#সৌরকলঙ্ক
#উম্মে_প্রভা
#পর্ব_৬
আ’ত্মহ’ননের চেষ্টায় কিঞ্চিৎ ত্রুটি ছিল হয়ত যার কারণে বেঁচে গেল জাহানারা।তবে হাসপাতালে কাটাতে হলো বেশ কয়েকদিন। জাহানারা কে দেখতে ছোট চাচা ছুটে এলো ঢাকা থেকে।ফুপু গিয়ে রইলো হাসপাতালে কতদিন। আশরাফ নিজের সবটুকু চেষ্টা দিয়ে ভাতিজির বোকামি লুকাতে চাইলেও লুকাতে পারলো না।এক কান দুই কান করে কথাটা রটেই গেল মহল্লায়। সেই সাথে আদিবের প্রতি জাহানারার অতি আগ্রহের কথাও জানলো সবাই।নানা লোকে নানান কথা বলল।কেউ আদিব কে দোষ দিল কেউ বা জাহানারা কে।তানিয়া ছেলের নামে মানুষের মুখে কটু কথা শুনে চিড়বিড়িয়ে উঠলো। সোনিয়ার আর তোফায়েলের সাথে কথা বলল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আদিবকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার জন্য।আদিবের কানে সবটাই এলো। জাহানারা কে জড়িয়ে নিজের নামে শোনা আউ ফাউ কথাগুলোর পরে জাহানারার উপর রাগ আরো বাড়লো।তবে পরক্ষণে যখন মনে হলো মেয়েটা আবেগের বসে যে বোকামি করছে, সেটা মানুষ তাকে সহজে ভুলতে দিবে না। ছোট্ট একটা ভুল পদক্ষেপ ,সারাজীবনের জন্য কলঙ্কের দাগ একে দিল মেয়েটার জীবনে।এ কলঙ্ক সে মুছবে কি ভাবে!এই সমাজ পুরুষের দোষ যত তাড়াতাড়ি ভুলে যায়, একজন মেয়ের দোষ অতোটা তাড়াতাড়ি ভুলতে পারে না।এসব কথা মনে হতেই জাহানারা জন্য উদায় হওয়া রাগ করুণায় পরিবর্তিত হলো।মায়া হলো মেয়েটার জন্য।
জাহানারা কে যেদিন হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে আসা হলো সেদিন ছাদে দাঁড়িয়ে ছিল আদিব।উঠান পার করে ঘরে যাওয়ার স্বল্প সময়ের দূরত্ব টুকুতে ঘাড় উঁচিয়ে আদিবদের ছাদের দিকে তাকিয়েছিল জাহানারা।সেই সময় আদিবের চোখে চোখ পড়েছিল তার।এত কিছুর পরেও মেয়েটা যেমন কাতর চোখে আদিবের দিকে তাকিয়েছিল সেটা মনে পড়লে আজও গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায় আদিবের।সেদিন জাহানারার সেই দৃষ্টির সামনে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেনি আদিব।নেমে এসেছিল ছাদ থেকে। একবারের জন্য মনে হয়েছিল জাহানারা তাকে যে ভালোবাসার দাবি করছে, সেটা শুধু মাত্র কিশোরী বয়সের আবেগ না।হয়ত আবেগ পেরিয়ে সত্যি তাকে ভালোবেসে ফেলেছে মেয়েটা। হঠাৎ করে খারাপ লাগছিল তার জাহানারার জন্য ।মনে হয়েছিল মেয়েটাকে এড়িয়ে না গিয়ে ভালো করে বোঝানো উচিত ছিল।হয়ত মেয়েটা তার কথা বুঝতো। নিজের বোকামির উপর নিজেরই রাগ হচ্ছিল আদিবের।সে অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিল জাহানারার সাথে সরাসরি কথা বলবে সে এ বিষয়ে। স্পষ্ট কথা!
পরেরদিন তানিয়ার বাড়িতে না থাকার সুযোগ নিয়ে পা বাড়ালো সে সেজ চাচাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।তানিয়া বাড়ি থাকলে তাকে জায়েদের বাড়ি যেত দিত না ,যেটা আদিব ভালো করেই জানতো।এর আগে জাহানারা হাসপাতালে থাকাকালীন আশরাফ তাকে হাসপাতালে যেতে বলেছিল সৌজন্য রক্ষার্থে কিন্তু তানিয়া তাকে যেতে দেয় নি। আশরাফের সাথে এই নিয়ে অশান্তি করেছে।আদিব চায়নি সেজ চাচার বাড়িতে যাওয়া নিয়ে তার মা আবার কোনো অশান্তি করুক সেই জন্য মায়ের অনউপস্থির সুযোগ নিয়েছিল। কিন্তু আদিব যদি জানতো এটা তার জীবনের সব থেকে বড় ভুল হবে তাহলে কখনো মায়ের অনউপস্থিতিতে সেজ চাচার ওখানে যাওয়ার কথা ভাবতো না!
আদিবের এখনো মনে আছে সেই এক চিলতে বিকেলের স্পষ্ট স্মৃতি।সেজ চাচার বাড়ির প্রবেশ মুখেই দেখা হল তার চাচির সাথে।চাচি কোথাও একটা যাচ্ছিল।আদিব কে দেখে সে মৃদু হাসলো।আদিব তাকে সালাম দিয়ে কুশলাদি বিনিময় করলো।সালেহা কোথায় যাচ্ছে সে কথা জানতে চাইলো আদিব।সালেহা জানালো রিপনদের বাড়ি যাচ্ছে সিরিয়ালের টাকা দিতে।আদিব কে বলল ভেতরে বসতে সে এই যাবে এই আসবে ।সজীব কে হাক ছেড়ে ডাকলো সালেহা।সজীব সালেহার কথার উত্তর নিলেও বাইরে এলো না,আদিবকে বলল তার ঘরে যেতে।সজীব কে কুড়ের উপাধি দিয়ে আদিব কে ভেতরে যেতে বলে বেরিয়ে গেল সালেহা।আদিব জাহানারার সাথে কথা বলবে ভেবে আসলেও পা বাড়ালো সজীবের ঘরে। সজীব উপুড় হয়ে পড়ে ছিল বিছানায়।এটা সজীবের ভীষণ পছন্দনীয় একটা কাজ ।আদিব ঘরে ঢুকেছে এটা বুঝতে পেরেও সে নড়লো-চড়লো না।আদিবের উদ্দেশ্যে বলল,” বস।”আদিব ওর শিয়রে বসলো।আদিব বসতেই চিত হয়ে শুলো সজীব ঘাড় ফিরিয়ে আদিবের দিকে তাকিয়ে বলল,
-বড় ভাবি বাড়ি নেই?
আদিব একটু অবাক হলো সজীবের কথায় ।তবে সজীবের কথার অর্থ বুঝতে পেরে একটা তপ্ত শ্বাস ফেলল। সজীবের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
-এতদিন পরে দেখা হলো,ভালো মন্দ কিছু জিজ্ঞেস না করে খোঁচা মারছিস কেন?
-খোঁচা মারছি না শুধু জানতে চাইছি ভাবি বাড়ি আছে কি না!
-থাক আর কথা ঘোরাতে হবে না।আমি বুঝেছি তোমার জানতে চাওয়া কথার মানে। হ্যাঁ মা বাড়ি নেই তাই এসেছি।বাড়ি থাকলে হয়ত আসতে দিত না।পেয়েছ উত্তর ?খুশি?
আদিবের কণ্ঠে রাগের আভাস। সজীব শোয়া থেকে উঠে বসলো।বলল,
-চেতছিস কেন?আমি তো এমনি জিজ্ঞেস করেছিলাম। আচ্ছা বাদ দে চা খাবি?
-না কিছু খাবো না।একটা কাজে এসেছিলাম। তোর হেল্প চাই।
-কি কাজ?
কাঠের আলনা থেকে একটা গেঞ্জি হাতে নিয়ে সেটা পরতে পরতে বলল সজীব।আদিব একটু সময় নিল। তারপর বলল,
-আমি জাহানারার সাথে কথা বলতে চাই।
-এখন কথা বলে কি হবে আদিব?যা হওয়ার হয়ে গেছে।এখন তুই কিছু বলতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।শোন ,জান নিজেকে সামলে নিয়েছে।ওকে ওর মতো ছেড়ে দে। তোর আর কিছু বলা লাগবে না।
-আর ইউ শিয়োর?
-ওয়ান হান্ড্রেড প্যারসেন্ট।
কথাটা বলে একটা শ্বাস ফেলল সজীব তারপর আদিবের মুখোমুখি বসে বলল,
-জান তোকে পছন্দ করে একথাটা তুই জানতি?
-হুম।
-আমাকে বলিস নি কেন?আমাকে বললে আমি হয়ত ওকে আগেই সামলে নিতাম।
-মনে হয়েছিল আমি সবটা নিজেই সামলে নিতে পারবো।তার থেকে বড় কথা আমি গুরুত্ব দেই নি ব্যাপারটা। ভেবেছিলাম কিশোরী বয়সের আবেগ,আমার থেকে কোন সাড়া না পেলে আপনা আপনি ঠিক হয়ে যাবে!
-আমি যদি বলি তোর প্রতি জানের মনে যে অনুভূতি আছে সেটা কিশোরী বয়সের আবেগ নয় , কিশোরী মনের প্রথম ভালোবাসা।
থমকালো আদিব। তড়িৎ তাকালো সজীবের মুখ পানে।সজীব হাসলো।সেই হাসিতে যেন বলতে চাইলো আমার ভাগ্নি মরেছে তোকে ভালোবেসে।আদিব একটা শুকনো ঢোক গিলল। শীতল শ্বাস টানলো। গম্ভীর অথচ স্পষ্ট কণ্ঠে বলল,
-ইট ইজ আনফরচুনেট ফর হার। আমার মনে তার জন্য না তেমন কিছু আছে আর না ভবিষ্যতে হবে।
-জানের মধ্যে কি কমতি আছে আদিব?এখনকার কথা বাদ দিলাম কিন্তু ভবিষ্যতেও তোর মনে ওর জন্য কোন অনুভূতি তৈরি হবে না সেটা কীভাবে বললি!এত অহংকার!
-অহংকার না আত্মবিশ্বাস।আমি আমার মন, আমার অনুভূতি সম্পর্কে জানি সেই আত্মবিশ্বাসে বললাম।
-ও…!
শব্দ করে একটা শ্বাস ফেলল সজীব।আর কথা বাড়ালো না।আদিবেরও মনে হলো বন্ধুর সাথে আর কথা জমবে না।আর যার জন্য এসেছিল সেটার যখন প্রয়োজন নেই তাহলে ওঠা উচিত।সে উঠে দাঁড়ালো।
-আচ্ছা থাক,আমি উঠি।
-এই তো এলি এখনই চলে যাবি?একটু বস। কয়দিন পর তো নাগালের বাইরে চলে যাবি তখন তো চাইলেও তোকে পাবো না।
আদিবের ভিসা চলে এসেছে।এখন ফ্লাইট টিকিট কেনার পালা।সজীব তারই ইঙ্গিত দিল আদিব কে।আদিব ম্লান হেসে বলল,
-এখনো অনেক দেরি আছে। আবার আসবো ।আজ উঠি একটা জরুরি কাজ আছে।
আদিবের কণ্ঠে ব্যস্ততা।সজীব আর বাঁধ সাধলো না।সেও উঠে দাঁড়ালো। আদিবকে এগিয়ে দিতে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে।সজীবের ঘর থেকে বের হতেই জাহানারার মুখোমুখি হলো তারা। জাহানারা কে দেখে কিঞ্চিৎ থমকালো আদিব।তাদের চাচাতো ভাই বোনের মধ্যে জাহানারার চেহারার সাথে কারো তুলনা করা যায় না।অসামান্য রূপ নিয়ে জন্মেছিল এই মেয়ে। আশরাফ প্রায় বলতো তার মা জাহানারা বেগম অল্প বয়সে যেমন ছিল ঠিক তেমন চেহারা ছিল ছোট বেলায় জাহানারার।জায়েদ মেয়ের সদ্য জন্মানো আদলে মায়ের প্রতিচ্ছবি দেখে মায়ের নামে মেয়ের নাম করণ করেছিলেন জাহানারা।আদিব মেয়েটাকে তেমন পছন্দ না করলেও এ কথা অস্বীকার করতে পারবে না যে তাদের এ তল্লাটে জাহানারার থেকে সুন্দর মেয়ে আর একটাও নেই।সেই জাহানারার ফ্যাকাশে মুখ,কোটোরে ঢুকে যাওয়া চোখ আর বিধ্বস্ত দৃষ্টি দেখে থমকাতে বাধ্য হলো আদিব। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো জাহানারার দিকে। জাহানারা অশ্রু শিক্ত জ্বলজ্বলে চোখে আদিবের দিকে তাকালো।সজীব এগিয়ে আসলো তখন।আদিব কে আড়াল করে দাঁড়ালো জাহানারার সামনে। জাহানারার অবয়বটা সজীবের আবডালে যেতেই সম্বিত ফিরল আদিবের।কানে এলো সজীবের কথা।সজীব জাহানারা কে বলল,
-কি হয়েছে জান?বাইরে বের হয়েছিস যে!কিছু লাগবে?
সজীবের কথা শুনলো জাহানারা কিন্তু কোন প্রতি উত্তর দিল না।সজীবের হাত ধরে তাকে আদিবের সামনে থেকে সরিয়ে এক পা এগিয়ে গেল।আদিবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তার চোখে চোখ রেখে ভঙ্গুর গলায় বলল,
-আমার মধ্যে কি কমতি আছে বললেন না তো?
জাহানারার প্রশ্নে ভেতরটা কেমন যেন ধক করে উঠলো আদিবের।মনের অস্থির আলোড়ন লুকিয়ে নির্লিপ্ত চোখে তাকালো জাহানারার দিকে।জাহানারার ভেতর কোন কমতি আছে কি না সেটা কখনো সেভাবে ভেবে দেখে নি আদিব।আসলে সে সময়ই পায়নি জাহানারাকে নিয়ে সেভাবে ভাবার। জাহানারা প্রশ্নের উত্তরে আদিব কিছুটা সময় নিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
-তোমার মধ্যে কোন কমতি নেই জাহানারা। ব্যাস তুমি আমার জন্য প্যার্ফেক্ট না।
-প্যার্ফেক্ট না হলে,প্যার্ফেক্ট করে নিয়েন।আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো আদিব ভাই।
জাহানারা কান্না ভেজা আকুতি।আদিব কিঞ্চিৎ অপ্রস্তুত হলো।আদিব স্বপ্নেও ভাবেনি তার কথায় জাহানারা এমন একটা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে।সজীব হয়ত বুঝলো আদিবের অবস্থা।সে তড়িঘড়ি সামনে এসে জাহানারা কে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বোঝানোর সুরে বলল,
-জান, মা আমার এদিকে শোন আমার কথা
-ছোট মামা তুই তো ওনার বন্ধু।সব থেকে কাছের বন্ধু।তুই ওনাকে বল না আমাকে একটু ভালোবাসাতে।তুই বললে উনি ঠিক শুনবে।বল না ,একটু।
সজীবের কথা মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো জাহানারা। জাহানারার এমন আকুতি মিনতির কাছে সজীবকে ভীষণ অসহায় লাগলো।আদিব লক্ষ্য করলো সেটা।সজীব জাহানারা কে কিছু বলতে যাবে তার আগে বাধ সাধলো আদিব।দৃঢ় কণ্ঠে জাহানারার উদ্দেশ্য বলল,
-জাহানারা আমি তোমাকে স্পষ্টভাবে একটা কথা বলছি।আশা করি তুমি মন দিয়ে শুনবে এবং বুঝবে।
একটু থামলো আদিব তারপর বলল,
-জাহানারা তুমি যেটাকে ভালোবাসা বলছো, সেটা আসলে তোমার আবেগ।মোহ।কিছুদিন পরে আমার থেকে ভালো কাউকে পেলে যেটা আর থাকবে না। তুমি ভুলে যাবে আমাকে।
-আদিব ভাই, রাকিব ভাইয়া কি আপনার থেকে ভালো না?উনি নিজে আমাকে হাঁটু গেঁড়ে নিজের মনের কথা বলেছে ,কতশত ওয়াদা করছে। আমি তো ওনাকে দেখে আপনাকে ভুলতে পারিনি।আমার ভালোবাসা কে প্লিজ আবেগের নাম দিয়েন না।আমি আপনাকে সত্যিই ভালোবাসি আদিব ভাই। ভীষণ ভালোবাসি।
রাকিব সরোয়ার।সাদেক সরোয়ারের একমাত্র ছেলে।খুলনা মেডিকেল দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।যেমন দেখতে,তেমন মেধাবী,টাকা পয়াসারও অভাব নেই।খুলনা শহর ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় তাদের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে।খুলনা শহরে সবাই তাদের এক নামে চেনে। জাহানারার মুখে তার কথা শুনে অবাক হলো আদিব।মন চাইলো জাহানারার কাছে জিজ্ঞেস করতে রাকিব কে কীভাবে চেনে সে। আশরাফ খুলনা মেডিকেল কর্মরত অধ্যাপক হওয়ার সুবাদে রাকিবের সাথে আদিবের দুই একবার দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে। মিষ্টি ভাষী একটা ছেলে।আদিবের সিনিয়র সে। কিন্তু জাহানারা সাথে তার কীভাবে পরিচয় হলো সেটা সেই মুহূর্তে জানার কৌতূহল দেখা দিল আদিবের মনে।তবে মনের কৌতূহল মনে দমিয়ে সে জাহানারা উদ্দেশ্যে বলল,
-তাহলে বলবো তুমি অযথা জেদ করছো।
-আমি একটুও জেদ করছি না ।আমি সত্যি আপনাকে ভালোবাসি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ থেকে শ্রেষ্ঠ মানুষ পেলেও আমি আপনাকে ভুলতে পারবো না আদিব ভাই।প্লিজ আমাকে এভাবে প্রত্যাখ্যান করবেন না।
জাহানারা নাছোড়বান্দা।আদিব হতাশ শ্বাস ফেলল।তার মনে জাহানারার জন্য সহানুভূতি ছাড়া আর কিচ্ছু নেই।কি করবে সে!মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কীভাবে একজনকে মনে জায়গা দেবে!একজন কে খুশি করতে গিয়ে সে নিজের সাথে অন্যায় করতে পারবে না।আদিব সজীবের দিকে একবার তাকালো সাহায্যের আশায়। সজীব বুঝলো আদিবের দৃষ্টি।সে জাহানারা কে নানা কথা বলে বোঝাতে লাগলো। কিন্তু জাহানারা মানতে নারাজ।তার আদিব কে চায় মানে, আদিব কে চায়।সজীব আর জাহানারার কথোপকথনের মধ্যে ভেতরে প্রবেশ করলেন জাহানারা বেগম। জাহানারা দাদিকে দেখে যেন আরো বেপরোয়া হলো।দুর্বল শরীরে ছুটে গেল তার দিকে।বাচ্চারা যেমন আবদার করে তেমন আবদার করতে লাগলো দাদির কাছে। জাহানারা বেগম করুণ চোখে তাকালো আদিবের দিকে।দাদির ঐ দৃষ্টিটা একদম ভালো লাগলো না আদিবের।খুব খারাপ লাগলো।মনে হলো তার এখানে আসায় ভুল হয়েছে। জাহানারা এমন পাগলামো করবে জানলে সে কখনো এখানে আসতো না। জাহানারা বেগম নিজের সাধ্য মতো চেষ্টা করতে লাগলো জাহানারা কে বোঝাতে কিন্তু সে দাদির একটা কথাও কানে তুলল না।আদিবের ভীষণ রাগ হলো মেয়েটার এক রোখা জেদ দেখে।বুঝলো এই মেয়ে কারো কথা কানে তুলবে না। জাহানারা বেগমের সাথে জাহানারার কথার ব্যস্ততার মাঝে সজীবকে বলে সেখান থেকে চলে আসতে উদ্যত হলো আদিব। কিন্তু দরজার কাছে আসতে জাহানারা এসে পথ আগলে দাঁড়ালো তার।হাত জোড় করে নিজের একতরফা ভালোবাসার আহাজারি করতে লাগলো।আদিবের ধৈর্য চ্যুত হল এবার।সে জাহানারার অসুস্থতা উপেক্ষা করে দারাজ গলায় ধমকে উঠলো। হঠাৎ আদিবের ধমকে কেঁপে উঠলো জাহানারা।আদিব তার কাঠখোট্টা কণ্ঠে চেতে উঠে বলল,
-ভালো ভাবে কথা বলছি কানে যাচ্ছে না ,না!বলছি না তোমার প্রতি কোন ইন্টারেস্ট নেই আমার।ভালো লাগেনা আমার তোমাকে।তোমাকে নিজের যোগ্য মনে হয় না আমার।কান খুলে শুনে রাখ আমার পক্ষে কখনো সম্ভব না তোমাকে ভালোবাসা।স্পষ্ট?
একদমে কথা গুলো বলে থামলো আদিব। জাহানারার ফ্যাকাশে মুখটা আরো ফ্যাকাশে হলো।এক পা পিছিয়ে আসলো যেন সে।আদিব সেটা লক্ষ্য করে একটা তপ্ত শ্বাস ফেলল। জাহানারা থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই দেখল তার মা দাঁড়িয়ে আছে সদর দরজায়।আদিবের চোখে তানিয়ার চোখ পড়তেই তানিয়া ছেলের উদ্দেশ্যে বলল,
-বাড়ি চলো আদিব।
আদিব মায়ের কথায় চুপচাপ পা বাড়ালো সামনে।বাড়ির সদর দরজার সামনে সালেহার সাথে দেখা হলো তাদের।সালেহা সালাম দিতে যাবে তার আগে তানিয়া শীতল অথচ রুক্ষ কণ্ঠে বলল,
-সালেহা আর কত সর্বনাশ করবে আমার?আমার মেয়েটার সর্বনাশ করে শান্তি হয় নি, এখন আমার ছেলেটার পিছনে পড়েছ!এবার তো অন্তত ক্ষান্ত দাও।একটু শান্তিতে থাকতে দাও আমাকে।
কথাটা বলেই হন হন করে বড়ির পথে হাঁটা ধরলো তানিয়া।তানিয়ার কথার অর্থ উদ্ধার করতে সালেহার কিছুটা সময় লাগলো। দীপ্তি সালেহার বড় ভাইয়ের ছেলে নিশানের সাথে সবার অমতে বিয়ে করার পর থেকেই তানিয়া দিপ্তীর এই কাজের জন্য সালেহাকে দায়ী করে আসছে।সে কথাটায় আজ আবার বলল সে।তানিয়ার তীক্ষ্ণ কথা গুলো ধা’রালো তীরের নেয় বিঁধলো সালেহার বুকে।চোখ জ্বলে উঠলো।বিকেলের সাদাটে আলোয় আদিব স্পষ্ট দেখলো চাচির চোখে পানি। খারাপ লাগলো তার কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারলো না।
আদিব ভেবেছিল বাড়ি ফিরেই মা তাকে সেজ চাচার বাড়ি যাওয়ার জন্য কথা শোনাবে কিন্তু আদিবের ভাবনা কে ভুল প্রমাণিত করে তানিয়া কিছুই বলল না তাকে।এমনকি রাতে খাবার সময়ও তার সাথে কথা বলল না।আদিব চেষ্টা করলো মায়ের সাথে কথা বলার কিন্তু তার চেষ্টা সফল হলো না।আদিব বুঝলো তার মা নিরাবতার মাধ্যমে নিজের রাগ প্রদর্শন করছে।গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে।রাতের খাবার শেষ করে ফিরে আসলো নিজের ঘরে।ঘরে এসে নিজের বিছানা ঠিক করে তাতে পিঠ রাখতেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ পেল ।মা এসেছে ভেবে তড়িঘড়ি দরজা খুলল।দরজা খুলতেই দেখতে পেল দাদি দাঁড়িয়ে আছে।দাদিকে সেই বিকেলে সেজ চাচার ওখানে দেখার পর আর চোখে পড়েনি আদিবের।মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করায় জানতে পেরেছিল সেজ চাচার বাড়ি থেকে তখনো আসেনি দাদি।আদিব মনে করেছিল আজ হয়ত দাদি সেখানেই থাকবে। জাহানারার অসুস্থতার পর থেকে তার দাদি বেশিরভাগ সময় সেজ চাচার ওখানেই থাকে।তাই দাদির বাড়ি ফেরা নিয়ে মাথা ঘামায় নি।
দাদিকে ভেতরে আসতে বলে দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো আদিব।দাদির দিকে লক্ষ্য করে দেখলো তাকে একটু অন্যরকম লাগছে।ভেতরে ঢুকলো জাহানারা বেগম, ধীর পায়ে আদিবের বিছানায় গিয়ে বসলো।আদিব দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে দাদির পাশে এসে বসলো।দাদির মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-কি হয়েছে দাদি?
জাহানারা বেগম হয়ত কিছু ভাবছিল, আদিবের কথায় ভাবনায় ছেদ পড়লো তার।আদিবের প্রশ্নের জবাব বাদ দিয়ে তিনি আদিবের দুই হাত চেপে ধরলেন। আকুতি মাখা কণ্ঠে বললেন,
-দাদু আমার জান খুব ভালো মেয়ে।ও তোমাকে খুব ভালোবাসে। দয়াকরে ওর ভালোবাসা পায়ে মাড়িও না।
দাদির কথায় ভড়কে গেল আদিব।দাদির কাছ থেকে এমন কিছু শুনবে বলে আশা করেনি সে।আদিব যতদূর জানে তার দাদি বিচক্ষণ মানুষ, সে এমন আবদার করতে পারে সেটা আদিবের কল্পনাতীত ছিল।দাদির একের পর এক আকুতিতে মিইয়ে গেল আদিব।অনেক কষ্টে বলল,
-দাদি তুমি অন্তত বোঝার চেষ্টা করো আমাকে। জাহানারা প্রতি আমার মনে কোন অনুভূতি নেই।আমি কীভাবে জোর করে নিজের অনুভূতি বদলাবো।আমি যদি আমাদের সম্পর্কে সম্মতি দিও, তাহলে সেটা মনের বিরুদ্ধে হবে।আর আমি আমার মনের বিরুদ্ধে গিয়ে যেখানে নিজে সুখে থাকতে পারবো না, সেখানে আরেকজন কে কীভাবে সুখে রাখবো।মনের উপর জোর করে সম্পর্ক তৈরি না হয় করলাম, কিন্তু সেটা জোর করে টিকিয়ে রাখবো কতদিন!
-সম্পর্কের নাম হলে মনে তখন এমনিতেই অনুভূতি তৈরি হবে।আমাকে নিরাশ করো না দাদু। মেয়েটার ঐ অবস্থা আমি আর দেখতে পারছি না।আজ আবার সালেহা গায়ে হাত তুলেছে। তোমার জন্য মরতে বসেছে তবুও তোমাকে ভুলতে নারাজ মেয়েটা। কাউকে কতক্ষনি ভালোবাসলে কেউ এমন করতে পারে সেটা একবার ভেবে দেখেছ!তুমি না হয় তোমার পছন্দের কথা আমাকে বলো আমি জাহানারা কে সেইভাবে গড়ে দেব।
-দাদি ব্যাপারটা পছন্দ অপছন্দের নয়!আমি ঠিক তোমাকে বোঝাতে পারছি না। আমার ভালো লাগে না ওকে। তুমি ওর দিকটা দেখছো আমার দিকটা একটু ভাবছো না কেন!
থামলো আদিব। জাহানারা বেগম নাতির কথার প্রেক্ষিতে আর কোন কথা খুঁজে পেল না।বিবশ নয়নে শূন্যে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর স্বগোতক্তি করে বলল,
-সবার দিক বুঝছি আমি। কিন্তু কি করবো ?মেয়েটাকে অমন ধুকে ধুকে মরতে দেখতে পারছি না।কি কুক্ষণে যে আমি ওকে বলেছিলাম জায়েদ কে আশরাফের দেওয়া কথাটা।ঐ কথায় মেয়েটার কাল হলো।আমার জন্য মেয়েটার আজ এই দষা।আমার জন্য।
শাড়ির আঁচলে চোখ মুছলো জাহানারা বেগম।আদিবের ভেতরটা কেমন যেন নড়ে উঠলো।দাদিকে এতোটা অসহায়, এতোটা হতাশ তার জ্ঞান হওয়ার পর কখনো দেখিনি সে। হঠাৎ তার মন বলে উঠলো,”আদিব তোর একটা হ্যাঁ তে যদি সবাই খুশি হয় ,ভালো থাকে, তাহলে সমস্যা কোথায়? তাছাড়া জাহানারা এখন নরম কাদার মতো। ওকে নিজের মনের মতো যে ছাঁচে গড়ে নিবি সেই ছাঁচে তৈরি হবে। একবার না হয় ভেবে দেখ।”
-আপনার থেকে এমনটা আশা করিনি মা।
তানিয়ার তীক্ষ্ণ কণ্ঠে ভাবনা ছিন্ন হলো আদিবের।সে তড়িঘড়ি উঠে দাঁড়ালো।মায়ের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে যাবে তার আগে তানিয়া হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দিল তাকে।চুপসে গেল আদিব। তানিয়া তাচ্ছিল্যের হাসি হেঁসে বলল,
-আপনি আমাকে কখনো মন থেকে মেন নেন নি সেটা আমি জানতাম। কিন্তু তাই বলে আমার সন্তানদেরও কখনো আপন ভাবেন নি, সেটা জানা ছিল না।
থামলো তানিয়া, একটা দম নিল। জাহানারা বেগম অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো। তানিয়া পাথর কঠিন কণ্ঠে ফের বলল,
-আপনার নাতনি মরলো কি বাঁচলো তা আমার কিংবা আমার ছেলের দেখার প্রয়োজন নেই।তার মা আছে বাপ আছে তারা দেখুক । আপনি তাদের বলুন মেয়েকে সামলাতে তাছাড়া অমন বেহায়া মেয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়ায় ভালো।
-বউমা!
-মা প্লিজ স্টপ।আমি দাদির সাথে কথা বলেছি তো।তুমি শুধু শুধু কথা বাড়িও না।এখন রেগে আছো কি বলতে কি বলছো নিজেও বুঝতে পারছো না।তুমি প্লিজ ঘরে যাও।
মা আর দাদির মাঝে বলে উঠলো আদিব। জাহানারা বেগম উঠে দাঁড়ালো।সময় নষ্ট না করে বেরিয়ে এলো আদিবের ঘর থেকে।বাইরে বের হওয়ার সময় অশ্রু শিক্ত চোখ দুটো মুছে নিলেন আঁচল দিয়ে। আশরাফ তখন সবে মাত্র বাড়ি ফিরেছে, মায়ের দুঃখ ভারাক্রান্ত মুখটা দেখে বিচলিত হলো সে। এগিয়ে এসে বারবার জানতে চাইলো কি হয়েছে। জাহানারা বেগম কিছু হয় নি বলে পাশ কাটাতে চাইলেও আশরাফ তার কথায় ভুলল না। ইদানীং স্ত্রী রুক্ষ্ম ব্যবহার গুলো বেশ চোখে পড়ছে তার।সুযোগ পেলেই জায়েদের আর্থিক অবস্থা আর সালেহাকে নিয়ে নানান ধরনের বাজে কথা বলছে। সবসময় চেষ্টা করছে ওদের ছোট করার।তাদের পরিবার নিও বিভিন্ন কথা বলা শুরু করেছে।আদিবের বাইরে যাওয়ার জন্য বাবার বাড়ি থেকে টাকা নিচ্ছে এ নিয়েও খোঁটা দিতে পিছপা হচ্ছে না। আশরাফ ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এবং অযথা অশান্তির ভয়ে এ যাবৎ চুপ করে ছিল কিন্তু আজ মায়ের অশ্রু শিক্ত নরম চোখ দুটো দেখে নিজকে সামলাতে পারলো না।হাক ছাড়লো তানিয়ার নাম ধরে।তানিয়া বেরিয়ে এলো আদিবের ঘর থেকে ।আদিবও মায়ের পিছু পিছু আসলো।তানিয়া কে দেখেই আশরাফ তিরিক্ষি মেজাজে জানতে চাইলো সে কি বলেছে জাহানারা বেগম কে।তানিয়া শ্বাশুড়ির পরে আগে থেকেই চটে ছিল। আশরাফের কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। জাহানারা বেগমের উপর ছেলের কাছে কথা লাগানোর আরোপ করে ছি : ছি : করে উঠলেন। তানিয়ার মিথ্যা আরোপে আশরাফের মেজাজ আরো চড়া হলো সে রাগান্বিত কণ্ঠে হুংকার ছেড়ে তানিয়াকে সংযত হতে বলল।তানিয়া আশরাফের কথায় সংযত তো হলোই না বরং আরো তেতে গেল।মুখে যা আসলো তাই বলতে লাগলো। পরিশেষে জাহানারা বেগম তার সংসারে অশান্তির মূল কারণ সেটা বলে থামলেন।মায়ের নামে কটু কথা শুনে রক্ত মাথায় চড়লো আশরাফের সে রুখে গেল তানিয়ার দিকে।আদিব ঢাল হয়ে দাঁড়ালো মায়ের সামনে। জাহানারা বেগম আশরাফের হাত চেপে ধরলো।তানিয়া যেন এবার নিজের হুঁশ জ্ঞান হারালো দারাজ কণ্ঠে ঘোষণা দিল, হয় এই বাড়ি জাহানারা বেগম থাকবে না হয় তিনি।তার কথা শুনে আশরাফ বলল তানিয়া চাইলে এখুনি চলে যেতে পারেন কিন্তু তার মা কোথাও যাবে না। আশরাফের কথা শেষ হতেই তানিয়া নিজের ঘরে ছুটলো। নিজের জিনিস পত্র ব্যাগে ভরতে লাগলো।আদিব মা বাবাকে শান্ত করার,তাদের বোঝানোর এত চেষ্টা করলো কিন্তু কেউ তার একটা কথা শুনলো না।তানিয়া নিজের ব্যাগ গুছিয়ে যখন বসার ঘরে এলো আশরাফ তখন সোফায় বসা। জাহানারা বেগম তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। জাহানারা বেগম তানিয়ার হাতে ব্যাগ দেখে উঠে এলো, তানিয়ার দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নরম গলায় বললেন তার কোন কথায় যদি তানিয়া কষ্ট পেয়ে থাকে তাহলে সে মাফ চাইছে কিন্তু তানিয়া যেন এমন রাগারাগি করে কোথাও না যায়। শ্বাশুড়ির কথায় হয়ত মন নরম হলো তানিয়ার।তবে ভেতরে গেল না সে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো চৌকাঠে। জাহানারা বেগম শেষ মেষ ক্লান্ত কণ্ঠে বললেন,
-বউমা তুমি ঘরে যাও।এখন তো অনেক রাত হয়ে গেছে, না হলে আমি এক্ষুনি জায়েদের ওখানে চলে যেতাম।কাল ভোরে ঠিক চলে যাবো।আর রাগ করে না।যাও মা ভেতরে যাও।
-তুমি কোথাও যাবে না।যাওয়ার হলে…
-আর একটাও বাজে কথা না খোকা।আমার কথার উপরে একটাও কথা বলবি না।বাইরে থেকে এসেছিস ,ঘরে যা ফ্রেশ হ।আমি তোর সাথে কাল কথা বলবো।
আশরাফের কথা শেষ না হতেই গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বলল জাহানারা বেগম। আশরাফ মায়ের কথা অমান্য করলো না। উঠে চলে গেল নিজের ঘরে।তানিয়াও ব্যাগ রেখে গেস্ট রুমে গিয়ে সিধালো।মা বাবা চলে যেতেই আদিব মায়ের হয়ে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইলো দাদির কাছে। জাহানারা বেগম আদিবের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
-বউমার কথায় আমি কিছু মনে করিনি দাদু।আমি তো জানি ও রগচটা ধরনের, অল্পতে রেগে যায়।আর তাছাড়া তোমার মা চাচিদের আমি আমার সন্তানের মতো দেখি । সন্তানের কথায় রাগ করা যায়!
ম্লান হাসলো জাহানারা বেগম। তারপর কিছু একটা মনে করে আদিবের কাছে জানতে চাইলো,
-দাদু তোমারও কি মনে হয় আমি তোমার, তোমাদের ভালো চাই না?
-না।আমার একদম তেমন মনে হয় না।আমি তো চিনি আমার দাদিকে।জানি সে কেমন।তুমি প্লিজ মায়ের কথা মনে নিও না।
-নিচ্ছি না।তুমি যাও ঘরে যাও।রাত অনেক হয়েছে।না ঘুমালে শরীর খারাপ করবে।যাও।
জোর করে আদিব কে ঘরে পাঠালো জাহানারা বেগম।দাদির কথা শুনে আদিব ঘরে আসলেও ঘুম হলো না।সারারাত উশ খুশ করেই কাটলো তার। ঘুমহীন ভারি মাথা নিয়ে বিছানা ছাড়লো আদিব।ঘর ছেড়ে বের হয়ে বাগানে হাঁটা হাঁটি করলো কিছুক্ষণ তারপর ভেতরে ঢুকে দাদির ঘরের দিকে চোখ যেতেই দেখলো দাদির ঘরের দরজা খোলা।কাল রাতের কথা মনে হতেই আদিবের মস্তিষ্ক সচল হলো।দাদি তার মায়ের উপর রাগ করে চলে গেল কিনা সেটা দেখতে হন্তদন্ত হয়ে ছুটলো দাদির ঘরে।ঘরে ঢুকতেই দেখলো দাদি নামাজের পাটিতে সেজদা রত অবস্থায় আছে।আদিব ঘড়ি দেখলো।ফজরে ওয়াক্ত পার হয়ে গেছে অনেকক্ষণ।দাদি নফল নামাজ আদায় করে, কিন্তু কখনো এত দেরি তো হয় না। অজানা অশনি সংকেত ভেতরটা ছ্যাঁৎ করে উঠলো তার।
চলবে, ইনশাআল্লা