স্কুলের_একটি_ভয়ঙ্কর_রাত পর্বঃ০৩

0
1891

স্কুলের_একটি_ভয়ঙ্কর_রাত পর্বঃ০৩

২য় পর্বের লিংকঃ https://www.facebook.com/groups/likhalikhi/permalink/2471733582916134/?app=fbl

হঠাৎ সামিরের চিৎকারে ঘুম ভাঙল। উঠে যা দেখলাম তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
দেখলাম, একটা কালো ছায়া আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তার ভয়ংকর অট্টহাসি দেখে প্রাণটায় বের হয়ে যেতে চাইলো।
ছায়াটি সামিরকে শূন্যে তুলে ঘুরাতে লাগল এবং সামিরকে নিয়ে উড়ে চলে গেল।
আমরা ভয় পেয়ে একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধড়লাম।

-আমাদের সামনে সামিরকে নিয়ে গেল আমরা কিছুই করতে পারলাম না। (আমি)
– আমাদেরতো কিছু করার ছিলনা।(মারুফ)
– এখন আফসোস করে লাভ নেই। সামিরকে উদ্ধার করতে হবে আমাদের। (আহাম্মদউল্লাহ)
– কালো ছায়াটি সামিরকে যেদিকে নিয়ে গেছে এখন আমাদের সেদিকে যেতে হবে।( বাবু)
– চল তাহলে। তবে সাবধানে। সবাই চারপাশ দেখে হাটবি। (আমি)

সামিরকে যেদিকে নিয়ে গেছে আমরা সেদিকেই হাটছি।
– আচ্ছা এদিকে গেলে কেমন হয়? এদিকের রাস্তাটা একটু পরিষ্কার মনে হচ্ছে (তারেক)

– না। সোজা হাটতে থাক। সামনে কোনো না কোনো ক্লো পেতে পারি (মারুফ)

হঠাৎ বাবু বলে উঠলো,
– সর্বনাস। জয়রাম কোথায়?
– আরে ঠিকি তো। আমাদের পেছনেইতো ছিল এতক্ষণ (আহাম্মদউল্লাহ)
– ওকেও ধরে নিয়ে যায়নি তো?(মারুফ)
– আমারতো তাই মনে হচ্ছে (বাবু)

সবাই ভয়ে ভয়ে সামনে যেতে লাগলাম। এবার সবাই একসাথে হাতে হাত ধরে হাটছি।
মারুফ বললো,
– তোরা একটু দাড়া। আমি একটু আসছি।
– কোথায় যাচ্ছিস? (প্রনব)
– পস্রাব করতে (মারুফ)
– সাবধানে। তারাতারি আসিস আমরা এখানেই আছি (প্রনব)

অনেক্ষণ হয়ে গেল। কিন্তু মারুফ এখনো এলোনা। সবাই ভয় পেয়ে গেলাম।
– মারুফতো এখনো আসছেনা। কিছু হয়নিতো? (আমি)
– চলতো গিয়ে দেখি (আহাম্মদউল্লাহ)

আমরা মারুফকে খুজতে লাগলাম। কিন্তু পেলামনা। এদিকে মারুফকে খুজতে খুজতে তারেক এবং বাবুও উদাও হয়ে গেল। আমরা ওদেরকে অনেক্ষণ খোজার পরেও পাইনি।

এখন আমার খুব খারাপ লাগছে। খারাপ লাগারই কথা। আমাদের টিমের অনেকের রহস্যজনকভাবে উদাও হয়ে যাওয়া। এখন খারাপ যেমন লাগছে, খুব ভয়ও করছে। এখন শুধু আমি প্রনব এবং আহাম্মদউল্লাহ বাকি আছি।
আমাদের সাথেও যে এমনটায় হতে পারে তাও বুঝতে পারছি।
প্রনব বললো,
– সামনে আর না হেটে আমরা এখানেই বসে থাকি চল।
প্রনব হতাশ ভঙ্গিতে মাটিতে বসে পরল। আহাম্মদউল্লাহও ঘোম হয়ে বসে পড়ল।
হঠাৎ আমার মাথার উপর ভারী কিছু পড়ল।আমি মাথার উপর হাত দিয়ে মাটিতে পড়ে গেলাম।তারপর আর কিছু মনে নেই।

জ্ঞান ফিরার পর অনেক কষ্টে উঠে বসলাম। আহাম্মদউল্লাহ এবং প্রনবকে আমার পাশে দেখতে পেলাম না। বুঝতে আর দেরি হলোনা, ওদেরকেও ধরে নিয়ে গেছে। এখন আমার খুব একা অনুভব হচ্ছে। কি করব বুঝতে পারছিনা।
এখন কিভাবে সামনে এগিয়ে যাব?
কি করে ওদের উদ্ধার করবো?
ছায়াগুলো যদি ওদের ক্ষতি করে দেয়?
ওই ছায়াগুলো ওদেরকে কোথায় নিয়ে গেছে?
কেন-ই-বা নিয়ে গেছে?

এসব ভাবতে ভাবতে মনের মধ্যে আত্মবিশ্বাস এসে গেল। যেভাবেই হোক ওদেরকে উদ্ধার করতে হবে। আমিই ওদেরকে উদ্ধার করবো। যত বাধায় আসুক, ওদের বাচাতেই হবে।
আমি একাই সামনে চলতে লাগলাম।
এবার আমি একায় হাটছি। কথা বলার মতো পাশে কেউ নেই। তাই নিজেকে খুব একা মনে হচ্ছে।
সামনে যেতেই দেখতে পেলাম, অনেক বড় একটা গাছের নিচে কে যেন বসে আছে। ভয় পেয়ে গেলাম। আমি যখনই লুকাতে যাব, তখন ওই জিনিসটা আমাকে দেখে ফেলল।
ভয়ে আমি পেছন দিকে দৌড় দিলাম। কিন্তু একি! একটা অদ্ভুত শক্তি আমাকে পেছন দিকে টানছে। আমি দৌড়াচ্ছি ঠিকই কিন্তু ওই জায়গা থেকে একটুও নড়তে পারলামনা। শক্তিটা আমাকে পেছনে টেনে নিয়ে গিয়ে ওই জিনিসটার সামনে এনে দাড় করাল। ভয়ে আমার হাত-পা কাপতে শুরু করল। জিনিসটা দেখে অশরীরী বলে মনে হলোনা। লোকটার গায়ে কালো চাদর মোড়ানো ছিল। চাদরটি এমনভাবে মোড়ানো ছিল যে লোকটার হাত-পা এমনকি মুখ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছেনা।
আমি কাপা গলায় বললাম,
– কে আপনি?
লোকটা বললো,
– ভয় পাস না। আমি তোর ক্ষতি করবোনা। তুই এখানে কিভাবে এলি?
– আগে বলেন আপনি কে?
– আমি এই জঙ্গলের মালিক। এখন বল তুই এখানে কিভাবে এলি।

আমি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উনাকে বললাম।
বলতে বলতে কেদে দিলাম।
– আ হা হা। কাদিসনা। আমি তোকে সাহায্য করবো।
– সত্যি? (হাসি হাসি ভাব নিয়ে)
– হু। আমি জানি তোর বন্ধুদের ওরা কোথায় নিয়ে গেছে।
– জানেন? দয়া করে বলেন আমার বন্ধুদের কোথায় নিয়ে গেছে।
– ভাল করে শোন। এখান থেকে দক্ষিণ দিকে ৩ ক্রোশ পথ হেটে গেলে একটা রাজপ্রাসাদ দেখতে পাবি। ওই রাজপ্রাসাদে এক ভয়ংকর জাদুকর আছে। ওই জাদুকর তোর বন্ধুদের মায়াজালে আটকে রেখেছে।
– আমাকে ওখানে যেতে হবে।
– কিন্তু সেখানে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। যাওয়ার পথে নানা বিপদের সম্মুখিন হতে হবে। তবে তোকে আমি আমার এই চাদরটা দিচ্ছি। যখন বিপদে পড়বি এই চাদরটা গায়ে জড়িয়ে নিবি। আর একটা কথা। তোর বন্ধুদের উদ্ধার করতে হলে আগে জাদুকরকে মারতে হবে। কিন্তু জাদুকরটাকে মারা এত সহজ হবেনা। জাদুকরকে মারার উপায় তোকেই বের করতে হবে। যা করার আজ রাতের মধ্যে করতে হবে। বেশি দেরি হলে তোর বন্ধুদের ক্ষতি হতে পারে। সকাল হতে আর মাত্র এক প্রহর বাকি আছে। এই নে চাদর।

চাদর নিতে গিয়ে যা দেখলাম, তাতে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। লোকটা চাদরটা গা থেকে খুললোনা। চাদরের ভেতর থেকেই উদাও হয়ে গেল।

আমি চাদরটা নিয়ে লোকটির কথামতো দক্ষিণ দিকে এগুতে লাগলাম। কিছুদূর গিয়ে যা দেখলাম তাতে আত্মারাম খাচা ছাড়া হওয়ার উপক্রম হলো।

চলবে….

লেখকঃ Md_Ahammed

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে