#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:১৯
‘ডিভোর্স পেপার নিয়ে তোমাদের সব সমস্যা তো? সমস্যা আমি মিটিয়ে দিচ্ছি।’
সবার দৃষ্টি রাতুল শিকদারের দিকে, রাতুল শিকদারের ঠোঁটে মৃদু হাসি তিনি একটু থেমে আরিয়াকে ডেকে সেই কাগজটা আনতে বললেন। আরিয়া কাগজটা এনে বাবার হাতে দিল। রাতুল শিকদার কাগজটি সবার সামনে ধরে বললেন,
– এই কাগজেই তো তোমরা সাইন করেছ তাই না?
স্তব্ধ মাথা নাড়ল। রাতুল শিকদার বলতে লাগলেন,
– কিন্তু এটা ডিভোর্স পেপার নয় বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার।
সবাই চমকে গেল অরিত্রি শিকদার বললেন,
– রেজিস্ট্রি পেপার!
– হ্যা, স্তব্ধ আর স্নিগ্ধতার ইসলামিক নিয়ম সম্পূর্ণ করে বিয়ে হলেও রেজিস্ট্রি হয়নি বিয়েটা তাড়াহুড়ো করে হয়ে গেছে তাই রেজিস্ট্রির কথা মাথায় ছিল না যখনি শুনলাম তুমি ওদের ডিভোর্স করানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছ তখনি বুদ্ধি করে সেই উকিলের সঙ্গে কথা বলে কাগজ বদলে দিয়েছি ওরা সাইন ঠিকই করেছে তবে রেজিস্ট্রি পেপারে।
স্তব্ধ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
– তার মানে আমাদের ডিভোর্স হয়নি!
– না।
অরিত্রি শিকদার বললেন,
– কাগজটা তো আমি আর রুশি ভালো করে দেখেছিলাম তখন তো ডিভোর্স পেপার ছিল।
– হুম তখন ওইটা ডিভোর্স পেপার ছিল আমি দেখতে চেয়েছিলাম স্তব্ধের কাছে এই সম্পর্কটা কতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে তোমরা স্তব্ধকে আলাদাভাবে বুঝিয়ে সাইন করাতে চেয়েছিলে তখন স্তব্ধ রাজি হয়নি কাগজ ছিঁড়ে ফেলেছিল কিন্তু তুমি আবারো উকিলের সঙ্গে কথা বলে নতুন করে ডিভোর্সের কাগজ বানিয়ে দিতে বললে তখনি এই কারসাজিটা করলাম।
– তুমি কিভাবে জানলে আমরা আবারও ডিভোর্সের কাগজ নিয়ে উকিলের সঙ্গে কথা বলেছি?
– উকিল নিজেই ফোন করে বলেছিল।
রাতুল শিকদার আবার বললেন,
– এছাড়া ওরা তিন কবুল বলে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছে তালাক তো হয়নি সেক্ষেত্রে একটা কাগজে নিজের নাম লিখে সাইন করলেই যে তাদের সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে এটা ভাবা বোকামি।
স্নিগ্ধতার ভেতরের কষ্টের একটা ভার কমলো।স্তব্ধ হেসে বলল,
– ড্যড তুমি অনেক চালাক হয়ে গেছ ইদানিং ভালো ভালো কাজ করছো একটুর জন্য সংসারটা বেঁচে গেল।
স্নিগ্ধতার হাত টেনে ঘরে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
– এখন আর দিদানের ঘরে গিয়ে কি করবে চলো এখন আমাদের ঘরে।
উপস্থিত সবাই স্তব্ধের কান্ড দেখে হেসে দিল।অরিত্রি শিকদার প্রশ্ন করলেন,
– তুমি ওই উকিলের ঠিকানা জানলে কিভাবে?
আরিয়া মুচকি হেসে বলল,
– আমি বলেছি মম।
অরিত্রি শিকদার চমকে গেলেন আরিয়া পুনরায় বলল,
– আমি চাইনি মম ওরা আলাদা হোক তোমাকে বুঝিয়ে যখন লাভ হলো না তখন বাধ্য হয়েই ড্যডকে বলেছি।
অরিত্রি শিকদার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
– সবাই সব জানতো মাঝখানে আমি অপরাধী হয়ে গেলাম,যাক সে সব আমার ছেলে যখন স্নিগ্ধতার সঙ্গে খুশি আমার আর কোনো আপত্তি নেই।
বলেই অরিত্রি শিকদার চলে গেলেন উপস্থিত বাকিরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
____________
কলেজ শেষে শিরিন বাড়ি ফিরছিল পেছন থেকে তিহান শিরিনকে ডাকল কিন্তু শিরিন শুনেও না শোনার ভান ধরে নিজের মতো হাঁটতে লাগলো।তিহান কিছুটা দৌড়ে শিরিনের সামনে এসে দাড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
– আপনি কালা নাকি কানে শুনেন না?
– শুনেছি কিন্তু এখন কথা বলার মুড নেই।
– আপনার আবার কবে মুড থাকে?
শিরিন হাঁটতে লাগলো,তিহানও পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বলল,
– আপনি স্নিগ্ধতা ভাবীর বান্ধবী?
– হুম।
– আমি ভাবীর দেবর তাহলে তো আমরা বেয়াই বেয়াইন।
– স্নিগ্ধার সঙ্গে আপনার ভাইয়ের ডিভোর্স হয়ে গেছে সো আমরা বেয়াই বেয়াইন নই,স্নিগ্ধা একবার সুস্থ হয়ে যাক তারপর ওকে আমার কাছে নিয়ে আসবো।
– আমার ভাইয়া থাকতে কখনও ভাবীকে আনতে পারবেন না।
– জোর জবরদস্তি নাকি? দরকার হলে আপনার ভাইয়ের নামে মামলা করবো লজ্জা করে না মায়ের কথায় বউকে ডিভোর্স দিতে।
– আরে ওদের ডিভোর্স হয়নি।
শিরিন ব্রু কুঁচকে তাকালো।তিহান পুরো ঘটনা শিরিনকে বলল, শিরিন হালকা কেশে বলল,
– সে যাই হোক আমি গেলাম বাই।
শিরিন রিকশায় উঠে চলে গেল।তিহান তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,’এ কেমন মেয়ে জম্মের সময় মুখে কি মধু দেয়নি কেউ?’
স্নিগ্ধতা বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে আর তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্তব্ধ।স্নিগ্ধতা বিরক্ত হয়ে বলল,
– এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আমার অস্বস্তি লাগছে।
– তুমি চোখ বন্ধ করে রাখো তাহলে অস্বস্থি লাগবে না।
– আপনি অন্যদিকে তাকান।
– বউ রেখে অন্যদিকে কেন তাকাবো? বউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকা আমার দায়িত্ব।
– আবার মায়ের কথায় বউকে ডিভোর্স দেওয়াও দায়িত্ব তাই না।
– ডিভোর্স হয়নি তো।
– আপনার বাবা কাগজ পাল্টে দিয়েছিল বলে হয়নি যখন সাইন করেছিলেন তখন তো জানতেন না।
– তুমিও লাগিয়ে লাগিয়ে কথা বলতে শিখে গেছ স্নিগ্ধ।
– পরিস্থিতির চাপে পরে সবই শিখতে হয়।
– আসো আদর করে দেই।
– লাগবে না।
– তুমি বললেই হবে না আমি আদর করবোই।
– আমার থেকে দুই হাত দূরে থাকুন কাছে আসলেই চেঁচাবো।
– এতটা নিষ্ঠুর হয়ে গেলে!
স্নিগ্ধতা মুখ ঘুরিয়ে নিলো স্তব্ধের উপর অনেক অভিমান জমে আছে বাবার মৃত্যুর শোকটাও এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। মেজাজ কেন জানি খিটখিটে হয়ে আছে।
শিরিনের নাম্বার থেকে স্নিগ্ধতার মোবাইলে কল এসেছে।স্নিগ্ধতা মোবাইল কানে ধরতেই শিরিন বলতে লাগলো,
– তোর শরীর কেমন এখন?
– ভালো।
– ওষুধ ঠিক মতো খাচ্ছিস?
– হুম।
স্তব্ধ নিজের মোবাইল নিয়ে উঠে গিয়ে বলল,
– তুমি কথা বলো আমি আসছি।
স্নিগ্ধতা মাথা ঝাকালো। শিরিন ফোনের অপরপাশ থেকে বলল,
– কিরে কথা বলছিস না কেন?
– বলছি তো।
– তোর হাজব্যান্ড কোথায়?
– আছে বাড়িতেই।
– ব্যাটাকে একদম কাছে ঘেষতে দিবি না উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বি কত বড় সাহস বউকে ডিভোর্স দিতে যায়।
– বাদ দে এসব।
– বাদ দেওয়া যাবে না আমি তোর মতো ওতো ভালো মানুষ না আমি যা বলবো তাই করবি।
– আচ্ছা বল তুই যা বলবি তাই করবো।
– তোকে মেসেজ করে দিচ্ছি।
বলেই শিরিন কল কেটে দিল।
অরিত্রি শিকদার দরজার কাছে এসে বললেন
– ভেতরে আসবো?
অরিত্রি শিকদারের কন্ঠ শুনে একটু ভয় পেয়ে গেছে স্নিগ্ধতা। ভয়ে ভয়ে বলল,
– জ্বি আসুন।
অরিত্রি শিকদার ভেতরে প্রবেশ করলেন হাতে ফল আর দুধ নিয়ে।স্নিগ্ধতা ভয়ে জড়সড় হয়ে গেল, অরিত্রি শিকদার স্নিগ্ধতার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
– রেগে আছো আমার উপর? আমি অনেক বড় ভুল করেছি তোমাকে ঠিক ভাবে না চিনে না জেনেই বড় অন্যায় করে ফেলেছি পারলে মাফ করে দিও মা।
অরিত্রি শিকদারের এমন ব্যবহারে বেশ অবাক হয়েছে স্নিগ্ধতা যা অরিত্রি শিকদার বুঝতে পেরেছেন।তিনি মৃদু হেসে বললেন,
– একবার মা বলে ডাকবে? প্রথম যেদিন তোমার মুখে মা শব্দটা শুনেছিলাম অনেক ভালো লেগেছিল কিন্তু ভালো লাগাটা তখন গুরুত্ব দেইনি বড় একটা অন্যায় করে ফেলেছি আমায় মাফ করে দাও।
স্নিগ্ধতা আবেগে কেঁদে দিল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল,
– মা এভাবে বলবেন না।
অরিত্রি শিকদার স্নিগ্ধতার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললেন,
– আরিয়া আর স্তব্ধ ছোট থেকেই মম বলে ডেকে এসেছে তিহান বড় আম্মু বলে ডাকে মা ডাকটা এত যে মধুর শুনতে লাগে ভেতরে যে এত প্রশান্তি কাজ করে তোমার ডাকে তা অনুভব করেছি আমাকে তোমার মায়ের জায়গা দিতে পারবে কথা দিচ্ছি সবসময় মেয়ের মতো ভালোবেসে আগলে রাখব।
একদিকে বাবা হারানোর শোক আরেকদিকে মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার আনন্দ, আজ পর্যন্ত এত সুন্দর করে আদর করে কেউ কথা বলেনি স্নিগ্ধতার সঙ্গে, ছোট থেকেই মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ছটফট করেছে কিন্তু শাহিলী ওয়াজেদ সেই ইচ্ছে কখনও পূরণ করেনি আজ সেই ইচ্ছে হয়তো পূরণ হবে শাশুড়ির মাধ্যমে,সবকিছু ভুলে অরিত্রি শিকদারকে জড়িয়ে ধরলো স্নিগ্ধতা।
অরিত্রি শিকদারের চোখেও পানি চলে এসেছে এই পানি আনন্দের কেউ তো উনার জন্য খুশি হয়েছেন এতেই ভালো লাগছে।স্নিগ্ধতাকে সোজা বসিয়ে দিয়ে খাইয়ে দিতে লাগলেন।স্নিগ্ধতাও বাধ্য মেয়ের মতো খাচ্ছে, অরিত্রি শিকদার বললেন,
– আর কখনও যেন কষ্ট পেতে না দেখি তোমায় স্তব্ধের সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করতে না পারলে আমায় বলবে।
স্নিগ্ধতা মাথা নাড়ালো, অরিত্রি শিকদার আবারও বললেন,
– মানুষ মরণশীল সবাই একদিন না একদিন এই পৃথিবী ত্যাগ করবে শুধু রয়ে যাবে প্রিয় মানুষদের স্মৃতিতে, বাবার জন্য আর কান্নাকাটি করবে না মন ভরে আল্লাহর কাছে দোয়া করবে।
স্নিগ্ধতা মনোযোগ সহকারে কথাগুলো শুনছে, রাতুল শিকদার বাইরে থেকে সব শুনছিলেন এবার ভেতরে এসে বললেন,
– এক বাবা চলে গেছেন তো কি হয়েছে? আমি তো আছি তোমার আরেক বাবা।
– বাবা!
রাতুল শিকদার মৃদু হাসলেন অরিত্রি শিকদার বললেন,
– তুমি বিশ্রাম করো মা পরে কথা হবে।
– আচ্ছা।
অরিত্রি শিকদার রাতুল শিকদারকে বললেন,
– চলো মেয়েটাকে বিশ্রাম করতে দাও।
– তুমি যাও আমি আসছি।
অরিত্রি শিকদার চলে গেলেন রাতুল শিকদার স্নিগ্ধতার উদ্দেশ্যে বললেন,
– হায়াত মউত আল্লাহর হাতে প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্ৰহণ করতে হবে শুধু মৃত্যুর কারণটা আলাদা।
– হুম
– তুমি হয়তো ভাবতে পারো আমি কেন জোরালো ভাবে তোমার শাশুড়িকে বাধা দেইনি কেন অন্যায় মেনে নিচ্ছিলাম আজ তাহলে সত্যিটা বলি।
স্নিগ্ধতা উৎসুক দৃষ্টিতে তাকালো। রাতুল শিকদার বলতে লাগলেন,
– তোমার সঙ্গে স্তব্ধকে জোর করে বিয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু বিয়ের পর ছেলেটা তোমার প্রতি দুর্বল হয়ে গেছে মায়ায় পরে গেছে অন্যদিকে ওর মা তোমাকে পছন্দ করতেন না বোনের কথায় কিছু না ভেবেই তোমাদের আলাদা করার জন্য উঠে পড়ে লাগলেন স্তব্ধকে আলাদা ভাবে যখন ডিভোর্সের জন্য ফোর্স করলো স্তব্ধ রাজি হয়নি তাই সবার সামনে ব্ল্যাকমেইল করলো কিন্তু আমি তো আগেই কাগজ বদলে দিয়েছিলাম তাই কিছু বলিনি আর শেষে তোমাকে যখন বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেছিল তখনও চুপ ছিলাম কারণ এটার দরকার ছিল তোমার আর স্তব্ধের একটা দূরত্বের দরকার ছিল এই দূরত্বের কারণেই স্তব্ধ তোমার শূন্যতা অনুভব করেছে একাকীত্বে ভোগেছে এলোমেলো হয়ে গেছে তোমার শাশুড়ি ছেলের কষ্ট বুঝতে পেরেছে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে অনেক সময় ভালো কিছু পাওয়ার জন্য নিজের সুখের জন্য কয়েক মুহূর্তের কষ্ট সহ্য করতে হয় কথায় আছে না দুঃখের পরে সুখ আসে। তুমি বাড়ি থেকে বের হতেই আমি শুভকে সব জানিয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু মিসেস ওয়াজেদ যে তোমার সঙ্গে এমন একটা কাজ করবে ভাবতেও পারিনি শুভ তোমায় হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করার পর আমায় ফোন করেছিল আমি তখনি হাসপাতালে যাই কিন্তু তুমি অচেতন ছিলে বলে আমায় দেখতে পাওনি পরে শুভ শিরিনের কথা বলল আমিও রাজি হলাম তখন শিরিন তোমায় নিজের কাছে নিয়ে গেল আমি চেয়েছিলাম তোমাদের সম্পর্কটা যেন মজবুত হয় কখনও সামান্য কারণে ভেঙ্গে না যায় তাই এই অন্যায় হতে দিয়েছি।
কৃতজ্ঞতায় স্নিগ্ধতার চোখ ছলছল করছে। রাতুল শিকদার আবারও বললেন,
– তোমার বাবা অনেক আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন কিন্তু কাউকে বুঝতে দেননি তোমার জম্মদাত্রী মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই উনার ভেতরে রোগ বাসা বেঁধেছিল বিভিন্ন দুশ্চিন্তায় তার উপর পরিবারে এত সমস্যা প্রথমবার হার্ট অ্যাটাক হয়ে বেঁচে গেলেও এবার আর নিতে পারেননি।এতে ভালো হয়েছে যন্ত্রনা থেকে তো মুক্তি পেয়েছেন, তুমি আর কষ্ট পেও না, বাবার জন্য দোয়া করবে আর হ্যা এটা তোমার নিজের পরিবার।
স্নিগ্ধতা বলল,
– আপনি আমার জীবনে বাবার পরে দ্বিতীয় বাবা যে আমার জন্য এতকিছু করছেন আমি আপনার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ।
রাতুল শিকদার মৃদু হেসে স্নিগ্ধতার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন।আজ সব সুখ এসে একসঙ্গে হানা দিচ্ছে মনের দুঃখগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।
স্তব্ধ ঘরে এসে দরজা আটকে দিয়ে স্নিগ্ধতার পাশে বসে পড়ল।স্নিগ্ধতা মুখ ঘুরিয়ে নিতেই স্তব্ধ বলল,
– সবকিছু তো ঠিক হয়ে গেছে তাহলে এখনও কেন রাগ করে আছো?
– রাগ করিনি।
– আমার উপর রাগ করেছ তো।
স্নিগ্ধতা নিরব,স্তব্ধ শুতে শুতে বলল,
– দু’দিন ঠিক মতো ঘুম হয়নি অনেক ঘুম পাচ্ছে।
– আপনি এখানে ঘুমাতে পারবেন না।
– কেন কেন!
– আপনি এখানে ঘুমালে আমি নিচে গিয়ে শুয়ে থাকব।
– শোধ নিচ্ছো?
– যা মনে করেন।
– স্যরি।
– এভাবে বিরক্ত করলে চলে যাব আর খুঁজেই পাবেন না।
– হাইপার হবার কি আছে? আমি সোফায় গিয়ে ঘুমাচ্ছি।
বলেই স্তব্ধ লাইট নিভিয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে স্তব্ধ আর স্নিগ্ধতার মধ্যে এখনও দূরত্ব বজায় আছে,স্তব্ধ অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু স্নিগ্ধতা দূরত্ব কমাচ্ছেই না বাড়ির সবার সঙ্গে সুন্দর করে হেসে কথা বললেও স্তব্ধের ক্ষেত্রে গম্ভীর সবাইকে সময় দিলেও স্তব্ধের জন্য কোনো সময় নেই এখনও স্তব্ধকে কষ্ট করে সোফায় ঘুমুতে হচ্ছে।
চলবে……