Monday, October 6, 2025







সৌরকলঙ্ক পর্ব-৭+৮

#সৌরকলঙ্ক
#উম্মে_প্রভা
#পর্ব_৭

আদিব একটা শুকনো ঢোক গিলে এগিয়ে গেল সামনে।দাদির পাশে বেসে নীচু স্বরে দাদিকে ডাকলো বার কয়েক কিন্তু অপর পাশ থেকে কোন সাড়াশব্দ এলো না।আদিবের ভয় হতে লাগলো এবার।সে উঠে দ্রুত বাবার ঘরে গেল। আশরাফ ফজরের নামাজ পড়ে মাত্রই শুয়েছিল ছেলের উতলা ডাকে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো।দরজা খুলে বাইরে আসতেই আদিবের ভয়ভীতি কণ্ঠ কানে এলো তার,

-বাবা দাদি…

আদিবের কথা শেষ হলো না, তার আগেই রুদ্ধ শ্বাস মায়ের ঘরের দিকে ছুটলো আশরাফ।মা কে নামাজের পাটিতে সেজদা রত অবস্থায় দেখে চোখ মুখে খেল গেল উদ্বিগ্নতা। ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে গিয়ে জাহানারা বেগমের পাশে বসে কয়েকবার ডাকলো জাহানারা বেগম কে। কিন্তু তিনি ছেলের ডাকে সাড়া দিল না। আশরাফ অতি সাবধানে মায়ের বাহুতে হাত রাখলো ।হাল্ক হাতে ধাক্কা দিল তার বাহুতে।সাথে কাত হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো জাহানারা বেগমের প্রাণহীন নিথর দেহটা।

________________

জাহানারা বেগমের মৃত্যুতে সব থেকে বেশি আহত হলো আশরাফ।মায়ের মৃত্যুর শোকে হুঁশ জ্ঞান ভুলে সর্বসমক্ষে মায়ের মৃত্যুর জন্য তানিয়াকে তুলল কাঠগড়ায়। বারংবার উল্লেখ করলেন গত রাতের তিতকুটে স্মৃতি। আশরাফের আরোপের সামনে তানিয়া নিজের স্বপক্ষে কিছু বলতে পারলো না। শুধু অশ্রু শিক্ত নয়নে চেয়ে রইল আশরাফের দিকে।বোন ভাইদের সামনে আশরাফ যা ইচ্ছা তাই বলে চলল তানিয়া কে।তানিয়া সবটা মাথা পেত নিল।তবুও যেন আশরাফের রাগ কমলো না সদ্য মাতৃহারা আশরাফ রাগে ক্ষোভে সবার সামনে বলে উঠলো যার জন্য তার মা দুনিয়া ছেড়েছে, তার সাথে সে আর থাকবে না।তালাক দেবে তাকে।আশরাফের কথায় চমকে উঠলো উপস্থিত সবাই।জাহানারা বেগমেকে বহন করা খাটিয়া তখনো আশরাফের উঠানে রাখা।ঘর জুড়ে আত্মীয়-স্বজন, চেনা-পরিচিতদের ভিড়। আশরাফের পাগলামো এতক্ষণ সবাই চুপ করে সহ্য করলেও এবার যেন টনক নড়লো সবার।নাফিজা ভাইকে ধরে ঘরের মধ্যে নিয়ে গেল।বোঝাতে লাগলো তাকে, যেন সে হটকারী করে কোন সিদ্ধান্ত না নেয়। কিন্তু আশরাফ নাফিজার কথা শুনলে তো! সে তার কথায় অনঢ়। আশরাফের এক রোখা ভাব দেখে নাফিজা ভাইদের ডেকে পাঠালেন। চাচাদের পিছু পিছু আদিব গিয়ে দাঁড়ালো দরজার মুখে। সাজ্জাদ,জায়েদ,শাহেদ সবাই নিজের মতো করে বোঝাতে লাগলো আশরাফ কে।ভাবির রাগের মাথায় করা অপরাধে পর্দা টানতে লাগলো সবাই। কিন্তু আশরাফ তাদের কথা কানে তুলল বলে মনে হলো না।সবাই যখন হার মানল তখন আদিব এসে পা জড়িয়ে ধরলো বাবার। অশ্রু শিক্ত কণ্ঠে বলল,

-বাবা প্লিজ এমন করো না। মা’র কথা না ভাবলে, অন্তত আমাদের কথা ভাবো।

আশরাফ ছেলেকে নিজের পা থেকে ছাড়িয়ে পাথর কঠিন মুখটা ফিরিয়ে নিল অন্যদিকে।বাবার নীরবতা ভেতরটা ফালা ফালা করে দিল আদিবের।নিজের পরিবারের ভগ্নপ্রায় দশা দেখে বিচলিত হলো মন। হঠাৎ মনে হলো আজ এসব কিছুর জন্য শুধু মাত্র জাহানারা নামের মেয়েটা দায়ী ।না সে তাকে পাওয়ার জেদ করতো,না দাদি তার চাওয়া নিয়ে আদিবের কাছে আসতো, না মা দাদিকে কিছু বলতো, না এসব কিছু হতো!রাগ হলো আদিবের জাহানারার উপর।ভীষণ রাগ।রাগের মাথায় আশরাফ যেমন ভুলে বসেছিল জন্ম, মৃত্যু সব আল্লাহর হাতে।সব নির্ধারিত। আদিব‌ও তেমন ভুলে বসলো।নিজের হুঁশ জ্ঞান হারিয়ে ঘোষণা দিল এসব কিছুর জন্য একমাত্র জাহানারা দায়ী।আর কেউ না। শাস্তি পেলে সে পাবে, তার মা নয়।গত দিনের ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে সবার সামনে আনল আদিব।আদিবের কথা শেষ হতেই সাজ্জাদ বলল,

– জাহানারা ছোট মানুষ আদিব। তাছাড়া ও অসুস্থ। ওর মাথার ঠিক নেই।

-ও মোটেও অতটা ছোট না চাচা যতটা আপনি বলতে চাইছেন।আসল কথা কি জানেন চাচা, আমার মা’র থেকে ওর দোষটা কোন অংশে কম না কিন্তু আপনারা নিজেদের মেয়ে বলে ওর দোষ দেখছেন না। শুধু আমার মায়ের দোষটাই দেখছেন।

-আমরা কারো দোষ দেখছি না আদিব।জন্ম মৃত্যু আল্লাহর হাতে।আল্লাহ যার জন্য যতটুকু হায়াত নির্ধারিত করেছে সে ততদিন‌ই বাঁচবে।মায়ের মৃত্যু তে আমরা শোকাহত কিন্তু ভুল ঠিক বোঝার ক্ষমতা আমাদের আছে। জাহানারা যেটা করেছে সেটা অসুস্থ মস্তিষ্কে।যেটা তুমিও ভালো করে জানো।আর ভাবি যেটা করেছে সেটা সচেতন মস্তিষ্কে।আমরা জানি এবং মানী যে ভাবির জন্য মা মারা যায় নি।তার আয়ু ফুরিয়েছে তাই সে মারা গেছে। কিন্তু ভাবি তার সাথে যে ব্যবহার টা করেছে সেটা কি তার উচিত হয়েছে!তুমি বলো।

-মেজ চাচা ,মা রাগের মাথায় বলেছে ওসব। আপনার তো জানেন রাগ উঠলে মায়ের মাথা ঠিক থাকে না।

-আমরা জানি বলেই তাকে দোষ দিচ্ছি না। কিন্তু তুমি এটা বলতে পারো না তার কোন অপরাধ নেই। একজনের দোষ ঢাকতে আরেকজন কে অপরাধী করো না।

শাহেদের স্পষ্ট কণ্ঠ।আদিবের ভালো লাগলো না চাচার কথা সে কাঠ কাঠ গলায় বলল,

-তাহলে আপনারা কি চাইছেন,মা কে অপরাধী করে বাবা ছেড়ে দিক মা কে?তালাক দিক তাকে?

-আদিব কথা বুঝে কথা বলবে ।আমরা কখনো সেটা চাই না।আমরা শুধু বলতে চাইছি রাগের মাথায় হোক আর যে কারণে হোক ভাবির ভুল ছিল।যার জন্য ভাইকে তার অন্তত একটা সরি বলা উচিত ছিল।

-মা অনেক দুঃখিত ছোট চাচু।সে গত রাতের ঘটনার জন্য বাবার সামনে লজ্জায় দাঁড়াতে পারছে না।মুখ ফুটে কিছু বলবে কি করে। আপনার‌ই বলুন আমার মা কে তো এতদিন ধরে দেখছেন,তাকে কখনো দেখেছেন দাদির সাথে উচ্চ স্বরে কথা বলতে ?দাদিকে উলটা পালটা কিছু বলতে?

না, তানিয়ার এমন কোন আচরণ কখনো কারো চোখে পড়েনি।তানিয়া রাগী, অহংকারী হলেও কখনো জাহানারা বেগমের সাথে কোন ধরনের বেয়াদবি করেনি। সবসময় চেষ্টা করেছে জাহানারা বেগম কে যথাযথ সম্মান দেওয়ার তার সুবিধা অসুবিধা বোঝার।সবাই জানে এটা।আদিবের কথায় ঘর জুড়ে পিনপতন নিরবতা বিরাজ করলো।আদিব এই নিরাবতায় নিজের ইতিবাচক উত্তর পেয়ে গেল। ফোঁস করে একটা শ্বাস ফেলল সে।বাবার কাছে আরো একবার মায়ের হয়ে ক্ষমা চাইলো। আশরাফ ছেলের কথার প্রতি উত্তরে এবার‌ও কিছু বলল না। কঠিন মুখে চুপ করে রইলো। যোহরের আজান পড়লো মসজিদে।সবার টনক নড়লো।মা কে নিয়ে যেতে হবে যে তার শেষ ঠিকানায়।বেরিয়ে এলো সকলে ঘর ছেড়ে। জাহানারা বেগমের মুখটা শেষ দেখার জন্য একে একে এগিয়ে গেল।ঘর থেকে বের হতেই জাহানারার কান্নার শব্দ কানে ঠেকলো সবার।গত রাতে জাহানারার শারীরিক অবস্থার অবনতির জন্য তাকে ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়েছিল আশরাফের পরামর্শে।তাই ঘুম ভাঙতে বেলা গড়িয়েছে।ঘুম ভাঙতেই দাদির মৃত্যুর কথা শুনে ছুটে এসেছে সে। জাহানারার কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি হলো।শুষ্ক চোখগুলো ভিজে উঠলো আবার।মেয়েকে দেখেই জায়েদের চোয়াল শক্ত হলো।এতদিন জাহানারার সব পাগলামি ,সব কিছু মুখ বুজে মেনে নিলেও হঠাৎ তার কি হলো কে জানে সে মানুষজন উপেক্ষা করে এগিয়ে গেল সামনে। মায়ের খাটিয়ার পাশ থেকে মেয়েকে বাহু ধরে টেনে তুলে সজোরে চড় বসালেন তার গালে।গর্জে উঠে ডাকলেন সালেহা কে। জাহানারা কে নিয়ে এই মুহূর্তে বাড়ি যেতে বলল তাকে।জায়েদের হঠাৎ এমন কাণ্ডে চমকে উঠলো সবাই।শাহেদ বিরক্ত কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠে বলল,

-তোমরা কি এবার তোমাদের নাটক থামাবে?কি শুরু করেছ কি। একজন ব‌উকে যাতা বলছো, একজন মেয়ের গায়ে হাত তুলছ।মানে কি এসবের! এবার থামো প্লিজ। ভালো লাগছে না আর এসব।

-মিয়া ভাই চলো,,, দেরি হয়ে যাচ্ছে।

শাহেদের কথা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে আশরাফ কে উদ্দেশ্য করে বলল জায়েদ।এ কথার পর আর কেউ কোন কথা বলল না।শাহেদ একটা হতাশ শ্বাস ফেলল।আদিব বুঝতে পারলো সেজ চাচা তার বলা কথায় কষ্ট পেয়েছে।আদিবের বুক চিরে বেরিয়ে এল দীর্ঘশ্বাস।ভারি পায়ে এগিয়ে গেল দাদির শেষ যাত্রায়।

জাহানারার শেষ কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে বাবার কাছে মায়ের হয়ে আবার‌ও ক্ষমা চাইলো আদিব। আশরাফ ছেলের কথা শুনল বলে মনে হলো না।সে নীরব চোখে মায়ের ঘরের দরজার সামনে বসে রইল।
সে দিন আর মুখে দানা পানি তুললেন না আশরাফ। পরেরদিন সকালে তানিয়া এসে তার সামনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো ।নিজের অপরাধ স্বীকার করে হাত জোড় করে মাফ চাইলো।তার ভুল হয়েছে বলে বারবার নিজেকে দুষতে লাগলো। আশরাফের মন নরম হলো তানিয়ার অপরাধ স্বীকারে। তবে সদ্য মা হারানোর শোক ভুলে স্ত্রী কে কাছে টেনে নিতে পারলেন না।শীতল কণ্ঠে বলল,

-আমি ক্লান্ত তানিয়া, আমাকে একটু একা থাকতে দাও।

আদিব দরজার মুখেই দাঁড়িয়ে ছিল। তানিয়া ঘর থেকে বের হতেই সে মাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল বাবাকে একটু সময় দা‌ও সব ঠিক হয়ে যাবে।দাদির মৃত্যুর পর থেকে চাচাদের সাথে সম্পর্ক একটা অদৃশ্য দূরত্ব তৈরি হলো তাদের।আগের মতো সহজ সম্পর্ক গুলো একটু জটিল হলো।কেউ মুখে বলুক আর নাই বলুক আদিব বুঝলো সবাই দাদির মৃত্যুর জন্য মনে মনে তার মা-কে দায়ী করছে।আদিবের মনে হলো হয়ত তার তাদের জায়গা থেকে ঠিক। তার মায়ের সাথেও যদি কেও এমন কিছু করতো সেও তাদের মতোই করতো।দাদির মৃত্যুর তিনদিন পর আবার এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলো।জাহানারা মাত্র অতিরিক্ত ঘু’মের ‌ঔ’ষুধ খেয়ে আবার হাসপাতালে ভর্তি হলো। ডাক্তার জানালো জাহানারা মধ্যে আ’ত্মহ’ত্যার প্রবণতা দেখা দিয়েছে।শাহেদ ভাতিজির অবস্থা দেখে জায়েদ কে কঠিন করে কিছু কথা শুনিয়ে নিজের সাথে তাকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। জাহানারা বেগমের মিলাদের কাজ সম্পন্ন হ‌ওয়ার পরের দিন‌ই শাহেদ জাহানারাকে নিয়ে ঢাকার রাস্তায় পাড়ি জমালো।

জাহানারা যেদিন খুলনা ছেড়ে চলে যায় সেদিন রিকশা দিয়ে যাওয়ার সময় বারবার তাদের বাড়ির দিকে তাকচ্ছিল। আদিব নিজের ঘরের জানালা দিয়ে দেখেছিল সেটা।দেখেছিল দুটো তৃষ্ণার্ত চোখের তাকে দেখার চেষ্টা। কিন্তু সে যায় নি সামনে।মিটায়নি কারো তেষ্টা।যে গল্পের শেষ নেই, তার শুরু টেনে লাভ কি!

এরপরের সময়টা একটু দ্রুত পার হলো। আদিবের লন্ডন যা‌ওয়ার দিন ঘনিয়ে এলো।সবার থেকে বিদায় নিয়ে মা বাবার সাথে র‌ওনা দিল ঢাকার উদ্দেশ্যে। ঢাকায় একদিন মামার বাসায় থেকে পরেরদিন মা বাবাকে সাথে নিয়ে এয়ারপোর্টের পৌঁছাল।ছোট চাচাও গিয়েছিল সেদিন তাকে বিদায় জানাতে।মা বাবা আর ছোট চাচার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে উঠে বসলো সে লন্ডন******ফ্লাইটে।র‌ওনা হলো উন্নত জীবনের আশায়, ভিনদেশ।পিছনে ফেল গেল কিছু সুন্দর অসুন্দর স্মৃতি।ব্যস্ত হলো নিজেকে নিয়ে। নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে সবকিছু গুছিয়ে নিতে নিতে বছর পার হলো তার।সময় বাড়লো তার সাথে ব্যস্ততা‌ও।একদিকে পড়াশোনার ধাপ অন্যদিকে নানার দেওয়ার ঋণে চাপ। তোফায়েল তার দেওয়া টাকা ফেরত না চাইলেও আদিব সেটা শোধ করতে মরিয়া হলো।মামাদের বলা কথাগুলো হজম করে নিলেও ভুলতে পারেনি সে।তাই তো নিজের সবটুকু চেষ্টা চালালো নানার দেওয়া টাকাটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিশোধ করার। পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট বড় বিভিন্ন কাজে হাত লাগলো।এত এত ব্যস্ততার মাঝে কাছের সম্পর্ক গুলো দূর সরে গেল।প্রথম প্রথম ছোট চাচা আর ফুপি খোঁজ খবর নিলেও সময়ের সাথে সাথে তাদের তদারকি কমলো।মা-ও স্পষ্ট গলায় নিষেধ করলো তাদের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিতে।নিজের কথা জোরালো করতে,তারা আদিবের ভালো চায় না এমন যুক্তি দেখালো। হঠাৎ মায়ের এমন কথার কারণ খুঁজে পেল না আদিব ।মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করেও কোন উত্তর পেল না সে।পরে তৃপ্তির কাছে জানতে পারলো ফুপুর সাথে জাহানারা কে নিয়ে ঝগড়া হয়েছে মায়ের। ঝগড়ার কারণ সেজ চাচাকে দেওয়া বাবার কথা। তৃপ্তির ছেলে দেখতে এসেছিল ফুপু হাসপাতালে তখন এক কথায় দু কথায় জাহানারা সাথে তার বিয়ের কথা তুলতেই মা তাকে কড়া করে কথা শুনিয়েছে।ফুপু এবার চুপ থাকেনি। তানিয়া অহংকারী,লোভী বলে দুই কথা শুনিয়ে দিয়েছে।তারপর থেকেই তানিয়া চটে আছে। এরমধ্যে আবার মেজ চাচির সাথে ঝগড়া হয়েছে।কারণ চাচি না কি ইচ্ছা করে তাদের বাড়ির সামনে ময়লা ফেলে যায়।ঐ সব মেয়েলি ঝগড়া আর কি!তৃপ্তির কথা শুনে একটা দম ফেলল আদিব। বুঝতে পারলো সম্পর্কে দূরত্ব টানার সময় এসেছে।নিজেকে গুটিয়ে নিল সব থেকে।মা দিন শেষে ফোন দিলেও ভালো মন্দের বেশি কিছু বলা বাদ দিল।পুরো দস্তুর মনোযোগ দিল নিজের ক্যারিয়ারে।এরমাঝে একদিন কথায় কথায় তৃপ্তির কাছে জানতে পেল জাহানারা না কি মডেলিং শুরু করেছে।তাদের পাড়ার মোড়ে জাহানারার বিরাট এক হোডিং লাগিয়েছে বিজ্ঞাপন দাতা প্রতিষ্ঠান।সেজ চাচা এই নিয়ে ছোট চাচার সাথে রাগারাগি করেছে।ছোট চাচা তার কথার উত্তরে বলেছে, “মেয়ে তো ত্যাগ‌ই করে দিয়েছিলে, এখন সে যা ইচ্ছা করুক তাতে তোমার কি?”এরপর সেজ চাচা কিছু বলতে পারিনি ।রাগ করে ছোট চাচার সাথে কথা বন্ধ করেছে। জাহানারার কথা শুনে আদিবের কেমন যেন অস্বস্তি হলো সে তৃপ্তি কে কড়া গলায় বলল সে যেন জাহানারার বিষয়ে তার সাথে কিছু না বলে।এরপর থেকে তৃপ্তি আর জাহানারার বিষয়ে কিছু বলতো না তাকে। কিন্তু এর ঠিক চার বছর পর আবার জাহানারার বিষয়ে খবর সামনে এলো তার।সেটাও আবার খবরের কাগজে।
আদিবের এক বাঙালি রুম মেটের বাংলা খবরের কাগজ পড়ার দরুন আদিব জানতে পারলো তার সেজ চাচার এক মাত্র মেয়ে “খন্দকার জাহানারা আহাসান নিকুঞ্জ চলচিত্রে অভিনয় করার জন্য শ্রেষ্ঠ নারী চরিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাচ্ছেন।”খবরের কাগজে জাহানারার নাম পড়েও আদিবের বিশ্বাস হলো না যে এটাই তাদের জাহানারা ।সে তৃপ্তি কে ফোন লাগলো খবরের সত্যতা যাচাই করতে। তৃপ্তি আদিবের মুখে জাহানারার নাম শুনে প্রথমে একটু ভাব নিল,এর পরে জানালো, আদিব যেটা শুনেছে সেটা সত্যি। তারপর থেকে তৃপ্তি নিজেই জাহানারার টুকটাক নানান বিষয়ে নিজে থেকেই আদিব কে বলতো।আদিব শুনতো।মাঝে মাঝে হ্যাঁ হু করে জবাব দিত।এর বেশি না। তৃপ্তির মুখে জাহানারা সফলতা, ব্যর্থতা,তার ভক্ত, শুভাকাঙ্ক্ষী এদের তার প্রতি ভালোবাসা, এসব কথাগুলো ভেবে আদিবের ভীষণ অবাক লাগত যে, যে মেয়েটাকে মানুষ একটু দেখার জন্য, একটু ছোঁয়ায় জন্য কত কিছু করছে, সেই মানুষটাকে সে কখনো ফিরে দেখার প্রয়োজন বোধ করেনি।তাকে পাওয়ার জন্য,তাকে ছোঁয়ার জন্য করা মেয়েটার আকুতি, মিনতির গুরুত্ব দেয়নি!রীতিমতো উপেক্ষা করেছে মেয়েটাকে।ছুঁড়ে ফেলেছে নিজের থেকে!
এই জন্য কি বলে, “মানুষ কোন জিনিস সহজে পেলে তার কদর করে না!”

দরজায় টোকা পড়ার শব্দে ধ্যান ভাঙলো আদিবের। হঠাৎ শব্দে চমকে উঠলো সে।ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে দেখলো অনেকটা সময় পার হয়েছে।স্মৃতির পাতারা উল্টে পাল্টে তাকে কখন যে নিজেদের মধ্যে ঢেকে নিয়েছে সেটা সে খেয়াল‌ই করেনি। পুরোনো দিন গুলো সব যেন তার চোখের পাতায় রঙিন দৃশ্যের ছায়াছবির নেয় ফুটে উঠেছিল,যেটা সে স্থান কাল ভুলে বিভোর হয়ে দেখছিল।আরো একবার টোকা পড়লো দরজায়।আদিব গলা বাড়িয়ে বলল,

-দরজা খোলা আছে।

ভারি কাঠের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো তানিয়া।আদিব তখনো জানালার সামনে দাঁড়িয়ে।তানিয়া ছেলের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।তার দৃষ্টি অনুসরণ করে বলল,

-তোর দাদি কবে কবে জাহানারা কে এ জমি লিখে দিয়েছিল আমরা টের‌ও পাইনি।তার কি এটা করা ঠিক হয়েছে!তার জিনিসের পরে তো সবার হক ছিল…

-দাদির জিনিস দাদি যাকে ইচ্ছা দিয়েছে। সেখানে আমাদের কিছু বলার থাকতে পারে না।

তানিয়ার কথা কেটে গম্ভীর গলায় বলল আদিব।ছেলের গম্ভীর কণ্ঠে বলা কথাটায় কিঞ্চিৎ অপ্রস্তুত হলো তানিয়া।বুঝলো এ ব্যাপারে ছেলের সাথে কথা বলে সুবিধা করতে পারবে না।সে কথা ঘোরালো।সোনিয়ারা কেমন আছে জানতে চাইলো। সিনথিয়া,প্রিথিলার কি খবর জিজ্ঞেস করলো।আদিব অল্প শব্দে‌ জানালো সোনিয়ারা ভালো আছে। সিনথিয়া‌ শ্বশুর বাড়ি আছে তার খবর আদিব জানে না আর প্রিথিলার খবর ঠিক বলতে পারবে না।আদিবের দায় সারা জবাব। তানিয়ার বুঝতে অসুবিধা হলো না যে ছেলে কথা বলতে চাইছে না।সে আর কথা বাড়ালো না।যে কথা বলতে এসেছিল সেটা‌ও তুলল না।আদিব কে রেস্ট করতে বলে যেমন নিঃশব্দে এসেছিল তেমন নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল।

তানিয়া চলে যেতেই আদিব নিজের ল্যাপটপ খুলে বসলো। অনেক আরাম হয়েছে এখন একটু কাজ করতে হবে তার।একটা গুরুত্বপূর্ণ ই-মেইল আসার কথা ছিল সেটা এসেছে কি না চেক করতে ই-মেইল অ্যাপে ক্লিক করলো।

চলবে, ইনশাআল্লাহ।

#সৌরকলঙ্ক
#উম্মে_প্রভা
#পর্ব_৮

-কি হলো আদিব তুমি কিছু নিচ্ছো না যে, রান্না ভালো হয় নি?

আন্তরিক কণ্ঠে লিলির।আদিব জোরপূর্বক হাসলো। বিনয়ী ভাবে বলল,

-এই তো নিচ্ছি আন্টি।

সামনে রাখা মোটা সোঁটা বাটিটা থেকে দুই টুকরো মুরগির মাংস নিজের প্লেটে নিল আদিব।হাত দিয়ে হাড়ের থেকে মাংস ছাড়াতে ছাড়াতে মায়ের দিকে একবার থমথমে মুখে তাকালো।তানিয়া ছেলের দিকে না তাকিয়েও ছেলের উত্তপ্ত দৃষ্টির আঁচ পেল। কিন্তু সেদিকে ভ্রূ ক্ষেপ করলো না।মায়ের নির্লিপ্ততা দেখে আদিবের মেজাজ আরো খারাপ হলো ।সে কোনোরকম নিজের খাবার শেষ করে উঠলো।তাকে উঠতে দেখে লিলি তার মেয়ে সামিয়া কে ডাকল।সামিয়াকে বলল সে যেন আদিব কে তাদের বাগান টা একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আসে।সামিয়া বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়লো।আদিব মায়ের দিকে আরো একবার কড়া চোখে তাকিয়ে পা বাড়ালো সামিয়ার পিছু।

-আমি কি দেখতে খুব খারাপ?

অন্যমনস্ক ভাবে হাঁটছিল আদিব ঠিক তখন সামিয়ার প্রশ্নটা কানে এলো তার। ফোঁস করে একটা শ্বাস ফেলল আদিব।বাগানের শেষ মাথায় দুপুরের রোদ আটকে দাঁড়ানো ঝাপড়ানো জাম গাছটার দিকে তাকিয়ে ছোট করে বলল,

-না।আপনি বেশ সুন্দর দেখতে।

-তাহলে আপনি আমার দিকে তাকাচ্ছেন কেন?

-মাঝে মাঝে সুন্দর জিনিসও দেখতে ইচ্ছা করে না।

-এমনটা তো তখন হয় যখন মনে অন্য কোনো ইচ্ছা থাকে। আপনার স্যাম‌ওয়ান স্পেশাল থাকলে আমাকে বলতে পারেন ।আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি।

স্যাম‌ওয়ান স্পেশাল!শব্দ দ্বয় নিজ মনে একবার আ‌ওড়ালো আদিব।তারপর ঘাড় বেঁকিয়ে সামিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

– তেমন কেউ নেই আমার।

এরপর কিছুক্ষণ নীরবতা।আদিব কথা বলতে চাইছে না যেটা স্পষ্ট। কিন্তু সামিয়ার মনে হলো লোকটা ইন্ট্রোভার্ট স্বভাবের।সে বলল

-আপনি কি সবসময় এমন কম কথা বলেন না কি আমি স্পেশাল।

-আমার কথার পরিমাণ সাধারণত সামনের ব্যক্তি অনুযায়ী কম বেশি হয়ে থাকে।

আদিবের স্পষ্ট জবাব। সামিয়া বুঝতে পারলো আদিবের তার প্রতি উদাসীনতা।সে আদিবের মুখের দিকে গাঢ় দৃষ্টিতে তাকালো। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের মুখটায় বিরক্তির ছড়া ছড়ি।সামিয়ার গভীর দৃষ্টির সামনে কিঞ্চিৎ অপ্রস্তুত হলো আদিব।তার এমনিতেই ভালো লাগছিল না সামিয়ার সাথে কথা বলতে। তার‌উপর এখন তার এই চোখা দৃষ্টি! বিরক্তি চরমে পৌঁছাল আদিবের।মায়ের উপর প্রচণ্ড রাগ হলো তার।নানার অসুস্থতার কথা বলে ঢাকা পর্যন্ত নিয়ে আসা মানতে পারলেও দা‌ওয়াতের নাম করে মেয়ে দেখতে নিয়ে আসার ব্যাপারটা তার হজম হলো না।সে মনে প্রতিজ্ঞা করলো একবার এখান থেকে বের হতে পারলে এর পরে আর মায়ের সাথে কোথাও যাবে না।কখনো না। সামিয়ার দৃষ্টি উপেক্ষা করতে ঘড়িতে অযথা একবার সময় দেখলো আদিব।সামিয়া সেটা লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করলো,

-কোথাও যা‌ওয়ার আছে বুঝি?

-হু?

অন্যমনস্ক ভাবে সাঁড়া দিল আদিব। তারপর হঠাৎ কি মনে করে বলে উঠলো,

-জি।আসলে আমার একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল।আমাকে যেতে হবে।আমি আসছি ।আমার মা আমার বিষয়ে কিছু জানতে চাইলে বলবেন আমি সময় পেলে তাকে ফোন করে সব জানাবো। আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো। আসসালামুয়ালাইকুম।

কথাটা বলে সামিয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সদর দরজার দিকে হাঁটা দিল।সামিয়া আদিবের ব্যবহারে তাজ্জব বনে গেল।আদিব বুঝলো এভাবে হঠাৎ কথার মাঝ থেকে চলে যা‌ওয়াটা ভালো দেখালো না।তবে তার কিছু করার নেই।এই বিরাট অট্টালিকায় দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। এখান থেকে না বের হওয়া পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছে না সে। দ্রুত পায়ে সদর দরজা পেরিয়ে বাইরে এলো আদিব।বাইরে বের হতেই বুক ফুলিয়ে একটা দম নিল।ফোন বের করে মায়ের উদ্দেশ্যে একটা ছোট বার্তা পাঠালো,”তুমি আজকে যেটা করেছ সেটা একদম ঠিক করোনি,আমি বড় আপার ওখানে যাচ্ছি,মন মেজাজ ঠান্ডা হলে বাড়ি ফিরবো।”সেন্ড বাটনে ক্লিক করে ম্যাসেজ টা পৌঁছে দিয়ে ফোন লক করে পকেটে ভরলো।এরপর কিছু দূর হেঁটে একটা রিকশা নিয়ে উঠে বসলো তাতে।রিকশা ওয়ালা কে গন্তব্য জানাতেই রিকশা ওয়ালা প্যাডেল পা চালালো।ঢাকা শহরের রাস্তা ঘাট সম্পর্কে আদিবের ধারণা সীমিত।তার বেড়ে ওঠা খুলনায়,সেখানেই তার বিস্তার এরপর লন্ডন। খুলনা ব্যতীত এদেশের আর কোন শহর বা গ্রাম আদিবের ঠিক সে ভাবে চেনা হয়ে ওঠেনি।মাঝে মাঝে আদিবের মনে হয় উন্নত ভবিষ্যতের সাধনায় সে দারুণ কিছু সময় পিছনে ফেলে এসেছে। যেগুলো চাইলেও হয়ত আর ফিরে পা‌ওয়া সম্ভব না। কথাটা ভাবতেই বুক চিরে একটা হতাশ শ্বাস বিরিয়ে এলো।রিকশা চালককে পাশের এটিএম বুথের সামনে রিকশা থামতে বলে সে নেমে গেল।এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে রিকশার দিকে আগালো।রিকশায় উঠতেই যাবে তখন কেউ পিছন থেকে শিষ দিয়ে ডেকে উঠলো,”আদিব্যা” বলে।চেনা সম্বোধন।আদিব তড়িৎ ঘাড় ঘোরালো।চোখে পড়লো মোটা তাজা শরীরের গোল গাল চেহারার ছেলেটাকে।আপনা আপনি ঠোঁটের কোণে চলে এলো মৃদু হাঁসি।অপর পাশের ব্যক্তিটি ভ্রূ নাচিয়ে দাঁত বের করে হাসলো।আদিব দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল।সামনের জন‌ও এগিয়ে আসলো।আদিব হ্যান্ড সেক করার জন্য হাত বাড়ালেও মানুষ টা তার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে হেঁচকা টানে বুকে টেনে নিল।বলল,

-শালা ,,,,বিলেতি গিরি এখানে চলবে না।এতবছর পরে দেখা হলো,হাত মিলিয়ে শান্তি হবে।

আদিব দুই হাতে বন্ধু কে জড়িয়ে নিল।সেভাবে থেকেই আহাজারি করে বলে উঠলো,

-তোর গায়ে যে গন্ধ!তোর জন্য ঐ হাতে হাত মিলানো পর্যন্তই ঠিক ছিল। উঁহুহু!

আদিব মিছিমিছি না শিঁটকালো।তাহের তড়িঘড়ি ছেড়ে দিল আদিব কে ।হাত উচু করে নিজের শরীরের গন্ধ বার কয়েক শুঁকে বলল ,

-কৈ গন্ধ বের হচ্ছে!শালা তুই যেটা শুকে নাক শিটকাচ্ছিস, ওকে বলে সুগন্ধ। সুগন্ধ!তাও আবার ব্র্যান্ডেড।

ঠোঁট টিপে হাসলো আদিব।আদিবের হাসিটা তাহের কে বিভ্রান্তিতে ফেলল এবার।তার গায়ে গন্ধের সমস্যা সেই ছোট থেকেই যেটা সময়ের সাথে সাথে কড়া সুগন্ধি আর কিছু অভ্যাস পরিবর্তনের ফলে অনেকটা কম হয়েছে কিন্তু আদিবের মুখের মিটমিটে হাঁসি দেখে তার মনে সংশয় দেখা দিল।সে হাত উঁচু করে আরো দুইবার নিজের শরীরের গন্ধ নিয়ে চিন্তিত কণ্ঠে আদিবের কাছে জানতে চাইলো,

-এই আদি সত্যি সত্যি গন্ধ বের হচ্ছে না কি?

তাহেরের বিচলিত কণ্ঠ আদিব দাঁত বের করে হাসলো।তাকে আরো একবার জড়িয়ে ধরে পিঠ চাপড়ে বলল,

-আরে ইয়ারকি করছিলাম।কেমন আছিস?

-বিন্দ্যাস।তোর কি খবর?দেশে ফিরলি কবে?

-এই তো মাসখানেক হলো।

-মামা যাবেন না?

আদিব কে তাহের সাথে কথায় মশগুল দেখে রিকশাওয়ালা মামা পিছু ডেকে জানতে চাইলো।আদিবের টনক নড়লো এবার।সে তো তাহের কে দেখে ভুলেই গিয়েছিল যে তার রিকশা দাঁড়িয়ে আছে। রিকশাওয়ালা মামার কথার জবাব দিতেই যাবে আদিব তার আগে আদিবের হয়ে জবাবটা তাহের দিল,

-নানা মামা,তোমার মামা এখন বন্ধুর সাথে যাইবো।তুমি কেটে পড়ো।

-এই না রে আজ না।আজ বড় আপার ওখানে যেতে হবে। অপেক্ষা করছে সে।

তাহেরের কথা শেষ না হতেই বলল আদিব।তাহের আদিবের কথা হা‌ওয়াই উড়িয়ে দিয়ে বলল,

-শোনো মিয়া অনেকদিন পর তোমারে বাগে পেয়েছি এত তাড়াতাড়ি ছাড়ছি না।তুমি এখন আমার সাথে ঘুরা ঘুরি করবা ।রাত ভোর হ‌ওয়ার আগে আমি তোমাকে সসম্মানে আপার ওখানে পৌঁছে দিব।কথা ক্লিয়ার?

-না রে তা হয় না ।আপা রাগ করবে ।

-তুই ফোন লাগা আপার কাছে আমি কথা বলছি আপার সাথে।

তাহের নাছোড়বান্দা।আদিব হাল ছাড়লো।আদিব দিপ্তীর ওখানে হঠাৎ গিয়ে তাকে চমকে দিতে চেয়েছিল। যার জন্য দীপ্তি কে কিছু জানায়নি নিজের যাওয়ার ব্যাপারে।সে শুধু তাহের কে কাটানোর জন্য দিপ্তীর অযুহাত দিয়েছিল। কিন্তু বুঝলো তার এই বন্ধুর কাছে তার দেওয়া অযুহাত টিকবে না।সে রিকশাওয়ালা কে তার পাওনা মিটিয়ে দিয়ে তাহেরের সাথে তার গাড়িতে উঠে বসলো।তাহের ইয়াসির আদিবের ছোট বেলার বন্ধু।এক সাথে স্কুল শেষ করেছে তারা এরপর তাহেরের বাবার সরকারি চাকরির দরুন ট্রান্সফার হলে তারা কুষ্টিয়ায় চলে যায়।তাহেররা ঢাকার স্থানীয় লোক।কলেজে ভর্তি হ‌ওয়ার পর একবার খুলনায় গিয়েছিল তাহের ।তখন আদিবদের ওখানে মাস খানেক ছিল।ঐ সময়টাতেই তাদের বন্ধুত্ব আরো গাঢ় হয়। লন্ডন যা‌ওয়ার পরেও বেশ কয়েক বছর তাহেরের সাথে যোগাযোগ ছিল আদিবের।এর পরে বিভিন্ন ব্যাস্ততায় কীভাবে কীভাবে যেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলো তাদের।তাহেরের সাথে কথা বলে আদিব জানতে পারলো সে বর্তমানে হোটেল ব্যাবসা নিয়োজিত আছে।বাবার প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আর নানি বাড়ি থেকে মায়ের পাওয়া সম্পত্তির অংশ বিক্রি করে পাঁচ বছর আগে একটা ছোট্ট খাটো রেস্তোরাঁ শুরু করেছিল যেটা এখন বিরাট চার তারকা হোটেলে পরিবর্তিত হয়েছে।আদিব কে নিজের হোটেলে নিয়ে গেল তাহের। সারা বিকেলটা তাহেরের হোটেলের আনাচে কানাচে ঘুরেই কাটলো আদিবের।এরপর রাত আটটার দিকে তাহের তাকে নিজের বাড়ি নিয়ে গেল।দুই বছর হলো বিয়ে করছে তাহের চার মাসের একটা মেয়েও আছে তার।তাহেরের তুলতুলে মেয়েটা দেখে আদিব আক্ষেপের সুরে তাহেরের সামনে বলেই বসলো,

– জীবন যুদ্ধে আমি তোদের থেকে পিছিয়ে গেলাম রে।

-তাতো যাবায়।আরো থাকো পড়ার টেবিলে প্রতিবন্ধীর মতো পড়ে।এখন বুঝতে পারছো কেন বলতাম আদিব্যা চারিদিকে একটু নজর বুলিয়ে দেখ ,কাউরে একটু চান্স দে ।তখন তো আমাদের কথার গুরুত্ব দাও নি।এখন রাত হলে বুঝতে পারো তো!

আদিবের কথাটা হয়ত তখনো হাওয়া ঝুলছিল।তাহের সেটা মাটিতে পড়ার আগেই কটাক্ষের সুরে নিজের বাণী ব্যক্ত করলো।আদিব ভ্রূ কুঁচকালো।বলল,

-ছি :।এক বাচ্চার বাপ হয়ে গেলি তা‌ও কথা বার্তা শুধরালো না।কথার কি শ্রী!

-আমার কথা ঠিকই আছে তোর কল কবজা ঠিক আছে কি না বল?

-মানে যাতা! হ্যাঁ?ফালতু লোক একটা।

-কথা ঘোরাস না যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দে।তোকে নিয়ে আমার খুব চিন্তা হয়।

-থাক তোমার আর চিন্তা করতে হবে না।খেতে চলো।আমার খিধে লেগেছে।

আদিব কথা এড়াতে চাইলো কিন্তু তাহের ছাড়লে তো।তার এক প্রশ্ন বার বার।আদিব বিরক্তি তে চোখ মুখ কুঁচকে বলল,

-আই এম টোটালি প্যার্ফেক্ট।ওকে?হ্যাপি?

-ভীষণ।তবে আরেকটা কথা এত কনফিডেন্সের রহস্য কি? এরমধ্যে টেস্ট ড্রাইভ সেরে ফেলেছিস না কি? হুঁ?

-বাজে লোকজন, বাজে চিন্তা ভাবনা।ফালতু একটা। ভদ্র মানুষ হবি না তুই।

আদিব হাঁটা দিল সামনে।তাহের স্ত্রী শিলা এর মধ্যে তাদের খাওয়ার জন্য ডেকে গেছে কয়েকবার।সেদিকেই পা বাড়ালো আদিব।তাহের আদিব কে জব্দ করতে পেরে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।আদিব কে সহজে কণ্ঠসা করা যায় না তবে টপিক যদি এটা থাকে তাহলে আদিবের মুখটা দেখার মতো হয়।তাহেরর অট্টহাসি শুনে শিলা জিজ্ঞেস করলো,

-কি হয়েছে?ও ওভাবে হাসছে কেন?

-পা’গ’লের আবার হাসির কারণ লাগে না কি!

-তা ঠিক বলেছেন ভাইয়া।

আদিবের কথা সমর্থনে বলল শিলা।তাহের এসে যোগ দিল তাদের সাথে খাওয়ার টেবিলে।খাওয়া দাওয়া গল্প গুজবে সময় গড়িয়ে কখন যে রাত বারোটা বাজলো তাহের কিংবা আদিব কারো খেয়ালই র‌ইলো না।রাত অনেক হয়েছে দেখে আদিবকে তাহের তার এখানে থেকে যেতে বলল। কিন্তু আদিব রাজি হলো না। যতোই পুরোনো বন্ধু হোক হুট করে উড়ে এসে এমন রাত কাটানোটা তার কাছে ভালো লাগলো না।সে তাহেরের উপর অনেকটা জু’লু’ম করে তাকে টেনে হিঁচড়ে বাড়ি থেকে বের করলো।শিলা মেয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে তাই আর তাকে ডেকে তুলল না তাহের।ফ্লাটের বাইরে থেকে দরজা লক করে বেরিয়ে গেল ফ্ল্যাট থেকে।

দীপ্তি সাভারে থাকে।তাহেরের বাড়ি থেকে ওর ওখানে যেতে ঘণ্টা দেড়েক মতো সময় লাগলো।আদিবের একবার জন্য মনে হয়েছিল এই সময় দিপ্তীর ওখানে না গিয়ে মামাদের ওখানে ফিরে যাওয়া কিন্তু মায়ের আজকের করা কাজের জন্য সে সিদ্ধান্ত বদলালো। তাছাড়া এই সময় দিপ্তীর বাড়ি তার জন্য সব থেকে উপযোগী। দীপ্তি আর নিশান দুইজন থাকে সেখানে। কোন ঝামেলা ঝঞ্ঝাট নেই।নিশান যথেষ্ট ফ্রেন্ডলি।এই অসময়ে তাকে দেখলেও তারা খুশি হবে এটা সে নিশ্চিত।
দিপ্তীর বাড়ির মুখে আদিব কে নামিয়ে দিয়ে বিদায় নিল তাহের।আদিব তাহের কে বিদায় জানিয়ে আশেপাশে নজর ঘোরাল রাত একটার আশেপাশে সময়, রাস্তা ফাঁকা। দিপ্তীর বাড়ির নেমপ্লেটটার সাথে ফোনের স্ক্রিনে থাকা ঠিকানাটা মিলিয়ে নিল সে।সঠিক গন্তব্যে এসেছে বুঝতে পেরে স্বস্তির শ্বাস ফেলল।পা বাড়ালো বাড়ির দিকে।বাড়ির সদর দরজাটা হাট করে খোলা পেল আদিব।আশেপাশে দারোয়ানকে খুঁজলো তবে আশ্চর্য জনক ভাবে কাউকে চোখে পড়লো না।বাড়ির বাইরে থেকে অন্ধকার আচ্ছন্ন বাড়িটা বেশ রহস্যময় ঠেকলো।খোলা দরজার কাছে দারোয়ান না থাকার বিষয়টা অদ্ভুত লাগলো আদিবের কাছে।এই মধ্য রাতে দরজা খোলা রেখে দারোয়ান কথায় গেল সেটা ভাবালো তাকে ।তবে পরক্ষণে মনে হলো হয়ত দিপ্তীর বাড়ি দারোয়ান‌ই নেই। কিন্তু দারোয়ান না থাকলে দরজায় তালা দিয়ে রাখেনি কেন এরা!তার আপা কি কোনোভাবে জানতে পেরেছে সে আসছে,তাই কি তাকে চমকে দেওয়ার জন্য দরজা খোলা রেখে গেছে!না।সেটা কি করে সম্ভব! সে আসছে এ খবর তো মা ছাড়া কেউ জানে না।আর তার জানা মতে মায়ের সাথে তার আপার কথা হয় না।তাহলে?নিজের মনে বিভিন্ন ভাবনা চিন্তার উদয় -অস্তচলের মাঝে বাড়ির দরজায় এসে থামলো আদিব।সাথে সাথে ভ্রূ তে ভাজ পড়লো তার।বাড়ির দরজাও সদর দরজার মতো হাঁ করে খোলা।ভেতরে ভেতরে এবার কেমন জানি একটা খটকা লাগলো আদিবের। খুঁত খুঁত করে উঠলো মন।আধারে ঢাকা নিকষ কালো বাড়িটা যেন কোন অশনি সংকেতের আভাস দিল তাকে।ধীর পায়ে এগিয়ে গেল সে।পা সামনে আগানোর সাথেই কানে পর্দায় বাড়ি খেল মৃদু গোঙানির শব্দ।আদিবের প্রতিটা পদক্ষেপের সাথে সাথে যেটা স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হলো।মন বলে উঠলো তার আপা কিংবা নিশান ভাইয়ের কিছু হয়নি তো?কথাটা মনে হতেই পায়ের গতি বাড়ালো আদিব।ফোন বের করে টর্চ অন করলো।অন্ধকার ঘরটা কিঞ্চিৎ আলোকিত হলো তাতে।ফোন টর্চের আলোয় দরজার পাশে থাকা সুইচবোর্ড টা চোখে পড়লো তার।সুইচ অন করলো আদিব।সাথে সাথে চোখে পড়ল ঘরের বিধ্বস্ত দশা।আদিবের বুদ্ধিদীপ্ত মস্তিষ্ক তাকে জানান দিল অনিষ্টের।ঠিক তখনই দৃষ্টি গিয়ে আটকালো সিঁড়ির সামনে ফ্লোরে পড়ে থাকা নিথর প্রায় শরীরটায়। ভেতরটা ছ্যাঁৎ করে উঠলো আদিবের। সাদা টাইলসের মেঝেতে রক্তের স্রোত আর নারী শরীরটা ক্ষণিকের জন্য স্তব্ধ করলো তাকে।
দীপ্তি অন্তঃসত্ত্বা।প্রায় তেরো বছর পর কত সাধ্য সাধনা করে কনসিভ করেছে।এ কথা আদিবের অজানা নয়।দীপ্তি আর তার অনাগত বাচ্চার অনিষ্ট চিন্তায় ভেতরটা কুঁকড়ে গেল আদিবের। ডিসেম্বরের এই শীতল আবহাওয়াতেও দরদর করে ঘামতে লাগলো সে।ছুটে গেল আহত মানুষটার দিকে।কাছ থেকে দৃশ্যমান হলো মানুষটার চেহারা।চমকালো আদিব।স্থান কাল ভুলে হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো র’ক্তে মাখামাখি মুখটায়।নিজের অজান্তেই মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে এলো চার অক্ষরের নামটা।

-জাহানারা!

চলবে, ইনশাআল্লাহ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ