#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:২৫
ঘুমের মধ্যেই উপলব্ধি করতে পারছে স্নিগ্ধতা শূন্যে ভাসছে, কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিল স্নিগ্ধতা ঘুম তেমন প্রখর হয়নি বলতে গেলে কাঁচা ঘুম এই ঘুমের মধ্যেই কেউ তাকে শূন্যে ভাসিয়ে নিয়ে চলছে।স্নিগ্ধতার ভয় করছে চিৎকার দেওয়ার জন্য মুখ খুলেছে তখনি কেউ বলল,
– স্নিগ্ধ আমি।
অন্ধকারে কারো মুখ তেমন দেখা যাচ্ছে না।স্নিগ্ধতা ভিতু কন্ঠে বলল,
– আমি কে?
– ভূত।
স্নিগ্ধতা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল এবার বুঝতে পারলো এটা স্তব্ধ।স্নিগ্ধতা জিজ্ঞেস করল,
– এই মাঝরাতে আপনি এভাবে আমায় নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?
– তোমাকে ফেলে দিতে নিয়ে যাচ্ছি।
স্নিগ্ধতা হাসলো সেই হাসি অন্ধকারে দেখতে না পেলেও উপলব্ধি করতে পারলো স্তব্ধ, হাসিতে শরীর দুলছে।স্নিগ্ধতা স্তব্ধের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
– এবার তো নামান।
– জায়গা মতো গিয়ে নামিয়ে দিব।
স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে নিয়ে ছাদে গেল তারপর কোল থেকে নামিয়ে দিল।স্নিগ্ধতার মুখে আবারও রাগ ফুটে উঠেছে চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে স্তব্ধ।স্তব্ধ মিনমিনে গলায় বলল,
– কি ব্যাপার বউ হাসাহাসি বন্ধ করে রাগ দেখাচ্ছো কেন?
– আমি কিন্তু কিছুই ভুলিনি।
– স্যরি।
– সবকিছু নষ্ট করে দিয়ে এখন স্যরি বলা হচ্ছে?
স্তব্ধ মুচকি হেসে স্নিগ্ধতাকে পেছনের দিকে ঘুরিয়ে দিল। ট্রাউজারের পকেট থেকে কয়েকটা কাঠগোলাপ বের করে একটা স্নিগ্ধতার কানে গুজে দিল বাকিগুলো স্নিগ্ধতার হাতে দিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে গুনগুন করে গাইতে লাগলো,
তোমার জন্য নীলচে তারার
একটু খানি আলো
ভোরের রং রাতে মিশে কালো
কাঠগোলাপের সাদার মায়া মিশিয়ে দিয়ে ভাবি
আবছা নীল তোমার লাগে ভালো।
রাগ অভিমান সব যেন মুহূর্তেই গায়েব হয়ে গেল মুগ্ধ হয়ে স্নিগ্ধতা বলল,
– আপনি এত সুন্দর করে গানও গাইতে পারেন!
– শিখেছি।
– কেন?
– বউয়ের রাগ ভাঙানোর জন্য আজ কাজে লেগে গেল।
– আপনার এতসব পাগলামির পর আর রাগ করে থাকাও যায় না।
– কিন্তু এবার আমি রাগ করেছি।
স্নিগ্ধতা স্তব্ধের চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
– কেন?
– তুমি ডাকটাই ভালো লাগে এখন আবার আপনি করে কেন বলছো?
স্নিগ্ধতা চুপ।স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
– আমার প্রেমিকা,ভালোবাসা,বউ, প্রিয়তমা সব তো তুমি। বন্ধুদের সঙ্গে অনেকদিন টাইম স্পেন্ড করা হয় না রাজ অনেক রিকোয়েস্ট করছিল তাই ওদের সাথেই অফিস শেষে বের হয়েছিলাম অনেক জোরাজুরিতে ডিনারও ওদের সঙ্গে করেছি আমি জানতাম না তুমি আমার জন্য এভাবে অপেক্ষা করবে একবার ফোন করে বলতে পারতে চলে আসতাম।
নিজের বোকামির কথা ভেবে লজ্জা লাগছে স্নিগ্ধতার অযথা স্তব্ধকে ভুল বুঝলো।স্তব্ধ আবারো বলল,
– আজকের জন্য মাফ করে দাও।
স্নিগ্ধতা হেসে বলল,
– মাফ করেছি এবার ঘরে চলো।
স্তব্ধ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল দু’জনে ঘরে চলে গেল। ঘরে এসেই স্তব্ধ বলল,
– এবার খেয়ে নিবে চলো।
– রাত প্রায় শেষের দিকে এখন আর খাবো না।
– না খেলে শরীর খারাপ হবে অল্প কিছু হলেও খেয়ে নাও।
– উহু বেশি রাত করে খাবার খাওয়ার অভ্যাস নেই এখন খেলে আরও খারাপ লাগবে।
স্তব্ধ মুখ গোমড়া করে বলল,
– তোমার যা ইচ্ছে।
_____________
ভোরের আলো অনেক আগেই ফুটে গেছে ব্যস্ততম শহরে যে যার যার গন্তব্যে যাচ্ছে। মাঝরাতে ঘুমানোর কারণে স্নিগ্ধতার ঘুম ভাঙেনি,স্তব্ধও স্নিগ্ধতাকে ডাকেনি সালেহাকে বলে গেছে যাতে ঘর পরিষ্কার করে নাস্তা ঘরে দিয়ে যায়।
ঘুম ভাঙতেই স্নিগ্ধতা টি-টেবিলে খাবারের ট্রে দেখতে পেয়ে মুচকি হাসলো।ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে গেল, ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সোফায় বসতেই স্তব্ধের ফোন আসলো।স্নিগ্ধতা রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে স্তব্ধ জিজ্ঞেস করল,
– ঘুম ভেঙেছে মহারানী?
– হুম।
– নাস্তা করেছ?
– করবো, তুমি আমায় ডাকলে না কেন?
– রাতে অনেক দেরি করে ঘুমিয়েছ তাই ডাকলাম না।
– তুমিও তো।
– দেরি করে ঘুমালেও আমার সমস্যা হয় না।
– কখন আসবে?
– সন্ধ্যার পরে আজ না বিয়ের শপিং এ যাওয়ার কথা।
– হুম।
– আচ্ছা রাখি তাহলে তুমি খেয়ে নাও।
– আচ্ছা।
– শুনো।
– হুম।
– লাভ ইউ।
বলেই কল কেটে দিল স্তব্ধ, স্নিগ্ধতা মুচকি হেসে খেতে লাগলো।
বিয়ের জন্য কলেজ থেকে তিহান আর শিরিন ছুটি নিয়েছে।আজ তারা বিয়ের কেনাকাটা করতে যাবে।সব কলিগরা তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছে,প্রিন্সিপাল স্যার তো সরাসরি বলেই দিলেন,
– আপনাদের দু’জনের ঝগড়া দেখে আমি আগেই বুঝেছিলাম আপনাদের মধ্যে কিছু একটা হতে যাচ্ছে আজ প্রমাণ হয়ে গেল।
শিরিন আর তিহান বেশ লজ্জা পেয়েছে।
_______________
সন্ধ্যার পরে রাহেলা বেগম, রাতুল শিকদার আর সালেহা বাদে সবাই শপিং করতে বের হয়েছে। শিরিনও এসেছে বড়রা আলাদা ভাবে কেনাকাটা করছে।তিহান, শিরিন আর স্নিগ্ধতা শাড়ির দোকানে বসে শাড়ি দেখছে অন্যদিকে অরিত্রি শিকদার শিরিনের মা কেনাকাটা করছে। শাড়ি দেখতে দেখতে তিহান বলল,
– ভাবী ভাইয়া কোথায় গেল?
– জানি না আপনার ভাই এক জায়গায় বসে থাকার লোক নয়।
তিহান মৃদু হেসে বলল,
– হু শুধু ছটফট করে।
ওদের কথার মাঝখানে স্তব্ধ এসে একটা মোড়া টেনে বসলো।স্নিগ্ধতা জিজ্ঞেস করল,
– কোথায় গিয়েছিলে?
– পুরো শপিং মলে একটা টুকি দিতে গিয়েছিলাম।
তিহান হেসে বলল,
– এত তাড়াতাড়ি টুকি দেওয়া শেষ?
– উহু মাঝপথে বউকে মিস করছিলাম তাই চলে এসেছি।
স্নিগ্ধতা চোখ গরম করে তাকাতেই স্তব্ধ মুখটা অসহায় করে ফেলল, স্তব্ধের কথায় দোকানদারও হেসে দিল।স্তব্ধ দোকানদারকে একটা শাড়ি দেখিয়ে বলল,
– ওই খয়েরী রঙের শাড়িটা দেখান তো।
দোকানদার শাড়িটা স্তব্ধের হাতে দিল,স্তব্ধ শাড়িটা উল্টে পাল্টে দেখছে তিহান বলল,
– ওয়াও ভাইয়া শাড়িটা অনেক সুন্দর।
– নজর দিবি না।
– কেন?
– এটা আমার বউয়ের জন্য।
– বিয়ে আমাদের আর তুই কিনা নিজের বউয়ের জন্য শাড়ি পছন্দ করছিস?
– তুইও পছন্দ কর নিষেধ করেছে কে?
তিহান মুখ বাঁকালো।স্তব্ধ দোকানদারকে শাড়ি প্যাকেট করে দিতে বলে স্নিগ্ধতার উদ্দেশ্যে বলল,
– এই শাড়িটা পরলে তোমাকে কি সুন্দর যে লাগবে উফ ভাবতেই আমার লজ্জা লাগছে।
স্নিগ্ধতা ব্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
– আমাকে সুন্দর লাগলে তোমার লজ্জা লাগবে কেন?
– নিজেকে কন্ট্রোল করবো কিভাবে এই ভেবে।
– সবসময় আজেবাজে চিন্তা ভাবনা।
তিহান শিরিনের জন্য নিজে পছন্দ করে কয়েকটা শাড়ি কিনলো। বিয়ের ল্যাহেঙ্গা কেনার দায়িত্ব অরিত্রি শিকদারের উপর শিরিনকে নিজে পছন্দ করে কিনতে বলা হয়েছিল কিন্তু তার কথা,’আমি এসব তেমন বুঝি না।’
সবাই এবার গহনার দোকানে প্রবেশ করেছে,স্তব্ধ স্নিগ্ধতার পাশ থেকে সরছেই না এমন ভাবে লেগে আছে যেন সরে গেলেই বউ হারিয়ে যাবে। তিহান শিরিনের জন্য গহনা দেখছে সাথে শিরিনের মাও আছে আরেকদিকে স্তব্ধ স্নিগ্ধতার জন্য গহনা দেখছে কিন্তু স্নিগ্ধতার পছন্দ হচ্ছে না।অরিত্রি শিকদার একটা নেকলেস স্নিগ্ধতার গলার কাছে ধরে বললেন,
– এটা তোমার গলায় অনেক সুন্দর লাগবে।
স্তব্ধ মৃদু হেসে বলল,
– হুম মম স্নিগ্ধকে বেশ মানাবে।
অরিত্রি শিকদার নেকলেস প্যাক করে দিতে বললেন। পেছন থেকে একটা মেয়ে চেঁচিয়ে ডাক দিল,
– হেই স্তব্ধ।
ডাকটা সবাই শুনতে পেয়েছে তাই তাদের দৃষ্টি মেয়েটির দিকে।অরিত্রি শিকদার ব্রু কিঞ্চিৎ কুঁচকে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন,
– এই মেয়েটা আবার কে?
স্নিগ্ধতাও স্তব্ধের দিকে তাকিয়ে আছে উওরের আশায়।স্তব্ধ বিরক্ত চাহনি দিয়ে বলল,
– জেসি।
অরিত্রি শিকদার মুখ বাঁকিয়ে বললেন,
– তোর ড্যড এই মেয়ের কথাই বলেছিল?
– হুম।
স্নিগ্ধতা মা-ছেলের কথা কিছুই বুঝতে পারছে না ততক্ষনে জেসি চলে এসে স্তব্ধের সামনে দাড়ালো।জেসি ভাব নিয়ে বলল,
– অনেকদিন পর তোমার সঙ্গে দেখা হলো এখানে কেন এসেছ?
– তোমাকে বলবো কেন?
– তাও ঠিক, কেমন আছো?
– কি চাই?
– কিছু না আসলে আমি শপিং করতে এসেছিলাম আর তোমার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।
স্তব্ধ কিছু বলল না।জেসি মেকি হেসে বলল,
– আমার বিয়ে হয়ে গেছে।
– ভালো।
– আমার হাজব্যান্ড তোমার থেকেও সুন্দর।
– আরও ভালো।
আশানুরূপ উওর না পেয়ে জেসি বিদায় জানিয়ে চলে যেতে লাগলো।অরিত্রি শিকদার তিহানের কাছে চলে গেলেন জেসি কিছু একটা ভেবে আবারও ফিরে এসে জিজ্ঞেস করল,
– তোমার ওয়াইফ কোথায়?
স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে দেখিয়ে বলল,
– এটা আমার একমাত্র বউ তোমার থেকেও সুন্দর।
জেসি আবারও মেকি হেসে বলল,
– আহারে স্তব্ধ তোমার জন্য অনেক কষ্ট হচ্ছে সামান্য টাচ করায় তুমি সবার সামনে আমাকে থাপ্পড় মা’রলে অথচ আজ তুমি একজন বিবাহিত ছেলে তোমার বউ তোমার সব ইজ্জত লুটে নিলো।
– ফাজিল মেয়ে।
বলেই স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে টেনে দোকান থেকে বেরিয়ে গেল। জেসি হাসতে হাসতে একটা লোকের হাত ধরে চলে যাচ্ছে।স্তব্ধ লোকটাকে দেখতে পেয়েই বাঁকা হেসে চেঁচিয়ে বলল,
– আয়হায় জেসি তোমার হাজব্যান্ড তো বুইড়া।
আকষ্মিক এমন কথায় জেসি হতবাক হয়ে গেল জেসির হাজব্যান্ড কিছুটা লজ্জা পেয়েছে।জেসি রাগে কটমট করতে করতে শপিং মল থেকে বেরিয়ে গেল আশেপাশের মানুষগুলো হাসছে।স্নিগ্ধতা কিছুক্ষণ স্তব্ধের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে তারপর জোরে জোরে হেসে দিল।স্তব্ধ জিজ্ঞেস করল,
– হঠাৎ করে হাসছো কেন?
– তোমার কথায় হাসি পাচ্ছে এভাবে পাবলিক প্লেসে কেউ কাউকে অপমান করে?
– অপমান কখন করলাম আমি তো সত্যি কথাই বললাম।
– তুমি অনেক ইনোসেন্ট ভাবা যায় টাচ করেছিল বলে মেয়েটাকে থাপ্পড় মে’রেছ আমার না গর্ববোধ হচ্ছে।
স্তব্ধ স্নিগ্ধতার কথায় পাত্তা দিল না। শপিং শেষে সবাই বাড়িতে চলে এসেছে তিহান অবশ্য শিরিন আর তার মা’কে পৌঁছে দিয়ে এসেছে।
_______________
সময় বহমান এক সপ্তাহ পার হয়ে বিয়ের দিন চলে এলো চারিদিক সুসজ্জিত করে সাজানো হয়েছে। বাড়িতে বিয়ে বিয়ে আমেজ আত্মীয় স্বজন সবাই এসে বাড়ি ভরিয়ে দিয়েছে। গতকাল গায়ে হলুদ শেষ হয়েছে আজ বিয়ে, বিয়ের আয়োজন কমিউনিটি সেন্টারে করা হয়েছে।তিহান বরবেশে সেজে আয়নায় বারবার নিজেকে দেখছে বিছানায় স্তব্ধ আর রাজ বিরক্ত হয়ে তাকে দেখছে।স্তব্ধ এবার বলল,
– বারবার নিজেকে আয়নায় দেখার মানে কি? তুই কি মেয়ে?
– মেয়ে হতে যাব কেন? আজ আমার বিয়ে সুন্দর করে যেতে হবে।
– যা না আমাকে কেন বসিয়ে রেখেছিস? ওইদিকে আমার বউ কিভাবে সেজেছে কে জানে?
– আজ অন্তত বউ বউ করিস না ভাইয়া আজ তোর ছোট ভাইয়ের বিয়ে সেদিকে খেয়াল দে।
রাজ নিরলস ভাবে বলল,
– হ্যা সব আনন্দ তোদের কেউ বিয়ে করেছে আবার কেউ বিয়ে করতে যাচ্ছে আমার কপালটাই খারাপ অন্যের বিয়ে দেখতে হচ্ছে।
তিহান বলল,
– আহা রাজ ভাই কষ্ট পেও না বিয়ে বাড়িতে আজ অনেক মেয়ে আসবে ওখান থেকে কাউকে পটিয়ে নিও।
– কথা মন্দ নয়।
রাতুল শিকদারের তাড়ায় সবাই গাড়িতে গিয়ে বসলো।অরিত্রি শিকদার রাহেলা বেগম সালেহা আরও কিছু মহিলা বাড়িতেই থাকবে।অরিত্রি শিকদার মূলত রাহেলা বেগমের জন্যই যাননি রাহেলা বেগম এখন আর তেমন চলতে পারেন না হাঁটুর ব্যথা বেড়েছে।
গাড়িতে উঠতে গিয়ে স্নিগ্ধতার দেখা পেল স্তব্ধ, স্তব্ধের দেওয়া খয়েরী শাড়িটাই স্নিগ্ধতা পরেছে তবে শাশুড়ির দেওয়া নেকলেস পরতে পারেনি কারণ মাথায় হিজাব পরেছে, হাতে সোনার চুড়ি। স্তব্ধ স্নিগ্ধতার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না,রাজ কনুই দিয়ে স্তব্ধকে গুতা দিয়ে বলল,
– দেখা শেষ হলে গাড়িতে উঠ।
স্তব্ধ হালকা কেশে গাড়িতে উঠলো একেবারে স্নিগ্ধতার পাশ ঘেঁষে বসলো। ফিসফিস করে স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে বলল,
– তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে স্নিগ্ধ দৃষ্টি সরাতেই পারছি না।
স্নিগ্ধতা লাজুক হেসে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালো। রুশি,নাতাশা,নিতুও তাদের সঙ্গে যাচ্ছে পেছনের গাড়িতেই তারা উঠেছে।
শিরিন সবেমাত্র পার্লার থেকে বধূ বেশে সেজে সেন্টারে আসলো, শিরিনের জন্য নির্ধারিত একটা ঘরে শিরিন এসে বসলো আর তারপাশে সব বান্ধবী এবং কাজিনরা বসে আছে।
তিহানদের গাড়ি এসে কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছালো সবাই বর এসেছে বলে চেঁচাতে চেঁচাতে গাড়ির সামনে দাড়ালো। স্নিগ্ধতা গাড়ি থেকে নেমেই শিরিনের কাছে চলে গেল। গেইট থেকে সব নিয়ম বাঁধা পার করে তারপর সবাই ভেতরে প্রবেশ করলো। তিহানকে তার নির্ধারিত জায়গায় নিয়ে বসানো হয়েছে,স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে না দেখে মুখ মলিন করে রেখেছে।
______________
বিয়ের পর্ব শেষ তিহান আর শিরিনের বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে,তাদের দু’জনকে পাশাপাশি বসানো হয়েছে।তিহান আড়চোখে বারবার তাকাচ্ছে, তিহানের চাহনি দেখে শিরিন বলল,
– বাড়িতে নিয়ে সারাক্ষণ তাকিয়ে থেকো এখন আপাতত ঠিক হয়ে বসো।
তিহান রুমাল দিয়ে কপাল মুছে বলল,
– তুমি বলে ডাকা শুরু করে দিয়েছ!
– এখন আমরা স্বামী-স্ত্রী তুমি বলেই তো ডাকবো।
– হুম।
কিছু মেয়ে স্তব্ধের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে দেখে মনে হচ্ছে দৃষ্টি দিয়েই যেন গিলে খাচ্ছে।স্নিগ্ধতা অনেকক্ষণ যাবত খেয়াল করছে আর ভেতরে ভেতরে জেলাস ফিল করছে।স্নিগ্ধতা গিয়ে স্তব্ধের পাশ ঘেঁষে দাড়িয়ে বলল,
– বাবা তোমাকে ডাকছে।
– কেন?
– জানি না শুধু বলল তোমাকে ডেকে দিতে।
– যাচ্ছি।
স্তব্ধ রাতুল শিকদারের কাছে চলে গেল।স্তব্ধ যেতেই মেয়েগুলোর মুখ মলিন হয়ে গেছে,স্নিগ্ধতা মেয়েগুলোর দিকে এগিয়ে গিয়ে মৃদু হেসে বলল,
– ওদিকে তাকিয়ে লাভ নেই ওটা আমার হাজব্যান্ড।
স্নিগ্ধতা কথাটা বলেই হাসতে হাসতে চলে গেল মেয়েগুলোর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে তারা যে অনেক অবাক হয়েছে।
চলবে………..