সে আমারই পর্ব-৫১ এবং শেষ পর্ব

0
598

#সে_আমারই
#মোহনা_মিম
#পর্বঃ৫১
#অন্তিম_পর্ব

এবারের পালা ফারদিনের। সে চুপচাপ চেয়ে আছে বাকি পাঁচটা হাতের দিকে। সিনথিয়া তাড়া দিচ্ছে তাকে। ফারদিন বিরক্ত চরম। এসেছে বিয়ে করে চলে যাবে। তা না! এসব মশকরা! সিনথিয়া ফের তাড়া দিল,

“কি রে! হা করে তাকিয়ে আছিস কেন? তাড়াতাড়ি বউ নিয়ে বিদেয় হ।”

ফারদিন কিছু ভাবে। হঠাৎই কিছু ভেবে বাঁকা হাসে। গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

“আপু এখানে দৃষ আর পায়েল ছাড়াও তিনটা মেয়ের হাত আছে, না?”

“হ্যাঁ, তো?”

“পায়েল কে খুঁজতে হলে আমায় সব কটা মেয়েকে ছুঁতে হবে। তাদের হাত ধরে ধরে দেখতে হবে। তাতেও যদি না বুঝি তাহলে জোরে চেপে ধরে বুঝতে হবে। সব রকম পদ্ধতি ব্যবহার না করলে তো আমি খুঁজে পাব না, তাই না!”

সিনথিয়া ভেবে বলে,

“ঠিকই বলেছিস। তুরাগও তো ওভাবে খুঁজে নিয়ে গেল। যদিও ওর অতটা ধরাধরি করা লাগেনি। তোর যদি দরকার হয় তাহলে ধরবি।”

পাঁচ নম্বর হাতটা ফট করে বেরিয়ে এলো। অগ্নি দৃষ্টিতে ফারদিনের দিকে চেয়ে বলল,

“কি বললেন আপনি! মেয়েদের হাত ধরাধরি করবেন! তাও আবার জোরে চেপে! ছিঃ ছিঃ ছিঃ এই দিনটাও আমাকে দেখতে হলো। অন্য মেয়ের হাত ধরলে আপনার হাত আমি ভেঙে গলায় ঝুলিয়ে দেব।”

সিনথিয়া হা করে তাকিয়ে রইল। ফারদিন ঠোঁট কামড়ে হাসে। তীর ঠিক জায়গায় গিয়েই লেগেছে। সিনথিয়া চেঁচিয়ে উঠল,

“একি! তুমি বেরিয়ে এলে কেন? ও তো না খুঁজেই তোমাকে পেয়ে গেল। ধুর!”

পায়েল হতভম্ব হয়ে গেল। সত্যি তো! লোকটার কথায় গা জ্বলে যাচ্ছিল তার, থাকতে পারেনি। বেরিয়ে এসেছে। ফারদিন তার হাত ধরে বলল,

“বউ পেয়ে গিয়েছি, এবার চললাম। ভাই, এবার তুমি খোঁজো।”

যেতে যেতে ফিসফিসিয়ে বলে,

“বোকা বউ।”

পায়েল মুখ গোমড়া করে ফেলল। কথার জালে ফেলে তাকে বের হতে বাধ্য করেছে বদমাশ টা! অতঃপর কাজীর কাছে যেতেই তাদের বিয়েটাও সম্পন্ন হয়ে গেল।

বাকি রইল আফরান। সে কুল কুল করে ঘামতে ব্যস্ত। ওদের তো হয়ে গেল! এখন সে যদি বউ খুঁজে না পায় তাহলে তো ঝামেলা হয়ে যাবে। সিনথিয়া চোখ পাকিয়ে বলে,

“তোকে কি এখন ইনভাইট করতে হবে বউ খোঁজার জন্য?”

সে মিনমিন করে বলল,

“আপু একটু হেল্প করে দে প্লিজ। তোকে দশ হাজার দিলাম ভুলে গেলি?”

সরাসরি তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বলল,

“না না আমি মীর জাফর গিরি করতে পারব না। তুই কোনো হেল্প পাবি না। নিজেকেই করতে হবে।”

“তুই অলরেডি মীর জাফর গিরি করছিস আমার সাথে। না, মীর জাফর না। তুই হলি ঘসেটি বেগম।”

“বকে বকে মাথা খারাপ করিস না তো। কাজী চলে যাবে একটু পর। তখন মজা বুঝবি।”

অসহায় আফরান। ঘুরে ফিরে হাত গুলো দ্যাখে। ছুঁতে মন চায় না। বউ বাদে অন্য কারো হাত ধরতে রাজি নয় সে। হঠাৎ একটা জিনিস খেয়াল হতেই হাহাকার করে উঠল,

“নেই! আমার বউ এখানে নেই। এই আপু! আমার বউ কই?”

“নেই মানে! তুই দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখেই বুঝে গেলি? এর মধ্যেই আছে।”

“না নেই। আমি বলছি তো নেই। কোথায় রেখেছিস ওকে? বের করে দে।”

“দ্যাখ ভাই, আগে ব্যাখ্যা কর। তুই কি শিয়র যে তোর বউ এখানে নেই? ভালো করে ভেবে বলবি কিন্তু।”

“আমি একদম শিয়র। ও নেই এর মধ্যে।”

সিনথিয়া হেসে ফেলল। পা উঁচু করে তার চুল নেড়ে চেড়ে খুলে রাখা পাগড়ি পরিয়ে দিল। যেটা টেনশনে আফরান খুলে রেখেছিল। বলল,

“যা, স্টেজে যা।”

আফরানের অস্থির কণ্ঠস্বর,

“ওখানে আছে?”

“যেয়ে দ্যাখ।”

আফরান প্রায় ছুটতে ছুটতে গেল। দেখল স্টেজে লাল টুকটুকে বউ। জানে পানি এলো তার। এক লাফে তার পাশে গিয়ে বসল। ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে রইল। দৃষ্টি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল,

“এমন হ্যাংলার মতো তাকিয়ে আছেন কেন?”

“দৃষ! তুই সত্যিই আছিস?”

“না, মিথ্যে আছি।”

“তাহলে তুই সত্যি সত্যি আছিস। আমি কত ভয় পেয়েছিলাম জানিস? ভেবেছিলাম আমাকে ফাঁদে ফেলে তোকে দেবে না।”

“এতো চেঁচামেচি করছিলেন যে এখানে বসে আমি শুনতে পাচ্ছিলাম। সবাই কি ভাবল?”

“টেনশনে আমি কোমায় যাচ্ছিলাম আর তুই আছিস সবাই নিয়ে!”

“আপনি কীভাবে বুঝলেন যে আমি ওখানে নেই?”

আফরান খুব যত্নের সাথে দৃষ্টির হাত উঠিয়ে নিজের হাতের মুঠোয় নেয়। বলে,

“এই যে হাত। আমি জানি তুই কখনো নখ বড় রাখিস না আর নেইলপলিশও পরিস না। ওখানে সব গুলো হাতে হয় নখ বড় ছিল নয় নেইলপলিশ লাগানো ছিল।”

দৃষ্টি আড়ালে একটু হেসে হাত সরিয়ে নেয়। মেকি বিরক্ত হবার ভান করে বলে,

“এমন চালাকি না করলে আমাকে খুঁজেই পেতেন না।”

আফরান কিছু বলতে চেয়েও পারে না। মৃন্ময় কোথা থেকে এসে তাদের অভিনন্দন জানায়। আফরান হাত মিলিয়ে বলে,

“আপনাকেই এতক্ষণ ধরে খুঁজছিলাম, ডক্টর আহমেদ।”

“আমার সৌভাগ্য।’

“সে যাইহোক। আমার ছেলে মেয়ে কিন্তু আপনাকে বড় মামা বলে ডাকবে আমি আগে থেকেই বলে দিলাম। আপনার কি কোনো আপত্তি আছে?”

মেকি হেসে সে বলে,

“একদমই না। আমি তাকে মাথায় করে রাখব। আপনাদের ভবিষ্যত জীবনের জন্য অনেক শুভকামনা রইল।”

দৃষ্টি মৃদু হেসে বলল,

“থ্যাঙ্ক ইউ, স্যার।”

মৃন্ময় যেতেই আফরান চেঁচিয়ে উঠল,

“কাজী কই? চলে গেল নাকি শা’লা!”

কাজীকে হম্বিতম্বি করে এগিয়ে আসতে দ্যাখা গেল। আফরান তাকে দেখে চমকে গেল।

“আরে এটা তো!”

“হ্যাঁ, আমাদের প্রথম বিয়ে ইনি পড়িয়েছিলেন আর দ্বিতীয় বিয়েও পড়াবেন।”

আফরানের এই মিষ্টি মুখ খানা দেখে পাগল হবার দশা। বউয়ের সাজে এতো আদুরে লাগছে! কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করল। পরিবারের সবাই তাদের ঘিরে ধরল। সবার সামনে দৃষ্টি স্ব ইচ্ছাই কবুল বলল। সেদিনের মতো অনিচ্ছায় নয়।

বিয়ে শেষে আমিনুল ইততেয়াজ হাস্যজ্জ্বল মুখে বললেন,

“মেয়ে কি এই বাবাকে মাফ করতে পেরেছে?”

সেদিন তাদের বাড়িতে যাবার পর সব মিটমাট হয়ে গেলেও সবার সামনে এমন করে বলায় দৃষ্টি লজ্জা পেল। নিচু কণ্ঠে বলল,

“এভাবে বলবেন না, বাবা। আপনি মাফ চাওয়ার মতো কিছু করেননি। সব করেছে আপনার ছেলে।”

আফরান দোষটা মোটেও ঘাড়ে নিতে চায়ল না,

“আমি কি করলাম? আমি একটা ভালো ছেলে। এখনো শিশুর মতোই পবিত্র।”

সবাই তার কথায় হাসে। দৃষ্টি দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিসিয়ে বলে,

“শিশুর মতো পবিত্র বলেই তো বউ বউ করে চেঁচাচ্ছিলেন। কচুর পবিত্র।”

সে থতমত খেল। সিনথিয়াকে ইশারা ইঙ্গিতে বোঝাল সে রুমে যেতে চায়। এখানেই তিনটা রুম বুকিং দেওয়া আছে তাদের জন্য। সেখানেই আজকের রাতটা তারা থাকবে। তুরাগ আর ফারদিন তো আগে আগেই চলে গেল। সব নিয়ম কেবল তার জন্য। এর দোয়া, ওর দোয়া। এই মিষ্টি এই শরবত।
সিনথিয়া দৃষ্টিকে নিয়ে যেতে যেতে বলল,

“আমি ও’কে নিয়ে যাচ্ছি। তুই বসে থাক। আমি না ডাকা পর্যন্ত নড়বি না।”

সে চলে গেল। ফেলে গেল দুঃখী আফরানকে। সে দুনিয়ার সব থেকে দুঃখী মানুষ। বউয়ের কাছে যেতে গেলেও তার এখন আপুর ডাকের অপেক্ষা করতে হবে। এই দিনটা দ্যাখার জন্যই তো বয়স একত্রিশ করে ফেলেছে!
ফাহাদ আবরার হাতে মেশিন ধরিয়ে দিয়ে বললেন,

“নাও, আমার প্রেশার মাপো।”

“এখন আপনার প্রেশার মাপতে হবে?”

“অবশ্যই। গ্রাম থেকে সকল আত্মীয় এসেছে। সবার প্রেশার মাপতে হবে। আমার জামাই ডাক্তার বলে কথা! ফ্রিতে প্রেশার মাপতে পারবে না?”

এ কি জ্বালায় পড়ল সে! চৌদ্দ গোষ্ঠীর প্রেশার মাপতে হবে নাকি সারারাত ধরে? ছলছল চোখ করে সে প্রেশার মাপতে শুরু করে। লাইন দিয়ে সব দাঁড়িয়ে আছে। সে মাপতেই থাকে। আশপাশ থেকে শুনতে পায় নিজের প্রশংসা,

“কত ভালো ডাক্তার দেখেছ? বিয়ের দিনও ডাক্তারি করে, তাও ফ্রিতে।”

“আজ কোথায় যাবে? আমাকে বোকা বানিয়ে পালিয়ে ছিলে, মনে আছে তো?”

পায়েল জোর পূর্বক হেসে বলে,

“আপনিও তো আজ আমায় বোকা বানালেন। তো শোধ হয়ে গিয়েছে। আপনারও দোষ নেই আমারও নেই। হি হি।”

মুখটা বেজায় গম্ভীর করে ফারদিন বলে,

“কোনো শোধ হয়নি। আমি এখন প্রতিশোধ নেব।”

আতংকে পায়েল পুরো ঘর জুড়ে ছোটে। বার বার বলে,

“আমাকে মারবেন না, প্লিজ। ছেড়ে দিন আমাকে। আমি আর এমন করব না, প্রমিজ।”

ফারদিন তাকে খপ করে ধরে তুলতুলে বিছানায় ছুড়ে ফ্যালে। এগিয়ে তার উপর ঝুঁকে নাকে নাক ঘষে বলে,

“কোনো ছাড়াছাড়ি চলবে না। শাস্তি তো পেতেই হবে। তিন রাত আমাকে একা রাখার শাস্তি।”

চোখ খিঁচে বন্ধ করে রাখা নিষ্ক্রিয় পায়েলের হাত জোড়া কখন যে তার হাতের মুঠোয় চলে গেল, তা পায়েল নিজেও জানে না। পরপর অধরের আক্রমণে সে শ্বাস নেওয়ারও সুযোগ পেল না।

দু দুবার বমি করে ক্লান্ত ফারনাজের দেহে আর শক্তি অবশিষ্ট নেই। তুরাগ তাকে বিছানায় বসিয়ে মুখ মুছিয়ে দেয়। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

“কষ্ট হচ্ছে খুব?”

সে মাথা নাড়ায়। তবুও তুরাগ বোঝে। পানি পান করিয়ে শুয়ে পড়ে। হাত ধরে টেনে বুকে নিয়ে বলে,

“বাসর রাতে সবাই কি করে! আর আমার বউ তো শক্তি খুইয়ে বসে আছে।”

ফারনাজ রেগে বুকে কিল ঘুষি মারে। বলে,

“আমার এই অবস্থা কার জন্য হয়েছে? ভাবটা এমন করছ যেন তোমার কপালে বাসর জোটেনি। এভাবে আমাকে খোঁচা মা’রলে খবর আছে তোমার।”

হেসে ফেলল সে। চেপে জড়িয়ে ধরে বলল,

“তোমাকে না পেলে যে আমি কি করতাম! একটা মুহূর্তও ভাবতে পারি না তোমাকে ছাড়া।”

বলতে বলতে মাথার তালুতে ঠোঁট ছোঁয়। ফারনাজ লাজুক হেসে তার বুকে মুখ গোঁজে। চাপা স্বরে বলে,

“আমিও কি ভাবতে পারি তোমায় ছাড়া? আমার নিঃশ্বাসেও মিশে গিয়েছ তুমি।”

আফরানের ইচ্ছে করছে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতে। হাত ব্যথা হবার জোগাড়। এই আপুটা এখনো ডাকছে না কেন? এক টানা পনেরো জনের প্রেশার মাপার পর যখন তার হাত কাঁপতে শুরু করেছে তখন দেবদূতের মতো সিনথিয়া এসে তাকে রক্ষা করল। ভাইকে নিয়ে সে চলল রুমের দিকে। আফরান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলল,

“তুই এতো দেরি করলি কেন রে, আপু? আমার হাত ব্যথায় টনটন করছে। মনে হচ্ছে এখনই খুলে পড়ে যাবে। এই দ্যাখ আঙুল গুলোও নাড়াতে পারছি না।”

সিনথিয়া তাকে রুমের ভেতরে ধাক্কা দিয়ে বলল,

“ভেতরে গিয়েই দ্যাখ দেরি হলো কেন।”

বাইরে থেকে দরজা আটকে সে চলে গেল। আফরান নিজেও ভেতর থেকে সিটকিনি তুলে দেয়, কোনো রিস্ক নেওয়ার মানেই হয় না। যদি হুট করে দরজা খুলে কেউ ঢুকে পড়ে? মাথা থেকে পাগড়ি খুলে রাখে। শেরোয়ানির দুটো বোতাম ছাড়িয়ে ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলে,

“কি গরম রে বাবা!”

চোখ এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে বিছানায় গিয়ে আটকায়। হোঁচট খায় সে। গায়ের রক্ত ছলাৎ করে ওঠে, টগবগিয়ে ওঠে। এবার গরম লাগা দ্বিগুণ হয়। গায়ে আগুন লেগে যাবার মতো অনুভূতি হয়। বিছানায় বসে যে তার প্রাণের প্রেয়সী। যার জন্য গুনে গুনে পাঁচটা বছর ধৈর্য ধরতে হয়েছে তাকে। যাকে এক দন্ড কাছে পাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত ছটফট করতে হয়েছে তাকে। সে চঞ্চল পা এগিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে। আগা গোড়া পর্যবেক্ষণ করে বলে,

“তুই কি আমাকে মা’রার পরিকল্পনা করেছিস? ফুল কুমারী সাজতে হলো কেন তোকে?”

দৃষ্টির পা থেকে মাথা অবদি ফুলে মোড়ানো সাথে সিনথিয়ার দেওয়া সেই শাড়িটা। ফুলের গহনা পরিহিত বউয়ের এই রূপ দেখে আফরান বোধহয় হার্ট অ্যাটাক করবে। দৃষ্টি পিটপিট করে চেয়ে বলে,

“আমি পরতে চাইনি তো। সিনথিয়া আপু পরিয়ে দিয়ে গেল। বলল চুপ করে বসে থাকতে।”

আফরানের যে এতো গরম লাগছে! সে এক টানে শেরোয়ানি খুলে ফেলল। দৃষ্টির সামনে উঠে বসে বলল,

“চুপ করে বসে থাক। আমি একটু দেখি তোকে।”

দৃষ্টি লজ্জায় কেমন গুটিয়ে গেল। এই লোকটা এমন লজ্জা দেওয়া কথা বার্তা বলে কেন শুধু? লজ্জা দিয়েই তাকে অস্বস্তিতে ফেলতে ওস্তাদ তিনি। আফরান এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল, এই দৃষ্টির কোনো নড়চড় নেই। মুগ্ধ দৃষ্টিতে কখন যে নেশা ভর করল কে জানে? হুট করে দু হাতে তার কোমর জড়িয়ে খুব কাছে নিয়ে এলো। এক ইঞ্চি দূরত্বও রইল না। তার মুখশ্রীতে উষ্ণ শ্বাস ফেলে বলল,

“বাসর রাতে নাকি বউকে গিফট দিতে হয়। কি চায় তোর?”

সে আঁখি জোড়া মুদে কাঁপতে কাঁপতে বলে,

“ককিচ্ছু চচাই না আম আমার।”

অকস্মাৎ আফরান কপালে কপাল ঠেকায়। ফিসফিসিয়ে বলে,

“কিন্তু আমার তো চাই। একটা রাজকন্যা চাই আমার। বয়স তো বসে নেই। আমার বয়সে তোর বাপ দুই বাচ্চার বাপ ছিল।”

ঘন ঘন শ্বাস ফ্যালে সে। থেমে থেমে বলে,

“আমার এখনো ফাইনাল এক্সাম বাকি। এন্টার্নি বাকি।”

সে সন্তর্পনে তার গ্রীবাদেশে অধর ছোঁয়ায়। উত্তপ্ত স্পর্শে কাঁপিয়ে দিয়ে বলে,

“তো কি হয়েছে? আমার রাজকন্যাকে সামলানোর জন্য মানুষের অভাব নেই। ও তো সব সময় আমার সাথেই থাকবে। হাসপাতালে গেলে আমার সাথে করে নিয়ে যাব। তাছাড়া তোর বাড়ির লোক আর আমার বাড়ির লোক। দুই বাড়ির মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করে বড় হয়ে যাবে সে। আমার তো চাই ই চাই।”

দৃষ্টি আর কি বলবে? এমন পাগলামীর সামনে সে কি টিকতে পারবে? যেখানে সে নিজেই হেরে যেতে প্রস্তুত। ভাবনার মাঝেই বিছানায় পিঠ ঠেকল। শাড়ির আঁচলটাও কখন যেন খসে পড়ল। আফরানের অবাধ্য, নির্লজ্জ ওষ্ঠজোড়া ছোটাছুটি শুরু করেছে তার দেহের আনাচে কানাচে। তার কপালে অধর ছুঁইয়ে বলল,

“যেদিন তাকে মন দিয়ে বসেছিলাম, সেদিন থেকেই আমার মন বারংবার বলত সে আমার হবে। তাকে আমার হতেই হবে। আমি তাকে ছাড়া অপূর্ণ। আর এখন? এখন বলে সে শুধু আমার, শুধু আমারই। আমি পেরেছি তাকে নিজের করতে। হৃদয়ের পিঞ্জিরায় তাকে বন্দি করতে পেরছি আমি।”

মুখে আর কথা হলো না তাদের। কথা হলো ঠোঁটে ঠোঁটে। কথা হলো প্রতিটি স্পর্শে। সৌন্দর্যে পূর্ণ ফুলের রানী ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল এদিক ওদিক। তার যে সময় শেষ। আফরানের রানীর অলংকার হওয়ার সময় শেষ। এখন সে নিজেই নিজের রানীর অলংকার, তার লজ্জা নিবারণের চাদর।

দুই জোড়া কপোত কপোতী যখন পুরোনো ভালোবাসার সৌন্দর্য নতুন রূপে উন্মোচন করতে ব্যস্ত, তখন তুরাগ প্রিয়তমার আবদারে ব্যালকনীতে গিটার হাতে বসে। তার যে একটা গান শোনার বড্ড ইচ্ছে হয়েছে। পাশেই ঘনিষ্ঠ ভাবে কাঁধে মাথা রেখে বসে সে। তুরাগ হাত বাড়িয়ে এলোমেলো কেশ গুচ্ছ গুছিয়ে দেয়। গভীর ভালোবাসায় কপালে ওষ্ঠদ্বয় ছুঁইয়ে গিটারে সুর তোলে। আর ফারনাজ? সে চোখ বন্ধ করে সেই সুরে হৃদয় বিলিয়ে দিতে ব্যস্ত।

“ভালো আছি ভালো থেকো,
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।

ভালো আছি ভালো থেকো,
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।

দিও তোমার মালা খানি,
বাউলের এই মনটারে।

আমার ভিতর বাহিরে অনন্তে অন্তরে,
আছ তুমি হৃদয় জুড়ে।

ঢেকে রাখে যেমন কুসুম,
পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম।

তেমনি তোমার নিবিড় চলা,
মরমের মূল পথ ধরে।

আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে,
আছ তুমি হৃদয় জুড়ে।”

সমাপ্ত!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে