স্তব্ধের স্নিগ্ধতা পর্ব-২৪

0
1244

#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:২৪

বাড়িতে স্নিগ্ধতার পুরো পরিবারকে দেখে চমকে গেছে শিরিন।শিরিনের বাবা-মাকে ফোন করে সবটা জানিয়ে দিয়েছিল স্নিগ্ধতা তাই তারা আগে থেকেই যেন প্রস্তুত ছিলেন। শিরিনকে শাড়ি পরিয়ে সোফায় বসানো হয়েছে, শিরিনের ঠিক বরাবর তিহান বসে আছে চোখেমুখে লাজুকতা ফুটে উঠেছে। শিরিন ইশারা দিয়ে স্নিগ্ধতাকে বারবার প্রশ্ন করছে কিন্তু স্নিগ্ধতা মুচকি মুচকি হাসছে।

এবার রাতুল শিকদার মুখ খুললেন,
– তিহান আমার ভাইয়ের ছেলে হলেও ওকে আমরা নিজেদের ছেলে হিসেবে বড় করেছি অনেকদিন ধরে বিয়ের কথা ভাবছিলাম তিহানের শিরিনকে পছন্দ হয়েছে তাই আর অপেক্ষা না করে আপনাদের কাছে চলে আসলাম বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।

শিরিন অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল মনে মনে বলল,’ছেলেটা এত ফাস্ট!প্রেম না করেই বিয়ে করতে চলে এসেছে?’

তিহানের ঠোঁটের কোণে হাসি প্রশস্ত হচ্ছে।শিরিনের এখন লজ্জা লাগছে।দুই পরিবার কিছুক্ষণ কথা বললেন, শিরিনের বাবা-মা বিয়েতে রাজি হয়ে গেলেন রাজি না হবার কথা নয় তিহান এক কথায় পাত্র হিসেবে অনেক ভালো তার উপর স্নিগ্ধতারও শশুর বাড়ি।

তিহান আর শিরিন একে অপরকে আংটি পরিয়ে দিলো। বিয়ের তারিখও ঠিক করা হয়ে গেছে আগামী সপ্তাহেই বিয়ে আসলে তিহান আর দেরি করতে চাইছে না। শিরিন ঘরে চলে গেল সঙ্গে স্নিগ্ধতাকেও নিলো ঘোমটা মাথা থেকে ফেলেই বলতে লাগলো,

– এই তোর সারপ্রাইজ?

– হুম কেমন লেগেছে?

শিরিন মুখ বাঁকিয়ে নিলো,স্নিগ্ধতা বিছানায় বসে বলল,
– এই প্রথম একটা কাজের কাজ করেছিস এখন দুই বান্ধবী এক বাড়িতে থাকবো।

– হুম তার আগে তোর দেবরের সঙ্গে হিসাব নিকাশ বাকি আছে।

– সব হিসাব নিকাশ মিটিয়ে নে।

– হুম, একটা প্রশ্নের উত্তর দে তুই।

– কি প্রশ্ন?

– তুই স্তব্ধকে মনের কথা বলেছিস?

– উহু।

– কেন?

– সম্পর্কটা তো ভালোই চলছে মনের কথা বলার কি দরকার।

– অবশ্যই বলতে হবে আজই বলবি।

– উহু আমার শরম করে।

– রাখ তোর শরম আমি যা বলছি তাই করবি।

– বলতে হবে কেন? উনি আমার মনের কথা ঠিকই বুঝতে পারেন।

– বুঝতে পারলে হবে না তোকে বলতে হবেই।

– এমন করছিস কেন? উনাকে দেখলেই আমার লজ্জা লাগে তার উপর মনের কথা বলবো অসম্ভব তুই বরং তোর আর তিহান ভাইয়ার কথা ভাব।

– আমাদের কথা আর কি ভাববো? আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আর তোদের বিয়ে হয়েছে এক ঝামেলার মধ্য দিয়ে বিয়ের পরেও ঝামেলা এখনও কিছু বলতে পারলি না।

স্নিগ্ধতা মুখ গোমড়া করে ফেলল, শিরিন বলল,
– আর দেরি করিস না মনের কথা বলে দিতে শিখ।

– কিভাবে?

শিরিন মুচকি হেসে ফিসফিস করে স্নিগ্ধতাকে বুঝিয়ে বলল।স্নিগ্ধতা হেসে বলল,
– আচ্ছা।

শিকদার পরিবারের সবাই নিজেদের বাড়ি ফিরে গেল। রাতুল শিকদার সোজা অফিসে গেছেন স্তব্ধের উপর পুরোপুরি ভরসা করতে পারেন না।

রাতুল শিকদার এসেই স্তব্ধের কেবিনে ঢুকলেন।স্তব্ধ গালে হাত দিয়ে ফাইল দেখছে, রাতুল শিকদার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিজের কেবিনে চলে গেলেন।
______________

নিজেদের বেড রুম অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে স্নিগ্ধতা।হরেক রঙের বেলুন মেঝেতে ছড়িয়ে দিয়েছে।দেওয়ালে আর বিছানায় গোলাপ, রজনীগন্ধা, হাসনাহেনা,গাঁদা ফুল লাগানো হয়েছে।তিহান স্নিগ্ধতাকে সাজাতে সাহায্য করেছে ফুলগুলোও তিহান নিজে গিয়ে নিয়ে এসেছে।মূলত শিরিন তিহানকে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়েছে।

বেলকোনিতে দু’জনে বসার মতো ছোট একটা টেবিল আর দু’টো চেয়ার রাখা হয়েছে মাঝখানে সুন্দর একটা কারুকাজের স্টেন যার ভেতর বড় বড় দু’টো মোমবাতি।ক্যান্ডেলাইট ডিনারের জন্য সাজানো হয়েছে এই বুদ্ধিটা তিহানের,স্নিগ্ধতা অস্থিরতা নিয়ে বলল,

– ভাইয়া এগুলো একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না?

– একদম না ভাবী, আমি তো ভেবে রেখেছি বিয়ের প্রথম রাতে শিরিনকে নিয়ে এভাবে আমিও ক্যন্ডেলাইট ডিনার করবো।

– আপনারটা মানা যায় কিন্তু আমি!

– এটা কোনো ব্যাপার না ভাবী, ভাইয়া সারপ্রাইজড হয়ে যাবে সাথে খুশিও হবে।

স্নিগ্ধতার অস্থিরতা এখনও যায়নি ভেতরে লজ্জা কাজ করছে।তিহান সবকিছু সাজানো শেষে বলল,
– সব কমপ্লিট আমি এবার আসি ভাবী তুমি অপেক্ষা করো ভাইয়া আসা পর্যন্ত নাকি ভাইয়াকে কল করবো?

– কল করার দরকার নেই আমি অপেক্ষা করবো।

– ঠিক আছে গুড নাইট হেভ এ নাইছ নাইট।

স্নিগ্ধতা মুচকি হাসলো।তিহান চলে যাচ্ছিল কি যেন মনে করে আবার এসে হাতে থাকা গোলাপের গুচ্ছ এগিয়ে দিয়ে বলল,

– এটা দিয়ে ভাইয়াকে প্রপোজ করিও।

স্নিগ্ধতা চোখ পাকিয়ে তাকাতেই তিহান ভয় পেয়ে ফুলগুলো রেখে দৌড়ে চলে গেল।

তিহান ঘরে এসে দরজা আটকে মোবাইল নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।শিরিনের নাম্বারে ফোন দিতেই সাথে সাথে রিসিভ হয়ে গেল।শিরিন আগে বলা শুরু করল,

– কাজ হয়েছে? সব ঠিকঠাক ভাবে ব্যবস্থা করেছেন?

– আমি যে কাজে হাত দেই সেই কাজ ঠিকঠাকই হয়।

– নিজের সুনাম করা বন্ধ করুন আরেকটা কথা ওদের আবার এসব নিয়ে লজ্জা দিয়েন না।

– লজ্জা শুধু ভাবী পায় আমার ভাইয়ার লজ্জা বলতে কিছুই নেই তোমার আমার কাহিনী শুনে আমাকে কম জ্বালাতন করেনি।

– আমি স্নিগ্ধার কথাই বলেছি।

– এবার আপনি আমাদের কথা বলুন।

– আমাদের কথা আর কি বলবো প্রপোজ না করেই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে বাড়িতে চলে এসেছেন এখন আবার হবু বউকে আপনি বলে সম্বোধন করছেন আপনার মতো বোকা হাদারাম আমি দু’টো দেখিনি।

– আপনি আমায় বোকা হাদারাম বললেন!

– হ্যা বললাম বলার মতো কাজগুলোই করছেন।

– বিয়ের পর প্রপোজ করবো প্রমিস, আপনিও আমায় আপনি বলেই সম্বোধন করছেন।

– নিজের ভাইয়ের থেকে কিছু হলেও শেখা উচিত।

– ভাইয়া আবার কি করলো?

– দুলাভাই স্নিগ্ধাকে তুমি বলে আর স্নিগ্ধা দুলাভাইকে আপনি বলে।

– আপনিও কি আমায় আপনি আপনি করে ডাকবেন?

– বিয়ের পর দেখা যাবে।

– আমিও বিয়ের পর দেখবো।

– আপনার সঙ্গে কথা বলা মানে পাগল হয়ে যাওয়া রাখুন।

শিরিন নিজেই কল কেটে দিলো।তিহান মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বলল,
– যাহ নিজেই কেটে দিলো!
.
.
.
দুই ঘণ্টা স্তব্ধের জন্য অপেক্ষা করছে স্নিগ্ধতা কিন্তু স্তব্ধের ফেরার কোনো নাম নেই একবার মনে হয়েছিল কল দিবে পরক্ষনে ভাবনা বদলে ফেলল প্রিয় মানুষের জন্য অপেক্ষা করতে মন্দ লাগছে না।

রাতুল শিকদার অনেক আগেই অফিস থেকে ফিরে এসেছেন তারা একসঙ্গেই ডিনার করেছে স্নিগ্ধতা খেতে যায়নি।স্তব্ধ অফিস শেষে আজ বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গেছে,রাজ অনেক অনুরোধ করেছিল আজ যেন বন্ধুদের একটু সময় দেয়। বন্ধুদের এমন অনুরোধে স্তব্ধ না করতে পারেনি এমনিতেও অনেকদিন হলো বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো হয় না।

বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে স্নিগ্ধতাকে জানানোর কথা ভুলেই গেছে স্তব্ধ। বন্ধুত্ব সম্পর্কটাই এমন বন্ধুদের সঙ্গে থাকলে মানুষ মূল্যবান কাজগুলোও ভুলে যায় সময় কোনদিক দিয়ে বয়ে যায় খোঁজ থাকে না। সবার জোরাজুরিতে বন্ধুদের সঙ্গেই ডিনার করেছে স্তব্ধ ঘড়িতে চোখ পরতেই চমকে গেল সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে।স্তব্ধ উঠে গিয়ে বলল,

– অনেক রাত হয়ে গেছে বাড়িতে যেতে হবে।

রাজ জিজ্ঞেস করল,
– মাত্র সাড়ে এগারোটা বাজে এখন বাড়িতে যাবি? আগে তো কত রাত পর্যন্ত আমরা পার্টি করতাম ঘুরতাম আড্ডা দিতাম।

– আগে আমার বউ ছিল না এখন বউ আছে বিবাহিত ছেলেদের বেশিক্ষণ বাইরে থাকতে হয় না তোর মতো অবিবাহিত ছেলে বউয়ের কদর বুঝবে কি করে।

নিলয় মাঝখান থেকে বলে উঠলো,
– ভাই বউ আমারও আছে কিন্তু তোর মতো বউ পাগল হয়ে যাইনি।

– চুপ মিথ্যুক তুই বউয়ের কাছ থেকেই সোজা এখানে এসেছিস আর আমি সেই সকালে আমার বউকে দেখে এসেছি তারপর অফিস আর অফিস থেকে এখানে, তোরা থাক আমি গেলাম টাটা।

স্তব্ধ আর কারো কথা না শুনেই বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গেল।রাজ দুঃখী দুঃখী কন্ঠে বলল,

– স্তব্ধের মতো ছেলেও বউ পাগল হয়ে গেল আর আমি অবিবাহিত রয়ে গেলাম এ সহ্য করার মতো নয় আজকেই বাবা-মায়ের সঙ্গে আমি কথা বলবো আমার বিয়ে নিয়ে।

নিলয় হেসে বলল,
– ভালোই হবে আরেকটা বিয়ে খাবো‌।

– বিয়ে কি খাওয়ার জিনিস নাকি?

– আমি বলতে চাইছি বিয়ের দাওয়াত খাবো।
__________

বাড়িটা পুরো শান্ত চারিদিকে নিরবতা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। বাড়িতে ফিরতে ফিরতে বারোটা বেজে গেছে, সদর দরজা আনলক ছিল।স্তব্ধ দরজা ভালোভাবে লক করে লাইট জ্বালিয়ে আশেপাশে দেখে নিলো তারপর নিজের ঘরের দিকে গেল।

ঘর পুরো অন্ধকার স্তব্ধ মোবাইলের ফ্লাশ লাইট জ্বালালো যাতে স্নিগ্ধতার ঘুমের কোনো সমস্যা না হয়।মেঝেতে বেলুন দেখে স্তব্ধের ব্রু কুঁচকে গেল কিন্তু শরীর অনেক ক্লান্ত বাহির থেকে এসেই পোশাক বদলে গোসল করার অভ্যাস স্তব্ধের আজও তার ব্যতিক্রম হলো না ভাবনা বাদ দিয়ে দিলো।

স্তব্ধ শব্দ না করে নিজের পোশাক নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে বের হতেই ঘরে লাইট জ্বালানো দেখতে পেল, পুরো ঘর সাজানো দেখে বেশ অবাক হলো বিছানায় তাকিয়ে স্নিগ্ধতাকে দেখতে না পেয়ে মনে মনে বলল,’স্নিগ্ধ ঘুমায়নি?’

টাওয়াল সোফায় রেখে বেলকোনির দিকে এগিয়ে গেল স্তব্ধ।বেলকোনিতে রাখা টেবিলের উপর ক্যান্ডেল জ্বলছে,নুপূরের শব্দ শুনতেই পাশে তাকিয়ে স্নিগ্ধতাকে দেখতে পেল।

স্নিগ্ধতাকে অনেক সুন্দর লাগছে শরীরে জর্জেট শাড়ি পায়ে নুপূর চুলগুলো রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে বাঁধা মুখে কোনো প্রসাধনীর ব্যবহার নেই এতে যেন সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।স্তব্ধ অনুভব করছে তার সামনে সবথেকে সুন্দর এক নারী দাড়িয়ে আছে যাকে দেখে সে কথা বলতে ভুলে গেছে চোখ ফেরাতে পারছে না। স্তব্ধের এমন চাহনি দেখে স্নিগ্ধতার ভেতরে ঢুকপুকানি শুরু হয়ে গেছে অভিমানী কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,

– এত দেরি হলো কেন আসতে? আমি অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলাম।

– কেন অপেক্ষা করছিলে?

কি উওর দিবে ভেবে পাচ্ছে না স্নিগ্ধতা। মনে মনে অনেক সাহস জুগিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দৌড়ে গিয়ে স্তব্ধকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।স্তব্ধ আরও চমকে গেল স্নিগ্ধতাকে তার আচেনা লাগছে তবে ছোঁয়া গুলো ভালোই লাগছে। স্নিগ্ধতা বলতে লাগলো,

– মানুষ কখন কারো জন্য অপেক্ষা করে?

– যাকে ভালোবাসে।

– আমিও তোমাকে ভালোবাসি স্তব্ধ।

স্তব্ধ স্নিগ্ধতাকে জড়িয়ে ধরলো এই প্রথম স্নিগ্ধতা স্তব্ধকে তুমি বলে সম্বোধন করছে।স্নিগ্ধতা আবারও বলল,

– প্রথম থেকেই তোমার প্রতি আমার একটা ভালোলাগা কাজ করছিল এই ভালোলাগাই একসময় ভালোবাসায় পরিণত হয় আমার প্রতি তোমার ছোট ছোট কেয়ার গুলো ভিষন ভালো লাগতো, তোমাকে ভালোবাসি বলতে চেয়েও বলতে পারিনি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো আমার মনের কথাগুলো বুঝতে পারবে জানি না কতটুকু বুঝতে পেরেছ কিন্তু মনের ভেতর না বলা কথাগুলো আর আটকে রাখা যাচ্ছিল না ইচ্ছে করছিল সব অনুভূতি গুলো প্রকাশ করে দিতে।

– আমার বউটা যে আমাকে ভালোবাসে আমি জানতাম আমিও চেয়েছিলাম যাতে তুমি নিজ মুখে আমায় ভালোবাসি বলো।

স্নিগ্ধতা মৃদু হাসলো, লজ্জা কিছুটা হলেও কমেছে ভেতরে আনন্দ কাজ করছে।স্তব্ধ স্নিগ্ধতার থুতনি ধরে মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

– আপনির থেকে তোমার মুখে তুমি ডাকটা অনেক সুন্দর লাগে রোমান্টিক রোমান্টিক ফিল আসে বাই দ্য ওয়ে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে আমি কখনও পরী দেখিনি কিন্তু তোমায় দেখছি।

স্নিগ্ধতা লাজুক হেসে বলল,
– শুকনো কথায় চিড়ে ভিজবে না।

স্তব্ধ স্নিগ্ধতার কোমড় জড়িয়ে ধরে বলল
– এখন কি করতে হবে মহারানী?

– সুন্দর করে আমায় প্রপোজ করতে হবে।

– পারবো না বউকে আবার প্রপোজ করতে হয় নাকি?

– কাকে করতে হয়?

– প্রেমিকাকে করতে হয়।

– আপনার প্রেমিকা আছে!

– আছে তো।

স্নিগ্ধতার মুখের হাসি মিলিয়ে গেল কোমড়ে দুই হাত রেখে বলল,
– আমি ছাড়া আপনার জীবনে আর কেউ থাকবে না।

– তাহলে ওই প্রেমিকার কি হবে?

– ঝাটা পেটা করবো সুড়সুড় করে চলে যাবে।

– ওকে মা’রলে আমি কষ্ট পাবো।

স্নিগ্ধতা ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।স্তব্ধ মৃদু হেসে বলল,
– এখানে টেবিল কেন নিয়ে আসলে?ক্যান্ডেল জ্বলছে খাবার রাখা ক্যান্ডেলাইট ডিনারের প্ল্যান নাকি?

– তিহান ভাইয়া এগুলো করেছে।

স্তব্ধ অপরাধী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
– ওহ আসলে আমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি।

মনটা বিষিয়ে গেল স্নিগ্ধতার আনন্দ গুলো রাগ আর অভিমানে রূপান্তরিত হলো। ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
– আপনার জন্য এতকিছু করাটাই ভুল হয়েছে, আমার আগেই বুঝা উচিত ছিল আপনি আমাকে ভালোবাসেন না সবকিছু সহানুভূতি ওই প্রেমিকার সঙ্গে ডিনার করেছেন তাই না? ওই প্রেমিকা নিয়েই থাকুন আমার কাছে আর আসবেন না।

স্তব্ধ অস্থির হয়ে বলল,
– পুরোটা না জেনে এতকিছু ভেবে নিয়েছ!

স্নিগ্ধতা কিছু বলল না স্তব্ধের পাশ কাটিয়ে হাঁটা ধরলো।স্তব্ধ স্নিগ্ধতার হাত ধরে বলল,
– আরে কোথায় যাচ্ছো?

– আপনার সঙ্গে আমি থাকবো না দিদানের ঘরে গেলাম আপনি একাই থাকুন।

বলেই স্তব্ধের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে চলে গেল স্নিগ্ধতা।স্তব্ধ অসহায় কন্ঠে বলল,
– উফ স্তব্ধ কেন দুষ্টুমি করতে গেলি এত সুন্দর মোমেন্ট নষ্ট হয়ে গেল।

রাহেলা বেগম ঘুমিয়ে আছেন,স্নিগ্ধতা রাহেলা বেগমের ঘরে এসে দরজা চাপিয়ে দিয়ে বিছানার একপাশে শুয়ে পড়লো। মনে মনে স্তব্ধকে ধুয়ে দিচ্ছে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নাও করছে।

চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে