#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:২৬
স্তব্ধ আশেপাশে কোথাও স্নিগ্ধতাকে খুঁজে পাচ্ছে না। মোটামুটি সবাইকে জিজ্ঞেস করা শেষ কিন্তু কেউ নাকি স্নিগ্ধতাকে কিছুক্ষণ ধরে দেখছে না। স্তব্ধের প্রাণপাখি যায় যায় অবস্থা, রাতুল শিকদারের সঙ্গে কথা বলে আসার পর থেকে স্নিগ্ধতাকে দেখছে না, কমিউনিটি সেন্টারের সব জায়গায় খুঁজা শেষ। অনেকবার কল দেওয়া হয়েছে কিন্তু স্নিগ্ধতার মোবাইল বন্ধ চিন্তায় দম বন্ধ হয়ে আসছে স্তব্ধের কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারছে না, এখন সবাইকে বিষয়টা জানালে সবাই চিন্তা করবে তিহান আর শিরিনকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে তারা অনেক খুশি স্তব্ধ চায় না তাদের এই আনন্দ মিয়ে যাক।
বিয়ে বাড়িতে এসেও নিতু তার সমবয়সী কাউকে পায়নি এতক্ষণ নাতাশার সঙ্গে থাকলেও এখন নাতাশাকে দেখতে পাচ্ছে না তাই একপাশে একা একা দাড়িয়ে আছে।রাজ নিতুকে চুপচাপ একা একা দাড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে গিয়ে বলল,
– তুমি স্তব্ধের খালাতো বোন না?
– জ্বি।
– এভাবে চুপচাপ এখানে দাড়িয়ে আছো কেন?
– এতক্ষণ আমার সাথে আপু ছিল।
– তো কোথায় গেল তোমার আপু?
– ওয়াশরুমের কথা বলে যে সেই কখন গেল এখনও আসলোই না মাও ওদিকে বড়দের সঙ্গে কথা বলছে স্নিগ্ধতা ভাবীকেও খুঁজলাম কিন্তু কোথাও দেখলাম না।
– এই জন্যই একা দাড়িয়ে আছো?
– হুম।
– আমাদের মধ্যে অনেক মিল আমিও একা তুমিও একা।
– আপনি একা কেন ভাইয়া?
– আমার বউ নেই তাই আমি একা।
– তাহলে বিয়ে করে নিন।
– বিয়ে দিলে তো করবো আচ্ছা তুমি কি বিবাহিত?
নিতু বিষ্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
– উহু আমাকে দেখে কি আপনার বিবাহিত মনে হয়?
– না তবে অনেকে আছে যারা বিবাহিত হবার পরেও বিবাহিত বুঝা যায় না।
– আমি বিবাহিত নই আমি এখনও অনেক ছোট, ছোটদের কি বিয়ে হয়?
রাজ কপাল চুলকিয়ে কয়েক সেকেন্ড ভেবে বলল,
– ছোটদের বিয়ে হয় না?
– না।
– ওহ তাহলে আমিও হয়তো ছোট।
নিতু জোরে জোরে হেসে দিল।রাজ কপাল কুঁচকে সেই হাসির দিকে তাকিয়ে আছে প্রাণবন্ত এক হাসি তখনি তাদের সামনে স্তব্ধের আগমন ঘটে।স্তব্ধ নিতুর উদ্দেশ্যে বলল,
– নিতু তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই বাড়ির দিকে রওনা দিবে।
নিতু মাথা নাড়িয়ে চলে গেল রাজ মুখ গোমড়া করে বলল,
– ওকে যেতে বললি কেন?
– ওকে দিয়ে তুই কি করবি?
– কিছু না তোর মুখ চুপসে আছে কেন?
– স্নিগ্ধকে খুঁজে পাচ্ছি না আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।
– খুঁজে পাচ্ছিস না মানে? আশেপাশে কোথাও আছে হয়তো ভালো করে দেখ।
– সব জায়গায় দেখেছি কোথাও নেই কেউ বলতে পারছে না কোথায় গেছে নাম্বারে কল দিয়েছি মোবাইল বন্ধ বলছে।
রাজ ব্রু কুঁচকে বলল,
– বিয়ের সময়ও তো ভাবীকে দেখলাম এর মধ্যে কোথায় চলে গেল?
– বিয়ের পরেও আমি স্নিগ্ধকে দেখেছি কথাও বলেছি ও বলল ড্যড আমাকে ডাকছে আমিও গেলাম কিন্তু এসে আর ওকে দেখছি না।
– এখন কি করবি?
– বুঝতে পারছি না এত তাড়াতাড়ি কোথায় চলে গেল? কাউকে বলতেও পারছি না সবাই চিন্তা করবে।
– আঙ্কেলকে বলেছিস?
– না।
– আঙ্কেলের কাছে চল সবটা জানা আঙ্কেল দেখি কি বলে।
স্তব্ধ এবং রাজ রাতুল শিকদারের কাছে গেল। রাতুল শিকদার শিরিনের বাবার সঙ্গে কথা বলছিলেন স্তব্ধ ডাক দিতেই ওখান থেকে সরে এসে বললেন,
– বল।
– ড্যড স্নিগ্ধকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।
– কি বলিস!
স্তব্ধ সবকিছু বলল রাতুল শিকদারকে, রাতুল শিকদারের মুখেও চিন্তার ছাপ ফুটে উঠেছে।ব্রু কিঞ্চিৎ কুঁচকে বললেন,
– রুশি কোথায়?
রাজ বলল,
– বাকি রিলেটিভদের সঙ্গে দেখে আসলাম।
– নাতাশা?
– জানি না আঙ্কেল নিতুও নাতাশাকে খুঁজছে কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না।
স্তব্ধ অধৈর্য হয়ে বলল,
– এদিকে আমি আমার বউকে খুঁজে পাচ্ছি না আর তুমি নিজের শালীর খবর নিচ্ছো।
– কারণ আছে তাই নিচ্ছি, রাজ তুমি সবাইকে নিয়ে বাড়িতে যাও কেউ যাতে এ খবর জানতে না পারে, আমার আর স্তব্ধের কথা জিজ্ঞেস করলে বলবে আমরা অন্য গাড়ি দিয়ে আসছি।
– ড্যড স্নিগ্ধ..
– স্নিগ্ধতা মা’কে আমরা খুঁজে বের করবো।
রাজ বলল,
– আচ্ছা আঙ্কেল ওইদিকটা আমি সামলে নিচ্ছি কোনো দরকার হলে আমাকে জানাবেন।
রাজ চলে গেল। ধীরে ধীরে কমিউনিটি সেন্টার খালি হয়ে যাচ্ছে তিহানদের গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে, স্তব্ধের কপাল থেকে ঘাম চুঁইয়ে চুঁইয়ে পরছে রাতুল শিকদার ছেলের কাঁধে হাত রেখে বললেন,
– চিন্তা করিস না বউমাকে আমরা পেয়ে যাব।
– কিন্তু ড্যড স্নিগ্ধ কোথায় গেছে কেন গেছে তাই তো জানি না।
– বউমা নিজ থেকে কোথাও যায়নি তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
স্তব্ধ চমকায়িত কন্ঠে বলল,
– নিয়ে গেছে!
– হুম আমার সঙ্গে চল।
রাতুল শিকদার সামনের দিকে হাঁটছেন আর স্তব্ধ পেছনে তাকে অনুসরণ করছে। রাতুল শিকদার কমিউনিটি সেন্টারের ম্যানেজারের কাছে গেলেন,ম্যানেজার উনাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,
– স্যার কি হেল্প করতে পারি বলুন?
– আমার পুত্রবধূ বিয়ে উপলক্ষে আমাদের সঙ্গেই এখানে এসেছিল কিন্তু কিছুক্ষণ ধরে তাকে খুঁজে পাচ্ছি না সবজায়গাতেই খুঁজা শেষ।
– কি বলছেন স্যার আমাদের এখানে স্ট্রং একটা সিকিউরিটি আছে বাচ্চা হারিয়ে যাওয়াও অসম্ভব সেখানে বড় মানুষ কিভাবে হারিয়ে যাবে?
– হুম এই জন্যই আপনার কাছে আসা আপনাদের এখানে তো সিসি ক্যামেরা আছে আমরা সিসি টিভি ফুটেজ দেখতে চাই।
– জ্বি স্যার আসুন।
ম্যানেজার তাদেরকে সিসি ক্যামেরা কন্ট্রোলার রুমে নিয়ে গেলেন।ঢাকার নামিদামি কমিউনিটি সেন্টার হওয়ায় সব ধরনের ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা এখানে আছে। টাইমিং অনুযায়ী সিসি টিভি ফুটেজ অন করা হলো, ফুটেজে একটা লোক দৃষ্টি রেখে বলল,
– যাকে পাওয়া যাচ্ছে না ভালো করে দেখুন তিনি এখানে আছেন কিনা?
রাতুল শিকদার আর স্তব্ধ দু’জনেই ফুটেজ দেখছে। অনেক মানুষ দেখা যাচ্ছে স্তব্ধ চঞ্চল কন্ঠে বলল,
– ওই খয়েরী রঙের শাড়ি পরাটাই স্নিগ্ধ।
ফুটেজে দেখা যাচ্ছে স্তব্ধ আর স্নিগ্ধতা কথা বলছে,স্তব্ধ পুনরায় বলল,
– কয়েক মিনিট সামনে টানুন ভিডিওটা।
লোকটি স্তব্ধের কথামতো ভিডিও টেনে নিলো, এবার দেখা যাচ্ছে স্নিগ্ধতা দু’টো মেয়ের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছে তখনি নাতাশা স্নিগ্ধতার কাছে আসে, স্নিগ্ধতার সঙ্গে কয়েক সেকেন্ড কথা বলল তারপর দু’জনে মিলে স্থান ত্যাগ করল দু’জনের মুখেই হাসি।
এরপর থেকে ফুটেজে নাতাশা এবং স্নিগ্ধতা কাউকেই কোথাও দেখা যাচ্ছে না।স্তব্ধ ভারী কন্ঠে বলল,
– ড্যড তার মানে নাতাশা!
– হুম নাতাশা স্নিগ্ধতাকে নিয়ে কোথাও গেছে এদের উপর আমার আগেই সন্দেহ হয়েছে এমন একটা কাজ করবে ভাবতেও পারিনি।
সেন্টারের সব গার্ডদের প্রশ্ন করে জানা গেছে স্নিগ্ধতা আর নাতাশা দু’জনকে একসঙ্গেই গেইট দিয়ে বের হতে দেখেছে তারা। স্তব্ধের চোখমুখ রাগে লাল হয়ে গেছে ক্রুর গলায় বলল,
– নাতাশা অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে একবার হাতের কাছে পেয়ে নেই নিজ হাতে খু’ন করবো।
– মাথা ঠান্ডা কর কে জানে কোথায় নিয়ে গেছে স্নিগ্ধতা মা’কে আগে খুঁজে বের করতে হবে কোনো ক্ষতি না হলেই হয়।
– ড্যড আমার মাথা কাজ করছে না আমার স্নিগ্ধকে চাই ড্যড।
– পুলিশকে ইনফর্ম করতে হবে।
রাতুল শিকদার তার পরিচিতি পুলিশ অফিসারকে কল দিয়ে পুরো ঘটনা জানালেন তারপর মোবাইল পাঞ্জাবির পকেটে ঢুকিয়ে স্তব্ধকে বললেন,
– চল আমার সঙ্গে।
রাতুল শিকদার এবং স্তব্ধ দু’জনেই কমিউনিটি সেন্টার থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠলেন।
______________
বাড়িতে আসার পর তিহান আর শিরিনকে হল ঘরের সোফায় বসানো হয়েছে নতুন বউ দেখার জন্য পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজনরা হুমড়ে পড়েছে।শিরিনের অস্বস্তি বোধ হচ্ছে এত মানুষের কারণে, রাহেলা বেগম ব্যাপারটা বুঝতে পেরে অরিত্রি শিকদারের উদ্দেশ্যে বললেন,
– বউমা ছোট নাতবউকে ঘরে নিয়ে যাও ওর এখন বিশ্রামের প্রয়োজন।
অরিত্রি শিকদার শিরিনকে নিয়ে যাবেন মাঝখানে তিহান বাঁধ সেধে বলল,
– তোমার কষ্ট করতে হবে না বড় আম্মু আমি নিয়ে যাচ্ছি।
– আচ্ছা যা।
শিরিন গরম চোখে তিহানের দিকে একবার তাকালো তিহান মেকি হাসলো। রাহেলা বেগম আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
– রাতুল,স্তব্ধ দাদুভাই নাতবউ ওরা কোথায়?
রাজ কিছুটা দূরে দাড়িয়ে ছিল কথাটা শোনা মাত্রই এগিয়ে এসে বলল,
– আঙ্কেল অফিসে গেছেন একটা কাজে,স্তব্ধ আর ভাবী অন্য গাড়িতে আসছে।
– ওহ।
রাহেলা বেগম অরিত্রি শিকদার তেমন কিছু বললেন না,রাজ চিন্তা মুক্ত হলো।
পুলিশ নাতাশা এবং স্নিগ্ধতার মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাকিং করতে সফল হয়েছে। একটা পুরনো বাড়িতে লোকেশন দেখাচ্ছে যা শহর থেকে কিছুটা দূরে, ওখানকার পুলিশকে ইনফর্ম করে দেওয়া হয়েছে তারাই বিষয়টা দেখবে।
একটা ঘরে বিশাল খাটে স্নিগ্ধতা শুয়ে আছে চোখ বন্ধ মাথার কাছে একজন মাঝবয়সী মহিলা বসে আছে।মহিলাটির অদ্ভুত সাজ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে বিরক্ত সে, কিছুক্ষণের মধ্যেই ভেতরে একজন পুরুষ প্রবেশ করলো পুরুষটি হচ্ছে আদ্রিক ঠোঁটের কোণে নোংরা হাসি।মহিলাটি বিরক্ত মুখে বললেন,
– আধ ঘন্টা ধরে বসে আছি এবার তো একে নিয়ে যেতে দিন।
– এত তাড়া কিসের?
– ধরা পড়লে বিপদ হয়ে যাবে।
– আদ্রিক খাঁন থাকতে ভয়ের কোনো কারণ নেই আজকের রাতটার জন্য স্নিগ্ধতা আমার কাছে থাকবে সকাল হলে পাচার করে দিও এমন জায়গায় পাঠাবে যাতে ফিরে আসতে না পারে স্তব্ধও কোনো খোঁজ না পায়।
– টাকার এমাউন্ট কিন্তু বেশি লাগবে।
– টাকা নিয়ে ভেবো না এখন এখান থেকে যাও আজ আমার স্বপ্ন পূরন হবে এতদিনের পরিশ্রম সফলতা পাবে।
মহিলাটি বাঁকা হেসে চলে গেলেন।আদ্রিক স্নিগ্ধতার দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, হাতটা স্নিগ্ধতার দিকে এগিয়ে নিচ্ছিল তখনি ভেতরে রুশি আর নাতাশা প্রবেশ করে।আদ্রিক রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকালো তাদের দিকে রুশি হালকা কেশে বলল,
– এই মেয়ের সঙ্গে যা ইচ্ছে করো কিন্তু এসবে আমাদের মা-মেয়ের নাম যাতে কোনভাবেই না জড়ায়।
– এই সামান্য কথাটা বলতে এসে আমার মুড নষ্ট করলেন?
– তোমার কাছে সামান্য হলেও আমাদের কাছে অসামান্য।
– চিন্তা করবেন না কেউ জানতে পারবে না।
রুশি আর নাতাশা স্বস্তি পেল। দু’জনে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো কিন্তু নাতাশা থেমে গিয়ে স্নিগ্ধতার দিকে তাকালো আদ্রিক ব্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল,
– আবার কি?
– এমন নিস্তেজ স্নিগ্ধতাকে দেখতে একদম ভালো লাগছে না,ওর ভয়ার্ত মুখটা খুব দেখতে ইচ্ছে করছে জোরে জোরে চিৎকার করবে অনুনয় বিনয় করবে ছেড়ে দেওয়ার জন্য কান্না করবে এসব দেখতেই তো মজা।
আদ্রিক বাঁকা হেসে বলল,
– এটা কেন আমার মাথায় আসলো না? মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য থ্যাঙ্কস নাতাশা।
– হুম এবার ওর জ্ঞান ফিরাও।
– ওর অনেক তেজ জ্ঞান ফেরালে সামলানো যাবে না রিস্ক হয়ে যাবে।
– তাহলে কি ইচ্ছে পূরণ হবে না?
– অবশ্যই হবে একটু অপেক্ষা করো।
আদ্রিক কাউকে ফোন দিল দুয়েকমিনিট পর একটা মহিলা প্রবেশ করল, দেখে বুঝা যাচ্ছে ডাক্তার।আদ্রিক বলল,
– জ্ঞান ফিরতেই আপনার স্পেশাল ইনজেকশন পুশ করে দিবেন।
– ওকেহ স্যার।
মহিলাটি ইনজেকশন নিয়ে রেডি হয়ে স্নিগ্ধতার মাথার পেছনের দিকে দাড়ালো।আদ্রিক জগ থেকে পানি ছুঁড়ে দিল স্নিগ্ধতার দিকে। মুখে আচমকা পানি লাগতেই জ্ঞান ফিরে আসলো স্নিগ্ধতার চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আশেপাশে ভালোভাবে দেখলো আদ্রিককে দেখে অবাক হয়ে গেছে প্রাণপাখি যেন উড়ে যায় যায় অবস্থা।
স্নিগ্ধতা উঠে বসার চেষ্টা করতে করতে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে বলল,
– আদ্রিক আপনি এখানে কেন? এটা কোন জায়গা?
– তুমি আমার কাছে স্নিগ্ধা ডার্লিং, আমি তোমাকে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ছিনিয়ে এনেছি।
বলেই আদ্রিক এক অদ্ভুত হাসি দিল।স্নিগ্ধতা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল,
– স্তব্ধ কোথায়?
– সত্যিই তো স্তব্ধ কোথায়?
নাতাশা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
– কোথায় আবার হয়তো বউকে খুঁজছে।
স্নিগ্ধতা এবার নাতাশার দিকে তাকালো তখনকার কথাটা মনে করার চেষ্টা করল।স্নিগ্ধতা তার পুরনো বান্ধবীদের সঙ্গে কথা বলছিল তখনি নাতাশা স্নিগ্ধতার কাছে গিয়ে বলল,
– স্নিগ্ধতা আমার সঙ্গে একবার গেইটের কাছে যাবে?
– কেন?
– আমার একটা ফ্রেন্ডকে ইনভাইট করেছিলাম সে এসে গেইটের সামনে দাড়িয়ে আছে তুমি একটু আমার সঙ্গে যাবে।
– আমি কেন?
– তুমি ছাড়া আর কাউকে তো আমি চিনি না এমন করছো কেন একবার চলো না অল্প সময়ের ব্যাপার।
– আচ্ছা আমি স্তব্ধকে বলে আসছি।
– স্তব্ধকে বলতে হবে কেন? তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছো না?
– আরে না এটা কখন বললাম।
– তাহলে চলো।
অগ্যতা স্বত্বেও স্নিগ্ধতা নাতাশার সঙ্গে গিয়েছিল কিন্তু গেইটের কাছে গিয়ে কাউকেই দেখতে পায়নি নাতাশা অনেক কিছু বলে স্নিগ্ধতাকে জোর করে গেইটের বাহিরে যায় আর তারপরেই কেউ পেছন থেকে স্নিগ্ধতার মুখে রুমাল চেপে ধরে অজ্ঞান করে দেয়।
স্নিগ্ধতা চমকায়িত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
– নাতাশা তুমি আমার সঙ্গে এমনটা করলে!
– আমি ছাড়া আর কে করবে?
– কেন এমন করেছ আমি তো তোমার কোনো ক্ষতি করিনি।
– তুমিই আমার বড় ক্ষতিটা করেছ আমার স্তব্ধকে কেড়ে নিয়েছ তোমার জন্য আঙ্কেল আমাদের অপমান করেছে এছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না স্তব্ধকে পাওয়ার জন্য এসব করতে হয়েছে আমাকে।
স্নিগ্ধতার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।আদ্রিক আহ্লাদি সুরে বলল,
– আহা কাঁদে না স্নিগ্ধা স্তব্ধকে তুমি আর এজীবনে পাবে না আজ আমি আমার ইচ্ছে পূরণ করবো কাল সকালেই তোমাকে পাচার করে দিব।
– আমি তোমাদের ইচ্ছে পূরণ হতে দিব না।
বলেই স্নিগ্ধতা উঠতে নিলো নাতাশা স্নিগ্ধতাকে চেপে ধরল কিন্তু পেরে উঠছে না।স্নিগ্ধতা নাতাশাকে ফেলে দিল,আদ্রিকের ইশারায় পেছনে থাকা মহিলাটি স্নিগ্ধতার হাতের পেছনের দিকে ইনজেকশন পুশ করে দিল।স্নিগ্ধতা ব্যথায় চেঁচিয়ে উঠলো, শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে স্নিগ্ধতা বিছানায় পড়ে গেল।আদ্রিক বলল,
– এত সহজে আমার সামনে দিয়ে চলে যাবে তুমি! তা তো হতে দেওয়া যায় না আজ নিজ চোখে তুমি তোমার ক্ষতি হতে দেখবে অথচ বাঁধা দিতে পারবে না।
অনেক চেষ্টা করেও স্নিগ্ধতা উঠতে পারছে না ইনজেকশনের মাধ্যমে তার শরীর অবশ করে দেওয়া হয়েছে। আর্তনাদ করার চেষ্টা করেও পারছে না, নাতাশা আর রুশি ঘর থেকে বেরিয়ে গেল এখন ঘরে শুধু আদ্রিক আর স্নিগ্ধতা। মনে মনে দোয়া দরুদ পড়া শুরু করল স্নিগ্ধতা চোখের কার্নিশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে যা দেখে আদ্রিক মজা পাচ্ছে।
স্নিগ্ধতার কাছে এগোনোর জন্য উদ্যত হতেই আদ্রিকের মোবাইল বেজে উঠল।আদ্রিক বিরক্ত হয়ে কল রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে একজন বলল,
– বস পুলিশ পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলেছে নিচের সব গার্ডদের ধরে নিয়েছে।
– পুলিশ জানলো কিভাবে?
– জানি না স্যার।
আদ্রিক চিন্তায় পড়ে গেল এত কষ্টের প্লান এত সহজে নষ্ট হয়ে যাবে ইতোমধ্যে পুনরায় জ্ঞান হারালো স্নিগ্ধতা।আদ্রিক ভাবছে কিভাবে এখান থেকে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে স্নিগ্ধতাকে নিয়ে পালানো যায়,ভাবতে ভাবতে ঘরের ভেতরে আরেকটা দরজার দিকে চোখ যায় দরজাটা খুলে এবার স্নিগ্ধতাকে কোলে নিতে যাবে ঠিক সেই সময় পেছন থেকে কেউ আদ্রিকের হাত শক্ত করে ধরে নেয়। আদ্রিক পেছনে ঘুরে স্তব্ধকে দেখে আঁতকে উঠল, ভয়ে একটা শুকনো ঢুক গিললো।স্তব্ধ স্নিগ্ধতার দিকে একবার তাকিয়ে তারপর আদ্রিককে কিল ঘুষি মা’রতে লাগলো। কয়েকজন পুলিশ এসে স্তব্ধের হাত থেকে আদ্রিককে নিয়ে গেল।
নাতাশা আর রুশিকেও পুলিশ আটক করেছে, বাড়িতে আরও কয়েকজন মেয়েকে পাওয়া গেছে হাত-পা বাঁধা অবস্থায়।স্তব্ধ স্নিগ্ধতার দুই গালে আলতো করে চাপড় দিয়ে ডাকতে লাগল,
– স্নিগ্ধ ওই স্নিগ্ধ উঠো না এই দেখো আমি এসেছি।
এবার আর স্নিগ্ধতার জ্ঞান ফিরলো না। রাতুল শিকদার বললেন,
– হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে ওকে স্তব্ধ নিয়ে আয় বউমাকে।
স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।
_______________
নাতাশা এবং রুশির নামে শক্ত পোক্ত একটা কেস দিয়েছেন রাতুল শিকদার কিন্তু আদ্রিকের নামে দিতে পারেননি স্তব্ধের জন্য তিনি বুঝতে পারছেন না স্তব্ধ কি করতে চাইছে। নাতাশা চিৎকার করে বলল,
– স্তব্ধ আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমাকে পাওয়ার জন্য এসব করেছি আমার সঙ্গে এমন করো না স্তব্ধ।
মূহুর্তের মধ্যেই মাথাটা আরও গরম হয়ে গেল স্তব্ধের নাতাশার দিকে এগিয়ে গিয়ে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে থাপ্পড় দিল নাতাশাকে। নাতাশা নিচে ছিটকে পড়ে গেল ঠোঁটের কোণ থেকে রক্ত বের হয়ে গেছে, রুশি মেয়ের করুন অবস্থা দেখে চেঁচিয়ে উঠলেন কিন্তু মেয়ের কাছে আসতে পারলেন না কারণ তাকে দু’জন মহিলা কনস্টেবল ধরে রেখেছে। নাতাশা ছলছল দৃষ্টিতে স্তব্ধের দিকে তাকিয়ে আছে রাতুল শিকদার স্তব্ধকে টেনে বাহিরে নিয়ে গেলেন।
সমস্ত ঘটনা অরিত্রি শিকদারকে জানিয়ে দিয়েছেন রাতুল শিকদার, অরিত্রি শিকদার বোন আর বোনের মেয়ের এমন কর্মকাণ্ড শুনে অবাক হয়ে গেছেন এখনও উনার কিছু বিশ্বাস হচ্ছে না।
চলবে……
[গল্প শেষের পথে, ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]