বিয়ের পর একে একে দশ বছর কেটে গেছে আশা একরকম ছেড়েই দিয়েছি এমন সময় সন্তান পেয়ে যাওয়ায় এতোই আত্নহারা হলাম যে আজান দিয়ে বসলাম সদ্যভূমিষ্ঠ মেয়েশিশুর কানে!
পোষ্ট অপারেটিভের বাইরে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকেছি স্ত্রীকে ভেতরে ঢোকানোর পর থেকে।সে তখন রীতিমতো ভয়ার্ত।প্রেশার বেড়ে হাই।প্রথমবারের পোয়াতি।কিছুই জানা নেই ওর।ধারেকাছে তেমন মেয়ে মহিলারা কেউ ছিল না যে আগে থেকে এব্যাপারে ধারণা দেয়!
গাইনীর মহিলা ডাক্তার চেক-আপ করে জানিয়েছেন সিজার করতে হবে।কারণ গর্ভবতীর শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো না।সবদিক বিবেচনা করেই অপারেশনের সিদ্ধান্ত।আমার সম্মতি চাইতেই রাজি হয়ে গেলাম।
শাশুড়ি আসার কথা ছিল দেশের বাড়ি থেকে।আসতে পারেননি হঠাৎ শরীর খারাপ লাগায়।কি মনে করে কায়দা করে ফেলার চেষ্টা করলাম একটা নার্সকে।যাতে অপারেশনের পর কেবিনে দিলে বাচ্চাশিশুর পাশে অন্তত একটা মহিলা থাকে।
ডাক্তার ম্যাডাম দ্রুত অপারেশন সারলেন।
বিশ মিনিটের ভেতরে গোলগাল একটা পোটলা নিয়ে আমার সামনে হাজির হল নার্স।আমার কোলে দিতেই দিয়ে দিলাম ওর কানের কাছে আজান!
নার্স হেসে ফেলে জানাল,’ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছে তো আপনার!’
মেয়ে হয়েছে শুনে মেয়ের মায়ের কথা ভুলে গেছিলাম। নার্সটা অভিজ্ঞ।বাচ্চাকে ফের কোলে নিয়ে বলল,’ওর মায়ের শরীর দুর্বল।প্রেশার নামানো যাচ্ছে না।সুগারের সমস্যাও ছিল।ডাক্তাররা চেষ্টা করছেন তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তুলতে।’
আমি প্রচন্ড রকমের দুশ্চিন্তা নিয়ে জানতে চাইলাম, ‘এখন তাহলে কী হবে!ওর মাকে না ছাড়লে বাচ্চা দেখবে কে?’
‘কেবিন যখন পেয়েছেন সমস্যা হবে না।’আশ্বস্ত করল নার্স,’আপাতত ওখানে নিয়ে যাচ্ছি চলুন।আর আপনার সঙ্গে তো লোক দেখছি না।মহিলা কাউকে আনাতে পারবেন?’
অন্ধকার দেখলাম চোখে।মহিলা কাকে পাবো এখানে! কাছের আত্নীয় বলতে যাদেরকে বোঝায় তারা তো কেউ ধারেকাছেই নেই।তাছাড়া আগে থেকে বলে না রাখলে আসবে কেনো কেউ?
সবচেয়ে বড় কথা,মেয়েমানুষ কাউকে নিয়ে আসা চাট্টিখানি নয়।নিজের মা কবেই চলে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।তাছাড়া আমি তো কারো জন্য এমনকিছু অবদানও রাখিনি যে আমার বিপদে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়বে!
সে অর্থে আমি অসামাজিক,প্রায় একঘরে মানুষ।এখন প্ৰয়োজনে হঠাৎ একেবারে আত্নীয় মহিলা পেতে যাব কোন সুখে!
কেবিনে গিয়ে ধরে বসলাম নার্সকেই।অনুরোধ করলাম বাচ্চার মা কেবিনে না আসা পর্যন্ত ওকে যেন দেখে রাখে সে।
আমার সঙ্কট বুঝতে পেরে রাজি হয়ে গেল নার্স।
বাচ্চাকে নিয়ে কেবিনে শুইয়ে দিয়ে বেশ গুছিয়ে নিতে দেখলাম সব।আমিও চাপা চিন্তা কিছু থামিয়ে পোস্ট অপারেটিভে পড়ে থাকা স্ত্রীকে দেখতে গেলাম।
ডিউটির ডাক্তার একবার দেখতে দিয়ে বারণ করে দিলেন বেশি কথা বলতে।জানালেন,’উনাকে আমরা দেখছি।আপনি টেনশন ফ্রি থাকুন।চিকিৎসা, ওষুধপত্র চলছে।আশা করছি কেবিনে দিয়ে দিতে পারবো সময় মতো।’
আমি বুকের চাপ ছেড়ে হাসপাতালের বাইরে বেরিয়ে প্রথমেই একটা সিগারেট ধরিয়ে জোরে শ্বাস ছাড়লাম।মনে হল বছরদিন পরে সিগারেট টানার সুযোগ ফিরে পেয়েছি।ভুলে গেলাম ধূমপানে স্ত্রীর কড়া নিষেধ।
সন্তান পাওয়ার আনন্দ ঝাপটে ধরল আমাকে।মনের সুখে বাজার বেছে দামি দামি কয়েক সেট জামা আর অনেকগুলো বিদেশি গুঁড়ো দুধের কৌটো কিনে ফেললাম শিশু মেয়ের জন্য।
কিন্তু বেশিক্ষণ গেল না।হন্তদন্ত হয়ে নেমে এলো এক ওয়ার্ডবয়,’আপনাকে এক্ষুণি যেতে ডেকেছে কেবিনে।তাড়াতাড়ি যান স্যার।আপনার বাবু যেন কেমন করছে। অবস্থা ভালো না।’
দৌঁড়ে গিয়ে দেখলাম যা বলেছে সত্যি।শ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছে বাচ্চার।নার্স তাকে নিয়ে ডাক্তারের রুমে দৌড়াচ্ছে।সাথে সাথে দেখলাম একজন শিশু ডাক্তার ঝুঁকে পড়ে পরীক্ষা করতে শুরু করে দিয়েছেন।
আমাকে দেখেই বললেন,’ডেফার্ড তো!এদের বলে ভ্যালু চাইল্ড।বাচ্চাটার কিছু জটিলতা আছে।ওকে দ্রুত চাইল্ড হসপিটালে নিয়ে যান।আমি রেফার করে দিচ্ছি।’
****
বাচ্চার মাকে ডিসচার্জ করতে আরও দিন তিনেক লাগবে শুনে মোটেই দেরি করলাম না।ডাক্তারের পরামর্শে নার্সসহ কয়েকঘণ্টা বয়েসের মেয়ে নিয়ে চলে আসতে হল শিশু হাসপাতালে।যথারীতি বেড দেওয়া হল বাচ্চাটাকে।চলল অক্সিজেন আর স্যালাইন।
পড়ে গেলাম দৌড়ের উপর।সকালে বাচ্চার দিকে।বিকেলে বাচ্চার মাকে দেখতে।দুজন ঢাকা শহরের দু’প্রান্তের আলাদা হাসপাতালে নিবিড় চিকিৎসাধিন।
দশ বছর পরে সন্তান,বিশেষ করে মেয়ের বাবা হওয়ার সাফল্য আস্তে আস্তে বিষাদে রূপ নিচ্ছিল।ওই নার্সেরই সহায়তা পাচ্ছিলাম যদিও।
প্রায়ই বদান্যতা দেখাচ্ছিল ঠিক,আমার কিন্তু খরচ হচ্ছিল ব্যাপক।অর্থনীতির পড়া নার্সের সেবা আর কি!মায়ের সেবা না।টাকা দিয়ে কেনা লাগে।
দুদিন পরে বিষাদ পরিণত হয়ে গেল আতঙ্কে!যখন শিশু হাসপাতালের ডাক্তার জানালেন,’ওকে এখন শুধু স্যালাইন দিলে চলবে না।’
তড়বড় করে বলে ফেললাম,’সমস্যা নেই ডাক্তার সাহেব।কৌটার দুধের অভাব নেই।অনেকগুলো কিনে রেখেছি বাচ্চার জন্য।শিশুখাদ্য…
‘মুখস্ত কথা বলছেন কেনো!’ডাক্তার থামিয়ে দিলেন আমাকে,’আমি বলেছি মায়ের দুধ লাগবে ওকে খাওয়ানোর জন্য।জরুরি।ব্যবস্থা করুন তাড়াতাড়ি।’
পড়লাম ফ্যাকড়ায়!মায়ের দুধ পাই কোথায়?মেয়ের মা তো আরেক হাসপাতালে।অনেকটা দূরে।আবার রিলিজ দিতে দেরি আছে ওর।সিজারের পর এখনও সুস্থ হয়নি পুরোপুরি।এখন করি কী!
এবারও সেই নার্সের শরণাপন্ন হতে হল।আশেপাশের অন্য বেডগুলো ভরে উঠেছে সদ্য ভর্তি হওয়া মা এবং বাচ্চায়।একটু পরপর কান্নার রোলও আসছে কানে ।পাখির মতো মারা যাচ্ছিল বাচ্চারা যখন তখন।চিকিৎসকের প্রাণান্ত চেষ্টা থাকলেও কাজ হচ্ছিল না।
সময় পেরুতে বুঝতে পারছিলাম কতোটা মর্মান্তিক জায়গা এই শিশু হাসপাতাল।আমার মনে হতে লাগল বাংলাদেশের সব ডাক্তারদের আসলে দরকার ছিল শিশু ডাক্তার হওয়া!
বিপাকে দেখে নিয়ে নার্স বলে ‘এককাজ করেন।’বুদ্ধি বাতলে দিল সে,’এই সাকশন পট নিয়ে ওর মায়ের ওখানে যান।পোস্ট অপারেটিভের মেয়েদের বললে ওরা দুধ নিয়ে দেবে।নিয়ে আসেন দেরি না করে।’
পাম্প বল বসানো মিল্কপটের মতো একটা জিনিস নিয়ে ছুটলাম বাচ্চার মায়ের পাশে।এছাড়া আর কি ই বা করার আছে আমার।কৌটার দুধে তো হবে না ডাক্তার নিজে বলে গেছেন।
বাচ্চার জন্য মায়ের দুধ জোগাড় করতে গিয়ে ঢাকা শহরে হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়েছিল আমার!সে যে কী ভীষণ সঙ্কটে গেছে!
আমার স্ত্রীকে তখন দেখতে দিচ্ছিল না।বারবার বলছিল,উনার শরীর এখনও অসুস্থ।আমি যতোই বলি, দুধ লাগবে,ওরা জানায় এখন সম্ভব না।
তাছাড়া আদৌ দুধ এসেছে কি-না সেটাইবা কিভাবে বলে ওরা।তিনদিন আগে সিজারিয়ান হয়েছে ঠিক,হলে কি হবে বাচ্চাকে তো দুধ দিতে পারেনি ডেলিভারির পর একবারও।সেদিনইনা বাচ্চা নিয়ে চলে গেলাম শিশু হাসপাতালে ভর্তি করাতে!
অনেক অনুনয়ে মহিলা এ্যাটেনডেন্ট একজন রাজি হল।তবে বাটি ভাল করে ধুয়ে শুঁকে এমন ভাব করল যেন দুইয়ে আনতে যাচ্ছে দুধ।কিছুক্ষণ পর বিরক্তি নিয়ে ফিরে এলো সে।পাম্প পটে মাত্র অর্ধেক দুধ ভরা।
‘নেন,এইটুকুই পেয়েছি।বাচ্চা না টানলে আপনার বউ দুধ দেবেনা।না কাঁদলে কি দুধ দেয়!বেবিকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন মার কাছে।’
লজ্জার মাথা মুড়ে গেছে ততক্ষণে আমার।দুধ হাতে পেয়ে মনে হল পেয়ে গেছি ফুল মার্কস।দৌড় দিলাম বাচ্চার হাসপাতালের দিকে।
নার্স বলল,’মাত্র এটুকু দুধ!আর পায়নি?’
‘জানি না।’
‘পাম্প করে নিতে পারেনি ওরা।ওই যে দেখেন ওপাশের মেয়েটা।কেমন দুধ খাওয়াচ্ছে ওর বাচ্চাকে।’
চকিতে তাকিয়ে দেখলাম।সত্যিই তো!ফর্সামতো এক মেয়ে হাসিমুখে দুধ খাওয়াচ্ছে কোলের শিশুকে।মেয়েটা বেশ স্বাস্থ্যবতি।আর ওর বাচ্চাকেও মনে হল দাঁড়িয়ে গেছে।
এদিকে নার্স ড্রপার দিয়ে মুখে ফেলতেই মেয়ে আমার চুকচুক করে খেতে শুরু করেছে মায়ের দুধ।অল্পক্ষণ পরেই চোখে মুখে তৃপ্তি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল সে।ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে হাসতে শুরু করল ক্ষণে ক্ষণে।
বাসায় ফিরে সারারাত ঘুমাতে পারলাম না।আসার সময় দেখে এসেছি মায়ের দুধের জন্য আমার মত হন্যে হয়ে উঠেছে অনেকেই।ওদের শিশুরাও ভর্তি হয়েছে এখানে।একজন দেখলাম চেঁচিয়ে বলছে,এখন দুধ পাবো কোথায়!আমার কি দুধ আছে নাকি?
চিন্তায় চিন্তায় অস্থির হয়ে গেলাম।সিগারেটের নেশাও ভুলে বসলাম।একে তো স্ত্রী হাসপাতালে।তার ওপর এদিকে বাচ্চাটার দেখাশোনার দায়।
ওকে মায়ের দুধ দেয়া সবচেয়ে জরুরি।দ্রুত সুস্থ হতে এর বিকল্প নেই শিশুর জন্য।ওদিকে ওর মা-র রিলিজ হয়নি এখনও।মাকে তার বাচ্চার সাথে মিলিয়ে দেয়াটা আরো জরুরি।
আবার এমন আশঙ্কাও মনে এলো,যদি বাচ্চার মায়ের রিলিজ পেতে দেরি হয় তাহলে কী হবে?তিনদিনের জায়গায় ত্রিশদিন কি লেগে যেতে পারে না?তখন বাচ্চাটার কি দাঁড়াবে!
ধার করে মায়ের দুধ কতক্ষণ পাওয়া যাবে?কেইবা দুধ খাওয়াবে দিনের পর দিন!ভেবে কূল কিনারা করতে না পেরে শেষরাতে ওঠে গিয়ে নামাজ পড়তে বসলাম।এমনিতে নিয়মিত নামাজ কালাম হয় না যদিও আমাকে দিয়ে!
ভোরে ওঠেই ছুটলাম শিশু হাসপাতালে।যে করেই হোক মেয়েকে মায়ের দুধ এনে দিতে হবে।জোর করে হলেও আনতে হবে এরপর।উপায় নেই।
এটুকু দুধ পেয়েই সুস্থ হয়ে উঠতে দেখেছি বাচ্চাটাকে।আজকে বেশি করে নিয়ে আসতে হবে।দরকার হলে দুই তিনটে পাম্প পট নিয়ে যাব দুধ সংগ্রহের জন্য।
এসব ভাবতে ভাবতে শিশুকন্যার বেডের কাছে আসতেই থমকে গেলাম অবাক করা দৃশ্য দেখে।বিশ্বাসই হল না যেন প্রথমে!
দেখলাম পাশের বেডের সেই ফর্সা স্বাস্থ্যবতি মেয়ে বসে আছে আমার মেয়েকে কোলে নিয়ে।ওর বিশাল স্তন মুখে দিয়ে চোখ বুঁজে দুধ চুষে চলেছে আমার কন্যাশিশু!
আমি সরে গেলাম চিরায়ত ছবির আড়ালে।
এই দৃশ্য নিজের মায়ের কথা মনে করিয়ে দিল আমাকে ক্ষণিক বিদ্যুৎ চমকের মতো!
বিকেলের দিকে নার্স জানাল,’অসুবিধা নাই ভাই।আপনার মেয়ের জন্য পাশের মেয়েটা আছে।ও-ই দুধ খাওয়াবে বাবুর মা আসার আগপর্যন্ত।’নার্সের শেষ কথা লজ্জা দিল না আমাকে,’অনেক দুধ ওর।’
****
আশঙ্কার শেষ হল স্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করিয়ে নিয়ে আসতে পেরে।অবশ্য আরও তিনদিন লেগে গেল তাতে।এ কয়দিনে বেশ সুস্থ হয়ে উঠেছে শিশুকন্যাও।বাচ্চার মাকে ওর কাছে এনে দিয়ে এক সাপ্তাহ পরে শ্বাস ফেলার সুযোগ পেলাম আমি।
আরো স্বস্তিকর হল যখন বুঝলাম আমার মেয়ের ভাগ্য ভাল।মায়ের দুধ ঠিক মতোই পাচ্ছে।বরং ওর প্রয়োজন থেকে বেশিই।উপরওয়ালাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সেই নার্সকে বিদায় দিলাম।
আপত্তি করলেও খুশিমনে তার প্রাপ্য টাকা-পয়সা বুঝিয়ে দিয়েছি।উপকারের কথা মনে থাকবে জানিয়ে ছোট একটা গিফট বক্সে উপহার হিসেবে একটা শাড়ি দিতে পেরে স্বাচ্ছন্দ লাগল আমার।
প্রসন্ন মনে ফিরে যাওয়ার আগে নার্স বলল,’ওই মেয়েটাকেও দেখবেন যেন একটু।’
‘কার কথা বলছো সিস্টার?’
‘ওই যে আপনার মেয়েকে দুধ দিয়েছিল যে।নাহলে তো বিপদেই ফাঁসতেন।’
ফর্সা মেয়েটার কাছে গিয়ে আমার মনে হল নিরেট মাতৃত্বের উদাহরণ দেখছি।তার শিশুকে ঘুম পাড়িয়ে বসেছিল।আমাকে দেখে কাপড়চোপড় গুছিয়ে সালাম দিল সে।
আমি অনেক কথা বললাম।বারবার উল্লেখ করলাম তার উপকারের কথা।জানতে চাইলাম তার কোনোকিছুর প্রয়োজন আছে কি-না।এমন কিছু কি লাগবে যা এই মুহূর্তে খুব দরকার।
কিন্তু না!কোনোকিছুই নিতে চাইল না সে।লাগবে না।বরং দোয়া করতে বলল ওর বেবির জন্য।
‘আপনার বাচ্চা তো অসুস্থ ছিল এজন্যই আরো মায়া লাগছিল।ওকে আমি আমার নিজের বাচ্চার মতোই দেখেছি।এটা কর্তব্য ভাইজান।অন্যকিছু না।’
আমার মনে পড়ে গেল মায়ের দুধের জন্য কি হাহাকারই না শুনেছি এই কয়দিন।নিজেই তো কতো বড় ফাঁড়া কাটিয়েছি।এসব বাচ্চা টিকিয়ে রাখা কি পরিমাণ কঠিন আমি বুঝে গেছি এ কয়দিনে।
এরচেয়ে বড় অনুদান কি আর কিছু হয় নাকি!
***
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে মেয়ের বেডের দিকে ফিরে আসছিলাম।ঘন্টায় ঘন্টায় দেখতে হয় মা-মেয়েকে।শাশুড়িও চলে এসেছেন ইতোমধ্যে।দুশ্চিন্তার ভার নেমে আসছে ধীরে ধীরে।
বেডের কাছে আসতেই বুঝলাম নতুন আরও এক চমক অপেক্ষা করছিল আমার জন্য।দেখতে পেলাম হাত পা ছুঁড়ে খলবল করে হাসছে আমার দশদিনের কন্যা।
আর পাশে বসে হাসছে ওর মা,আমার স্ত্রী।তার কোলে শুয়ে বুকে মুখ গুঁজে প্রাণপণে দুধ খেয়ে চলেছে অচেনা আরেকটা সদ্যজাতশিশু।
আশেপাশের কার বাচ্চা কে জানে!
সাব্বিরুল_হক