দু’জন স্তব্ধের দু’কাঁধে হাত রেখে স্বান্তনা দিয়ে বলল,
– আহা দোস্ত মন খারাপ করিস না একেবারে মে’রে দিলে তো ম’রেই গেল কিন্তু এখন বাঁচিয়ে রাখলে সারাজীবন অন্যের বোঝা হয়ে ধুঁকে ধুঁকে ম’রবে দেখতেও শান্তি লাগবে।

– তাও ঠিক এখন চল এদের একটা ব্যবস্থা করি।

– এদের ব্যবস্থা আমরা করছি তুই বাড়িতে যা ভাবীর কাছে।

স্তব্ধ মুখটা কাঁচুমাচু করে বলল,
– তোদের জন্য ভালোবাসা বেড়ে গেল আমার, তোরা থাক আমি তাহলে বউয়ের কাছে যাই কি বলবো তোদের ভাবী আমাকে না দেখে থাকতেই পারে না।

স্তব্ধ সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেল বাকিরা হাসতে হাসতে আদ্রিক আর রিয়াদের কাছে গেল।
.
.
ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে ঘরে আসলো স্তব্ধ, ঘরে স্নিগ্ধতাকে না দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। গোসল করে টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ঘরে এসে স্নিগ্ধতাকে দেখতে পেয়ে মুচকি হাসলো।স্নিগ্ধতা রাগ মিশ্রিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

– কোথায় গিয়েছিলে?

– কেন মিস করছিলে!

– এটা আমার প্রশ্নের উত্তর নয়।

– ঘুরতে গিয়েছিলাম।

– এমনিতে তো ভালোবাসা উতলে পড়ছিল অফিসেও যাওনি বউয়ের চিন্তায় আর এখন ঘুরতে গিয়েছিলে সব নাটক।

– এভাবে বলো না বেইবি কষ্ট লাগে।

স্নিগ্ধতা ভেংচি কাটলো।স্তব্ধ টাওয়াল বেলকোনিতে মেলে দিয়ে এসে আলতো করে স্নিগ্ধতাকে জড়িয়ে ধরলো।
______________

রাত পেরিয়ে নতুন একদিনের সূচনা হয়েছে, সকালে ছেলের খারাপ খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে গেলেন আশরাফ খাঁন। আদ্রিককে কারা যেন হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে গেছে তাদের কাছ থেকে জানা গেছে চোর সন্দেহে রাস্তায় পাবলিকের হাতে গনধোলাই খেয়েছে তারা, রিয়াদের অবস্থা সূচনীয় আর আদ্রিকের জ্ঞান ফিরেনি হাত পায়ের কিছু হাড় ভেঙে গেছে যা আদৌও জোড়া লাগবে নাকি বলা যাচ্ছে না।

স্তব্ধ রাতুল শিকদারের সামনে মুখ মলিন করে বসে আছে। রাতুল শিকদার নিরবতা ভেঙ্গে গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলেন,

– আদ্রিকের এমন অবস্থা কে করেছে?

– পাবলিক গনধোলাই দিয়েছে চোর সন্দেহে।

– সেটা তো সবাই জানে আমি আসল সত্যিটা জানতে চাইছি।

– সবাই যেটা জানে আমিও সেটাই জানি এর পেছনে যদি কোনো সত্য থাকে তাহলে বলতে পারো।

– এসব নাটক আমার সঙ্গে করিস না আমি তোর ড্যড তোর রক্তে শিরায় শিরায় কি চলছে বুঝতে পারি আদ্রিকের এমন অবস্থা কে করেছে তাও জানি।

– জানো ভালো কথা ঢাক ঢোল পিটিয়ে বলতে হবে কেন? ভেতরের কথা ভেতরে রাখো।

রাতুল শিকদার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।স্তব্ধ মাথার চুল স্লাইড করতে করতে বলল,
– তোমাকে অনেক ক্লান্ত লাগছে ড্যড তুমি এখানে বসো আমি বরং সালেহা আন্টিকে বলে তোমার জন্য কোল্ড ড্রিংকস পাঠিয়ে দিচ্ছি।

বলেই স্তব্ধ শিস বাজাতে বাজাতে চলে গেল, রাতুল শিকদার কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বললেন,
– এটা কি আমার ছেলে!

নিতু শিকদার বাড়ি থেকেই স্কুলে যাওয়া আসা করে।রাজের যাতায়াতটা স্তব্ধের বাড়িতে বেড়েছে, রাজ আর নিতুর মধ্যকার ভাব অনেক বেড়েছে প্রতিদিন নিতুকে স্কুলে দিয়ে আসা নিয়ে আসা যেন তার দায়িত্বের মধ্যে পড়েছে।আজও রাজ হল ঘরে সোফায় বসে আছে অরিত্রি শিকদার একের পর এক খাবার এনে রাজের সামনে রেখে বলছে,

– তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করো আমি আরও আনছি।

রাজ কিছু বলতেও পারছে না অবশ্য বললেও কাজ হবে না অরিত্রি শিকদারের অধীক আপ্যায়নের জন্যই এ বাড়িতে তেমন আসতো না কিন্তু এখন বাধ্য হয়েই আসতে হচ্ছে।স্তব্ধ রাজের পাশে বসে কাঁধে হাত রেখে ফিসফিস করে বলল,

– নিতুর কিছুদিন পর পরীক্ষা সেই জন্যই মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছে তুই আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা কর পরীক্ষা শেষ হলেই তোদের বিষয়ে ড্যড এর সঙ্গে কথা বলবো।

রাজ ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
– কি বলিস এসব?

– আহা ভয় পায় না বন্ধু হিসেবে একটা দায়িত্ব আছে না আমার এমনিতেই তুই অবিবাহিত তার উপর আমার খালাতো বোনকে পছন্দ করিস চিন্তা করিস না আমি আছি তো।

– স্তব্ধ চুমুটা কি তোর কপালে দিব নাকি গালে?

– হুস বেয়াদব এগুলো আমার বউয়ের সম্পত্তি, তুই বরং বিয়ের পর নিতুকে চুমু দেইস।

– আচ্ছা।

অরিত্রি শিকদার হাতে করে আরেকটা ট্রে নিয়ে এসে বললেন,
– রাজ এখনও খাওয়া শেষ হয়নি কেন? স্তব্ধ তুইও খাবি?

– না তুমি রাজকে জামাই আদর করো।

– এগুলো আবার কি কথা?

স্তব্ধ মৃদু হেসে ঘরে চলে গেল।

শিরিন জামা-কাপড় আলমারিতে গুছিয়ে রাখছে পেছন থেকে তিহান এসে জড়িয়ে ধরে বলল,
– শিরিন কি করো?

– চোখ কি অকালেই গেছে নাকি দেখতে পাচ্ছো না কি করছি?

– সবসময় এমন খিটখিট করো কেন? একটু রোমান্টিক ভাবে কথা বললে কি হয়?

– পারবো না রোমান্টিক কথা বলতে সরো কাজ করছি।

– উহু সরবো না কাজ পরে হবে।

– ভালো কথায় কাজ না হলে ঝাটা পেটা করবো কিন্তু।

তিহান দ্রুত শিরিনকে ছেড়ে দূরে সরে গিয়ে বুকে থু থু দিয়ে বলল,
– বিয়ে হতে না হতেই এই রূপ দেখাচ্ছে বাকি জীবন কি হবে আমার?
_____

স্নিগ্ধতা সবেমাত্র গোসল করে এসে বেলকোনির দড়িতে ভেজা কাপড় মে’লে দিচ্ছে।বেলকোনিটা বেশ বড় আর অনেক রোদও আসে দুপুর আর বিকেলের দিকে।স্তব্ধ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে স্নিগ্ধতার ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল,স্নিগ্ধতা কিছুটা কেঁপে উঠলো।স্তব্ধ ঘোর লাগা কন্ঠে বলল,

– তোমার ভেজা চুলের এত সুন্দর ঘ্রান কেন?

– চুলে শ্যাম্পু করেছি এটা শ্যাম্পুর ঘ্রান।

– সে যাই হোক না কেন স্নিগ্ধতার এই স্নিগ্ধ মায়ায় স্তব্ধ পাগল হয়ে গেছে।

স্নিগ্ধতা হেসে পূর্বের ন্যায় কাপড় মেলছে,স্তব্ধ স্নিগ্ধতার হাত ধরে নিজের গালে ছুঁইয়ে দিয়ে বলল,
– আমার অনুভূতি যদি তুমি বুঝতে তাহলে এভাবে হাসতে না নিজেও পাগল হয়ে যেতে।

– আমি পাগল হতে চাই না দু’জনে পাগল হলে তোমাকে সামলাবে কে?

– হুম।

– পাগল না হলেও স্তব্ধের প্রেমে মাতাল হয়েছি আমি, সারাজীবন #স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা হয়ে থাকতে চাই।

– হুহ তুমি শুধু স্তব্ধের স্নিগ্ধতা।

স্তব্ধ পরম যত্নে স্নিগ্ধতার কপালে লেপ্টে থাকা ভেজা ছোট চুল গুলো কানের পেছনে গুজে দিল আর স্নিগ্ধতা স্তব্ধের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।

(~সমাপ্ত~)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে