#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:২১
‘এই কানা লোক আপনাকে বারবার কেন আমার সঙ্গেই ধাক্কা খেতে হবে?’
তিহান অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
– আমার কি দোষ আপনিই তো আমার সামনে চলে আসেন।
– আমি সামনে আসি নাকি আপনি আসেন?দাড়ান দাড়ান আপনি আমাকে ফলো করেন না তো!
– ফলো করবো কেন? আমরা এক কলেজের শিক্ষক দেখা হবে এটাই স্বাভাবিক।
– ধাক্কা কেন লাগবে?
– আপনি বটগাছ তাই ধাক্কা লাগে।
– আমি বটগাছ নই বরং আপনি তাল গাছ।
– মোটেও না আমি লম্বায় ঠিক আছি।
– সরুন সামনে থেকে আপনার সঙ্গে ঝগড়া করার সময় নেই মুড নষ্ট করে দিল।
– ঝগড়া করা শেষে বলে সময় নেই এ কি মেয়ে মানুষ রে বাবা?
শিরিন মুখ বাঁকিয়ে চলে গেল। কলেজ শেষে বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে হল ঘরে বসলো তিহান হাঁক ছেড়ে বলল,
– ভাবী এক কাপ কফি পাওয়া যাবে?
তিহানের কন্ঠ পেয়ে স্নিগ্ধতা হল ঘরে উঁকি দিয়ে বলল,
– হুম ভাইয়া আনছি।
কয়েক মিনিট সময় নিয়ে কফি বানিয়ে এনে তিহানের হাতে দিল স্নিগ্ধতা।তিহান কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলল,
– ভাবী তোমার বান্ধবী এত ঝগড়ুটে কেন? জম্মের সময় মুখে কি মধু দেওয়া হয়নি?
– আমার বান্ধবী!
– ওই যে শিরিন।
– শিরিনকে কোথায় পেলেন আর ওকে চেনেন কিভাবে?
– আমরা এক কলেজের শিক্ষক ওই যে একটা ঝগড়ুটে মেয়ের কথা বললাম না এখন দেখি এটাই তোমার বান্ধবী।
– ওহ।
– কখনও তো বললে না তোমার ঝগড়ুটে বান্ধবী আছে।
– আপনি জিজ্ঞেস করলে তো বলবো ভাইয়া।
– তাও ঠিক।
– আজকেও কি ঝগড়া হয়েছে?
– হুম।
– কি নিয়ে?
– ধাক্কা লেগেছে বলে ঝগড়া করেছে বিশ্বাস করো ভাবী আমার কোনো দোষ ছিল না।
– শিরিন এমনি ওর রাগ একটু বেশি।
– তাই বলে সবসময় আমার সঙ্গে কেন ঝগড়া করবে? তুমি কি ভালো আর তোমার বান্ধবী ঝগড়ুটে।
স্নিগ্ধতা হাসতে হাসতে বলল,
– ভাইয়া ওর সামনে গিয়ে এই কথাটা শুধু বলবেন।
– আমার আর ঝগড়া করার ইচ্ছে নেই।
তিহান কফির কাপ খালি করে দাড়িয়ে গিয়ে বলল,
– ঘুম পাচ্ছে ভাবী ঘরে গেলাম।
– এই অবেলায় ঘুম!
– তোমার বান্ধবীর ঝগড়া দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত এই ক্লান্তি দূর করতে ঘুমের প্রয়োজন।
– আচ্ছা যান।
তিহান হাই তুলতে তুলতে চলে গেল স্নিগ্ধতার হাসি পাচ্ছে।শিরিনের নাম্বারে ফোন করল স্নিগ্ধতা কয়েকবার রিং হয়ে কল রিসিভ হলো।স্নিগ্ধতা গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
– এতক্ষণ লাগে কল রিসিভ করতে?
– মোবাইল সাইলেন্ট ছিল আর আমি ফ্রেশ হতে গিয়েছিলাম।
– ওহ অনেকদিন ধরে তোকে দেখি না একবার দেখা করবি?
– আমিও এটাই ভাবছিলাম কিন্তু বলা হয়ে উঠছিল না।
– কবে দেখা করবি বল?
– তোর যেদিন ইচ্ছে চলে আয় আমার ফ্ল্যাটে দু’জনে মিলে আড্ডা দিব।
– উহু আমি যাব না তুই কাল এখানে চলে আয় এমনিতেও তোর তো কারো সঙ্গে তেমন ভাবে পরিচয় হয়নি।
– তোর ওই শশুর বাড়ীতে আমি যাচ্ছি না।
– এমন করে কেন বলছিস? তোকে তো সবকিছু বলেছি।
– তুই সবকিছু এত সহজে মেনে নিলি কিভাবে?
– আমি কিছুই মেনে নেয়নি একটা কথা কি জানিস? একটা সম্পর্ক ভাঙ্গা সহজ কিন্তু গড়া অনেক কঠিন হোক না কিছু খারাপ এতে যদি ভালো হয় তাহলে সমস্যা কি? সবকিছু বিবেচনার পর দেখলাম আমার সঙ্গে শুধু অন্যায় করেছে আমার সৎ মা, সব দুঃখ দূর হয়ে সুখ আমার দুয়ারে নিজ থেকে এসেছে আমি কিভাবে এই সুখ আর সবার ভালোবাসাকে তুচ্ছ করে চলে যাই বল তো, তবে স্তব্ধকেও কম জব্দ করিনি, সব জায়গায় আত্ন সম্মান মানায় না আমি নিজ থেকে যেমন এ বাড়ি থেকে বের হইনি তেমনি নিজ থেকে আসিনি।
– সেল্ফ রেসপেক্ট বলে একটা কথা আছে জানিস নিশ্চই?
– হুম জানি।সেল্ফ রেসপেক্ট যদি সবকিছু হতো তাহলে পৃথিবীর বেশিরভাগ সম্পর্ক নিমিষেই ভেঙে যেত ভালোবাসা বলে কিছু থাকত না শুধু বিচ্ছেদ নামক শব্দটা শোনা যেত, এমন কোনো সম্পর্ক নেই যেখানে সমস্যা হয় না কিছুটা হলেও মানিয়ে নিতে হয় আমি শুরু থেকেই স্তব্ধের ভালোটা দেখেছি তাকে নতুন করে চিনেছি এত এত ভালোর মাঝে সামান্য পরিমাণ ভুলের জন্য তাকে ছেড়ে যাব, এ সম্ভব নয় এতে যদি কারো মনে হয় আমার আত্নসম্মান নেই তাহলে তাই, ঘটনা যার সঙ্গে ঘটে সেই বুঝতে পারে বাকিরা শুধু নামমাত্র শান্তনা দেয়।
– তাও ঠিক তবে তুই যদি ভালো থাকিস আমি খুশি কিন্তু তোর হাজব্যান্ডকে বেশি বেশি চাপে রাখবি।
স্নিগ্ধতা ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,
– তা আর বলতে।
– আচ্ছা এখন তাহলে রাখি।
– হুম কাল কিন্তু তোকে আমাদের বাড়িতে দেখতে চাই।
– ভেবে দেখব।
– ভাবার কিছু নেই তুই আসছিস এটাই ফাইনাল।
– ঠিক আছে।
শিরিন কল কেটে দিল,স্নিগ্ধতা ফোন রেখে ঘর গোছাতে লাগলো, অনেকদিন ধরে ঘরটা গুছানো হয় না নিজের এবং স্তব্ধের কিছু জামা-কাপড় নিয়ে গেল ধুয়ার জন্য।
জামা-কাপড় ধুয়ে ছাদে মেলে দিয়ে এসে গোসল করে নামাজ পড়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিল স্নিগ্ধতা। ঘুমে চোখটা লেগে এসেছে তখনি অরিত্রি শিকদার ঘরে এলেন বেড সাইডের পাশে রাখা সোফায় বসে মমতাময়ী কন্ঠে ডেকে বললেন,
– স্নিগ্ধতা ঘুমিয়ে গেছ নাকি?
শাশুড়ির কন্ঠস্বর শুনে স্নিগ্ধতা তাকালো শোয়া থেকে উঠে বসে মৃদু হেসে বলল,
– না মা এমনি শুয়ে ছিলাম।
– এতগুলো কাপড় নিজে ধুতে গেলে কেন? সালেহাকে বলতে পারতে কিংবা ওয়াশিং মেশিনে ধুতে।
বাবার বাড়িতে থাকতে সবার কাপড় নিজ হাতে একাই ধুতো স্নিগ্ধতা মলিন হেসে বলল,
– সালেহা আন্টি তো অনেক কাজ করে তাই আর বিরক্ত করিনি এছাড়া আমার অভ্যাস আছে।
– আচ্ছা এদিকে আসো আমার পাশে বসো মাথায় তেল দিয়ে দেই চুলগুলোর অবস্থা কেমন হয়েছে আয়নায় দেখেছ?
– আপনাকে কষ্ট করতে হবে না মা।
– পাকামো বাদ দিয়ে যা বলছি তাই করো।
স্নিগ্ধতা চুপ হয়ে গেল অরিত্রি শিকদারের পাশে বসলো পিঠ ঘুরিয়ে।অরিত্রি শিকদার পরম যত্নে স্নিগ্ধতার মাথায় তেল দিতে দিতে বললেন,
– নিজের খেয়াল রাখতে শিখো যত্ন নিতে শিখো মন যা চায় তাই করো দেখবে শরীর আত্মা ভালো থাকবে।
– জ্বি মা।
– অনেকদিন বাহিরে কোথাও যাওয়া হয় না চলো আজ তিন শাশুড়ি বউমা মিলে ঘুরতে যাই।
স্নিগ্ধতা কৌতুহল নিয়ে বলল,
– মা তিন শাশুড়ি বউমা কিভাবে?
অরিত্রি শিকদার রসিকতার ছলে বললেন,
– আমার শাশুড়ি তোমার শাশুড়ি আর তুমি।
স্নিগ্ধতা হেসে দিল।প্রশ্ন করল,
– দিদান যেতে রাজি হবে?
– অবশ্যই আমাদের যাওয়ার কথা শুনলে ঠিক রাজি হবে।
_____________
‘অফিসে এসে কেউ গেম খেলে?’
স্তব্ধ নিজের কেবিনে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে মোবাইলে গেম খেলছিল রাতুল শিকদার এসে ছেলের এমন কাজ দেখে বিরক্ত কন্ঠে প্রশ্নটি করলেন।স্তব্ধ আড়চোখে একবার রাতুল শিকদারের দিকে তাকালো তারপর আবারো গেম খেলায় ব্যস্ত হয়ে গেল। রাতুল শিকদার রাগ দেখিয়ে বললেন,
– নিজের বাপকে পাত্তা দিচ্ছিস না! তোকে যে কতগুলো ফাইল দিয়ে গিয়েছিলাম ওগুলো কমপ্লিট না করে আরামে বসে গেম খেলছিস।
– ফাইল কমপ্লিট হয়ে গেছে এবার এগুলোর কি করবে তোমার ব্যাপার।
রাতুল শিকদার ব্রু কুঁচকে ফাইলগুলো দেখতে লাগলেন। সবগুলো ফাইল কমপ্লিট রাতুল শিকদার অবাক হবার ভঙ্গিতে বললেন,
– তুই এত আপগ্ৰেড হলি কিভাবে?
– জম্ম থেকেই ছিলাম তবে তোমার চোখে কখনও পড়েনি।
– আকামের জন্য আপগ্ৰেড ছিলি এখন কাজের ক্ষেত্রে হচ্ছে।
– কাজ শেষ এবার বাড়িতে যাই।
– বাড়ি বাড়ি করিস কেন? আগে তো খুঁজেও বাড়িতে সহজে পেতাম না এখন বাড়িতে কি? বস আমি আমার পি.এ কে বলে তোকে আরও কাজ দিয়ে যাচ্ছি।
– আগে তো বউ ছিল না তাই বাড়িতে থাকার দরকার ছিল না।
– বিয়ে করলে মানুষ এত বদলে যায় বাহ! আমিই বদলাতে পারলাম না।
– তুমি না বদলালে আপু আর আমি পয়দা হলাম কিভাবে!
রাতুল শিকদার কাশতে লাগলেন স্তব্ধ টেবিলের একপাশে রাখা পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল,
– পানি খাও ড্যড।
রাতুল শিকদার এক চুমুকে পানির গ্লাস খালি করে বসা থেকে উঠে বাহিরে যেতে যেতে বললেন,
– দিনে দিনে ছেলেটা নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছে বাপের সঙ্গে অসভ্যতামি।
স্তব্ধ আবারও নিজের মতো গেম খেলছে।
___________
দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে অরিত্রি শিকদার স্নিগ্ধতা এবং রাহেলা বেগমকে নিয়ে বের হলেন। গাড়ি এসে থামলো এক অনাথ আশ্রমের সামনে আসার সময় অনেক উপহার আর চকলেট কিনে এনেছেন। ভেতরে ঢুকতেই বাচ্চারা দৌড়ে এলো অরিত্রি শিকদার স্নিগ্ধতার উদ্দেশ্যে বললেন,
– এটা আমি আর স্তব্ধ মিলে নিজ হাতে তৈরি করেছি, প্লানটা স্তব্ধের ছিল রাস্তায় জ্যাম হলে অসহায় ছোট ছোট বাচ্চাদের অসহায়ত্ব দেখা যায় ওদের জন্য মায়া হয় তারপর স্তব্ধ আমার কাছে একদিন বলল আমিও রাজি হয়ে গেলাম পরে মা-ছেলে মিলে অদম্য পরিশ্রমের মাধ্যমে বাচ্চাগুলোর অসহায়ত্ব দূর করার চেষ্টা করলাম।
স্নিগ্ধতা শুধু শুনছে যত দিন যাচ্ছে স্তব্ধের প্রতি ভালোবাসা বাড়ছে।অরিত্রি শিকদার পুনরায় বললেন,
– স্তব্ধের ড্যড এই খবর জানে না ছেলের ভালো কাজের খবরই রাখে না অথচ কোথায় কোন বাঁদরামি করে বেড়ায় তার খবর সবার আগে তার কানে পৌঁছে যায়।
রাহেলা বেগম বললেন,
– এতে রাতুলের কি দোষ? দাদুভাই ভালো কাজগুলো আড়ালে করে আর বাঁদরামি গুলো ঢোল পিটিয়ে করে।
অরিত্রি শিকদার সবার সঙ্গে স্নিগ্ধতার পরিচয় করিয়ে দিল।স্নিগ্ধতা নিজ হাতে বাচ্চাদের চকলেট আর উপহারগুলো দিল। অনাথ আশ্রমটায় ৪৫-৫০ জন বাচ্চা আছে আর তাদের দেখভাল এর জন্য নয়জন পুরুষ এবং মহিলা রাখা হয়েছে।
স্তব্ধ কিছুদিন ধরে সন্ধ্যার পর পর বাড়িতে ফিরে কারণটা অবশ্য স্নিগ্ধতা।স্নিগ্ধতা সুযোগ পেলেই স্তব্ধকে খোঁচা দিয়ে কথা বলে,আজও স্তব্ধ সন্ধ্যার পর বাড়িতে ফিরল ফ্রেশ হয়ে পুরো বাড়ি চক্কর দিয়ে মা,দিদান আর বউকে না পেয়ে অবাক হয়ে গেল।তিহান মোবাইল টিপছে আর মুচকি মুচকি হাসছে, স্তব্ধ তিহানের বিছানায় বসে জিজ্ঞেস করল,
– কার সঙ্গে প্রেম করিস?
তিহান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়ে বলল,
– ককই কারো সাথে না তো।
– তাহলে হাসছিস কেন?
তিহান এবার হেবলার মতো হাসি দিয়ে বলল,
– একটা মিমস দেখে হাসছিলাম।
– ওহ, বাড়ির সবাই কোথায়? কাউকে দেখছি না কেন?
– বড় আম্মু ভাবী আর দিদানকে নিয়ে ঘুরতে গেছে।
– কখন!
– অনেকক্ষণ হয়েছে।
– কখন আসবে?
– জানি না।
স্তব্ধ ফাঁকা জায়গায় গিয়ে স্নিগ্ধতাকে ফোন দিতে লাগলো রিং হলেও রিসিভ হচ্ছে না উপায় না পেয়ে এবার হোয়াটসঅ্যাপ এ মেসেজ দিতে লাগলো কিন্তু সিন হচ্ছে না। বিরক্ত হয়ে মোবাইল রেখে দিয়ে বিছানায় হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো।
রাতে তিহান আর রাতুল শিকদারকে সালেহা খাবার দিয়ে গেছে। রাতুল শিকদার অরিত্রি শিকদারের এমন কাজে খুশী হয়েছেন স্তব্ধকে ডাকা হয়েছিল কিন্তু খাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তিহান ঢেকুর তুলতে তুলতে বলল,
– ভাইয়া খেতে এলো না কেন বড় আব্বু?
– তোর ভাবী বাড়িতে নেই বলে।
– ওহ।
তিহান ঘরের দিকে যেতে যেতে মনে মনে বলল, ‘বিয়ের পর মানুষ এত বদলে যায়!’
রাত নয়টায় তিনজন বাড়ি ফিরল আসার আগে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়েছিল তারা অরিত্রি শিকদার রাহেলা বেগম খেলেও স্নিগ্ধতা ঠিক মতো খায়নি। বাড়িতে এসে স্নিগ্ধতা আগে দিদানকে তার ঘরে নিয়ে ফ্রেশ হতে সাহায্য করলো তারপর নিজের ঘরে গেল।
ঘরে এসে খাটের উপর স্তব্ধকে হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকতে দেখে স্নিগ্ধতা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। স্তব্ধের চোখ বন্ধ একটা হাত কপালের উপর ভাঁজ করা, স্নিগ্ধতা ইচ্ছাকৃতভাবে শব্দ করে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল কয়েক মিনিট পর পোশাক পাল্টে বের হতেই আবারো স্তব্ধকে দেখতে পেল, স্তব্ধ এবার বিছানায় বসে আছে দৃষ্টি স্নিগ্ধতার দিকে। স্নিগ্ধতা সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে নিজের কাপড়গুলো বেলকোনির দড়িতে মেলে দিতে লাগলো আচমকা স্তব্ধ স্নিগ্ধতার কোমড় জড়িয়ে ধরে কাদুকাদু মুখে বলল,
– বউ তোমায় অনেক মিস করছিলাম।
– ড্রামা বাদ দেন।
– আমার ফিলিং তোমার ড্রামা মনে হয়?
– হুম।
– অনেকগুলো কল দিয়েছিলাম একবার তো ধরতে পারতে।
– ইচ্ছে হয়নি।
– ইগনোর করছো কেন? কোনো ভুল করেছি নাকি?
– ভুল করলে আপনাকে ছেড়ে দিতাম নাকি?
– তাহলে?
– ভালো লাগছে না।
– কাকে? আমাকে!
– হুম।
স্তব্ধের খারাপ লাগলো কিন্তু স্নিগ্ধতাকে বুঝতে দিল না জোরপূর্বক হেসে বলল,
– শুয়ে পড় ঘুমালে শরীর ভালো লাগবে।
বলেই স্তব্ধ আবারো ঘরে এসে বিছানার একপাশে বসলো। স্নিগ্ধতা ঘর থেকে বের হলো কিছুক্ষণ পর খাবার নিয়ে ঘরে আসলো, স্তব্ধের সোজাসুজি বসে এক লোকমা খাবার স্তব্ধের মুখের সামনে ধরতেই স্তব্ধ ব্রু কুঁচকালো।স্নিগ্ধতা বাম হাত দিয়ে স্তব্ধের গাল দু’টো চেপে ধরে মুখে খাবার তুলে দিয়ে বলল,
– কতবার বলবো রাতে না খেয়ে ঘুমানো ভালো না, মা খুশী হয়ে কোথাও নিয়ে যেতে চাইলেন তাই গিয়েছি এতে মন খারাপ করার কি আছে?
– তুমি কি বুঝবা তোমার তো বউ নাই।
স্নিগ্ধতা ফিক করে হেসে দিল।এই হাসি দেখে আবারো সব অভিমান ভুলে গেল স্তব্ধ, দু’জনে খেয়ে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিল।
শিরিনের রাগে ঘুম আসছে না একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে গাঁ জ্বালানো মেসেজ আসছে দু’দিন ধরে প্রথমে রং নাম্বার ভেবে পাত্তা না দিলেও এখন ব্যাপারটা নিয়ে সিরিয়াস হয়ে গেছে তার পরিচিত কেউ তাকে মেসেজ করছে এটা বুঝতে পেরেছে শিরিন কিন্তু নাম্বারে ফোন করলেই রিসিভ হয় না।
মেসেজ গুলো দেখে শিরিনের রাগ হচ্ছে ইচ্ছে করছে লোকটার মাথা গিয়ে ফাটিয়ে দিয়ে আসতে।
___________
খাঁন বাড়ির লোকেরা মেয়ে দেখতে যাবে আদ্রিকের জন্য তারা চায় আদ্রিককে দ্রুত বিয়ে দিতে ভালো মেয়ের সন্ধান পেতেই আর দেরি করলেন না আশরাফ খাঁন। এতে আদ্রিকের কোনো ইন্টারেস্ট নেই তার কাজই তো একেক দিন একেক মেয়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো।
মেয়ের বাড়িতে অনেক আয়োজন করা হয়েছে সোফায় বসে আছে আদ্রিক আর তার বাবা-মা। কিছুক্ষণ পর মেয়েকে আনা হলো, মেয়ে আর কেউ নয় নাতাশা।
চলবে…..